এবং মন্দাক্রান্তা
দুর্গম পথঘাট বুঝেছে এযাবৎ ভুলছে আজ তোর বারীষ জল
গুমনাম ফুলদের নদীও বড়ো পর মেঘলা রূপটান নিছক ছল
সন্ধ্যার সাতপাঁচ শিখেছে ক্রমে ঘুম আজকে চুরমার মাটির বুক
নির্ঘুম সব-চোখ সেজেছে অহোরাত তৃষ্ণা সন্ধান যে তার সুখ!
লজ্জার ঘ্রাণ, ঠোঁট অদেখা বহুদিন গলছে নির্ভার সোহাগ-জল
অক্ষম বৃষ্টির বেসাতি কেন স্রোত, রুদ্ধ প্রান্তর কি সুখ বল?
‘শোধবোধ সব-রাত’ লিখেছে কুঁড়ি আজ দীর্ঘ সংলাপ ভাসান ‘শোক’
বন্ধুর মুদ্রার দুধারে অনিবার মুক্ত ঝুমচাষ সহজ হোক...
জারুলের কাছে
জারুলের কাছে কিছু কোজাগর ঋণ রয়ে গেল
শেষমেশ—বেশ কিছু ফুটবার মতো ফুল,
কিভাবে কখন যেন পোশাকেই থেকে গেল
সচেতন প্রহরের দৃষ্টি এড়িয়ে।
থেকে গেল বেশ কিছু পেয়ালার ডাকনাম,
আঁজলায় অনুপম বন্য সুবাস।
মুখোমুখি এ খবর তামাম শহরতলি জানে—
ওদের স্ফুটনকাল এখনও জড়িয়ে আছে
তুমুল বর্ষামেঘ ঋতুদিনে, কুমারীবেলায়...অতএব
সাদা পাতা জুড়ে শুধু প্রত্যাখ্যান ধীর পায়ে হাঁটে
সোঁদালি গন্ধ ভাসে প্রতিবেশী জানালার শিকে।
যে ফুলটি সারারাত কাছে থাকে, নিরঙ্কুশ ছুঁতে চায় চোখমুখ
কিভাবে কখন সেও পরগাছা হয়ে পড়ে,
বীথির নিয়মমতো পৃথগন্ন হয়ে যায় সব শ্বাসমূল।
এবং প্রবাস শেষে মাহিয়ানা সাক্ষাতের পর
অনিমিখ মুখ ঢাকে জারুলের স্বাদু হাসি—
‘কতোদিন পরে দেখা, কুঁড়িরা ফুটেছে?’
কৈশোর, কাঠগোলাপের মাঠ
সব রোশনাই তুমি নিহিত নদীর বুকে
রেখে এসো একদিন—একদিন আটপৌরে চলে এসো নির্ভার
খেলার মাস্তুলে, নাবিকের অনুরোধ খাদানের চত্বরে
ছড়িয়ে থাকুক বেশ দ্যুতিমান হীরকের মতো
কপালের ধার ঘেঁষে রক্তিম কিছু ভাঁজ স্থাণু হোক।
আমূল ভিজিয়ে দিক পল্লবিত গুলশন, সফেদ কাঞ্চনফুল
দোল খাক—সমুদ্র হাওয়ায়...আর মজে যাক ক্ষয়ে আসা
পঙ্কিল জলাশয়; জেগে থাক কুঞ্জলতার বনে ছুট ছুট
অনন্ত গোধূলি আর অলিন্দ জুড়ে তার কাঠগোলাপের বাস,
সুগন্ধ সে নারীর—তোমার মুখের স্বেদ যে মেয়েটি প্রতিবার
যত্নে মুছিয়ে দেয়, বিজ্ঞাপন বিরতির পরে
অবচেতনার জল ফিরিয়ে আনুক এই শেষবার
সমস্ত মহুল রাত, লালপাড় তসরের স্নান
সেখানে তোমার সব ছত্রে আজও গুলমোহরের ঘাম,
নগ্ন পায়ে কৈশোরের বালি লেগে আছে