ভালোবাসা, পুটুশের রঙ
ওরা উড়ে যেতে চায় গাছ থেকে
অন্য কোনও গাছে...পুষ্পল কথায়
শিয়রে নবীন সব চন্দনদাগ,
আর ডানায় মুগ্ধ কিছু শিশিরের
আদরের নাম লিখে রাখে ওরা—
শীতার্ত সকালময়, লিখে রাখে পথিকের বাস
পেলব শুভ্র বুকে ফল মুখে নিয়ে যায়—
বুঝি কোনও অপত্য প্রত্যাশায়...
এসব ভ্রমণদিন অক্ষিপলকের মতো স্থায়ী
তবু ওরা অনাবিল আলতো ভাসিয়ে দেয়
অপরূপ আশ্রয়, বিলাস।
পাখিদের ভালোবাসা স্থাণু হয় বর্ণিল পুটুশের ঝোপে
আনন্দগান
সর্ষেক্ষেতের বুকে আখোলা সকাল নিয়ে আজ
নিবিড় দাঁড়িয়ে থাকে হরিয়াল, দলছুট কিছু
ওদের ডানার পাশে প্রাচীন মন্দির এক স্থির
জেগে আছে বহুকাল, আধোঘুম যক্ষিণীর বেশে
একটি গাছের পাতা আলগোছে ছুঁয়ে থাকে ওকে
এমনকি বাতাস জুড়ে বেজে যায় সেতারের সুর
ওদের কপাল আর চূর্ণচুল—ইতস্তত ওড়ে
ভালোবাসা জাগে খুব আন্তরিক অপ্রয়াসেই।
টুসুর অলীক বোল জলাশয়ে আনন্দলহরী
নীলাভ আকাশ ছেয়ে অনাবিল রৌদ্র জেগে ওঠে
কাঁধের বন্ধুভাব আলো জ্বেলে দেবে অতঃপর
শিকড় চারিয়ে তাই গাছগুলি মাতোয়ারা গানে...
মধুমঞ্জরী
গতরাতে কিছু বৃষ্টি পড়েছে...মেঘ সরে আসে কাছে
বুনোফল ঠোঁটে পাখি উড়ে যায় এক গাছ থেকে গাছে
এখন কুঁড়িরা ভোরকে দেখছে, শিশিরে আদর জল
সজনের ফুলে শুভ্রবসন—টুপটাপ সম্বল...
ও গাছের নাম মধুমঞ্জরী, সবুজ পাতার ঘেরে
সমস্তদিন পথের প্রান্তে—ছায়াফুল দিয়ে ফেরে
এত উচ্ছ্বাস, আনন্দগান...এত কথা বারোমাস
এত প্রজাপতি, গঙ্গাফড়িং সবজে ডানার ঘাস
শোক ডুবে যায় অমিয় শ্রবণে, দৃষ্টিও ভাসে সুখে
আয়ত চোখের শালবন খুব নির্ভার জাগে বুকে
ওদের কথায় আজন্মভার কাদামাটি দিয়ে ঢাকি
আমরা সবাই ডানা পেয়ে যাই, আমরা সবাই পাখি...
পরবাস
এভাবেই দৃশ্য আসে।
তেতলার ছাদময়, উড়ে আসে হরিয়াল
গৃহস্থ বিশ্রাম খোঁজে পড়ে পাওয়া দুপুরের ঘুম।
এমন নিশ্চিত বুকে ঘেঁটে যায় যুবতী কাজল
গ্লাসডোরে মুনিয়ার ঠোঁট, ফলের আস্বাদ নেয়
ঠুকরে শব্দ তোলে বারবার—ওরা দেখে
অথবা শুনেই যায় ভালোবাসা, সুখের আনাচ
ওদের ছাদের বুকে কাগজফুলের গাছ হাসে
খিলখিল হেসে যায় মাটিভরা জলাধারে ঘাসফুল
বাসন্তী চন্দ্রমল্লিকা
এখানে শীতের আয়ু স্বল্পকাল
এখানে জ্বরের কথা অন্যরকম
এখানে কলেজস্ট্রিট পাশাপাশি হেঁটে যায়, হাতে হাত
বৃষ্টিতে সবুজ
এমন ভাবেই সব পরবাস, নিশ্চিত আবাস হয়ে যায়
ফুলের মেহক আনে, ছড়ানো ছিটনো সব নব্য সংসার...