ভজনবাবার হাট থেকে গোবিন্দ এক আজব গুলতি কিনে এনেছে। এ নাকি জাদুগুলতি। এ গুলতির এমন সব গুণ আছে, যা সবাইকে বলে বোঝানো যাবে না। গোবিন্দই শুধু সব জেনে বুঝে তবেই কিনেছে।
হাটে সেদিন খুব ভিড়। গোবিন্দ মদনমামার সঙ্গে হাটে গেছিল। মদনমামার জমিতে এবার দারুণ বেগুন হয়েছে। একটা বেগুনও কানা-পোকা নয়। দানাভরা নয়। এক্কেবারে দিলখুশ বেগুন। ভাজা খাও, পোড়া খাও, ঝালে খাও, ঝোলে খাও সবেতেই এ বেগুন ফার্স্টক্লাস। মদনমামা শুধু বেগুন বেচেই অনেক লাভ করেছে। তাই খুব খুশি। গোবিন্দ না চাইতেই মদনমামা ওকে অনেকগুলো টাকা দিয়ে বলেছিল, গোবিন্দ যা হাটে ঘুরে তোর যা মন চায় কেন। যদি আরো লাগে, বলবি। দেব ...।
গোবিন্দ একা একাই হাটে ঘুরছিল। এ হাট মস্ত বড়। প্রত্যেক শনিবার হাট বসে। হাটে কত কিছুই না বিক্রি হয়। ধান, চাল, শাক-সবজি, জ্যান্তমাছ, শুঁটকিমাছ, হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল, মাছ ধরার জাল, বঁড়শি, বনের মধু, পায়ে হাজার মলম, বাতে ব্যথার তেল, দাঁতের পোকা মারা ওষুধ, কাপড় কাচার সস্তা সাবান সব সব বিক্রি হয়। গোবিন্দ ঘুরে ঘুরে এসবই দেখছিল। হাট ঘুরতে গোবিন্দর খুব ভালো লাগছিল। ঘুরতে ঘুরতে একসময় হঠাৎই গোবিন্দর একটা অচেনা লোকের চোখে চোখ পড়তেই সে কেমন ইশারায় গোবিন্দকে কাছে ডেকে নেয়। নীচু স্বরে ফিস্ ফিস্ করে বলে, 'ও খোকা, তোমাকে একটা আজব জিনিস দেব। নেবে?'
গোবিন্দ অবাক হয়ে চেয়ে থাকে অচেনা লোকটার দিকে। লোকটা কেমন অদ্ভুত যেন। সাধুবাবাদের মতো চেহারা। মাথায় অল্প-সল্প জটা। গালভর্তি সাদা ঢেউখেলানো দাড়ি। হাসিটা কি সুন্দর। গলার স্বরও খুব মিষ্টি। দুটো চোখে আলো ঝলমল করছে। একদম ভালোমানুষের মতো মনে হয়। খারাপ মোটেই নয়। গোবিন্দ তাই ভয় না পেয়ে বলে, আজব জিনিসটা কি?
অচেনা অদ্ভুত লোকটা বলে, গুলতি জানো?
গোবিন্দ মাথা নেড়ে সঙ্গে সঙ্গে বলে, হ্যাঁ, জানি তো। পাখি মারে গুলতি দিয়ে।
'ঠিক বলেছো'। অদ্ভুত লোকটা খুশি হয়। মিষ্টি করে হেসে বলে, কিন্তু এ গুলতি সে গুলতি নয়। এ হল জাদুগুলতি। এটা দিয়ে তুমি কোনোদিন পাখি মারবে না। কারো কোনো ক্ষতি করবে না। খারাপ কিছু দেখলে, অন্যায় কিছু দেখলে তুমি এ গুলতি দিয়ে ছুঁড়ে মারবে গুলি। অবশ্য সে গুলি চোখে দেখা যাবে না। অদৃশ্য গুলি! ব্যস, সে যত বড় দুষমনই হোক, দুষ্টু লোক হোক ঘায়েল হবেই হবে। আমি তোমাকে এ গুলতি দিয়ে যাচ্ছি। যত্ন করে রাখবে। খুব সাবধানে রাখবে। কাউকে দেবে না। আর বলবে না এ গুলতির কি গুণ আছে, কি জাদু আছে। কেমন?
গোবিন্দ একমনে কথাগুলো শুনছিল। সব শুনে কেমন ঘোর লেগে যায় ওর। অবাক হয়ে চেয়েই থাকে। অদ্ভুত লোকটা তারপর ওর ঝোলা থেকে গুলতিটা বের করে গোবিন্দর হাতে দিয়ে বলল, এই নাও। ধর। সাবধানে রাখবে কিন্তু। যা বললাম মনে থাকে যেন। খুব দামী জিনিস তোমায় আমি দিলাম। যত্ন করে রেখো।
গোবিন্দ মুখ ফুটে এবার বলে, কত দাম এই গুলতির?
দাম? অদ্ভুত লোকটা হাসতে হাসতে বলে, দাম তো এর অনেক। জাদুগুলতির দাম কি হিসেব করে বলা যায়? কিন্তু এর দাম তোমায় দিতে হবে না। তুমি শুধু যত্ন করে রাখবে। আর এ গুলতি দিয়ে কোনোদিন পাখি মারবে না। কাউকে ভুল করে আঘাত দেবে না। কিন্তু অন্যায় দেখলে গুলতি ছুঁড়বে। দেখবে কেমন খেল এই জাদুগুলতির!
গুলতিটা হাতে নিয়ে গোবিন্দ দাঁড়িয়ে থাকে। অদ্ভুত লোকটা হঠাৎই কেমন ভ্যানিশ হয়ে গেল। হাট-ভর্তি লোকের মধ্যে নিমেষে হারিয়ে গেল। গোবিন্দ চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই সে নেই! কোথায় যে ভ্যানিশ!
গুলতিটা দেখতে খুব সুন্দর। ভি আকারের বাঁটটা চকচক করছে। বাঁটে চন্দ্র-সূর্য আঁকা। রাবারটা কি নরম। সুন্দর একটা গন্ধ আছে। টানলে অনেকটা লম্বা হয়ে যাচ্ছে। এমন সুন্দর গুলতির গুণের কথা গোবিন্দ কাউকে বলতে পারবে না। অদ্ভুত লোকটা সেকথা বারবার বলে গেছে। আর বলেছে, পাখি মারা যাবে না। ভুল করে কাউকে আঘাত করা যাবে না। তাহলেই গুলতির গুণ নষ্ট হয়ে যাবে। জাদুগুলতি আর জাদু দেখাতে পারবে না!
গোবিন্দ হাট থেকে ফিরে সবাইকে বলল, গুলতিটা আজ ও হাট থেকে কিনেছে। কত দাম সে কথা ওর বন্ধু ফেলু, পটলা, পিন্টু বারবার জানতে চাইলেও বলল না। শুধু বলল, দাম শুনে কাম কি? এ গুলতি এয়ারগানের মতো শক্তিশালী। এর কোনো গুলি নেই। অদৃশ্য গুলি ভরা এ এক আজব জাদুগুলতি। বাঘকে মারলে বাঘও জখম হয়ে যাবে!
তাই? গুলি লাগে না। অদৃশ্য গুলি! ফেলু শুনে বলল, তাহলে চল না একদিন শিকারে যাই।
পটলা বলল, যাবি? হাঁসপুকুরের চরে। ওখানে অনেক বালিহাঁস আছে। শিকার করব আমরা। খুব মজা হবে।
পিন্টু বলল, চল না ময়নাবিলে যাই। ওখানে অনেক ধানখেত। ঘুঘু পাখিরা পাকা ধান খেতে আসে। তোর গুলতি দিয়ে ঘুঘু মারব। তারপর ফিরে এসে ফিস্ট করব।
বন্ধুদের কারো কথাই গোবিন্দ মন দিয়ে শুনল না। আনমনে গুলতিটার গায়ে হাত বুলিয়ে যাচ্ছিল। বন্ধুরা সবাই যখন একসাথে বলল, কি রে কিছু বল।
আমার এ গুলতি দিয়ে কোনো শিকার হবে না। পাখি মারা যাবে না। এ জাদুগুলতি। এর গুণ অন্যরকম। গোবিন্দ এইটুকুই শুধু বলে চুপ করে গেল।
তিনবন্ধু এবার একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে হাসছে। হাসতে হাসতেই তিনবন্ধু বলল, এ গুলতি দিয়ে তাহলে তুই কি করবি? গুলতি তো শিকারের জন্যই! তোর গুলতিটা তাহলে আলমারিতেই তুলে রাখ। ডিম পাড়বে! হা-হা-হা ...।
।। দুই ।।
আজ কদমতলার মাঠে বিরাট ফুটবল ম্যাচ। ফাইনাল খেলা। কুমিরমারির 'হঠাৎ সঙ্ঘ' বনাম ভোলাখালির 'বন্ধুদল'। মাঠের চারপাশে খুব ভিড়। দূর দূর থেকে লোক আসছে। কত সাইকেল, ভ্যান, মেশিন-ভ্যান, লাল-নীল বাইক, স্কুটার চড়ে দর্শকরা এসেছে। গোবিন্দও চলে এসেছে বন্ধুদের সাথে এই ফাইনাল ম্যাচ দেখতে। প্যান্টের কোমরে গুঁজে নিয়ে এসেছে জাদুগুলতিটা। বন্ধুরা কেউ জানে না সে কথা।
ম্যাচ খুব জমে উঠেছে। দু'পক্ষই লড়াই করছে সমানে সমানে। পাল্লা দিয়ে লড়াই চলছে। মাঠ জুড়ে কত লোক। সবাই খুব হৈ হৈ করছে। আনন্দ করছে। খেলা দারুণ জমে গেছে। একটা গোলও কোনো দল করতে পারেনি। হাফটাইম হতে আর দেরি নেই। রেফারির বাঁশি বাজল বলে। এমন সময় হঠাৎই 'হঠাৎ সঙ্ঘ' পেনাল্টি পেয়ে গেল। বন্ধুদল রেফারির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছে না। রেফারিকে ঘিরে ধরেছে ওদের খেলোয়াড়েরা। মাঠে তখন খুব গোলমাল। সবাই চিৎকার করছে। এদিকে মাঠের বাইরেও তখন কারা যেন চিৎকার করে উঠল, 'চোর! চোর! ধর ব্যাটাকে ধর। চোর! চোর! ...'।
নতুন দুটো সাইকেল নিয়ে পালাচ্ছে দুই চোর। পেছনে তাড়া করে ছুটছে দশ-বারোজন লোক।
গোবিন্দ বুঝতে পেরে যায় ব্যাপারটা। ও সঙ্গে সঙ্গে গুলতিটা বের করে পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। ওর বন্ধুরা তো অবাক। সাইকেল চুরি করে পালাচ্ছে যে চোরদুটো তারা তো এখন অনেকদূরে। পোঁ-পোঁ করে সাইকেল চালিয়ে পালাচ্ছে। পিছনে তাড়া করে যাওয়া লোকেরা ওদের কিছুতেই ধরতে পারবে না। কিন্তু গোবিন্দ অদ্ভুতভাবে গুলতিটা তাক করে ধরে নিশানাটা ঠিক করে শূন্যে গুলতির রাবারটা টান মেরে ছেড়ে দিল। একবার নয়, দু-দু'বার।
আশ্চর্য চুরি করে পালানো দুটো সাইকেলের টায়ারই ফটাস! টায়ার লক্ষ্য করেই গোবিন্দ গুলতি ছুঁড়েছিল। লক্ষ্যভেদ সঠিক।
সাইকেল সহ দুই চোরব্যাটাই মাটিতে পড়ে কুপোকাৎ! পিছনে তাড়া করে আসা লোকজনেরা এবার ওদের ধরে ফেলল। উদ্ধার হল নতুন সাইকেল। বন্দী হল দুই চোরবাবাজি!
গোবিন্দ হাসতে হাসতে গুলতিটা কোমরের আড়ালে লুকিয়ে রেখে বলল, ওই দেখ খেলা শুরু হয়ে গেছে। হঠাৎ সঙ্ঘ পেনাল্টি মিস করল। বন্ধুদল আনন্দে কেমন লাফাচ্ছে দেখ! ....
।। তিন ।।
গোবিন্দর গুলতির মাহাত্ম্য হাওয়ায় হাওয়ায় ছড়িয়ে গেল। গ্রাম থেকে গ্রামে। হাট থেকে হাটে। ঘাট থেকে ঘাটে। মাঠ থেকে মাঠে। ছড়াতে ছড়াতে ওর স্কুলেও ছড়িয়ে গেল সবার কাছে। হরিমাধব স্যার ওকে খুব ভালোবাসেন। স্যার কাছে ডেকে বললেন, হ্যাঁরে গোবিন্দ, এই জাদুগুলতিটা তুই কোথায় পেলি? কে দিল তোকে এমন আশ্চর্য গুলতি?
গোবিন্দ কিছু বলতে পারে না। চুপ করে থাকে। সব কথা বলা যে বারণ। বললেই গুলতির গুণ নষ্ট হয়ে যাবে।
স্যার গোবিন্দকে মাথা নীচু করে চুপচাপ থাকতে দেখে বললেন, গোবিন্দ তুই পড়াশুনাটায় এবার এমন জাদু দেখিয়ে দে তো। সবাই খুব ধন্য ধন্য করুক।
কালাচাঁদ স্যারের কাছে গোবিন্দ অঙ্ক আর বিজ্ঞান পড়তে যায়। আজ স্যারের পড়ানো ছিল। গোবিন্দ পড়ে ফিরছে সঙ্গে ওর বন্ধু রাখাল, নিতাই ও সুবল। সন্ধে হয়েছে অনেকক্ষণ। নদীর পাড় ধরে তিনবন্ধু হাঁটছে। গ্রামের ঘরে ঘরে আলো জ্বলছে। সোলার লাইটের আলো খুব উজ্জ্বল না হলেও অন্ধকার ঘুচেছে।
নদী এখানে শুকিয়ে মজে সরু হয়ে গেছে। জোয়ারে সামান্য জল বাড়ে। নৌকো চলাচল করে সে-সময়। এখন নদীতে জোয়ার। অনেকদূরে একটা ছোট্ট নৌকো দেখা যাচ্ছে। পাশে ঘাট। ঐ ঘাটের কাছেই হরিমাধব স্যারের বাড়ি। স্যারের মেয়ের বিয়ে। তাই স্যার ছুটি নিয়েছেন ক'দিন। খুব ব্যস্ত এখন।
গোবিন্দ গল্প করতে করতে বন্ধুদের সাথে হাঁটছে। আকাশে এখন কত তারা। আকাশও খুব পরিষ্কার। রাখাল খুব ভালো চেনে তারাদের। ও হাঁটতে হাঁটতে কোনটা কোন তারা কি সুন্দর বলে যাচ্ছে। বন্ধুরা সে কথা মন দিয়ে শুনতে শুনতেই হাঁটছে। হঠাৎ একটা হৈ চৈ। চিৎকার। একসাথে অনেকগুলো শাঁখ বেজে উঠল। কারা যেন উলু দিয়েই চলেছে। আজান দিচ্ছে বারবার। একসাথে এমন তো হয় না সচরাচর। গোবিন্দ নিমেষে বুঝে যায়, নিশ্চয়ই কোনো গোলমাল হয়েছে। এতো বিপদের সংকেত। গ্রামে হঠাৎ কোনো বিপদ হলেই এমন শোনা যায়। বন্ধুরা থমকে দাঁড়িয়ে বলে, গোবিন্দ হরিমাধব স্যারের বাড়ির দিক থেকেই তো চিৎকারটা ভেসে আসছে রে!
তাই তো মনে হচ্ছে। গোবিন্দ সতর্ক হয়ে যায়। কোমরে হাত দিয়ে দেখে নেয়, গুলতিটা ঠিক আছে তো!
ডাকাত! ডাকাত! চিৎকারটা ভেসে এল।
গোবিন্দ বন্ধুদের বলে, নির্ঘাৎ স্যারের বাড়িতেই ডাকাত এসেছে। স্যারের মেয়ের বিয়ে তো। এখন বাড়িতে সোনা-গয়না, টাকা-পয়সা সব আছে। ডাকাতরা খবর নিয়েই এসেছে। এবার মনে হচ্ছে ঘাটের ওই নৌকোটা ডাকাতদের।
নিতাই ঘাবড়ে গিয়ে বলে, কি করবি গোবিন্দ?
সুবল কাঁপতে কাঁপতে বলল, আমার ভয় করছে রে।
গোবিন্দ তুই বুদ্ধি দে। রাখাল বলল, আমরা এখন কি করব বল?
গোবিন্দ বলল, আমি ঘাটের দিকে চলে যাচ্ছি। তোরা লোক জড়ো করে স্যারের বাড়িতে যা।
তুই একা-একা ঘাটে যাবি? সুবল বিড় বিড় করে বলল।
ঘাট দিয়েই তো ওরা পালাবে। কি করে ব্যাটারা পালায় দেখি। গোবিন্দ কথাগুলো বলেই দৌড় শুরু করল ঘাটের দিকে।
অনেক অনেক লোক জড়ো হয়ে গেল স্যারের বাড়ির চারপাশে। সবাই চিৎকার করছে, ডাকাত! ডাকাত!
অন্ধকার থেকে ছিটকে বেরিয়ে এল চারটে কালো মূর্তি। ওরা স্যারের বাড়ির পাঁচিল টপকে প্রাণপণে ছুটছে নদীর ঘাটের দিকে। নিতাই, রাখাল, সুবল গ্রামের লোকেদের নিয়ে চার ডাকাতকে তাড়া করেছে, 'ধর। ধর। ডাকাত! ডাকাত! ....'
গোবিন্দ একদম পজিশন নিয়ে নিয়েছে ঘাটের ঐ অন্ধকারে। ডাকাতদের দলটা বুঝতেই পারে নি। ওরা পালিয়ে এসে লাফিয়ে নৌকোয় উঠতে যাবে, তার আগেই গোবিন্দ ডাকাতদের নৌকোটাকে ঠেলে ঘাট থেকে অনেকদূরে সরিয়ে দিয়ে একদম ওদের মুখোমুখি, এক দুই তিন চার ..... পরপর চারবার ওর জাদুগুলতি থেকে বেরিয়ে এল অদৃশ্যগুলি ডাকাতদের পা লক্ষ্য করে একদম সঠিক নিশানায়। চার ডাকাতই জখম হয়ে ধপাস করে ঘাটের কাদা মাটির মধ্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগল। ওদের আর উঠে দাঁড়াবার মতো শক্তি নেই। নৌকোও তখন মাঝনদীতে ভাসছে। গ্রামের লোকজনেরা সব হৈ হৈ করতে করতে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল জখম হওয়া চার ল্যাংড়া ডাকাতের ওপর।
বিয়ে বাড়ির ভোজ পেটপুরেই খেল গোবিন্দ। মিষ্টি দই তিন তিনবার চেয়ে চেয়ে খেল। হরিমাধব স্যার খুব যত্ন করে সবাইকে খাইয়েছেন। গ্রামের লোকেরা খুব ধন্য ধন্য করছে। কিন্তু স্যার বার বার বলছেন, তোমরা ছুটে গিয়ে যদি ডাকাতদের পাকড়াও না করতে, আমার মেয়ের বিয়ে কি দিতে পারতাম? সব কিছুই তো লুঠ করে নিয়ে পালাচ্ছিল ব্যাটারা। সোনা-গয়না, টাকা সব সব উদ্ধার হয়েছে। আমার একটা জিনিসও খোয়া যায়নি। এ সবই তো তোমাদের জন্য। আর গোবিন্দর কথা কি যে বলব, ওর জাদুগুলতির গুণেই তো এত বড় সাফল্য। ওর গুলতি তো এখন আমাদের গ্রামের সম্পদ! থানার বড়বাবু পর্যন্ত বলে গেলেন, ওকে পুরস্কার দেবেন। আমাদের প্রধানও বলছেন গোবিন্দকে সম্বর্ধনা দেবেন! ...
এতসব কথা শুনে গোবিন্দ লজ্জায় মুখ নিচু করে থাকে। সত্যিই এ এক জাদুগুলতি। কিন্তু গোবিন্দ নিজে তো জাদুকর নয়। ও জানেও না কোনো জাদুবিদ্যা। সেই জাদুকর মানুষটাই হঠাৎ সেদিন কেমন দেখা দিয়ে ভ্যানিশ হয়ে গেলেন। দিয়ে গেলেন এই গুলতি। দুষ্টু লোককে জব্দ করার এক অদ্ভুত অস্ত্র!
কাল তো শনিবার। হাটবার। চুপি চুপি একবার হাটে চলে যাবার কথা ভাবে গোবিন্দ। একাই যাবে। কাউকে বলবে না। মদনমামাও কিচ্ছুটি জানতে পারবে না। কাল যদি ফের দেখা হয়ে যায় সেই ভালোমানুষটার সঙ্গে, গোবিন্দ তাঁকে শুধু বলবে, 'থ্যাঙ্ক ইউ। তোমার গুলতিটা কিন্তু দারুণ। এর কোনো জবাব নেই! ...'