• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫৪ | জুন ২০১৩ | কবিতা
    Share
  • আজকে একক : রিচার্ড ব্ল্যাংকো
    translated from English to Bengali by উদয় নারায়ণ সিংহ


    সূর্য উঠেছে এক মাথার উপরে আজ, সাগরের সৈকতে যেন
    জ্বলে ওঠে সহস্র প্রদীপ, দেখ ধূলিতে ধূসর মেঘ সরিয়ে সে উঁকি দেয়
    অন্য পার হতে, বিশাল হ্রদের মুখ চুমে নিয়ে বলে এক
    সহজ সত্যি কথা সমতল-ভূমে; আছড়ে পড়েছে আলো পাহাড়ের পাষাণে নিশানে.
    গৃহ-শীর্ষে এক আলো জ্বলে ওঠে আরেকটি চিরাগের 'পরে,
    একটি গল্প গাঁথে আরেকটি গাথার শরীরে - আমাদের নিশ্চুপ
    ছায়া ছায়া নড়া-চড়া দিয়ে যেন লেখা।


    তোমার আমার মুখ সকালের আয়নায় আরো কত লক্ষ মুখগুলি
    প্রত্যেকে জেগে ওঠে জীবনে যখন,
                               আরো কত বিস্ফারিত দিবসের ধ্যানে:
    ফুটে ওঠে স্কুল-বাস হলুদ পেন্সিল-রঙা, সচল সবুজে
    বেজে ওঠে তালে তালে রাস্তার মোড়ে লাল হলুদের আলো
    ফলের দোকানগুলি তখনি খুলেছে ঝাঁপি রামধনু-রঙা,
    আপেল কমলা আর পাতি লেবু নিয়ে শুধু অপেক্ষা - কবে কেবা
    হাতে তুলে নেবে. রুপোর তবকে মোড়া বিপুল-আকার ওই বড় ট্রাকগুলি
    চাপিয়েছে তেল ইঁট কাগজ কিংবা দুধ, উপচে পড়েছে যেন কানা-কানা দিয়ে
    আমাদেরই সাথে চলে রাজপথ দিয়ে তারা মৃদু মন্থরে -
    আমরা চলেছি যারা করতে টেবিল সাফ, পড়তে হিসাব খাতা
    কত মোটা মোটা - অথবা বাঁচাতে কোনো জীবন বিপদে –
    হয়ত শেখাতে হবে জ্যামিতির আঁকা অথবা ফোনে-ফোনেই
    নিতে হবে অর্ডার মাস-কাবারির, দুই যুগ ধরে যা করে গেছে
    আমাদেরই মা, শুধুই এজন্য যাতে লিখতে পারি আমি এমন কবিতা।


    আমরা সবাই ঠিক ততটাই জরুরি যতটা প্রবল ওই রশ্মি রাজি খানি
    পড়েছে একই আলো দেয়াল পাটিতে যাতে লেখা থাকে সে-দিনের পড়া
    আজকে কষতে হবে এমন অঙ্ক সব জটিল যমক
    সওয়াল রয়েছে কোনো ইতিহাস থেকে,
                               অথবা রয়েছে কোনো এটমের রূপ-কল্পনা,
    "আমার একটা স্বপ্ন আছে" - একথাই স্বপ্নেও ঘুরে-ফিরে আসে,
    অথবা দুঃখের শত অসম্ভব প্রতিশব্দগুলি এসে এসে পড়ে,
    পারে না বলতে যারা কি-কারণে আজকেও রয়েছে কুড়িটি ছাত্র অনুপস্থিত,
                                                 যেমন রয়েছে চির কাল।
    এতগুলি প্রার্থনার 'ওং'-শব্দে একই আলো রাঙিয়েছে কাচের সার্সিগুলি দেখ
    জীবন দিয়েছে এনে ধাতব মূর্তি-মুখে উষ্ণতাও প্রদর্শ শালার
    প্রতিটি সিঁড়িতে আর পার্কের বেঞ্চে বেঞ্চে দেখ
    মায়েরা যেমন দেখে মমতার চোখে শিশুদের
                                        দিনের আলোয় খেলে যেতে


    একই মাটি, আমাদেরই মাটি ! মাটিতে বেঁধেছে নাড়া প্রতি কটা শস্য-কণা
    প্রত্যেক গমদানা শিষে - যেগুলি করতে চাষ ঝরিয়েছে ঘাম এই হাতে,
    যে হাতে ছেনেছে কালো - কয়লার খনিতে খাটায়
    যেই হাতে তৈরি হয় মরুদেশে বিজলির চক্রযানগুলি
    অথবা পাহাড়-চূড়ে বিজলির কল - রাখতে উষ্ণ আমাদেরই
    যে হাতে খুঁড়েছে তারা পরিখা কিম্বা জোড়ে জলের পাইপ কিবা
    কেবিলের তার - আমার বাবার মত সেই সব হাতেরা যাদের
    ঘাম ঝরে ক্ষেতে-খলিহানে, গোটাতে আখের চাষ ঠিক যাতে ক’রে
    আমরা দুভাই যেতে পারি ইস্কুলে পেতে পারি বইগুলি
                                        গায়ে জামা পায়েতে জুতোও


    ধান-ক্ষেতে মরুপথে, নগরে ও ভূমি-সমতলে বইছে একই হাওয়া
    আমাদেরই নিঃশাস থেকে! ওঠে নামে দীর্ঘ এই প্রশ্বাস-খানি -
    তোমরা শুনতে পারো ভীষণ ভীড়েতে স্পষ্ট দিবসের আলো-ফোটা
    গাড়িদের হর্নে আবার - বাসেদের আসা-যাওয়া রাজপথ দিয়ে
    প্রতিটি পদ-ধ্বনি জাগিয়েছে ছন্দেতে সুরে - গিটারের টঙ্কারেও,
    ভূমিগত পার-পথে হনহন চারু চীত্কারে ! হঠাতই গানের পাখি
    গেয়ে ওঠে জানা কোনো সুর জামা কাপড়ের টানা তারে।

    শুনতে কি পাও তুমি, ডাকে-ডাকে ক্রীড়াভূমি দুলে দুলে ওঠে
    ট্রেনের হুইসিল আর কফির টেবিলে ওঠা ফিস-ফাসগুলি?
    শুনতে কি পাও তুমি, দরোজা খোলার শব্দ - একের জন্য অপরের,
    দৈনিক বলে চলা - হ্যালো বা সেলাম, বুওন গীয়র্নো, হাউডি,
                               নমস্তে, বুয়েনোস দিয়াস বা কিছু –
    যে-ভাষায় কথা কওয়া শিখিয়েছে মা, প্রতিটি ভাষায় বলা
    ধ্বনিদের তরঙ্গ প্রবাহে - যারা বয়ে নিয়ে চলেছে জীবন আমাদের
    কোথাও বিরোধ নেই কোনো এক ভাষা থেকে অপরের
    ঠোঁটের আগার থেকে বেরোনো মাত্র যারা সঙ্গীতময়।


    একই আকাশ কোনো ভাগা-ভাগি নেই আমাদের! যবে থেকে পর্বত
    এপালাশিয়ান কিংবা সিয়েরাস উপত্যকা ভূমি - দাঁড়িয়েছে দু-বাহু মেলেই,
    আর যবে মিসিসিপি কলোরাডো নদী - মিশে গেছে সাগরে-গভীরে
    সেই থেকে এত জোড়া হাতেদেরই ধন্যবাদ দেওয়া, যাদের হাতের গুনে
    লোহা গ’লে গড়ে ওঠে সেতু, দিনের শেষের আগে জমা দেয় আরেক রিপোর্ট,
    নিয়মিত বসের টেবিলে - ক'রে ফেলে আরেক সেলাই ক্ষত-মুখে,
    অথবা তৈরি করে নতুন কারুর ইউনিফর্ম, কিংবা ফেলেছে তুলি রঙে
    আঁকতে নতুন প্রতিকৃতি, অথবা করতে শেষ ফ্রিডম টাওয়ার - শেষতলা-খানি -
    আকাশের দিকে যার মুঠো করা দৃঢ় প্রতিশ্রুতি - আবার ফিরতে হবে আকাশে আবার


    একই আকাশ ওই মাথার উপরে, যার দিকে মুখ তুলে তাকানো সবার মাঝে-মাঝে
    যখনই ক্লান্তি নেমে আসে - কখনও করতে আঁচ কেমন কাটবে আজ দিন
    আমাদের জীবনের ক্ষণ, কখনো-বা ধন্যবাদ দিতে যারা
                               আমাদের বেসে ছিল ভালো
    এমন মানুষজনদের; কখনো-বা করতে আদর সেই মায়েদের-কেও
    যারা জানে কিভাবে দিতে হয় ঢেলে, অথবা করতে মাফ সেই বাবাদের
    দিতে যারা পারেননি কাঙ্খিত বস্তু কিছু আমাদের চাহিদা মতন


    আমরা চলেছি গৃহে তুমুল বর্ষা ভেঙে, বরফের ওজন সরিয়ে – অথবা অন্ধকার
    ঘোর হয়ে আসে – গাঢ় হয় আকাশের রঙ; কিন্তু চলেছি ফিরে
    গৃহ অভিমুখে – একই আকাশ চলে ঘরে ফিরে চলে - আমাদেরই সাথে,
    চলেছে একই চাঁদ প্রতিটি ছাদের পিঠে নিশ্চুপ বাজনা বাজিয়ে, এ-দেশের
    প্রতিটি জানালা দিয়ে হাজার তিমিরে, তারারাও মিটি মিটি জ্বলে -
    প্রত্যেকে আশা নিয়ে চলে – হয়ত জাগবে মহাকাশে
    নতুন নক্ষত্র-পুঞ্জ কোনো, অপেক্ষায় রবে আমাদের


    আমরা চলেছি গৃহে তুমুল বর্ষা ভেঙে, বরফের ওজন সরিয়ে – অথবা অন্ধকার
    ঘোর হয়ে আসে – গাঢ় হয় আকাশের রঙ; কিন্তু চলেছি ফিরে
    গৃহ অভিমুখে – একই আকাশ চলে ঘরে ফিরে চলে - আমাদেরই সাথে,
    চলেছে একই চাঁদ প্রতিটি ছাদের পিঠে নিশ্চুপ বাজনা বাজিয়ে, এ-দেশের
    প্রতিটি জানালা দিয়ে হাজার তিমিরে, তারারাও মিটি মিটি জ্বলে -
    প্রত্যেকে আশা নিয়ে চলে – হয়ত জাগবে মহাকাশে, নতুন নক্ষত্র-পুঞ্জ কোনো,
    অপেক্ষায় রবে আমাদের – হয়ত আমরা তার নাম দেব কোনো,
    আঁকবো নতুন করে মহাকাশে ভূগোল জ্যামিতি - এক সাথে আমরা সবাই!


    রিচার্ড ব্ল্যাংকো (Richard Blanco) 'ওয়ান টুডে' ('One Today') কবিতাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পদে বারাক ওবামার দ্বিতীয় অভিষেক অনুষ্ঠানে পাঠ করেন।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments