১. আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে
আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে,
ঘড়ির কাঁটা এক জায়গায় ছিল
ক্যালেন্ডারের পাতায় একই তারিখ।
দিন-রাত চলছিল এক ধারায়--
রক্তচাপ ছিল স্বাভাবিক
আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে... ।
আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে,
পৃথিবী আপন কক্ষপথে ঘুরত ধীর-স্থির
সূর্য তার গ্রহাণুপুঞ্জদের নিয়ে এ ক'দিনে
সম্পূর্ণ করত একটি পূর্ণ প্রদক্ষিণ।
মাঝে মধ্যে দু একটা উল্কাপাত হ'ত
চাঁদের আকর্ষণে সাগর গাইত গান
জোয়ার ভাঁটার নিরন্তর খেলা,
সমুদ্রসৈকতে ঝিনুকের বালুকাবেলা।
সূর্য উঠত, অস্ত যেত চিরন্তন সত্যের মত
পরমাণুর কক্ষপথে ইলেকট্রন ঘুরে বেড়াত
প্রোটন গুলোর আশেপাশে,
নিউক্লিয়াসে শুধু নিউট্রনের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ
আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে... ।
আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে,
প্রথম বার আমি তোমাকে বলেছিলাম 'ভালোবাসি',
এরপর শতাব্দী কেটে গেছে আমি আর কাউকে একথা বলিনি
আজ, ঠিক এক বছর পরে,
পৃথিবী সূর্যকে ঘিরে পূর্ণ করেছে আরও একটি প্রদক্ষিণ
সবকিছুই আগের মতই আছে এবং বদলাইনি আমিও,
আমি এখনও চিৎকার করে বলি
"আমি ভালোবাসি" এবং "শুধু তোমাকেই ভালোবাসি"
আজ, ঠিক এক বছর পরে...।
২. ধুম্র শলাকা; বর্ষপূর্তি
হঠাৎ আজ তোমার মুখটা ভেসে উঠল হৃদয়পটে,
বহুদিন হয় আমি হারিয়েছি কবিতা লেখার ক্ষমতা
তবু শুকিয়ে আশা স্মৃতিটুকু নিংড়ে তোমায় খুঁজে পাবার
এই নিরন্তর প্রচেষ্টা,
অন্তত একটি শুধু একটি সার্থক কবিতা লিখে যাব।
বহুদিন হয় আমি সিগারেট ধরেছি, নষ্টদের মত;
আমি জানি আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি আর তর্জনীর ফাঁকে কলম যেমন শোভা পায় না
তেমনি তর্জনী আর মধ্যমার ফাঁকে সিগারেট।
তাতে কি ? মোহাচ্ছন্ন করা তন্দ্রাময় সময়টুকু উপভোগ করতে
আমি শিখে গেছি মোটামুটি।
নারীরা চায় কবি কেবল তাকে নিয়েই লিখুক
আমিও তো তোমায় নিয়ে লিখেছি অসংখ্য কবিতা,
তার একটার যন্ত্রণাও কি তুমি বুঝবে না?
কক্ষনো না??
৩. আজ তোমাকে নিয়ে আর লিখব না ...
না আজ আমি আর লিখব না
আজ আর লিখব না তোমায়,
এ হাতে কলম তুলেছিলাম
সে কিশোরীর জন্য লিখব বলে
যে কিশোরী শুধু ভাতের জন্য
বিক্রি করে নিজের দেহ,
সস্তা সুরমা আর লিপস্টিকের ঝাঁঝাঁ গন্ধে
যাকে প্রতিদিন দেখি সংসদ ভবনের পেছনে,
ঝোপে অভুক্ত আবর্জনার মত পড়ে থাকে।
বিশ টাকা, চল্লিশ টাকা ঘণ্টা দরে
অভিশাপ বিক্রি করে,
বোকা মেয়েটা জানেও না
তার অভিশাপ শোনার জন্য
ঈশ্বরেরা তখন বসে থাকে না
ঈশ্বর তখন ব্যস্ত গণতন্ত্রের পথ
সুগম করতে।
আর গণতন্ত্রের পুত্ররাই তোমাদের ধর্ষণ করে
বিশ টাকা, পঁচিশ টাকা দরে
ঈশ্বরেরা তখনও গণতন্ত্র চর্চায় ব্যস্ত,
যখন আমার এ হাতে শক্তি আছে
ঐ গণতন্ত্রের মুখে কালি ঢেলে দেবার
আমার শক্ত কলম দিয়ে।
তখন
আমি তোমায় নিয়ে লিখতে পারি না।
যখন আমার মেয়েরা আগুনে পোড়ে
ঝলসানো মাংসের ঘ্রাণ যখন নাকে আসে
যখন কানে আসে অসহ্য আত্ম চিৎকার
তারপর যখন সুপারভাইজার কাজে ফিরে যেতে বলে
জ্বলন্ত অঙ্গারে যখন তালা ঝোলে কলাপ্সিবল গেটে
যখন ফায়ার ব্রিগেড এসে মানুষের আগে যন্ত্র বাঁচায়
লাশ প্রতি যখন বরাদ্দ দশ হাজার থেকে এক লাখ
যখন কলম দিয়ে ঐ তালা ভাঙার শক্তি আমার আছে
চাইলেই কালির দোয়াত ঢেলে দিতে পারি
পুঁজিপতি বেবুন গুলোর উপর
তখন আর
তোমায় নিয়ে লিখতে পারি না।
যখন ভালবাসার অপরাধে
যুবতীকে দোররা মারা হয়,
ভালো না বাসার অপরাধে
কিশোরীর মুখ ঝলসে যায় এসিডে,
যখন চৌদ্দ বছরের নারী
তিন বাচ্চার মা,
বাসে ওঠার সময় কন্ডাক্টার
পাছায় হাত রাখে সুযোগ বুঝে,
যখন সমবয়সীরা উপর্যুপরি
ধর্ষণ করে সহপাঠিনীকে
বিশ বছরের সংসারে প্রতিদিন মায়ের
গায়ে হাত তোলেন বাবারা,
শুধু নারীদের জন্য লিখে
হুমায়ূন আজাদরা নিহত হন পথে ঘাটে।
তখন আমি চাইলেও
তোমায় নিয়ে লিখতে পারি না
তুমি তো শুভ্রতা
এই সহস্রাব্দের একমাত্র নিষ্কলঙ্কতা,
এ পৃথিবী তোমার জন্য না,
পৃথিবীকে সাজিয়ে
তোমায় ডেকে দেব,
এ কটা দিন আমার হৃদয়েই ঘুমাও...
৪. আঙুল
আমি না হয় একটু বেশি আবেগপ্রবণ ছিলাম,
কই কোনো দিন তো তোমার আঙুল ধরতে চাই নি
তোমার কনিষ্ঠা আমাকে বড়ো বেশি এলোমেলো করে দিত,
তোমার তর্জনী আমাকে ভাবাত অনেক
তোমার বৃদ্ধাঙ্গুলির মত তরুণী আজও খুঁজে পাইনি
তোমার মধ্যমাকে এখনও চিনে উঠতে পারিনি
আর অনামিকা ???
তোমার অনামিকার মোহ এখনো কাটাতে পারলাম না
মনে আছে? একদিন তো প্রায় ধরেই ফেলেছিলাম
শুনেছি তোমার গাধাটা নাকি
সুযোগ পেলেই জনারণ্যে,পার্কে,গাড়িতে,বিছানায়
তার লোমশ কালো হাতটা দিয়ে
তোমার ঐ সজনে ডাঁটা আঙুল চেপে ধরতে চায়।
গাধাটাকে সাবধান করে দিও
তুমি ছেড়ে যাবার পর মৃত্যুভয় আমার একদমই নেই ...........