• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫৪ | জুন ২০১৩ | ছোটদের পরবাস | গল্প
    Share
  • ভুল আর ভোলা : আয়ুষ্মান ঘোষ


    — সেদিন তুমি আমায় যে বোতামগুলো দেবে বলেছিলে, সেগুলো কোথায়?

    — সেগুলো তো আপনি নিয়ে গেলেন পাঞ্জাবীতে লাগাবার জন্য।

    — সত্যি নিয়ে গিয়েছিলাম?

    — হ্যাঁ। ...

    যে দুজন ব্যক্তির মধ্যে এইরকম কথোপকথন চলছিল, তাদের একজন, প্রথমজন, হলেন ভোলাবাবু। যাঁকে নিয়ে আমাদের গল্প। সবাই তাঁকে ডাকে — 'ভোলানাথ'। কারণ - এমন কিছু নেই, যা তিনি ভুলে যেতেন না।

    সেদিন ভোলাবাবু বাজার থেকে কাঁকড়া আনলেন। বাড়িতে চারজন। অতএব কাঁকড়াটি যে রীতিমতো বৃহদায়তন, সে কথা বোঝাই যায়। সেটিকে কাটবার জন্য নাইলন ফিতের একটি বড়ো কাটিমের ঘেরের মধ্যে রেখে তার বাঁধন খুলতেই সেটা সেই দড়ির রীল শুদ্ধু টেনে নিয়ে পালাতে শুরু করলো।

    — দড়ি! দড়ি!! এটাকে বাঁধো কেউ। - বলে চ্যাঁচাতে লাগলেন ভোলাবাবু। তাঁর স্ত্রী রান্না ফেলে এসে দড়ি খুঁজতে লাগলেন। ছেলেরাও যোগ দিল।

    ছাতের চিলেকোঠা থেকে স্নানঘর পর্যন্ত সব ওলোট পালোট করা হল। কিন্তু দড়ির আর দেখা নেই। এদিকে ভোলাবাবুর ভয় ক্রমে বেড়ে যাচ্ছিলো। একেই তিনি মোটা লোক। তাতে আবার বসেছিলেন নিচু জায়গায়, পা দুটি উঁচুতে ক'রে। কাঁকড়াটি পালাতে শুরু করলে তিনি ঐ অবস্থা থেকেই দুহাত বাড়িয়ে চেপে ধরেছিলেন সেটিকে। হঠাৎ তাঁর একটি হাত ছেড়ে গেল। একহাতে কোনোরকমে সেটিকে চেপে রেখে অপর হাতটি যতবারই বাড়াতে যান, ততবারই বেকায়দা হয়ে প'ড়ে যেতে থাকেন। কাঁকড়াটি ছাড়া পাবার চেষ্টায় সমানে ছটফট করতে লাগলো। ভোলানাথের ভয়ের কারণ এই যে কাঁকড়ার দাঁড়া দুটি ক্রমে তাঁর হাতের কাছে এগিয়ে আসছিল। একবার যদি সেটা টের পায় যে ওই জিনিসটাই তাকে ধ'রে রেখেছে, তাহলে সাঁড়াশির মতো দাঁড়া দুটি তাঁর হাতের উপর চেপে বসবে।

    অনেক খোঁজাখুঁজির পর ছোট ছেলে এসে হাঁপাতে -হাঁপাতে বললো — একটা রীল ছিল নাইলন দড়ির। তাছাড়া বাড়িতে আর দড়ি নেই। রীলটা কোথায়?

    — রীল? — মনে-মনে আওড়ালেন ভোলানাথ। হঠাৎ সজাগ হয়ে তাকিয়ে দেখলেন — সেই রীল বা কাটিম সুন্দরভাবে উপস্থিত সামনেই আর তারই মধ্যে বিরাজ করছে পুরুষ্টু সেই কাঁকড়া, যাকে তিনি প্রাণপণে চেপে রেখেছেন এক হাতে।

    বিস্ময়ে মুখটি হাঁ হয়ে গেল ভোলানাথের। তাঁর ভুলের তালিকায় আরও একটি গল্প যোগ হলো সেদিন।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments