• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫৫ | অক্টোবর ২০১৩ | কবিতা
    Share
  • নির্বাচিত অসমীয়া কবিতা : কমল কুমার তাঁতী
    translated from Assamese to Bengali by অমিতাভ


    সমুদ্রভীতি

    খুব ভয় পাই সমুদ্রকে—তবু সমুদ্র নিজে নির্বিকার
    বুঝতে পারিনা কী রহস্য লুকিয়ে রয়েছে সমুদ্রের গভীর বুকেযে
    কী সে সঙ্গীত শুনি— মৃত্যুর না জীবনের,
    তবুও সমুদ্র নিজে নির্বিকার। ভয় হয়, সেইজন্যে খুব ভয় পাই।
    যেভাবে বুঝিনা আমি গর্ভবতী নারীর দৃষ্টি
    যেভাবে বুঝিনা আমি ক্লান্তিজীর্ণ নয়নের ভাষা
    সেভাবেই বুঝিনা এই সমুদ্রকে। সমুদ্র নিজেই এক সুপ্রাচীন নারী
    চিরদিন গর্ভবতী। কে জানে
    জন্ম দেবে কেমন সন্তানের। হয়তো আভীর সেই দস্যুদলকে।

    আমিতো নিজেই পিতা। জন্ম দিয়েছি সহস্র সন্তানের।
    তাদের পালন করেছি।
    তাদের চোখে আলো ফুটিয়েছি।
    গলায় দিয়েছি আমার হৃদয়ের, বিবেকের ভাষা।
    কালের অক্ষয় গীত এবারে শোনাতে চাই তাদের;
    সেজন্যেই সমুদ্রে শঙ্খ খুঁজতে এসেছি—
    হঠাৎ ভয় লাগল। খুব ভয় খুব— ভয় লাগে সমুদ্রকে।

    সময় নিজেও নির্বিকার। অতীত, ভবিষ্যত আর বর্তমান
    লীন হয়ে একক সময়। তার চারিদিকে।
    তোমরা নেচে ঘোরো। ছায়ানট কয়েকটি।
    চিনবো ভেবেও হায় চিনতে পারিনা।
    তাই হঠাৎ লাগে ভয় কেউ চিনবে না আমায়
    কেউ চিনবে না আমার সহস্র সন্তানকে।

    আমি জানি সিন্ধুতে আসবে বান। যে বানে ভাসিয়ে নিলো
    বহু সুপ্রাচীন সভ্যতাকে।
    আবার আসবে তেমন বান। ব্যাপ্ত হবে সমুদ্র আবার।
    আঁধার ছায়ার সঙ্গে নিঃশব্দ মৃত্যু
    আসবে হঠাৎ। তাই
    খুব ভয় করে, খুব ভয় করে সমুদ্রকে।

    তবুও, শঙ্খধ্বনি নিনাদিত হোক বাতাসে
    যদিও জেনেছি আমি
    নেমে আসবে আঁধার ছায়া অকস্মাৎ ক্রমে ক্রমে লুপ্ত হবে
    সঙ্গীতের প্রতিটি লহর।
    দেখেছি সমুদ্র নিজে নির্বিকার। চিরদিন গর্ভবতী।
    আমার তো হৃদয় জুড়ে সৃষ্টি-চৈতন্যের বীজ ব্যাপ্ত আজ।
    যদিও ভয় সমুদ্রকে
    আর তার প্রাচীন বুকের রহস্যকে।

    চাঁদের আলো

    আজ রাতে আমার ঘুম এলোনা। অনিদ্রারোগ নয়,
    ভয় নয়, দুর্বলতা নয়। আমার ঘুম আসেনা।
    গুবরেপোকার গুঞ্জনের মতো ভেসে আসা বিমিশ্র কোলাহল
    কখন শেষ হয়ে গেল। শহরের ওপরে
    তারার নিভাঁজ ছবি ভাসে।

    চাঁদটি ভেসে উঠে আকাশের মেঝেতে থিতু হয়।
    সে যেন আমার পৌরুষের প্রতিচ্ছবি? শস্যের সোনালী
    মাঠ উজ্জ্বল হয়। টের পেলাম সকাল নারীর মতো
    পৃথিবীও গর্ভবতী হয়। আলোর ঢেউয়ে নাচতে থাকা এই ফসল
    দেয় নাকি কারো প্রেমের ইঙ্গিত?

    আমি এতো কথা জানিনা। বুঝিনা। এসো, চন্দ্রালোকে
    ঘাসে শুয়ে থাকি, শুনেছি হরিণের বিহ্বল ডাক
    চন্দ্রালোকে ঢেউয়ে ভেসে আসে।
    আমি বুঝতে পেরেছি এতো ফসল, এতো সোনালী শস্য
    ধীরে ধীরে মৌ হয়ে ফিরে আসবে
    তোমার কোমল বুকে।


    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments