• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬২ | মার্চ ২০১৬ | গল্প
    Share
  • চারটি অণু-গল্প : অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়



    দেবীসূক্ত

    বে ছিলাম না, মনেই পড়ে না৷ ইচ্ছা কাকে বলে তাও জানি না৷ যা ভাবি তাই হয়ে ওঠে৷ আমার মধ্যেই অনেক আমির আভাস পাই৷

    অনেকদিন আগে যখন উত্তপ্ত গ্যাস আর ধুলোর বারুদগন্ধে জেগে উঠেছিলাম তখনো বুঝি তা-ই চেয়েছিলাম৷ সামনে সেই অগ্নিবর্ণ পুরুষকে দেখলাম, জড়িয়ে ধরেছিলাম আশ্লেষে৷ সেও আরেক আমি-ই, পরিহাস করে বললো, তোমার আমার যুগ্মমূর্তিকে চন্দনতরুসংশ্লিষ্ট কালসর্পীর মত দেখাচ্ছে দেবী৷ রহস্যে অরুচি নেই, কিন্তু কালো রঙের জন্য খোঁটা—ক্রোধে লণ্ডভণ্ড করে দিতে চাই সবকিছু, সারথির মত তাকে টেনে নিয়ে আসি বাইরে৷ নিজে এক গভীর কন্দরে ডুবে যেতে চাই৷

    আমার যমজ আমাকে কেবল টেনে ধরে রাখবার ব্যর্থ চেষ্টা করে বলে, শান্ত হ, শান্ত হ৷ বলে, আমি সবুজ শৈবালদুকূলে তোর সব দুঃখ মুছিয়ে নেব৷ আগুন নিবে যাক৷ কিন্তু তার গভীর নীলিমা আমাকে আমার কালো রঙের কথাই স্মরণ করায় ... প্রলয়ঙ্করী হয়ে নাচি৷ এক সময় সেও খেপে ওঠে, আয় আমরা দুজনেই একসঙ্গে মরি তবে ... চুল খুলে যায়, তার জল ফুলে ওঠে, কৌস্তুভমালা আকাশে ঝলসে ওঠে৷ কয়েক কোটি বছর এভাবে পার হয়ে যায়৷ এক সময় দেখি মরকত মণির মত আকাশের নিচে ঘুম থেকে জেগে উঠছি৷ সে আমার জন্য কিছু ঝিনুকের উপহার রেখে গেছে৷

    অনেক দূরে দুই সাধক৷ একজন জিওলজিস্ট, ক্লাসে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর সাড়ে চারশো কোটি বছরের ইতিহাস ঘাঁটছিলেন, পৃথিবীর অন্দরের তরল আগুনের কথা, কোর আর ম্যান্টলের কথা, জলের কথা বলছিলেন৷

    অন্যজন কবি, বললেন সেই আগুন রুদ্র, সেই জলশরীর বিষ্ণু, সেই ইচ্ছামূর্তিই দেবী৷



    জলের কাছে

    সুখে-দুঃখে অবরে-সবরে জলের কাছে যাওয়া ভালো। তা সে মিঠে পানিই হোক আর নোনা জলই হোক। ভাটার সময় জলের দিকে নামতে নামতে যে ছাপগুলো ফেলে আসা, জোয়ারের সময় উঠে এসে দেখি জল সেই দাগগুলো মুছছে অলক্ষ্মীর পায়ের ছাপের মতো। জল তো কিছুই নেয় না ... টুকরো কথা, হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া চিঠির কুচি, এমনকি ঝিনুক-শামুকের খোলা পর্যন্ত। জলের কাছে এসবের দাম কানাকড়ি। আস্ত, গোটা একটা মানুষের জন্যই তার সময় নেই। জল, আজ বাবা চলে গেলেন। জল, আমি পড়া ছেড়ে দিচ্ছি। জল, জল, আমার দিদিটার বিয়ে হয়ে গেল। জল কথা শোনে অথচ এমন ভাবে এগিয়ে যায় যে মনে হয়, বলে গেল, ও আচ্ছা। জল, তুই পাথর। অথচ বলে ফেলে হাল্কাও লাগে বেশ।

    অনেকদিন আগে সেঁজুতিকে একবার সেকথা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ও কি আদৌ কিছু শুনছিল? তাছাড়া, সেবারে ওর একপাটি চটি কাদায় এমন আটকে গেছিলো যে শেষপর্যন্ত ছেড়েই আসতে হল। অন্য পাটিটাও সেই দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিল—মা গোঃ, এ তো একদম কিচড় ... আর কখনো যদি জলের কথা বলেছিস ... আমি তখন ধার করা বাইকে কোনো রকমে স্টার্ট দিতে দিতে বলবার চেষ্টা করছিলাম, আমরা যদি ... হাওয়ায় ওর চুল উড়ে মুখ ঢেকে দিল, ও বললো, আমি কিন্তু হ্যাঁ বলে দিয়েছি।

    স্টার্ট দিয়েছি, ও সহজভাবেই এসে বসল, কাঁধে হাত রেখে আবার বলল, বুঝলি, আমি হ্যাঁ বলে দিয়েছি। কাকে, কোন কথায় হ্যাঁ বলেছে তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কারণ ছিল না। বুলেটের কাছে, লাল-সাদা টি-শার্টের গলার নীচে ঝুলে থাকা রোদ-চশমার কাছে, পাঁচ এগারোর কাছে হেরে যাচ্ছে ধার করা হিরো হন্ডা, হেরে যাচ্ছে পাঁচ পাঁচের ক্ষয়াটে-খর্বুটে স্বপন দাস। ফ্যাসফেসে একটা অপরিচিত গলা বলছিল, তাই বুঝি?

    আজ আবার সেই জলের কাছে৷ দুজনেই।

    মাঝখানে পাঁচসাতটা বছরের পলি, একটা নতুন জেটির কাজ চলছে। বাদবাকি সব এক, সেই আঁশটে নোনা হাওয়া আর না-ফুরোনো বয়ে যাওয়া। নাঃ, আরো কিছু আছে ... বাইকের বদলে দূরে হাইওয়ের ধারে আমার ছোট্ট গাড়িটা কেমন জবুথবু, কপালের ওপর থেকে প্রতিবারের মত অবাধ্য চুলগুলো সরাতে গিয়ে দেখি তারাও ভাঙা-মিছিলের নেই-মানুষ হয়ে গেছে৷

    আড়চোখে সেঁজুতিকে দেখলাম, কাদা-কিচড় নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই, গম্ভীর। সুন্দর মুখখানা ভাবলেশহীন। ওকে বলতে চাইলাম, তুই এখন কি করবি—অথচ বলতে গিয়ে বললাম একেবারে অন্য কথা—একইরকম রয়ে গেছে জায়গাটা, দেখেছিস। ও জলের দিকে তাকিয়ে থাকতে বলল—জানিস তো, আমি আর ফিরে যাব না।

    জোয়ার ফুরিয়ে এসেছে, নেমে যাচ্ছে জল, মহাপ্লাবনের পর জেগে ওঠা মহাদেশের মত ডাঙা ভেসে উঠছে জলের বুকে। কাদায় ভুড়ভুড়ি কেটে কাঁকড়ারা নড়াচড়া করতে শুরু করেছে। রবিবারের সন্ধে নামবে, সারা শহরের লোক যে যেখানে উইকএন্ডযাপন করতে গিয়েছিল, তারা সবাই হাইওয়ে ধরে হুশ-হুশ করে উল্টোমুখে এখন৷

    সেঁজুতি আবার বলল—শুনলি, আমি আর ফিরব না৷ কিন্তু সে তো আমাকে নয়৷ ফিরে আসা ভিজে হাওয়ার ঝাপটায় মনে হল, জলের সঙ্গে আরেকটি কথোপকথন শুরু হল এবার।



    পাজলের টুকরো

    সিঁড়ির ল্যান্ডিং-এর জানালা থেকে পিছনের ইঁদারাটা যেন এক প্রকাণ্ড গহ্বর, তার বাঁধানো চাতালে আস্কারা-পাওয়া বটচারাগুলো শেষ বিকেলের আলোয় ঝকঝকে। সেই সবুজগোলা মাথায় নিয়ে দোতলায় উঠেই বাঁদিকের ঘরটায় ঢুকলাম, আর রূপক যেন বলল, এলি তাহলে?

    প্রথম যেবার কমল-মাষ্টারমশাইযের মেয়ে স্বাতী আর ওকে গল্প করতে দেখেছিলাম ... সবার চোখ এড়িয়ে দুটো সাইকেল পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছিল। কলেজ থেকে অনেক দূরে নতুনচটির রাস্তায়, ও আমাকে না দেখার ভান করেছিল, আমিও। কিন্তু মনে মনে দুজনেই জানতাম ঠিকই দেখেছি। তারপর বাড়ি এসে দেখি খাটে বাবু হয়ে বসে আছে, সেবারও এরকম ফিচেল হাসি দিয়ে বলেছিল, এলি তাহলে?

    আমাদের তো বাইরের বন্ধু বেশি ছিল না। স্বাতী মাঝখানে আসা মানে আমি একলা। সেই টেনশনে না কি ওর জন্য উদ্বেগেই, কে জানে, বলেছিলাম, বাবা টের পেলে কিন্তু ... আসলে আমি চিরকাল সেফ খেলবার দলে, আর ও ঝুঁকি নিতেই ভালবাসে, বাবা টের পাবে, ওকে, চলো ঝাঁপিয়ে পড়ি। নতুনচটির ওই রাস্তায় সাইকেলে চেপে, ট্রাকের পিছনে হাত রেখে বেশ অনেকটা যাওয়া যায়? চলো যাই।

    পাড়ায় লোডশেডিং হল কি। কি জানি দিনের বেলার মত গরম আর লাগছে না। দোতলার ঘরটায় প্রথম বছরে ফ্যান লাগানো সম্ভব হয় নি। এই কষ্টগুলোকে তখন মোটেই পাত্তা দিতাম না ... দিনের শেষে ক্লান্তিতেই ঘুমিয়ে যেতাম৷ খুব গরম লাগলে খোলা ছাদ তো ছিলই। এখনো আমাদের খাটগুলো পাশাপাশি সেরকমই। কয়ারের ন্যাড়া গদিতে একটু আধশোয়া হলাম৷ ছোটবেলায় একতলার উঠোনে দাঁড়িয়ে মা ডাকত, বাপি-বুড়ো, খেতে আয়, আর আমরা এরকম আধশোয়া অবস্থা থেকে তড়াক করে উঠে নিচে দৌড় দিতাম ׀

    বারো ক্লাসের পর আমি চলে গেলাম শান্তিনিকেতন, সঙ্গীত-ভবন, আর ও ক্রীশ্চান কলেজেই জোঅলজি ... তারপর ... নাঃ, তার আর পর নেই৷ এক সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনে একটা টেলিফোন আমাদের জীবনটাই ঘেঁটে ঘুলিয়ে দিলো৷ সেই বেপরোয়া রূপক, সেই মারণ-ট্রাক ... আর বেশি বলে কি হবে। এই বাড়ি তো বটেই, বাঁকুড়া শহর অসহ্য লাগতে শুরু করল৷ তারপর স্ট্রাগল করতে করতে, নানাঘাটের জল খেতে খেতে অবশেষে বরোদা৷

    প্রায় কুড়ি বছর এই বিছানায় গা লাগাই না, এ বাড়িতে মানুষের বসবাস বন্ধ তার অর্ধেক সময় ধরে, কিন্তু দেয়ালের খসে পড়া চুনকামের সোঁদা গন্ধ, পুরোনো আসবাবের পালিশ, পাশের জেঠাবাবুদের বাড়িতে মুচকুন্দ চাঁপার সুবাস, সারাদিনের ক্লান্তি, আর রূপকের অলক্ষ্য উপস্থিতি আমাকে যেন এক চেনা অন্ধকারের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে এখন ... পাঠকপাড়ার শরীকি বাড়ি, তারপর বাবার করা কাঠজুড়িডাঙার বাড়ির দোতলার এই একটেরে ঘর ছাড়াও যেখানে আমরা জড়ামড়ি করে থেকেছি ন’মাস ... রূপক সেফ খেলেছিল, তিনবছর নিয়মিত দেখা-সাক্ষাতেও স্বাতীকে জরুরী কথাগুলো কোনোদিন বলে উঠতে পারে নি। স্বাতীই আমাকে জানিয়েছিল—গতবছর পুজোর প্রোগ্রাম করতে গিয়ে মুম্বইতে ওর সঙ্গে দেখা, আবার যোগাযোগ। আর ঝুঁকি ... দিনের পর দিন, ওবেলার খাবারটা কোথা থেকে আসবে জানি না, স্টুডিওতে, প্রোডাকশন হাউসে হানা দিয়েছি, গান শিখিয়ে, আংটি বেচে খরচ চালিয়েছি, সব কথা হয়তো বলার এখনও সময় আসে নি। আসলে রূপকের খানিকটা আমার মধ্যে, আমার খানিকটা ওরই সঙ্গে চলে গেছে ... পাজলের সেই সমস্ত ভাঙা টুকরোগুলো একসঙ্গে এভাবে আবার পাবো তা ভাবি নি কোনোদিন৷ চোখ বুজে আসছে মধুর ক্লান্তিতে৷

    একটু পরেই বাবুদা, আমার জ্যাঠার ছেলে আসবে আমাকে নিতে, এ বাড়ির চাবি এখন তার কাছেই থাকে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিক্রি করে দেবার ব্যবস্থা করার কথা তার। তাছাড়া তার বাড়িতেই ডিনার খেয়ে আজ রাত্রে কলকাতার ট্রেন ধরার কথা ... পরে এই শহরে যদি কখনো আসি ... পরিযায়ী পাখির মত, অরণ্যদেবের মত আসা ... কিন্তু সে পরের কথা, আপাততঃ এই সময়টা আরেকটু থাকুক ׀



    থান

    চ্চগ্রীব উর্ধ্বপুচ্ছ পোড়ামাটির ঘোড়া, নানা মাপের৷ ভাঙা চালি, শুকনো পল্লবের ঘট, খুচরো পয়সা কটা৷ আশপাশে সিজগাছের ঝোপ৷ সাপের খোলসও পড়ে থাকতে দেখলাম মনে হয়৷ গাড়িটা খারাপ হবার আর জায়গা পেল না৷ বেলিয়াতো়ড়ের জঙ্গল৷ বাঁকুড়ায় ভাইপোর বিয়ে সেরে বেলাবেলিই রওনা হযেছিলাম, বাদলটা কি যে এক জঙ্গলের শর্টকাট নিল৷ এখন বোঝো ঠ্যালা৷ একেই কি বলে যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধে হয়৷ এই রাস্তায় গাড়িও দেখছি না আর৷ উপায়ান্তর না দেখে বাদল নিজেই বনেট খুলেছে, খুটখাট করছে৷ করুক৷

    থানটার ঠিক পিছনেই অনেকটা নাবাল জমি৷ রুক্ষ, অ-ফলা মাঠ৷ ঘুরে দেখার মত কিছু নয়৷ পায়ের ওপর দিয়ে ঠাণ্ডা কিছু একটা সড়সড় করে চলে গেল, তার কালো হলুদ চকরাবকরা আমাকে যেন ঝাঁকিয়ে দিল। দেখি ভরা বর্ষার জল পাথরের উপর আছড়ে পড়ে কলকল বইছে৷ এটা আবার কি নদী৷ যেন এক ঘোরের মধ্যে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে এসে পড়েছি, আমি কি নদীর দিকেই নেমে যাচ্ছিলাম? দূরে সেই থানটা এখন ঝুঁঝকো আঁধারের এক ঢিবি৷

    —শোন, একটা ট্যাকা দিয়ে যাস্‌ তো৷

    চমকে উঠলাম মেয়েটাকে দেখে৷ বয়স কুড়ি-পঁচিশ, মুখ-চোখ কাটাকাটা, বেশ ফরসা৷ সামনে শ্রাবণের প্রমত্তা নদী, পিছনে শালের জঙ্গল৷ এই বিজন মাঠের মধ্যে মেয়েটা এলো কোথা থেকে, কাদের বাড়ির?

    —ক্যানে, ট্যাকা দিয়ে কি হবেক?

    তার দুচোখে বুঝি আগুন জ্বলে উঠল—সি কথা তুকে বইলব ক্যানে!

    —তু কাদের বিটিছেল্যা? ই জায়গাটার নাম কি বটে?

    —বিবিডাঙা, তু কুথা যেছিস? ইখানে ক্যানে?

    —মোর গাড়িটো বিগড়োলো৷

    এতক্ষনে কি চোখদুটো একটু নরম হোলো, তাকানো যাচ্ছে৷ কিন্তু ডান চোখের মণিটা কেমন যেন ধূসর লাগলো, নাকি আলো-আঁধারিতে আমারই ভুল৷ পেট-কাপড় থেকে একটা আম বের করে বাড়িয়ে ধরলো, বললো—এটা রাখ, তেষ্টা পেলে নদীর জল খাস, ডুংরি পাহাড়ের জল, ভালো বটে৷ কাঠের বোঝা থেকে একটা সরু লিকপিকে শুকনো ডালও বের করে দিল, বললো এটা মাটিতে ঠুকতে ঠুকতে যাস৷

    —জ্বালালেক, ইখানে ত বড় সাপের উপদ্রব৷

    নিচু হয়ে নদীর জলে পা ধুচ্ছিলো, তীরের মত খাড়া হযে দাঁড়ালো৷

    —তু সাপের ঘরকে আস্যেছিস, সাপটো তোর ঘরকে যায় নাই, কুনো খেতি করে নাই। বড় বেজ করিস বটে বাবু তোরা৷ ঘরের ছেলে ঘরকে যা৷ বাপু বললো না বাবু বললো ঠিক বুঝলাম না, কারণ ঠিক সেই সময়েই আমাকে কে ডাকলো—স্যার, স্যার, কি হল আপনার৷

    পিছনে ফিরে দেখি বাদল। সঙ্গে কিছু দেহাতী লোকজন। আমাকে দেখাচ্ছে আর কি বলছে নিজেদের মধ্যে। মেয়েটা গেল কোথায়?

    ফিরতি পথে বাদল একটাও কথা বলেনি৷ পরে শুনলাম আমার প্রতিবেশী ব্যানার্জীর ড্রাইভারকে নাকি বলেছে—দোষটা আমার, স্যার মানাই করেছিলেন। রেগে গেছিলেন খুব। বনেট খুলে আন্দাজে হাতড়াচ্ছি, এদিকে উনি যে কখন নজর এড়িয়ে নদীর ধারে চলে গেছেন ... আধ ঘন্টা পরে জয় মা বলে স্টার্ট দিতেই গাড়ি আবার আগের মত, কিন্তু স্যারকে আর খুঁজে পাই না৷ কি করি, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না৷ ভাগ্যিস হাটুরে লোকগুলো এসে পড়ল ... দেখি স্যার নদীর ধারে, পাথরে হেলান দিয়ে বসে৷ লোকগুলো বলছিল জায়গাটায় নাকি শঙ্খচূড় সাপের ভয়৷

    তা বলে এরকম ফালতু পয়সা নষ্ট করার কোনো মানে হয়? একটা একশ টাকার নোট পাথর চাপা দিয়ে থানে রাখলেন৷ আবার একটা পোকায় কাটা আম আর একটা শুকনো গাছের ডাল দেখিয়ে বললেন কোন কাঠকুড়ুনি মেয়ে নাকি তাকে দিয়েছে৷ যত্ত গাঁজাখুরি৷



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments