“The painful, patient and silent toil of mothers to gain a fee simple title to the bodies of their daughters, the despairing fight, as of an entrapped tigress, to keep hallowed their own persons, would furnish material for epics”--Anna Julia Cooper, 1893
(As quoted by Dorothy Roberts)
কলম ধরেন নি তিনি তাঁর মূলস্রোত সমাজের দিকে তাকিয়ে। নিজেকে ব্যাখ্যা করার কোনও দায় বোধ করেন নি টোনি মরিসন তাঁর ‘সাদা’ পাঠকের কাছে। তাঁর পাঠক-জগৎ তাঁর নিজের “কালো” সমাজ। নির্দ্বিধায় এ কথা বারবার বলেছেন এই আফ্রিকান-আমেরিকান লেখিকা নানা রচনায়, সাক্ষাত্কা রে। বাইরে থেকে নিরপেক্ষ দর্শক হিসেবে নয়, আফ্রিকান-আমেরিকান অভিজ্ঞতার একেবারে মাঝখানে দাঁড়িয়ে গোটা ইতিহাসকে সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে ধারণ করে বলেন তাঁর কথা, পাকে পাকে জড়িয়ে ধরে পাঠককে টেনে নিয়ে যান সেই অভিজ্ঞতার কেন্দ্রবিন্দুতে। দীর্ঘ যন্ত্রণার ইতিহাসের পুংখানুপুংখ বিবরণের মধ্যে দিয়ে, এতটুকুও না ছেঁটে ফেলে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই তিনি খুঁজে পান নিজেকে। বারবার ব্যথার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, তার সাথে সংঘাতের মধ্য দিয়েই আত্মার বিশুদ্ধিকরণ, তার উত্তরণ। এই জীবনদর্শনই মরিসনের সাহিত্যের মূলভিত্তি। র্যাল্ফ এলিসন (Ralph Ellison)-এর বহু পঠিত উপন্যাস “Invisible Man”[১] প্রসঙ্গে তাই মরিসনের জিজ্ঞাসা: ‘অদৃশ্য সে কার কাছে? আমার কাছে তো নয়!”—আমরা খুঁজে পাই এক সম্পূর্ণ ঔপনিবেশিক মানসিকতা-শূন্য মন, যার কোনও আক্ষেপ নেই ‘ইউরোপীয় রেনেসাঁ’-র ভাগীদার না হতে পারার জন্য।
যৌবনের শুরুতে যখন লিখতে শুরু করেন ‘Black Power Movement’তখন তুঙ্গে।তারই মূল স্লোগান ‘Black is Beautiful’চারপাশে ছড়িয়ে। মরিসনের মতে কিন্তু এই দাবী অনৈতিহাসিক। আলাদা করে ‘Black is Beautiful’ ঘোষণার অর্থ কী? কেউ বলেছিল নাকি সে ‘অ-সুন্দর’? বাইরের কে কী বলছে তাতে এসে যায় কী?! অন্য কারুর চোখে তো দেখি না আমি নিজেকে/নিজেদের। তাছাড়া, একটা সময় তো ছিলই ইতিহাসে যখন ‘Black wasn’t beautiful’। ছোটবেলায় ইস্কুলের এক বন্ধু তাঁকে এক গোপন আকাঙক্ষার কথা বলেছিল — সে জানিয়েছিল সে চায় কালো চোখের বদলে নীল দুটি চোখ। কী তীব্র আত্মগ্লানি—শিউরে উঠেছিল তাঁর তরুণ মন। কৈশোরের সেই বিহ্বল বিষণ্ণতা থেকেই জন্ম নিয়েছিল মরিসনের প্রথম উপন্যাস ‘Bluest Eye’।বিশ্ব সাহিত্যের আঙিনায় কেবল মরিসন-ই নন, তাঁর সমসাময়িক (এবং পূর্বসূরীরাও) আফ্রিকান-আমেরিকান লেখিকাদের দাপট আজ আর অস্বীকার করার উপায় নেই। এঁদের বলিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গী, স্বচ্ছন্দ চলাফেরা বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে, ঋদ্ধ করেছে আজকের “ফেমিনিষ্ট” আন্দোলনকে, চিন্তাভাবনাকে। পশ্চিমে নারীবিদ্যা-চর্চার একেবারে গোড়ায় মাতৃত্বকে একরকম বালাই হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। অথচ, সেই মাতৃত্বেই ‘কালো’ মেয়েরা দেখেছিল তাদের মুক্তি। সীমন দ্য ব্যোভেয়র (Simone de Beauvoir) তাঁর “The Second Sex” গ্রন্থে একসময় দাবী করেছিলেন, “It was as Mother that woman was fearsome; it is in maternity that she must be transfigured and enslaved। মাতৃত্বের এই অবমূল্যায়ন কিন্তু “ব্ল্যাক” ফেমিনিষ্টদের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য হয় নি। কারণটি অবশ্যই ঐতিহাসিক। ‘দাসপ্রথার’ যুগে একমাত্র নিজের সংসারের গৃহস্থালীর মধ্যে, সন্তানের স্বাভাবিক লালন-পালনে সে খুঁজে পেয়েছিল তার ‘মানবীরূপ’।বাকি সময় তো কেটেছে “মনুষ্যেতর” জীব হিসেবে, ‘সাদা’ মনিবের জন্য শ্রম বিকিয়ে। কায়িক শ্রম, এমনকীreproductive labor-এরওপরেও ছিল সাদা মালিকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ।“স্লেভ” নারীর সন্তান-উত্পাদনের একমাত্র উদ্দেশ্য ভবিষ্যতের দাস-শ্রম অব্যাহত রাখা। জন্মের মুহূর্তেই সদ্যোজাত সন্তানকে মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বিকিয়ে দেওয়াই যেখানে আদত সেখানে মাতৃত্ব কোনও বাধা তো নয়ই, বরং এক রাজনৈতিক কর্মসূচী কিংবা উদ্যোগ। দাসপ্রথার মত ভয়ংকর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রথম এবং প্রাথমিক ভিত্তিভূমি তৈরী করেছিলেন ‘স্লেভ’ মেয়েরা তাঁদের স্বাভাবিক “জীবপালিনীর” ভূমিকাটি পালনের স্পর্ধার মধ্যে দিয়ে—জীর্ণ ‘স্লেভ কোয়ার্টার্স’-এর মলিন ঘরেই পেতেছিলেন তাঁদের সংসার। এই নিজ-গৃহের নিশ্চিন্ততাতেই মায়ের কাছে সন্তানের বৈপ্লবিক চেতনায় দীক্ষা। এই প্রসঙ্গে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিপ্লবী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, Thich Nhat Hahn-এর উক্তি মনে পড়ে যায়: “... perhaps, resistance means opposition to being invaded, occupied, assaulted and destroyed by the system. The purpose of resistance, here, is to seek the healing of yourself in order to be able to see clearly ... I think that communities of resistance should be places where people can return to themselves and recover their wholeness.” (as quoted by bell hooks)
সন্তানের ক্ষমতায়নেই (রাজনৈতিক)তখন মাতৃত্বের মূল লক্ষ্য, তার সার্থকতা। ‘ব্ল্যাক’ মেয়েদের এই দৃষ্টিভঙ্গী, এই সচেতনতা যা উঠে এসেছে তাদের বিশেষ সামাজিক-রাজনৈতিক ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা থেকে, ফেমিনিষ্ট থিওরির ক্ষেত্রে আজ তা নতুন সংযোজনই নয়, বরং paradigm shift বললেও সম্ভবত: অত্যুক্তি হয় না। “Had black women voiced their views on motherhood, it would not have been named a serious obstacle to our freedom as women. Racism, availability of jobs, lack of skills or education and a number of other issues would have been at the top of the list-–but not motherhood”,বেল হুকস-এর মত বুদ্ধিজীবীদ্ব্যর্থহীন গলায় ঘোষণা করেন। ইতিহাসের এ এক আশ্চর্য ‘আয়রনি’। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের চিরাচরিত ‘নির্দেশ’ ‘পালনের’ মধ্যে দিয়েই বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন এই মেয়েরা। মাতৃত্বকে তার সীমিত গণ্ডি থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন বৃহত্তর সমাজের জীবপালিনীর ভূমিকায় উত্তরণের মধ্যে দিয়ে। বাইরের পৃথিবীর ছুঁড়ে দেওয়া ক্ষতের প্রশমনের একমাত্র জায়গা, আত্মমর্যাদা বোধ গড়ে তোলার নিশ্চিন্ত আশ্রয় সেই মলিন ‘গৃহকোণ’-এর এই ‘subversive’, কিম্বা ‘বিপজ্জনক’ দিকটি সম্পর্কে ‘কালো-সমাজ’ বরাবর সচেতন। ‘আফ্রিকান-আমেরকান’ মানুষের ইতিহাসে গৃহের সীমিত পরিসরের এই বৈপ্লবিক রাজনৈতিক মাত্রা আজও স্বীকৃত। ভাবতে আশ্চর্য হতে হয়, সম্পূর্ণ ভিন্ন ইতিহাস, ভিন্ন সমাজে দাঁড়িয়ে এক দার্শনিক মেয়েদের জীবপালিনী ভূমিকার সীমিত গণ্ডি পেরোনোর সম্ভাবনাকে অনুমান করতে পেরেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘নারী’ প্রবন্ধে লিখছেন, “জীবপালনের সমস্ত প্রবৃত্তিজাল প্রবল করে জড়িত করেছে নারীর দেহমনের তন্তুতে তন্তুতে। এই প্রবৃত্তি স্বভাবতই চিত্তপ্রবৃত্তির চেয়ে হৃদয়বৃত্তিতেই স্থান পেয়েছে গভীর ও প্রশস্তভাবে। এই সেই প্রবৃত্তি নারীর মধ্যে যা বন্ধনজাল গাঁথছে নিজেকে ও অন্যকে ধরে রাখার জন্যে প্রেমে, স্নেহে, সকরুণ ধৈর্যে। মানবসংসারকে গড়ে তোলবার, বেঁধে রাখবার এই আদিম বাঁধুনি। এই সেই সংসার যা সকল সমাজের সকল সভ্যতার মূল ভিত্তি। সংসারের এই গোড়াকার বাঁধন না থাকলে মানুষ ছড়িয়ে পড়ত আকারপ্রকারহীন বাষ্পের মত; সংহত হয়ে কোথাও মিলনকেন্দ্র স্থাপন করতে পারত না। সমাজবন্ধনের এই প্রথম কাজটি মেয়েদের।” এক্ষেত্রে, কবি যে কোনো biological determinism-এর কথা বলছেন না সেটি স্পষ্ট হয়ে যায় তাঁর পরবর্তী মন্ত্যব্যে: “স্বাভাবিক জীবপালিনী বুদ্ধি কেবল ঘরের লোককে নয়, সকল লোককে রক্ষার জন্যে কায়মনে প্রবৃত্ত হবে?” বাইরের জগৎ না গৃহকর্ম-–এই দুয়ের মাঝের বেড়াটি যে কৃত্রিম তা ‘ব্ল্যাক’ ফেমিনিস্টদের মত রবীন্দ্রনাথও বুঝেছিলেন। তাঁর মতে এই কাজে সফল হতে গেলে মেয়েদের, “অজ্ঞানের জড়তা এবং সকলপ্রকার কাল্পনিক ও বাস্তবিক ভয়ের নিম্নগামী আকর্ষণ থেকে টেনে আপনাকে তুলতে হবে।”সেই ‘জীবপালিনীর’স্বাভাবিক ভূমিকাকে জড়িয়ে ধরেই এগিয়েছেন এই মেয়েরা। প্রথমে ‘দাসপ্রথা’, পরের যুগে ‘JimCrow’[২] —সামাজিক অস্পৃশ্যতার অন্ধকার ঠেলে এই মায়েদের/মেয়েদের কোনরকমে আগলে রাখতে হয়েছে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া সমাজটাকে। একই সঙ্গে পালন করতে হয়েছে মায়েদের ঐতিহ্যগত ভূমিকা, আবার অক্লান্ত কায়িক শ্রম দিয়ে পুরুষের ভূমিকাও বাইরের চাষের কাজে।
কি নিদারুণ দৃঢ়তায়, সমাজের কত অজস্র ‘নিম্নগামী আকর্ষণ’কে পায়ে দলে এই মেয়েরা/মায়েরা গড়ে তুলেছিলেন তাঁদের ‘সভ্যতার ভিত্তিভূমি’ তার নিদর্শন ছড়িয়ে আছে নানা দলিলে, রচনায়। গৃহ যুদ্ধের সময়ের বিখ্যাত সমাজকর্মী, প্রাক্তন ‘স্লেভ’ ফ্রেডেরিক ডগলাস তাঁর স্মৃতিচারণে লিখছেন: “I never saw my mother to know her as such more than four or five times in my life; and each of these times was very short in duration, and at night. She was hired by Mr. Stewart, who lived about twelve miles from my house. She made her journeys to see me in the night, travelling the whole distance on foot, after the performance of her days work. She was a field hand, and a whipping is the penalty of not being in the field at sunrise. I do not recollect of ever seeing my mother by the light of day. She was with me in the night. She would lie down with me and get me to sleep, but long before I waked she was gone”. [৩]
সারাদিনের হাড়ভাঙা শ্রমের পর দীর্ঘ বারো মাইল পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন কেবল শিশু সন্তানকে বুকে নেওয়ার জন্য, আবার সেই মা-ই ‘দাসত্বের’ ভয়ংকর অভিজ্ঞতা থেকে সন্তানকে মুক্তি দিতে শিশু কন্যাকে নিজের হাতে খুন করেন। মাতৃত্বের গতানুগতিক ধারণাকেই এঁরা চ্যালেঞ্জ করে বসেন। বলাই বাহুল্য এই প্রসঙ্গে টোনি মরিসনের উপন্যাস ‘Beloved’মনে না এসে পারে না।
সমাজের কাছ থেকে সমর্থন আদায়ের জন্য যে-কোনো শোষণব্যবস্থা কিছু ‘ইমেজ’ তৈরী করে যেগুলি মোটেই সদর্থক নয়।‘কালো’ মেয়েদের সম্পর্কেও সেরকম বেশ কিছু ‘ইমেজ’ মূলস্রোত সমাজের psyche-তে গেঁথে দেওয়া হয়েছিল, যেমন ‘Mammy’, যে মানুষটি সাদা পরিবারে শিশুদের দেখা শোনার কাজ করেন—নেহাতই নিরীহ, ভীতু ইমেজ। আবার বাইবেল-এর গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে Jezebel—উচ্ছৃঙ্খল, ব্যাভিচারী নারীর ইমেজ, আর নয় তো অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক ‘welfare queen’, অকর্মণ্য, দায়িত্বজ্ঞানহীন, সরকারী অনুদানের ওপর নির্ভরশীল। দৈহিক পরিশ্রম, শারীরিক অত্যাচার ছাড়াও এই সব ভয়ংকর ‘ইমেজ’-গুলির বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই করে গড়ে তুলতে হয়েছে তাদের নিজস্ব ‘identity’। গৃহযুদ্ধ পরবর্তী অধ্যায়ে ব্ল্যাক পরিবারের/সংসারের সেই ‘subversive’চরিত্রের পরিবর্তনের যেন একটা দ্রুত ঝোঁক দেখা দিয়েছিল, তার বৈপ্লবিক চেহারাটি সরে গিয়ে বুর্জুয়া ‘সাদা সংস্কৃতির’ সঙ্গে তাল মিলিয়ে চিরাচরিত পিতৃতান্ত্রিক মডেলের ছাঁচে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছিল। প্রচার শুরু হয়েছিল যে ‘ব্ল্যাক’ সমাজের সমস্যার মূলে মেয়েদের ঐতিহ্যগত ভূমিকার পরিবর্তনই দায়ী। কিন্তু এই লড়াকু মেয়েরা রাজনৈতিক চেতনায় এমন পরিণতিতে দাঁড়িয়ে যেখান থেকে সামাজিক-রাজনৈতিক শোষণের গোটা চেহারাটা তাঁদের কাছে স্পষ্ট, তাঁরা জানেন বর্ণবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ, সাম্রাজ্যবাদ জড়িয়ে রয়েছে এক নিবিড়, জৈবিক সম্পর্কে। কেন মূলস্রোত সমাজ পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় তা তাঁরা জানেন। তাঁরা জানেন ‘কালো পরিবার’-গুলির ‘subversive’চেহারাটা বৃহত্তর ‘রেসিস্ট’ সমাজকে কেন বিপন্ন করে। রাজনৈতিক বোধের শিখরে দাঁড়িয়ে এই ফেমিনিস্টরা আজ তাই অনায়াসে ঘোষণা করেন, “A feminist world-view will enable women and men to free their minds from patriarchal thought and practice and at last to build a world free of domination and hierarchy, a world that is truly human”। সিভিল রাইটস আন্দোলনের নতুন ‘মুখ’Black Lives Matter-কে ঘিরে সমালোচনার ঝড়, সংকীর্ণতার অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করে সম্প্রতি ঘোষিত হয়েছে আন্দোলনের মূল কর্মসূচী, প্রতিফলিত করছে সেই বিশ্ববোধ, সেই উদার আহ্বান যা রবীন্দ্রনাথের মানবধর্মের সঙ্গে একাকার। মূল দাবী: এতকাল ধরে ‘কালো সমাজ’ যে হিংসা, অন্যায় সয়ে আসছে তার অবসান। জেলখানা আর মিলিটারি উদ্যোগ থেকে সরিয়ে সামাজিক সম্পদ ব্যয়িত হোক গণশিক্ষা, গণস্বাস্থ্যে। তারই সঙ্গে অবসান হোক মধ্যপ্রাচ্যে পালেস্তিনিয়ান মানুষের মুক্তির প্রতীক্ষা, অবসান হোক ইসরায়েলি দখল—এক লাফে জাতীয় সীমা পেরিয়ে মানবসংসারকে এক সূত্রে গেঁথে নেওয়ার দূরদর্শিতা।‘ব্ল্যাক আন্দোলনের’, বিশেষ করে ‘ব্ল্যাক’ ফেমিনিস্টদের দৃষ্টিভঙ্গী এবং রবীন্দ্র-চিন্তার এ যেন এক অনিবার্য যোগাযোগ। এই মুহূর্তে তাই কানে ভেসে আসছে সেই গান: “তবু প্রাণ নিত্যধারা হাসে সূর্য চন্দ্র তারা”। আমেরিকা থেকে ‘গাজা’, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা—রবীন্দ্রনাথের গানের মতই ক্রমাগত বয়ে চলেছে— “মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে জীবনের প্রতিরোধ”, আর সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে গড়ে ওঠা গভীর জীবনবোধ যেন “জীবনের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যক্তির প্রসারণ” (শঙ্খ ঘোষ)।
সূত্রনির্দেশ :
[১]“Invisible Man is a novel by Ralph Ellison about an African American man whose color renders him invisible, published by Random House in 1952. It addresses many of the social and intellectual issues facing African-Americans early in the twentieth century…”--- Wikipedia
[২] Jim Crow: “Jim Crow laws were state and local laws enforcing racial segregation in the Southern United States. Enacted after the Reconstruction period, these laws continued in force until 1965. They mandated de jure racial segregation in all public facilities in states of the former Confederate States of America, starting in 1890 with a "separate but equal" status for African Americans.”—Wikipedia
[৩]“Homeplace”, bell hooks,
মূলত: যে সব বই এবং রচনা এই প্রবন্ধটি লিখতে সাহায্য করেছে:
১. দামিনীর গান – শঙ্খ ঘোষ, প্যাপিরাস।
২. hooks, bell. ‘Homeplace’: A Site of Resistance, ‘Yearning: Race, Gender and Cultural Politics’, Publisher: ‘Turnaround’, London, 1991
৩. ‘নারী’ এবং ‘কালান্তর’ -- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৪. Simone de Beauvoir, ‘Second Sex’, Vintage Classics, 1949