• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬৪ | সেপ্টেম্বর ২০১৬ | কবিতা
    Share
  • গোধূলির ডাকপিওন : সুবীর বোস


    গোধূলির ডাকপিওন - ১২

    কয়েক ছটাক হুগলী সেতু এবং ছায়ার দাগে
    সে হাঁটছিল রঙিন ফড়িং ডানায় স্নিগ্ধ আলো
    নিয়ন আলোর বিবর্তন আর নদীর সান্ধ্যরাগে
    ফড়িং নেশার সে রাত যেন ক্রমশ জমকালো

    আমি তখন এক সে ভ্রমর চোখের কোণে কোণে
    ফড়িং নেশায় জমাচ্ছি ফুঁ শঙ্খতে গোপনে

    এমন সময় কে বাজালো – “জোৎস্না রাতে...বনে”
    এবং যেন আকাশে চাঁদ নন্দিত চমকালো
    সে এক সময় – রবীন্দ্রময় - সাক্ষাৎ ও নির্জনে
    ফড়িং নেশার ভূত তাড়ালো ছড়িয়ে স্নিগ্ধ আলো।

    গোধূলির ডাকপিওন - ১৩

    কেকের গুঁড়োতে সকাল ছ’টার স্কুলবাস ঢুকে পড়লে
    তুমি নিয়মেই চিনি ও পাহারাদার
    আর আমি আড়ভাঙ্গা ভোরের লোকাল
    আহা সুখী পর্যটন মেলার মোড়কে গড়ে ওঠা
    স্কুলটাইমের সেই বনমোরগের হাটে
    কী ভীষণ ব্যতিক্রমী হতে থাকে আমাদের অভিমান আর দক্ষিণের দৃশ্যকল্প
    সাতরঙা সেই রামধনু আবহে
    তুমি দেখতে পাও ডানা মেলতে চাইছি আমি - ভোরের লোকাল
    যে কিনা নানান অজুহাত শেষে বলবে,
    রটনার বাইরে আর আমরা বেরতে পারলাম কই!

    গোধূলির ডাকপিওন - ১৪

    কানুদার চায়ের দোকান ঘেঁষে কোনও কোনও দিন
    সকালেই সন্ধ্যা হেঁটে গেলে — খোলাচুল
    রক্তরং হয়ে ওঠে এলাকার কিছু বুড়ো কাক
    চিনি ছাড়া লাল চায়ে ডুবে থাকা ওঁরা
    দুধের সরের মতো উপরে উপরে পাঁউরুটির অনিশ্চয়তায় টিঁকে থাকা ওঁরা
    যেভাবে বিস্কুট ছোঁড়ে তলানিতে পড়ে থাকা চায়ে
    দেখে মনে হয় – জল ও কাকের গল্প ফিরে এল ওই

    কানুদার চায়ের দোকান ছুঁয়ে কোনও কোনও দিন
    সকালেই সন্ধ্যা নেমে এলে — খোলাচুল
    ইচ্ছে আর উপায়ের মাঝে ঢুকে থাকা কিছু পুরনো বিস্কুট
    গলে গলে পড়ে লাল চায়ের শরীরে

    গোধূলির ডাকপিওন - ১৫

    অনামিকা, বৃষ্টির বেতালে ঝাপসা হয়ে গেছে আমাদের প্রিয় ডাকঘর
    অনেক বদলে গেছে আমাদের ডাকবাক্সের ঘন রং - আর
    খেয়ালি বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের চিঠিগুলো মিশে গেছে ছাদে আর সিঁড়ির হাতলে
    অথচ ডাক ও তার বিভাগের বিবিধ নক্সার
    সামান্য দূরত্বে
    আমি আজও তোমারই চিঠির খোঁজে প্রকৃত ডাকপিওনের মতো মিশে আছি
    যথাসাধ্য চেয়ারের ভিড়ে
    আমার আধুলি ও আংটিতে আজও প্রতিদিন উঁকি মারে
    আমাদের পরিচিত জানালা-স্বভাব
    অনামিকা, তুমি তো পদ্মা বা তিস্তা নও
    তবে কেন আজও আমাদের বিলি-বন্দোবস্তের সংলাপে
    অকারণে বিঁধে আছে ইলিশ-বিলাস!

    গোধূলির ডাকপিওন - ১৬

    অবসরে বেঁটে সাইকেলে ফেরে পুরোনো অসুখ
    ফেরে কুয়াশা পেরিয়ে প্রিয় কাকলির মুখ
    অবসরে ঘুমের ভিতরে ফেরে হাসি-কান্না - শিশুর দেয়ালা
    অবসরে আমি আজ মৃদু মোমের সিদ্ধান্ত মতে
    সবিনয়ী ছায়ার পেয়ালা
    অবসরে এখনও মনন জুড়ে কাকলি-একুশ, তার দৃশ্যকল্প — আগেকার ঢেউ
    অবসরে ঘিরে ধরে কাকলি-অসুখ

    অবসরে সামনে এসে দাঁড়াতে চায় না আর অন্য কেউ!

    গোধূলির ডাকপিওন - ১৭

    পেন্সিলে আবেগ এলে খাতায় ছড়িয়ে পড়ে ঋণ
    স্পর্শের আবেগে ভিজে মেঝে ফুঁড়ে উঠে আসে উদ্যমী ইন্ধন
    সযত্নে মেধাবী শঙ্খ আড়াল রাখা তুমি এ বৃষ্টি বোঝ না তা তো নয়
    তবে কেন শিমুলের স্বাধীনতা আর ঋতু ভাঙা লাল রঙ
    ঢেকে রাখো তরমুজবাগানের নদীচরে
    ব্রহ্মকমল আমি দেখ মিশে আছি পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে
    ওখানে কৈশোর পার ডুবুরির উদ্ধত চিবুক যদি চিনে নিতে পারো
    ইঁদারার পাহারা হটাও
    স্বাস্থ্যবতী সুপুরিবাগান তুমি আমাকে চেনাও আজ খোলহীন পাঁজরের গন্ধ
    আমি ফের কল্পকথা খুঁজে পেতে চাই।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণ - অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments