• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬৪ | সেপ্টেম্বর ২০১৬ | কবিতা
    Share
  • আগন্তুক নারী : গৌরী দত্ত




    শহরে এসেছে এক কালাশনিকভ নারী, আম্যাজনি বুক
    হিরো হন্ডায় বসা চিত্রাঙ্গদা, তার জঙ্গি চিবুক
    নিঃশ্বাসে কল্লোলিনী পেট্রল লাভা, পাণিতে অর্জুনি গাণ্ডীব
    ধামসা মাদল এঞ্জিনে বাজে — নাই নিস্তার বিট, নাই রিপ্রিভ।
    থরহর টঙ্কার, নিউ ইম্প্রুভ্‌ড খর গুণ
    মারণঘুড়ির সুতো কাচ ও পাথর মাঞ্জা, আপ-টু-ডেট ধনু, শরঋদ্ধ তূণ
    পিঠে ব্যাকপ্যাকে বাঁধা, মলোটভ ধরা দাঁতে বারুদের মিসি
    চোখে আস্ফালন প্রশ্ন
    দৈনিক যাপনে কেন বেঁচে থাকে অন্যায়ের সঙ্গে সালিশি?

    অষ্টকলায় পুরো যৌবনা, অন্য অষ্টমে অর্ধনর
    উভযোনি মত্তা অবতার
    নির্ভয়ার স্থিরদেহ কোঁদা উল্কি বাউটির নিচে কোনো লৌহশলাকার
    ক্রুদ্ধ অঙ্গীকার
    পারিশ্রমিক প্রতিকার পাওনা কড়া গণ্ডা নিক্তি মাপে লক্ষ্মীবাই বাউন্টি হান্টার।

    পুকুরে উঠেছে এক মোহিনী অট্টম নারী, মৎস্যপুচ্ছ, নৃত্যমুদ্রায়
    মরীচিকা আবাহন, স্বরহীন সুরে তার জাল বরাভয়
    কখনও কইয়ের মত মারকাটারি কাঁটা, টালি দেওয়া আঁশ
    গুপ্ত জিভ উলূপীর ফণা, অগম্য অধরা হোলোগ্রাম পরিহাস
    কখনও পিচ্ছিলদেহি কখনও ইলেকট্রিক ইল
    চোখে চোরাটান আর আকণ্ঠ সম্মোহনে করেছে আবিল
    পাথরঘাটায় ওৎ পাতা জলদস্যু ধীবর জেলে মৎস্য শিকারী
    চাবুকের মত লেজে শঙ্করীমাছ হয়ে ধর্ষণকারী
    -দের ল্যাসু দিয়ে টেনে শ্যাওলা পানায় জলে ডুবকবরেতে

    মায়াবী কঙ্কাবতী ঠেলে দেয় ধূর্ত মননে।
    অথবা চিলের ছোঁ কিংবা যে অকাল অশনি শ্মশানের আঁশ শেওড়ায় বাজে
    তার মত দ্রুত অঘটনে
    মৃণালের মত ছিপে বারুণি ডাকিনী গাঁথে প্রতিশোধী পণে।

    বাজারে বসেছে এক চামুণ্ডা নারী, জগদ্দল স্কন্ধ, গুরুত্মপূর্ণ দুই ঊরু
    কালবৈশাখী চুল, ভিমরুলি ভর্ৎসনা ভুরু
    শিব-ডমরুর মত মধ্যবয়সিক স্তন, লজ্জাহীন আয়োজন কটি
    গলায় ঝুলন্ত ক্রুর বরমাল্য, শত পাষণ্ডের করোটি,
    ছিন্নমস্ত হতে হবে — সাবধান, দেহমৃগয়ার হোতা পুরুষ অসুর
    হাতে রামদা আর চুপড়িতে থরে থরে আততায়ী নাম, আর ফর্দে কসুর
    কার কত দোষ আর কে করে অবলার নির্যাতন,
    তার অন্তর্জলী
    শোধবোধ যাত্রা হবে মুণ্ডমালিনীর রক্তচোঁয়া কুণ্ডে বলি।

    তাম্বুলে রাঙা মুখ যেন রক্তপেয়ী বিবর
    এক জৃম্ভা হয়ে যায় ত্রিভুবনে সাহারার ঝড়
    এক তূরী বেজে ওঠে যেন পৃথিবীর সব খণ্ডযুদ্ধে রণভেরী স্বর।

    পাড়ায় টহল দেয় নারীবাহিনীর স্বেচ্ছাদল
    অচেনা আগন্তুক মুখ সব, তবু কোনো আর্কেটাইপ চিরযুগী নারী সমীহার অনর্গল
    কুচকাওয়াজ শোনা যাচ্ছে এতদিনে, এতদিনে মাঠের মিনার সেই ট্রোজান ঘোড়ার
    পেট থেকে প্রতিবাদ মূর্ত হয়ে মৌচাক ফাটা ঝাঁক বিষহুল, কাস্তে, কাঁটাতার
    অস্ত্র নিয়ে বেরিয়েছে, চোখের বদলে চোখ, খুনের বদলে খুন চাই
    খাল বিল রোয়াক চত্তর রাষ্ট্রপথ জুড়ে অপরাস্ত শ্লোগানে ভেঙেছে চড়াই
    অনাহত ভাষাহীনতার।
    অপারগ লুণ্ঠিতা পুনর্জন্ম নিয়ে বাজপাখি, বোমারু বিমান
    অথবা ঝাঁসি কি রাণী, মর্দানি, ক্রুসেডার — স্ত্রী রক্ষা, নারী পরিত্রাণ

    জরুরী কার্যক্রম, তাই এ শহরে
    নারীমাতৃক ঠাকুমার ঝুলি নতুন গল্প ছাপে অটো-কম্বাস্টিব্‌ল্‌ প্যাপিরাস ও রোমানে
    লাল নীল কমলিনী রাজকন্যা হানা দেয় খোক্কোশের ঘরে।
    খাইবার রাইফেল নারী, তরোয়াল তূর্য নারী — সারা রাত নিদ্রাহীন চরে।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)