• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬৪ | সেপ্টেম্বর ২০১৬ | গল্প
    Share
  • সুপারি : আইভি চট্টোপাধ্যায়


    মুন্নামামার মটরসাইকেলের আওয়াজ না? রীতেনদের সুপুরি-বাগানের মধ্যে ঢুকে পড়ল বটা। এখনই মুন্নামামার মুখোমুখি হবার ইচ্ছে নেই। যদিও মুন্নামামা আজ দরাজ মেজাজে থাকবে। সামনে পেলে হয়ত গলা থেকে সোনার হার খুলেই পরিয়ে দেবে।

    ভোর ভোর কাজটা শেষ করে বাড়ি এসে ঘুমিয়ে পড়েছিল। নিশ্চিন্ত ঘুম। এক একটা নিখুঁত কাজ শেষ হয়, আর এইরকম একটা ঘুম আসে। মা তুলে দিল, ‘আড়াইশ’ মাছ এনে দিবি বাবা? পিন্টুটা একটু মাছ ভাত খেয়ে পরীক্ষা দিতে যেত।‘

    ভোরবেলা বেরোনোর সময় দেখেছিল, বাইরের ঘরে আলো জ্বলছে। একবার থমকে দাঁড়ানো হয়েছিল। বটা বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে, আবার ঢুকছে, এমন সাক্ষী না থাকাই ভালো। পরীক্ষা বলে রাত জেগে জেগে পড়ছে পিন্টু। দেখলেই হয়ে গেল। মা তো জানবেই। ঘরে ঢুকে দেখল, পিন্টু অঘোরে ঘুমোচ্ছে। রাত জেগে পড়ে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছে। আলো নিভিয়ে আস্তে দরজা টেনে বেরিয়ে গেছিল।


    টার্গেট মিস করা চলবে না। রোজ ভোরবেলা অন্ধকার থাকতে হাঁটতে যায়, খবর ছিল। পার্কের দিকটায় যায়। ওদিকে ভোর ভোর একটু ফাঁকা থাকে। আরেকটু আলো ফুটলেই মর্নিং ওয়াকের ভিড় শুরু হয়ে যাবে। মুন্নামামার লোকই এসব ব্যাপারে খবর এনে দেয়। বটার কাজ শুধু নিখুঁত অপারেশন।

    একমাস আগে সুপারি। তারপর এই একমাস ধরে মুন্নামামার লোক টার্গেটকে অনুসরণ করেছে। সুপারি কে দিয়েছে মুন্নামামা বলে নি। খবর নিতে আগ্রহ দেখায় নি বটাও। মিডলম্যান হিসেবে এসব সামলানোর দায় মুন্নামামারই। বটা শুধু জানে, কাজটা নিখুঁত হতে হবে। নিজের কাজ নিপুণভাবে সেরে ফেলতে হবে। কে সুপারি দিল, কেন দিল, দুজনে কিসের শত্রুতা ... সেসব নিয়ে ভাবার কারণ নেই। এক একটা কাজ হয়, আর ভেতর থেকে অসীম তৃপ্তি। প্রতিটা নিখুঁত কাজ শেষ হয়, আর অন্তত বারো ঘণ্টা একটানা গভীর প্রশান্তির ঘুম। টাকা তো আছেই, এই দু’ আড়াই বছরে যা রোজগার হয়েছে তা স্টোনচিপস সাপ্লাই করে দশ বছরেও রোজগার হবে না। টাকা ছাড়াও এই ঘুম, এই প্রশান্তি, এটা উপরি।


    তবে ওপরদেখানি স্টোনচিপসের ব্যবসাটা রাখতেই হয়। ব্যবসাটা আসলে মুন্নামামার। এমন কতগুলো যে ব্যবসা আছে লোকটার কে জানে। ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা, দশ-বারোটা ট্রাক চলে। প্রোমোটারি তো আছেই, হেভেন’স গার্ডেন এখন বেশ নাম করেছে এদিকে। ফেজ ওয়ান, ফেজ টু জমজমাট। দুটোতেই স্টোনচিপস সাপ্লাইয়ের কাজ দিয়েছে বটাকে। গঙ্গার পাড় ঘেঁষে নতুন আরেকটা উঠছে। হেভেন’স গার্ডেন ফেজ থ্রী।

    আর বড় রাস্তার ধার ঘেঁষে লিচুবাগানের দিকের মল্লিকবাড়ি ভেঙে নতুন টাওয়ার। এ তল্লাটে এমন টাওয়ার এই প্রথম। এলেম আছে মুন্নামামার। মানতেই হবে।

    তিনবিঘে জমির ওপর বাগানবাড়ি। একটা বড় পুকুর, অতখানি ধানজমি। যদিও এখন আর চাষ হয় না, তবে এককালে মল্লিকরা ছিল এলাকার রাজার মতো। তিন ছেলে, বিশাল বিশাল কাজ করে। বড়ছেলে বিলেত থেকে ব্যারিস্টার, সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি পর্যন্ত হয়েছিল। মেজছেলে ডাক্তার, মেজছেলের বৌও ডাক্তার। কোন শহরে যেন বিশাল নার্সিংহোম, তাদের ছেলেমেয়ে সব বিদেশে। আজকাল বড়লোকদের ছেলেমেয়েরা কেউ দেশে পড়ে থাকে না।

    ভাগ্যিস! তবেই তো মুন্নামামাদের এত সুবিধে।

    মল্লিকদের ছোটছেলেকে পটিয়ে জমিটা হাত করেছে মুন্নামামা। এ ছেলে চাটার্ড অ্যাকাউণ্টেন্ট। সহজে ভবি ভোলার নয়। বৌ তো আরো এককাঠি। চাটার্ড অ্যাকাউণ্টেন্ট স্বামীর চেয়েও বেশি হিসেব বোঝে। ঘর সংসার ছেড়ে একাই এসে থাকছিল এখানে। বাড়ি জমি আঁকড়ে। মুন্নামামাকে তো চেনে না। অজগর সাপের মতো পাকে পাকে জড়াবে কেমন।

    মেয়েদের বশ করে ফেলতে ওস্তাদ। চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে কপ করে গিলে ফেলবে, শিকার নিজেও টের পাবে না।

    ওই তো আরেকটা ব্যবসা। মেয়ে যোগান দেওয়া। এলাকার কত বউ যে করে খাচ্ছে। কাজ শেষ করে মুখ মুছে ফিরে এসে ঘোমটা মাথায় তুলসী গাছে জল দিচ্ছে। বটাকে যদিও সরাসরি এ কাজটায় রাখে নি মুন্নামামা, তবে ক্লায়েণ্টের কাছে পৌঁছনোর কাজে কখনো কখনো তো লাগেই। সব বুঝেও বোকা সেজে থাকে বটা। এলাইনে ওটা দরকার। ভ্যাবলা সরল বোকা বোকা ভাব।

    আনমনেই একটু ফিচেল হাসি এল। মুখটা মুছে নিল। এই হাসিটা কেমন করে যেন ধরে ফেলে ও মেয়ে। ‘তুমি কিন্তু বদলে গেছ খুব’, সেদিনও বলছিল।

    আচ্ছা, ও যদি কোনদিন জানতে পারে বটার আসল কাজটার কথা? কোনো কথা-দেওয়া নেওয়ার ব্যাপার ঘটে নি, প্রতিশ্রুতি দেবার ঘনিষ্ঠতাই হয় নি, তবু মাঝে মাঝে এমন মনে হয় আজকাল। রোজগার যা হয়, তা লোকদেখানি টাকা উড়িয়ে দেখায় না বটা। সবাই জানে, বটা পরিশ্রমী। বাড়ির একটা হিল্লে হয়েছে, পিন্টুর লেখাপড়া, সংসারের মসৃণ চাকায় নিয়মিত তেল, মায়ের স্বস্তি। এমনকি জ্ঞাতিদের ঝামেলা পাশ কাটিয়ে বাবার গ্রামের জমিটাও দখল নিয়েছে। মুন্নামামার শাগরেদি করে এটুকু সাব্যস্ত হয়েই পড়েছে বটা। বাবা বেঁচে থাকলে খুশি হত কিনা কে জানে। বটাকে বিশ্বাস করত কি? কে জানে।

    এমনিতে এ কাজটা দু’ পুরুষ ধরে করছে। ঠাকুর্দার পর বটা। মাঝখানে বাবা কাজটা ছেড়ে না দিলে বেশ তিনপুরুষের বৃত্তি বলা যেত। এমন উত্তেজনার জীবন থাকতেও বাবা যে কেন গান আর যাত্রাপালা নিয়ে থাকতে ভালোবাসত! অমন জোরালো বাপের এমন ন্যাতানো ছেলে কি করে হয় কে জানে।

    ঠাকুর্দার জোরেই গ্রামে জমি বাড়ি। ভাই বোন আত্মীয় পরিজনের গুষ্টি তুলে এনে একটা গোটা পাড়া বসিয়ে ফেলেছিল ঠাকুর্দা। হরিহর রায়ের নামে বাঘে গরুতে জল খাবার কত গল্প ছোটবেলায় শুনেছে। হরিহর রায় নামটা মুছেই গেছিল। হরিসর্দার। আশপাশের দশ বিশটা গাঁয়ের লোক চিনত। অদেখা ঠাকুর্দাকে বুকের মধ্যে আসন দিয়েছিল ছোট ছেলেটা।

    জমিটা যখন হাতছাড়া হতে বসেছে, জ্ঞাতিগুষ্টি মিলে বাবাকে গ্রামছাড়া করতে বসেছে, তখন বটা কিছু করতে পারে নি। আজকের বটা তো সেদিন ছিল না। ক্লাস সেভেনে পড়া একটা ছোট ছেলে।

    মুখে কিছু না বললেও বড্ড কষ্ট পেয়েছিল বাবা। হরিসর্দারের ছেলের এই দূরের মফস্বল শহরের জুটমিলে শ্রমিকের চাকরি, আর বস্তির একটেরে ঘরে পরিবার নিয়ে বাস। ভাবা যায়! মা মাঝে মাঝেই কান্নাকাটি করত। বেখেয়ালেই হাতের মুঠো শক্ত হয়ে যেত বটার। বাবা ধরে ফেলেছিল। মাঝে মাঝে একভাবে চেয়ে থাকত। মনের ভেতর পর্যন্ত পড়ে ফেলার দৃষ্টি। তখনও নিজের হাতে কাজ শুরু করে নি বটা।


    প্রথম কাজ এসেছিল বিমুকাকার কাছ থেকে। ভীম-সর্দার বিমুকাকা। ছোটবেলায় যার কাঁধে পা রেখে তালগাছে, নারকোলগাছে চড়া শিখেছিল। বিমুকাকা আসত হরি সর্দারের ছেলের খবর নিতে, দেশের খবর দিতে। বাবার দেশ মানে গ্রাম। যে দেশে আর ফেরা হয় নি বাবার। বিমুকাকা আগলে রেখেছিল আমবাগানটা।

    প্রথম কাজটা করে ফেলেই বুঝেছে বটা, এইই তার আসল কাজ। কি যে শান্তি হয়েছিল কাজটা করে। বিমুকাকা দু’চোখ দিয়ে জড়িয়ে নিয়েছিল নিবিড় করে। চোখ দিয়েই, দু’হাত দিয়ে নয়। এই জীবনে আবেগের জায়গা নেই। তবু হরিসর্দারের নাতিকে জড়িয়ে নিতে পারার আনন্দে ভীমসর্দারের চোখে শান্তি নেমে এসেছিল। প্রতিটা কাজ শেষ করে সেই শান্তি। প্রশান্তি।

    বিমুকাকা নিজের হাতে কাজ করে না। সুপারি দেওয়া নেওয়ার সব খবরও ওর কাছে থাকে না। এ কাজের এই দস্তুর। শুধু নিজের কাজটি নিপুণভাবে করা। বিমুকাকার কাজটা কেবল অনুসরণ করা, শিকারের গতিবিধি পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখে রাখা। শিকার জানতেই পারে না, নি:শব্দে তাকে নিরত পর্যবেক্ষণ করে চলেছে কেউ।

    টিভিতে একবার একটা ছবি দেখেছিল। একদল হরিণ আপনমনে খেলে বেড়াচ্ছে। তার মধ্যে থেকে একটিকে শিকার হিসেবে বেছে নিল বাঘ। তারপর নি:শব্দে অনুসরণ। চক্রাকারে ঘিরে ধরে অনুসরণ। তারপর শিকার। শিকারী বাঘটার চোখে মুখে একই প্রশান্তি চিনে ফেলেছে বটা।

    উড়ন্ত বাজপাখি যেমন। শিকারের প্রতি একাগ্র দৃষ্টি, আকাশে চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে বৃত্তটা ছোট করে ফেলে এক দুরন্ত লাফ। একবারের চেষ্টায় শিকার হাতের মুঠোয়।

    আহ, বড় শান্তির এ শিকার। দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর শিকার যখন হাতের মুঠোয়, তখন শিকারীর আর কোনো রাগ নেই, আগ্রাসী আক্রমণ নেই, আছে শুধু নিপুণভাবে কাজটা শেষ করার প্রশান্তি।

    পশুপাখিদের জগতে অবশ্য ব্যাপারটা একটু অন্য। খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক। তাই শিকারী বাঘ বা শিকারী বাজপাখির একটু হলেও ব্যক্তিগত যোগাযোগের ব্যাপারটা আছে। বটা বা বটাদের মতো সুপারি কিলার গোষ্ঠীর তা নয়। প্রশান্তির আমেজটা তাই গহীন, গভীর। এক একটা কাজ শেষ হয়, আর গভীর শান্তিতে অন্তত বারো থেকে চোদ্দ ঘণ্টা ঘুমোয় বটা।

    এত নাম থাকতে সুপারি-কিলার কেন, সে নিয়ে একটু ধন্দ আছে। নিপুণ এক একটা অপারেশন, কতখানি শ্রম বিচক্ষণতা। সুপারির মতো সামান্য একটা জিনিসের সঙ্গে জড়ানো নাম কেন! সুপারি, গোলাকৃতি শক্ত একটা বীজ। পানের মশলায় কুচি করে দেওয়া হয়। জাঁতি দিয়ে সুপুরি কাটত মুক্তোপিসি। পিন্টুকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিল সুপারির বিষয়ে। অবাক হয়েছিল পিন্টু। এত জিনিস থাকতে দাদা সুপারি নিয়ে কেন জানতে চেয়েছে কে জানে। তবে কম্পিউটারে গুগল করে সুপারি সম্বন্ধে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে।

    প্রতি একশ’ গ্রাম সুপারিতে আছে দুশ’ উননব্বই ক্যালরি শক্তি জোগানোর ক্ষমতা। উদ্দীপক উপাদানের কারণে অনেকেই নিয়মিত সুপারি চর্বণ করে। পানের মশলায় ব্যবহার ছাড়াও কর্মক্ষম পুরুষদের গাড়ি চালানো, মাছ ধরা কিংবা নির্মাণকাজের মতো কর্মকাণ্ডে দীর্ঘসময় জেগে থাকার জন্য সুপারি। কার্যক্ষমতা এতটাই বেশি যে নিকোটিন, অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইনের পাশাপাশি সুপারিকেও বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানসিক বিভ্রমকারী মাদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও সুপারির রসে এরিকোলিন নামের অ্যালকালয়েড, মুখের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।

    পিন্টুর কম্পিউটার দেখে বুদ্ধি এসেছিল। বুড়োর সাইবার কাফেতে বসে সুপারি-কিলার দিয়ে গুগল করেছে একদিন। তেমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায় নি। কম্পিউটার তেমন চালাতে জানে না। ইংরেজিটাও ঠিক জুতের নয়। তবু কৌতূহলে ক’দিন লাগাতার গুগল। বটা এইরকমই। একটা কিছু মাথায় চাপলে নাওয়া-খাওয়া ভুল হয়ে যায়। যা দেখে বিমুকাকা বলেছিল, এটাই এ লাইনের সবচেয়ে বড় গুণ।

    অবশেষে পাওয়া গেল একটা ঘটনার কথা। হুসেন জায়দি নামে একজন লেখকের একটা বই – ডোংরি টু দুবাই। মুম্বাইয়ের অপরাধজগতের ক্রনিকল। পরে পিন্টুর ডিকশনারিতে ক্রনিকল-এর মানে দেখে নিয়েছে বটা। কালানুক্রমিক ঘটনাপঞ্জী। সোজা কথায়, ইতিহাস।

    ও বই কোথায় পাওয়া যাবে? আর পাওয়া গেলেও অমন ইংরেজি বই পড়বে কে? কম্পিউটারে যেটুকু লেখা আছে, পড়ে ফেলল। হুসেন জায়দি বলেছেন, ‘সুপারি’ নামটা দিয়েছিল ভীম নামের এক রাজা। মুম্বাইয়ের মাহিম অঞ্চলের রাজা ভীম।

    ভীম রাজা একটা মজার নিয়ম শুরু করেছিল। কোনো বড় কাজের দায়িত্ব দেবার সময় মাহিম দুর্গে যোদ্ধাদের ডেকে পাঠাত। জাঁকজমক করে একটা বিশাল খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হত। তারপর যোদ্ধারা সবাই গোল হয়ে বসত। মাঝখানে একটা বড় থালায় একটা পানের পাতা রাখা হত। যে সেই পানের পাতা তুলবে, সে-ই দায়িত্ব পাবে। পানের পাতা নিয়েছ, তুমিই সুপুরি পেলে।

    একজন মিডলম্যান লাগবে এবার। যে সুপারি দেবে, মিডলম্যান জোগাড় করার দায়িত্বও তার। আবার প্রাথমিকভাবে শিকারের অবস্থান, অবস্থান বদল ইত্যাদির তথ্য দেবে সে-ই। শিকারের গতিবিধি নজরে রাখার কাজ করবে। কিংবা লোক দিয়ে করাবে।

    যে সুপুরি নিল, সে শিকারের একটা ছবি হাতে পাবে অবশ্য। সে নিজে হাতে শিকার করতে পারে, না-ও পারে। সেক্ষেত্রে মিডলম্যানই জোগাড় করে দেবে একজন বা একাধিক হিট-ম্যান।

    বটা যেমন। বহু পরিশ্রম আর পর্যবেক্ষণের পর শিকারকে যখন নাগালের মধ্যে পায়, তখন কোনো রাগ হিংসা টেনশন নেই, থাকে শুধু পরিপাটি ভাবে কাজটা শেষ করার আনন্দ। একবারে শেষ করে দেবার লক্ষ্য। তখন বাধা পড়লে বড্ড রাগ হয়।

    তিন নম্বরের কাজটার কথা এখনো মনে আছে এইজন্যেই। বর্ধমান ছাড়িয়ে মফস্বল জায়গা সেটা। নির্দেশ ছিল, ‘জিনিস’ যেন ব্যবহার না হয়। ‘জিনিস’ থাকলে লক্ষ্যভেদ কোনো ব্যাপারই না। ভোজালি ভরসা।

    তখন নতুন হাত, ঠিকমতো চালাতে পারে নি ভোজালিটা। লোকটার পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি দলাদলা রক্ত বেরিয়ে এসেছে, কিন্তু মরে নি তখনো। ভোজালি ফেলে দিয়েছে অশ্বত্থ গাছের ফাঁপা গুঁড়ির মধ্যে, সেইরকমই নির্দেশ ছিল। নিস্পৃহ চোখে খানিক দেখেছিল বটা। চলে গেলেই হয়, যেভাবে পেট ফেঁসেছে বেশিক্ষণ আর নয়। এদিকে লোকজনও আসে না, এত রাতে তো আসবেই না। লাস্ট ট্রেনে ফিরলে এই নিঝুম জায়গাটা দিয়ে বাড়ি ফেরার রাস্তা ছোট করে ফেলে লোকটা। জীবনের রাস্তাটাই ছোট হয়ে গেল। আর একটু পরে লোকটার জীবনে সবই অতীত কাল।

    কিন্তু কি মুশকিল। কতক্ষণ ছটফট করবে কে জানে। ফেলে গেলেও হয়, কিন্তু কাজ পরিপাটি না হলে সেই শান্তির ঘুমটা আসবে না। সুন্দর সুচারুভাবে কাজ না মিটলে বড় অশান্তি। এ কাজটা করার জন্যেই যে টাকা নিয়েছে। পেশার সঙ্গে বেইমানি করবে না বটা। আধলা ইঁট তুলে নিয়েছিল হাতে। আট দশ ঘা মাথায় দিয়ে কাজ শেষ করেছিল। তারপর পুকুরের মধ্যে ইঁট ফেলে দিয়ে নিশ্চিন্ত আরামে হেঁটে এসে ট্রেন ধরেছিল। বাড়ি ফিরে নিশ্ছিদ্র শান্তির ঘুম।


    *****

    ‘এদিকে কোথায় রে?’ বাজারের থলে হাতে দাশুকাকা।

    ‘এই... ’ কথাটা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিল বটা। দাশুকাকা ধরলে রক্ষা নেই।

    ‘শোন না, যাচ্ছিস কোথায়? সমাদ্দারের খবর শুনেছিস? কে করল বল তো?’

    কে সমাদ্দার, সে কি করল, এখন শোনার আগ্রহ নেই। ‘পরে শুনব, তাড়া আছে’, পাশের গলিতে ঢুকে পড়ল।

    ‘আরে বাবা, শোন না। অমন বেঘোরে... ’ আর শোনা গেল না।

    মিত্তিরদের ভাঙা দালান পেরিয়ে বড় রাস্তার দিকে এগোলো। কুশানের মেডিকেল হোমের সামনে চায়ের দোকানে বেশ ভিড়। খবরের কাগজ হাতে লিচুবাগানের পলুকাকা, গোঁসাইবাগানের হরকাকা, পালপাড়ার স্বদেশজ্যাঠা। ব্রতী, টোটা, খোকন। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল। এখন ক’দিন এলাকার মধ্যে থাকতে হবে, সবার চোখের সামনে।

    স্কুলের বাস এসে দাঁড়াল। পলকে স্নায়ু টানটান। আসবে। দীপু আসবে এখন, রিয়াকে বাসে তুলতে।

    শিখাবৌদি এসেছে পাপনকে নিয়ে, মানুদি টুকটুককে নিয়ে। এ পাড়া ও পাড়ার আরো কুচোকাঁচা, মা কিংবা বাবার হাত ধরে। শিবাইয়ের মোটরবাইকে ওর ভাইপো আর তোটনদার ছেলে। বটাকে দেখে হাত নাড়াল শিবাই। দীপু আসে নি? রিয়া স্কুলে যাবে না আজ?

    বাস চলে গেল, পায়ে পায়ে এগিয়েছে শিখাবৌদির দিকে, ‘কি খবর?’

    ‘আর খবর। আজ তো পাড়ায় একটাই খবর। কি সাংঘাতিক, বলো?’

    মানুদি কি একটা বলে এগিয়ে গেল। শিখাবৌদি বলল, ‘আসছি। আসছি। এই সকাল থেকে দৌড় শুরু হল। এবার বাজার। তোমার দাদার তো আবার টাটকা মাছ ছাড়া... ’

    ‘রুমাবৌদি আসে নি? তোমরা তো একসঙ্গেই বাজার করো দেখি। রিয়াকেও তো দেখলাম না। রিয়া স্কুলে যাবে না?’

    ‘রুমা আর ক’দিন আসে? রিয়াকে তো দীপুই... তুমি জানো না? শোনো নি কিছু?’

    ‘কি শুনব? কি হয়েছে রিয়ার?’

    মানুদি এগিয়ে গেছিল, গলা তুলে বলল, ‘আমি এগোলাম। বাবার জন্যে কচুরি নিতে হবে, শঙ্করের দোকানে বলে এসেছি।’ ‘দাঁড়াও, দাঁড়াও, আমিও যাব।‘ শিখাবৌদির কথাটা আর জানা হল না।

    ‘তা বলে এমন বেঘোরে... ’ আজ সকাল থেকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার শব্দটা শুনল বটা। হরকাকা বলছেন, ‘ভোরবেলা হাঁটতে গিয়ে... নাহ, এ রাজ্যটা দুষ্কৃতিদের জায়গা হয়ে গেছে।‘

    ‘খবরের কাগজে দেখছ না রোজ?’ পলুকাকা। ‘আজকের কাগজটাই দ্যাখো।‘

    ‘ভোরবেলা হাঁটতে গিয়ে’? সেই যাদবপুর থেকে এতদূরে খবরটা চলে এসেছে? এত তাড়াতাড়ি? এলাকার মধ্যে বা কাছাকাছি কোন কাজ করে না বটা। ধরা পড়ার ভয়ে না, এ লাইনে কেউ বেইমানী করে না। কিন্তু ওই যে, জড়িয়ে পড়ার ভয়। মানসিকভাবে জড়িয়ে পড়া।

    এমনিতেও ঘন ঘন কাজ নেয় না বটা। চেনা লোকের সুপারিশ ছাড়া তো নয়ই। এ কাজ করতে গিয়ে শিখেছে, জীবনে কেউ আপন নয়। কে যে শত্রু, কে কোথায় ফাঁদ পেতে রাখবে, কেউ জানে না। বছরে খুব বেশি হলে পাঁচটা। লোভ করে বেশি কাজ নয়। এমনিও বটার দর বাজারের চেয়ে চড়া, কম কাজেই রোজগার অনেক। আর বটার সততা আছে, এ লাইনের লোকেও জানে, টাকা দিলে কাজ হবেই।

    আরো একটা জিনিস আছে বটার, যা দুর্লভ। বটা কোনদিন জানতে চায় না, কেন টার্গেটকে মরতে হবে। এ নিয়ে কোনো কৌতূহল হয় না। ঝগড়া অন্যলোকের, কাজটা তার। ব্যস। ভীমসর্দার বিমুকাকা বলেছিল, ঠাকুর্দাও নাকি এইরকম নির্মোহ নির্লিপ্ত ছিল।

    ‘ডাক্তারদের অপারেশন দেখেছ না বটাবাবা? রোগীর সঙ্গে আবেগে জড়িয়ে পড়লে তাদের চলে? লড়াই রোগটার সঙ্গে, রোগীর সঙ্গে মন জড়িয়ে পড়লে কাজ হয় না। দ্যাখো না, নিজের লোকের অপারেশন ডাক্তার চট করে করতে চায় না? ওই যে, জড়িয়ে পড়ার ভয়। জড়ালেই কাজে ব্যাঘাত।‘

    জানে বটা। প্রথম প্রথম দু’একবার ভুল হয়েছে এমন।


    সেই যে বসিরহাটের দিকের কাজটা। তখন নতুন নতুন কাজ করছে।

    খবর ছিল, লোকটা প্রতি শনিবার কালীমন্দিরে যায়। কালীমন্দিরটা গ্রামের বাইরে, জাগ্রত কালীমায়ের পুজোয় শনিবার ভালই ভিড় হয়। অনেকদিন তক্কে তক্কে থাকতে হয়েছে। এক শনিবার লোকটা ফাঁদে পা দিয়েছে। মন্দির ছেড়ে বেরিয়ে বন্ধুর সঙ্গে দর্জিপাড়ার দিকে গেছিল। বন্ধু! বন্ধুই যে ফাঁদ, এত সাবধানে থেকেও বোঝে নি। ভর সন্ধেবেলা ঝুপসি গাছটার কাছাকাছি নিকেশ হয়েছিল। মাটিতে পড়ে গেল যখন, একহাত দূর থেকে কপালের মাঝখানে আরেকটা গুলি। বুঝতেই পারে নি লোকটা। অবাক চোখে চেয়েছিল বটার দিকে, তারপর বন্ধুর দিকে। সে তখন হৈহৈ করে লোক জড়ো করছে। দর্জিপাড়া থেকে, মন্দির থেকে লোকজন ছুটে আসতে জনতার ভিড়ে মিশে যেতে কোন অসুবিধেই হয় নি। মন্দিরে তো শুধু গ্রামের লোকই আসত না। বটার দিকে কারো নজর পড়ে নি।

    কিন্তু লোকটার সেই দৃষ্টি। অবাক দৃষ্টি। গুলি লেগে পড়ে গেছে, তবু যেন বুঝে উঠতে পারছে না। তারপর বন্ধুর দিকে চাইল যখন! কি যেন ছিল সে দৃষ্টিতে। বিস্ময়, অবিশ্বাস, যন্ত্রণা, নাকি ঘৃণা! ও কি বুঝতে পেরেছিল?

    দর্জিপাড়ার লোকেরা হায়-হায় করছিল, ওই লোকটাই তাদের ওখানে পাড়া করে বসিয়েছিল।

    পরে কৌতূহলে খবর নিয়েছিল বটা। ভাসা ভাসা খবর পেয়েছিল, বর্ডার পেরিয়ে কারবার হয় ওদিকে।

    লাভের হিসেব নিয়ে, মালপাচার নিয়ে ঝামেলা। মিডলম্যান ছিল লঙ্কাদা, রাজনীতি করে। ওদিকেরই লোক। লঙ্কাদা বলেছিল, জমি নিয়ে কাজিয়া। লোকটা পুকুর, জলাজমি নিয়ে ঝামেলা করছিল। পুকুর বুজিয়ে ফেলতে দেবে না। সেই নিয়ে লাভের কারবারিদের সঙ্গে ঝামেলা। গ্রামের লোকেরা মান্যি করে। লোকটাকে না সরালে মুশকিল ছিল।

    ধুতির ওপর শার্ট, সুঠাম দু’খানা হাত। গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করত লোকটা। বাড়িতে বুড়ো বাবা, বউ মারা গেছে অনেকদিন, একটা ছেলে মাধ্যমিক দেবে, জমি জায়গা আছে সামান্য। এই নিতান্ত সাধারণ লোকটাকে মেরে ফেলার দরকার ছিল সত্যিই?

    তারপর অনেকদিন কাজ করে নি বটা। বিমুকাকার আনা কাজও ফিরিয়ে দিয়েছে। বটা মোটেই নরম ধাতের নয়, কল্পনাশক্তি নিয়ে বিশ্বাস নেই, কঠিন বাস্তবই তাকে নির্মম হবার উপযুক্ত করে তুলেছে। তবু কি করে যেন লোকটার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে ফেলেছিল। নিজেকে, নাকি বাবাকে!

    ওইরকমই সরল বিশ্বাসের দৃষ্টি, নিজের লোকেদের কাছে আঘাত পেয়ে নি:শব্দে সরে এসে নিজের একটা আলাদা ভুবন গড়ে নেওয়া বাবা। গ্রামের স্কুলে শিক্ষক, শহরে এসে জুটমিলে লেবার। সুঠাম দু’খানা হাতে বস্তির ঘরখানা বানিয়েছিল একা। নানা জায়গা থেকে উচ্ছেদ হওয়া লোকগুলোকে নিয়ে পালা গাইত, যেন সুরের দোলায় ভাসিয়ে দেবে সব অপমান।

    সেদিন যদি বাবাকে কেউ... কোথায় দাঁড়াত কিশোর দুই ছেলে?

    কিংবা বটাকে! সবে তো পায়ের তলায় জমি পেয়েছে মা, এইসময় বটা না থাকলে কি হবে? শিকারীর বদলে নিজেকে শিকারের জায়গায় দেখে ফেলেছে। বারবার লোকটার দৃষ্টি তাড়া করে বেড়িয়েছে। ভেবেছিল ছেড়েই দেবে। মন দুর্বল হয়ে থাকলে এ কাজ করা যায় না। তিনটে ভালো কাজ। ছেড়ে দিয়েছে।


    কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই একটা উসখুস ভাব। অতৃপ্তির ক্ষিদে ক্ষিদে ভাব। ক্ষিদে, না নেশা? কেমন যেন পানসেমার্কা জীবন। এক একটা নিখুঁত কাজ, চরম উত্তেজনা, টানটান স্নায়ু, ঠান্ডা মাথার লড়াই। যে একবার ভয়ঙ্কর উত্তেজনাময় কাজ করেছে, নির্জন রাতে নি:শব্দ পৃথিবীতে একজনের জীবনের গতি নির্ধারণ করেছে, অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ করার তৃপ্তি জেনেছে, তার জন্যে ঘরপোষা শান্ত সুখের জীবন নয়। স্টোনচিপ্স-এর ব্যবসায় সেই সুখ! ছো:!

    কাজ শেষ হবার পর যে অপূর্ব তৃপ্তি, নিবিড় শান্তির ঘুম। আহা, নিজেকে ভগবান ভগবান মনে হয়। একজন মানুষের বেঁচে থাকা, আর না-থাকা বটার হাতে। রক্তের মধ্যে ঢুকে পড়েছে নেশাটা, অপরাধ বলে মনেই হয় না। কারো প্রতি শত্রুতা থেকে তো হত্যা করছে না বটা। শত্রুতা অন্যের, কাজটা তার।

    নিজের পক্ষে যুক্তি সাজিয়েছে অনেক। যদি তাই-ই বলো, পুলিশ যখন মারে? কিংবা সেনাবাহিনী? গালভরা নাম আছে, দেশ বা সমাজ রক্ষার জন্যে হত্যা। শান্তি বজায় রাখার জন্যে শত্রু-হত্যা। বটাও তো তাই। শত্রুতার হত্যা। একেবারে গোড়া থেকে। একটা বেশি হত্যায় কি অপরাধ বেশি বাড়বে? একবারের বেশি তো আর ফাঁসি হবে না।

    আবার কাজ শুরু করেছে। আর জড়িয়ে পড়া নয়। জড়িয়ে পড়লেই হেরে যেতে হবে। নিপুণ লক্ষ্যভেদ, নিখুঁত অপারেশন। আর পরিতৃপ্তির এক একটা ঘুম।

    আজ ঘুম হল না। মুখের ভেতরটা বিস্বাদ হয়ে আছে। যদিও মাথায় গভীর ঘুম। খবরটা জেনে নিয়ে বাড়ি চলে যাবে।


    *****

    ‘কি হয়েছে রে?’ ব্রতী টোটাদের কাছাকাছি এল বটা।

    ‘শুনিস নি? মামারা সকাল থেকে পাড়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, দেখলি তো?’

    হ্যাঁ, পুলিশের গাড়ি দেখেছে। সে তো ভোটের বাজারে দু’চারটে অমন গাড়ি আখছার।

    ‘হলুদ বাড়ির সমাদ্দার। সকালে মর্নিং ওয়াকে গেছিল। কে অমন করে মারল কে জানে। হরকাকার পিসি মন্দিরে যাচ্ছিল, দেখে এসে পাড়ায় খবর দিয়েছে।‘

    যাক, যাদবপুরের খবর এখানে এসে পৌঁছয় নি।


    হলুদ বাড়ির সমাদ্দার। মানে রিয়ার বাবা। বছর দুই হল, হলুদ বাড়িটা করে এ পাড়ায় থাকতে এসেছে ওরা। কোর্টে কাজ করে ভদ্রলোক। ডেইলি প্যাসেঞ্জারি, আটটা পঁচিশের লোকাল ধরতে আসে রোজ। মিশুকে নয়, কারো সঙ্গেই যেচে কথা বলে না। রুমাবৌদিও তাই। ঘ্যাম নিয়ে থাকে। এ পাড়ায় সর্বক্ষণের কাজের মেয়ে, রান্নার আলাদা লোক, বাজার করার লোক, গাড়ির ড্রাইভার আর কোনো বাড়িতে নেই। হ্যাঁ, গাড়িও আছে ওদের। নীল রঙের ইন্ডিগো। রুমাবৌদি বোধহয় বড়লোক বাড়ির মেয়ে। পয়সাওয়ালা ঘরের মেয়ে, পয়সাওয়ালা স্বামী। ঘ্যাম নেবে না কেন?

    কিন্তু সমাদ্দারকে মারল কে? কেন?

    এদিকে যারা কাজ করে, তারা কেউ নয়। তাহলে মুন্নামামা জানত। মুন্নামামা। ঠিক। মুন্নামামার কাছে খবর নেই, হতেই পারে না। কিন্তু এখন মুন্নামামার কাছে নয়। দীপুর কাছে যাওয়াটা জরুরী। আর রিয়ার কাছে।


    জলে ডোবা পাড়া দিয়ে গেলে হলুদ বাড়ির পেছনদিক। আগে বৃষ্টি পড়লেই ও পাড়াটা জলে ডুবে যেত। তাই অমন নাম। এখন নতুন নতুন বাড়ি, সুন্দর সুন্দর মানুষজন থাকতে এসেছে, তবে পুরোনো নামটা থেকেই গেছে। পেছনের ছোট লোহার গেটে তালা। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এতবড় একটা ঘটনা, এত শান্ত কেন বাড়িটা? এমনিও এবাড়িতে লোকজন তেমন আসতে দেখা যায় না।

    কাজের মেয়েটা দেখতে পেয়েছে। এগিয়ে এল, ‘বটাদা? চাবি নেই গো। এ চাবিটা নিয়েই তো দাদা হাঁটতে বেরিয়েছিল। ঘুরে আসবে সামনে দিয়ে?’

    সামনে যেতেই তো ইচ্ছে নেই। ‘তোরা সব ঠিক আছিস? বৌদি? রিয়া কোথায়?’

    ‘বৌদি অজ্ঞান হয়ে গেছে। ডাক্তার এসেছে। মুন্নাদা নিয়ে এসেছে। পুলিশ এসেছে। দাদার বডি আসবে বোধহয় এখন। নাকি বাড়িতে আনবেই না। থানায় তুলে নিয়ে গেছে শুনছি।‘ চাপা গলায় খবর দিল মেয়েটা।

    দীপু কই? রুমাবৌদির কাছেই নিশ্চয়। এইসময় বাড়ির ভেতর থেকে একটা কান্নার আওয়াজ উঠল। অনেকজন মিলে কাঁদছে। ‘বৌদির বাপের বাড়ির লোকজন এল। আমি যাই।‘

    ‘দীপু কি রিয়ার কাছে?’ বলব না, বলব না করেও বলেই ফেলল বটা।

    ‘দীপু?’ একটু অবাক হল কি মেয়েটা? নিশ্চয় পাড়ায় গল্প করবে এবার।

    ‘দীপুই তো মেয়েটার নাম? রিয়াকে দেখাশোনা করে যে? রিয়ার কথাটা জানতে চাইছিলাম।‘

    ‘ও তাই বলো। হ্যাঁ, তিনি তো মহারাণী। রিয়াকে দেখাশোনা তো নয়, সারা বাড়িই দেখাশোনা করেন।‘

    এ মেয়ে দীপুর খবর দেবে না। কিন্তু দীপুকে একবার না দেখা করে চলে যায়ই বা কেমন করে? কেন হে বটা চন্দ্র? দীপুকে দেখা না দিলে কি ক্ষতি? দীপুর জন্যে কিসের দায় তোমার? তোমাকে কি কোথাও জড়ানো মানায়? দীপুই কি জড়াতে দেবে তোমায়, যখন সব সত্যি জানবে?

    পায়ে পায়ে তবু সামনের দিকেই এগোলো। পুলিশের গাড়িটা নেই এখন। এ পাড়ার ছেলেগুলো, ব্রজ দুলে শিবেন গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে। মুন্নামামা গ্রীলের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে দু’তিনজন লোকের সঙ্গে। এপাড়ার লোক নয়। রুমাবৌদির বাপের বাড়ির বোধহয়। বটাকে এখানে দেখবে ভাবে নি মুন্নামামা। একটু অবাক হল?

    ‘শুনলাম খবরটা। পাড়ার মধ্যে এমন... ‘ কৈফিয়তের মতো শোনাচ্ছে নাকি?

    ‘পাড়ার মধ্যে কি রে, আমাদের এলাকায় এমন ঘটনা এই প্রথম।‘ শিবেন বলল, ‘কার পেছনে লেগেছিল কে জানে। কোর্টে কাজ করে যখন, কত ক্রিমিনাল... ’

    ক্রিমিনাল। শব্দটা মাথার মধ্যে ধাক্কা দিল। মাথায়, নাকি বুকে? মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে হাত নাড়াল মুন্নামামা। এমন করে গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে, ভেতরে ঢোকা মুশকিল। পাড়ার সব ছেলেরা বাইরে, একা ভেতরে ঢুকলেও চোখে লাগবে। দীপু কি করছে? বটাকে দেখতে পায় নি? চলে যাওয়াই ভালো। পেছন ফিরতেই, ‘যাচ্ছিস? দাঁড়া, আমিও যাব। এখানে তো এখন আর কাজ নেই। থানার দিকেই যাই।‘

    ‘তুমি এগোও, পিন্টুর পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ। পৌঁছতে হবে।‘ মুন্নামামার সঙ্গে একা হবার ইচ্ছে নেই আজ।

    ‘ও, আজ তো মাধ্যমিক শুরু হচ্ছে। যা তাহলে। অফিসে দেখা করিস একবার।‘

    বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ছেঁড়া ছেঁড়া একটা ঘুম। সমাদ্দারের মতই হাঁটতে বেরিয়েছিল বটার আজকের শিকার। ওর বাড়িতেও কী মেয়ে আছে? রিয়ার মতো ছোট্ট একটা মেয়ে? কি হচ্ছে ওর বাড়িতে এখন? এইরকমই উথাল পাথাল হয়ে আছে?


    তারপর আজ। সারাদিন আকাশ মেঘলা। সকাল থেকে ঝিরঝির বৃষ্টি। বৃষ্টি পড়লে এমনিই কাজ হয় না, মনটাও নেতিয়ে পড়ে। কোনদিনই ভাবের ঘরে বাস নেই বটার, তবু এই স্যাঁত্‍সেতে মিয়োনো দিনগুলোয় মনটা বশে থাকে না। আর আজ তো একেবারেই অন্যরকম।

    ‘আর কত ঘুমোবি? রাতেও কিছু খাস নি। এমন পাগলের মতো ঘুম। আরেকবার চা খাবি, খোকন?’

    মা। এইরকম ভিজে ভিজে সময়ে পুরোনো মা পুরোনো আদরের ডাকে ফিরে ফিরে আসে। বটার ছোটবেলার মা। পুরোনোদিনের মা, সাদার মধ্যে বেগুনী ফুল ফুল ছাপা শাড়ি। কিংবা সবুজ পাড়ের কমলা শাড়ি, মাথায় ঘোমটা, কপালে মস্ত লাল টিপ। গ্রামের বাড়িতে মাটির উনুনে কাঠের আগুনে কেটলি বসিয়ে চা।

    ঠাকুর্দা বলছেন, ‘নতুনবৌমার হাতের চা এমন, চায়ের নেশা ধরে যায়।‘

    ঠাকুমা বলছেন,‘তা বলে ওকে অমন বারবার চা করতে বলবে? ছোট ছেলে দুটো মা-মা করছে। তাদের নাওয়াতে খাওয়াতে হবে না? রাজ্যের রান্না পড়ে আছে। একেই বৃষ্টি পড়ে ঠান্ডা, ভিজে কাঠ, আগুন ধরতে এক ঘণ্টা।‘

    ঠাকুর্দা হাহা করে হাসছেন, ‘আমাকে বলতে হয় না। মা যে। ছেলের নেশাটি ঠিক বোঝেন। কচি ছেলেই বলো, আর এই বুড়ো ছেলে, মা সবাইকে আগলে রাখতে জানেন।‘

    সব মা-ই কি আগলে রাখতে জানে? রুমাবৌদিও তো একজন মা।


    দীপু এসেছিল সন্ধেবেলায়। দোকানঘরে। ‘রিয়াকে বাঁচাও।‘

    সেদিনও মেঘ ছিল আকাশে। যাদবপুরের বড় কাজটার পর নিষ্কর্মা অবকাশের স্থিতি তখন। এইসময় কোনো কাজ করতেই ইচ্ছে করে না। তবু দীপুর ডাকে বুকের মধ্যে মেঘলা ঝড়।

    ‘আমি কাউকে বোঝাতে পারছি না অর্জুনদা। থানায় গেছিলাম। মুন্নাদার কাছে, কাউন্সিলরের কাছে, মীরাদির সমিতিতে, সবার কাছে। কেউ আমার কথা শুনতেই চাইছে না। তুমি রিয়াকে বাঁচাও অর্জুনদা।‘

    অর্জুনদা! একমাত্র দীপুই এই নামে ডাকে। ফেলে আসা পুরোনো নাম, ঠাকুর্দার দেওয়া নাম, যে নামটা হারিয়েই গেছে। এতলোক থাকতে বটার কাছে কেন এসেছে দীপু কে জানে। রিয়াকে বাঁচাতেই বা দীপুর কিসের এত দায়।


    সব খুলে বলেছিল দীপু। দীপুকে বাড়ি চলে যেতে বলেছিল রুমাবৌদি। বলেছিল, রিয়াকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবে, আর দীপুকে দরকার হবে না। তারপর কোথা থেকে জেনেছে দীপু, রুমাবৌদি বাপের বাড়ি যায় নি। নামীদামী রেস্তোরাঁ, শপিংমল, সিনেমা। পাড়ার কেউ কেউ দেখেছে। সদ্য স্বামীহারা স্ত্রী, তার ওপর এমন নৃশংস হত্যায় স্বামীর অকস্মাত্‍ মৃত্যু। একটু শোকের চিহ্ন দেখতে পেলে স্বস্তি পায় মানুষ। না, কেউ বলছে না বিলাপ করতে। দু:খ কী আর চোখে দেখা যায়! তবু একটু চোখে লাগে বৈকি।

    দীপুর কানেও এসেছে কথাগুলো। কি যেন একটা অশান্তি। একা একাই চলে গেছে রুমাবৌদির বাড়ি, রিয়াকে দেখতে। তারাও অবাক। রিয়া তো সেখানে নেই। রুমাবৌদিও নেই। রুমাবৌদি বাপের বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না অনেকদিন। সমাদ্দারকে বিয়ে করার পর থেকেই। নেহাত অঘটন, তাই সব ভুলে তারা ছুটে গেছিল। রুমাবৌদি সেটা পছন্দ করে নি। বিরক্ত তারাও। হাতের কাছে পেয়ে দীপুকেই পাঁচ কথা শুনিয়েছে।

    ভয় হয়েছে দীপুর। অজানা একটা ভয়। হারিয়ে ফেলার ভয়। রুমাবৌদির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে অনেক কষ্টে। ফোনের সিম বদলে ফেলেছে বৌদি, এবাড়িতে আসেই না আর। তবু অনেকগুলো দিন তো একসঙ্গে থেকেছে দীপু, ওবাড়িতে। বৌদির বন্ধু বান্ধব, চেনাজানা লোকজন, গোপন প্রণয়ী। সবাইকেই চেনে দীপু। শেষপর্যন্ত যোগাযোগ করেই ফেলেছে। বৌদি বলেছে, রিয়া হোস্টেলে চলে গেছে। বৌদি নাকি চাকরি করছে, তাই।

    বিশ্বাস হয় নি দীপুর। কি এক অজানা আশঙ্কা। খুঁজে বেড়িয়েছে এদিক থেকে সেদিক।

    কিভাবে যে খবর জোগাড় হয়েছে, ভাবতে গেলে অবাক লাগে।

    নিজেই কি জানত বটা, পরের একটা মেয়ের জন্যে এমন প্রাণ হাতে নিয়ে লড়াই করবে কোনদিন? দীপুর মুখ চেয়ে, নাকি ছোট্ট রিয়ার টানে কে জানে। শুধু মনে হয়েছিল, বাঁচাতে হবে রিয়াকে। যেমন করে হোক।

    শেষপর্যন্ত অবশ্য রিয়াকে উদ্ধার করা গেছে। উদ্ধার করেছে আর কেউ না, বটা। গঙ্গার ধারে হোম, কচি কচি নিরাশ্রয় মেয়েগুলোকে আশ্রয় দেবার নামে এনে পাচার করার ব্যবসা।

    অন্ধকার জগতের কারবারীদের সঙ্গে যোগাযোগটা কাজে লেগেছে। হোমের খবর দিয়েছিল বিমুকাকার এক শাগরেদ।

    একাগ্রতায় অর্জুনের মতই পাখির চোখে লক্ষ্যভেদ করেছে বটা।


    তারপর আসল কাজটা করেছে পুলিশ। সমাদ্দারকে কে খুন করেছে, ধরা যায় নি। সুপারি নিয়ে কাজ করেছে, ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেছে। কিন্তু খুনের পেছনে ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ধরে ফেলেছে পুলিশ।

    প্ল্যান থেকে অপারেশন, সবটাই ঠান্ডা মাথায়। একান্ত আপন মানুষটাই সেই অপরাধী। রুমাবৌদি হাজতে। সুপারি-কিলার যে-ই হোক, আসল ঘাতক তো সে-ই। গুপ্ত ঘাতক। শুধু তো একটা প্রাণ নয়, হত্যা করেছে সম্পর্ক, বিশ্বাস, সম্মান। প্রণয়ীর সঙ্গে একত্র ষড়যন্ত্র। এমনকি সমাদ্দার ভোরবেলা হাঁটতে বেরিয়ে গেলে ফোন করে নিশ্চিত খবরটা পর্যন্ত দিয়েছিল রুমাবৌদি নিজে। টিভিতে, খবরের কাগজে, পাড়ার আড্ডায় এখন মুখরোচক খবর।

    কেন করল রুমাবৌদি এমন? স্বচ্ছল সুখের স্বস্তির সংসারে কোন অতৃপ্তির বাতাস লেগেছিল? কিসের সে টান, যাতে স্বামী-সন্তান-সংসার তুচ্ছ হয়ে যায়? অনাবিল নতুন জীবনের স্বপ্ন? যে স্বপ্নে নিরুদ্বেগে অন্য একজনের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেওয়া যায়?

    রুমাবৌদি বলেছে, নিজেও নাকি জানত না মেয়েকে হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। নিজে গিয়ে মেয়েকে দার্জিলিং-এর স্কুলের হোস্টেলে রেখে এসেছিল। ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে ঘর বাঁধার জন্যে এটুকু মূল্য কিছুই না। হোস্টেল থেকে মেয়ে কিভাবে হোমে এসে পড়েছে, জানে না। ভালোবাসার বিশ্বাস নিয়ে সে লোকটি আপাতত পলাতক।

    রুমাবৌদিকে অবশ্য কেউ বিশ্বাস করে নি। প্রণয়ীর সঙ্গে পরিকল্পনায় অপছন্দের স্বামীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে পারা যায়, আর মেয়েকে জীবন থেকে বাদ দেওয়া যায় না?

    তারপর রিয়াকে কোলে নিয়ে দীপুর হাসিমুখের ছবি। মা হয়ে সন্তানকে খারাপ পাড়ায় বিক্রী করে দেওয়া, আর মা না হয়েও এক মেয়ের মাতৃত্বের প্রবল আর্তিতে সেই সন্তানকে ঘরে ফিরিয়ে আনার সত্যি ঘটনায় সমাজ নড়ে চড়ে বসেছে আবার। টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে নতুন করে আলোচনা, মনোবিদের বিশ্লেষণ।


    সব মিটিয়ে কাল সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরেছে বটা। তারপর থেকেই নি:সাড়ে ঘুমোচ্ছে। নিবিড় শান্তির ঘুম। ঘুম ঘুম একটা তৃপ্তি। ছোট্ট রিয়াকে কোলে নিয়ে টলটলে মায়ার চোখে চেয়েছিল দীপু। অপরূপ এই দৃষ্টিতে কেউ বটার দিকে চেয়ে আছে, এমন এই প্রথম।

    এক একটা নিপুণ অপারেশনের সময় শিকারের চোখের যে দৃষ্টি তৃপ্তি দিয়েছে, সে দৃষ্টিতে ভয়। মৃত্যুভয়। ভেতর থেকে তৃপ্তি পেয়েছে বটা। নিজেকে ঈশ্বর ভেবে নেওয়ার অদ্ভুত তৃপ্তি। প্রাণদায়ী জীবনরক্ষক ভগবান, দেবদূত... সবাই বটার কাছে হেরো। বটাই আসল হীরো। ঈশ্বর।

    আজ দীপুর চোখে অন্যরকম চাউনি। বুকের মধ্যেটা আলো আলো। ঈশ্বর নয়, একটা অন্য অনুভূতি। একজন ভালো মানুষ হবার অনুভূতি। কাউকে বাঁচাতে পারার আনন্দটা যে এমন কে জানত। বড্ড আনন্দ।

    আনমনেই একটা অদ্ভুত কথা মাথায় এল বটার। সুপারি, সরল কাণ্ডের অশাখ বড় বৃক্ষ। লম্বা পাতা, মধ্যশিরাটি বেশ শক্ত, মধ্যশিরার দু’পাশ থেকে চিরুনির দাঁতের মত সবুজ পত্রফলক। কোন কাঁটা নেই। নরম সুন্দর মোলায়েম। সবুজ পাতায় সকালের আলো পড়ে মায়া মায়া।

    শুধুই নেশার জিনিস নয়, সুপারির অনেক ভেষজ গুণ। ভেজে মিহি গুঁড়ো করে দাঁত মাজলে দাঁতের ব্যথা ও পায়োরিয়া সেরে যায়। ক্রিমি, রক্ত আমাশা, অজীর্ণ কতরকম রোগ নিরাময়েও উপকারী। কে বলেছে সুপারি মানেই বেঁচে থাকার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া?

    একলা গাছ, আপন মনে বেড়ে ওঠা গাছ। তাকে নিয়ে মানুষের কাড়াকাড়ি। যে যেভাবে চাইবে তাকে, গাছ সেইভাবে মানুষের কাজে লাগে।

    আরো একটা কথা মনে পড়ল। গ্রামে থাকতে বিমানজ্যাঠার সুপুরিবাগানে খেলতে যেত বটা। বিমানজ্যাঠা বলেছিল একদিন, অন্য গাছপালার মধ্যে বা ছায়া ছায়া জায়গায় লাগালে সুপারি গাছ ভাল হয়। প্রখর রোদ সুপারি গাছ সইতে পারে না।

    আহা, ভাগ্যিস দীপু এল। একটা ছায়া ছায়া মায়ার জায়গা বড্ড দরকার ছিল বটারও।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments