• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬৫ | ডিসেম্বর ২০১৬ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা : সুমিত নাগ


    শীতকালে রোদ্দুর দাও, কমলালেবুর কোয়ার মতো মেঘ করেছে

    শীতকালে রোদ্দুর দাও, কমলালেবুর কোয়ার মতো
    মেঘ করেছে
    তুমি আমাকে খুঁজো না, আমিও তোমাকে খুঁজি না।
    শীতকালে রোদ্দুর দাও, কমলালেবুর কোয়ার মতো
    ঠোঁট তোমার
    তাতে মেঘ করেছে
    তুমি আমাকে খুঁজো না, আমিও তোমাকে খুঁজি না।
    শীতকালে রোদ্দুর দাও, কমলালেবুর কোয়ার মতো
    ঠোঁট তোমার
    তৃষার্ত, ফোলানো অভিমানে
    তাতে মেঘ করেছে
    তুমি আমাকে খুঁজো না, আমিও তোমাকে খুঁজি না।
    শীতকালে রোদ্দুর দাও, কমলালেবুর কোয়ার মতো
    ঠোঁট তোমার
    তৃষার্ত, ফোলানো অভিমানে
    একটা অজানা, অচেনা সড়কের মতো, দূরে চলে গেছে, পাহাড় পেরিয়ে ওয়েস্টার্ন ছবিতে
    যেমন
    তার ওপর মেঘ করেছে
    তুমি ঐ পথে আমাকে খুঁজো না, আমিও ঐ পথে আর তোমাকে খুঁজি না।

    রিফ্লেক্স আর্ক

    টিং টিং টিং
    — ঘন্টা বাজছে
    কিছু মানুষ ভাবছে যুদ্ধ ঘোষণা হল
    তারা ব্যারাক থেকে বেরিয়ে পড়ছে
    উচ্চকণ্ঠে গাইছে—
    'হা-লে-লুই-য়া', 'হা-লে-লুই-য়া'—

    টিং টিং টিং
    — ঘন্টা বাজছে
    কিছু মানুষ ভাবছে খাবার বিরতি হল
    তারা ক্ষুধার্ত হৃদয় নিয়ে টিফিন খুলে বসছে গুছিয়ে
    বারবার হাত ধুয়ে নিচ্ছে
    নিচ্ছে
    কিন্তু আরব-বসন্ত করতে পারেনা তাদের সে'হাত সুগন্ধী—

    টিং টিং টিং
    — ঘন্টা বাজছে
    কিছু উন্মাদ ভাবছে ছুটি হল,
    গরাদ শক্ত মুঠোয় ধরে বলছে বিষেন সিং বিড়বিড় করে,
    —'অ্যাটিকা, অ্যাটিকা, অ্যাটিকা, অ্যাটিকা, অ্যাটিকা...'

    আলোয় ঢাকা অন্ধকার, আলোয় ঢাকা অন্ধকার
    ঘন্টা বাজে গন্ধে তার, ঘন্টা বাজে গন্ধে তার

    টিং টিং টিং
    — ঘন্টা বাজছে
    একটি কুকুর লালা নিঃসরণ করতে করতে ছুটে আসছে
    সেই শব্দ অনুসরণ করতে করতে
    যা দেখে আগের সবকিছু নস্যাৎ করে পাভলভ্‌ সিদ্ধান্ত নেবেন,
    কিছু না, এগুলো মামুলি
    'রিফ্লেক্স আর্ক'।

    বুদ্ধ

    একদিন রাতে হয়ত সে স্বপ্ন দেখেছিল
    (যদিও স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তার খ্যাতি শোনা যায় না)
    আধোনিদ্রায় বা আধোজাগরণে বা তারও অতীত কিছু
    তাকে টেনে নিয়ে চলেছিল রুদ্ধদ্বার প্রাসাদের
    গভীর রাতের ছায়া ভেদ করে;
    বিরাট, প্রশস্ত, সুদৃঢ়, কারুকার্যময় সিংহদ্বার খুলে
    সে একলা এসে দাঁড়িয়েছিল
    প্রাসাদের স্তিমিত অলিন্দে।
    শুক্লপক্ষের আধখানা চাঁদ নেমে এসে জ্যোৎস্নায় ভরিয়ে
    দিচ্ছে তখন গাঢ় সুষুপ্তিতে আচ্ছন্ন কপিলাবস্তু নগরী।
    মুখ তুলে সারসের মতো ছিন্ন-উড়ন্ত মেঘের দিকে
    তাঁরও মনে হয়েছিল, ভবিষ্যতের সেই পুরুষের মতো—
    'অর্থ নয়, কীর্তি নয়, খ্যাতি নয়, নারী নয়, সন্তান নয়, সচ্ছলতা নয়
    — আরও এক বিপন্ন বিস্ময় আমাদের অন্তর্গত রক্তের মধ্যে খেলা করে
    আমাদের অস্থির, ক্লান্ত ও বিষণ্ণ করে।'

    তারপরে সুউচ্চ প্রাসাদ থেকে
    একদিন ধীরপায়ে সে এসেছিল নেমে
    শেষের প্রহরে--লাশকাটা ঘরে সেই পুরুষের শিরে
    পবিত্র হাত রেখে সান্ত্বনা দিতে।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ গুগল 'ওপেন অ্যাকসেস' থেকে নেয়া
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)