আইটি সেক্টরের বসেদের শতেক দোষ থাকলেও একটা ব্যাপারে তেনাদের "বাহ্ বস্" বলতেই হয়। সেটা হল পার্টি দেওয়া। চা থেকে দারু, তেনারা টিমের ছানাছানিদের দাবী নির্দ্বিধায় মেটান। পাঠক কূট প্রশ্ন করতেই পারেন যে এর কতটা বিল কোম্পানি দেয় বা ওভারওয়ার্কড টিমকে ঘুষ দেওয়ার এইচ আর পলিসিই এমন কিনা। কিন্তু আইটি সেক্টরের পাবলিক অন্য স্পিসিস। এদের নিয়েই ওই হোয়্যাটসঅ্যাপ জোকটা বানানো। হাফ গ্লাস জল দেখে গ্লাসটা অর্ধেক ভর্তি না অর্ধেক খালি সে অবান্তর প্রশ্নে এরা যায়ই না। ৬০ মিলি হুইস্কি জোগাড় করে বসের ঘাড় ভাঙে আর জলটার যথাস্হানে গতি করে দেয়। কিন্তু নিয়ম থাকলেই ব্যতিক্রম থাকবে। সায়ক এমনই এক ব্যতিক্রমের দেখা পেল।
সায়কের ডোমেস্টিক ক্লায়েন্টের প্রোজেক্টে কাজ। মানে ইন্ট্যারন্যাশনাল ফ্লাইটের বদলে 'মা তারা এক্সপ্রেস', দ্যাট ইজ ইন্টারেস্টিংয়ের বদলে দাদা ডুবিয়ে দিলেন তো, টি জি আই এফের বদলে ধাবা। সেখানেই তার পালা পড়ল এই ব্যতিক্রমী ক্ষণজন্মা বসের সাথে।
এই বস ট্রেনিদের ঘাড় ভেঙে ফুচকা, জুনিয়ার ডেভলপারের ঘাড় ভেঙে ডিমের ডেভিল, মডিউল লিডের ঘাড় ভেঙে মোমো খাওয়ায় পিএইচডি। আর পুরো ব্যাপারটাই করেন যাকে বলে স্টাইলমে। মানে ধরুন একটি আইটি বালক আনমনে ঘটি গরমের দিকে তাকিয়েছে। উনি পাশ থেকে, "আহ্ ঘটি গরম! কত যে স্মৃতি। সেই যে বন্ধুরা মিলে... আচ্ছা, চল একটু টেস্ট করা যাক।"
টেস্ট করার ঠিক মাঝপথে ওনার অবধারিতভাবে একটি মেলের কথা মনে পড়ে এবং তিনি বাদবাকি ঘটিগরম হাতে নিয়ে ছুট্টে অফিস ঢুকে যান। আবার ধরুন একটি আইটি বালিকার সাথে কথা বলতে বলতে নজর পড়ল জুসের দোকানের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে উনি এই গরমে জুস খেয়ে নিজেদের হাইড্রেটেড রাখা কত জরুরী সে বিষয়ে লেকচার দেন এবং জুসের দোকানে গিয়ে রাজাগজার স্টাইলে দুটো জুস অর্ডার করেন। জুস শেষের দিকে আসতেই উনি রাস্তার অন্য ফুটে আরেক আইটি বালককে দেখে তার দিকে ধেয়ে যান কোনোরকমে জুসের শেষটা ঢক করে গিলে ও গ্লাসটা ঠক করে নামিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই খোপে খোপে সেই বার্তা রটি গেছে মেলে/ বস মহাশয়ের থেকে নিজ নিজ পকেট সামলে।
এমন অবস্হায় খবর এল যে ওনার সাথে ক্লায়েন্ট ভিজিটে যেতে হল টিমের তিনজনকে। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। তার মধ্যে একজন সায়ক।
যাবার দিন সকালে ঠিক সময়ে চার মূর্তি পৌঁছে গেল স্টেশনে। ট্রেনও ছাড়ল যথা সময়ে। ট্রেন শিয়ালদহ ছাড়ার পর থেকেই রকমারি ফেরিওয়ালা ওঠে ট্রেনে আর বস মহাশয় উশখুশ করেন। কিন্তু এরা তিনজন পুরো উদাসী বাউল। আগে থেকে প্ল্যান করে এরা বাড়ি থেকে ফাঁসির খাওয়া খেয়ে এসেছে। খানিক পরে কম্পার্টমেন্টে কচুরি তরকারি উঠতে বসের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো। মুখ ফুটে বলে ফেললেন, "আহ্ কি ভাল গন্ধ! চল...।"
"আসলে এই সুমিতের না শরীরটা খারাপ। মানে ওই পেটটা..."
"আরে সুমিত না হয় না খেল?"
"কি যে বলেন? আমরা না ওয়ান টিম? ও খাবে না আর আমরা খাব?"
"হুম..."
আরো কিছুক্ষণ ঝালমুড়ি, চপ এসবের পরে উঠলো শশা। বসের মুখে পুরো চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে।
"আরে চল চল শশা খাওয়া যাক। শশায় পেট ঠাণ্ডা করে জান তো?"
"না মানে আমার না শশায় অ্যালার্জি। তাই..."
"শশায় অ্যালার্জি? অভিমন্যু কি যে বল তার ঠিক নেই। শশায় কারোর অ্যালার্জি হয়?"
"সত্যি বলছি, আমাদের বাড়িশুদ্ধু সবার শশায় অ্যালার্জি। এই পরশু দিন আমার ছোটকাকিমা শশা খেয়ে ফেলেছিল আর তারপর রাত বারোটার সময় হসপিটাল নিয়ে যেতে হল এত ফুলে গেছিল মুখ-টুখ।"
"দাঁড়াও দাঁড়াও। তোমার ছোটকাকিমা? তিনি কি করে তোমাদের বাড়ির লোক হলেন?"
"হলেন না? কেন? ছোটকাকা আপন আর কাকিমা পর? এই কি আমাদের ওয়ান টিম কনসেপ্ট?"
এ কথার উত্তর হয় না। সুতরাং বস মহাশয়কে চুপ করতে হল। আরো খানিক পরে উঠলো লেবু চা। এইবারে বস মরিয়া। চা তিনি খাবেনই। প্রায় চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, "চা তো খাওয়া যাক? তেষ্টায় তো গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।"
"না না। কি জল তা কে জানে?"
"আর জল তো ফুটিয়েছে চা বানাতে। সব জার্ম মরে গেছে। কোন চিন্তা নেই।"
"না না। একদম না। জানেন নতুন রকম জন্ডিস এসেছে বাজারে? আমার পিসতুতো দাদা তো আইডি হসপিটালে আছে। পরশুদিনই বলছিল কি যেন জেড ক্যাটেগরির জন্ডিস এসেছে। তার জার্ম জল ফোটালেও যাচ্ছে না। শুধু অ্যাকোয়াগার্ড ব্যবহার করলে ওই জার্মটা ফিল্টার হয়।"
বস্ বিড়বিড় করে, "কে জানে ডাক্তার না ইউরেকা ফোর্বসের সেলসম্যান।"
"কি বললেন? ইউরেকা ফোর্বসের সেলসম্যান? সে তো আমাদের পাশের বাড়ির পল্টু। এই ক'বছরে কি উন্নতিই না করল। এই তো গত মাসে দিল্লি গেল কনফারেন্সে। ফ্লাইটে। এই আইটি-তে না ঢুকে ওখানে গেলেই হত। অন্তত ফ্লাইটে করে দিল্লি তো যেতাম!"
ইতিমধ্যে এসে গেল স্টেশন। সারা দুপুর বিকেল ক্লায়েন্টের মেজ, সেজ, ন কত্তার অভাব, অভিযোগ, হতাশা শুনে, খানিক সামলে, খানিক পরে করে দেওয়া হবে আশ্বাস দিয়ে বেরিয়ে দেখে প্রায় সন্ধে হব হব। ক্লায়েন্ট অবশ্য রসগোল্লা, সন্দেশ এবং চা-বিস্কুট খাইয়েছে। কিন্তু বস বাবাজী তো আর সকালে খেয়ে বেরোননি তাই ওনার পেটের ছুঁচোরা তখন ডন বৈঠক ধোবিপাট সব মারছে। এদিকে তক্ষুনি তক্ষুনি একটা ট্রেন আছে সেটা মিস করলে আরো এক ঘন্টা ওয়েট করতে হবে। অগত্যা হাঁচড়-পাঁচড় করে ট্রেন ধরে কোলকাতা। স্টেশন থেকে বেরিয়েই সুমিত বলল, "খিদে পাচ্ছে।"
বস, "আহা সে তো পাবেই। সারাদিন তো প্রায় উপোসই গেল।"
সায়ক--"ঠিক বলেছেন। চলুন কোথাও একটা ভাল চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যাওয়া যাক। চাইনিজই ঠিক হবে সুমিতের পক্ষে।"
বসের তো ভাত খাবি নাকি আঁচাবো কোথায় অবস্হা। সুতরাং আধাঘন্টাটাক পরে চার মূর্তি নামী চাইনিজ রেস্টুরেন্টের তাজ্ঝিম আলোয় বসে খাবার অর্ডারে ব্যস্ত। ইতিমধ্যে ওয়েটার জল নিয়ে আসতেই অভিমন্যু বলে উঠলো, "মিনারেল ওয়াটার প্লিজ।"
ওয়েটার চলে যেতেই অভিমন্যু হাসি হাসি মুখে বলল, "ব্যস সুমিত এবার তুই প্রাণ ভরে জল খা। সারাদিন তো জল খাসইনি প্রায়। বাড়ি থেকে কি একটা ছোট মতন জলের বোতল এনেছিলি!"
তা সুমিত জল খেল। পরের এক ঘন্টায় একাই তিন বোতল জল উড়িয়ে দিল। তারপর যথা সময়ে চিকেন সুইটকর্ন স্যুপ, স্টিম মোমো পেরিয়ে এল চিকেন ফ্রায়েড রাইস আর ব্রকোলি চিকেন। মাঝপথেই সুমিত উঠে ওয়াশরুম গেল। বস সবে বলেছেন, "যত জল খেয়েছে..." সায়কের ফোন বাজতে শুরু করল।
"হ্যাঁ কি রে? এই তো ওয়াশরুম গেলি?"
"..."
"শরীরটা ঠিক লাগছে না? সে কি রে? কি প্রবলেম হচ্ছে?
"..."
"তুই ওখানে থাক। আমি আসছি। আমি এক্ষুনি অভিমন্যুকে বেরিয়ে ট্যাক্সি ধরতে বলছি। আমি আসছি তোর কাছে। ফোন রাখ।"
এরপরেই বসের দিকে ফিরে, "সুমিতের শরীরটা খুব খারাপ করছে। আমরা ওকে নিয়ে একেবারে হসপিটালেই চলে যাই বুঝলেন? শরীরটা খারাপই ছিল তার ওপরে এত ঘোরাঘুরি।"
"হ্যাঁ চল চল। আমিও যাই।" (ওঠার উদ্যোগ)
"না না। আপনি বরং একটু এইচ আরকে ফোন করুন। মানে যদি ভর্তি করতে হয় তাহলে ওই ইনসিয়োরেন্স ডিটেল সব লাগবে তো! আমরা রওনা দি।"
"আরে যেতে যেতে ফোন করে দেব..."
আবার সায়কের ফোন বাজতে শুরু করল।
"আসছি। আসছিইই।"
এরপরের ব্যাপার খুবই সংক্ষিপ্ত। সেদিন বসবাবাজীবনকেই বিল মেটাতে হয়েছিল।
এরা তিনমূর্তি পরের দিন আর অফিসমুখো হল না। দুদিন পরে গিয়ে দেখে যার ভয়ে ছুটি নেওয়া সেই তিনিই নেই অফিসে। জানা গেল তিনি আগের দিনও আসেননি। তারপরের দিনও তিনি এলেন না। দেখতে দেখতে প্রায় দেড় সপ্তাহ কাবার হয়ে গেল। তারপর এল সেই ঐতিহাসিক বুধবার। তিনি অফিসে এলেন। আর দুপুর নাগাদ এল ততোধিক ঐতিহাসিক মেল। বস ফুল টিমকে শুক্রবার সন্ধেবেলা খেতে ডেকেছেন। লাস্ট লাইনে স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে "ইটস মাই ট্রিট"।
এরপরে অফিসের কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবেই শিকেয় উঠল। শুরু হল স্পেকুলেশনের সুনামি। কেউ বলল এটা ফাঁদ, কেউ বলল গুপ্ত খবর বসের বস আসছে চেন্নাই থেকে, এটা তাঁরই ট্রিট, কেউ কেউ এতদূরও ভেবে ফেলল ওনার নিশ্চয়ই কোন টার্মিনাল ডিজিজ হয়েছে আর সেই জন্যই উনি এতদিনের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চান। এরা তিনমূর্তি একবার ভাবছে গেলে নির্ঘাত বড় বিপদ হবে আবার কৌতূহলও হচ্ছে প্রচণ্ড। এরই মাঝে এসে গেল শুক্রবার। আর ফাইনালি অবশ্যই জয় হল কৌতূহলের। আফটার অল বাঙালির রক্তে নেতাজি, ক্ষুদিরাম থেকে ষষ্ঠীচরণ, সবার উত্তরাধিকার। সেসব কথা ভাবতে ভাবতে, দুপুরে শুধুমাত্র ফ্রুটজুস আর বিস্কিট খেয়ে পেটে এনাফ জায়গা রেখে যথা সময়ে গুটিগুটি পায়ে তিনমূর্তি উদয় হল রেস্টুরেন্টে।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা গেল বসের বস সিনেই নেই। এদিকে খাদ্যের সাথে পানীয়ও পাওয়া যাচ্ছে। সবাই যখন প্রায় স্হবির অবস্হায় বসে আছে টেবিল ঘিরে আচমকা আবিষ্কার হল এই রেস্টুরেন্টের নতুন ম্যানেজার অভিমন্যুর পাড়াতুতো দাদা, অনীকদা। এরা তিনজন টেবিল ছেড়ে উঠে গিয়ে রীতিমত ঝাঁপিয়ে পড়ল অনীকদার ওপরে। আর ঝাঁপিয়ে পড়েই একটা অদ্ভুত কথা জানতে পারল। বস নাকি সেদিন দুপুরে বেশ অনেকটা টাকা অ্যাডভান্স পেমেন্ট করে গেছেন। এ খবরে স্বাভাবিকভাবেই এদের এক ইঞ্চি হাঁ মুখ দু ইঞ্চিতে পরিণত হল। যথাসময়ে স্টার্টার এল এবং সন্ধেবেলার ক্ষিদের মুখে গোল্ডেন ফ্রায়েড প্রন, চিকেন ললিপপ, ক্রিস্পি ফ্রায়েড বেবিকর্ন প্রচণ্ড রেটে অদৃশ্য হতে শুরু করল। রেস্টুরেন্টের ওয়েটারদের মুখে মোনালিসার হাসি, মোটা টিপসের আশায়। সাথে বীয়ার, হুইস্কিও সম পরিমাণে বইছে। মেন কোর্স অবধি পৌঁছাবার আগেই টিমের শিশুপদবাচ্যরা বাড়ির পথে রওনা দিল। মেনকোর্সও যাকে বলে অসাম। অ্যামেরিকান চপসি, কুং পাও চিকেন, বার্ন্ট গার্লিক ফিশ ইত্যাদি প্রভৃতি। মেনকোর্সের পরে সবাই যখন আকারে কুমড়োপটাশত্ব ও স্বভাবে বুদ্ধত্ব লাভ করেছে তখন সায়ক স্মোক করার অছিলায় টেরাসে ডাকল বসকে। পেছন পেছন গেল বাকি দুজনও। সায়কই কথাটা ভাঙল।
"আচ্ছা আজকে যে ট্রিট দিচ্ছেন তার কারণটা কি?"
"কারণ আবার কি? এই এমনিই। সবই যাবে যখন..."
"কি যাবে?"
"নাহ্ কিছু না..."
বোঝা গেল আরো তপস্যা লাগবে। সুতরাং আরো একঘন্টায় বসকে তালেগোলে আরো তিনটে বীয়ার গেলানো গেল এবং আরো বার কয়েক টেরাস অভিযান হল।
লাস্ট বাট ওয়ান বার টেরাসে গিয়ে অভিমন্যু খোঁচালো, "আপনি নাকি রেস্টুরেন্টে কিছু টাকা অ্যাডভান্স করে গেছেন?"
"হ্যাঁ।"
"কিন্তু কেন?"
"কথায় বলে না ওল্ড হ্যাবিটস ডাই হার্ড? যদি পরে মাল টাল খেয়ে পে করতে ভুলে যাই?"
কথাটা বলেই বস আবার টেবিলের দিকে ফিরে চললেন। এরাও মুখ তাকাতাকি করতে করতে ফিরে চলল।
লাস্ট বার টেরাসে গিয়ে বস অবশ্য নিজেই মুখ খুললেন।
"আর যাই কর বিয়ে কোরো না বুঝলে?"
"কেন? না মানে বিয়েতে কি অসুবিধা? আর আপনার তো এখনো বিয়ে হয়ই নি?"
"হয়নি। কিন্তু হচ্ছে। এই ডিসেম্বরেই। আর তাতেই..."
"কেন কেন?"
"আর কেন! কোন এক আপদ। আমাদের অফিসেরই। তোমাদের বৌদির কানে তুলেছে আমি নাকি কিপটে। আমি নাকি একজনের ঘাড় ভেঙে রেস্টুরেন্টে খেয়ে আরেকজনের ঘাড় ভেঙে অ্যান্টাসিড কিনে খাই। আর তারপরেই ফতোয়া জারী হয়েছে..."
অভিমন্যুর মুখ ফসকে জাস্ট বেরিয়ে গেল, "কি বলেছেন? নির্ঘাত বলেছেন এত কিপটে লোককে বিয়ে করবেন না?"
"না না। তা বলেননি। যা বলেছেন তা আরো সাংঘাতিক।"
সুমিতের গেস, "তবে কি ফেসবুকে সব ফাঁস করে দেবেন বলেছেন?"
"না। সে কথা নয়।"
"তাহলে কি? কি বলেছেন কি উনি?"
"সে আর তোমাদের শুনে কাজ নেই। আমারও আর বলতে ইচ্ছে করছে না। বললেই বুকটা আবার..." আবার সায়কই হাল ধরল। গলায় পুরো পাঁচ পেগ আবেগ ঢেলে বলল, "দেখুন আপনি তো আমাদের বস। আপনার থেকে আমরা কত কাজ শিখেছি, শিখছি। কাজ ছাড়াও কত কি শিখেছি। আমি তো ভাবি স্কুল কলেজের শিক্ষকের চেয়েও আমাদের জীবনে বসের অবদান বেশী। তা সেই বসের সমস্যা যদি ভাগ করে না নিতে পারি আমরা..."
"তাহলে শুনবে?"
"আপনি বললেই শুনবো। একবার বলেই দেখুন না?"
"বলেছেন আমার নাকি এখনো অনেক উন্নতি বাকি। আমাকে নাকি খুব শীগ্গিরই রোজকার লাঞ্চ, বিকেলের কফি, শাটল অটো সব ব্যাপারে স্বাবলম্বী হতে হবে। বিয়ের পর উনিই আমার ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ডের একছত্র মালকিন হবেন। মাসে খুব বেশী হলে শ দুয়েক টাকা আমাকে হাত খরচ দিতে পারেন। স্বামীদের নাকি এর চেয়ে বেশী পাওনা হয় না। বাকিটা যেন আমি চালিয়ে নি।"
শেষের দিকে বসের গলাটা শুনে এদেরও বাক্য হরে গেল প্রায়। সায়ক কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই বস আবার হাহাকার করে উঠলেন, "আমাকে পুরো অঙ্ক কষে প্রমাণ করে দিল আমার সারা মাসের লাঞ্চের খরচ আর কফির খরচ বাঁচালে একটা করে ভাল শাড়ি হয়ে যায়। আমার অটোভাড়ার পয়সাতে নাকি তার সাথে ম্যাচিং ব্যাগও হয়ে যায়। তা সবই যাবে যখন তখন যেকটা দিন আছে খেয়ে নিই। তোমাদেরও সব খাইয়ে দি।"
সুমিত আর না পেরে রুমালটা পকেট থেকে বার করে এগিয়ে দিল।
ফিরতি পথে তিনমূর্তির কথা চলছিল। সায়ক উবাচ, "ওরে এ হল সেই অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ। বাবারও বাবা থুড়ি মা হয়।"