• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬৯ | ডিসেম্বর ২০১৭ | প্রবন্ধ
    Share
  • কবির উপন্যাসে দেশভাগঃ শঙ্খ ঘোষ : দেবায়ন চৌধুরী


    বিতা লিখতে আর উপন্যাস লিখতে দুই আলাদা জাতের মনের প্রয়োজনের কথা বলেছিলেন বুদ্ধদেব বসু তাঁর ‘কথাসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধে। বুঝিয়েও দিয়েছিলেন এইভাবে—“পার্থক্যটা খুব সহজ ক’রে বলা যায় এইভাবে যে কবির মন অন্তর্মুখী আর ঔপন্যাসিকের মন বহির্মুখী; ঔপন্যাসিক মিশুক মানুষ, আর কবি লাজুক প্রকৃতির; ঔপন্যাসিক নিজেকে ছড়িয়ে দেন বিশ্বময়, আর কবি আনেন বিশ্বকে সংহত করে তাঁর অন্তরে। অবশ্য কোনো মানুষই শুধু অন্তর্মুখী বা বহির্মুখী হ’তে পারে না, সকলের মধ্যেই দুয়েরই অংশ মিশ্রিত থাকে, সেই মিশ্রণের মাত্রাভেদেই কেউ পান কবিস্বভাব, কেউ বা কথকের, আর স্বল্পসংখ্যক কেউ-কেউ উভয় বিভাগেই আনাগোনা করেন।’’ এই প্রবন্ধটিকে আমরা কবির উপন্যাস পড়ার ক্ষেত্রে অবশ্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করি। বিশেষ করে যিনি লিখছেন তিনি স্বয়ং কবি ও ঔপন্যাসিক। কবিতায় আর কথাসাহিত্যে সমান মর্যাদা জুটেছে এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম বলেই তাঁর মত। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রবীন্দ্রনাথ। ‘গোরা’ উপন্যাস পড়ে বুদ্ধদেবের মনে হয়েছিল—“-এই একটি বই প’ড়ে ধারণা হয় যে অন্তত একজন মহাকবিকে ঔপন্যাসিকেরও উপাদান দিয়েছিলেন তাঁর ভাগ্য বিধাতা।’’ আমরা এই কথাটিকে আরেকটু প্রসারিত করে বলতে পারি যে অনেক কবিকেই নিপুণভাবে উপন্যাস রচনার উপাদান দিয়েছেন সরস্বতী। অন্তত শঙ্খ ঘোষের কিশোর উপন্যাস ‘সকালবেলার আলো’, ‘সুপুরিবনের সারি’, ‘শহরপথের ধুলো’ পড়ে তাই মনে হয়। কবির উপন্যাস এই শব্দবন্ধে কবির ভূমিকাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে অবশ্যই। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা আলোচনায় আসতে পারি।

    দেশভাগ নিয়ে বাংলায় আখ্যান রচনার সংকটের কথা বহু ভাবেই আলোচিত হয়েছে। ‘দেশভাগ আর তার পরিণামী হিংসা’কে কীভাবে দেখব সেই নিয়ে দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, জড়তার কথা উল্লেখ করেছেন সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। অশ্রুকুমার শিকদার যেমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—“দেশভাগ-দেশত্যাগ নিয়ে লিখলে পাছে সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্রয় পেয়ে যায়, সেই ভয়ে বাংলা সাহিত্য যেন শিটিয়ে ছিল। অথবা সব কথা বলা যায় না বলেই সংকুচিত ছিল।’’ আবার নৈঃশব্দ্যের গ্রন্থিকে নতুনভাবে পড়তে চেয়েছেন আব্দুল কাফি। ট্রমার বিপরীতে সাইলেন্স যেখানে নিজেই ভাষা হয়ে যায়। দেশভাগ নিয়ে লেখা আখ্যান আমাদের বর্তমান সময়কেও আয়নার সামনে দাঁড় করাতে চায়। দেশভাগের অভিজ্ঞতা নির্দিষ্ট স্থান কালকে অতিক্রম করে শাশ্বত আবেদন তৈরি করে। শঙ্খ ঘোষের লেখা তিনটি উপন্যাস ‘সকালবেলার আলো’, ‘সুপুরিবনের সারি’ ও ‘শহরপথের ধুলো’-কে ট্রিলজি হিসেবে অনিবার্যভাবেই পড়তে হবে। মূলত ‘সুপুরিবনের সারি’ আখ্যানেই দেশভাগের কথা এসেছে। কিন্তু আমাদের আলোচনায় আমরা এই তিনটি কিশোর উপন্যাসকেই আলোচনা করব। ‘সকালবেলার আলো’ প্রকাশিত হয় আশ্বিন ১৩৭৯-তে। অগ্রহায়ণ ১৩৯৭-এ ‘সুপুরিবনের সারি’-র প্রকাশ। আর ‘শহরপথের ধুলো’ পাঠকের দরবারে আসে মাঘ ১৪১৬ সালে। বইগুলির পরিচিতি হিসেবে চতুর্থ প্রচ্ছদে যা লেখা হয়েছিল, সেগুলি উদ্ধৃত করছি এ কারণেই যে, বই-পড়ার ক্ষেত্রে এগুলি সহায়ক হতে পারে। এবং গ্রন্থপরিচয় হিসেবে যা লেখা রয়েছে তা লেখকের অনুমোদন পেয়েছে।

    “ছোটোদের নিয়ে লেখা ছোটোদের এই উপন্যাস। অনেকদিন আগে, দুই বাঙলা যখন এক ছিল, পদ্মানদীর ধারে বেড়ে উঠেছে এক কিশোর। তার চারদিকে ভারি সুন্দর পৃথিবী। কিন্তু এরই মধ্যে সে অল্পে অল্পে বুঝে নিচ্ছে যে তাকে চলতে হবে একেবারে একা।’’ (সকালবেলার আলো)

    “সদ্য-সদ্য দেশ ভাগ হয়েছে তখন। একজন কিশোর তার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে কীভাবে অনেকে ছেড়ে আসতে চাইছে তাদের চিরদিনের দেশ। আর সেইসঙ্গে পিছনে পড়ে থাকছে হারিয়ে যাওয়া কত প্রিয়জন, কত প্রিয়ছবি। এইসব নিয়ে লেখা নতুন এই কিশোর-উপন্যাস। লেখকের ‘সকালবেলার আলো’ বইটির পরবর্তী অংশ।’’ (সুপুরিবনের সারি)

    “নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে মস্ত এক অচেনা কলকাতায় এসে পৌঁছেছে এক কিশোর। শহরের পথে পথে, আর অলিতেগলিতে, একটু একটু করে সে দেখে নিচ্ছে কত মানুষজন, চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে শিল্পের সংস্কৃতির রাজনীতির নতুন এক জগৎ। সে কিশোর এগিয়ে চলেছে ছমছমে এক যৌবনের দিকে।’’ (শহরপথের ধুলো)

    কবির উপন্যাস পড়ার সময় আমাদের মাথায় রাখতেই হয় যিনি লিখছেন তিনি মূলত কবি। ফলে পাঠ অভিজ্ঞতার সূত্রে আমাদের কবিতার কাছে আসতেই হবে। আত্মজৈবনিক উপাদানের সঙ্গে মিলিয়ে এই আখ্যানগুলিকে পড়া যেতেই পারে—“যদিও এই কিশোরপাঠ্য উপন্যাসে কবির কল্পনা আছে, তথাপি তাঁর নিজের জীবনের ছবিও আছে। যেমন থাকে যে-কোনো ঔপন্যাসিকের। নীলমাধব চরিত্রটি অনুসরণ করলে বোঝা যায় যে, আজকের মহীরুহ বীজাকারে কেমন ছিল।’’ নিজের জীবন বীজের জীবন হিসেবে কাজ করেছে এই উপন্যাসগুলিতে। এবার আমরা নীলমাধবের জীবনচরিতে প্রবেশ করব।

    (২) যেখানে এক-পা রোদ্দুর পায়, এক-পা ছায়া

    দুই বাংলা যখন এক ছিল, এ গল্প সে সময়ের। একদিন সকালবেলায় ঘুম ভেঙেই টপ্ করে উঠে বসে নীলমাধব—“এই তো বাইরে অনেকটা আলো ফুটে উঠেছে। … চারদিকে কেমন ধব্ধব্ করছে ভোর হবার আগেকার আলো। বাতাসে অল্প একটু শির্শির্ করছে গা, উঠোন দিয়ে যেতে ডালিম গাছের পাতায় শর্শর্ শব্দ—কেমন ভালো।’’ নীলু, কেশব, বরুণ—তিন বন্ধুর পদ্মাপাড়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা দিয়ে ‘সকালবেলার আলো’ উপন্যাসের সূচনা। শৈশব তার সারল্যে অবিনশ্বর। যৌথতার উষ্ণতায় উদ্বেল। মরমি। কল্পনাপ্রবণ। পদ্মাপাড়ে ভিখিরিকে দেখে বরুণ বলতে চেয়েছে লোকটা সি.আই.ডি। পুরো কথাটার মানে কিশোরেরা জানে না। কিন্তু বোঝে সি আই ডি-রা লুকিয়ে খবর দেয়। আর এই খবর দেবার সূত্র ধরেই লেখক স্বাধীনতার আগের সময়টুকু ধরিয়ে দেন। বন্দেমাতরম্ শুনলে পুলিশের মাথা গরম হয়ে যায় এটি তারা কমন সেন্স দিয়ে জানে। প্রসঙ্গ পাল্টে যায় ইলিশ-কথায়—“তাদের পায়ের কাছে স্তূপ করা ইলিশের পাহাড়! রুপোলি পাহাড়। যেন সামনে একটা সরস্বতী বসিয়ে দিলেই হলো।… ঠিক বলেছে জেলে। ঝড় আসবে মনে হয়। এই রকমই তো শব্দ হয় ঝড়ের আগে। ঝড় যেন আগে থেকে দূত পাঠিয়ে দেয়, আমি আসছি।’’ শেষের বাক্যটিকে কীভাবে আমরা গ্রহণ করব? হাতে মাছ আর লন্ঠন নিয়ে ছেলের দল বৃষ্টি ভিজে বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিল সেই শনিবারে। কিন্তু এই ফেরা বা দৌড়গুলো যে বদলে যাবে!

    নীলুর বন্ধু কেশবের অসুস্থতার খবর আগেই জানিয়েছিলেন কথক। কেশব মারা যায়। বাসুদি চলে যায় শ্বশুরবাড়িতে। বাসুদির চিঠি পেয়ে মন ভালো লাগে নীলুর। ছোটোমামার গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গান ‘যে ছিল আমার স্বপনচারিণী’-র উল্লেখ আলাদা মনোযোগ দাবি করে বইকি। গগনচারী হতে চায় মন। মেঘের মাঝে রবীন্দ্রনাথের মুখ খুঁজে পাবার প্রসঙ্গ আমাদের আখ্যানকারের একটি কবিতার কাছে নিয়ে যায়। যাহোক আকাশ নদীর মধ্যে ব্রিজ দেখতে পায় যেন সে। আর কথক বলে ফেলেন—“এটা নীলু দেখেছে যে মেঘ এক ছবি রাখে না কখনো। কেবলই ভাঙতে থাকে! কেবলই অন্য ছবি করে দেয়।’’ আখ্যানের এই ইঙ্গিতগুলি আমাদের প্রস্তুত করতে থাকে বৃহত্তর সত্য উপলব্ধিতে। বাসুদি নীলুকে চিঠিতে লিখেছিল বরুণকে নিয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে যেতে। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। কেননা এই চিঠির পর নতুন পরিচ্ছেদ শুরু এইভাবে—“আজ চলে যাবে বরুণরা। তখনো অন্ধকার রয়ে গেছে, নীলমাধব চলেছে মাঠের ওপর দিয়ে, যেমন আগে আগে যেত পদ্মার জন্য।’’১০ দুটো ভোর কত আলাদা! ব্রিজের ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে রেলগাড়ি। তিনজন মিলে ওপারে চলে যাবার কথা ছিল তিনজনের। যুদ্ধের সময় ব্রিজে ওঠার নিয়ম নেই। উপন্যাসটি শেষ হচ্ছে নীলুর আত্ম উপলব্ধিতে—“কেশব কবে চলে গেছে। বরুণও চলে গেল। হয়তো একদিন যুদ্ধও থেমে যাবে। তখন একদিন নীলু ওই ব্রিজের ওপর দিয়ে চলে যেতে পারবে ওপারের দিকে। কিন্তু তখন কেশব থাকবে না, বরুণ থাকবে না। যেতে হবে একলা, একেবারে একা!’’১১ এই আখ্যানটির মূল রচনার সময় দেওয়া আছে ১৯৬৪ সাল। এর কিছু আগে পরের সময় ঘিরে লেখা হবে ‘নিহিত পাতালছায়া’, ‘তুমি তো তেমন গৌরী নও’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি। দু’ একটি কবিতার উল্লেখ আমরা করব আমাদের আলোচনার পরবর্তী পর্যায়ে। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত ‘আদিম লতাগুল্মময়’ কাব্যগ্রন্থের ‘অঞ্জলি’১২ কবিতাটির প্রথমাংশ উদ্ধৃত করছি ভাবগত সাযুজ্যের কারণে—

    “ঘর যায় পথ যায় প্রিয় যায় পরিচিত যায়
    সমস্ত মিলায়
    এমন মুহূর্ত আসে যেন তুমি একা
    দাঁড়িয়েছ মুহূর্তের টিলার উপরে, আর জল
    সব ধারে ধাবমান জল…’’

    (৩) প্রণাম তোমায় সুপুরিবনের সারি

    ‘সকালবেলার আলো’ আখ্যানের কিছুদিন পরের ছবি বর্ণিত হয়েছে ‘সুপুরিবনের সারি’ উপন্যাসে। এদিকে স্বাধীনতার পর দেশ দু-টুকরো হয়ে গেছে। পুজোর ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে নীলু। বাড়ি বলতে নীলু মামাবাড়িকেই বোঝে। তার ঠাকুর্দা আর দাদামশাই-এর বাড়ি একই গ্রামে। অন্যবারের থেকে এবারের যাওয়া আলাদা ঠেকে নীলুর কাছে—“যাবে না কেউ এবার, কেননা দেশ না কি এবার ভাগ হয়ে গেছে। নীলুদের গ্রামটা না কি এখন অন্য একটা দেশ। ভারি আজব কথা। এখন না কি তাই ভিন্ন কোথাও থাকতে হবে তাদের। কোথায়? কেউ ঠিক জানে না এখনো।… বড়োমামাদের কথা শুনে বুঝে নিয়েছে নীলু, এবার তারা যাচ্ছে, আর কোনোদিন দেশে না যাবার জন্য।’’১৩ নীলুর প্রেক্ষিতে এই দেখা বিভাগ-পূর্ব আর বিভাগ-পরবর্তী সময়ের পর্যালোচনা করতে থাকে। কতখানি বদলে গেল পরিপার্শ্ব, মনের উঠোন—তার থেকেই বুঝে নেওয়া যেতে পারে দেশভাগের বিভীষিকা।

    হুলার হাটে এসে পৌঁছোয় নীলু। সেখান থেকে বাড়ি যাবার পথের বর্ণনা ভারি চমৎকার। শিউলিগাছের গন্ধভরা উঠোনে দাঁড়িয়ে মনে হয়—“কী আশ্চর্য, এবার কত চুপচাপ লাগছে গোটা বাড়িটা।’’১৪ বারবার আমরা এই নীরবতাকে অনুধাবন করতে পারি। উৎসবের উচ্ছ্বাসের বদলে এই দমবন্ধ পরিস্থিতি নীলুর কাছে অচেনা, অপ্রত্যাশিতও বটে। দাদুর সঙ্গে বাজার করতে গিয়ে মাধবমামার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। সেখানে উঠে আসে দেশত্যাগের প্রসঙ্গ। যাবার কোনো জায়গা না থাকলেও যাওয়া দরকার বুঝে গেছে ওপার বাংলার হিন্দুরা। নীলু অতীত আর বর্তমানের যাতায়াত করে স্মৃতির সূত্র ধরে। আর লেখক তাঁর কলমের আঁচড়ে তুলে আনতে থাকেন হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের এক বহুমাত্রিক ইতিহাস। অষ্টমীর দিনেও উঠে আসে সবার চলে যাবার কথা। সন্ধেবেলা অন্যবার হারুন আসে। এবার আসেনি। পুজোর আবহ মনকে অবশ করে দেয় যেভাবে তা নীলু কাউকে বোঝাতে পারে না। গত বছর হারুনকে সে কথা বলতেই কিছু না বুঝে সে বলেছিল—“‘এইসব একদিন আমাগো হইয়া যাইবে।’

    ‘কায়েদে আজম কইছে, এই সব আমরাই পামু।’
    ‘তোরা? তোরা মানে? তোরা কারা?’
    ‘আমরা মানে মোছলমানেরা।’
    ……”

    শুনে খুব রাগ হয়েছিল। কিন্তু এক বছর পর এখন তো মনে হয় ঠিকই বলেছিল হারুন, হারুনের চাচা, কিংবা কায়েদে আজম। এটা আমাদের, এটা ওদের, এইভাবেই তো এখন কথা বলে সবাই।’’১৫ হারুন যে আসছে না, সেকি ‘আমরা’ ‘ওরা’র জন্যেই? এই প্রশ্নের মধ্যেই তো রয়ে গেল দ্বিজাতি তত্ত্বের ইতিহাস। কবি এক অর্থে ঐতিহাসিক। কিন্তু সে ইতিহাস প্রচলিত ইতিহাসবোধের থেকে বেরিয়ে এসে ছুঁয়ে থাকে আরো বড় পরিসরকে। যে স্বল্পকথন শঙ্খ ঘোষের কবিতার বৈশিষ্ট্য, নীরবতা যেখানে হয়ে ওঠে প্রতিরোধের আয়ুধ, সেখানে এই উপন্যাসেও তিনি যে তাঁর স্বধর্ম বজায় রাখবেন তাতে সন্দেহ নেই। কবিরা সকলের হয়ে দুঃখ ভোগ করেন। আজন্ম দুঃখের তপস্যার এ জীবনে দেশভাগ নিজের মধ্যে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই এই উপন্যাস এতটাই বাস্তব। কবিরা ঘটনা সংঘটনে খুব বেশি দক্ষ হন না—এ জাতীয় মনোভাব দানা বাঁধতে পারে না এই উপন্যাস পড়ে। কেননা এই আখ্যান আসলে এক ধরনের স্বগতোক্তি। ঘটনার থেকে বড়ো হয়ে ওঠে অনুভব। কিংবা স্মৃতির সূত্র ধরে কাহিনির নির্মাণ এতটাই নিপুণভাবে পরিকল্পিত হয়, মনে হয় না কিছু আরোপ আছে তাতে। দুর্গাপূজা বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব, এই উৎসবের দিনেই মানুষ নিজের অস্তিত্বকে বুঝতে চাইছে আরেকবার। মীর মোশারফ হোসেনের ‘বিষাদসিন্ধু’ পড়ে নীলুর হারুনকে শোনানোর প্রসঙ্গ অন্য মাত্রায় পৌঁছে যায়। এই টেক্সটে বারবার যে অন্য নানা টেক্সটের কথা এসেছে তারা যেন পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতে থাকে। হোসেন আর কর্ণকে মিলিয়ে দেয় নীলু অসহায় ভবিতব্যের সূত্র ধরে। আর হারুনের মুখে শুনতে হয় কথার ছলে—“... এয়্যা আর তোগো দ্যাশ না তোরা তো অ্যাহোন অইন্য দ্যাশের লোক।’’১৬ এতদিন ধরে শোনা কথা হারুনের মুখে অন্য অভিঘাত তৈরি করল। নীলুর বিশ্বাসের জগৎ ভেঙে যায়। “হ্যাঁ, বেড়াই। বেড়াই বানাচ্ছিল ওরা। ...এই সেই হারুন?...সেই হারুন? এইরকম হয়ে যায় লোকে?’’১৭ এই যে পরিবর্তন তাকে কোনো যুক্তিতেই মানতে পারে না নীলু। আমরাও পারি কি?

    আখ্যানের শেষে স্বাধীনতা সংগ্রামী বিশুমামার মুখ থেকে আমরা শুনি—“... এরই জন্য কি এতদিন ধরে লড়লাম আমরা? ভাঙা দেশের জন্য? এই দেশভাঙার জন্যে?’’ ১৮ হিন্দু বাঙালি যারা পূর্ববঙ্গে ছিলেন স্বাধীনতা তাঁদের আদৌ কিছু দিতে পেরেছিল কি? আমাদের মনে পড়তে পারে শঙ্খ ঘোষের ‘স্বদেশ স্বদেশ করিস কারে’ কবিতার শেষ অংশটুকু—

    “তুমি দেশ? তুমিই অপাপবিদ্ধ স্বর্গাদপি বড়ো?
    জন্মদিন মৃত্যুদিন জীবনের প্রতিদিন বুকে
    বরাভয় হাত তোলে দীর্ঘকায় শ্যাম ছায়াতরু
    সেই তুমি? সেই তুমি বিষাদের স্মৃতি নিয়ে সুখী
    মানচিত্ররেখা, তুমি দেশ নও মাটি নও তুমি!’’১৯

    গাছের মত মানুষেরও শেকড় থাকে। নীলুর দাদু যখন নিজের হাতে লাগানো সুপুরি গাছের সারির কথা বলতে থাকে, স্মৃতিচিহ্নে জ্বালাতে চায় নিত্য পিদিম, আমরা বুঝতে পারি ছেড়ে আসা যায় না কোথাও। যেভাবে ফেরাও সম্ভব হয় না। ফুলমামির নিরুদ্দেশ সংবাদ প্রতীকী হয়ে ওঠে। ‘নিহিত পাতালছায়া’ কাব্যগ্রন্থের ‘রাঙামামিমার গৃহত্যাগ’ কবিতাটি এই সূত্রে পড়া যেতে পারে। লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ ধরে ফুলমামি ফিরে আসবে ঘরে নীলুর এই ভাবনা পুনর্নিমিত করে দেয় লোকবিশ্বাসকে। দ্বাদশী চলে আসে। নীলুরা ফিরবে—“এবার যেন তেমন কোনো তাড়া নেই, ফিরে যাওয়ার সাড়া নেই। যাবার সময়ে যাঁদের সঙ্গে কথা বলবে, যেন কোথাও, কোথাও যেন তারা নেই। পায়ে পায়ে নীলু হেঁটে বেড়ায় এ-ঘর থেকে ও-ঘর, এই পুবের ঘর পশ্চিমের ঘর, চিলেকোঠা ছাদ। এ কি হতে পারে যে এখানে আর কোনোদিন পা পড়বে না তার, তাদের? কোনোদিন?’’ ২০ যাত্রা করবার সময় রিচ্যুয়ালের ব্যবহার এই উপন্যাসে আলাদা মাত্রা পেয়েছে। আম্রপল্লব বসানো সিঁদুর মাখানো ঘটের কাছে বিদায় চেয়ে টলটলে জলে নিজের মুখের ছায়া দেখে ‘আবার আসব’ বলতে গিয়ে মনে হয় নীলুর গলা যায় আটকে। কেননা সেটা যে সত্যি নয়।

    চোখের সামনে থেকে সরে যেতে থাকে কাছারিঘর, মণ্ডপ, দালানঘর। নীলুর সমস্তকিছুকে প্রণাম করতে ইচ্ছে করে। উপন্যাসের এই অংশটুকু ছুঁয়ে থাকে কবিতাকে—“প্রণাম মাটি, প্রণাম সাঁকো, প্রণাম ঢাক কাঁসর। টিনের চালা, নিকোনো উঠোন, হাটখোলা, প্রণাম।’’২১ সুপুরিবন পর্যন্তই গ্রামের সীমা। তারপর শেষ—“শেষ? হ্যাঁ, শেষ। প্রণাম তোমায়, শেষ। প্রণাম তোমায়, এই দ্বাদশীর বিকেল। প্রণাম, ওই খালের মুখে নদীর জলের ঢেউ। প্রণাম তোমায় তুলসীতলা, মঠ। প্রণাম ফুলমামি। প্রণাম, তবে প্রণাম তোমায় সুপুরিবনের সারি।

    “মনে মনে বলতে চায় নীলু: হারুন, আসব আবার। কিন্তু বলতে পারে না কিছু। আবার একবার ডান দিকে বাঁক নিয়ে, নৌকো শুধু চলতে থাকে মচর্‌ মচর্‌, ঢিমে তালে, একটানা পশ্চিমের দিকে।’’২২ আমাদের উল্লেখ করতেই হবে কবির লেখা ‘দশমী’ কবিতাটির অংশবিশেষ। একই মনোভাব কীভাবে কবিতায় উপন্যাসে ধরা দেয়। কবির উপন্যাস এইভাবেই তাঁর কবিতা পাঠের ক্ষেত্রেও সহায়ক হয়ে উঠতে পারে—

    “তবে যাই
    যাই মণ্ডপের পাশে ফুলতোলা ভোরবেলা যাই
    খাল ছেড়ে পায়ে উঠে-আসা আলো
            যাই উদাসীন দেহে গুরুগুরু বোধনের ধ্বনি
    যাই সনাতন বলিদান
    ......

    ঠাকুমা যেমন ঠিক দশমীর চোখে দেখে জল
    যাই পাকা সুপুরির রঙে-ধরা গোধূলির দেশ
    আমি যাই’’২৩

    (৩) ‘শঙ্খ ঘোষের শ্রেষ্ঠ কবিতা’য় ‘দশমী’র পরেই রয়েছে ‘পুনর্বাসন’ কবিতাটি। ‘যা কিছু আমার চারপাশে ছিল’ আর ‘যা কিছু আমার চারপাশে আছে’—এই দুই পাথর ঠুকে ‘প্রতিদিনের পুনর্বাসন’। ‘শহরপথের ধুলো’ আখ্যানের ভাববীজ হিসেবে এই কবিতাকে অনায়াসে গ্রহণ করা যেতে পারে। পশ্চিমদিকে যাত্রার কথা দিয়ে ‘সুপুরিবনের সারি’ উপন্যাসটি শেষ হয়েছিল। আর এই কবিতায় পাচ্ছি আমরা—

    “ ...
    সমস্ত একসঙ্গে কেঁপে ওঠে পশ্চিমমুখে
    স্মৃতি যেন দীর্ঘযাত্রী দলদঙ্গল
    ভাঙা বাক্স পড়ে থাকে আমগাছের ছায়ায়
    এক পা ছেড়ে অন্য পায়ে হঠাৎ সব বাস্তুহীন।’’২৪

    উপন্যাসের প্রথম পৃষ্ঠাতেই লেখক জানিয়ে দেন—“শেয়ালদা স্টেশনে এসে নামবার পর থেকেই চুপ করে আছে সবাই। আগে-আগে যখন ওরা কোলকাতায় আসত, তার থেকে কতই-না আলাদা এটা। এ হলো একেবারে থাকবার জন্যই আসা, বেড়াবার জন্য নয়।’’২৫ পাল্টে যাচ্ছে থাকার জায়গা, পাল্টে যাচ্ছে ঘিরে থাকা শব্দগুলো। পাল্টে যাচ্ছে জীবন। সবার ছাদের ব্যবস্থা হয়নি একসঙ্গে। নীলুকে হোস্টেলে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিনে পয়সায় থাকা খাওয়ার চিন্তাও কাজ করেছে। সুধাপিসি ‘বলো বলো বলো সবে’ গান গাইছিল। ‘ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে’ এই লাইনটি শুনেই চিমনি কাকুর ‘লবে না ছাই’ হুঙ্কার দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ইঙ্গিতপূর্ণ হয়ে ওঠে।

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে দেখি নীলুর বয়সী এক ছেলে সিঙাড়া চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। দোকানের মালিক বলছেন—“ওঃ, এই রিফিউজিগুলোকে নিয়ে আর পারা যায় না মশাই। চোর হয়ে গেল সব। পঙ্গপালের মতো জুটেছে এসে, দেশটাকে দিল একেবারে শেষ করে।’’২৬ এই মানসিকতা বলা বাহুল্য অনেকেরই ছিল। ঘটি-বাঙাল দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় এই দর্শন উঠে আসবে, তাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে চিমনিকাকু যে ভিড়ের মধ্যে গিয়ে ছেলেটিকে মেরে এসেছিল, সেই ‘রিফিউজি’ পরিচয় পেয়ে উত্তেজিত হয়েছে। সেই পোলাটাকে খোঁজার চেষ্টা করে বিবর্ণ মুখে বলেছে—“শ্যাষে আমার ভাইরে মারলাম আমি? আমার আপন দেশের ভাইরে?’’ ২৭ পরিচিতি আর হিংসা কীভাবে জড়িয়ে যায় এই উপন্যাস বোধহয় তার সুলুকসন্ধান করতে থাকে। আর থাকে নতুন পথ চলা। রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের দৈনন্দিন জীবন, ক্লাস পালিয়ে যোগেনের সঙ্গে সিনেমা দেখা, পঙ্কজ মল্লিক, জর্জ বিশ্বাসের গান শোনা, বাঙলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার উদ্যোগ, গান্ধীজীর মৃত্যু, সুকান্ত-সুভাষের কবিতা, বামপন্থী রাজনীতির প্রসঙ্গ ছুঁয়ে এই উপন্যাস দেশভাগ-পরবর্তী সময়কে সুন্দরভাবে চিত্রিত করে সন্দেহ নেই। ভারতের স্বাধীনতা যে খণ্ডিত স্বাধীনতা—উদ্বাস্তুদের থেকে আর কে ভালো বুঝবে! কংগ্রেসি আমলে বামপন্থীদের গ্রেপ্তারির সূত্রে আমরা আবার পাই চিমনি কাকুকে। প্রশ্নপত্র সামনে রেখে নীলু যে লিখবার কোনো মানে খুঁজে পায় না, এই অর্থহীনতা আমাদের অর্থান্তরে নিয়ে যায়। কিশোর নীলু এক অবুঝ মনখারাপে ভুগতে থাকে। পমির সঙ্গে তার সম্পর্কের জানলায় লোহার জাল গাঁথা হয়ে যায় বুঝি। আরেকবার দেশের কথা মনে নীলুর। যে দেশ স্বপ্নের, আশ্রয়ের, অতীতের—“আঃ, যদি ফিরে যাওয়া যেত! যাওয়া কি যায় না আর? না না, পিছনদিকে যাওয়া কি আর সম্ভব? এইখানেই, এই শহরেই তো বাঁচতে হবে তাকে।’’২৮ দেশভাগের গল্প, দেশত্যাগের গল্প এসে পৌঁছয় নতুন দেশে অস্তিত্বের সংগ্রামে। শঙ্খ ঘোষ নীলুর মধ্য দিয়ে একটা যাত্রাকে ধরতে চান। যে যাত্রায় মিশে থাকেন লেখক এবং চরিত্রেরা। ‘সকালবেলার আলো’, ‘সুপুরিবনের সারি’ হয়ে ‘শহরপথের ধুলো’ এক সমগ্রের ধারণা তুলে ধরতে চায়। যে সমগ্র খণ্ডে খণ্ডে লিখে রাখে ইতিহাসের ট্রাজেডি আর মানবতার পরাজয়কে। নীলুর এক সন্ধেবেলায় শহরপথের ধুলোকে একলা বুকে তুলে নেবার মধ্যে যে বাঁচার যে আকুতি থাকে, কোনো দেশভাগ তাকে হারিয়ে দিতে পারে না। এখানেই এই আখ্যানত্রয়ের স্পিরিট। নীলুর লেখা তাই ফুরোয় না। চলতেই থাকে...

    তথ্যনির্দেশঃ

    ১) কথাসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসু, প্রবন্ধ-সংকলন, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃঃ ৪১

    ২) ঐ, পৃঃ ৪৫

    ৩) দেশভাগঃ আখ্যান রচনার সংকট, সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেশভাগ স্মৃতি আর সত্তা, প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ—জানুয়ারী, ১৯৯৯, পৃঃ ১-১২

    ৪) ভাঙা বাঙলার সাহিত্য, অশ্রুকুমার সিকদার, দেশভাগ স্মৃতি আর স্তব্ধতা, সম্পাদনা—সেমন্তী ঘোষ, গাঙচিল, চতুর্থ মুদ্রণ, অগস্ট ২০১৪, পৃঃ ২০৮

    ৫) নৈঃশব্দ্যের গ্রন্থি এবং ‘দেশভাগের সাহিত্য’: সত্তার অনন্ত বিভাজন, আব্দুল কাফি, উজাগর, পার্টিশন মানবাধিকার গণতন্ত্র ও সাহিত্য সংখ্যা, অক্টোবর—ফেব্রুয়ারি ২০১৬, সম্পাদক- উত্তম পুরকাইত, পৃঃ ২৫

    ৬) কবিতা ও উপন্যাসের শিল্পঃ শঙ্খ ঘোষ, তারাপদ আচার্য, কবির কথাসাহিত্য, শুভশ্রী, সম্পাদনা—পুলককুমার সরকার, ১৪১৪, পৃঃ ২০১

    ৭) সকালবেলার আলো, শঙ্খ ঘোষ, অরুণা প্রকাশনী, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ আশ্বিন ১৩৭৯, পৃঃ ৯

    ৮) ঐ, পৃঃ ৩৪

    ৯) ঐ, পৃঃ ৭০

    ১০) ঐ, পৃঃ ৭৩

    ১১) ঐ, পৃঃ ৭৯

    ১২) অঞ্জলি, শঙ্খ ঘোষের শ্রেষ্ঠ কবিতা, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, চতুর্দশ সংস্করণ—মাঘ ১৪১৭, পৃঃ ৭৩

    ১৩) সুপুরিবনের সারি, শঙ্খ ঘোষ, অরুণা প্রকাশনী, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ—অগ্রহায়ণ ১৩৯৭, পৃঃ ৪

    ১৪) ঐ, পৃঃ ১৯

    ১৫) পৃঃ ৫১

    ১৬) পৃঃ ৫৯

    ১৭) পৃঃ ৫৯-৬০

    ১৮) পৃঃ ৮২

    ১৯) স্বদেশ স্বদেশ করিস কারে, শঙ্খ ঘোষ, কবিতা সংগ্রহ, দে’জ পাবলিশিং, প্রথম প্রকাশ—পৌষ ১৩৬৭, পৃঃ ৪৯

    ২০) সুপুরিবনের সারি, পূর্বোক্ত, পৃঃ ৮৫

    ২১) পৃঃ ৮৭

    ২২) পৃঃ ৮৮

    ২৩) দশমী, শঙ্খ ঘোষ ঘোষের শ্রেষ্ঠ কবিতা, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, চতুর্দশ সংস্করণ, মাঘ ১৪১৪, পৃঃ ৫১-৫২

    ২৪) পুনর্বাসন, পূর্বোক্ত, পৃঃ ৫৩

    ২৫) শহরপথের ধুলো, শঙ্খ ঘোষ, অরুণা প্রকাশনী, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ, মাঘ ১৪১৬

    ২৬) ঐ, পৃঃ ২১

    ২৭) ঐ, পৃঃ ২২

    ২৮) ঐ, পৃঃ ৯৫




    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)