প্রত্যেক বছর পুজোয় আমাদের আবাসন পয়মন্তীতে আমরা ছোটরা একটি নাটক করি। এই বছর যদিও নাটক ঠিক করা একটা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল, কারণ ছ-সাত জনের বেশি লোক ছিল না। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত আমরা 'ঘর্মুরি পুরাণ' নামে একটি খুব মজার নাটক করব বলে ঠিক করলাম। নাটকটি 'পরবাস' পত্রিকায় বেরিয়েছিল। বাবা যেদিন সবাইকে ডেকে নাটকটা পড়ে শোনাল, সেদিন হাসতে হাসতে আমাদের পেট ফেটে যাচ্ছিল। জুলাই মাস থেকে রিহার্সাল শুরু হল। প্রথম প্রথম কারুর সংলাপই মুখস্থ হচ্ছিল না। হলেও তা বলতে গিয়ে সবাই হেসেই ফেলছিল। বিশেষ করে ত্বিষা - যে ভীম হয়েছিল।
সবাইকে যে সবসময় পাওয়া যেত তা নয়; কারো পড়া থাকত, কারো পরীক্ষা, কারুর আবার শরীর খারাপ হয়ে যেত -- সব দিকে খেয়াল রেখে বাবা-মা নাটকটা করাতো। আবাসনের রাই আন্টির ছেলে তান ভারি শান্ত, সে দুর্যোধন হয়েছিল। তাকে আবার শুধু সপ্তাহের শেষে পাওয়া যেত। সেট ও প্রপস নিজেদেরই তৈরি করতে হয়েছিল। বাবা কাঠমিস্ত্রি কে দিয়ে বসার জন্য কয়েকটা বাক্স তৈরি করিয়েছিল। বাবার বন্ধু সিদ্ধার্থকাকু বাঁশের ধনুক তৈরি করিয়ে দিয়েছিল। লম্বা পাটকাঠি ভেঙে আগায় রূপোলি কাগজের ফলা লাগিয়ে তীর বানানো হয়েছিল। নাটকের দৌলতে আমরা বেশ তীর ছুঁড়তে শিখে গেলাম।
গড়িয়াহাট বাজারের ভেতর একটা দোকান থেকে রিহার্সালের জন্য দ্রোণাচার্যের নকল দাড়ি কেনা হল। তাছাড়া প্লাস্টিকের গদা আর বেশ সুন্দর দেখতে তরোয়ালও কেনা হয়েছিল। মা ব্যাসদেবের ভূর্জপত্র, ঘর্মুরির পাতার ঠোঙা, বিড়ি ইত্যাদি বানিয়েছিল। নাটকের রিহার্সাল করতে আমাদের খুব মজা লাগত। অত রাত অবধি বন্ধুদের সাথে জেগে থাকার মজাই আলাদা। তারপর যখন নাটকের স্টেজ তৈরি হয়ে গেল -- তখন আর আমাদের পায় কে!
এরই মাঝে একদিন দ্রোণাচার্যের জন্য আনা নকল দাড়ি হারিয়ে গেল, তা আর পাওয়া গেল না। নাটকে আমি যুধিষ্ঠির হয়েছিলাম, বোন অর্জুন। আমার বোনকে এখানে সবাই 'বোনু' বলেই ডাকে। আমাদের ময়ূখদাদা ব্যাসদেব হয়েছিল। সে তো একবার উত্তেজনায় "মারো, অর্জুন, মারো"-র জায়গায় বলে বসল - "মারো, বোনু, মারো।"
মিউজিক করেছিল ভিকিকাকু। মিউজিক রিহার্সালের দিন আমি আরেকটু হলেই তাকে তীর মেরে বসেছিলাম, কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। এইসবের মধ্যেই পুজো এসে গেল। ইস্কুলে ছুটি পড়ে যেতে আমরা সারাদিন বাইরেই ঘুরে বেড়াতাম। ষষ্ঠীর দিন সকালে ময়ূখদাদা হঠাৎ 'যুধিষ্ঠির' কে ভুল করে 'ধৃতরাষ্ট্র' বলতে শুরু করে দিল। এদিকে সন্ধ্যাবেলা নাটক। সবার মাথায় হাত। যাই হোক, সন্ধ্যাবেলা আমরা সবাই মেকআপ করে নিলাম ও কস্টিউম পরে নিলাম। রাই আন্টি দারুণ সব কস্টিউম এনে দিয়েছিল আমাদের। তারপর, আমরা সবাই স্টেজে উঠলাম। বাবা সেট সাজাচ্ছিল, আর ময়ূখদাদার মা শিল্পী আন্টি প্রপসের দায়িত্ব সামলাচ্ছিল। স্টেজে প্রচণ্ড গরম ছিল, সবার ঘাম ঝরছিল। মাইকের গোলযোগের জন্য নাটক প্রথমে একবার থেমেও গিয়েছিল।
বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে আমরা নাটক করে গেলাম। করতে করতে কেউ কেউ দুয়েকটা ভুল করেছিল - কিন্তু বাইরে থেকে কেউ তেমন কিছু বুঝতে পারেনি। ঘর্মুরি হিসেবে ঠোঙায় চানাচুর ভরা ছিল। প্রতীতি কৃষ্ণ সেজেছিল। চানাচুর দেখে সে আহ্লাদে একমুঠো মুখে পুরে দিয়ে ডায়লগ গুলিয়ে ফেলল। ভীমের উলটোদিকে ধনুক ধরা দেখে অর্জুনের হাসিটা খুব জমেছিল। দ্রোণাচার্য দিয়া যখন করুণ বাজনার সঙ্গে তীরের ঘায়ে চোখ ঢেকে এসে ঢুকল, দর্শকদের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও হেসে ফেলেছিলাম। ব্যাসদেবকে দুদিক থেকে দুজন প্রম্পটার (ত্বিষার মা দেবলীনা আন্টি আর আমার মা) "যুধিষ্ঠির, যুধিষ্ঠির, যুধিষ্ঠির" বলে যাওয়ায় সে আর ভুল করেনি। নাটক যখন শেষ হয়ে গেল তখন আমরা সবাই খুব দুঃখ পেলাম। আবার সেই সামনের বছরের জন্য অপেক্ষা শুরু। পরে অবশ্য আমরা নাটকটার রেকর্ডিং দেখলাম। নিজেদের অভিনয় দেখতে বেশ মজা লাগে। তোমরাও চাইলে এখানে দেখতে পারো -
হৃদি কুন্ডু কলকাতায় থাকে। হ্যারি পটার আর গণ্ডালুর ভক্ত। ভবিষ্যতে লাইব্রেরিয়ান হবে বলে ঠিক ছিল (তাতে নাকি গল্পের বই পড়ার খুব সুবিধে হবে), এখন একটু দোটানায় আছে কারণ মনে হচ্ছে গাড়ি করে আইসক্রিম বিক্রি করাটাও মন্দ নয়।
হৃদির আর এক শখ ডিজাইন করা। এদিক-ওদিক থেকে হৃদি শোনে যে বাঙালিদের নাকি 'ডিজাইন'-বোধটা একটু কম। তার একটা বিহিত করার জন্যেই
খাতার পাতায় হৃদি কিছু ডিজাইন করেছে। আপাতত শুধু পোশাকের।
কি ভাবে লেখা পাঠানো যাবে এবং লেখা প্রকাশ-সংক্রান্ত কয়েকটি নিয়ম
(১) লেখা, ছবি অপ্রকাশিত (এর মধ্যে আন্তর্জাল [পত্রিকা, ব্লগ, ফেসবুক ইত্যাদিও ধরতে হবে]) ও মৌলিক হওয়া চাই।
(২) ই-মেইল ঠিকানাঃ parabaas@parabaas.com
(৩) লেখার মধ্যেই আপনার ই-মেইল ঠিকানা, সাধারণ ডাক-ঠিকানা, ফোন নম্বর দেবেন - তাহলে লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সুবিধা হয়।
(৪) কবিতা পাঠালে এক সঙ্গে অন্তত তিনটি কবিতা পাঠালে ভালো হয়।
(৫) ইউনিকোড হরফে এখন পরবাস প্রকাশিত হচ্ছে - সেই মাধ্যমে লেখা পেলে আমাদের সুবিধা হয়, কিন্তু অন্য মাধ্যমে, যথা "বাংলিশ", অন্য ফন্ট-এ, বা হাতে লেখা হলেও চলবে। সাধারণ ডাক-এ পাঠালে অবশ্যই কপি রেখে পাঠাবেন, কারণ লেখা/ছবি ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়।
(৬) 'পরবাস' বা 'ওয়েবশিল্প'-সংক্রান্ত পরামর্শ ও সহযোগিতাও আমাদের কাম্য।
(৭) পরবাসে প্রকাশিত লেখা আন্তর্জাল ও অন্য বৈদ্যুতিন মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। পরবাসের পাতার লিংক দেয়া যাবে। পরবাসে প্রকাশের ১২০ দিন পরে অন্য কাগুজে মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে কিন্তু সেখানে পরবাসে পূর্ব-প্রকাশনের উল্লেখ রাখা বাঞ্ছনীয় এবং সঙ্গত।
(৮) লেখক এই নিয়মগুলি মান্য করছেন বলে গণ্য করা হবে। এর কোনোরকম পরিবর্তন চাইলে অবশ্যই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
সাধারণ ডাকযোগে লেখা, ছবি, বই ইত্যাদি পাঠানোর ঠিকানার জন্যে ই-মেইলে parabaas@parabaas.com অথবা ফোন-এ (+91)8609169717-এ যোগাযোগ করুন।
আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করি সব লেখার লেখকদের উত্তর দেবার, কিন্তু অনেক সময় অনিবার্য কারণবশতঃ তা সম্ভব না হতেও পারে। সেই জন্য লেখা পাঠানোর ৬ মাসের মধ্যে উত্তর না পেলে ধরে নিতে হবে যে লেখাটি মনোনীত হয়নি।
আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি আপনাদের সৃষ্টিশীল রচনা পাঠাতে, এবং সে-জন্য আগাম ধন্যবাদ।