• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭০ | মার্চ ২০১৮ | প্রবন্ধ
    Share
  • সংখ্যা-সম্রাজ্ঞী আডা লাভলেস: কবিতায়-বোনা গণিত : সিদ্ধার্থ মজুমদার


    মেয়েটির নাম অগাস্টা আডা বায়রন। পরবর্তী সময়ে তিনি পরিচিত হবেন ‘অগাস্টা আডা কিং, কাউন্টেস অফ লাভলেস’ বা সংক্ষেপে ‘আডা লাভলেস’ নামে। ১০-ই ডিসেম্বর ১৮১৫ আডা বায়রনের জন্ম। তাঁর জন্মের দুশো বছর পেরিয়ে গেল ২০১৫-তে। জন্মের দুশো বছর উদযাপন উপলক্ষে তাঁকে নিয়ে নানান পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছে। তাঁর স্মরণে হয়েছে নানান অনুষ্ঠান। পৃথিবীর সুবিখ্যাত জার্নাল ‘নেচার’ তাঁকে নিয়ে একটি রচনা প্রকাশিত করেছে। স্বনামধন্য ইংরেজ লেখক রিচার্ড হোমসের লেখা ‘নেচার’-এর সেই রচনাটি পড়েই বস্তুত আডা লাভলেস সম্পর্কে আমার আগ্রহের শুরু। ভিক্টোরিয়ান-বিজ্ঞান ইতিহাসে এক বিরল প্রতিভা আডা লাভলেসের ১৯৭তম জন্মদিনে ‘গুগুল ডুডুল’ও স্মরণ করেছে তাঁকে।

    কে এই আডা বায়রন লাভলেস? বিজ্ঞান প্রযুক্তির ঠিক কোন ক্ষেত্রে তাঁর অবদান? এই লেখায় সে-সব কথাই শুনব আমরা। তবে প্রথমে তাঁর শৈশব এবং বেড়ে ওঠার অধ্যায়টি দেখে নেব। আডার বেড়ে ওঠার কাহিনির পরতে পরতে একদিকে যেমন আছে আডাকে ঘিরে মায়ের স্বপ্ন আর আশংকা, তেমনি অন্যদিকে বিপন্নতা, হতাশা আর নানান টানাপোড়েনে জর্জরিত আডার মায়ের জীবন।

    আডার মায়ের নাম অ্যানাবেলা। তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত, শিক্ষিত এবং বিত্তশালী বংশের মেয়ে। যে সময় মহিলাদের বিজ্ঞান বা গণিতের রাজ্যে প্রবেশের দরজা ছিল প্রায় বন্ধ, সেসময় গণিত ও বিজ্ঞান সহ নানান বিষয়ে আগ্রহ ছিল অ্যানাবেলার। অ্যানাবেলার বয়স যখন তেইশ তখন তাঁর বিয়ে হয় ইংল্যান্ডের খ্যাতনামা এক কবির সঙ্গে। স্বামীর বয়স সাতাশ বছর। দারুণ রূপবান আর সুপুরুষ চেহারা ছিল অ্যানাবেলার স্বামীর। একদিকে খ্যাতি, অন্যদিকে রূপ - এ যেন সোনায় সোহাগা। যশ, খ্যাতি, বিত্ত আর সৌন্দর্য, এসবের সঙ্গে কবির নামে ছিল ভীষণ কুখ্যাতিও। অসম্ভব উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতি আর দুঃশ্চরিত্র স্বভাবের জন্যেই এই কুখ্যাতি। সে সময়ে তাঁর উচ্ছৃঙ্খল জীবনের কথা প্রায় সকলেই জানত। যাঁর কথা বলছি, তিনি রোমান্টিক যুগের স্বনামধন্য কবি লর্ড গর্ডন বায়রন। তাঁর সঙ্গেই বিয়ে হয় অ্যানাবেলার। বায়রন আর অ্যানাবেলার একমাত্র বৈধ সন্তান হল আডা। অগাস্টা আডা বায়রন।

    অ্যানাবেলার সঙ্গে বায়রনের সম্পর্ক একেবারেই ভালো ছিল না। অসম্ভব অসুখী আর জটিল সেই সম্পর্ক। আসলে বিয়ের পরেও বায়রনের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন আর দুশ্চরিত্র স্বভাবের এতটুকুও বদল হয়নি। বিয়ের পরে একাধিক নারীর সঙ্গে এমনকি সৎ বোনের সঙ্গেও সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন বায়রন। তাঁর উচ্ছৃঙ্খল জীবনের কথা ও কাহিনি নিয়ে বেশ কয়েকটি রচনাও রয়েছে। সে-সব কথায় আমরা যাব না এখানে। যে কথাটা বলার তা হল, অ্যানাবেলা আর বায়রনের বিবাহিত জীবনের আয়ু ছিল মাত্র এক বছর দু-মাস! এতটাই দুঃসহ হয়ে উঠেছিল অ্যানাবেলার জীবন যে আডার বয়স যখন মাত্র পাঁচ সপ্তাহের তখন স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিল অ্যানাবেলা।

    সেই যে মেয়েকে নিয়ে চলে এলেন, সারা জীবনেও আর ও-মুখো হননি অ্যানাবেলা। বস্তুত আর কখনও দেখাও হয়নি তাঁদের, কথাও হয়নি। তাছাড়া, আডার সঙ্গে যাতে কোনোভাবে ওর বাবার দেখা বা যোগাযোগ না হয়, সে বিষয়ে অ্যানাবেলার ছিল সজাগ দৃষ্টি। এই কারণে আডার সঙ্গে তার বাবার কখনই আর দেখা হওয়া সম্ভব হয়নি। আডার যখন বারো বছর বয়েস তখন তাকে বাবার একটি ফোটো দেখায় মা। মেয়ের কাছে বাবার স্মৃতি বলতে ছিল ওইটুকুই। আডার যখন আট বছর বয়স, তখন বায়রন মারা যান। জ্ঞান হওয়ার পর কখনও বাবাকে না-দেখলেও, মায়ের মুখে বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনে খুব কেঁদেছিল আডা। জানা যায়, বাবাও নাকি মৃত্যুশয্যাতে বেশ কয়েকবার মেয়ের কথা বলেছিলেন।

    মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে দিদিমার কাছে বড় হয়ে উঠতে থাকে আডা। চার বছর বয়স থেকেই গৃহশিক্ষিকা রেখে পড়াশোনা শুরু হল আডার। ইতিহাস, সাহিত্য, ভাষা, ভূগোল, মিউজিক আর সঙ্গে ছিল কেমিস্ট্রি, সেলাই,শর্টহ্যান্ড শিক্ষা এবং গণিত, জ্যামিতি ও অ্যালজাবরা। আডা একটু বড় হতেই তাকে বিজ্ঞান এবং গণিতের সব চেয়ে নামজাদা গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার ব্যবস্থা করে দিলেন মা। আডার এগার বছর বয়সে তাকে নিয়ে বছর খানেকের জন্যে ইউরোপ ট্যুরে যান অ্যানাবেলা। সেখানে গিয়ে আডা যাতে একাধিক গুণী মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এবং যাতে করে মেয়ের ভাবনাচিন্তার স্তরগুলি আরও পুষ্ট ও বিকশিত হয়ে উঠতে পারে, সেই ইচ্ছা নিয়েই অ্যানাবেলার ইউরোপ ভ্রমণ।

    ইউরোপ ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর থেকেই নতুন কিছু করার জন্যে আডার মাথায় সব সময় ঘুরপাক খেতে থাকে নানান ভাবনা। আডা তখন সবে মাত্র বারো বছরের এক কিশোরী। স্বাধীনভাবে আকাশে ওড়া সংক্রান্ত প্রোজেক্টের কাজের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে। পাখির ‘ডানা’ বিষয়ে আরও জ্ঞান বাড়ানোর জন্য পাখিদের অ্যানাটমি, শরীরের সঙ্গে ডানার সঠিক অনুপাত, ওজন ইত্যাদি বিষয়গুলি দিনের পর দিন মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে আডা। নানান ধরনের উপাদান, কম্পাস, সিল্ক, কাগজ এবং আনুষঙ্গিক নানান জিনিসপত্র নিয়ে নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। এমনকি, উড়বার শক্তি যে স্টিম থেকে আসবে, সে কথাও আডার ভাবনায় ছিল। তারপর, এই কাজে বেশ অনেকখানি এগিয়ে যাওয়ার পরে ‘ফ্লায়োলোজি’ নিয়ে একটা বই লেখার কথাও ভেবেছিল আডা। বুঝতে অসুবিধা হয় না, ওই বয়স থেকেই তাঁর মধ্যে বিজ্ঞানীসত্তা বিকশিত হয়ে উঠছে!

    মেয়ের জন্যে উৎকৃষ্ট মানের শিক্ষার ব্যবস্থা করলেও, অ্যানাবেলার ভেতরে ভেতরে সব সময় একটা দুশ্চিন্তা কাজ করত। মেয়ে যেন কোনোভাবে বাবার মতন স্বভাব চরিত্র না পায়। আডা বড় হতেই মা তাই সব সময় সচেতন থাকে, বাবার মতন কবিতা ও রোমান্টিসিজিমের ভূত যেন মেয়ের মাথায় চেপে না বসে। তাই, মা যখন দেখল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ে আডার অনুরাগ খুব বেশি, তখন স্বস্তি পেল মা।

    আডার কথা বলতে হলে আর একজন মানুষের কথা আসবে, তিনি হলেন চার্লস ব্যাবেজ (১৭৯২-১৮৭১)। কেমব্রিজের একজন নামজাদা গণিতের অধ্যাপক এবং দার্শনিক। বস্তুত ব্যাবেজ ছিলেন একজন পলিম্যাথ। গণিত ছাড়া মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এও ছিল তাঁর ব্যুৎপত্তি। বিজ্ঞানের একাধিক ক্ষেত্রে তাঁর অবদান রয়েছে, তবু তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ হল -- প্রোগ্রাম করা যায় সেরকম একটি যন্ত্রগণক ডিজাইন করা। নাবিকবিদ্যা কিংবা বিজ্ঞান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সে-সময় গণনার কাজে গাণিতিক-টেবল ব্যবহার করতে হত। এই কাজে প্রথমে খাতা কলমে গণনা করে তারপর সেটি টেবল ব্যবহার করে মিলিয়ে নিতে হত। তবে এভাবে কাজের ক্ষেত্রে গণনায় কিংবা টেবল-এ মেলানোর সময় প্রায়শই ভুল থেকে যেত। এই অসুবিধার কথা ভেবেই একটি মেকানিক্যাল যন্ত্রগণক তৈরি করার কথা ভাবেন ব্যাবেজ। যা দিয়ে নির্ভুল ভাবে গণনার কাজ করা সম্ভব হতে পারে এবং সময় ও অর্থ খরচও হবে অনেক কম।

    ১৮১৯ সালে কাজ শুরু করে তিন বছরের মধ্যে তৈরি করে ফেললেন সেরকম-ই একটি যন্ত্রগণক। শুধু গণনা-ই নয়, তারপরে যন্ত্রগণক থেকে প্রিন্ট-আউট বের হওয়ার ব্যবস্থাও ছিল। ব্যাবেজ এই যন্ত্রটির নাম দিলেন ‘ডিফারেন্স ইঞ্জিন’। তবে ‘ডিফারেন্স ইঞ্জিন’ প্রোগ্রাম-ভিত্তিক মেশিন ছিল না। ব্রিটিশ সরকার এই কাজে আগ্রহী হয়ে অনুদান দেওয়ায় ব্যাবেজের পক্ষে এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে সুবিধা হয়েছিল।

    পরবর্তীকালে ‘ডিফারেন্স ইঞ্জিন’-এর থেকে আরও উন্নত ক্ষমতার যন্ত্রগণক তৈরির কাজে নিয়োজিত হলেন ব্যাবেজ। তারপর প্রায় বছর পনের পরে একটি উন্নত ক্ষমতাযুক্ত যন্ত্রগণক উদ্ভাবন করতে সক্ষম হলেন ব্যাবেজ। ব্যবেজ যার নাম দিলেন ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’। পাঞ্চ-কার্ড ব্যবহার করে এই মেশিন প্রোগ্রাম করতে পারা যেত। বস্তুত একটি আধুনিক কম্পিউটার যে-ভাবে কাজ করে, সেই রকম বেশ কিছু ব্যবস্থা ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’-এর মধ্যে ছিল। আধুনিক কম্পিউটারের ক্ষেত্রে যেমন ‘এরিথমেটিক লজিক ইউনিট’ বা ‘মেমরি’ ব্যবস্থা থাকে, ব্যাবেজের এই মেশিনেও সেই সব ব্যবস্থা ছিল। এই কারণেই ব্যাবেজ উদ্ভাবিত ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’-কে কম্পিউটারের আদিরূপ হিসেবে মানা হয় এবং ব্যাবেজ-কে প্রথম কম্পিউটারের উদ্ভাবক হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে!

    তবে ব্যাবেজের তৈরি করার আগে যে গণকযন্ত্র ছিল না তেমন নয়। ব্যাবেজের সময়ের প্রায় দুশো বছর আগে ব্লেইজ পাস্কাল (১৬২৩-৬২) যোগ-বিয়োগ করতে পারা যায় সে-রকম একটি ক্যালকুলেটিং মেশিন তৈরি করেছিলেন। আর সেই অর্থে, পাস্কেলের সৃষ্টি করা ওই যন্ত্রটিই হল প্রথম মেকানিক্যাল ক্যালকুলেটর। যন্ত্রটিকে সে-সময় ‘পাস্কাল’স ক্যালকুলেটর’ বা ‘অ্যারিথমেটিকা’ হিসেবে চিনত মানুষ।

    আরও একজনের কথা বলতে হয়। তিনি জার্মান দার্শনিক ও গণিতবিদ গটফ্রিড লিবনিজ। পাস্কালের ‘অ্যারিথমেটিকা’-র বছর তিরিশ পরে লিবনিজ যে যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেন, তা দিয়ে যোগ বিয়োগ ছাড়াও বড় বড় গুণ ভাগ করাও সম্ভব হত। এ ছাড়াও আডার জন্মের মাত্র একদশক আগে ‘জসেফ মারি জাকার’ নামের একজন ফরাসি উদ্ভাবক জামাকাপড় বোনা এবং তাতে বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তুলতে পারে, সে-রকম একটি বোনার মেশিন উদ্ভাবন করেন। পেপার টেপ এবং পাঞ্চ-কার্ড ভিত্তি করে জাকারের এই মেশিন কাজ করত।

    বলাবাহুল্য যে পাস্কাল কিংবা লিবনিজের তৈরি করা যে মেকানিক্যাল ক্যালকুলেটর তা কেবল যন্ত্রগণক-ই, কম্পিউটার গোত্রের হয়ে উঠতে পারেনি। কম্পিউটার-গোত্রের মেশিনে যে বিপুল উন্নত কার্যক্ষমতা থাকে তার ধারে কাছেও নয় সেগুলি। শুধু ক্ষমতাই নয়, জটিলতা এবং সুদূর প্রসারী সম্ভাবনা কথা ভাবলে, ব্যাবেজের যন্ত্রগণক ছিল সেগুলির থেকে হাজারগুণ উন্নত। আজ আমরা সকলেই জানি, কম্পিউটার এমন একটি মেশিন যা বেশ কিছু গাণিতিক নিয়ম আর আরোপিত নির্দেশের ওপর ভিত্তি করে স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ করে। আমরা আরও জানি যে, ‘ইনপুট’, ‘মেমরি’, প্রসেসর এবং আউটপুট এইসব ব্যবস্থাগুলির মধ্যে দিয়ে একটি কম্পিউটার সমন্বয় সাধন করে। ব্যাবেজের ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’ মেশিন এই পদ্ধতি অনুসরণ করার কথা মেনেই তৈরি হয়েছিল।

    চার্লস ব্যাবেজ ছিলেন আডার মেন্টর। ১৮৩৪ সালে আডার সঙ্গে যখন ব্যাবেজের পরিচয় হয়, আডার বয়স তখন সবে সতেরো বছর পার হয়েছে। ব্যাবেজের বয়স একচল্লিশ বছর। ব্যাবেজ তখন ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’ তৈরি করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। আডার গৃহশিক্ষিকা স্বনামধন্য গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ মেরি সামারভিল, ব্যাবেজের সঙ্গে আডার পরিচয় করিয়ে দেয়।

    আডাকে অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা বোঝালেন ব্যাবেজ। যন্ত্রগণকটি যে বেশ কিছু সাধারণ গাণিতিক ক্যালকুলেশন করার ক্ষেত্রে সক্ষম হবে, সেই সম্ভাবনার কথা আডাকে বোঝালেন ব্যাবেজ। ব্যাবেজের সঙ্গে পরিচয়ের প্রথম দিন থেকেই ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’ সম্বন্ধে দারুণ উৎসাহী হয়ে উঠলেন আডা। ব্যাবেজের তত্ত্বাবধানে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন আডা। তারপর শুরু হল দুজনে মিলে সেই প্রোজেক্টের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তৈরি হয়ে উঠল আডা ও ব্যাবেজের মধ্যে অসমবয়সী এক চমৎকার বন্ধুত্ব আর সমঝোতা। আডাকে আদর করে ‘লেডি ফেয়ারি’ বলে ডাকতেন ব্যাবেজ।

    যাই হোক, বছর খানেকের কিছু বেশি সময় আডা কাজ করলেন ব্যাবেজের সঙ্গে। তারপরেই আডার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে বেশ কয়েক বছর গবেষণা থেকে দূরে থাকতে হল আডাকে। সন্তানদের দেখভাল করা এবং পারিবারিক কাজে বেশ কয়েক বছর স্বামীর ঘরে কেটে যায় আডার। অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের কাজে ছেদ পড়ল। যদিও আডার উৎসাহে ভাঁটা পড়েনি একবিন্দু। চিঠিপত্রের মাধ্যমে ব্যাবেজের সঙ্গে আডার যোগাযোগ বজায় থেকেছে নিয়মিত। তাঁদের সেই চিঠিপত্রের সিংহভাগ জুড়েই থাকত ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ।

    এইভাবে কয়েক বছর কাটার পরে আডা আবার তাঁর অসম্পূর্ণ কাজে যোগ দিলেন। তিনি তখন তিন সন্তানের মা। বয়স সাতাশ বছর। বিপুল সংখ্যক ড্যাটা-অ্যানালিসিস এবং জটিলতর নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কীভাবে অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন উপযোগী হতে পারে, তা নিয়েই আডার গবেষণা। কয়েক বছরের মধ্যেই, কীভাবে যন্ত্রটি পর্যায়ক্রমে বিশ্লেষণ এবং জটিল গণনা করে ফলাফল নির্ণয় করবে তার বিশদ ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন আডা। এর আগে ব্যাবেজের একটি বক্তৃতা ইতালি ভাষায় প্রকাশিত হয়, যা ছিল মূলত ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’-এর বর্ণনা। ১৮৪৩-এ প্রকাশিত আডার এই গবেষণাপত্রটি ছিল সেই মূল রচনার অনুবাদ এবং একই সঙ্গে ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’-এর সম্ভাব্য প্রয়োগ ও উপযোগিতা বিষয়ে লেখা মৌলিক ভাবনা। তাই অনুবাদ বললে আডার গবেষণাপত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছুই বলা হয় না।

    আডার সেই গবেষণাপত্রের প্রতিপাদ্য ছিল, যন্ত্রটির পর্যায়ক্রম বিশ্লেষণ এবং গণনা করতে পারার একটি নিয়মনীতর নির্দেশনামা। এই যে নির্দেশনামা, তা আসলে গণিত-আধারিত এক ধরনের বিশেষ সাংকেতিক ভাষা (ল্যাঙ্গুয়েজ), যাকে কম্পিউটারের ভাষায় ‘প্রোগ্রাম’ বলা হয়ে থাকে। তাই আডার সৃষ্টি করা ওই নির্দেশনামাকে-ই ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের প্রথম ‘প্রোগ্রাম’ হিসেবে বলা যায়। আর পৃথিবীর প্রথম প্রকাশিত কম্পিউটার-প্রোগ্রাম হিসেবে আজ মান্যতা পেয়েছে তা। আর আডা-কে পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার-প্রোগ্রামার হিসেবে মানা হয়।

    দূরদৃষ্টি সম্পন্ন আডা, তাঁর সময়ের থেকে বহুদূর এগিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন যে ক্যালকুলেশন তো অনেক ছোটোখাটো ব্যাপার। আরও বিপুল ক্ষমতার সম্ভাবনা রয়েছে ব্যাবেজের তৈরি করা যন্ত্রটির। শুধু সংখ্যা কেন? সংকেত, ফরম্যুলা, নিয়ম, লজিক ইত্যাদি আরও বহু জটিল বিশ্লেষণ করার ক্ষমতার সম্ভাবনা রয়েছে ব্যাবেজের যন্ত্রটির। বিভিন্ন গ্রাফিক্যাল কাজে অথবা খেলাধূলা এমনকি সুর বা সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও সমান উপযোগী হয়ে উঠতে পারবে ওই যন্ত্র। আর আডা যা ভেবেছিলেন, বাস্তবিক সে-সব কিছুই আজ কম্পিউটার দ্বারা সম্ভব হয়েছে।

    আডা তাঁর এই গণিতের কাজকে বলতেন ‘পোয়েটিকেল সায়েন্স’! আসলে আডা তাঁর কাজে কল্পনার রঙ মিশিয়ে কারুকার্যময় করে তুলেছিলেন গণিতের ভাষাকে। জাকারের পাঞ্চকার্ড-ভিত্তিক বয়ন-মেশিনের কথা মাথায় রেখেই আডা বলেছিলেন – “বোনার-মেশিনে যে-রকম সুতো দিয়ে ফুল ও পাতার ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়, তেমনি তাঁদের ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’ যা চিত্রায়িত করে তা ‘অ্যালজাবরিক-প্যাটার্ন’!”। কী চমৎকার ভাবে বললেন আডা! আডার এমন কথায় তাঁর রোমান্টিক ভাবনা আর কাব্যিক মননের জগতের পরিচয় পাওয়া যায়। তাই এমন সুন্দর রূপক ব্যবহার করে বলতে পারেন আডা।

    আডার এই অবদানের কথা দীর্ঘকাল অজানা ছিল। একশো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরে ১৯৫৩ সালে আডার এই কাজ যখন নতুন করে প্রকাশ করা হল, তখনই সংশ্লিষ্ট মানুষরা বুঝতে পারলেন তাঁর কাজের গুরুত্ব। যদিও সেসময় বিষয়টি বুঝতে পারার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছিল, কেননা ওই সময়ে শুরু হয়েছে আধুনিক-কম্পিউটারের যুগ। ভাবতে আশ্চর্য লাগে আধুনিক কম্পিউটারের জন্ম হওয়ার একশ বছরের বেশি আগে, আডার পক্ষে কী করে সম্ভব হল ওই রকম কল্পনাশক্তি আশ্রিত ‘সাংকেতিক-মাধ্যম’-এর রূপ দেওয়া! আডা-ই প্রথম ব্যক্তি যিনি কম্পিউটেশনাল মেশিনের গাণিতিক ক্ষমতার সম্ভাবনা-র সঙ্গে সাংকেতিক-লজিকের মেলবন্ধনের সম্ভাবনা কল্পনা করতে পেরেছিলেন!

    প্রায় দু-হাজার পিতলের যন্ত্রাংশ দিয়ে ব্যাবেজের তৈরি সেই অসম্পূর্ণ অ্যানালিটিকেল ইঞ্জিনটি বর্তমানে লন্ডনের সায়েন্স মিউজিয়ামে রাখা আছে। এই অ্যানালিটিকেল ইঞ্জিনের কার্যকরী রূপ দিয়ে যেতে সক্ষম হননি ব্যাবেজ। পরবর্তী সময়ে, ব্যাবেজের রূপরেখা ভিত্তি করে ১৯৪০ এর দশকে প্রথম প্রোগ্রামেবেল কম্পিউটার নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। তারও তিন দশক পরে, ১৯৭০ এর দশকে ইউ এস সামরিক বিভাগ একটি কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করে, যাতে করে সেই যন্ত্রটি কাজে লাগানো যায়। তখনই প্রথম প্রমাণিত হল যে ব্যাবেজের প্রস্তাবিত যন্ত্রে আডার প্রোগ্রাম যথাযথ ভাবে কাজ করতে সক্ষম। তারপর ১৯৮০ সালে US সামরিক বিভাগ ‘প্যাসকেল’ অনুসৃত একটি কম্পিউটার-ল্যাঙ্গুয়েজ সৃষ্টি করে। আডার সম্মানে সেই ল্যাঙ্গুয়েজটির নাম দেওয়া হল ADA । ডিফেন্স মিলিটারি স্ট্যান্ডার্ডের যে নাম্বার, সেটির মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত হল আডার জন্ম সাল [MIL-STD-1815]। আডা ল্যাঙ্গুয়েজ আজও ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রাফিক কন্ট্রোলের মতন জটিল ব্যবস্থায়। কম্পিউটার যুগের মুষ্টিমেয় কয়েকজন মহিলা পথিকৃতের মধ্যে আডাকে সম্মান জানিয়ে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের নাম তাঁর নামে দেওয়া হল।

    শুধু ব্যাবেজের সঙ্গে অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের কাজেই নয়, আডার আগ্রহের পরিধি ছিল বহুমুখী! মিউজিক এবং গণিতের সম্পর্ক নিয়ে যেমন কাজ করেছেন। তেমনি ‘এ ক্যালকুলাস অফ দ নার্ভাস সিস্টেম’ নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। মানুষের চিন্তা ভাবনা অনুভূতি ইত্য্যাদিতে স্নায়ুর ভূমিকা নিয়ে ছিল তাঁর গভীর আগ্রহ! একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি জেনে ইলেকট্রিক্যাল পরীক্ষা পদ্ধতিগুলি শিখে নিয়ে এই গবেষণায় নামেন আডা। যদিও সময়ের অভাবে আডার অনেক কাজই অসম্পুর্ণ থেকে যায়। আরও একটা কথা বলা দরকার, সন্তান হওয়ার পরে প্রায় দেড় বছর ধরে নামজাদা তরুণ গণিতবিদ অগস্টাস ডি মরগ্যানের কাছে অ্যালজেবরা ও ক্যালকুলাসের পাঠ নিয়েছেন আডা। শেখার এই উদগ্র ইচ্ছা আর নিষ্ঠার কথা ভাবলে অবাক লাগে।

    আমরা দেখতে পাই, আডার মেলামেশার বৃত্তে অনেক কীর্তিমান মানুষ এসেছে। সেরকমই আর একজন হলে স্বনামধন্য বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে। বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী ফ্যারাডের সঙ্গে এক মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আডার। ফ্যারাডের ইচ্ছানুযায়ী আডা তাঁকে একটি পোর্ট্রেট পাঠিয়েছিলেন যেটি পেয়ে ফ্যারাডে খুব খুশি হন। ফ্যারাডে তাঁর প্রকাশিত একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র পাঠান আডাকে। বেশ কয়েকটি চিঠপত্র আদান-প্রদান হয় দুজনের মধ্যে। এই সব চিঠিপত্র থেকে বোঝা যায় আডার সুপ্ত বাসনা ছিল ফ্যারাডের ছাত্রী হওয়ার।

    একদিকে যেমন প্রখর কল্পনাশক্তি আর সৃজনশীল মনের অধিকারী, অন্যদিকে তাঁর অদ্ভুত এক খামখেয়ালী স্বভাব, যা তৈরি হল আডার তিরিশ একত্রিশ বছরে এসে। মায়ের অনুশাসনে গতে বাঁধা জীবন আর অন্যদিকে বাবার থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। এসব কিছুই হয়তো আডার মধ্যে একধরনের অস্থিরতা আর বাঁধন-ছেঁড়া মানসিকতার জন্ম দিয়েছিল। সম্ভবত সেখান থেকেই আডার মধ্যে জন্ম নেয় অদ্ভুত এক ধরনের আচরণ পরিবর্তন। আফিম জাতীয় নেশার বস্তুতে আসক্ত হয়ে উঠলেন আডা। এরই পাশাপাশি রেসের মাঠে ঘোড়ার পেছনে বাজি ধরে টাকা ওড়ানো এবং একাধিক পরপুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। এ যেন কিছুটা বাবা লর্ড বায়রনের ছায়া এসে পড়ল আডার মধ্যেও।

    আরও একজনের কথা বলতে হয় যার সঙ্গে আডার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল, তিনি প্রখ্যাত লেখক চার্লস ডিকেন্স। ব্যাবেজের মাধ্যমে আডার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। আডা সে সময় মৃত্যুশয্যায়, ডিকেন্স আডাকে দেখতে এসেছেন। আডার বিছানার পাশে ডিকেন্স বসে আছেন। ক্ষীণ কন্ঠস্বরে আডা ডিকেন্সকে অদ্ভুত একটি অনুরোধ করলেন। ডিকেন্স একটু অপ্রস্তুতে পড়লেন। কী সেই অনুরোধ? ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত ডিকেন্সের ‘ডোম্বে অ্যান্ড সন’ নামের জনপ্রিয় উপন্যাসের একটি বিশেষ জায়গা থেকে ডিকেন্সকে পড়ে শোনাতে বলছে আডা। যেখানে ছ-বছরের একটি বালক মার যাচ্ছে সেই দৃশ্যটি। ডিকেন্স শোনালেন। অনুমান করে নেওয়া যায় দুজনের চোখ সেদিন ভিজে শিউলিতে (??) ঢেকে গিয়েছিল। যাই হোক, ডিকেন্সের সঙ্গে সেদিনের সেই সাক্ষাতের তিন মাস পরে ১৮৫২-র ২৭ নভেম্বর আডা প্রয়াত হন, মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে। ক্যানসারে মারা যান আডা লাভলেস। মৃত্যুর বয়সেও অদ্ভুত এক সমাপতন। আডার বাবা কবি লর্ড বাইরনও মারা গিয়েছিলেন ছত্রিশ বছর বয়সে। আডা চেয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর পরে যেন বাবার সমাধির পাশেই তাঁকে সমাধিস্ত করা হয়। জন্মের পরে মেয়ের সঙ্গে বাবার দেখা হয়নি। অবশেষে মৃত্যুর পরে বাবা আর মেয়ে পাশাপাশি জায়গা পেল এইভাবে।

    মৃত্যুর দেড়শো বছর পরে স্বীকৃতি পেয়েছে আডার অবদান। কেন এত বছর লাগল তাঁর কাজের স্বীকৃতি পেতে? এ প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত এক কথায় হয় না। এই উদাসীনতার পেছনে হয়ত বা কোথাও আছে লিঙ্গবৈষম্য। হয়তো বা মান্যতা দেওয়ার ব্যক্তিরা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির আঙিনায় কোনো মহিলার উপস্থিতি মেনে নিতে পারেনি, অথবা হতে পারে, লর্ড বায়রনের কন্যা - এই পরিচয়ের আড়ালে তাঁকে রেখে দিলে আডার উদ্ভাবক পরিচয়টি সহজেই আড়াল করে রাখা যায়। কিন্তু সত্যকে কখনোই আড়াল করা যায় না। তাই দেরিতে হলেও আমরা চিনেছি আডা লাভলেস-এর প্রতিভাকে। ২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় মঙ্গলবারের দিনটিকে ‘আডা লাভলেস ডে’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

    আডার সুদূরপ্রসারী ভাবনাই আজকের ডিজিট্যাল যুগ শুরুর প্রস্তর ফলক! সংখ্যার এই যাদু-সম্রাজ্ঞীকে ভুলে যাওয়ার কোনো অধিকার কি আমাদের আছে?

    তথ্যসূত্রঃ

    Computer science: Enchantress of abstraction, Richard Holmes, Nature 525, 30–32 , September 03, 2015

    ADA LOVELACE, The First Tech Visionary, Betsy Morais, October 15, 2013, The NEW YORKER (https://www.newyorker.com/tech/elements/ada-lovelace-the-first-tech-visionary)

    Ada Lovelace: The First Computer Programmer, Miss Cellania, October 13, 2015, Mental Floss (mentalfloss.com)

    Not your typical role model: Ada Lovelace,the 19th century programmer,BBC, Hannah Fry (www.bbc.co.uk)

    Ada Lovelace, Wikipedia (https://en.wikipedia.org/wiki/Ada_Lovelace)

    Why Ada Lovelace Day matters , Suzi Gage, The Guardian, October 13 , 20115 (www.theguardian.com)

    In Celebration of Ada Lovelace, the First Computer Programmer, Sarah Lewin, October 14,2015 , Scientific American

    Computer Science:Enchantress of absraction, Richard Holmes, Nature, September 02,2015

    Who was Ada Lovelace? , Sarah Zielinski, March 24, 2010 (www.smithsonianmag.com)

    Ada Lovelace,the World’s First Computer Programmer, on science and Religion, Maria Popova, December 10, 2013

    Ada Lovelace, Poet of Science:A Lovely Children’s Book About the World’s First Computer Programmer, Maria Popova, April 05 , 2017 (www.brainpickings.org)



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ উইকিপেডিয়া থেকে
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments