আ টান্ন বছরের বিদেশবাবু কোনদিন কলকাতা ছেড়ে কোথাও যান নি। আজকের দিনে এটা অবশ্য বিশ্বাস করা খুব কঠিন, এখন তো ইচ্ছে হলেই সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, ইউরোপ আমেরিকা ডাল দিয়ে ভাত মাখার মতই সহজ হয়ে গেছে। ট্যুর কোম্পানী আপনার পেছন পেছন ঘুরছে ব্রোসার নিয়ে, অফার নিয়ে, ডলার নিয়ে। কাগজ খুললেই পাতার পর পাতা বিজ্ঞাপন – কি অবিশ্বাস্য কম খরচে কোথায় না কোথায় নিয়ে যাবে, যেন সেই ভূতের রাজা দিল বর। এদের হাত থেকে এতদিন কিকরে যে বেঁচে আছেন বিদেশবাবু সেটা চিন্তার বিষয়! এমন নয় টাকা পয়সার কোন অভাব আছে তাঁর, রাইটার্সে তিরিশ বছর কলম পিষেছেন ঠিকই, কিন্তু সে তো আর বিনা পয়সায় নয় – অনেকগুলো পেস্কেল রিভিশনের সাক্ষী থেকেছেন, লোকাল ট্রেনে ঝুলতে ঝুলতে ভায়া হাওড়া অফিস পৌঁছনো থেকে টানা এ সি বাসে আরাম করে ঝিমোতে ঝিমোতে নবান্ন স্টপেজে নেমেছেন, তাঁর অ্যালার্ম ঘড়ির ঘুম ভাঙানি আওয়াজই কি কম বদল হল নাকি এই ক-বছরে! সেই আদ্যিকালের বাসনভাঙা ঝন ঝন শব্দ থেকে এখন এই আধুনিক মোবাইলের সুমধুর সেতার ধ্বনি!
কিন্তু সরকারী চাকরি থাকা সত্ত্বেও, কলকাতার উপকণ্ঠে নিজস্ব বাড়ি থাকা সত্ত্বেও, এখন না হোক কয়েক বছর আগে অবধি মা বেঁচে থাকা সত্ত্বেও, বিদেশবাবু বিয়ে না করে কি ভাবে যে সারাজীবন কাটিয়ে দিলেন, সেটাও এক আশ্চর্য ঘটনা। এখন এই রিটায়ারমেন্টের দু বছর আগে ওনার জীবনযাত্রা খুব ছকে ফেলা হয়ে গেছে – সকাল আটটায় উঠে নিজের হাতে বানানো এক কাপ চা ও দুটো থিন অ্যারারুট বিস্কুট খেয়ে প্রাতঃকৃ্ত্য সম্পাদন, তারপর এককাপ কফি সহযোগে খবরের কাগজ পাঠ, এর মধ্যে রমলা আসে, ওনার সকালের জলখাবার, অফিসের রুটি-তরকারি বানিয়ে সাড়ে নটার মধ্যে চলে যায়। তারপর বেলার দিকে আরেকবার এসে বাসন মেজে, ঝাড়পোঁছ করে, রাতের জন্য ভাত ও মাছের ঝোল কি ঝাল একটা কিছু বানিয়ে রাখে। ঘরের ডুপ্লিকেট চাবি রমলার কাছেই থাকে। অফিসের বাইরে এক এই রমলার সংগেই বিদেশবাবুর মাঝে সাঝে কিছু কথাবার্তা হয়। অফিসেও, কারো সঙ্গে কোনো ঝগড়াবিবাদ না থাকলেও, তেমন কেউ প্রাণের বন্ধু তো দূরে থাক, একসঙ্গে টিফিন খাওয়ারও কোনো সঙ্গী নেই তাঁর। কোনো দলাদলিতে থাকেন না, অফিস পলিটিক্সে উৎসাহ দেখান না, রোজ ঠিক দশটার সময় এসে জানলার ধারে নিজের ছোট্ট টেবিলটায় বসে কাজ শুরু করে দেন। আগে ছিল টাইপরাইটার, এখন ডেস্কটপ ব্যবহার করছেন। কাঁটায় কাঁটায় ঘড়ি মিলিয়ে ঠিক দুটোর সময় টিফিন বাক্স খোলেন – চারটি হাতরুটি, বেগুনপোড়া বা আলুচচ্চড়ি বা ডিমের ঝুরি দিয়ে পরিপাটি খেয়ে, পুরো এক গেলাশ জল গলায় ঢেলে, আবার সব গুছিয়ে গাছিয়ে কালো ক্যাম্বিসের সাইডব্যাগে ভরে ফেলেন। ঠিক দুটো পঁয়তিরিশে আবার ফাইল টেনে নিয়ে কাজ আরম্ভ করেন। নিপাট ভালমানুষ বলে সুনাম কুনাম দুই ই আছে তাঁর। মাঝে মাঝেই কেউ না কেউ বাড়তি কাজ ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়, “বিদেশদা একটু ম্যানেজ করে দিন, স্টেডিয়ামে খেলা আছে--” উনি কখনও না করেন না। সহকর্মীদের নামে কোন নালিশ ঝগড়া নেই, নিয়মিত সব অফিস অনুষ্ঠানে চাঁদা দেন না চাইতেই। আবার ইউনিয়নের সভা থাকলে ঠিক কোন একটা অজুহাতে আগেভাগে কেটে পড়েন। কোনো মিছিলে সামিল হতে ওনাকে পাওয়া যায় নি, কোনো পিটিশন সই করেন না। অফিস ছুটির ঠিক বারো মিনিট পর বিদেশবাবুকে দেখা যাবে উল্টোদিকের বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায়, একই ধাঁচের পোশাকে, একই ক্যাম্বিসের কালো ব্যাগ কাঁধে, রোদ কি বৃষ্টির দিনে হাতে একটা কালো ছাতা, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী গায়ে শ্যাওলা রঙের সোয়েটার আর গলায় খয়েরি মাফলার। সন্ধে ছটা বড়জোর সাড়ে ছটার মধ্যে শরিকি বাড়ির জরাজীর্ণ তিন থাক সিঁড়ি বেয়ে, চাবি খুলে নিজের ছাদের ঘরে ঢুকে পড়েন, লাগোয়া বাথরুমে চটপট স্নান করে, একটা লুঙ্গি আর হাতকাটা গেঞ্জি পরে এককাপ চা বানিয়ে নেন। কৌটোতে চটজলদি চিঁড়েভাজা, বাদাম মুড়ি, নিমকি থাকে, আসার পথে কখনও তেলেভাজার দোকান থেকে আলুর চপ কি বেগুনী কিনে আনেন। সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসে - ব্যাস, তারপরই শুরু হয় আসল ভানুমতীর খেল। সাধারণ গড়পড়তা বাঙালির সঙ্গে বিদেশবাবুর অমিলটা আরম্ভ হয় - রাত যত বাড়ে আমাদের এই হরিপদ কেরানি যেন মন্ত্রবলে আরব্যরজনীর হারুণ-অল-রশিদ হয়ে ওঠেন!
পৈত্রিক বাড়িটার বয়স ও আয়তন কোনোটাই কম নয় – নেহাত পাঁচমিশেলি মালিকানা, বেশিরভাগ মালিক দেশের বাইরে থাকে, যারা আছে তারাও তস্য তস্য ভাগীদার, বাড়িটা আপাদমস্তক মামলা মকদ্দমায় জড়িয়ে, সে জট খোলা তাবড় তাবড় প্রোমোটারদের পক্ষেও এখনও সম্ভব হয় নি। ইমারতটা তাই আজও টিঁকে আছে। সামনে একটা মজা পুকুর, পুকুরের ওপারে বস্তি, ছোট ছোট খোলা ঘর, গায়ে গায়ে। বাড়ির সামনের দিকটা অনেকটা খোলা। বিদেশবাবুর ভাগে পড়েছে বাড়ির তিনতলার ওপর বিশাল ছাতে লম্বা ব্যারাকের মত সাইজের এক বেঢপ চিলেকোঠা। সামনে ছাদের কিছুটা অংশ টালি ঢেকে বেড়া ঘিরে রান্না বান্না করে রমলা। ঘরের পাশে পুরোনো আমলে বানানো চাকরদের বাথরুম, নীচের কল থেকে চৌবাচ্চা ভর্তি করতে হয়, মাসকাবারি বন্দোবস্ত আছে রমলার বরের সঙ্গে, স্নানের জল খাবার জল সব ভরে দিয়ে যায়। এই ঘরটা তৈরি হয়েছিল একসময় শরিকি বাড়ির যাবতীয় বাতিল ভাঙা জিনিসপত্র বোঝাই করার ও চাকরদের রাত কাটানোর জন্য। ঢালাও মেঝে, চুনকাম-বিহীন ইঁটের দেওয়ালে চারটে চওড়া চওড়া জানলা ছাড়া আর কিছুই নেই, কটা সস্তার আসবাবপত্র দিয়ে ঘরের এক ভগ্নাংশও ভরে নি। ভাঙা সিঁড়ি আর সাপখোপের ভয়ে ছাদে ওঠে না বাড়ির কেউ। এই কারণেই এই ঘরে নির্বিবাদী বিদেশবাবুর স্থান হয়েছে। নিজের বরাদ্দ ভাগ মৌখিক দিয়ে দিয়েছেন এক জ্যাঠতুতো দাদাকে – ভয়ে বা ভক্তিতে নয় – স্রেফ রোজকার পায়ে পা লাগানো বিশ্রী ঝগড়া গালিগালাজ, ঝামেলার হাত থেকে বাঁচাতে। বিদেশবাবু বরাবরই ঝামেলা বাঁচিয়ে চলেন, সেই অনেকদিন আগে থেকেই যখন তিনি বিদেশবাবু হয়ে ওঠেন নি, ছিলেন নেহাতই স্কুলপড়ুয়া বেঁটেখাটো, অনুজ্জ্বল মেধার, দশ জনের ভিড়ে জলের সঙ্গে জলের ফোঁটার মত মিশে থাকা, স্বভাবলাজুক বালক। ওনার মা রোগাভোগা ছেলেটিকে অতিরিক্ত সাবধানে আগলে রাখতে চেয়ে বিপদ বাড়ালেন। টিফিনে ফুচকা আলুকাবলির বদলে নিয়মিত কলা, আপেল, মাখন রুটি ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর খাবার আর নভেম্বর পড়তে না পড়তেই ফুলহাতা হাতে বোনা ধুমসো সোয়েটার ও মাফলার, গরম ও বর্ষায় মোটা কাঠের বাঁট লাগানো কালো মজবুত ছাতা, অবধারিতভাবে ক্লাসের ছেলেরা বিদেশবাবুকে তাদের ঠাট্টাবিদ্রূপের সহজ শিকার বানিয়ে ফেলল। সদ্য শৈশবের গণ্ডি ছাড়ানো শিশুরা কেবলমাত্র অবোধ বলেই দুর্বল সহপাঠীর ওপর কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা সবাই জানে। মুখচোরা বিদেশবাবু জড়োসড়ো হয়ে লাস্ট বেঞ্চে জানলার ধারে এককোণে বসে থাকতেন, কোনমতে চোখের জল আটকে। ক্লাসে যখন ওনার নামে ছড়া কাটা, গায়ে চক ছোঁড়া, ওনার ঈষৎ তোতলামি অনুকরণ করে ভ্যাঙচানো চলত, উনি তখন জানলা দিয়ে দেখতেন খেলার মাঠের পশ্চিম দেওয়ালে তেরছা রোদ পড়েছে। বুঝতেন বেলা তিনটে, আর মাত্র একটা ঘন্টা কাটিয়ে দিলেই আজকের মত ছুটি। একজোড়া কাঠবেড়ালির বাচ্চা বেশ কিছুদিন বন্ধু হয়েছিল সেই সময়, তাদের নাম রেখেছিলেন চিকা আর চিকি। নিমগাছের চওড়া ডালে ঝুপড়ি বাঁধা কাক দম্পতির দৈনন্দিন কর্মসূচি পুরো মুখস্ত ছিল তাঁর। শিক্ষকেরাও এই নিরীহ, নিপাট ভালমানুষ, নিম্ন মেধার ছেলেটিকে তেমন পছন্দ করতেন না, কেমন সুড়সুড়ি পিঁপড়ের মত অনুভূতি হত – ক্ষতিকারক নয় কিন্তু বিরক্তিকর। ক্লাস ফাইভের বিদেশবাবু তাই বন্ধু খুঁজতে গেলেন বইএর পাতায়। বাড়ির ছাদের ঘরটায়, যেটা এখন ওনার আস্তানা, প্রচুর ছেঁড়াখোঁড়া বাতিল বই পড়েছিল – ভালমন্দ, ছোটদের বড়দের নির্বিশেষে। তিনি গোগ্রাসে গিলতে শুরু করলেন, হাতের কাছে যা পেলেন তাই। এভাবেই হাতে এল এক রঙিন বিদেশী আকাশ মানচিত্র, খালি চোখে দেখা যায় এমন নক্ষত্ররাশিদের রেখাচিত্র এঁকে তাদের সম্পর্কে নানা দেশের প্রচলিত গল্প। সেই বারো বছর বয়েসে আকাশের সুন্দরী নক্ষত্রদের প্রেমে পড়লেন নিঃসঙ্গ বিদেশবাবু। দুপুর রাতে চুপি চুপি ছাদে এসে টর্চ জ্বেলে বই দেখে চিনতে শুরু করলেন একের পর এক চেনা অচেনা নক্ষত্ররাশি, তাদের সব গল্প, সব রহস্য অনাবৃত করে। প্রথম যেদিন উত্তর আকাশে প্রশ্নচিহ্ণের মত দেখতে সপ্তর্ষিমণ্ডল এক লহমায় চিনে নিলেন সে যে কী আনন্দ – ক্রতু, পুলহ, পুলস্ত, অত্রি, অঙ্গিরা, মরীচি, বশিষ্ঠ, বশিষ্ঠের পাশে প্রায় অদৃশ্য অরুন্ধতী। ক্রতু আর পুলহকে যোগ করে সরলরেখা বরাবর ছুঁয়ে গেছে অস্পষ্ট ধ্রুবতারা। সপ্তর্ষির পাশে কৃত্তিকা, বিতাড়িতা ছয় ঋষিবধূর বাসস্থান। সপ্তর্ষির প্রশ্নচিহ্ণের বিন্দুর মত জ্বলজ্বল করছে স্বাতী। ধ্রুবতারার অন্যদিকে ইংরিজি এম অক্ষরের মত উপুড় হয়ে সুন্দরী ক্যাসিওপিয়া, ইথিওপিয়ার রাজা সিফিউসের রানী, যিনি ক্রুদ্ধ সমুদ্রদেব পসিডনের আদেশে অনন্তকাল আবর্তন করে চলেছেন ধ্রুবতারাকে, হেঁটমুণ্ড ঊর্ধপদ। রানীর কাছেই সমুদ্রপাষাণে বাঁধা মেয়ে আন্ড্রোমিডা, অপেক্ষায় আছে কবে পারসিউস আসবে এলায়িত কেশ সর্পময়ী মেডুসার ছিন্ন মুণ্ড নিয়ে, সেটাস জলরাক্ষসকে স্তব্ধ পাথর করে দেবে।
রাতের আকাশ দেখা এক নেশার মত হয়ে উঠেছিল। কোনরকমে সন্ধের পড়া শেষ করে, রাতের খাওয়া খেয়েই ছাদে চলে আসতেন তিনি, তারপর শুরু হত রোমহর্ষক গল্প – শীতের রাতে আকাশ তোলপাড় করে শিকারে ছুটত কালপুরুষ হাতে তীরধনুক ও কোমরবন্ধনীতে তলোয়ার – সংগে বিশ্বস্ত লুব্ধক। কখনও বা হারকিউলিস জিউসের আদেশে ধাওয়া করত লিও অর্থাৎ সিংহকে। জ্যৈষ্ঠ মাসের সন্ধ্যায় কালপুরুষের খোঁজে দক্ষিণ আকাশে বিশাল ফণা তুলে সদর্পে ফুঁসে উঠত বৃশ্চিক, হিংস্র আক্রোশে। রাত বাড়লে দেখতেন, ঈশান কোণ ধরে অ্যাক্যুইলা ও নৈঋত কোণ ছুঁয়ে সিগন্যাস দিগন্তব্যাপী ডানা মেলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আকাশের দখল নিতে, অধৈর্য পক্ষীরাজ পেগাসাস ক্ষুর ঠুকছে কখন পারসিউসকে পিঠে তুলে পাখা মেলে ছুটবে গর্গন মেডুসার অভিশপ্ত মুণ্ড নিধনে ! রাত বাড়লে মায়ের ডাকে ঘরে ফিরে যেতে হত, কিন্তু নক্ষত্রেরা সঙ্গ ছাড়ত না। সপ্তর্ষিদল আর ক্যাসিওপিয়া ধ্রুবতারাকে বুড়ি ছুঁয়ে লুকোচুরি খেলত সমস্ত রাত, গভীর রাতে ঘুম ভেঙে জানলার শিক ধরে বিদেশবাবু দেখতেন সেই খেলা। এরপর আর কখনও বন্ধু না থাকার কষ্ট পেতে হয় নি বিদেশবাবুকে। ক্লাসে সহপাঠীদের নিষ্ঠুরতা, শিক্ষকদের ঠাট্ট-বিদ্রুপ, মা বাবার যন্ত্রণাদায়ক স্নেহ-মমতা – সবই কেমন স্বপ্নময় হয়ে যায়। সকালে উঠেই অপেক্ষা করে থাকতেন কখন রাত হবে, কখন নক্ষত্রদল আকাশে যে যার জায়গায় প্রস্তুত হয়ে দাঁড়াবে, বিদেশবাবুর চিত্রনাট্য অনুযায়ী অভিনয়ের জন্য। সারাদিন মনে মনে রাতের চিত্রনাট্য লিখে চলতেন, নিজে থাকতেন বিভিন্ন চরিত্রে নায়কের ভূমিকায়।
যথাসময়ে সে বয়সের আরো পাঁচটা ছেলেদের মত বিদেশবাবুরও স্বপ্নদোষ ঘটতে লাগল। কিন্তু আর সকল ছেলেদের থেকে তাঁর তফাৎটা হল এই যে, অন্য ছেলেদের স্বপ্নে যখন পর্দার লাস্যময়ী সুন্দরী চিত্রতারকারা অঙ্গ বিভঙ্গে স্খলন ঘটায়, ওনার স্বপ্নে আসে ক্যাসিওপিয়া, অ্যান্ড্রোমিডা, ভেনাস, আইসিস, স্বাতী, রোহিণী, অনুরাধা। সে যে কি মাধুর্য, কি তীব্র যন্ত্রণা, কি যে তূরীয় কামনা, কৈশোরের পবিত্র যৌনতায় নিপীড়িত হতে হতে স্বর্গের সুখ অনুভব করতেন তিনি, যার ফল গিয়ে পড়ত স্কুলের রেজাল্টে।
ইচ্ছে ছিল অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে পড়ার – রেজাল্ট টানতে পারলেন না, সাধারণ পাস কোর্সে কলেজে ভর্তি হলেন। তবে শখের পড়া চালিয়ে গেলেন নিয়মিত। কলেজে যে-সব চোখ ধাঁধানো সহপাঠিনীরা এই সাদামাটা বেঁটেখাটো ছেলেটিকে বরাবর করুণার চোখে দেখে এসেছিল, তারা কোনদিন বুঝতেই পারে নি যে ছেলেটির মনে তাদের কেউ আবছা দাগও কাটতে পারে নি – ও এদের কারোকে প্রেমে পড়ার যোগ্য বলেই মনে করেনি – কোথায় সুন্দরী গ্রীক রাজরানী ক্যাসিওপিয়া, আন্ড্রোমিডা, রহস্যময়ী রোমের দেবী ভেনাস, চন্দ্রবধূ রোহিণী, অশ্বিনী আর কোথায় এই ছাপোষা ছন্দা, বেলা, জবা মল্লিকা! ফলতঃ কোনরকম স্মৃতিভারে অনাক্রান্ত ঘটনাবিহীন কলেজজীবন কাটিয়ে দিয়েছিলেন বিদেশবাবু। পাস করার পরে কপালজোরে রাইটার্সে একটা কনিষ্ঠ করণিকের চাকরি পেয়ে যান, সে-কালে চাকরির বাজার ভাল ছিল তাই। এরপর কিছুদিন মা বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন – অন্যান্য ব্যাপারে বাধ্য বিদেশবাবু জীবনে এই একবারই বিদ্রোহ করেছিলেন, চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছিলেন মাকে – বাঙালি মায়ের সব সয় কিন্ত ছেলে সরকারি চাকরি পেয়েও ছেড়ে দেবে এমন সর্বনাশ কল্পনার অতীত। তাই “কোন সর্বনাশীর কবলে পড়েছে" - কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে শেষ পর্যন্ত মা রণে ভঙ্গ দিলেন।
এরপর বিদেশবাবু ও নক্ষত্রকুমারীদের প্রেম বিনা বাধায় চলতে থাকে। চাকরি পাওয়ার পর প্রথম মাসের মাইনে দিয়ে বিদেশবাবু একটা সস্তার টেলিস্কোপ কিনেছিলেন, রাতে ছাদে টেলিস্কোপ খাটিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন রোজ, রেঞ্জ কম ছিল, তা সত্ত্বেও যা চোখে পড়ত, নিজের চিন্তাভাবনা মত তার ব্যাখ্যা করে একটা ডাইরিতে লিখে রাখতেন নিয়মিত। সুতরাং এমন নয় যে জ্যোতির্বিদ্যার বৈজ্ঞানিক রহস্য অজ্ঞাত ছিল তাঁর, এ বিষয়ে নিয়মিত পড়াশোনা করতেন, মাঝে মাঝে অ্যামেচার স্কাই ওয়াচারের সভায় সেমিনার শুনতে যেতেন, কল্পনা আর বাস্তবের ফারাক বুঝতেন বইকি। তবু রাত গভীর হলে মাথায় কি যে ভূত চাপত, অমোঘ নিশিরডাকের মত যে নক্ষত্ররমণীকে সেদিনের পছন্দ তার দিকে টেলিস্কোপ লক্ষ্য করে ডাক পাঠাতেন – ছাদে এসে নামত পেগাসাসের ডানায় ভর করে গ্রীক রাজকুমারী অ্যান্ড্রোমিডা, কিম্বা কালপুরুষ ওসিরিসের প্রিয়া মিশরের দেবী আইসিস, কখনও বা আবার কৃত্তিকাযূথের ছয় ঋষিবধূ – রাতের সঙ্গিনী হত তাঁর। তাদের সংগে আকাশগঙ্গার উত্তাল তরঙ্গে, জিউসের অলিম্পাস পাহাড়ে রুক্ষ শিলার ওপরে, বিপদসঙ্কুল ড্রাকোর হাত এড়িয়ে, কত রভস রজনী কাটিয়েছেন বিদেশবাবু। রাতের নর্মসহচরীদের সঙ্গে মানানসই বেশে কখনও গ্রীক দেবতা অ্যাপলোর পোশাকে, কখনো ফ্যারাওএর আলখাল্লায়, কখনও বা ঋষিকুমারের বল্কলসাজে তিনি অপেক্ষা করতেন নৈশবিহারে গা ভাসাতে। নিজেকে নক্ষত্রসুন্দরীদের যোগ্য করে তুলতে অনেক কষ্ট ও অর্থব্যয় করে খুঁজে খুঁজে চিৎপুর অঞ্চলে এক দোকানের খোঁজ পেয়েছিলেন যারা যাত্রাদলে ড্রেস সাপ্লাই করে। অনেক কষ্ট করে তাদের বোঝাতে হয়েছিল যে নিজস্ব নাটকদলের জন্য তাঁর নিত্য নতুন হরেক দেশ বিদেশের প্রাচীন পোশাক দরকার – প্রয়োজনে বই থেকে সংগ্রহ করা ডিজাইন নিজে এঁকে অনামী দর্জিকে দিয়ে তৈরি করিয়েছেন।
প্রথম প্রথম বিদেশবাবু ভাবতেন এই নৈশ আকাশভ্রমণ পুরোটাই বুঝি তাঁর রাতভোর স্বপ্নবিলাস। ভুল ভাঙল যেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন সিক্ত চাদরে পড়ে আছে এক অপূর্ব কারুকাজ করা আতরের শিশি। ঠিক এমন আতর দেখেছিলেন সেদিন এক কিউরিও শপে। পরম যত্নে দামী সিল্কের রুমালে মুড়ে আতরটা যত্নে রেখে দিলেন তিনি। সারাদিন অফিসে কাজের ফাঁকে গত রাতে দেবী আইসিস ও তৎপরবর্তী সেই সঘন রতিসুখ কাহিনী স্মরণ করে রোমাঞ্চিত হলেন। ভেনাসের সঙ্গে প্রথম মিলনের পর পেয়েছিলেন এক রক্ত গোলাপ। ছয় ঋষিবধূর সঙ্গে এক উদ্দাম রাত্রির পর মেঝেতে ছড়ানো ছিল ছিন্ন পাতা, ভগ্ন শাখা, মনে হয় যেন অধৈর্য পেষণে কার নিচোলের পত্রাবরণ থেকে খসে পড়েছে। রমলা পরের দিন আশ্চর্য হয়ে বলল – “ঘরের মেঝেয় ফুল পাতা এল কোত্থেকে? অফিস ফেরত ফুল কিনেছিলেন বুঝি? আপনার তো এসব শখ আছে বলে জানতুম না!”
কোনদিন সকালে ঘুম ভেঙে শরীরে হালকা নখের আঁচড়, অঙ্গপ্রত্যঙ্গে দশনচিহ্ণ আবিষ্কার করতেন, ক্ষতচিহ্ণে আঙুল ঠেকিয়ে অনুভব করতেন গতরাতের তীব্র, অমোঘ গভীর স্পর্শ - স্বভাবত শিথিল পুরুষাঙ্গ দৃঢ় হয়ে উঠত। খালি গায়ে দাড়ি কামানোর সময় একবার রমলার চোখে পড়েছিল সেই নখের আঁচড় – নিজের বিবেচনা মত উপদেশ দিয়েছিল – “জানলা তাহলে বন্ধ করে শোবেন দাদা, বেড়ালটা ঘরে ঢোকে বোধহয়, অঘোরে ঘুমোন আপনি, বুঝতে পারেন না।” যেদিন নায়িকার কানে ঝোলানো কদমফুল ও নীবিবন্ধের কমলরেণুতে শয্যা মাখামাখি হয়েছিল সেদিন বিছানা ঝাড়তে গিয়ে রমলা বলে বসল “চুন সুরকি খসে পড়েছে ওপর থেকে, মেরামত করান, কোনদিন না ছাদ ভেঙে পড়ে!” এমন কয়েকবার হওয়ার পর সাবধান হয়ে গিয়েছিলেন বিদেশবাবু, এক এক উন্মাদনাময় রাত্রির স্মৃতিমেদুরতা মাখানো গূঢ় সংবাদ এভাবে পাঁচকান হওয়া ঠিক নয়।
এইভাবেই চলছিল বিদেশবাবুর দ্বৈতজীবন। বারো বছরের বিদেশবাবু এখন প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই। বিপদ বাধল সেদিন। সেদিন অফিস থেকে ফেরার পর নিয়মমত বেগুনীর ঠোঙা হাতে ছাদে চিলেকোঠার ঘরে উঠতে যাচ্ছেন, ন’বৌদি পিছু ডাকলেন--“ঠাকুরপো, একবার তোমার দাদা ডেকেছিলেন।” বিদেশবাবুর জীবনে এটা একটা বড়সড় বিপর্যয় – সন্ধের পর উনি অসম্ভব ব্যস্ত থাকেন, আজ আবার অ্যান্ড্রোমিডার আসার কথা, বিদেশবাবু অবতীর্ণ হবেন পারসিউসের ভূমিকায়, স্বভাবতই খুব উত্তেজিত ছিলেন তিনি। ব্যাজার মুখে ন’দার ঘরে চুনকামহীন হাড়গোড় বের-করা দেওয়ালের দিকে মুখ করে বসলেন, বেগুনীর ঠোঙাটা তক্তাপোষের ওপর রেখে। বৌদি হাতলভাঙা কাপে বেশি চিনি, কম দুধ দেওয়া চা ও তেলমাখা মুড়ির কাঁসি সামনে এনে রাখলেন। বেগুনী ও মুড়ি গালে ফেলে ন’দা বললেন
“সারা জীবনটা তো গা বাঁচিয়ে কাটিয়ে দিলি, সংসার খরচ আর জমির দর কত বেড়েছে হিসেব রাখিস?”
এ-হেন অপ্রত্যাশিত আক্রমণে হকচকিয়ে গেলেন বিদেশবাবু, উত্তর দিলেই ঝামেলায় জড়াবেন এমন একটা সাবধানবাণী অবচেতন মন শুনিয়ে দিল তাঁকে। অপেক্ষায় রইলেন ন’দার পরবর্তী বাক্যের।
“অতি কষ্টে এক প্রোমোটার পাওয়া গেছে, এই ধুমসো প্রাসাদ কিনতে রাজি হয়েছে – সব মামলা মকদ্দমাসুদ্ধ। পার্টির নেতা তলাপাত্রকে চিনিস তো, তারই লোক। এই বাড়ি, সামনের পুকুর, বস্তি সব মিলিয়ে একটা আবাসন না কি বলে সেই প্রকল্প বানাবে। ওপরমহলে চেনাজানা আছে, সব ম্যানেজ করে নেবে বলছে। দর বেশি দেবে না, তবে একটা করে পাঁচশ স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাট দেবে। নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল। কি বলিস?” এতগুলো কথা একনিঃশ্বাসে বলে একটু থামলেন ন’দা।
“পুকুরটা বুজিয়ে দেবে? বাড়িটা ভেঙে ফেলবে? হাই-রাইজ উঠলে আকাশ ঢাকা পড়ে যাবে তো!” প্রায় আর্তনাদ করে উঠলেন বিদেশবাবু।
“আকাশ!” ন’দা একটু ভয় ভয় চোখে দেখলেন ভাইকে – জমি কেনা-বেচার মধ্যে আকাশ এল কোথা থেকে? অনেকদিন ধরে সন্দেহ ছিল, এটা বদ্ধ পাগল, ঠিকই ভাবতেন। একটু সরে বসলেন, কে জানে বাবা, কিছু বিশ্বাস নেই! দেরি না করে একগোছা কাগজ হাতে ধরিয়ে বললেন--
“এইগুলো একটু ভাল করে পড়ে সই করে দিস। তুই ছাড়া সকলের সই হয়ে গেছে। যারা বাইরে থাকে আমাকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নী দিয়ে দিয়েছে। তোর জন্য আটকে আছে কাজটা। দেরি করিস না যেন, এত টাকার ব্যাপার, এরমধ্যেই বেশ কয়েক লাখ খরচ হয়ে গেছে বস্তি খালি করতে, আর দেরি হলে তলাপাত্র মারাত্মক ঝামেলা বাঁধাবে।”
পা টেনে টেনে ছাদে উঠতে উঠতে ক্লান্ত বিদেশবাবু বুঝলেন কাগজে যাই লেখা থাক সই তাঁকে করতেই হবে, নয়ত মারাত্মক ঝামেলা বাধবে।
সইসাবুদ শেষ করে সেদিন রাত এগারোটার সময়, যখন চারদিক শুনশান, টেলিস্কোপে লক্ষ্য করে অ্যান্ড্রোমিডাকে ডাক পাঠালেন বিদেশবাবু। ঠিক রাত একটার সময় পেগাসাসের অস্থির ডানা ঝাপটানোর শব্দ আর হ্রেষাধ্বনি শুনে ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ালেন। এক গাঢ় কুয়াশা তাঁর ছাদ, চিলেকোঠা ও ওপরের ঝকঝকে আকাশকে সিলিন্ডারের মত মুড়ে ফেলে চারপাশে এক অভেদ্য বেষ্টনী তুলে দিয়েছে, এখন রঙ্গমঞ্চে যা ঘটবে চারপাশে কেউ দেখতে পাবে না। আকাশে তখন ঝাঁপিয়ে পড়েছে একদিক থেকে অ্যাক্যুইলা – জিউসের প্রিয় পৌরাণিক ঈগল ও অন্যদিক থেকে সিগন্যাস – স্বর্গের রাজহাঁস। কালপুরুষ নিজে এসে দাঁড়িয়েছে ছাদের মাঝ বরাবর, শিরস্ত্রাণে উজ্জ্বল মৃগশিরা, পায়ের তলায় বাণরাজা। দক্ষিণ আকাশে দানবিক দুই দ্রংষ্টা মেলে ঝুঁকে পড়েছে মহাবৃশ্চিক, তার সমস্ত শরীর প্রসারিত করে আঘাত হানতে প্রস্তুত, ক্রোধে ধকধক করছে জ্যেষ্ঠা, লালদানব। হাইড্রা তার বিশাল নটি ফণা উদ্যত করে আগলে রেখেছে মধ্য আকাশ। সপ্তর্ষি ও ক্যাসিওপিয়া, দুই কৌতূহলী দর্শক, ধ্রুবতারার দুদিকে দাঁড়িয়ে – সপ্তর্ষির চোখে কৌতুক আর ক্যাসিওপিয়ার চোখে ঈর্ষা।
অ্যান্ড্রোমিডা পেগাসাসের পিঠ থেকে হাত বাড়িয়ে এক টানে তুলে নিল বিদেশবাবুকে, পক্ষীরাজ ডানা মেলে ছুটল আকাশগঙ্গার তীর বরাবর, ব্রহ্মহৃদয় নক্ষত্রের বুক চিরে, উত্তরফাল্গুনী, পূর্বফাল্গুনী নক্ষত্র ছুঁয়ে, মিথুন, পুনর্বসুর পাশ কাটিয়ে কোন ছায়াপথ থেকে ছায়াপথে চলতে লাগল বিদেশবাবুর শেষ সফর। এমন আবেগ এমন রোমাঞ্চ এমন উত্তেজনা কোন রক্তমাংসের মানুষ আজ অবধি অনুভব করে নি। যাত্রাপথে কত নক্ষত্র গঠিত হল, কত নক্ষত্র ধ্বংস হল, বিদেশবাবু বিস্ময়ে শিউরে শিউরে উঠে দেখলেন ক্রোধে রক্তচক্ষু রেড জায়েন্ট, উচ্ছ্বাসে ফুঁসে ওঠা সুপার নোভা, চক্রব্যূহের মত ভয়ানক ব্ল্যাকহোল--পৌঁছে গেলেন সৃষ্টির আদিপ্রান্তে – বিশ্ব তখন প্রস্তুত হচ্ছে সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, বিগ ব্যাং বিস্ফোরণ হবে বলে।
পরদিন সকালে রমলার চিৎকারে বাড়ির লোক সবাই জড়ো হল ছাদে, ভাঙা হল বন্ধ দরজা। আর তারপরই সশব্দে দরজার পাল্লা বন্ধ করে সবার আগে তড়িঘড়ি আইবুড়ো মেয়ে ও বাচ্চাদের নীচে পাঠিয়ে দেওয়া হল। বউরা লজ্জায় সাত হাত জিভ কেটে কেউ মুখ ঘুরিয়ে নিল, কেউ ঘোমটায় মুখ ঢাকল। পুরুষরা রাগে বিরক্তিতে মেঝেতে পড়ে থাকা যাত্রাদলের গ্রীক রাজপুত্রের পোশাকে ঢেকে দিল বিদেশবাবুর নগ্ন মৃতদেহটা। ওষ্ঠদ্বয় ঈষৎ বিভক্ত, মুখে লেগে আছে পরম আনন্দ, তৃপ্তি, আর সন্তোষের ইঙ্গিত।
পারিবারিক ডাক্তার মোটা ফিজ নিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট দিল “হার্ট ফেল”। সই করা বাড়ির কাগজগুলো গুছিয়ে তুলে নিল ন’দা – সময়মত তলাপাত্রকে দিতে হবে। খবর পেয়ে মহা উৎসাহে সৎকার সমিতির কাচঢাকা গাড়িতে লিকলিকে গোটা কয়েক রজনীগন্ধার ডাঁটি বেঁধে, খই ছড়াতে ছড়াতে শ্মশানে রওনা দিল তলাপাত্রের সমাজসেবী দলবল।
আমাদের বিদেশবাবু তখনও ধূমকেতুর গতিতে ছুটে চলেছেন এক মহাবিশ্ব থেকে আরেক মহাবিশ্বে, দেখে চলেছেন সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত, বিস্ময়ে শিহরিত রোমকূপে ফুটে আছে পরমানন্দের স্বেদবিন্দু।