• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭২ | সেপ্টেম্বর ২০১৮ | কবিতা
    Share
  • সাঁওতালী কবি 'সারিধরম'-এর সাতটি কবিতা : বিশ্বেশ্বর কুণ্ডু



    সারি হল সত্য, ধরম হল ধর্ম। সারিধরম হাঁসদা—এই ছদ্মনামের আড়ালে স্বনাম-খ্যাত সাঁওতাল কবি বাসুদেব হাঁসদা। তাঁর জন্ম সাবেক মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রাম মহকুমার অন্তর্গত বিনপুর থানার কুমরদা গ্রামে, ১৯৫৫ সালে। বাবা দরিদ্র চাষী—পদান, মায়ের নাম নহা। পদান (তু. বাং. প্রধান) ছিলেন গাঁয়ের যুব-দলের প্রধান বা মোড়ল। তিনি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র থেকে স্বল্প সাক্ষরতা পেয়েছিলেন। তবে তিনি মুখে মু্খে সেরেঞ (গান) বাঁধতে পারতেন। বালক বাসুদেব জয়পুর জুনিয়ার হাইস্কুল এবং শিলদা রাধাচরণ উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন। তারপর শিলদা চন্দ্রশেখর মহাবিদ্যালয়ে তৃতীয়বর্ষে পড়া ছেড়ে দেন; পরে প্রাইভেটে বি.এ. পাশ করেন। তাঁর পত্নী কাজল দেবী (প্রাথমিক শিক্ষিকা) ২০১২ সালে গত হন। তাঁদের দুই পুত্র; বড়—সাগেন ইতিহাসে এম. এ; বি. এড. পড়ছে। ছোট তমাল—এম. বি. বি. এস.-তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। কবি সারিধরমের কৈশোর বয়স থেকেই সাঁওতালী ভাষা-চর্চার ফসল—অজস্র কবিতা, গল্প, নাটক ও যাত্রাপালা। বহু পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—সাহিত্য-একাডেমি পুরস্কার (নভেম্বর, ২০১৩)। তাঁর রচনায় খেটে-খাওয়া মানুষের জীবনযুদ্ধের কথা চিত্রিত হয়েছে। তাঁর কয়েকটি বিশিষ্ট কবিতার বাংলা-ভাবানুবাদের সঙ্গে সাহিত্যভাবনা ও ভাষাভাবনা সংযুক্ত হচ্ছে। এখানে আমরা তাঁর যে কবিতাগুলির ভাবানুবাদ প্রকাশ করেছি, সেগুলির মধ্যে প্রথম মূল কবিতাটি পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পীসংঘ ঝাড়গ্রাম শহর শাখার ষান্মাসিক পত্রিকা বাংলা আখর আগষ্ট ২০০৮ পঞ্চম সংখ্যায় প্রকাশিত। বাকিগুলি অপ্রকাশিত। প্রথম কবিতাটি বাদে বাকিগুলির ভাবানুবাদ করেছেন স্বয়ং সারিধরম। এখানে উল্লেখ্য যে তাঁর ভাবানুবাদগুলি এক একটি স্বতন্ত্র বাংলা কবিতাই হয়ে উঠেছে।

    মূল কবিতাঃ [১] || ইঞাঃ আঁশ ||

    ধৗরতিরে তেঁগো কাতে লল ধিপৗং বালি—
    ইঞ অং আকাদৗঞ—বারয়া লুটি ফাদা কাতে,
    ইঞাঃ আঁশ—ধৗরতি রেয়াড়ঃ মা!
    বাঞ্চাও হচ আন ক—কাটিজ্ তালাং দাঃ রেন
    চিলবিলৗও ডৗঁড়কৗ হাকো।
    বাঞ্চাও হচ আন ক—ধৗরতিরেন খাটুওয়ৗ
    হেঁদে লোবোঃ মুউচ্।
    ফারকাও ছিৎয়ৗও হচ আন উড়মালাও দুলৗড়,
    অৗনৗড়ি মৗনমি মনে জিউয়ী রেনাঃ
    রিলৗ মালা উপুরুম চিপিনৗহৗপ
    সৗগৗই হচ আন—মিৎ খুঁদড়ি রৗপুৎ কাঁত্ দানাং
    তেরদেজ্ লেকা।
    ইঞদঞ খজ্ কানা ধৗরতি রেয়াড়ঃ মা।
    বোরকেতঃ মা আনমানাও দুলৗড়।

    ভাবানুবাদঃ || আমার আশা ||

    (ভাবানুবাদক—বিশ্বেশ্বর কুণ্ডু**)


    গরম বালির ঢিপির ওপর দাঁড়িয়ে
    আমি দুটি ঠোঁট ফাঁক করে ফুঁ দিয়ে যাই
    আহা, পৃথিবী শীতল হোক,
    অল্প জলেতে কিলবিল করে দাঁড়িয়ারা বেঁচে থাকুক,
    আর বেঁচে থাকুক খেটে খাওয়া কালো খুদি পিঁপড়ের দল।
    আনাড়ি মানুষের মনে বেঁচে থাক
    সুকোমল প্রেম, তাদের কুঁড়ে ঘরের
    ভাঙা পাঁচিলের পেছনে স্নিগ্ধ চাঁদের আলো উঠুক,
    অন্ধকার সরিয়ে সুবাসিত হোক অমল বাতাস।
    আমি এই পৃথিবীতে খুঁজে যাচ্ছি সত্যিকারের ভালবাসা

    মূল-কবিতাঃ [২] || পালেন ||

    দুলৗড় তাম দ পালেন—ঝাঁড়গাও ঞুরু কঃ আ?
             আলে ছাটকা দারে লাফাং ডৗর খন্।
    আঁজলে আতাং কাতেঞ—লকা দারাম কেয়া
             আটেৎ অসার কিয়ৗঞ নোআ জিউয়ী মন।

    চরক তাম দ পালেন—পটকজ্ রাকাব কঃ আ?
             আলে সামাং সারে বাড়গে সিয়ৗড় খন!
    কড়াম পাঁজরা জাংতেঞ—এটেৎ এসেৎ কেয়া
             তেঁগো কেটেজ কিয়ৗঞ জিয়ন আরন।

    মুলুচ্ তামদ পালেন—ঝালকাও তাসে কঃ আ?
             আলে অড়াঃ দুওয়ৗর গানাডি খন!
    দুলৗড় ডিবরি সুলতৗঞ—জেরেৎ মারসাল কেয়া
             অন্তর তাঁহে কঃ তিঞ মনে মগন।

    পৗরসি তামদ পালেন—সাঁওহেৎ অৗরসি কঃ আ?
             সনের সুতৗম তেগেঞ বৗধি তলকে,
    কড়াম খুঁদড়ি কচা—অন্তর বাখোল তালা
             মনে টুমৗং রেগেঞ পটম ওল্-কে।

    ভাবানুবাদ: || যদি ||

    (ভাবানুবাদক—সারিধরম)


    তোমার ভালোবাসা যদি হঠাৎ খসে পড়ত
    আমাদের বাড়ির উঠান আঙিনায়?
    আমি সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে
    দু'হাত বাড়িয়ে, হৃদয়ের অঞ্জলি পেতে লুফে নিতাম।

    তোমার রূপালি রূপ যদি অঙ্কুরিত হয়ে উঠত—
    আমাদের বাস্তু-বাড়ির চৌহদ্দি সীমানায়?
    আমি আমার বুকের পাঁজর দিয়ে বেড়া বেঁধে,
    নবজীবনের উজ্জীবিত আবেগকে রক্ষা করতাম।

    তোমার মুচকি হাসি যদি উছলে পড়ত
    আমাদের দ্বার সংলগ্ন চৌকাঠ বারান্দায়?
    আমার ভালবাসার অন্তর প্রদীপে ছোঁয়া লাগিয়ে
    মলিন মগ্ন জীবনকে আলোকিত করতাম।

    তোমার ভাষা যদি সাহিত্যের 'আয়না' হয়ে উঠত?
    আমি সুবর্ণ-সূত্রের গ্রন্থি মালায় বেঁধে রাখতাম,
    যা—বুকের হৃদয়কোণে আগলে রেখে
    নিজেকে গভীরভাবে চিনে নেওয়ার আশায় দিন গুণতাম।

    মূল কবিতা: [৩] || এহো দিনৗম খাটাও হড় ||

    (ভাবানুবাদক—সারিধরম)


    এহো দিনৗম খাটাও হড়
    পাঠে কেটেজ তেঁগোনমে মা
    দিল দাড়েতে বেরেৎমে মা,
    তেয়ার লৗগিৎ তেঁগোয় মে মা
             ধৗরতি জাগাও হর,,
    এহো দিনৗম খাটাও হড়।

    সাব মে আমাঃ কৗখয়ৗ সাবল
    চাকলি-ঝাবা-কুডি ̶ সঁবল
    সির্জন মে মা ধৗরতি নিরৗই
             উদ্গৗও উসৗস্ খঁড়,
    এহো দিনৗম খাটাও হড়।

    দাড়ে মেনাঃ তেয়ার এদাম
    উসুল বুরু ধাসাও গদাম,
    অৗইদার মেনাঃ জৗরিমে তেহেঞ
             সনৎ সারি রড়,
    এহো দিনৗম খাটাও হড়।।

    হড়ম হারতা জাং দ আমাঃ
    হড় লৗগিৎ গেম মাগেৎ সামাঃ,
    কৗচ হঁচ- 'কুর বাচম দামাঃ
    তিস দ আদম জোর?
    এহো দিনৗম খাটাও হড়।।

    ভাবানুবাদঃ || ওগো দিনখাটা মানুষজন ||

    (ভাবানুবাদক—সারিধরম)


    ওগো দিনখাটা মানুষজন,
    দৈহিক শক্তি নিয়ে কোমর বেঁধে দাঁড়াও
    ধসে পড়া এই ধরণীর জাগরণ পথকে
    সমান করে সাজিয়ে তোল।

    তোমাদের নিত্য সঙ্গী—
    গাঁইতি-কোদাল-ঝড়া-সাবল শক্ত হাতে ধর,
    আরো যা কিছু সম্বল আছে তা-দিয়ে
    এই সৃষ্টির বুকে উজ্জীবিত শক্তির বীজ বপন কর।
             ওগো দিন-খাটা মানুষ-জন!

    তোমরা তৈরি করতে পারবে—
    উচ্চ শিখরকে ধ্বংস করতে পারবে।
    তোমাদের অধিকার লড়াইয়ে নিশ্চুপ থেকো না
    সাহস রেখে প্রতিবাদ কর।
             ওগো দিন-খাটা মানুষ-জন!

    তোমাদের দগ্ধ শরীর, জং-ধরা হাড়গুলো
    টুকরো টুকরো হয়ে অল্প দামে বিকিয়ে যাচ্ছে।
    তার যে দাম আছে তা-ও হাঁকছ না।
    কবে গড়ে তুলবে জোরালো প্রতিবাদ?
             ওগো দিন-খাটা মানুষ-জন!

    মূল কবিতাঃ [৪] || অৗপিন তুলৗ জখা ||

    (ভাবানুবাদক—সারিধরম)


    আম রেন সাঁওগেম লৗড়হৗই কানা
    অৗইদৗর লৗড়হৗই রেম তায়ম আকানা,
             পুচুজঃ কান সানাম হুদিস দিসৗ।
    খৗলিম ঞেলেৎ হড়াঃ বৗড়িজ্
    হৗনি গে চেতা বেড়হায় এ সিঁড়িজ?
             অমনঃ কান অনাতে সুয়ৗ হিঁসৗ।

    উদ্মৗ গরব তে দিশম দাঁড়ায়
    হৗনিয়াঃ গেম পাসরা বাড়ায়
             খৗলিম রেঁতায় বিজড় তপাঃ বানাম।
    আম দ চেৎ এ চিকৗ আকাৎ?
    বাম রিকৗয় খান বাড়ায় লাগাৎ
             কৗই আন সোৎ দ অঁডে গে মেনাঃ জানাম।

    কৗই দ অকারে মেনাঃ জালাৎ
    বাছাও তে বাম ভিনৗ আকাৎ,
             বাম দাড়ে কাওয়াৎ অৗপিন তুলৗ জখা।
    হড়াঃ দুক্রে মনে বাং লঃ আ
    অৗপিন সুকতেম সুকৗল কঃ আ,
             আৎ এৎ কানাম বয়হা পৗরিস লেখা।

    ভাবানুবাদঃ || আত্মসমীক্ষা ||

    (ভাবানুবাদক—সারিধরম)


    তুমি তো তোমার লোকেদের সাথেই
    দ্বন্দ্বে লিপ্ত আছ, তাই অধিকার-যুদ্ধে
    পিছিয়ে রয়েছ। হারিয়ে ফেলেছ
    সমস্ত বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞান।
    কে আপন কে পর,
    এতো তোমারই জানার কথা।
    কিন্তু তোমার আত্মসখী জীবন
    তা হতে দেয় নি।
    নিজের আত্মসমীক্ষার অভাবে
    পরের অন্যায়কে খুঁজতে গিয়ে
    আরো একটি অন্যায় করে ফেলেছ।

    ফলে জন্ম দিয়েছ হিংসার।
    হারিয়ে ফেলেছ তোমার
    বংশানুক্রমিক পরিসংখ্যান।

    মূল কবিতা [রূপক অনড়হেঁ]

    [৫] || নেহর ||

    (ভাবানুবাদক—সারিধরম)


    এ—চম্পা বাহা—ডৗররেম বাহা আকান,
    আমাঃ রুপরে গাতেয় ঝালাকঃ কান।
    স' মা দঁগয় দঁগয় গটাম আঁৎকাও হচয়,
    গাতে সঁধাড় স' তায় সালাগঃ কান।

    আলম আঁধাঞ মাসে ! —হড় দ দিনি তিঞসে,
    তাঁড়খাও মনতিঞ আলম কৗঁহিস হচয়।
    উনি রেগে অনে, তপল আকান মনে
    ঝালাক্ তায় দ আলম দানাং ওকোয়।

    ভাবানুবাদ (রূপক কবিতা)

    || অনুযোগ ||

    (ভাবানুবাদক—সারিধরম)


             ওগো চাঁপা ফুল,
    সুন্দর সুসজ্জিত শাখায় ফুটে রয়েছ।
    আমি জানি, তোমার রূপের আড়ালে
    আমার প্রিয় সাথীকে লুকিয়ে রেখেছ।

    বাতাসে সুবাসিত সুগন্ধের বিকীরণে
    তার উপস্থিতি অনুভব করছি,
    আমাকে আর দ্বিধা সংশয়ের মধ্যে রেখো না,
    আমি যে তার কাছে বিলিয়ে দিয়েছি
    সমস্ত মনপ্রাণ।
    ওগো চাঁপা ফুল, আমার প্রিয় সাথীকে
    ফিরিয়ে দাও। ফিরিয়ে দাও না।

    মূল কবিতাঃ [৬] || হেঁদে কল্গা ||

    আমাঃ গরব রেনাঃ দাহড়ি মচং রে— হেঁদে কল্গা
    সুনরে আকা মেনাঃ আড়াঃ আল্গা।
    লাড়াঃ আ হালায় হালায় হয়তে বিকিৎ বিকিৎ
    বিদলৗই ফৗন্টিলঃ আ কাল্হা কুদুম কৗহনি—
                      লুতুরে কিঁড়বিৎ।

    সিরিজঃ আ— জারপা জারপা বেড়হায়
    জৗপুৎ জৗপুৎ আনৗইকৗও
    এর কঃ আ সি লাহুৎ তেজান অৎরে ফুকটৗ ইতৗ
    অমনঃ আ সেবেজ্ বুলৗন সাহার সকড়ারে
                      একেন ঝাড়া-কিতৗ।

    আম দ দিনৗম রেন সিঁয়ৗজৗরি—
    সৗরি মেন কাথা হঁম কলসা গিডিয়া।
    খাঁগট রেনাঃ আসান অৗইদৗর কুড়ৗই দ
    উকুর! তিস রে বাংচম সেটের সিদিয়া।

    ভাবানুবাদঃ || কালো মুকুট ||

    (ভাবানুবাদক—সারিধরম)


    তোমার গর্বের মস্তক-চূড়ায় কালো মুকুট
    শূন্যের আকাশে দোদুল্যমান আল্গা হয়ে দোলে।
    বাতাসে নড়ে বিছুটে পোকার মতো।
    নীতি-কথার ফুলঝুরি ঝরে যেন
    কান ঝালাপালা হয়ে ফেটে পড়ে।

    সৃষ্টি হয় প্রতিবন্ধকতার বিস্ময় অনাবেগ অনুভূতি।
    অদক্ষতার ফলে—কর্ষিত উর্বর জমিতে
    উৎপন্ন হয় অনুর্বর ফসল।
    তুমি তো দাম্ভিক। তোমার দম্ভের ফলে
    সত্যকে মাড়িয়ে যেতে দ্বিধা কর না।
    সঙ্কট সমাধানে কখনই সফল হও না।

    মূল কবিতাঃ [৭] || কয়ঃ হররে নিত হঁ মিনৗঞ গেয়া ||

    ইঞাঃ রড় তেনাঃ তাহেঁ কানা,
             মেনখান বৗঞ রড় দাড়ে আকাওদা।
    ইঞাঃ লাঁদা তেঁনাঃ তাঁহে কানা
             মেনখান বৗঞ লাঁদা দাড়ে আকাওদা।
    চেদাঃ সে বাং আ ̶ সিরজনানিজ্ দ
             ইঞ লৗগিৎ বাখরা নেহাল হট কাতে
                      অকাতে চয় সেন্ আৎ আকানা।
    ইঞ দ হয় মলং রে তিঁগুকাতে
    নিরৗট্ কেটেজ্ অৎ বাং তেঞ
                               অটাঃ বাড়ায়্ কানা।

    ইঞাঃ ঝিলৗঃ তেনাঃ তাঁহেকানা,
             মেনখান্ বৗঞ ঝিলৗও দাড়ে আকাওদা।
    ইঞাঃ দুলৗও তেনাঃ তাঁহেকানা
             মেনখান্ বৗঞ দুলৗও দাড়ে আকাওদা।
    চেদাঃ সে বাং আ সুকৗল তেয়ার আনিজ্ দ
    ইঞ লৗগিৎ সানামাঃ তেয়ার হট -কাতে
                      অকাতে চয় সেন্ আৎ আকানা।
    অনাতে অৗমরৗও আন হড় দ
                      অকয় চয় ঝিলৗও জং কানা।
    ইঞ দ তপাঃ ছিঁডৗল বাবের লেকা
    দারে ডৗররেঞ ঘুঁড়চি বাডায় কানা।

    ইঞ মা দাঁড়ান সানা লিঁদিঞা
    সতাল ঘোল বির বুরু আঞ্চার করে,
    অকারে তাসে মেনাঃ, নেহাল অৎরে,
                      রাদ্ বাদ্ রহড় সাকাম,
                               কল্সা তালোমায় ইঞাঃ জাঁগা।
    আর বাংখান—মুইদৗন মেলান টাঁডিরে
    গিতিচ্ জিরৗঃ বুঝৗও লিদিঞা, দারে উমুলরে
             ফৗ্রয়ৗ লৗগিৎ যুগ রেনাঃ তাড়াম লাঁগা।

    মেনখান অকয়াঃ সিঁয়াজৗ্রি আড়াং তে-চ-
    লাঁগা জিরৗও হড়ম দ লামজাগঃ কানা,
             বায় থৗইথিতি হচ আঞ কানা রিহিট গৗদি ঠাঁও।

    বাডায়ৗঞ সিরজনিয়ৗ দ বায় এড়েয়া
             বায় এড়েঞা—
    অনাতে জিউয়ী জিয়ৗড় আঁসরে মিনৗঞা।
    ইঞাঃ পৗৎয়ৗও মেনাঃ আ
             উনি দ মিৎ দিন হিলঃ এ রুওয়ৗড় হিজুঃ আ।
    তেহেঞ গাপা বাং রেহঁ
                      মিৎটাং জিয়ন রেয়া যুগ্রে।

    ইঞ লৗগিৎ তে গল্ গল্তে
    মুহ্নি বেড়হায় ঠাঁও এ গার হট আঞা।
    অঁডে দ, লালচিয়ৗ - সিবড়িয়ৗ - সিঁয়ৗজৗরি আন হড়াঃ
    ঠাঁও দ একাল বাং তাঁহেনা।
    অনাতে উনিয়াঃ রুওয়ৗড় হিজুঃ কয়ঃ হররে
                      নিত্ হঁ মেনাঞ গেয়া।

    ভাবানুবাদঃ || আজও পথ চেয়ে বসে আছি ||

    (ভাবানুবাদক—সারিধরম)


    আমার বলার ছিল কিন্তু বলতে পারি নি
    আমার হাসার ছিল কিন্তু হাসতে পারি নি।
    কেন না, আমার সৃষ্টিকর্তা আমার জন্য
    বখরা রেখে দিয়ে কোথায় যেন চলে গেছে।
    সে সুযোগে কারা যেন ভাব-ভালবাসাকে
    হাতিয়ে নিয়েছে। আমি বাতাসের কপালে দাঁড়িয়ে
    শূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছি।

    আমার দোলনা ছিল কিন্তু দুলতে পারি নি
    আমার ঝুলনা ছিল কিন্তু ঝুলতে পারি নি।
    কেন না আমার সুখময় সৃষ্টিকর্তা আমার জন্য
    বিনোদনের সমস্ত কিছু রেখে দিয়ে কোথায় যেন চলে গেছে।
    সেই সুযোগে সুযোগ সন্ধানী কারা যেন আমার
    বিনোদনের দোলনায় দুলছে।
    আমি যেন— ডালে বাঁধা ছিন্ন দড়ির মতো
    সাতপাকে ঘুরছি।

    আমি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে চেয়েছিলাম
    শুনতে চেয়েছিলাম পদদলিত শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি।
    খুঁজেছিলাম ক্লান্ত শরীরকে উজ্জীবিত করার জন্য
    একটি ছোট্ট গাছের শীতল ছায়া।
    কিন্তু আমি পারি নি।
    কারা যেন আমার অস্তিত্বের স্থান গুলিকে নষ্ট করে ফেলেছে।
    আমি জানি আমার সৃষ্টিকর্তা মিথ্যার বশে বশবর্তী হয়ে
    আমাকে ছলনা করবে না।
    সে একদিন ফিরে আসবে।
    গড়ে তুলবে নিরিবিলি বাসস্থান, যেখানে হিংসা-ব্যভিচার
    অনাচার-রাহাজানি থাকবে না। আমি সেই বিশ্বাস নিয়ে
    আজও পথ চেয়ে বসে আছি।

    ১. সাহিত্য-ভাবনা

    সারিধরমের রচনায় প্রকৃতি, প্রাণী, বিমূর্ত রূপক কল্পনা প্রভৃতি ছাড়াও বিশেষতঃ খেটে-খাওয়া মানুষের জীবনযুদ্ধের কথা চিত্রিত হয়েছে। ‘ইঞাঃ আঁশ’ কবিতায় গরম বালিতে ফুঁ দিয়ে ধরাতল শীতল করার অসম্ভব প্রয়াসের মধ্যে সেতুবন্ধে কাঠবিড়ালীর অবদানের কথা মনে পড়ে যায়। বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্কটকালে পৃথিবীবাসীর কাছে এই আকুতিই আকাঙ্ক্ষিত। এখানে কবির আরও আশা—গরিব মানুষের জীবনে দুঃখময় অন্ধকার দূর হয়ে সুখ-শান্তি ও ভালবাসার আলো প্রজ্বলিত হোক।

    'পালেন' কবিতাটি, যতদূর কবির মনে পড়ে, পাঁচ-ছয় বছর আগের রচনা। এর মধ্যে রোমান্টিক কল্পনা আছে। সেই সঙ্গে আধ্যাত্মিক অনুভূতির স্পর্শও রয়েছে এই কবিতায়। এখানে 'দুলৗড় তাম দ' অর্থাৎ 'তোমার ভালবাসা' শব্দগুচ্ছে উদ্দিষ্ট প্রিয়জনের ভালবাসার কথাই বলা হয়েছে। এই প্রিয়জন লৌকিক জগতের প্রেমিক-প্রেমিকা, পিতৃ-মাতৃস্থানীয়, ভ্রাতৃ-ভগিনীস্থানীয় যে কেউ কিংবা ঈশ্বরও হতে পারেন। কবি চেয়েছেন পরিবেশের সমস্তকিছুর প্রতি ভালবাসাকে আত্মস্থ করতে। পাঠকদের মধ্যেও লুকিয়ে থাকা ভালবাসা উৎসারিত হোক—এই মনোভাব নিয়েই কবিতাটি রচিত।

    'এহো দিনৗম খাটাও হড়' খেটে খাওয়া মানুষের দৈনন্দিন দুরবস্থাকে ভাগ্যের লিখন বলে ধরে নেওয়া হয়। নিজেদের অধিকারের কথা তাঁরা ভুলে গিয়েছেন। কবি তাঁদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা যেসব যন্ত্র-পাতি নিয়ে প্রতি দিন পরিশ্রম করে তার প্রকৃত দাম পায় না। 'বিধাতার লিখন' ভেবে এই বঞ্চনার প্রতিবাদও করে না। ভাগ্যের ফল মেনে না নিয়ে পুরুষকার-এর প্রচেষ্টায় স্বীয় অধিকার অর্জনে ব্রতী হোক 'দিনৗম খাটাও হড়' বন্ধুগণ। কবির এই আহ্বান উপনিষদের 'উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান্ নিবোধত'-র সঙ্গে তুলনীয়। এই কবিতা কবি নজরুলের 'কুলি' কবিতাকেও মনে করিয়ে দেয়।

    'আপিন তুলৗ জখা' কবিতায় সমগ্র মানব সমাজে প্রতিটি মানুষের আত্মসমীক্ষার কথা বলা হয়েছে। পরছিদ্রান্বেষী মানুষ নিজের দোষকে আড়াল ক'রে অপরের দোষ খুঁজতেই ব্যস্ত থাকে এ যেন ছিদ্রবহুল চালুনির সূচের ছিদ্র খুঁজে বেড়ানো। উপরন্তু মানুষ নিজের গোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে কলহে লিপ্ত থাকায় বৃহত্তর জীবন-যুদ্ধে অর্থাৎ স্বীয় অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এগিয়ে আসতে পারছে না। গোষ্ঠী-হিংসার ভিন্নতায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে একাত্মতার অভাবে বৃহত্তর গোষ্ঠীর পরিসংখ্যান কমে যাচ্ছে। তাই প্রত্যেকের 'আপিন তুলৗ জখা' অর্থাৎ আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন।

    'নেহর' কবিতায় চাঁপা ফুলের মধ্যে এক রঙীন মানসিকতা লুকিয়ে রয়েছে। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে যেমন নিজের দুঃখ জ্বালা ঘুচে যায় ফুলের সংস্পর্শেও তেমনি। অথচ এখানে ফুলকে দোষী করা হচ্ছে। কবির প্রিয় সঙ্গিনী ফুলের মতোই গন্ধ বিলোত। প্রিয়া-হারা প্রেমিক কোনোকিছুকে আঁকড়ে ধ’রে বাঁচতে চায়। এখানে চাঁপা ফুলের মধ্যেই তাঁর সঙ্গিনীকে খুঁজে পেতে চান।

    'হেঁদে কলগা' (কালো মুকুট) কবিতাটিও একটি রূপক কবিতা। 'কালো মুকুট' হল মানুষের অহঙ্কারের প্রতীক। তা হল কিলবিলে বিষাক্ত পোকার মতো। উর্বর জমিতেও উত্তম ফসল উৎপন্ন হয় না যদি চাষীর দক্ষতা না থাকে। অহঙ্কার শুধুই মিথ্যে কথার ফুলঝুরি ওড়ায়। কবিতার 'তেজান অৎরে ফুকটৗ ইতৗ' পড়তে পড়তে পবিত্র বাইবেল-এর ‘প্যারাবল্ অব দ্য শোয়ার' গল্পটি মনে পড়ে যায়। আসল কথা হোল, দাম্ভিক মানুষ কখনোই সঙ্কট সমাধান করতে পারে না।

    'কয়ঃ হররে নিত হঁ মিনৗঞ গেয়া' (আজও পথ চেয়ে বসে আছি) ̶ ২০০৮ সালে রচিত এই কবিতায় কবি বলতে চেয়েছেন যে নতুন নতুন আকাঙ্ক্ষা সব সময় সফল হয় না—নানারকম ঘাত-প্রতিঘাতে ঈশ্বরের সাজানো বাগান কে যেন আত্মসাৎ করে ফেলেছে—আমার বলে আর কিছু থাকছে না। মানব সমাজের প্রত্যেকের প্রতিভূ হয়ে কবি বলতে চান—এই কবিতা যখন যে পড়বে তখন কবিতার কথাগুলি তার নিজস্ব বক্তব্য হয়ে যাবে। [কবিতাটি মেদিনীপুরে সাহিত্য একাডেমির বহুভাষার কবিসম্মেলনে পঠিত]।


    ১.১. অলঙ্কার-বিলাসঃ

    অলঙ্কার-শাস্ত্রের তাত্ত্বিক গভীরতায় প্রবেশ না করেও আলতো নজরে ধরা পড়ে—সারিধরমের কবিতায় শব্দালঙ্কারের মধ্যে অনুপ্রাসের ছড়াছড়ি। ‘ইঞাঃ আঁশ’ প্রথম চরণে ‘ধ’, ‘ত’ ও ‘ল’-এর অনুপ্রাস; দ্বিতীয় স্তবকে ‘চ’, ‘আও-য়ৗও’ এবং ‘ম’-এর; শেষ স্তবকে ‘রিলৗমালা’ (ল), ‘রৗপুৎ কাঁত্’ (ত), ‘ইঞ দঞ’ (ঞ)- অনুপ্রাস প্রকট। 'পালেন' কবিতায় ̶ 'আঁজলে আতাং কাতেঞ' ̶ (আ, অনুনাসিক ধ্বনি এবং ত), 'পালেন পটকজ্' (প), 'আলে সামাং সারে বাড়গে সিয়ৗড় খন' (স)! 'এটেৎ এসেৎ' (ৎ), 'কেটেজ্ কিয়ৗং' (ক), 'অন্তর তাঁহে কঃ তিঞ' (ত), 'মনে মগন' (ম, ন), 'পৗরসি তাম দ পালেন ̶ (প), সাঁওহেৎ অৗরসি কঃ আ?/ সনের সুতৗম তেগেঞ বৗধি তলকে' ̶ (র, স, ত), 'কড়াম ...কচা (ক)'। 'দিনৗম খাটাও হড়' কবিতায় ̶ 'হুদিস দিসৗ (দ, স)', 'সুয়ৗ হিঁসৗ' (স), 'চেৎ এ চিকৗ আকাৎ (চ, ক, ৎ), সুকতেম সুকৗল' (স, ক), 'আৎ এৎ' (ৎ)। 'নেহর' কবিতায়—‘দঁগয় দঁগয়’(দ গ য় ̶ দ্বিরুক্ত), 'সঁধাড় সতায় সালাগঃ' (স), 'আলম আঁধাঞ' (আ), 'দ দিনি' (দ), 'অনে ... মনে' ̶ (ন ̶ চরণের মধ্যে ও অন্তে মিল), 'দ ... দানাং' (দ), 'হেঁদে কলগা' কবিতায় ̶ 'গরব রেনাঃ ... মচংরে' ̶ (র),'আকা মেনাঃ আড়াঃ আলগা' ̶ (আ), 'লাড়া আ হালায় হালায় হয়তে' ̶ (ল, হ), 'বিকিৎ বিকিৎ' ̶ (ক, ৎ), 'কালহা কুদুম কৗহনি' ̶ (ক, হ), 'সিরিজঃ আ জারপা জারপা ... জাপুৎ জাপুৎ' ̶ (জ, র, প, ৎ), 'সাহার সকড়ারে' ̶ (স র), 'সেটের সিদিয়া' ̶ (স), এবং 'কয়ঃ হররে নিত হঁ মিনৗঞ গেয়া' কবিতাটিতে ̶ 'রড় তেনাঃ তাঁহে কানা ... রড় দাড়ে' ̶ (র, ড়, ত, ন)', 'আৎ আকানা' ̶ (আ), 'অকয় চয়' ̶ (অয়)', 'দারে ডৗ্ররেঞ ̶ (র)', 'বির বুরু' ̶ (ব, র), 'রাদ বাদ রহড়' ̶ (র, দ), 'মুইদৗন মেলান' ̶ (ম, ন), 'বায় এড়েয়া বায় এড়েঞা (ব', য়, এ, ড়)। 'জিউয়ী জিয়ৗড়', 'জিয়ন রেয়া যুগরে' ̶ (জ,য়), 'গল গলতে', 'লালচিয়ৗ সিবড়িয়ৗ সিঁয়ৗজারি' ̶ (ল, স, ইয়ৗ)।

    সাহিত্য-ভাবনায় শব্দালঙ্কারের পর আসে অর্থালঙ্কারের কথা। আর বিভিন্ন অর্থালঙ্কারের মূলে আছে উপমা (simili)। উপমা অলঙ্কারের উপাদান ̶ উপমেয়, উপমান, সাধারণ ধর্ম ও সাদৃশ্যবাচক শব্দ। উপমান নির্বাচনে কবির বিশেষ কুশলতা লক্ষ্য করা যায়। ‘ইঞাঃ আঁশ’ কবিতায় স্বল্প জলে খাবি খাওয়া ‘ডৗঁড়কৗ হাকো’ (দাঁড়িয়া মাছ) আর পরিশ্রমী ‘হেঁদে লোবোঃ মুউচ্’ (কালো ক্ষুদে পিঁপড়ে)-র রূপক-এর মোড়ক থেকে বেরিয়ে এসেছে সচ্ছলতার অভাবক্লিষ্ট দরিদ্র মানুষের মিছিল। ‘পালেন’ কবিতায় মানসীর 'দুলৗড়' (ভালবাসা) কবির উঠানে (ফুল হয়ে) ঝরে পড়ার আশা করেছেন কবি, কিন্তু 'বাহা' (ফুল) ̶ এই উপমান শব্দটির উল্লেখ নেই ; এই দৃষ্টিতে এটি 'লুপ্তোপমা' অলঙ্কারের উদাহরণ হতে পারে; তবে ভালবাসা আর ফুলের অভেদ আরোপিত হওয়ায় এটি রূপক - অলঙ্কারের উদাহরণ হয়েছে। অনুরূপ ভাবে প্রেয়সীর 'চরক' (রূপ) আর 'রাকাব '(চারা), 'কড়াম পাঁজরা জাং' (বুকের হাড়) আর 'আরন' (বেড়া), 'মুলুচ' (মুচকি হাসি) আর 'দুলৗড় ডিবরি সুলতৗঞ জেরেৎ মারশাল' (প্রেমপ্রদীপের পলিতার আলোর ঝলক), পৗরসি'(ভাষা) আর 'অৗরসি' (আয়না),'সনের' (স্নেহ) আর 'সুতৗ্ম'(সুতো) একাত্ম হয়ে রূপক অলঙ্কারের সৌন্দর্য বিস্তার করেছে। উপমান নির্বাচনে কবি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিচরণ করেছেন মানুষের 'গরব' (অহঙ্কার)-কে 'বিকিৎ বিকিৎ (বিষাক্ত কিলবিলে পোকা)-র মতো মনে করেছেন (ক. ৫)। কখনো নিজেকে 'ছিঁডৗল বাবের' (ছিন্ন দড়ি)-র সঙ্গে তুলনা করেছেন (ক. ৬)।


    ১.২. ছন্দ-বিচারঃ

    সাঁওতালীভাষায় যদিও ছন্দতত্ত্ব তেমন বিকাশ লাভ করে নি, বাংলা মাধ্যমে শিক্ষালাভের ফলে বাংলা কবিতার ছন্দের প্রভাব সারিধরমের কবিতায় থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। ' ইঞা: আঁশ' কবিতার চৌদ্দ চরণে কবি মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রভাব পড়েছে। 'পালেন' কবিতার চারটি স্তবকের প্রতিটিতে প্রথম- তৃতীয় ও দ্বিতীয়-চতুর্থ চরণে অন্ত্যমিল রয়েছে। 'এহো দিনৗম খাটাও হড়' শীর্ষকটি আসলে কবিতার ধ্রুব-পদ। এই চরণটি ছাড়াও প্রতি স্তবকে চারটি করে চরণ রয়েছে, তাদের তিনটিতে পরস্পর অন্ত্য-মিল (ব্যতিক্রম - দ্বিতীয় স্তবকের তৃতীয়চরণের 'নিরৗই' পদে অমিল)। প্রতি স্তবকের চতুর্থ চরণটি ধ্রুবপদের সঙ্গে অন্ত্য-মিল-যুক্ত। 'অৗপিন তুলৗ জখা' কবিতার তিনটি স্তবক। প্রতিটিতে ছয়টি করে চরণ। প্রতি স্তবকে প্রথম দুই চরণে, তৃতীয় ও ষষ্ঠচরণে এবং চতুর্থ ও পঞ্চম চরণে অন্ত্য-মিল। 'নেহর' কবিতার আটটি চরণের একমাত্র স্তবকে প্রথম দ্বিতীয় ও চতুর্থ চরণে, তৃতীয় ষষ্ঠ ও অষ্টম চরণে অন্ত্যমিল এবং পঞ্চম ও সপ্তম চরণে কেবল স্বরান্তমিল। 'হেঁদে কলগা' কবিতার ১২টি চরণের ১-২, ৩-৪, ৭-৮, ১০-১২ চরণে অন্ত্য-মিল; ৫, ৬, ৯, ১১ নং চরণে অন্য কোন চরণের সঙ্গে মিল নেই। 'কয়ঃ হররে নিত হঁ মিনৗঞ গেয়া' কবিতার প্রথম স্তবকে ১০টি চরণ। ১-৩ -৭-১০, ২-৪ অন্ত্য-মিল-যুক্ত। দ্বিতীয় স্তবকে ১১ টি চরণের ১, ৩, ৭, ৯, ১১ পরস্পর অন্ত্য-মিল-যুক্ত। প্রথম ও দ্বিতীয় স্তবকের ২, ৪ পরস্পর অন্ত্য-মিলযুক্ত। দ্বিতীয় স্তবকের ১, ৩, ৫, ৭, ৯ চরণে পরস্পর অন্ত্যমিল রয়েছে। তৃতীয় স্তবকে ২, ৩, ৬ চরণে অন্ত্যমিল দেখা যাচ্ছে। শেষ দুই স্তবকে কিছু স্বরান্ত-মিল দেখা গেলেও কবির ইচ্ছাকৃত মিল বলে মনে হয় না। আসলে সম্পূর্ণ কবিতাটিই বাংলা আধুনিক কবিতার মতো।

    ২. ভাষা-ভাবনাঃ

    ২. ১. ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology):

    ২. ১. ১. ধ্বন্যন্তর (Transformation of sound):

    ২. ১. ১. ১. স্বরান্তর ̶ তেহেঞ - তিহিঞ। [ক. ৭] মিনৗঞ - মেনৗঞ। সারি -সৗরি.

    ২. ১. ১. ২. আদি-স্বরলোপ ̶ 'কুর
    ২. ১. ১. ৩. মধ্যস্বরাগম / স্বরভক্তি ̶ গরব
    ২. ১. ১. ৪. দীর্ঘায়ন ̶ জানাম
    ২. ১. ১. ৫. ব্যঞ্জনাগম ̶ খৗলিম
    ২. ১. ১. ৬. ল-কারায়ন/তরলায়ন ̶ Liquidation: [ক. ৬] লাড়াঃ
    ২. ১. ১. ৭. সন্ধি (Euphonic Combination): [উত্তম ও মধ্যম পুরুষের শব্দ 'ইঞ' এবং 'আম' অন্য যে কোনো পদের সঙ্গে সন্ধিবদ্ধ হয়, কিন্তু অন্বিত হয় বাক্যের যথা-স্থানে।]

    [ক. ১] আকাদৗঞ = আকাদৗ + ইঞ। দঞ = দ + ইঞ। [ক. ২] কাতেঞ = কাতে + ইঞ। জাংতেঞ = জাংতে + ইঞ। কিয়ৗঞ = কিয়ৗ + ইঞ। সুলতৗঞ = সুলতৗ + ইঞ। তেগেঞ = তেগে + ইঞ। রেগেঞ = রেগে + ইঞ। [ক. ৩] গদাম = গদা + আম। বাচম = বাং + চম। [ক. ৪] গেম = গে + আম। রেম = রে + আম। বাম = বাং + আম। সুকতেম = সুকতে + আম। কানাম = কানা + আম। বৗঞ = বাং + ইঞ (ক. ৬)। [ক.-৫] ডৗররেম = ডৗররে + আম। গটাম = গটা + আম। আঁধাঞ = আঁধা + ইঞ। [ক. ৭] মিনৗঞ/মেনৗঞ = মিনৗ/মেনৗ + ইঞ। বাংতেঞ = বাংতে + ইঞ। ডৗররেঞ = ডৗররে + ইঞ। বাড়ায়ৗঞ = বাড়ায়ৗ = ইঞ।

    ২. ১. ২. স্বরসংহতি (Vowel Combination): অন্যান্য ভাষার মতোই সাঁওতালীতেও পরপর একাধিক স্বরধ্বনি সমন্বিত শব্দ বর্তমান। এখানে অর্ধস্বর (semi vowel) অন্তঃস্থ-য় (y) ধ্বনিটিও একটি স্বররূপে গ্রাহ্য। হসন্তযুক্ত অন্তস্থ-য়্-তে পূর্ণ-স্বর জোড়া থাকলে একটি অক্ষরকেও গণনায় দুটি স্বর ধরা হয়েছে।

    ২. ১. ২. ১. দ্বিস্বর (Diphthong):

    য়া ̶ [ক. ১] বারয়া।
    য়ৗ ̶ [ক. ৩] কাখয়ৗ।
    অয়্ ̶ [ক. ৪] বয়হা; [ক.-৫] দঁগয়, হচয়; [ক.-৭]; চয় [ক.-৬, ৭] হয়।
    অৗয়্ ̶ [ক. ৩] রিকৗয়।
    অৗই্ ̶ [ক. ১] সৗগৗই, [ক. ২] নিরৗই; [ক. ৩ ,৪, ৬] অৗইদৗর, কুড়ৗই, লৗড়হৗই; [ক. ৪] কৗই; [ক. ৭] থৗইথিতি।
    অৗও্ ̶ [ক. ১] চিলবিলৗও; [ক. ২] উদ্গৗও; [ক. ৬] আনৗকৗও; [ক. ৭] জিরৗও। ঝিলৗও, দুলৗও, অৗমরৗও, বুঝৗও।
    আয়্ ̶ [ক. ৩] বেড়হায়, দাঁড়ায়; [ক. ৫]; তায়; [ক. ৬] হালায় হালায়; [ক. ৭] বায়, বেড়হায়, বাড়ায়।
    আও্ ̶ [ক. ১] বাঞ্চাও, উড়মালাও, আনমানাও; [ক. ২] ঝাঁড়গাও, ঝালকাও, সাঁওহেৎ; [ক. ৩] খাটাও, জাগাও, ধাসাও; [ক. ৪] সাঁওহেৎ [ক. ৫] আঁৎকাও, তাঁড়খাও; [ক. ৭] আকাওদা।
    উই ̶ [ক. ৭] মুইদৗন।
    এয় ̶ [ক. ৫] গাতেয়।
    ওয়্ ̶ [ক. ৫] ওকো।
    ওআ ̶ [ক. ২] নোআ।

    ২. ১. ২. ২. ত্রিস্বর (Triphhthong):

    অয় ̶ [ক. ৭] কয়ঃ।ক
    অয়া ̶ [ক. ৭] অকয়াঃ।
    আয়ৗ ̶ [ক. ৭] বাড়ায়ৗঞ।
    য়ৗও্ ̶ [ক. ১] ছিৎয়ৗও; [ক. ৭] পৗৎয়ৗও, ফৗরয়ৗও।
    ইয় ̶ [ক. ২, ৭] জিয়ন।
    ইয়ৗ ̶ [ক. ২] কিয়ৗঞ; সিয়ৗড়, [ক. ৪] হানিয়ৗ; [ক. ৭] সিরজনিয়ৗ, ৄ লালচিয়ৗ, সিবড়িয়ৗ, সিঁয়ৗজৗরি।
    ইয়া ̶ [ক. ৬] উনিয়াঃ, গিডিয়া, সিদিয়া।
    উয়ৗ ̶ [ক. ৩] সুয়ৗ
    এয়া ̶ [ক. ১] রেয়াড়ঃ; [ক. ২] কেয়া; [ক. ৭] গেয়া, এড়েয়া, তেয়ার।

    ২. ১. ২. ৩. চতুঃস্বর (Tetraphthong):

    আওয়া ̶ [ক. ৩] কাওয়াৎ।
    ইয়ৗও ̶ [ক. ৬] জিয়ৗও।
    ইউয়ী ̶ [ক. ১, ৭] জিউয়ী।
    উওয়ৗ ̶ [ক. ১] খৗটুয়ৗ [ক. ২, ৭] দুওয়ৗর; [ক. ৬] রুওয়ৗড়

    ২. ২. শব্দ-তত্ত্ব (Morphology):

    ২. ২. ১. অনুসর্গঃ কাতে - অসমাপিকা ক্রিয়া, লাগিৎ - নিমিত্তার্থক,

    ২. ২. ২. বিভক্তিঃ অপাদান বিভক্তি (Ablative Case-ending) - খন = থেকে, হতে। সম্বন্ধ বিভক্তি Possessive Case ending)- আঃ, রেন, রেনাঃ । অধিকরণ-বিভক্তি (locative case-ending) - রে, রেন, রেগে।

    ২. ২. ৩. ভাষা-বিশ্লেষণঃ

    [ক. ১] ইঞাঃ = আমার। তেঁগো কাতে = দাঁড়িয়ে। লল = গরম। ধিপৗং = ঢিপি, ঢের। ইঞ = আমি। অং = ফুঁক। আকাদৗঞ = দিয়েছি। বারয়া = দুটি। লুটি = ঠোঁট। ফাদা কাতে = ফাঁক করে। রেয়াড়ঃ = শীতল। মা = হোক। বাঞ্চাও হচ আন ক = বাঁচতে দাও। কৗটিজ্ = অল্প। তালাং = মধ্যে। দাঃ = জল। রেন = রে = এ বিভক্তি locative)। চিলবিলৗও = কিলবিল করে। ডৗঁড়কৗ = দাঁড়িয়া। হাকো = মাছ। খাটয়ৗ = খেটে-খাওয়া, মজুর। হেঁদে = কাল। চিলবিলৗও = কিলবিল করে। ডাঁড়কৗ = দাঁড়িয়া। হাকো = মাছ। খৗটুওয়ৗ = খেটে-খাওয়া, মজুর। হেঁদে = কাল। লোবোঃ = কুঁড়োর মতো খুদে। মুউচ্ =পিঁপড়ে। ফারকও ছিৎয়ৗও হচ আন উড়মালাও দুলৗড় = প্রিয়, প্রেম। অৗনৗড়ি = অপরিচিত, অনভিজ্ঞ। মৗনমি = মানুষ। মনে = মনে। জীউয়ি রেনাঃ = বেঁচে আছে। রিলৗ মালা =পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। উপুরুম চিপিনৗহৗপ = চেনা-পরিচয়। সৗগৗঈ হচ আন = সখ্য। মিৎ = এক। খুঁদড়ি = কুঁড়ে ঘর, ছোট কামরা। রৗপুৎ = ভাঙা। কাঁত্ = দেওয়াল। দানাং = আড়ালে। তেরদেজ্ = জ্যোছনা। লেকা = মতো (তু. ইং. like, আ. বাং. লেখান )। ইঞদঞ = আমি তো। খজ কানা = খুঁজছি। বোরকেতঃ মা = উৎপন্ন হোক। আনমানাও = আবেগময়।

    [ক. ২] পালেন = যদি। তাম অর্থাৎ আম = তুমি। দ = আলঙ্কারিক অব্যয় রূপে ব্যবহৃত, বাংলার নিশ্চয়ার্থক 'ই' বা 'বটে' এবং ইংরেজী the-র সঙ্গে তুলনীয়। তাম দ = তোমার। ঞুরু = পড়ানো বা পাড়া (পাতন অর্থে ণিজন্ত ক্রিয়া, বা সাধারণ ক্রিয়া)। কঃ আ = ভবিষ্যৎ বিভক্তি। ঝাঁড়গাঁও ঞুরু কঃ আ = ঝরে পড়বে। আলে = আমাদের দুজনের। ছাটকা = জায়গা। দারে = লাফাং = উপরে। ডৗর = গাছের ডাল। খন = হতে, থেকে (অনুসর্গ)। আঁজলে = অঞ্জলি। আতাং = নেওয়া। কাতেঞ = করে (সমাপিকা ক্রিয়া)। আতাং কাতেঞ = ভরে নিয়ে। লকা = লুফে নেওয়া। দারাম কেয়া = পড়তে না দেওয়া। আটেৎ অসার = বিছানো। কিয়ৗঞ = করে। (সন্ধিবদ্ধ 'ইঞ','আম' বাক্যের যথা স্থানে অন্বিত)। নোআ = আমার। । চরক = সুন্দর চেহারা। পটকজ্ = পং [অঙ্কুর]। রাকাব্ কঃ আ = হয়ে উঠবে। সামাং = সামনে, মুখোমুখি। বাড়গে সারে = কোনো উর্বর জমির পাশে। কড়াম = বুক। জাংতেঞ = হাড়ে। এটেৎ এসেৎ কেয়া = জড়িয়ে ঘিরে রাখা। তেঁগো = দাঁড়ানো। কেটেজ্ = শক্তি। কিয়ৗঞ = পেয়েছি। আরন = বেড়া। মুলুচ্ = মুচকি হাসি। ঝালকাও = ঝলক। তাসে কঃ আ = মিলবে। অড়াঃ দুওয়ৗর = ঘরের দরজা। গানাডি = চৌকাঠ। ডিবরি সুলতৗঞ = ডিবার বাতির সলতে। জেরেৎ = ঝলকানো। মার্সাল (তু. বাং. মশাল
    [ক. ৩] এহো = সম্বোধন তু. বাং. ওহে। দিনৗম = দিন । খাটাও = খাটা। হড় = মানুষ। পাঠে = কাপড়। কেটেজ = বাঁধা। তেঁগোন মে মা = দাঁড়াও। দিল = হৃদয়, বুক। দাড়েতে = শক্তিতে। বেরেৎ মে মা = দাঁড়াও। তেয়ার = তৈরি। লৗগিৎ ̶ জন্য (তু. বাং. লাগিয়া)। তেঁগোয় মে মা = দাঁড়াও। জাগাও = জাগরণ। । হর = পথ। সাব মে = ধর। আমাঃ = তোমার। কৗখয়ৗ গাঁইতি (তু.বাং. কেঁখো)। সাবল = শাবল। চৗকলি = চাকলি (চাকার মতো গোলাকার বাহকের কাঁধের দু পাশে ঝোলে)। ঝাবা = ঝড়া [সামনে পেছনে দুজন শ্রমিকে দুহাতে বাঁশের হাতল ধরে মাল বওয়ার উপকরণ বিঃ। সঁবল = সম্বল। সির্জন মে মা = সৃষ্টি কর। নিরৗই = শান্ত, নিরিবিলি। উদ্গৗও উসৗস = উদ্বুদ্ধ/উজ্জীবিত কর। খঁড় = খণ্ড, অঞ্চল, গণ্ডি। তেয়ার এদাম = তৈরি করছ। উসুল = উঁচু। বুরু = পাহাড়। ধাসাও গদাম = ধসাতে পারবে। অৗইদার = অধিকার। মেনাঃ = আছে। জৗরিমে = বজায়। তেহেঞ = আজ। সনৎ = স্নেহ। রড় = কথা। হড়ম = শরীর। হারতা = চামড়া। জাং = হাড়। হড় লাগিৎৎ = মানুষের জন্য। গেম মাগেৎ = কাটছ। সামাঃ = খণ্ড খণ্ড। কৗচ হঁচ = কিছু। 'কুর = কই। বাচম = না। দামাঃ = মূল্য। তিস দ = কখন। আদম = দেবে। জোর = শক্তি।

    [ক. ৪] আম রেন = তোমারই লোক। সাঁওগেম = সাথে। লৗড়হৗই কানা = দ্বন্দ্ব করছ। অৗইদৗর = অধিকার। লৗড়হৗই রেম = সংগ্রাম থেকে। আয়ম আকানা = পিছিয়ে পড়েছ। পুচুজঃ কান = পুচকে যাওয়া। সানাম = সব। হুদিস
    [ক. ৫] রূপক অনড়হেঁ = রূপক কবিতা। নেহর = অনুযোগ। এ = সম্বোধন সূচক। চম্পা = চাঁপা। বাহা = ফুল। ডৗররেম বাহা আকান = ডালে যে ফুটে রয়েছ, আমাঃ রূপরে গাতেয় ঝালাকঃ কান = তোমার রূপের ঝলক ছড়াচ্ছ । স'মা দঁগয় দঁগয় = ছড়িয়ে। গটাম = গোটা। আঁৎকাও হচয় = ভরে যাচ্ছে। গাতে = সঙ্গে। সঁধাড় = সুবাস। স'তায় = সালাগঃ কান = মিশে গেছে। আলম আঁধাঞ মাসে = অজ্ঞাত। দিনি তিঞ সে = আমাকে দিয়ে দাও। তাঁড়খাও। মনতিঞ মনটা। আলম কৗঁহিস হচয় = বিরক্ত হয়ো না। উনি রেগে অনে = ওঁর কাছে। তপল আকান মনে = মনে বেঁধে গেছে। ঝালক তায় দ = ওঁর ঝলক। আলম দানাং ওকোয় = আড়ালে। লুকোবে না।

    [ক. ৬] কল্গা = মুকুট। দাহড়ি = পাগড়ি। মচং = চূড়া। সুন = শূন্য। আকা = দোলায়মান। আড়াঃ আল্গা = নাগালের বাইরে। লাড়াঃ = আন্দোলিত (তু. বাংলা- নড়া-চড়া।)। হালার = হল্কা। হয়তে =বাতাসে।বি কিৎ বিকিৎ = কিলবিল। বিদ্লৗই = বিস্তারিত। ফান্টিলঃ = ছড়িয়ে পড়া। কাল্হা (আঞ্চলিক বাংলা)= খুব কালো। কুদুম = ধাঁধা। কৗহনি = মিথ্যা কথার ফুলঝুরি। লুতুর = কান (তু.বাংলা -কানের লতি)। কিঁড়বিৎ = ঝালাপালা। সিরিজঃ = সৃষ্টি হওয়া (তু. সংস্কৃত সৃজন)। জারপা = সন্ধানমূলক অভিযান। বেড়হায় = অঞ্চলে, চারপাশে। জৗপুৎ জৗপুৎ = জড় অবস্থায়, প্রতিবন্ধকতায়। আনৗইকৗও = অনুভূতি। এর কঃ আ = ছড়িয়ে থাকা।সি = হাল/লাঙ্গল করা। লাহুৎ = কর্ষণ মাট। তেজান = উর্বর (তু. সংস্কৃত তেজোবান্)। অৎ = ভূমি,জমি,মাটি। ফুকটৗ ইতৗ = নষ্ট চারা। অমনঃ আ = উৎপন্ন। সেবেজ বুলৗন = জলের ধারা। সাহার সকড়ারে = কোন চাষজমির নাম। একেন = শুধু। ঝাড়া = নিষ্ফলা। কিতৗ = পালই পাতা যাদিয়ে তালাই/চাটাই তৈরি হয়। দিনৗম রেন = প্রতিদিনের। সিঁয়ৗজারি = অহঙ্কারী। কলসা = মাড়িয়ে। গিডিয়া =যাও। খাঁগট রেনা = অনটনে আসান = মাধান। অৗইদৗর = অধিকার। কুড়ৗই দ = অর্জিত। উকুর + কোই, কোথায়। তিসরে = কভু। বাংচম = না। সেটের = পৌঁছান। সিদিয়া = সিদ্ধি, সফলতা।

    [ক. ৭] রড় = কথা। তেনাঃ তাহেঁ কানা = ছিল। মেনখান বৗঞ রড় দাড়ে আকাওদা = বলতে পারিনি। লাঁদা = হাসি। চেদাঃ সে বাং আ = কেন না। সিরজনানিজ্ দ = সৃষ্টিকর্তা। ইঞ লাগিৎ= আমার জন্য। বাখরা = ভাগ। নেহাল = বিলিয়ে। হট কাতে = চলে গেছেন। অকাতে চয় সেন্ = কোন দিকে যে। আৎ আকানা। = হারিয়ে গেছেন। হয় = হাওয়া। মলং রে = কপালে। তিঁগুকাতে = দাঁড়িয়ে আছি। নিরৗট = নিখুঁত। কেটেজ্ = শক্ত। অৎ = মাটি। বাং তেঞ = না পেয়ে। অটাং বাড়ায় কানা = উড়ে/ভেসে বেড়চ্ছি। ঝিলৗঃ = ঝুলনা। ঝিলৗও = ঝুলতে। দুলৗও = দোলনা/দুলতে। সুকৗল = শুভ/সুন্দর সময় অর্থাৎ সুখ। তেয়ার = তৈরি/প্রস্তুত। আনিজ্ দ = করা ছিল। সানামাঃ = সমস্ত। অনাতে = সেজন্য। অৗমরৗও হাতানো। আন হড় দ অকয় চয় = অন্য কারা যেন। ঝিলৗও জং কানা = ঝুলছে। তপাঃ ছিঁডৗল = ছিন্ন ভিন্ন ডাল। বাবের = দড়ি। লেকা = মতো। দারে ডৗররেঞ = গাছের ডালে। ঘুঁড়চি বাডায় কানা =বাঁধা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।। ইঞ মা = আমি। দাঁড়ান = ঘুরেবেড়ানো। সানা লিঁদিঞা = ইচ্ছা ছিল। সতাল = শীতল। ঘোল = ঘোল। বির-বুরু = বন-পাহাড়। আঞ্চার করে = আঁচলের কাছে। অকারে = কোথায় ? তাসে = সে। মেনাঃ = আছে। নেহাল অতরে = উদার মাটিতে। রাদ্ বাদ্ = মর্মর। রহড় = শুকনো। সাকাম = পাতা। কল্সা = মাড়ানো। ইঞাঃ জাঁগা তালোমায় = আমার পা মাড়িয়ে যায়। আর বাংখান = আর নয় তো। মুইদান = ময়দান। মেলান = প্রশস্ত। টাঁডিরে = মাঠে। গিতিচ্ = ঘুমানো। জিরৗঃ = জিরানো। বুঝৗও লিদিঞা = বুঝেছিলাম। দারে উমুলরে = গাছের ছায়ায়। ফৗরয়ৗ = শ্রান্ত। তাড়াম = হাঁটা। লাঁগা = ক্লান্ত। মেনখান অকয়াঃ = কিন্তু কার? আড়াং তে-চ= সুরে। লাঁগা = ক্লান্তি। জিরৗও = বিশ্রাম। হড়ম দ = শরীরটা। লামজাগঃ কানা = নিথর, নিস্তেজ হয়ে যায়। বায় = নাই। থৗইথিতি = স্থিরতা(য়)। হচ আঞ কানা = থাকতে দিচ্ছে না। রিহিট = স্থায়ী। গৗদি ঠাঁও = অবস্থান। বাডায়াঞ = আমি জানি। সিরজনিয়ৗ দ = সৃষ্টিকর্তা। বায় এড়েয়া = ভুলাবেন না। বায় এড়েঞা = আমাকে ভুলবেন না। অনাতে = সেই হেতু। জিউয়ী = জীবনে। জিয়ৗড় = জীবনের ‌সুরক্ষিত স্হান। আঁসরে = আশায়। মিনৗঞা = আছি। পৗৎয়ৗও = বিশ্বাস। মেনাঃ আ = আছে। উনি দ = সে, উনি, তিনি। মিৎ দিন হিলঃ এ = এক দিন না একদিন অবশ্যই। রুওয়ৗড় = ফিরে। হিজুঃ আ = আসবেন। তেহেঞ = আজ। বাং রেহঁ = না হয়। গাপা = আগামীকাল। জিয়ন রেয়াঃ = জীবনের। যুগ্রে = সময়ে। গল্ গল্তে = (ফুর্তিতে) শিস্ দিতে দিতে। মুহ্নি = মোহিনী। বেড়হায় ঠাঁও এ = চারপাশে। গার হট আঞা = দাগ রেখে যায়। অঁডে দ = ওখানে। লালচিয়ৗ = লোভ। সিবড়িয়ৗ = শত্রুতা। হড়াঃ = মানুষের। একাল = একদম। ঠাঁও দ = জায়গা। বাং তাঁহেনা = থাকবে না।। অনাতে = তাই। উনিয়াঃ = তাঁর। রুওয়ৗড় হিজুঃ কয়ঃ হররে = ফিরে আসার পথে। নিত্ হঁ =এখনও। মেনাঞ গেয়া = চেয়ে আছি।

    ২. ২. ৪. শব্দ-ভাণ্ডার

    বাংলা ভাষার শব্দ-ভাণ্ডারের অনুসরণে সাঁওতালী ভাষার শব্দ-ভাণ্ডারকেও বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে ̶

    ২. ২. ৪. ১. মৌলিক শব্দঃ সারি ধরমের কবিতায় ব্যবহৃত যে-সব শব্দকে মৌলিকশব্দের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাতে কোনো কোনো শব্দের সঙ্গে অন্যান্য অস্ট্রো-এশীয় গোষ্ঠীর ভাষা ̶ মুণ্ডা, হো প্রভৃতি ভাষার শব্দের সাদৃশ্য থাকলেও থাকতে পারে। ঐ সব সমগোত্রীয় ভাষা গুলির সঙ্গে আদৌ পরিচিত নই। সেগুলি চিহ্নিত করার দায়িত্ব কোনো অনুরাগী গবেষক নিতেই পারেন।
    [ক. ১] ইঞ। তেঁগো কাতে। লল। ধিপৗং। অং। আকাদৗঞ। বারয়া। লুটি। ফাদা কাতে। রেয়াড়ঃ। মা। কাটিজ্। তালাং। দাঃ। রেন, রে। চিলবিলৗও। ডাঁড়কৗ। হাকো। খাটয়ৗ। হেঁদে। লোবোঃ। মুউচ্। ফারকাও। ছিৎয়ৗও। হচ আন ক। উড়মালাও। জীউয়ি। রেনাঃ। রিলৗ মালা। উপুরুম। চিপিনৗ হৗপ। সৗগৗঈ হচ আন। মিত্। রাপুৎ। দানাং। তেরদেজ্। লেকা। ইঞদঞ। খজ কানা। বোরকেতঃ মা। আনমানাও।

    [ক.-২] পালেন। আম। দ। ঞুরু কঃ আ আলে। ছাটকা। লাফাং। খন। আতাং। কাতেঞ। লকা। দারাম। কেয়া। আটেৎ। কিয়ৗঞ। নোআ। চরক। তাম। পটকজ্। রাকাব্ কঃ আ। সামাং। সারে বাড়গে। কড়াম। জাংতেঞ এটেৎ। এসেৎ। কেয়া। তেঁগো। কেটেজ্ [ক. ৪]। কিয়ৗঞ। আরন। মুলুচ্। তাসে। অড়াঃ। গানাডি। সুলতৗঞ জেরেৎ। মারসাল। তাঁহে কঃ। তিঞ। পৗরসি। সাঁওহেৎ। সনের। তেগেঞ। বৗধি। তলকে। তালা। টুমৗং। রেগেঞ। পটম। ওল্কে। ঝাঁড়গাও।

    [ক. ৩] এহো। দিনৗম। খাটাও। হড়। পাঠে। কেটেজ্। তেঁগোন। মে। মা [ক. ৪]। দিল। দাড়েতে।। বেরেৎ। সাব। তেয়ার। লাগিৎ। তেঁগোয়। হর। আমাঃ কৗখয়ৗ। সাবল। চৗকলি। ঝারা। কুডি। সঁবল। সির্জন নিরৗই। উদ্গাও। উসৗস। খঁড়। তেয়ার। এদাম। উসুল। বুরু। ধাসাও। গদাম। অৗইদার [ক. ৪]। অধিকার। মেনাঃ। জৗরিমে। তেহেঞ সনৎ। রড়। হড়ম। হারতা। জাং। হড়। গেম মাগেৎ। সামাঃ। কৗচ। হঁচ। 'কুর। বাচম। দামাঃ। তিস দ। আদম।

    [ক. ৪] জখা। রেন। সাঁওগেম। কানা। লৗড়হৗই। রেম। তায়ম। আকানা। পুচুজঃ। কান। সানাম। ঞেলেৎ। বৗড়িজ্। হৗনি। গে। চেতা। বেড়হায়। সিঁড়িজ। অমনঃ। অনাতে। উদ্গৗ। দাড়ায়। হৗনিয়াঃ। গেম। পাসরা। বাড়ায়। রেঁতায়। তপাঃ। বানাম। চেৎ। এ। চিকৗ। আকাৎ। বাম। রিকৗয়। খান। বাড়ায়। কৗই। কৗই আন। সোৎ। অঁডে। গে। অকারে? জালাৎ। আকৗৎ। বাম। দাড়ে। কাওয়াৎ। দুক্রে। বাং। লঃ। সুকৗল। আৎ। এৎ। কানাম। পৗরিস।

    [ক. ৫] অনড়হেঁ। নেহর। বাহা। বাহা আকান। গাতেয়। স। দঁগয়। আঁৎকাও। হচয়। গাতে। সঁধাড়। তায়। সালাগঃ। আলম। মাসে। দিনি। তিঞ। সে। তাঁড়খাও। কৗঁহিস। রেগে। অনে। তপল। আকান। দানাং। ওকোয়।

    [ক. ৬] দাহড়ি। মচংরে। হেঁদে। কলগা। একা। আড়া। হালায়। হয়তে। বিকিৎ। কিকিৎ। কুদুম। কিঁড়বিৎ। বেড়হায়। জারপা। জাপুৎ। আনৗইকৗও। এর। কঃ। লাহুৎ। অৎরে। অমনঃ। ফুক্টৗ। ইতৗ। সিঁয়ৗজৗরি। সৗরি। হঁম। কলসা। গিডিয়া। খাঁগট। তিসরে। বাং চম। সেটেজ্। সিদিয়া।

    [ক.-৭] কয়ঃ। হররে। মিনৗঞ/মেনাঞ।। গেয়া। ইঞাঃ। রড়। তেনাঃ। তাঁহে। মেনখান। বৗঞ। দাড়ে। আকাওদা। লাঁদা। চেদাঃ। সে। বাং। আ। ইঞ। লাগিৎ। বাখরা। নেহাল। হট। কাতে। অকাতে। চয়। সেন্। আৎ। আকানা। হয়। মলং রে। তিঁগুকাতে। কেটেজ্ অৎ। বাং তেঞ। অটাঃ। বাড়ায়। ঝিলৗও। দুলৗও। আনিজ্। সানামাঃ। অকাতে। চয়। সেন। আৎ। আকানা। অনাতে। অৗম্রৗও। অকয়। ঝিলৗও। জং। তপাঃ। ছিঁডৗল। ঘুঁড়চি। বাবের। লেকা। দারে। ডৗররেঞ। সিবড়িয়ৗ। একাল। রুওয়ৗড়। দাঁড়ান। সানা। লিদিঞা। বির। বুরু। ক। রে। তাসে। রাদ-বাদ। রহড়। সাকাম। ইঞাঃ জাঙ্গা। তালোমায়। কলসা। তাড়াম। লাঁগা। ফৗরয়ৗ। মেলান। টাঁডিরে। উমুলরে। গিতিচ্। বুঝাও। অকয়া। আড়াং। হড়ম। লামজাগঃ। বায়। রিহিট। গৗদি। অৗঞ। বাড়ায়ৗঞ।। বায়। এড়েয়া। বায়। এড়েঞা। মিনৗঞা। জিয়ৗড়। পৗতয়ৗও। মিৎ। রুওয়ৗড়। হিজুঃ। তেহেঞ। বাং রেহঁ। গাপা। মিৎটাং । গল্ গল্তে। আনহড়াঃ। উনিয়াঃ। হিজুঃ কয়। হররে।

    ২. ২. ৪. ২. তৎসম-শব্দঃ ̶ সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দী প্রভৃতি অন্যভাষার শব্দ অবিকৃত ভাবে সাঁওতালীতে ব্যবহৃত হলে সেগুলি সাঁওতালীর 'তৎসম' শব্দভাণ্ডারের অন্তর্ভুক্ত হবে। সারি ধরমের কবিতায় উপলব্ধ তৎসম-শব্দগুলি এখানে চয়ন করে দেওয়া হোল ̶
    [ক. ১] বালি। [ক.-২] অসার (
    ২. ২. ৪. ৩. অর্ধতৎসমঃ বিভিন্ন ভাষার শব্দ সামান্য ধ্বনি-পরিবর্তনের মাধ্যমে সাঁওতালীতে ব্যবহৃত হলে সেগুলিকে এই শ্রেণীতে রাখতে চাই। যেমন ̶

    [ক. ১] আঁশ
    [ক. ২] কাথা
    [ক.-৩] এহো (ধ্বনি-বিপর্যয়) বাংলা চাকার প্রভাবে।)। সঁবল
    [ক. ৪] অৗপিন
    [ক. ৬] সুনরে
    [ক. ৭] নিত (
    ২. ২. ৪. ৪. তদ্ভবশব্দঃ আকরভাষার একাধিক ধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে সাঁওতালীতে ব্যবহৃত হলে সেগুলি সাঁতালী শব্দ-ভাণ্ডারের তদ্ভবশ্রেণীতে গণ্য হতে পারে। সেমতে আলোচিত কবিতাগুলিতে ব্যবহৃত তদ্ভব শব্দগুলি হল ̶

    [ক. ১, ৩] ধৗরতি
    [ক. ৩] লৗগিৎ
    ২. ২. ৪. ৫. মিশ্র বা সঙ্কর-শব্দঃ [ক. ৪] সকতেম
    সংস্কৃত ও প্রতিবেশী ভাষার সদৃশ অথবা তৎপ্রভাব-জাত শব্দসমূহ তৎসম প্রভৃতি শ্রেণীতে সন্নিবেশিত হোল। কিছু আঞ্চলিক বাংলা শব্দ সাঁওতালীতে ব্যবহৃত শব্দের অনুরূপ সেগুলি কোন ভাষার প্রকৃত মৌলিক শব্দ তাও গবেষণার বিষয়। ধৗরতি, চিলবিলৗও, বাঞ্চাও, অৗপিন, লৗড়হৗই, হুদিস, দিসৗ, সুয়ৗ, হিঁসৗ, খৗলিম, উদমৗ, বাছাও, ভিনৗ, দুক, সুকৗল, ঝালাক, কাল্‌হা, কৗহনি, কাথা, সিরিজঃ, সিরজনিয়ৗ, জাঁগা, ঝিলৗও, দুলৗও, জিরৗও বুঝৗও, লালচিয়ৗ সিয়ৗড় (সাঁও.)/সিঁয়াড় (ঝাড়.), উনি (সাঁও./বাং.), প্রভৃতি শব্দগুলি অন্যভাষা থেকে সাঁওতালীতে এসেছে নাকি সাঁওতালী থেকে অন্য ভাষায় তা ঠিক বোঝা যায় না। এই সব শব্দের ক্ষেত্রেও 'তু.' সঙ্কেতটি ব্যবহার করেছি।


    উপসংহারঃ

    সাঁওতালী-ভাষা অস্ট্রো-এশিয় ভাষা-গোষ্ঠীর অন্তর্গত। এই ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে সাঁওতালী ভাষার কথকই সবচেয়ে বেশি - প্রায় ৬২ লক্ষ। ভারতীয় সংবিধানের বিরানব্বই-তম সংশোধন আইন ২০০৩-এ এই ভাষা সংবিধানের অষ্টম তপশীলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাষা ছিল অবহেলিত - অপাঙ্‌ক্তেয়। এই ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে চর্চা খুব কমই হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত তথা উদীয়মান কবি ও সাহিত্যিকদের সৃষ্টি অন্যান্য ভাষায় অনূদিত ও আলোচিত হলে তুলনামূলক সাহিত্য-চর্চা এক নতুন মাত্রা পাবে। পিছিয়ে থাকা এক জনজাতির সাহিত্যচর্চার মাধ্যমেই মানুষের 'সাহিত্য' সার্থক করতে সব ভাষার বিদগ্ধ আলোচকদের প্রতি আহ্বান জানাই। এই ভাষার সাহিত্য ও কিছু ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাঁওতালী ও বাংলাভাষার অনুরাগীদের পরিচয় করিয়ে দিতে আর সাঁতালী-ভাষার গবেষকদের এবিষয়ে অনুপ্রাণিত করতে আমার এই প্রয়াস। পাঠকদের ভালো লাগলে ভবিষ্যতে আবার সাঁওতালী কবিতা নিয়ে এরকম আলোচনার পরিকল্পনা রইল। *



    তথ্যসূত্রঃ

    ১। কবির সঙ্গে সাক্ষাৎকার।

    ২। বঙ্গীয় শব্দকোষ, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রথম খণ্ড - ১৯৬৬, দ্বিতীয় খণ্ড - ১৯৬৭, সাহিত্য অকাদেমি, নিউদিল্লী।

    ৩। ব্যবহারিক শব্দকোষ, কাজী আব্দুল ওদুদ, প্রেসিডেন্সী লাইব্রেরী, কলিকাতা, ঢাকা।

    ৪।https://www.google.co.in/search?source=hp&q=santali+language&oq=santali+language&gs_l=psy-ab.1.0.0l4.4316.13184.0.22856.16.16.0.0.0.0.496.4146.2-13

    ৫। https://en.wikipedia.org/wiki/Santali_language

    ৬। The Origin and Development of the Bengali Language, Vol.1 Rupa & Co.1985.



    * কবি সারিধরম সম্পূর্ণ প্রবন্ধটির প্রুফ সংশোধন করে দিয়েছেন।
    ** পরবাস-এর নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যদের ধন্যবাদ।





    অলংকরণ (Artwork) : ছবিঃ উইকিপেডিয়া থেকে
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)