ক্রিস্টিনা রসেটি (১৮৩০-১৮৯৪) ইংল্যান্ডের ভিক্টোরিয়ান যুগের মহিলা কবি, সময়ের নিরীক্ষা পেরিয়ে তিনি নিজস্ব দ্যুতিতে আজও ভাস্বর। সম্ভবত তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম তখন, পাঠ্য ছিল সিলভার বেল্স বলে একটি কবিতার সংগ্রহ, যার কাগজের গন্ধে অচেনা
সাগরপারের সুবাস। সেখানেই প্রথম পড়ি ক্রিস্টিনা রসেটির কবিতা, পদাবলী ধুয়ে গেছে অনেক শ্রাবণে, স্মৃতি আছে তার (বিষ্ণু দে): সারল্যে ও সৌন্দর্যে, বিদেশী ভাষায় অস্বচ্ছন্দ এক বালকের সামনে তিনি সেদিন অজানা একটা জানালা খুলে দিয়েছিলেন, মনে পড়ে।
বড় হয়ে আবার পড়েছি তাঁকে। জেনেছি সবুজ উদ্যানে প্রচ্ছন্নে বিচরণ করে বিষধর সাপ। বুঝেছি, তাঁর তীব্র দুঃখবোধ, পাপবোধ, যন্ত্রণায় আজীবন লীন হয়ে থাকা। তাঁর আকুল ঈশ্বরবিশ্বাস তাঁকে নিঃশর্তে টেনে নিয়ে যায় পরিত্রাতা যীশুর কাছে। ধর্মহীন নিরীশ্বর আমি সে পরিত্রাণে বিশ্বাস রাখিনা কিন্তু শতাব্দীর আড়াল পেরিয়ে মুগ্ধ হয়ে আজও পড়ি তাঁকে।
ক্রিস্টিনা রসেটির A Better Resurrection কবিতাটির একটি বঙ্গানুবাদ এখান রইল।
আমার নিজস্ব কোনো প্রজ্ঞা নাই, ভাষা নাই, অশ্রু নাই কোন
আমার হৃদয় আছে আমারই অন্দরে এক প্রস্তরের মতো শক্ত হয়ে
অসাড় সে হৃদি কভু জানেনি তো আশা কিংবা ভীতি
দক্ষিণে তাকাই আমি, তাকায়েছি বামে: কেহ নাই কোনখানে,
এই আমি দারুণ একাকী।
মেলিয়াছি আঁখি তবু, দুঃখভারে হইয়াছি ম্লান
অটল পর্বত আমি দেখিনাই স্বচক্ষে কখনো
আমার জীবন আমি দেখিয়াছি ঝরে পড়া বৃক্ষের পাতায়
প্রভু যীশু তুমি আজ ত্বরা কর অভাগীর তরে।
আমার জীবন আমি দেখিয়াছি চ্যুতপত্রে, ম্লান সব পাতাগুলি ভরি
আমার সমস্ত শস্য নষ্ট হয়, পড়ে থাকে খড়
অতীব সত্য কথা এ জীবন সংক্ষিপ্ত ও শূন্য তদুপরি,
বৈচিত্রবিহীন দিন মিশে যায় ধূসর সন্ধ্যায়
আমার জীবন যেন বরফের মতো আছে জমে
দেখিনাই ফুল কুঁড়ি, দেখিনাই সবুজ কদাপি
তথাপি উত্থিত হবে একদিন নবীন অঙ্কুর
প্রভু যীশু মম প্রাণে সেভাবেই তুমি আজ অঙ্কুরিত হও।
এই যে জীবন মম ভগ্নপাত্র সম
এই সেই পাত্র যাহা ধারণ করেনি কভু
একবিন্দু বারি মোর অতিশুষ্ক আত্মাটির তরে
আনেনি উষ্ণতা কভু শীতার্ত ওষ্ঠেতে আমার;
তবু এই ভগ্নপাত্র ধ্বংস হয়, সমর্পিত হয় হুতাশনে
সম্পূর্ণ গলিত হয়, আবার গঠিত হয় ভিন্ন কোন ছাঁচে
দ্যাখো সে হইয়া উঠে রাজকীয় পানপাত্র, কেবল তোমার জন্য
অতিপ্রিয় রাজেন্দ্র আমার:
প্রভু যীশু তুমি আজ এই পাত্রে পান করে নিও।