সমীরবাবু মারা গেলেন গত বর্ষায়, আর তার ঠিক তিনদিনের মাথায় প্রবাল মারা গেল। আর তাই সমীরবাবু মৃত্যুর পরে প্রবাল হয়ে উঠতে পারলেন।
গোলমাল ঠেকছে? দাঁড়ান, ব্যাপারটা গুছিয়ে বলি।
আমাদের সমীরবাবু কাজ করতেন কলকাতার একটি বেসরকারী ব্যাঙ্কে। মোটামুটি ভালোই কাজ করতেন, তবে এতো বেশিভালোও নয় যে প্রোমোশন-টোমোশন পেয়ে অন্য কোথাও উঁচু পদে ট্রান্সফার হয়ে যাবেন। সমীরবাবুর তাতে বিন্দুমাত্র দুঃখ ছিলো না,কারণ উচ্চাকাঙ্ক্ষা নামক বস্তুটি সমীরবাবুর কোনকালেই ছিলো না। অকৃতদার, তিনকুলে কেউ নেই, পৈতৃক বাড়িতে বাস করতেন, একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট জীবনযাত্রা ওনার। নিতান্ত মামুলী গোছের সাধ-আহ্লাদ ছিলো কিছু — ফুটপাথ থেকে নিয়মিত সেকেন্ড হ্যান্ডে কিনে ইংরিজি থ্রিলার পড়া, মাঝে মাঝে সিনেমা দেখা, বছরে একবার ওই হয়তো পুরী বা দার্জিলিং বেড়াতে যাওয়া এই আর কি। আর শখ ছিলো একটু দামী বিলিতি সিগারেট খাওয়া।
ওই সিগারেটটাই শেষমেশ মারলো ওনাকে।
বড্ডো বেশি সিগারেট খেতেন সমীরবাবু — দিনে তিন প্যাকেট মার্লবরো না হলে চলতোই না ওনার, ছুটির দিনে চার প্যাকেট। অফিসে সিগারেট খাওয়া কিছুটা অসুবিধের, নিচে নেমে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেতে হয় বলে লোকে আজকাল কম সিগারেট খায় অফিসটাইমে। কিন্তু সমীরবাবু অদম্য, ঘণ্টায় ঘণ্টায় নিচে চলে যেতেন সিগারেট খেতে। সময় বাঁচাতে সমীরবাবু প্রায় প্রতিবারেই একের-পিঠে-আরেক করে একেকবারে দুটো বা তিনটে সিগারেট মেরে দিতেন। মনে হয় ওই অতিরিক্ত সিগারেট খাওয়া থেকেই গলায় না লাংসে কোথায় যেন ক্যান্সার হয়েছিলো — ধরাও পড়েছিলো এক্কেবারে শেষ পর্যায়ে, তাতেই সমীরবাবু দুম করে মারা গেলেন।
সমীরবাবুর মৃত্যুতে ওনার আশেপাশের লোকেরা বিশেষ বিচলিত হয়ে পড়েছিলো, একথা বলা চলে না। নিকট-আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠ বন্ধু কেউ না থাকায় কাউকেই শোকাপ্লুত চিত্তে প্রবল অশ্রুবিসর্জন করতে দেখা যায় নি। অফিসের দুচারজন সহকর্মী এবং পাড়া-প্রতিবেশিরা মিলে নিতান্ত বাহুল্যবর্জিতভাবে ওনার সৎকার কার্যটি সেরে ফেলে। তাঁর অকালপ্রয়াণে জগৎ-সংসারে শোকের ছায়া নেমে এসেছিলো, একথা বললে ঘোর অত্যুক্তি করা হবে।
অন্য কারুর কিছু না এসে গেলেও সমীরবাবুর কিন্তু বিলক্ষণ এসে গিয়েছিলো। আরো কিছুদিন এই পৃথিবীতে থেকে, আরো দুচারটে আগাথা ক্রিস্টি বা জেফ্রি আরচার পড়ে, আরো দু-চারটে সিনেমা দেখে, এবং আরো অন্তত লাখখানেক সিগারেট ফুঁকে তবেই না স্বর্গে যাবার কথা! সে সব না করে মধ্য-চল্লিশে — আজকালকার জমানায় বলতে গেলে একরকম নব-যৌবনেই — এরকম দুম করে অকালপ্রয়াণ সমীরবাবুর মনে বড্ডোই ঘা দিয়েছিলো। তাই মরণোত্তর সূক্ষ্মশরীরের সমীরবাবু প্রেতলোকে যাত্রার সময় আচমকা যমদূতদের হাত ছাড়িয়ে একেবারে পোঁ-পোঁ দৌড় লাগিয়েছিলেন। দৌড়তে দৌড়তে ওনার সাধের ভবানীপুর ছেড়ে একেবারে সোজা লেকগার্ডেনস অঞ্চল। সেখানেই তিনদিন ঘাপটি মেরে থাকতে থাকতে আর ইতস্তত ঘুরঘুর করতে করতে আচমকা প্রবালের সঙ্গে দেখা হয়েছিলো। বা বলা ভালো — দেখতে পেয়েছিলেন।
প্রবালের মরবার কথা নয়, তার বয়েস চল্লিশের কোটাতেও পৌঁছয় নি। তাও কেন তার হার্ট-অ্যাটাক হলো, তা বলা শক্ত। সমীরবাবু সেসব চিন্তা করবার সময়ও পান নি। বায়বীয় শরীরে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে দেখতে পেয়েছিলেন যে তিনতলা হেঁটে উঠতে উঠতে প্রবাল প্রবল হাঁপাচ্ছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। কি খেয়ালে সমীরবাবু তার পেছন পেছন ওপরে উঠে এসেছিলেন। তিনতলা উঠে কোনক্রমে নিজের বাড়ির সামনে পৌঁছেই প্রবাল মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলো। সমীরবাবু স্পষ্ট দেখলেন প্রবালের আত্মাটি দেহ ছেড়ে ‘বেরোবো বেরোবো’ করছে আর ওই যমদূত ব্যাটারা চাঁদের আলো ধরে সিলিপ খেয়ে নেমে আসছে আত্মাটিকে নিয়ে যেতে। ব্যাস — সমীরবাবু আর এক মুহূর্ত দাঁড়ান নি। একেবারে ইউরো কাপের ফুটবলারদের মতো প্রবালের আত্মাটিকে শোলডার-চার্জ করে সমীরবাবু প্রবালের দেহটিকে জবরদখল করে নেন। প্রবালের সত্যি বোধহয় বেঁচে থাকার ইচ্ছে ছিলো না, সে একপ্রকার বিনা সংঘাতেই তার শরীরটি “বাসাংসি জীর্ণানি” ইত্যাদি বলতে বলতে ছেড়ে দিয়েছিলো। তারপর চুপচাপ সিঁড়ির ধারে দাঁড়িয়ে যমদূতদের জন্যে অপেক্ষা করছিলো।
সমীরবাবু এই তিনদিন যমদূতদের হাত থেকে পালাতে পালাতে বেশ ঘাঘু হয়ে উঠেছেন। তিনি একদম “নট-নড়ন-চড়ন-ঠকাস-মার্বেল” হয়ে ওখানে মড়া সেজে পড়ে থাকলেন। বেশ খানিকক্ষণ বাদে, যখন যমদূতরা প্রবালকে নিয়ে বিদায় হয়েছে, যখন পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রমহিলা “ওহ মাই গড” চিৎকারে অর্ধ-নিদ্রিত চৌকিদারকে ধড়মড়িয়ে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে দৌড়ে আসতে বাধ্য করেছেন, ঠিক সেই সময় — পুরো ফিল্মি স্টাইলে সমীরবাবু চোখ মেললেন “আমি কোথায়” বলে।
এই ছিলো সমীরবাবুর প্রবালে রূপান্তরের প্রথম পদক্ষেপ।
প্রবাল হয়ে উঠে সমীরবাবু দেখলেন সাতপাঁচ না ভেবে প্রবালের মধ্যে ঢুকে পড়াটা মোটের ওপর মন্দ হয় নি। প্রবালও সমীরবাবুর মতোই অকৃতদার, আত্মীয়স্বজন বেশ কম; যাঁরা আছেন, তাঁরা কলকাতার বাইরে — ফলত তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক নেহাত ফ্যাকাসে আলুনি রান্নার মতন। মিশুকে নয় মোটেই — একাই থাকে, সঙ্গে শঙ্কর নামের একটি বোকাসোকা কাজের লোক — যে সারাদিন রান্না থেকে শুরু করে সব কাজ সামলে দিয়ে রাত্তিরে চলে যায়। প্রবাল পেশায় অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কাজ করে একটি বাণিজ্যিক সংস্থার অ্যাকাউন্টস বিভাগে — কাজেই পেশাগত দিক থেকে এটা সমীরবাবুর পক্ষে একেবারেই সমস্যার ব্যাপার নয়।
এরপর তিনমাস কেটে গেছে। সমীরবাবুর প্রবালে রূপান্তর মোটামুটি নির্বিঘ্নেই ঘটে গেছে। প্রথম সপ্তাহটা সমীরবাবু শরীরের দোহাই দিয়ে হাফ-ডে করে অফিস করতেন আর কাজও করতেন আস্তে আস্তে। সেই সময়ে আশপাশ মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে অফিসের হাল-হকিকত-নিয়ম-কানুন-রীতি-রেওয়াজ-রাজনীতি-লেঙ্গিবাজি সব নিখুঁতভাবে বুঝে নিতে সমীরবাবুর অসুবিধে হয় নি। আর বাড়িতে তো লোক বলতে ওই শঙ্কর — যে এতোই গণ্ডমূর্খ যে তার বাবু যে হঠাৎ করে লুঙ্গির বদলে পায়জামা, চায়ের বদলে কফি এবং পাঁঠার বদলে মুরগী বেশি পছন্দ করছে, তাতে সে কোন প্রশ্ন করে নি। মায় তার বাবুর ১২০ জর্দা দেওয়া মিঠে-পাত্তা-বিনা-খয়ের পানের নেশা ছেড়ে এই বয়েসে নতুন করে সিগারেট খাওয়া শুরু করেছেন, তাতেও তার বিন্দুমাত্র বিস্ময় জাগে নি।
প্রবালকে এই সিগারেট ধরাতেই সমীরবাবুর বেশ খাটতে হয়েছে। প্রবালটা সিগারেট একেবারেই খেত না, শুরু করা মাত্র তার বেজায় কাশি হতো, তারপর গলা বসে যেতো। তাকে ধীরে ধীরে সইয়ে সইয়ে সিগারেট-আসক্ত করতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে সমীরবাবুকে। এখনো সিগারেট খাওয়াটা ঠিক সমীরবাবুর স্ট্যান্ডার্ডে আসে নি, প্রবালের কোটা তিনমাসের চেষ্টার পরেও দিনে দেড়-দু প্যাকেট মতো। তাতে অবশ্য সমীরবাবুর তেমন খেদ নেই, বরং ভালোই হয়েছে — প্রবালের মাইনে সমীরবাবুর থেকে খানিকটা কম কিনা।
আরেকটা ব্যাপারে সমীরবাবু বেশ অবাক হয়েছেন। ছেলেবেলায় পড়েছিলেন ভূতেরা পায়ের গোড়ালি থেকে পায়ের পাতা উল্টো করে হাঁটতে পারে, দরকার পড়লে হাত লম্বা করে গাছের ডাল থেকে লেবু পেড়ে আনে আরো কিসব অলৌকিক ক্ষমতা ধরে। এগুলো সমীরবাবু একেবারে বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু প্রবালের দেহে ঢুকে দেখলেন আচমকা এইসব ক্ষমতা তিনি আপনাআপনি কি ভাবে যেন পেয়ে গেছেন। অর্থাৎ প্রবালের সাধারণ নশ্বর শরীরে সমীরবাবু ঢুকে পড়বার পর দরকার পড়লে শুয়ে শুয়ে হাত লম্বা করে পাখার রেগুলেটর কমিয়ে দিতে পারে বা পায়ের পাতা উল্টো করে হাঁটতে পারে। এটা কি করে সম্ভব, যেখানে শরীর একই, শুধু আত্মার অদলবদল হয়েছে সে নিয়ে অনেক চিন্তা করেও কোন বিজ্ঞান-সম্মত ব্যাখ্যা পান নি সমীরবাবু। শেষে এই নিয়ে ভাবাই ছেড়ে দিয়েছেন। তবে এইসব বিশেষ ক্ষমতা সম্পর্কে উনি খুব সতর্ক থাকেন — লোক জানাজানি হলে এর পরিণতি যে মধুর হবে না, সেটা তাঁর বিলক্ষণ জানা আছে। সমীরবাবু মোটেই “মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই” গোছের কিচ্ছু প্রমাণ করতে চান না।
মাস তিনেক ধরে এখানে থাকতে থাকতে সমীরবাবুর লেকগার্ডেনস জায়গাটা মন্দ লাগে না আজকাল। পাড়াটা বেশ শান্ত, আনোয়ার শাহ রোড থেকে ভেতরে ঢুকে তিন-চারটে রাস্তা পেরিয়ে একটা সরু রাস্তা — তার অনেকটা ভেতরেই ওনার বাড়ি। গাড়িঘোড়া নেই, বড়ো রাস্তার হাঁকডাক নেই, দোকান-পাটও বিশেষ নেই। দোকান বলতে গলির মোড়ে গণেশের দোকান, সেখানে পাওয়া যায় বিস্কুট, চকলেট, সস্তার খাতা-কলম আর সিগারেট। সিগারেটে গণেশের সংগ্রহ দেখবার মতন — এমনি চালু সিগারেট ছাড়াও ক্লাসিকের চারটি ব্র্যান্ড, বেনসন অ্যান্ড হেজেস, ইন্সিগ্নিয়া, পলমল, ক্যামেল আর সমীরবাবুর ব্র্যান্ড মার্লবরো। সমীরবাবু দু-একবার জিগ্যেসই করে ফেলেছিলেন গণেশকে — এতো দামী সিগারেট কারা কেনে এ পাড়ায়? উত্তর দেয় না গণেশ, শুধু হাই তুলে উদাসভাবে গেঞ্জি তুলে কেউটে সাপের উল্কিকরা কালো হাত দিয়ে তাঁর লোমশ পেট চুলকোতে থাকে। সমীরবাবু কথা বাড়ান না — ওনার সিগারেট পাওয়া নিয়ে কথা। সেটা যখন পাওয়া যায় আর দোকানটা রাত অব্দি খোলা থাকে — এর বেশি আর কি চাই ওনার? তায় আবার গণেশ খাতা সিস্টেম করে দিয়েছে ওঁর মতো নিয়মিত খদ্দেরদের জন্যে — মানে সোনায় সোহাগা।
সেদিন সমীরবাবু খাওয়াদাওয়া সেরে হ্যারি হোল সিরিজের একটি বই নিয়ে বসেছেন। জো নেসবো নামের এক নরওয়ের লেখক এই ডিটেকটিভ গল্পগুলো লিখছে — জব্বর জমেছে। সমীরবাবু একেবারে বুঁদ হয়ে পড়ছেন আর একের পর এক সিগারেট টানছেন। জানলার বাইরে ওনার সিগারেটের ধোঁয়া একটা রহস্যময় কুয়াশা গড়ে তুলছে। এমন সময় — যখন গল্পের ঘটনা একেবারে ক্লাইম্যাক্স-এ পৌঁছেছে, উত্তেজনায় যবনিকা কম্পমান, ঠিক সেই সময় সমীরবাবুর সিগারেটের প্যাকেটটি গেল খালি হয়ে। শুধু তাই নয়, এই প্যাকেটটাই শেষ প্যাকেট ছিলো — শঙ্করের ভাঁড়ারের আলমারিতেও আর নেই। কেলোর কীর্তি যাকে বলে।
সমীরবাবু ঝট করে উঠে একটা পাঞ্জাবী গায়ে চড়িয়ে বেরিয়ে পড়লেন। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা, গণেশ এবার ঝাঁপ ফেলে দেবে, তাই হনহন করে এগিয়ে মোড়ের মাথায় পৌঁছে দেখলেন এক্কেবারে ঠিক সময় এসে পড়েছেন। গণেশের দোকানের আধখানা বন্ধ হয়ে গেছে, টিনের পাল্লাগুলো সেট করে তালা লাগাচ্ছে এক এক করে। সমীরবাবু “দাঁড়াও, দাঁড়াও” বলতে বলতে পড়ি-কি-মরি করে রাস্তা পার হয়ে দোকানের সামনে পৌঁছলেন। হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন “আছে মার্লবরো?”
“ওই পাশে — ওপরের দিকে আছে। একটু নামিয়ে নিন না স্যার।“
সমীরবাবু ডানপাশে সরে গেলেন। সামনের ডিসপ্লেটার পাল্লাটা বন্ধ, ওপর দিকে ষ্টকের জায়গাটার পাল্লাটা খোলা, মার্লবরোর প্যাকেট দেখা যাচ্ছে। তবে সমীরবাবুর হাতের নাগালের বাইরে, টুলে উঠতে হবে।
সমীরবাবুর আর তর সইলো না। হাতটা ওপরদিকে বাড়িয়ে দিতেই হাতটা একফুট মতন বেড়ে গিয়ে ছোঁ করে সিগারেটটা তুলে নিলো। তারপর আর কালক্ষেপ না করে বোঁ করে ঘুরে গিয়ে রাস্তা পার হতে লাগলেন। পার হতে হতে একটা “খাতায় লিখে নিও” ছুঁড়ে দিলেন গণেশের দিকে। বুকের ভেতরটা ঢিবঢিব করছে। গণেশ দেখে ফেলেনি তো? অবশ্য দেখতে পাবার কথা নয়, গণেশ তো নিচু হয়ে নিচের পাল্লা বন্ধ করছিলো।
রাস্তা পার হয়ে সিগারেটের প্যাকেটটা খুলে ফেললেন সমীরবাবু। প্যাকেটে একটা সরু সুতোর মতো ব্যান্ড থাকে, সেটা ধরে পাক মেরে টান লাগালে ওপরের প্লাস্টিকের অংশটা খুস করে খসে পড়ে যায়। তারপর প্যাকেট খুলে বুড়ো আঙুলের চাপ দিলে রাংতার কাটা অংশটাও খসে পড়ে। তারপর বুড়ো আঙুলে একটি সিগারেট একটু ঠেলে দিয়ে সেটাকে ঠোঁটে ধরে একটান মেরে বের করা। তারপর পকেট থেকে লাইটার বের করে...সমীরবাবু পকেটে হাত দিয়ে থেমে গেলেন। পকেটে লাইটারটা নেই। হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসার সময় সেটা আনতে ভুলে গিয়েছেন।
গণেশের কাছে অবশ্য আছে। কিন্তু এক্ষুনি আবার ওর মুখোমুখি হবার সাহস সমীরবাবুর আর নেই। লম্বা হাতের কায়দাটা না করাই উচিত ছিলো। যদি দেখে ফেলে থাকে?
সমীরবাবু সিগারেটটা ঠোঁটে গুঁজে কি করবেন ভাবতে ভাবতেই একটা কেউটে সাপের উল্কি করা কালো হাত রাস্তার ওপার থেকে লম্বা হয়ে এসে ওনার মুখের সামনে একটা লাইটার জ্বালিয়ে ধরলো। একটা দূর থেকে মৃদু “আসুন স্যার” ভেসে এলো হাওয়ায়।
(এই সংখ্যায় অতনু দে-র আরো একটি গল্পঃ 'ঠান্ডা ম্যলে এক কাপ কফি')