জীবনে আরেকটা সম্পর্ক আছে যা নিজেকেই নির্মাণ করে নিতে হয়, রক্ষা করতে হয়। যা অন্য কোন সূত্রে আপনা আপনি নিজে থেকে গড়ে ওঠে না। নিজের রুচি, পছন্দ, চিন্তাভাবনার সাযুজ্যের ভিত্তিতে সমাজের নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে এই সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যাকে বলা যেতে পারে সামাজিক সম্পর্ক। এই সব সম্পর্ক থেকেই কিভাবে কিছু কিছু সম্পর্ক রহস্যজনকভাবে বন্ধুত্বের সম্পর্কে রূপান্তরিত হয় এক অদ্ভুত প্রক্রিয়ায়। তার অনেকটাই জানা-অজানায় মেশানো। তবে জীবনে প্রকৃত বন্ধুর বড় দরকার। যা জল-হাওয়ার মতোই অপরিহার্য। কেননা জীবনে এর প্রভাব বা ভূমিকা সুদূরপ্রসারী। কিন্তু এই সম্পর্কগুলো স্বতস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠে না। এর জন্যে সময় দিতে হয়, ভালবাসা দিয়ে লালন-পালন করতে হয়, যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করতে হয়। দুঃখজনক ভাবে এই সামাজিক সম্পর্কগুলো বেশিরভাগ সময়ই আবেগনির্ভর, স্বার্থসর্বস্ব ও সাময়িক প্রাপ্তি-নির্ভর। এর মধ্যে নিঃস্বার্থ ভালবাসার বড় অভাব। শুধু যেন প্রতিদানের উদ্দেশ্যে ভালবাসা। আর প্রতিদানের উদ্দেশ্যে ভালবাসা যে ভিখারির ধর্ম তা সবার জানা। এর মধ্যে সত্যিকারের সম্পর্কের কোন উপাদান থাকে না। কিভাবে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় অথবা প্রায় চিরস্থায়ী হয়ে উঠতে পারে তা ঠিক ঠিক করে বলা মুশকিল। তবে এই সম্পর্কগুলো ধরে রাখার জন্যে চাই উভয়ের আন্তরিক, নিরপেক্ষ, নির্মোহ ও সচেতন প্রচেষ্টা। যা খুব একটা দেখা যায় না। তাই শুধু চোখে পড়ে বন্ধুত্ব হননের ঘটনা, অকারণ মনোমালিন্য আর ঠান্ডা লড়াই। এটা কোন নতুন বিষয় নয়। কমবেশি তা চিরকালই ছিল। তবে এখন মানুষের মধ্যে বিশেষ করে শিক্ষিত শহরের মানুষদের মধ্যে দিন দিন অসুস্থ উপসর্গগুলো আরও প্রকট হচ্ছে, আরও জটিল হচ্ছে। নামীদামী, প্রতিষ্ঠিত মানুষও এর বাইরে নেই। শিক্ষাদীক্ষা, মান-মর্যাদা, সামাজিক প্রাপ্তি কোন কিছুর উপরই তা নির্ভর করে না, কোন কিছুতেই কিছু যায় আসে না। ভাবলে অবাক হতে হয়। এর ব্যতিক্রমী মানুষের সংখ্যা সমাজে খুব কম দেখা যায়। সম্পর্কের টানাপোড়েনের শেষ নেই। এবং তা যে কতটা কদর্য হতে পারে আমাদের সমাজের কিছু বিখ্যাত মানুষের উদাহরণ দেখলে তা স্পষ্ট হবে। অথচ এমনটা হবার কথা ছিল না। অন্তত আমরা তা একেবারেই আশা করিনি। মানুষের মনঃস্তত্ত্ব সত্যি খুব জটিল, দুর্বোধ্য!
আমরা জানি কিভাবে বুদ্ধদেব বসু ‘প্রগতি’ পত্রিকায় দিনের পর দিন জীবনানন্দ দাশের কবিতার উপর লেখা সজনীকান্তের ‘শনিবারের চিঠি’-র অন্যায় আক্রমণ থেকে রক্ষা করে জীবনানন্দের কবিতার কাব্যগুণ ও আধুনিকতা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিলেন এবং “কবিতা” পত্রিকার মাধ্যমে তাঁর কবিতা সবার মধ্যে তুলে ধরেছিলেন। যা না করলে বাংলা সাহিত্যে জীবনানন্দ দাশের কবিতা প্রতিষ্ঠা পেতে এবং এই অসাধারণ কবিকে আমাদের চিনতে হয়ত আরও অনেকগুলো বছর অপেক্ষা করতে হত। অথচ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে জীবনানন্দ দাশ তাঁর লেখায় বুদ্ধদেব বসু সম্পর্কে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অরুচিকর মন্তব্য করেছেন। ‘সফলতা-নিষ্ফলতা’ জীবনানন্দ দাশের একটি উপন্যাস। এই উপন্যাসের নিখিল এবং বাণেশ্বর দুটি চরিত্র। বাণেশ্বরের আড়ালে ছিল প্রধানত বুদ্ধদেব বসু আর জীবনানন্দ নিখিল চরিত্রটি নির্মাণ করেন নিজের আদলে। এবার দেখা যাক নিখিলের ভাবনায় বা বিশ্লেষণে কেমন ছিল বাণেশ্বর—
নিজের পদগৌরব সম্বন্ধে সব সময়ই সে (বাণেশ্বর) খুব খাড়াখোড়া—
সকলেই তাকে সব সময় তার গরিমা মনে করিয়ে দিচ্ছে...
বাণেশ্বরকে মনে-মনে অবিশ্যি এরা সকলেই ঠাট্টা করে—এর পদপ্রতিভা যে এক ঢিবি বালি দিয়ে তৈরি, নিভৃতে সকলেই তা জানে—- ...কিন্তু বাণেশ্বরের সম্বন্ধে যথাযথ একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছবার প্রয়াস কোথাও দেখছি না; এইটেই বড় মারাত্মক; শুধু প্রশংসা শুধু ঘৃণা বা, শুধু উপেক্ষা—এই তিনটে জিনিষের শেষ পর্যন্ত একই দাম; --কোনওই দাম নেই। মেয়েরা ওকে ঘেন্না করছে শুধু; মেয়েদের কাকারা প্রশংসা করছে মেয়েদের বাপেরা করছে উপেক্ষা...
কিন্তু বাণেশ্বরকে অনেকেই মনে মনে তাসের বাড়ি মনে করলেও—মুখে না হোক কলমে অন্ততঃ –চিঠিতে প্রবন্ধে-–অজন্তার মাতাল পারসীকের চিত্রের মত, মনড্রিয়ানের ছবির মত, হুমায়ুনের কবরের মতএমন একটা স্পষ্ট, নিহিত, নিরঙ্কুশ সমৃদ্ধি দিচ্ছে, যা পেতে একাল-মানুষের সাহিত্যকে অপেক্ষা করতে হয় ছেলেমানুষের হাতে যা কিছুতেই জোটে না কেউ যদি জোর করে গছিয়ে দেয়, তা হলে বাণেশ্বরের যা হয়েছে, তেম্নি হয় যেমন সাহিত্যের ভিতরে, তেমনি জীবনের ঘাটে-পথে সে একটা হাড়হাভাতে হয়ে দাঁড়ায়।
এই হাড়হাভাতেকে আমাদের অনেকদিন সহ্য করতে হবে।
এখনও সে লিখছে অনেক দিনই সে লিখছে তার সম্বন্ধে কথাবার্তা সব সময়ই সব-চেয়ে বেশি হবে কিন্তু আমি যে পরিমাণের কথা বলছি বাণেশ্বর সম্বন্ধে সে জরিপ আরম্ভও হবে না। শিগগিরি আরম্ভ হবে না। এই হাড়হাভাতেকে আমাদের অনেকদিন সহ্য করতে হবে।
নিখিল বলে, “বাণেশ্বরের মনের ভিতর হিংসা খুব কম নেই বল্লেই হয়; সে জানে, নিজে সে সব চেয়ে বড় নিমবড়কে (নিখিলকে) সাহায্য করতে সে সব সময়েই রাজি…
(বুদ্ধদেব- জীবনানন্দঃ সম্পর্কের ‘সফলতা-নিস্ফলতা’, কোরক, প্রাক-শারদ ২০১৬)
এই উপন্যাসের কথা তাঁর মৃত্যুর অনেক পরে আমরা জানতে পেরেছি। জানতে পেরেছি এই উপন্যাসের একটা বিশেষ উদ্দেশ্যের কথা যখন ২০০৪ সালে এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। কিন্তু কেন এই নির্মম অকৃতজ্ঞতা? হায় রে মানুষ!
এবার আরেকটি সম্পর্কের কথা বলা যাক। যেখানে ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের উপর কালো ছায়া পড়েছিল প্রাতিষ্ঠানিকতার জটিলতা অথবা পেশাগত প্রতিযোগিতার কারণে। আমরা জানি দেবব্রত বিশ্বাস এবং সুচিত্রা মিত্রের মধ্যে একটা মধুর সম্পর্ক ছিল দীর্ঘ দিনের। কিন্তু এই সম্পর্কের মধ্যে একটা টানাপোড়েন তৈরি হয় সুচিত্রা মিত্র বিশ্বভারতী মিউজিক বোর্ডের সদস্য নিযুক্ত হবার পর এবং এই মিউজিক বোর্ডই দেবব্রত বিশ্বাসের কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত অনুমোদন করেনি। আর এই বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে এ ব্যাপারে যারা সব থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সুচিত্রা মিত্র এবং সুবিনয় রায়। সুচিত্রা মিত্রের এই ব্যাপারে এতটা সক্রিয় হওয়ার পেছনে কতটা পেশাগত দায়িত্ব পালনের নিষ্ঠা আর কতটা জেলাসি ছিল তা অনুমান করা আমাদের পক্ষে খুব কঠিন। তবে দেবব্রত বিশ্বাস যে খুব কষ্ট পেয়েছিলেন এই নিষেধাজ্ঞায় তা স্পষ্ট করেছেন ওঁর ‘ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত’ বইতে। এভাবেই দেবব্রত বিশ্বাস এবং সুচিত্রা মিত্রের মধ্যেকার সম্পর্কের চরম অবনতি হয়। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
আমরা জানি রবীন্দ্রনাথ এবং স্বামী বিবেকানন্দ একই সময়ের মানুষ হয়েও ওঁদের মধ্যে তেমন একটা সম্পর্ক ছিল না। সম্ভবত ৩/৪-বার ওঁদের দেখা হয়েছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। বিবেকানন্দ রবীন্দ্রনাথের গানও গাইতেন। কিন্তু ওঁদের সম্পর্ক বেশিদূর এগোয়নি রহস্যজনক কারণে। রবীন্দ্রনাথ কবিতা লিখেছিলেন ঋষি অরবিন্দ, ছত্রপতি শিবাজি, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, সম্রাট শাজাহান-কে নিয়ে। অথচ বিবেকানন্দ বিষয়ে তিনি সেরকম কিছুই লেখেননি। বিবেকানন্দ বয়সে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে দু’বছরের ছোট হয়েও রবীন্দ্রনাথের অনেক আগেই বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথকে আরও ২০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল বিশ্ববরেণ্য কবি হতে। আর সেটা সম্ভব হয়েছিল নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে। তবে কি এই দুই মহামানবের ভিতরকার টানাপড়েনের জন্য খ্যাতির দ্বন্দ্ব অথবা ঈর্ষা অবচেতন মনে হলেও কোনভাবে তা কাজ করেছিল? কে জানে? (??অন্তত কিছুটা আরো ভালো প্রমাণ/সাক্ষ্য হাতের কাছে না থাকলে এরকম্ভাবে কটাক্ষ করা কি ঠিক? অন্তত সেরকম কিছু করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করা উচিত)
এরকম সম্পর্ক হননের আরও অনেক ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে বন্ধুত্ব হননের বিষয়টি শেষ করব আরেকটি উদাহরণ দিয়ে। আমরা জানি রবীন্দ্রনাথকে ইংল্যান্ডে তথা ইউরোপে বুদ্ধিজীবী মহলে পরিচিত করার ক্ষেত্রে যাঁরা বিশেষ ভুমিকা রেখেছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডাবলু. বি. ইয়েটস। এবং তিনি ইংরেজি গীতাঞ্জলির ভূমিকা লিখেছিলেন। তাঁদের দুজনের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কও খুব ভাল ছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তাঁদের দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা আর আগের মতো ছিল না। হয়ত ডাবলু. বি. ইয়েটস ভাবতেই পারেননি যে রবীন্দ্রনাথ ওঁর আগেই নোবেল পুরস্কার পেয়ে যাবেন। কেননা ইংরেজি সাহিত্যে তিনি তখন অত্যন্ত বড় মাপের সাহিত্যিক হিসেবে অনেক পরিচিত ছিলেন। এটা জেলাসি থেকে হয়েছিল কিনা ঠিক ঠিক করে বলা খুব মুস্কিল। কেননা মানব মনের এই জটিল বিষয়গুলো বোঝার কোন সহজ উপায় জানা নেই আমাদের। তবে ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষণ করলে এটা অনুমান করা একেবারে অমূলক নয়।
এইসব উদাহরণগুলোর মধ্যে দিয়ে অন্তত এটা স্পষ্ট হল যে দীর্ঘদিন বন্ধুত্ব ধরে রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা এটা কোন নির্দিষ্ট সূত্রে বাঁধা নয়। বলা যেতে পারে প্রতিটা বন্ধুত্বের সম্পর্কই ইউনিক। তাই সম্পর্ক ভাঙ্গাগড়ার জটিল প্রক্রিয়া চলতেই থাকে আমরা তা চাই আর না চাই। তবে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সন্মান, খোলামেলা আলোচনা ও সর্বনিয়ত আন্তরিক প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে তা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে আমার নিজের মনে হয়। এবং এভাবেই ভাল বন্ধুত্বের সম্পর্ক আশা করা যেতে পারে।
সব শেষে আরেকটি বিশেষ সম্পর্কের কথা নিয়ে একটু ভাবা যাক। মানব জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর প্রভাব সমাজের সর্বস্তরে। বলা যেতে পারে সমাজের ভারসাম্য অনেকটাই নির্ভর করে এই সম্পর্কের উপর। সামাজিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে শুধু কিছু মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সন্তান, বৃদ্ধ বাবা-মা সহ একটা পরিবারের সবাই। যদিও একান্নবর্তী পরিবারের কাঠামো এখন অনেকটাই ভেঙ্গে গেছে, তবুও এর পরোক্ষ প্রভাব অস্বীকার করবার উপায় নেই। বিশেষ করে আমাদের সমাজে। তাই সারা বিশ্বে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা যত গুরুত্ব সহকারে আলোচনা এবং বিশ্লেষণ হয়, আর অন্য কোন সম্পর্ক হননের কথা সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয় না। তাই এই সম্পর্ক রক্ষা করার ক্ষেত্রে এক ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয় জড়িত কি না ভেবে দেখা যেতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও বন্ধুত্বের। কিন্তু তার প্রকৃতি আলাদা। এর মধ্যে থাকে বৈষয়িক প্রত্যাশা। থাকে দাবি। থাকে আইনগত অধিকার। কিন্তু অন্য বন্ধুত্বের মধ্যে এসবের কোন বালাই নেই। তবে এক ধরনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ স্বার্থের একটা ভূমিকা থাকে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের গভীরতা বা নৈকট্য নির্মাণের প্রক্রিয়া ঠিক ঠিক করে বোঝা খুব শক্ত। তবে জীবনের অনেকগুলো উপাদান (সহমর্মিতা, পারস্পরিক বোঝাপড়া, ভালবাসা, আর্থিক সংগতি, ব্যক্তিত্ব, হিউমারাস মন, আনন্দময় যৌন জীবনসহ আরও অনেক কিছু) এক সঙ্গে কাজ করা খুব জরুরী। সম্ভবত এভাবেই স্বামী-স্ত্রীর সহজ প্রাণবন্ত সম্পর্ক রচনার সম্ভবনা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু বিষয়টা যে আরও বেশি জটিল তা বলাই বাহুল্য। আর তাই সারা বিশ্বে বিবাহ বিচ্ছেদ দিন দিন বেড়েই চলেছে। তার জন্যে সব চাইতে বেশি চরম মুল্য দিতে হচ্ছে সেই সব ভাঙা পরিবারের সন্তানদের। আশাকরি ভবিষ্যতে মানুষ এই বিষয়-টা নিয়ে বেশি করে ভাববে, বোঝার চেষ্টা করবে এবং এর জন্য আরও বেশি সময় দেবে।
সম্পর্ক নিয়ে আরও অনেক কথা বলা যেতে পারে। অন্যান্য আরও নানা সম্পর্কের কথা আলোচনা করা যেতে পারে। আরও অনেকভাবে ভাবা যেতে পারে। সম্পর্কের রহস্যময়তার বিষয়টা অন্য ভাবেও দেখা যেতে পারে। তবে নিজের অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে সরাসরি খোলামেলা আলোচনা ভুল বোঝাবুঝি দূর করে অনেক সম্পর্ককে রক্ষা করতে পারে, সমৃদ্ধ করতে পারে, একই জায়গায় ধরে রাখতে পারে। এ কথা সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। আমি মানব সম্পর্কের কয়েকটি বিশেষ সম্পর্ক নিয়ে একটু ভাবার বা আলোচনা করার চেষ্টা করলাম আমার এই নাতিদীর্ঘ রচনায়। খুব ক্ষুদ্র একটি প্রচেষ্টা মাত্র। তবে আমি শেষ করছি নৃপেন চক্রবর্তীর ‘সম্পর্ক’ কবিতার কিছু অংশ দিয়ে (কোরক, প্রাক-শারদ ২০১৬)।
‘’আমাদের সম্পর্কগুলো নানা রঙে নানা রূপে আসে,
কখনো বন্ধু হয়ে, কখন-বা বৈরী হয়ে ভাসে।
বন্ধু যে একদিন পিতৃশোক ভাগ করে নেয়,
বৈরীর অ-চেনা চালে সে-ই ফের যন্ত্রণাও দেয়।
আমাদের শ্রেষ্ঠ যারা মান্য-বরেণ্য বলে জানি,
তাঁদেরও জীবনে আছে সম্পর্কের ক্লেদজ কাহিনি।......
...............
তবুও সম্পর্ক গড়ে দেশে-কালে মানুষে-মানুষে,
এই তো জীবন জানি অবশেষে জীবনের শেষে।‘’