|| নিমজ্জমান ||
তামার কৌটো ফেলে গেছো,
নেভানো চিতার মত তপ্ত, পড়ে জ্যৈষ্ঠের রোদে।
অথবা রমণশেষে বাহুল্যবোধে
নামিয়ে রেখেছো বুক থেকে
স্নান ঘরে যেতে
যেমন ভাসিয়ে দাও পাতাটিপ, আরশির জলে।
ঘট-পল্লবের সাথে পুরনো প্রতিমা, স্মৃতিদীপ।
কে জানে, কী ছিল এত প্রিয়,
জড়িবুটি? জাদু? বিস্মৃতির জারক অমিয়?
খেলা ছিল? পূর্বশর্তহীন?
পাতার কুঁড়েতে ঝরে পড়া
দু একটি রুদ্রপলাশ?
অস্থির হয়েছিল অবাধ্য বুকের বাতাস?!
এখন তোমার
কাগজ মণ্ডের মত মুখ
দেখে শ্বাস পড়ে।
তামার কৌটো গোধূলিতে
ডুবেছে বাঁওড়ে।
|| চাঁদ ১ ||
লোকগায়কের মত ম্যাড়মেড়ে চাঁদ এসে দাঁড়িয়েছে
শহরের নিওন আলোর পাশে,
যেন তার জাদুকরী গুপিযন্ত্র হারিয়ে এসেছে,
খাড়ির দেশের দহলিজে।
জড়োসড়ো, যদি দেখো তাকে,
কেতা করে যদি তার জামায় সেফটিপিন দিয়ে
এঁটে দাও, দুদশ টাকার আদিখ্যেতা।
গর্বিত প্রাসাদশীর্ষ নগরের, দেখেও দ্যাখে না।
অথচ পূর্ণিমা ছিল কাল,
কবিদের হাহুতাশ উপেক্ষা করে
দুধশাদা আলো মাটাডোর ভ্যানের চাকায় মুছে যায়।
সাথে আরো দুয়েকটি পিঙ্ক ট্রামপেট, ঝরে পড়া।
বিস্মৃত শিল্পীর মত ভবঘুরে চাঁদ এসে দাঁড়িয়েছে
শহরের চুঙ্গিঘরের পাশে।
|| চাঁদ ২ ||
কুম্ভ-টুম্ভ সেরে দেশান্তরী চাঁদ এসে দাঁড়িয়েছে
তেজগঞ্জের মাঠে। এখানে বিদ্যুৎ নেই।
ব্যস্ত হাইওয়ে ছেড়ে গোচর ভূমির সীমা বরাবর
স্লেটের ওপর কালো পোঁচ, বনগ্রাম।
শীতের বাতাসে কেঁপে কেঁপে
দূর কোন হরিবাসরের সঙ্কীর্তন
শ্যালোর আওয়াজে মিশে যায়।
এবারে ফসল ভাল, ভাল দাম হল, তেলবীজ, ধানের শিষের।
বেচাকেনা সেরে গাঁয়ে ফেরা
জনাদুই হাটুরে মানুষ।
জ্যোৎস্নার সালঙ্কারা বেনারসী দেখে
কি জানি কী ভেবে, গেঁজে হাত দিয়ে ছুঁল।
নক্ষত্রবীথির থেকে পাটরাণী চাঁদ এসে দাঁড়িয়েছে রবিশস্যের দেশে।