সালটা ১৯৫৪-ই হয়ত হবে। সেই সময়েরই মাঝে দেখছি একটি আট-নয় বছরের বালককে। স্কুলের এটেনডেন্স খাতায় যার নামের পাশে লেখা ‘truant’. এ তকমা সে অর্জন করেছিল স্কুল পালিয়ে। ক্লাসের পিছনের জানলার একটি শিক বরাবরের মত আলগা করা ছিল, তাতে যে পলায়নের মস্ত সুবিধা।
আপাতদৃষ্টিতে পড়ায় তার মন ছিল না। বাড়ির দিদা বড়দিদা, বাবা জেঠুরা ধরেই নিয়েছিলেন এ ছেলে বেশি দূর যাবে না। তবে বাড়ির ফাই-ফরমাশ বাজার-হাটে তার জুড়ি পাওয়া ভার।
সেইমত এর তার ছোটখাট প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দেওয়া, কখনো খেলতে খেলতেই কোনো ছেলেবেলার বন্ধুর বাড়ি পৌঁছে গিয়ে সে তখনকার কলকাতার এক যাদুই রূপ দেখেছিল। মূলত তার দেখা আর কিছুটা সে সময়ের বড়দের যাদের পেয়েছি তাদের মুখ থেকে যে এক টুকরো ছবি ফুটে উঠেছে তার কথাই লিখছি। মনে আশা আজ করোনা-১৯-এর জেরে বিশ্বব্যাপী পায়ে বেড়ি ঘরবন্দী মানুষদের হাসাতে না পারুক এই ছোট্ট ছেলেটির অবাধে ঘুরে বেড়ানোর কড়চা, আর কিছুটা চায়ের আসরের গল্প কথা—এই দুয়ে মিলে খানিক অনাবিল আনন্দ হয়ত দিতে পারবে।
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের উল্টোদিকে মুচিপাড়া থানা। থানার ওসি-র ছেলে পার্কে খেলতে আসে। তার সাথেই পৌঁছে যাওয়া থানার ভিতর। নীচে কয়েদখানা। দু-চার জন কয়েদী তো থাকতই সব সময়। তার সামনে বেয়নেট-ধারী কনস্টেবল। কয়েদখানার পাশ ধরেই সিঁড়ি বেয়ে ওসি সাহেবের কোয়ার্টার। কেউ না জানলেও রীতিমত যাওয়া আসা খাওয়াদাওয়া ছিল ছেলেটির সে বাড়িতে। একদিন পার্কের ওপাশে বারান্দা থেকে ছেলেটি দেখলে ভারি সোরগোলের মাঝে ধুতিখান দু-ফেরতা করে লুঙ্গি পরা এক কয়েদী জেলছুট হয়ে পার্ক ধরে দৌড়াচ্ছে, পিছে বেয়নেট-ধারী। খানিক দৌড়ে হাতে এলেও ফাঁস খোলা ধুতি সিপাহীজীর হাতেই রয়ে গেল। কয়েদী ওই অবস্থাতেই পার্কের আশপাশের বস্তি ধরে হাওয়া। বড়রা দেখেছিলেন কিনা, দেখলেও কী ভেবেছিলেন জানা নেই। সেই ছোটটি তখনকার আলগাছোলগা নিয়মকানুন ভেঙ্গে পালিয়ে যাওয়া কয়েদীর পক্ষেই ছিল, ভারি মজা লেগেছিল তার।
দিদা বড়দিদাদের গুড়াখু না হলে দাঁত মাজা হত না। অতএব ফরমাশের লিস্টিতে সেটাও জায়গা করে নিয়েছিল। তাতে দুঃখু তো ছিলই না। বরং আমহারস্ট স্ট্রীট (যাকে মধ্য কলকাতার বাসিন্দেরা আজও বলেন আমা ইস্টি) ও শশীভূষণ দে স্ট্রীটের জংশনের দোকানে গুড়াখু কিনে অল্প ক-পয়সা যা বাঁচত (জীবনের চাহিদা এত কম ছিল যে একপয়সা দু-পয়সাতেই শিঙ্গাড়া জিলাপি পাওয়া যেত, তাই বা কজন কিনতে পারত!) তা দিয়ে সোজা রামপদ রায়ের মিঠাইয়ের দোকান থেকে খাওয়া যেত দানাদার আর জিবেগজা। তবে এটা বলতেই হবে কান সুড়সুড় করলে সেই দিদাদের কোলে সটান শুয়ে পড়লেই হল—যত্ন করে নরুণের পিছন দিয়ে কান কুরকুরি করে দিতে তাদের জুড়ি পাওয়া ভার ছিল।
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার থেকে আনমনে ফুটপাথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে খোঁজ মিলেছিল এক কাঠের লাট্টুর দোকানের। আমহারস্ট স্ট্রীটেরই এক তস্য গলিতে সেই ছোট্ট দোকান। বললেই ঝটতি তৈরি হয়ে যেত মাথায় পেরেক ঠোকা কাঠের লাট্টু। একেবারে সদ্য ল্যাকার সমেত। দাম হয়ত দু-আনাই হবে, দড়ি পাকিয়ে তাকে হাতের তালুতে নাচালে যে কুরকুরে এক স্পর্শ পাওয়া যেত সে যে অনবদ্য।
চার আনা ভাড়াতেই লজঝড়ে নীচু নীচু সাইকেল পাওয়া যেত। তাতেই হয়ে গিয়েছিল সাইকেল শেখার হাতে খড়ি—যা পরবর্তী কালে হোস্টেল থেকে ক্লাস করতে যেতে একান্ত দরকারি ছিল। নীচু হওয়াতে আট বছুরের পড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা হয়ত কমই ছিল। তবে সে বয়সে পড়ে হাত-পা ছড়ার তোয়াক্কা আর কে করে। এই সাইকেল চেপেই এর পেয়ারা তার জামরুল গাছে কখন কী ফল ধরল দিব্যি চোখ রাখা যেত। সত্যিই মনে হচ্ছে এক দৌড়ে পালাই সেই তার কাছে।
এই খেয়ালখুশি মত বেড়াতে বেড়াতেই মধ্য কলকাতার কোলে বাজারে দেখা গিয়েছিল মোয়া তৈরির কারখানা। কূতুহল তো বরাবরই বেশি তার। দাঁড়িয়ে দেখে নিয়েছিল মোয়া পাকানো হয়ে গেলে ‘জয় নগরের মোয়া’ লেখা গোলাপী কাগজ সাঁটা মাটির হাঁড়িতে তা সাজানো হয়ে যেত। অলিগলি দিয়ে হলুদ জল কাগজ ঢাকা সেই হাঁড়ি মাথায় মোয়া ওয়ালা হেঁকে যেত ‘মোয়া চাই-ই, জয় নগরের এক নম্বরের মোয়া—’।
এমনি আর এক বাজার চোর বাজার। কেউ কেউ বলতেন যত চুরি হয়ে যাওয়া জিনিস গোটা বা খোলা অবস্থায় সেখানে বিক্রিবাটা হয়। আবার অনেকের মতে চুরির ব্যাপারটায় সংশয় থাকলেও হেন জিনিস ছিল না যা সুলভে পাওয়া যেত না চোর বাজারে। সেখান থেকেই আমাদের ক্ষুদে নায়ক এনেছিল লাল মাছ নীল মাছ। ভাবছেন তাদের একোরিয়মেই রাখা হয়েছিল নিশ্চয়। মোটেই না, কারণ তখনকার দিনে ছেলেপিলেদের মাথায় তোলার কথা কারো মনেই আসত না। হয়েছিল কি বাড়ির নীচের তলার এক ঘরে মণিহারী দোকান ভাড়া দেওয়া ছিল। কোনো কারণে তা চলেনি। তালার মুখে তার ঘুরিয়ে খুলে বাড়ির কজন ছোটরা বড় বড় জারে রাখা লেবেঞ্চুস দুপুরবেলা সাবাড় করে দেয়। তার পরই খেয়াল আসে বাঃ, জার ধুয়ে তো দিব্যি মাছ পোষা যায়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। তবে মাছ চোর বাজার থেকে এলেও দুদিন পরেই অতি যত্নে তাদের দফা রফা।
বৌবাজার বা বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটের এক দোতলায় ছিল ন্যাশানাল এথেলিটিক্স ক্লাব। ছেলেটির বাবা রীতিমত যেতেন। তবে ক্রিকেট খেলা হত ময়দানে। কখনো রাতে জমিয়ে মাংস রান্না। আর ক্রিকেট সিজনে ক্লাবের দৌলতে ইডেন স্টেডিয়মে দামি সবুজ কাপড়ে মোড়া চেয়ারে বসে ক্রিকেট দেখা। বাড়ি থেকে সঙ্গে দিত ভাল ভাল সোয়াদি জল খাবার।
সেই বাড়িরই পাশের গলির এক বাড়িতে (বড় রাস্তার ওপরই) ছিল ‘বামুনের বিস্কুটের দোকান’। দিদাদের ওই বিস্কুট ভারি প্রিয় ছিল। তারা বলতেন তাতে ডিম নেই, তাই বামুনের বিস্কুট। ছেলেটির ওপরই ভার থাকত বিস্কুট আনার। দোকানে ঢুকে সে দেখে নিয়েছিল শুকনো নাড়ু, নিমকি-–কত কী সাজানো। ঢুকলেই জিভে জল অমনি জমা হত।
শৈশব থেকে যুবা বয়সে পৌঁছোনোর পথটা চিরকালই বোধহয় খানিক বিপদসংকুল হয়ে থাকে, তবু পেরোতে তো হয়ই। আর কিছু মানুষ বেশ আগুন লাল কয়লার ওপর হেঁটে যাওয়া হঠযোগীদের মত অবলীলাক্রমে পার হয়ে যায় সে সময়। তাপ যেন লাগেই না, নাকি সে তাপ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করতে পারে না শিশুমনকে। তবে এটা ঠিকই পরিণত হয়ে ওঠার জন্য সেকালে হয়ত বটতলার ছ আনা দামের বই-ই শুধু ছিল। না ছিল বয়েজ লকার রুম, না নীল তিমি ভারচুয়াল গেমের মারাত্মক প্রভাব। তাই বাড়িতে কেউ না জানলেও প্রায়ই সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার থেকে নীলরতন সরকার হাসপাতালের মাঠে ফুটবল খেলাও যেত। প্রতি রোববার ওয়েলিংটন পার্কে লাঠি খেলা শেখা হত, কর্মকর্তারাই দিতেন ইউনিফর্ম। বাড়ির কেউ খবর রাখতেন না এসবের।
ভোটের সময় টিনের চোঙ মুখে রাজনৈতিক দলরা হেঁকে যেত পাড়া দিয়ে ‘ভোট দেবেন কী---সে, কাস্তে ধানের শী---ষে—আর কংগ্রেস হ লে ‘ভোট দেবেন কী---সে, জোড়া বলদের পি---ঠে—' বালকও ভিড়ে যেত সে সব দলে। দলানুযায়ী হাঁক দিত ‘ভোট দেবেন কী---সে—’ র্যালির শেষে একটি জিলাপি একটি শিঙ্গাড়া পেয়ে ভারি শান্তিতে বাড়ি ফেরা যেত চপ্পল পায়ে। মজার কথা কোনো প্রভাবই শিশু মনকে বইয়ে নিয়ে যেতে পারে নি। নানান ঢেউ বয়ে গেছে, বালক থেকেছে নিশ্চল নির্লিপ্ত দ্রষ্টা।
কখনো অলিগলি দিয়ে হেঁটে অল্প সময়েই এসপ্লানেড পৌঁছে মোহনবাগান মাঠে মোহনবাগান এরিয়ান দলের খেলায় স্বনামধন্য চুনী গোস্বামীর খেলাও দেখা হয়ে যেত। ট্রাম ভাড়া বাঁচিয়ে ফিরতি পথে পকেটে থেকেছে সেই হাতে গরম জিলাপি আর শিঙ্গাড়া।
পাড়াতেই থাকতেন এক ডাক্তারবাবু। দেশখ্যাত ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ের এসিসটেন্ট। তাঁর নামের সাথে জুড়ে গিয়েছিল মজার এক তকমা ‘হান্টার, মাস্টার, ডক্টর, বক্সার’। সেই এসিসটেন্ট ডাক্তারবাবু ফি রোববার তখনকার জলাভূমি লবণহ্রদে বন্দুক হাতে পাখি শিকার করতেন, তাই তিনি হান্টার। বি সি রায়ের কাজ সেরে বঙ্গবাসী স্কুলে পার্ট টাইম পড়াতেন, হলেন তাই ‘মাস্টার’। ডক্টর তো ছিলেনই। ওয়েলিংটন পার্কের বক্সিং ক্লাবে শিখতেন বক্সিং, তাই সবশেষে হলেন বক্সার। আমাদের ক্ষুদে নায়ক ছিল সেই ডাক্তারবাবুর পুত্রের বাল্যবন্ধু। খুব শীতের ভোরে চুপি চুপি জুতো জামা মাফলার টুপি জড়িয়ে পার্কে খেলতে যাওয়ার ডাক পড়ত বন্ধুর নাম ধরে পাড়া কাঁপিয়ে, সেও কিন্তু বাড়ির সবার অজান্তে, সবাই তো তখন ঘুমে অচেতন।
পাড়ার কাছেই শিবমন্দির। গাজনে সেখানে খুব উঁচু মাচান থেকে হত বঁটি ঝাঁপ, কাঁটা ঝাঁপ। প্রাণ হাতে করে কত খেলাই না দেখানো হত।
কিছুদূরে জোড়া শীতলা মন্দির। তার কাছেই আর এক বাল্যবন্ধু কালু সর্দারের বাড়ি। (রোমাঞ্চ গল্পের কালু ডাকাত থেকেই বন্ধুরা তাকে নাম দিয়েছিল কালু সর্দার।) কালুর মুখ থেকেই শোনা যেত বিভোর হয়ে হেমেন্দ্র কুমার, কিরীটি রায়ের রহস্য রোমাঞ্চ ভরা গল্প উপন্যাস। আর ছিল নাম ভুলে যাওয়া বস্তির এক মেয়ে। পার্কের খেলায় সেও সামিল হত। কিছু দিন পর অর্ধাহারে উদুরীতে তার জীবনাবসান হয়।
কখনো কালুর বাড়িতে অশৌচ উপলক্ষে দরকারে কাঁচা ছানা আনতে সঙ্গ দিতে যেতে হত বৌবাজার খ্যাত ছানা পট্টিতে। কাছেই ছিল ফুল পট্টি, হ্যাজাকের আলোয় ম-ম করত গোলাপের স্তবক, যুঁই বেলি চামেলির মালা।
লে-জ, টেড়ে মেড়ে, ম্যাক কেন ধরনের বড় বড় ব্র্যান্ড নামের স্ন্যাক্স তখনো আসেনি। ছানা কিনে ফিরতি পথে চায়ের স্টলের তেল চিটচিটে বয়েমে রাখা আলু ভাজার প্যাকেটও নিমেষে সাবাড় হয়ে যেত।
খুশির ঢেউ বইয়ে দিয়ে রথে পাড়ায় বেরত নানান উচ্চতার জগন্নাথ। বাড়ি বাড়ি ঘুরত সেসব রথ। রান্না হত সেসব বাড়িতে জগন্নাথ প্রভুর জন্য নানা স্বাদের দাঁড়ে ভোগ। খুব ছোট ছোট নীচু গোল টুলের ওপর সদর দরজা থেকে ভিতর বাড়ির চলন পথ অবধি সাজানো হত সেসব ভোগ। বারোমাসে তেরো পার্বণের দিনই ছিল বৈকি। তাই জন্মাষ্টমীতে মা বড়মারা ব্যস্ত থাকতেন তালের বড়া, তালক্ষীর, তালের লুচি তাল তক্তি নিয়ে। (পাথরবাটিতে চুণ মাখিয়ে পাতা হত তাল তক্তি।)
দুর্গাপুজোর কদিন কিন্তু বাড়িতে বাঁধা নিরামিষ রান্না—সুক্তো, ছানার ডালনা; রাতে লুচি পরোটা হয়ত বা রাবড়ি। জলখাবারে সেই চিরাচরিত ঘরে-ভাজা নিমকি আদার জারকের সাথে আর হয়ত বা সুজির নাড়ু, পৈরাগী। আমাদের ক্ষুদে নায়কের মত ছোটরা কিন্তু দিব্যি পুজোর স্টলে মাংসের চপ উড়িয়ে দিত। বড় দাদাদের কাছে ধরা পড়লে নিপাট উত্তর ‘ওতো মোচার চপ’।
সে যুগের সংসারী মানুষরা এক মজার উপায় বার করে ছিলেন ঈশ্বরের সাথে যোগসাধনের। সন্ধ্যার দিকে এক বৈরাগী বাড়ির রোয়াকে বসে খঞ্জনি বাজিয়ে গেয়ে যেত ‘হরিহরায় নমঃ, যাদো ভাই মাধোভাই কেশবায় নমঃ’। বাড়ির কর্তারা সেদিকে কান বা নজর কোনোটাই না দিয়ে অফিস ফেরতা বাড়ি ঢুকতেন। মা দিদারা রান্নাশালে জলখাবারের লুচি বেলতে ব্যস্ত। ছোটরা খেলা সেরে ঘেমে নেয়ে বাড়ি ঢুকছে, খুব শীগগীরই যে গৃহ শিক্ষক নীচের ঘরে এসে বসবেন। বৈরাগী আপন খেয়ালে গেয়ে যায় ‘হরিহরায় নমঃ, যাদোভাই—’। মাস গেলে কিন্তু সে ঠিক নিতে আসে তাকে বরাদ্দ করা ছ টাকা। এমন ব্যবস্থা সত্যিই চমকপ্রদ। ‘ছোড় মুসাফির মায়া নগরবা হো প্রেম নগর কো যানা হ্যায়’-এ তত্ত্ব সবাই জানতেন মনে হয়, তবে মায়া নগর আর প্রেম নগরের মাঝে সন্ধিস্থাপনের ব্যবস্থাটা বেশ মনোহারী। এই পরিবেশে কিন্তু গৃহশিক্ষক ভারী নির্ভর করার মত মানুষ ছিলেন। কোনো ভাবনাচিন্তা না করেই পাড়ার যেকোনো মাষ্টারমশাইয়ের সাথে ‘লালু ভুলু’র মত হিট ছবি দেখতে ছোটদের পাঠানো যেত। আর লালু ভুলুর দুঃখে স্যারের চোখে অবিরাম জলধারা দেখে ছোটরা অবাক কৌতূহলে এ ওকে ইশারা করত। স্যারের সে দিকে খেয়াল থাকত না।
লক্ষ্মী সরস্বতীর বিবাদটা সে যুগে বেশ প্রকট ছিল। পাড়াতেই থাকতেন এক উঁচুদরের বংশীবাদক, সমীহ করার মতই মানুষ, কিন্তু মাস গেলে সংসারের অনটন আর সহ্য করতে না পেরে আসতেন বিমর্ষ বদনে অল্প কিছু ধারের আশায়। আশপাশের গৃহকর্তারা এ দ্বারা এতটাই প্রভাবিত ছিলেন যে বাড়ির মেয়েদের অল্প গলা সাধার চেষ্টা মেনে নিলেও ছেলেদের জন্য সুরের দুনিয়ার দরজা পুরোপুরিই বন্ধ ছিল। অথচ সাঁঝের বেলা গলির গ্যাসবাতি জ্বলে উঠলে সেই তিনি যখন ন্যাড়া ছাদে বসে বাঁশি বাজাতেন মানুষ নিঝুম হয়ে শুনত, সাধারণ গেরস্ত পাড়া হয়ে উঠত স্বপ্নের মায়াপুরী, জীবন যে তখন কাব্য ছিল—অম্ল, মধু্র, বিষণ্ণতা—তিনের সমাবেশই ছিল সে কাব্যে।