• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮২ | এপ্রিল ২০২১ | গল্প
    Share
  • মলিনমায়া : সাত্যকি সেনশর্মা


    ছেলেটা চেয়ারে বসেই অপেক্ষা করছিল। তৃণা এসে দাঁড়িয়েছে সেটা লক্ষ্য করেনি। তৃণা দেখল ছেলেটা বাঁ পা’টা মুড়িয়ে চেয়ারের উপর রেখে তার উপর নিজে বসেছে আর ডানহাত দিয়ে নিজের বাঁ পায়ের জুতোটার গায়ে আঁকিবুকি কাটছে। তৃণা ছেলেটার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল “হ্যালো”। ছেলেটা চমকে উঠে দাঁড়াল। তৃণা বলল “আয়াম তৃণা। ইউ আর অরিত্র রাইট?” ছেলেটা মুচকি হেসে “ইয়াপ... হাই” বলে ডানহাতটা বাড়িয়ে দিল। তৃণা লক্ষ্য করেছে — এই হাতের আঙ্গুল দিয়েই ছেলেটা এতক্ষণ জুতোয় আঁকিবুকি কাটছিল। কোনো হাইজিন সেন্স নেই!

    “কুড ইউ প্লিস ক্লিন য়োর হ্যান্ড বিফোর শেকিং হ্যান্ড উইথ মি?”, তৃণা বলল।

    এই অপ্রত্যাশিত আচরণে ছেলেটা বেশ ঘাবড়ে গেল কয়েক মুহূর্তের জন্য। তারপর বলল “ও আয়াম সরি”।

    পাঁচজনের টিম তৃণার। আরো কিছু নতুন কাজ আসছে বলে আরো একজন দরকার ছিল টিমে। অরিত্র ক্যাম্পাস থেকে চাকরি পেয়েছিল কয়েকমাস আগে। জয়েনিং ছিল হায়দ্রাবাদে। ট্রেনিং শেষ করে বসে ছিল। গতকালই ফিরেছে কলকাতায়। আজ তৃণাকে রিপোর্ট করল।

    দিন ছয়েক কেটে গিয়েছে। অরিত্রকে তার কাজ বুঝিয়ে দিয়েছে তৃণা। ছেলেটা বেশ বুদ্ধিমান, কাজও ভাল করছে। শুধু একটা ব্যাপারই তৃণাকে বিরক্ত করে। অরিত্র চেয়ারে বসে একটা পা ভাঁজ করে তার উপরে। এবং তারপর আঙ্গুল দিয়ে জুতোর উপর আঁকিবুকি কাটে। সেই জুতোময় হাত দিয়ে সে সমস্ত কাজ করে। ভাগ্যিস প্রত্যেকদিন সে হ্যান্ডশেক করতে চায় না!

    দিন ছয়েক কেটে গিয়েছে। নিজের কাজ বুঝে নিয়েছে অরিত্র। শুধু বোঝেনি একটা কথা। সেদিন তৃণা কেন তাকে হ্যান্ডশেক করতে দিল না। তৃণা বেশ বন্ধুবৎসল। তাকে এই কথাটা জিজ্ঞাসা করাই যায়। কিন্তু মাত্র ছ'দিনের আলাপ। তাই একটু ইতস্তত করছে অরিত্র। কিন্তু বেশিদিন নিজেকে আটকে রাখতে পারল না সে।

    “তৃণাদি, একটা কথা বলো”

    “কী?”

    “প্রথমদিন তুমি হ্যান্ডশেক করলে না কেন গো?”

    “কারণ তোর হাত পরিষ্কার ছিল না”

    “কিন্তু আমার হাত তো পরিষ্কারই ছিল!”

    “তোর হাত কখনই পরিষ্কার থাকে না… তুই সর্বক্ষণ জুতোয় হাত বোলাস… সেদিনও তাই করছিলি!”

    অরিত্র হেসে ফেলল। “আরে আমার জুতো তো পরিষ্কারই থাকে!”

    “জুতো কখনও পরিষ্কার হতে পারে? তুই কি উড়ে উড়ে অফিসে আসিস? তোর বেসিক হাইজিন সেন্স নেই।”

    এইরকম জুতোকেন্দ্রিক হাইজিনবিষয়ক স্বল্পমেয়াদী তর্কে মাঝেমাঝেই আজকাল জড়িয়ে পড়ে তৃণা আর অরিত্র। তৃণা কিছুতেই ভেবে পায় না কী করে একজনের জুতো এত পরিষ্কার হতে পারে! অরিত্র কিছুতেই বোঝে না একটা জুতোতে কী এমন মলিনতা থাকতে পারে!

    দেখতে দেখতে প্রায় একবছর হতে চলল অরিত্র টিমে ঢুকেছে। একদিন সে বলল “তৃণাদি, আমার একটা বড় ছুটি লাগবে, টু উইক্স।”

    “বেড়াতে যাবি?”, তৃণা জিজ্ঞাসা করল।

    “না গো। বিয়ে করছি।”

    এক সপ্তাহ হয়ে গেল অরিত্র বিয়ে করে ফিরেছে। একবারের জন্যও সে জুতোয় আঁকিবুকি কাটেনি। তৃণার হঠাৎ করে চারপাশের সবকিছুকে কেমন অতিরিক্ত পরিষ্কার লাগতে শুরু করেছে। কোথাও কোনো জুতোর স্পর্শ নেই। একদিন তৃণা তার বাঁ পা'টা মুড়িয়ে চেয়ারের উপর রেখে তার উপর বসল। তারপর ডানহাতের তর্জনী দিয়ে নিজের জুতোর উপর আঁকিবুকি কাটতে লাগল আনমনে।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments