• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৩ | জুলাই ২০২১ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা : চিরন্তন কুণ্ডু


    অগ্নিসংস্কার

    আজন্ম লাইন দিলি, চিতার বেলায় হাঁড়িমুখ!
    কিন্তু দ্যাখ শুয়ে আছে তার কোন হেলদোল নেই
    কুকুরে মাংস নিল শকুনে খুবলে নিল চোখ
    তোরা দেখি কেঁদে খুন আহামরি মাসির দরদ!
    শ্মশানে বৈরাগ্য ভাব ছাই এই নশ্বর জীবন
    দশ ঘণ্টা কুড়ি ঘণ্টা ত্রিশ ঘণ্টা কী বা এসে যায়?
    তার চেয়ে বলছি শোন কোথাও সমস্যা কিছু নেই
    জন্মিলে মরিতে হবে ব্যতিক্রম কোথা পাবি বাপ?
    এমনিতে বুঝে দ্যাখ সবই বেশ নবীন বিমল
    শান্তি ও কল্যাণ সব -- মিছে কেন ঝামেলা পাকাস?
    না না ভয় দেখাচ্ছি না মুগুর তো হালকা নিতান্তই
    খাঁড়ার ঘা কাকে দেব জ্যান্ত আছিস নাকি কেউ?
    কোলেপিঠে মড়া নিয়ে ধৈর্যশীল মড়ার দঙ্গল
    এ বাঁক ও বাঁক ঘুরে বেঁকেচুরে পড়ে সার সার
    আরেকটু সবুর কর, যথাক্রমে নম্বর এলেই
    বডি নিয়ে দল বেঁধে দেশসুদ্ধ চিতায় উঠিস


    জয় হে

    প্রভু আমার প্রিয় তোমার পায়ে সর্বস্ব সঁপে দিয়েছি
    এখন রাখতে হয় রাখো মারতে হয় মারো
    ল্যাজে কাটো কি মুড়োয়, বেচে দাও কিলো দরে
    নাঙ্গা করে চৌরাস্তার মোড়ে দুহাতে তালি দিয়ে নাচাও
    সকলই তোমার ইচ্ছা দয়াল
    জানি তুমি পরম মঙ্গল, তোমার মর্জিতে
    বন্যা মারী বহ্ন্যুৎসব ডবল খাজনা যা ঘটে ঘটুক
    আমি তোয়াক্কা করি না
    চূড়া থেকে খেলাচ্ছলে গড়িয়ে দাও পাথর
    গ্রামশহর থেঁতলে শেকড়বাকড় উপড়ে
    আহা কী মনোরম হে মহামহিম
    কী ভেলকিতে জলে আগুন লাগাও
    ঘূর্ণির তোড়ে ভেসে ওঠে অস্থি, নাভির মালসা
    পুড়ে যাওয়া আঙুলে চেনা তামার আংটি
    ঘুনসিতে বাঁধা মাদুলি, ঝলসে যাওয়া চুলের গন্ধ
    কুড়োতে কুড়োতে মেরুদণ্ড নুয়ে পড়ে
    দুহাত ভরা ছাইয়ের কৃতজ্ঞতা তোমার চরণপদ্মে অঞ্জলি দিই
    চোখে জল এসে যায় করুণাধারায়
    অনেক দিয়েছ নাথ এবার ভালোয় ভালোয় বাকিটুকু সেরে ফেলো
    আমাদের উপুড় শুইয়ে
    সারসার অস্থিসার পিঠে তোমার তৃতীয় পা রাখো কৃপাময়
    ডঙ্কা দিয়ে দাঁড়াও—চাঁদ থেকে, শনি ও মঙ্গল থেকে
    তোমার দর্শন পেয়ে পাপীতাপী ধন্য হোক
    ধন্য ত্রিভুবন
    আমরাও ধন্য ধন্য প্রিয় পদভারে
    একটু একটু করে মাটির ভিতরে ঢুকে যেতে থাকি
    আরো আরো অন্ধকার জ্বালাপোড়া ফুটন্ত গভীরে
    নরকের কুণ্ডে শুয়ে তোমার মহিম্নস্তোত্র গাই


    পরশখানি

    তোমার কেরামতি দেখে তাজ্জব হয়ে যাই

    কাল সারাদিন চণ্ড রাগের ঝোঁকে তোলপাড়
    আরেকটু হলেই পৃথিবীকে ছিটকে দিতাম কক্ষ থেকে
    চুলের মুঠি ধরে দুই ছায়াপথের মাথা ঠুকে দিতাম
    কোনমতে নিজের বল্গা ধরে লাল কাপড়কে আটকে রেখেছি
    কাঁধ দিয়ে ঠেকিয়েছি ধ্বস
    তুমি ঠিকই টের পেয়েছ, জানি
    যেখানেই থাকো আমার নাড়িনক্ষত্র তোমার নখদর্পণে
    তাই হাওয়ার পথে, রাত্রে, ঘুমন্ত পৃথিবীতে তোমার আবির্ভাব
    সঙ্গীদের কাছ থেকে
    আমাকে ডেকে নিয়ে গেলে অন্য কামরায়
    আদিগন্ত মাঠ ক্ষেত ঘুরতে ঘুরতে পেরিয়ে গেল আমাদের
    জঙ্গলে ঢুকে পড়ল কালপুরুষ
    আর তুমি সমস্ত আবর্তনকে মণিবন্ধে নিয়ে টুকিটাকি কথার মধ্যে
    জাদুমন্ত্রে ভাসিয়ে রাখলে চোখের তারাদুটি

    এখন আমার গোলার্ধ জুড়ে ফুটে উঠছে ভোর
    তার ঈষৎ ভেজা পাপড়ি
    তুমি দূর উত্তরের দেশে কমলাসন থেকে নেমে
    সংসারের ঊনকোটি চৌষট্টি সামালাচ্ছ অবলীলায়
    তোমার ঠোঁটের কোণে একফালি হাসি ঝুলে আছে
    আলো হয়ে যাচ্ছে মাইলের পর মাইল
    ছড়িয়ে পড়ছে বারান্দায়



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণ - রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments