• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৩ | জুলাই ২০২১ | ছোটদের পরবাস | প্রবন্ধ
    Share
  • বাংলা ভাষায় প্রথম ডাইনোসর পরিচিতি : আবীর গুপ্ত


    পেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর নাম শুনলেই সবার আগে মনে আসে টুনটুনির গল্প আর ছোটদের জন্য লেখা নানান পৌরাণিক গল্প। কিন্তু এই বহুমুখী প্রতিভাধর মানুষটির প্রকৃত পরিচয় হয়তো অনেকেরই জানা নেই। বহু বিষয়ে গভীর আগ্রহ এবং দক্ষতা ছিল তাঁর, ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট প্রবন্ধ “সাথী”, “মুকুল”, “সখা” ও “বালক” এই চারটি পত্রিকায় আঠারোশো আশির দশকে প্রকাশিত হয়েছিল। জীব বিজ্ঞান বিষয়ক সমস্ত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় “সখা” পত্রিকায়। সম্ভবত ১৮৮৩ সালে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী ও ডাইনোসর নিয়ে লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় “মুকুল” পত্রিকায়। ডাইনোসর নিয়ে তাঁর লেখা প্রবন্ধই সম্ভবত বাংলা ভাষায় প্রথম ডাইনোসর পরিচিতি। সমস্ত ডাইনোসর ও প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের নিয়ে লেখা প্রবন্ধ “সেকালের কথা” নামে বই হিসেবে পরবর্তীকালে প্রকাশিত হয়। এই বইই সম্ভবত বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম ডাইনোসর সংক্রান্ত বই। অত দিন আগে, আনুমানিক প্রায় দশক অতিক্রান্ত শতবর্ষ আগে, তিনি যেমন কিছু কিছু ইংরেজি শব্দের পরিভাষা নিজে চয়ন করেছিলেন (উদাহরণস্বরূপ, ট্রাইসেরাটপসেরফ্রিলের বাংলা করেছিলেন হাঁসুলি) তেমনই, প্রথম ডাইনোসর আবিষ্কার থেকে আরম্ভ করে ডাইনোসর থেকে পাখির বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ও শিশু ও কিশোর পাঠকদের জানিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল তারই আঁকা ছবি ও বর্ণনা, যা এক কথায় অসাধারণ। প্রথমে তার লেখা প্রবন্ধের কিছু অংশ উদ্ধৃত করে বাঙালি পাঠকের সঙ্গে ডাইনোসরের আলাপ-পরিচয় ঘটানোর পথিকৃতের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হল —

    —“কোথায় কুমির আর কোথায় পাখি! কিন্তু পণ্ডিতদের অনেকে বলেন যে কুমির হইতেই পাখির সৃষ্টি হইয়াছে। অন্তত এ কথা নিশ্চয় যে, সেকালের কুমিরগুলির ভিতরে অনেক স্থলে পাখির লক্ষণ দেখা যায়। পিছনের পা আর কোমরের হাড়গুলির গঠন আজকালকার উটপাখিগুলির কোমরের হাড় আর পায়ের গঠনের সঙ্গে আশ্চর্য রূপে মিলে।

    চলিবার সময় ইহাদের সকলের না হলেও, অন্তত অনেকে পাখির মতন শুধু পেছনের পায়ে ভর দিয়াই চলিত। সামনের পা দুখানি পিছনের পায়ের চাইতে ঢের ছোট ছিল। ...এইসকল জন্তুকে সাধারণভাবে একটা শ্রেণীভূক্ত করিয়া মোটের উপর তাহাদের নাম “ডাইনোসর” রাখা হইয়াছে। ...ব্রনটোসরাসের ডিম হইলে, তাহার একটা না জানি কত বড় হইত! কিন্তু ডাইনোসরেরা ডিম পাড়িত কিনা, সে বিষয়ে পণ্ডিতদের সন্দেহ আছে। ... একটা ডাইনোসর ছিল, তাহাকে এখন পণ্ডিতেরা “ইগুয়ানোডন” (অর্থাৎ ইগুয়ানার মতন দাঁত যার — ইগুয়ানা একরকম গোসাপ) বলিয়া থাকেন। প্রথমে এই জন্তুর দাঁত পাওয়া গিয়েছিল। তাহা দেখিয়া তখনকার সকলের চেয়ে বড় পণ্ডিত কুভিয়ে বলিলেন, “এটা হিপোপটেমাসের দাঁত”। ...আর একটার নাম ট্রাইসিরেটপ্স (ত্রিশৃঙ্গানন অর্থাৎ তিন শিংওয়ালা মুখ যার)। ...ইহর উপর আবার গলায় হাঁসুলি! ...তারপর ডাইনোসরগুলির ভিতরে পাখির লক্ষণ দেখা যাইতে লাগিল। ইহাদের কোমরের হাড়, পিছনের পা প্রভৃতি পাখির মতন ছিল; ইহাদের পায়ের দাগ দেখিলে পাখির পায়ের দাগ বলিয়া ভ্রম হয়।”

    - উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী -

    এর অব্যবহিত পরবর্তী ডাইনোসর বিষয়ক প্রবন্ধকার উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীরই সুযোগ্য পুত্র সুকুমার রায়। এই বহুমুখী প্রতিভার স্বল্পায়ু মানুষটির প্রকৃত পরিচয় তাঁর রসরচনা বৃত্তের বাইরে থেকে গেছে। তাঁর লেখা ডাইনোসর বিষয়ক প্রবন্ধগুলি প্রকাশিত হয় “সন্দেশ” পত্রিকার ১৯১৫ থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে। তাঁর লেখা থেকে কিছু উদ্ধৃতি দেওয়া হল — “আর দুটো জানোয়ার ছিল মেগালোসরাস আর ইগুয়ানোডন; ইগুয়ানোডন দেখতে ভয়ানক বটে, কিন্তু নিরামিষভোজী, মেগালোসরাস আমিষভোজী। এরা দুজনেই হাতির চেয়ে বড় ছিল।

    সেকালের কুমিরদের পিছনের পাদুটার গড়ন সাংঘাতিক রকম মজবুত — লড়াইয়ের সময় পিছনের পাদুটাই আক্রমণ কিংবা আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করত। এদের নাম টিরানোসরাস বা অত্যাচারী কুমির এরাও হাতির চেয়ে বড় ছিল।”

    — সুকুমার রায় (প্রকাশকাল ১৯১৫ থেকে ১৯২৩ সাল)

    উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং সুকুমার রায়ের আগে একজন সাহিত্যিক কিন্তু প্রাগৈতিহাসিক সরীসৃপদের সম্বন্ধে বলেছিলেন, তিনি হলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮ – ১৮৯৪ সাল)। ওঁর কথা না বললে অন্যায় হবে। উনি এক জায়গায় লিখেছিলেন — “পূর্বকালীয় সরীসৃপ অতি ভয়ঙ্কর, তাদৃশ বিচিত্র এবং বৃহৎ সরীসৃপ এক্ষণে পৃথিবীতে নাই”।

    উপরে যা বলা হল, সেটা হচ্ছে অতীতে, বিভিন্ন সময়ে, সাহিত্যিকদের ডাইনোসর সংক্রান্ত লেখার কথা। এর সাথে লেখকের কিছু সংযোজন দরকার। প্রথমত, অতীতে ব্রন্টোসরাস বলে যে ডাইনোসরের কথা বিজ্ঞানীরা পৃথিবীবাসীকে জানিয়েছিলেন পরে সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে অতীতে ব্রন্টোসরাস বলে কোন ডাইনোসর সম্ভবত ছিল না। এটিকে বিজ্ঞানীরা “ডুবিয়াস” বা সন্দেহজনক ডাইনোসর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সন্দেহ করা হয় ক্যামারাসরাস এবং ডিপ্লোডোকাস নামে দুধরনের সরোপড ডাইনোসরের বিভিন্ন অংশের হাড় ভুলবশত জুড়ে এই ব্রন্টোসরাসের কঙ্কাল তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়া টিরানোসরাস রেক্স সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের অতীতে ধারণা ছিল টিরানোসরাস রেক্স পৃথিবীর ভয়ংকরতম প্রাণী, ডাইনোসরদের মধ্যে তো বটেই। পরবর্তীকালে, অতিসম্প্রতি দেখা গেছে, টিরানোসরাসকে যতটা ভয়ঙ্কর বলা হয়েছিল ততটা সে ছিল না। টিরানোসরাসের নিজের শিকার করার ক্ষমতা ছিলনা। স্ক্যাভেঞ্জার ছিল, অন্যের শিকার করা প্রাণী কেড়ে খেত। অতীতের সাহিত্যিকদের প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানিয়ে এই লেখা শেষ করা হল — তাঁরা শুধু বিজ্ঞান চর্চা করতেনই না, সেসময়কার বিজ্ঞানীদের বক্তব্য নিখুঁতভাবে তাঁদের লেখায় হাজির করেছিলেন।


    প্লেট টেকটনিকস্


    পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে তাকালে কিছু অদ্ভুত ও মজার জিনিস দেখা যাবে। দেখা যাবে মহাদেশগুলোর কিনারাগুলো জিগস' পাজল্ এর মতন যেন একটির সঙ্গে আরেকটি খাপে খাপে মিলে যায় বলে মনে হচ্ছে। যেমন উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার আটলান্টিক মহাসাগরের দিকের ধারগুলো মহাসাগরের উল্টো দিকে অবস্থিত ইউরোপ ও আফ্রিকার ধারের সঙ্গে মিলে যাবে। এ ব্যাপারটি ১৯১৫ সালে আলফ্রেড ভেগেনার প্রথম লক্ষ করেন। তিনি বলেন, মহাদেশগুলো সবসময়ই ভেলার মতন ভেসে চলে বেড়াচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা আগে ইউরোপ ও আফ্রিকার সঙ্গেই লেগে ছিল অর্থাৎ একটিই মহাদেশ ছিল, পরে ভেসে চলতে চলতে আলাদা হয়ে বর্তমান জায়গায় এসেছে। এই মতবাদই হল বিখ্যাত “মহাদেশের ভেসে চলা” বা “কন্টিনেন্টাল ড্রিফট” মতবাদ। এই চিন্তাভাবনা কিন্তু চাপা পড়ে যায়। অনেক বছর বাদে, ১৯৬০ এর দশকের প্রথম দিকে, একদল বিজ্ঞানী ভেগেনার সাহেবের বক্তব্যের সমর্থনে অনেক প্রমাণ হাজির করার চেষ্টা করেন। এই সমস্ত নতুন চিন্তাভাবনার ফসল হলো “প্রাগৈতিহাসিক চুম্বকত্ব” ও “সমুদ্রের তলদেশের বেড়ে যাওয়া” সম্পর্কিত মতবাদ। এই মতবাদগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা হলো নীচে —

    (১) প্রাগৈতিহাসিক চুম্বকত্ব (palaeomagnetism) — পাথরের মধ্যে যে চুম্বকীয় লোহার কণা আছে তার উপর নির্ভর করেই এই মতবাদ। যখন এই পাথরগুলো গলিত অবস্থায় থাকে তখন এই পাথরে থাকা লোহার কণাগুলো পৃথিবীর চৌম্বক মেরুর দিকে তাক করে থাকে; অনেকটা কম্পাসের কাঁটার মতো। ওই গলিত পাথর ঠান্ডা হওয়ার পর জমে শক্ত হলে ওই কলাগুলো চুম্বকমেরুর দিকে তাক করা অবস্থাতেই স্থায়ী হয়ে যায়। এইবারে, ওই পাথর পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা সহজেই সেইসময়ে পৃথিবীর চৌম্বক মেরুর অবস্থান জানতে পারবেন। এখনকার দিনের চুম্বকমেরুর সঙ্গে ওই পাথরে পাওয়া চুম্বকমেরু কিন্তু কখনোই মিলবে না। বিভিন্ন বয়সের পাথর পরীক্ষা করে ওই চুম্বকমেরুগুলোকে বার করলে দেখা যাবে যে সেগুলোর অভিমুখ একদিকে নেই, বিভিন্ন দিকে রয়েছে। দেখে মনে হবে যে চুম্বকমেরু বোধহয় নানান দিকে সরে সরে গেছে। আসলে তা নয়, পৃথিবীর চুম্বকমেরু ঠিকই আছে। কিন্তু মহাদেশ ভেসে সরে বিভিন্ন দিকে যাওয়ায় কণাগুলোর অভিমুখ একেক সময় একেক দিকে হয়েছে।

    (২) সমুদ্রের তলদেশের বেড়ে যাওয়া (Seafloor spreading) — সমুদ্রের তলদেশ খুব ভালো ভাবে পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে এই তলদেশ বেশ উঁচু পাহাড়ের সারি (mountain ranges) বা খাড়াই (ridge) দিয়ে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে নানা ভাবে বিভক্ত হয়েছে। খাড়াই যে জায়গায় আছে সেখানে পৃথিবীর উপরিভাগ বা ক্রাস্ট নতুন করে তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে গলিত পাথর (লাভা) বেরিয়ে এসে জমে শক্ত হয়ে এই পাথর তৈরি হয়েছে।

    এবার আসা যাক টেকটনিক প্লেট (Tectonic Plate) তত্ত্বে। পৃথিবীর উপরের শক্ত খোলা বা ক্রাস্টে থাকা চাদরের মতো বিশাল অংশগুলোকে প্লেট বলা হয়। এই প্লেটগুলো কিন্তু ভেসে বেড়াচ্ছে। যদিও এর গতিবেগ খুবই কম, বছরে দু-তিন সেন্টিমিটার মাত্র। এই প্লেটগুলোই মহাদেশগুলোকে ঘাড়ে করে নিয়ে যাচ্ছে। এটাই প্লেট টেকটনিকস্ মতবাদ।

    মেসোজোয়িক যুগে পৃথিবীর স্থলভাগের কী অবস্থা ছিল? বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, ট্রায়াসিক পিরিয়ডে কোন আলাদা আলাদা মহাদেশ ছিল না। মহাদেশগুলো একসঙ্গে জোড়া অবস্থায় ছিল। অর্থাৎ, একটাই মহাদেশ ছিল। এই মহাদেশের নাম বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন প্যানজিয়া। বিজ্ঞানীদের এই ধারণা কেন হল? কারণ বিজ্ঞানীরা ট্রায়াসিক যুগের পাথরে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় যে সমস্ত ফসিল (অবশ্যই স্থলচর প্রাণীদের) পেয়েছেন সবই একই রকমের এবং তাদের মধ্যে আশ্চর্যরকম সাদৃশ্য রয়েছে। এছাড়াও প্রাগৈতিহাসিক চুম্বকত্ব পরীক্ষা করেও এর সপক্ষে জোরদার সমর্থন পাওয়া গেছে। যেমন বিজ্ঞানীরা শুয়োরের মতন দেখতে লিস্ট্রোসরাসের জীবাশ্ম পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, চিন ও অ্যানটার্কটিকা থেকে। এর মানে একটাই, যে এই মহাদেশগুলো ওই সময়ে এক সঙ্গে যুক্ত ছিল। এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, বর্তমান লেখক পুরাজীববিজ্ঞানী হিসাবে পুরুলিয়া জেলার পাঞ্চেত ফর্মেশনের পাথর থেকে এমন দুধরনের লিস্ট্রোসরাসের ফসিল পেয়েছেন যে দুটি ভারতে আগে পাওয়া যায়নি কিন্তু আফ্রিকাতে পাওয়া গেছিল। এ থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে অতীতে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্ত ছিল।

    জুরাসিক পিরিয়ডে প্যানজিয়া ভাঙতে শুরু করে ও বিরাট বড়ো বড়ো অনেকগুলো টুকরায় বিভক্ত হয়ে যায়। দক্ষিণ দিকের মহাদেশগুলো অর্থাৎ দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ভারতবর্ষ, অ্যানটার্কটিকা ও অস্ট্রেলিয়া ক্রমশই ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এভাবে দূরে সরে যাওয়ার জন্য এদের মধ্যে সরু এক সমুদ্র তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে ভেঙে যাওয়া সত্ত্বেও এই মহাদেশগুলোর মধ্যে নিশ্চয়ই কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল; তা নাহলে অন্ত্য-জুরাসিকে উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকাতে একই রকম ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাওয়া যেত না। ডিপ্লোডোসিডস্, ব্র্যাকিসরিডস্ বা ইগুয়ানোডনটিডস্ এর একই রকম জীবাশ্ম এই দুই জায়গাতেই অন্ত্য-জুরাসিক পিরিয়ডের পাথরের পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও একটি সমুদ্র, যার নাম টুরগাই সমুদ্র, মধ্য-জুরাসিকে ইউরোপকে এশিয়া থেকে আলাদা করে রেখেছিল।

    আদি ক্রিটেশাসে, আটলান্টিক মহাসমুদ্র তৈরি হওয়া শুরু হলো আর উত্তর ও দক্ষিণ দিকের মহাদেশগুলো পুরোপুরিভাবে পরস্পরের থেকে আলাদা হয়ে গেল। একই সময়ে ভারতবর্ষও আফ্রিকা থেকে আলাদা হতে শুরু করল।

    অন্ত ক্রিটেশাসে, মহাদেশগুলো বর্তমান অবস্থানের দিকে সরতে শুরু করল। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল আর ভারত, ভারত মহাসাগর অতিক্রম করা শুরু করল। উত্তর দিকের মহাদেশগুলো যদিও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল তবুও তাদের মধ্যে কিন্তু যোগসুত্র ছিল। উত্তর আমেরিকার পশ্চিম দিকে আর এশিয়ার পূর্ব দিকে সম্ভবত এই যোগসুত্র ছিল। একই সময়ে কিন্তু ইউরোপের সঙ্গে উত্তর আমেরিকার পূর্ব দিক যুক্ত ছিল। এই সব কিছু বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরদের ফসিল পাওয়ার উপর নির্ভর করেই বলেছেন। মহাদেশ তৈরির ইতিহাস ও সেই মহাদেশগুলোর অবস্থানের একটা বিরাট প্রভাব আছে ডাইনোসরদের বিবর্তনের ইতিহাসের উপর। এই কারণেই এই আলোচনা।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments