কাক ডাকার আওয়াজে ভোরের দিকে পাতলা ঘুমটা ভেঙে গেল সুবালার। খোলা জানালা দিয়ে একটা কুসুম রঙের আলো ঘরের অন্ধকার মেঝেতে বেয়ে বেয়ে নামছে। নরম আলোতে বাগানে পেয়ারা গাছটা নজরে এল। ওখানে বসেই কি ডাকছিল কাকটা? আজ কি তবে কেউ আসবে? সেটাই জানান দিচ্ছিল কাক? কে জানে? আশা-নিরাশায় মাখা একটা লম্বা শ্বাস বেরিয়ে এল বুকের ভিতর থেকে। বিছানা ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে উঠোন পেরিয়ে বাইরের গেটে এসে দাঁড়ালেন তিনি। সামনে রাস্তা আর তার ওপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ইছামতী। উদ্দাম বর্ষা শেষ হবার পর সদ্য সন্তান প্রসব করা মায়ের মত শান্ত ও আনন্দিত ভাবে বইছে নদীটি। পারে কিছু যাত্রীনৌকা বাঁধা। দু-একটা নৌকায় সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মাঝিরা তৈরি হচ্ছে যে যার কাজের জন্য। মাছের নৌকা এ ঘাটে লাগে না। তাদের বেচাকেনার অন্য ঘাট। ওপারে বাংলাদেশে ভোরের আধ-ফোটা আলোয় অস্পষ্ট সবুজের রেখা। সুবালা চেয়ে রইলেন নদীর দিকে বেশ কিছুক্ষণ। হারানো দিনের স্মৃতি কি তার মনে কোন ছবি আঁকল এই সময়ে? একটা স্টিমারের বাঁশির শব্দে সচকিত হয়ে উঠলেন। দেখলেন চারদিকে আলো ফুটেছে। বাঁশের গেট বন্ধ করে উঠোন পেরিয়ে আবার ঘরে ঢুকলেন তিনি। তাড়াতাড়ি রান্না করে ফেলতে হবে। কার যেন আসার কথা আজকে?
কলকাতা থেকে ঘণ্টা দুয়েকের রেলযাত্রা, তারপর টোটো করে আধাঘণ্টায় চাঁপাতলা। রাস্তা অনেকটা। টোটো থেকে নেমেই মনে হলো প্রকৃতি যেন এখানে থম মেরে আছে। একটা নদী অলসভাবে শুয়ে আছে। বর্ষাশেষে সরু পিচের উঁচু রাস্তার পাশের গর্তগুলো জলে ভরা। রাস্তার পাশের বাড়িগুলো বেশ দূরে দূরে। প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই সামনে কিছুটা জমি আর পেছনে বা পাশে একটা করে ছোট ডোবা বা পুকুর। বাড়িগুলো বেশিরভাগই বেশ প্রাচীন এবং সংস্কারের অভাবে ভুগছে। টোটো চালক বলল এসব বাড়ির মালিকরা হয় কোলকাতায় নাহয় বিদেশে থাকে। কালেভদ্রে এখানে আসে। কিছু বাড়িতে প্রবীণরা থাকেন কেয়ারটেকারের ভরসায়। টোটো থেকে নেমে রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানে জিজ্ঞেস করতেই ‘ঘোষ বাড়ি’ দেখিয়ে দিল দোকানি। ‘আপনি কি কলকাতা থেকে আসছেন? আপনি কি ঘোষেদের কেউ? ওরা কি বাড়ি বিক্রি করছে?’ দোকানে বসা মানুষজনের এইরকম নানা ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ঘোষ-বাড়িতে এসে বাঁশের গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ল সে। দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে এলেন এক বৃদ্ধা। বোধ হয় রান্না করছিলেন।
‘আমি ঋষভ, কলকাতা থেকে আসছি।’
কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে রইলেন সুবালা। তারপর কি মনে পড়তে বললেন, ‘ও হ্যাঁ, সৌম্য জানিয়েছিল। ভেতরে এস।’ ভেজা হাত আঁচলে মুছতে মুছতে তাকে দরজা ছেড়ে দিলেন তিনি। সৌম্য হল ঋষভের অফিস-বস বারিনদার ভায়রাভাই ও এ বাড়ির ছোট ছেলে। কোলকাতায় থাকে। তাকে বলেই এই বাড়িতে ঋষভের থাকার ব্যাবস্থা হয়েছে।
এখান থেকে কিছু দূরে ইছামতীতে দশমীর বিসর্জন খুব বিখ্যাত। অনেক দর্শনার্থী আসে বিসর্জন দেখতে। প্রচুর ভিড় হয় সেই সময়। এবারে সেই দুর্গাপুজোর বিসর্জনের পুরো ইভেন্ট ঋষভকেই কভার করতে হবে ‘আমার-বাংলা’ পত্রিকার পক্ষ থেকে। পত্রিকা নতুন, সবে হাঁটছে। বছর খানেক আগেই একটা বড় বিজনেস হাউস এই পত্রিকা লঞ্চ করেছে। অনেকের সঙ্গে সাংবাদিক-সহসম্পাদক হিসেবে ঋষভও পত্রিকাতে যোগ দিয়েছিল। ইতিমধ্যেই সাংবাদিক হিসেবে তার কিছু পরিচিতি হয়েছে পাঠকমহলে। আরো কাজ দেখাতে হবে। সম্পাদক বারিনদা একদিন তাকে ডেকে বললেন ‘এবারের দশমীর বিসর্জনটা কভার করার আগে জায়গাটা একবার ঘুরে এস। ইছামতী ও তার তীরবর্তী মানুষ, তাদের জীবনযাত্রার সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে আগামী দু-তিন সপ্তাহ বৃহস্পতিবারের ‘জেলার বার্তা’ বিভাগে একটা করে আর্টিকেল লেখো। পাঠকদের উৎসাহ বাড়বে।’ এখানকার ঠিকানা বারিনদাই জোগাড় করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন এটা যেহেতু ওনার আত্মীয়ের বাড়ি, এখানে থেকে দু-তিন দিনের কাজ করতে কোন অসুবিধা হবে না।
**********
দুপুরের কালবোস মাছের ঝোলটা বেশ ঝাল হয়েছিল। খেতে হয়েছিল দারুণ সুস্বাদু। আজ সকালেই পাড়ার কোন পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরা হয়েছে। সেখান থেকে একটা বড় মাছ কেউ দিয়ে গিয়েছিল বৃদ্ধাকে। এ-বাড়ির একজন কেয়ারটেকার আছে। সে বাড়ির পুকুরপারে একটা ঝুপড়ি ঘরে বউ নিয়ে থাকে। কেয়ারটেকার বাজারহাট এবং বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করে। রান্না করা, বাসন মাজা ইত্যাদি করে তার বউ। তবে আজ মাছের ঝোল নাকি সুবালা নিজের হাতে রেঁধেছেন। ঋষভ জানত বাঙ্গালরা রান্নাবান্নায় সিদ্ধহস্ত। কিন্তু এ তো স্বর্গীয় স্বাদ! অনেকদিন জিভে লেগে থাকবে।
বৃদ্ধাকে দেখলে বোঝা যায় একসময় বেশ সুন্দরী ছিলেন তিনি। লম্বাটে চেহারায় একটা ব্যক্তিত্বের প্রলেপ রয়েছে। কথা বললে সেটা বেশি করে টের পাওয়া যায়। বারিনদা বলেছিলেন সুবালা ও তার মা-বাবা বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে এসেছিলেন। প্রথম দিকে আত্মীয়স্বজনের আশ্রয়ে থাকলেও কিছুদিনের মধ্যেই ওনার বাবা এই দোতলা বাড়িটি কিনেছিলেন। কয়েক বছরের মধ্যেই একটি সৎ ও গরীব উদ্বাস্তু ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সুবালার। জামাই গরীব এবং তিনি নিজে একমাত্র সন্তান হওয়াতে স্বামী সংসার নিয়ে এখানেই থাকেন সুবালা। একরকম সুখেই ছিলেন সবাই। বাবা মা চলে গেছেন অনেক আগে, আর স্বামীরও মৃত্যু হয়েছে প্রায় বছর পনেরো হল। স্বামী থাকতেই যথাসময়ে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন, দুই ছেলেও এখন বিবাহিত এবং তারা সবাই থাকে তাদের নিজেদের কর্মস্থলে। দুই নাতি বিদেশে পড়াশুনো করে। ছেলে-মেয়েদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব বাড়ি আছে। হয়তো বছরে দু-একবার দিন দুয়েকের জন্য মাকে দেখতে আসে তারা। তবে সারা বছর কেয়ারটেকারই ভরসা সুবালার। ডাক্তার বদ্যি সবই আছে এখানে। সবাই চেনে জানে। বিশেষ অসুবিধার কিছু নেই। বাড়ির নিচের তলাতে সুবালার গোছানো সংসার। দোতলা বন্ধই থাকে। ছেলে-মেয়েরা এলে খোলা হয়। তারা চায় এখানকার বসতবাটি বিক্রি করে মাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে। কিন্তু বৃদ্ধা বেঁকে বসেছেন। এই ভিটে ছেড়ে তিনি যেতে চান না।
********
খুট করে একটা আওয়াজে রাতের ঘুমটা ভেঙে গেল ঋষভের। এখন কত রাত কে জানে। বিছানার পায়ের দিকে জানলাটা বৃষ্টির ছাট আসার কারণে বন্ধ করে দিয়েছিল সে শোবার আগেই। ঘুম ভেঙ্গে দেখল জানলাটার একটা পাল্লা একটুখানি খোলা। একটা ছায়ামূর্তি মনে হল জানলার পেছনে দাঁড়ানো। ফিসফিস করে কেউ তাকে বলছে ‘ওঠো গো, যাইবা না? সময় হইয়া গেল যে। এরপর সূর্য উইঠা পড়বো। ওঠো ওঠো। চলো।’ বারবার ফিসফিস করে ‘ওঠো ওঠো’ বলে অপার্থিব স্বরে কেউ যেন তাকে আহ্বান করছে।
ভীষণ ভয় পেল সে। একে অচেনা জায়গা। তার উপর বাইরে রাস্তার আলোটাও জ্বলছে না। চারদিক অন্ধকার। কেউ কি এল তাকে ডেকে নিয়ে যাবে বলে? মানুষ বলতে তো এ বাড়িতে শুধু সে আর ওই বৃদ্ধা। তা তিনিও তো ওপাশের ঘরে নিদ্রামগ্ন। কেয়ারটেকার তার পুকুরপাড়ের ঝুপড়িতে। এটা পুরুষ না নারীকন্ঠ তাও ঠাহর করতে পারল না সে। শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নিচের দিকে বয়ে গেল তার। কী করবে বুঝে ওঠার আগেই থেমে গেল আওয়াজটা। খানিকটা সাহস সঞ্চয় করে আস্তে আস্তে বিছানার থেকে নেমে ভিতর থেকে জানলাটা আবার বন্ধ করে দিল ঋষভ। বাকি রাত আর ঘুম এল না তার। জানলা তো বন্ধই ছিল, খুললো কে? একটা ছায়ামূর্তির আভাস কি সে পেয়েছিল? নাকি সেটাও চোখের ভুল। এমনও তো হতে পারে যে পুরোটাই তার মনের ভুল। জানলাটা কোনভাবে হাওয়াতে খুলে গেছে। এইসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই দেখল আকাশে ভোরের আলো ফুটছে। ভোরে বৃষ্টি হওয়াতে সকালে উঠে জানলার নিচে কোন পায়ের ছাপ বা অন্য কিছু দেখতে পেল না সে।
সকালে জলখাবারে ফুলকো ফুলকো লুচি আর বেগুনভাজা খেতে খেতে সে বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করল ‘এবাড়িতে কি আর কেউ আছে আমরা দুজন ছাড়া?’ সে যে একটা গলার আওয়াজ পেয়েছিল রাতে সেটাও বলল। বৃদ্ধা হেসে উড়িয়ে দিলেন। বললেন।
‘কে আর থাকবে এই ডাইনি ছাড়া। এখানে ভয়ের কিছু নেই। যদি দরকার হয় তবে কেয়ারটেকার রাতে তোমার ঘরের মেঝেতে শুতে পারে।’
‘না না এসবের দরকার নেই।’ ঋষভ যেন একটু লজ্জাই পেল।
সারাদিন নানা কাজে ব্যস্ত থাকল ঋষভ। বিশেষ করে আশপাশের গ্রামের লোকজনের সঙ্গে গ্রামের মাথাদের সঙ্গে এবং বিভিন্ন সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলা ইত্যাদি কাজে। ছবিও তুলল অনেক। সরকারপক্ষ থেকে রাস্তা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদি বানানো হয়েছে। প্রায় দু কিলোমিটার দূরের ইছামতীর পারের টুরিস্ট স্পটটা অবশ্য বেশ জমজমাট। সেখানে অনেক হোটেল ইত্যাদি আছে। তবে এই জায়গাটা বড় নির্জন।
পরের রাতে মনে মনে তৈরি হয়েই ছিল ঋষভ। গতরাতে কী ঘটেছিল, কে এসেছিল, অথবা ব্যাপারটা তারই মনের ভুল কিনা, এইসব রহস্য ভেদ করতেই হবে। সে নিজে কোন অলৌকিক ব্যাপার বিশ্বাস করে না। তবে গতকাল যে এসেছিল সে আজও আসবে কিনা কে জানে। তবু আজরাতে ঋষভ জানালাটা ছিটকিনি না লাগিয়ে শুধু ভেজিয়ে রাখল। নানা কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুম এসে গিয়েছিল কে জানে। একটা ঠকঠক আওয়াজে আজও ঘুমটা ভেঙে গেল তার। কেউ যেন জানলাতে আঙ্গুলের টোকা দিচ্ছে খুব সাবধানে। যাতে সে ছাড়া অন্য কেউ শুনতে না পায়। অন্ধকারে চোখ মেলে জানলার দিকে তাকিয়ে দেখল জানলা বন্ধই আছে। ঠিক তখনই আবার শুনতে পেল সেই কণ্ঠস্বর, সেই আহ্বান।
‘চলো চলো উইঠা পড়। আর ঘুমাইও না। নৌকা ছাইড়া দিব।’
জানলার বাইরে থেকেই আসছে আওয়াজটা।
আর অপেক্ষা না করে সন্তর্পণে ঘরের দরজা খুলে সামনের বারান্দায় পা রাখল ঋষভ।
জানলার কাছে কাউকে দেখা গেল না। আশেপাশে কোথাও কেউ নেই। নিশ্চিত মনের ভুল ভেবে নিজের ঘরে ফিরে যাবে ভাবছে, হঠাৎ লক্ষ করলো ওপাশে বৃদ্ধার ঘরের বন্ধ দরজার বাইরের শিকলটা দুলছে। কেউ কি এখনই ঢুকলো বা বেরোলো সেঘর থেকে? কাছে গিয়ে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভিতর থেকে কোন শব্দই পাওয়া গেল না। এতটা ভুল দেখল সে? বৃদ্ধাকে কি ডাকবে একবার? কিন্তু তাতে কী হবে? চারদিকে লক্ষ্য করে দেখল, ওপাশে কেয়ারটেকারের ঘর অন্ধকারে ঢাকা। আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সে ফিরল নিজের ঘরে। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো কে ডাকতে পারে তাকে। ভাষাটা পূর্ববঙ্গীয়। এই বাড়িতে তো কেউ বাঙ্গাল ভাষায় কথা বলে না। বৃদ্ধার গলার স্বরও তো এরকম নয়। নৌকার কথা বলছিল। তবে কি কেউ নদীর দিক থেকে উঠে এল আজও? চিন্তায় চিন্তায় রাত কাবার হল।
**********
দুদিন হয়ে গেছে এখানে। আগামীকাল চলে যেতে হবে। যদিও আর একদিন থাকার কথা ছিল। দুপুরে তার সম্পাদক ফোন করে তাকে বলেছেন আজকের মধ্যে যতটা হয় কাজ করে ফিরে যেতে। এযাত্রা আর থাকার দরকার নেই। কলকাতায় দুর্নীতির অভিযোগে কোন বড় নেতার বাড়িতে হানা দিয়েছে সিবিআই। আগামী কয়েকদিন আরও এরকম হবে। ধরপাকড় চলছে। তদন্ত পুরোদমে এগোচ্ছে। ওখানে লোক দরকার। সে যেন ভোরের প্রথম ট্রেন ধরে সল্টলেকের সি জি ও কমপ্লেক্সে সি বি আই অফিসে চলে আসে। ব্যাপারটা কভার করতে হবে।
ঋষভ সেইমতো বৃদ্ধাকে রাতেই জানিয়ে দিল যে কাল ভোর রাতেই তাকে চলে যেতে হবে। বৃদ্ধার কিছুটা মন খারাপ হল। উনি বললেন, ‘কাল তোমাকে সর্ষেবাটা দিয়ে এখানকার ইলিশ খাওয়াব ভেবেছিলাম। এখন তো বিশেষ কেউ আসে না। সেভাবে রান্না করতে ইচ্ছা করে না নিজের জন্য। তবে আবার এস তখন খাওয়াব। তোমার কাজ তো শেষ হয়নি বলছিলে।’
তিনি আরো বললেন, ‘যাবার সময় শেষরাতে কাউকে জাগাবার দরকার নেই। ঘরের শিকল বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলেই হবে। তুমি যাবার কিছুক্ষণের মধ্যেই তো ভোর হয়ে যাবে। তাছাড়া এখানে চোরের উপদ্রব নেই।’ সকাল সাড়ে চারটের প্রথম ট্রেন ধরতে হবে বলে টোটোকে রাতেই বলে রাখা আছে। টোটো বড় রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানের সামনে অপেক্ষা করবে।
আজ রাত নিরুপদ্রবেই কাটল। সেই কণ্ঠ আর শোনা যায়নি। ভোররাতে তৈরি হয়ে দরজায় শিকল তুলে উঠোন পেরিয়ে বাইরের বাঁশের গেটটা খুলতে গিয়েই মনে হল আধো অন্ধকারে পাশের শিউলি গাছটার নিচে পড়ে থাকা সাদা শিউলির আলপনার মধ্যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। ভীষণ চমকে গেল সে। বুঝল, এ তার চোখের ভুল নয়। কিন্তু কে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে এই সময়ে?
গুটি গুটি পায়ে কাছে গিয়ে অবাক হয়ে দেখল যে শিউলিতলায় দাঁড়িয়ে আছেন সুবালা। পরনে একটা ধোপদুরস্ত শাড়ি। দুহাতে পরেছেন সোনার বালা, গলায় হার। কোথাও যাবার জন্য যেন প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষা করছেন।
‘আপনি এখানে? এই সময়ে? বের হবেন কোথাও?’ থেমে থেমে প্রশ্নগুলো করে উত্তরের অপেক্ষা করতে লাগল ঋষভ।
সুবালা তার দিকে চেয়ে রইলেন বেশ কয়েক মুহূর্ত। তারপর ভেজা ভেজা গলায় বললেন-
‘তুমি তো আমারে নিয়া গেলা না। আর কতদিন এইভাবে অপেক্ষা করুম। পরেরবার আইসা নিয়া যাইও কিন্তু। কথা দাও আমারে। আমার তো অনেক কাম বাকি আছে।’ কাছে এসে তার দুহাত ধরে ঝাঁকাতে লাগলেন বৃদ্ধা।
বেশ হতচকিত হয়ে গেল ঋষভ। সুবালার গলার আওয়াজ স্বাভাবিক নয়। তার জানলার বাইরে থেকে তাকে আহ্বান করা কণ্ঠের মত শোনাল তার গলা। সুবালাই কি তাহলে তাকে আহ্বান করতেন? কিন্তু বাঙ্গাল ভাষায় কেন? স্বাভাবিক অবস্থায় বাঙ্গাল ভাষা তো তিনি বলেন না। কিন্তু কোথায় নিয়ে যাবার কথা বলছেন তিনি? বিরাট খটকা রয়ে গেল মনে। দেরি হয়ে যাচ্ছে। হাত ছাড়াতে চেষ্টা করল সে। কোনরকমে বলল, ‘আমাকে এবার যেতে হবে। আমি আবার আসবো। ভালো থাকবেন।’
‘আর কতদিন এইভাবে অপেক্ষা করতে পারুম, কইতে পারি না। তোমাগো একটা জিনিস আমার থিকা তুমি লইয়া যাও। অগো দিয়ো। ওরা আমারে চিনব। কইও আমি এইখানে অপেক্ষা করতাছি। আমারে যেন শীঘ্র লইয়া যায়।’ একটু দম নিয়ে আবার বললেন, ‘জানি তোমারে যাইতে হইব। এখন তো অনেক কাম তোমাগো।’ এই পর্যন্ত বলে আঁচলের ভিতর থেকে একটা ছোট্ট সোনালি রঙের কৌটো বের করে ঋষভের হাতে দিলেন উনি, বললেন ‘বাসায় যাইয়া খুইলো।’
কোনো রকমে জোর করেই ওনার হাত ছাড়িয়ে, গেট খুলে, প্রায় দৌড় লাগাল ঋষভ। ফিস ফিস কণ্ঠস্বর কানে লেগে রইল তার। ভাগ্যিস টোটোটা তখনও দাঁড়িয়েছিল। ট্রেনে যেতে যেতে অজস্র ফোন পেল সে। তাকে কোথায় কোথায় যেতে হবে, কী কী করতে হবে ইত্যাদি ব্যাপারে। আজ ভোররাত থেকেই রেইডে বেরিয়েছে সি বি আই। একসঙ্গে প্রায় আট দশ জায়গায় রেইড হবে। অনেক কাজ। তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িসমেত তাদের একটা টীম থাকবে শিয়ালদা স্টেশনে।
**********
সপ্তাহখানেক একনাগাড়ে থানা পুলিশ, কোর্ট, সিজিও কমপ্লেক্স ইত্যাদি চলার পর একটু ছুটি মিলল। রাতে ঘুমের অতলে তলিয়ে যাবার আগে মনে পড়ল সেই ছোট্ট সোনালি কৌটোটার কথা। সেটা ব্যাগ থেকে বের করে খুলতেই ভিতর থেকে বেরিয়ে এল বেশ পুরনো একটা রুপোর আংটি। আংটির পাথরে নকসা কাটা রয়েছে মনে হল। কার আংটি দিলেন বৃদ্ধা তাকে? কাকে দিতে হবে? বারিনদাকে জিজ্ঞেস করতে হবে ব্যাপারটা। যত্ন করে আবার কৌটোতে আংটিটা রেখে দিল সে।
আরো দিন পাঁচেক দৌড়ঝাঁপের পর কিছুটা লম্বা অবসর পাওয়া গেল। এক সকালে অফিস পৌঁছতেই বারিনদা তাকে ডেকে পাঠালেন-
‘তুই সেদিন যখন চাঁপাতলা থেকে ফিরে এলি, তখন বৃদ্ধাকে কেমন দেখেছিলি? উনি সুস্থ ছিলেন তো?’
‘হ্যাঁ সুস্থই তো ছিলেন। আমাকে তো রোজ নিজের হাতেই রান্না করে খাওয়াতেন উনি।’ একটু থেমে সে যোগ করল, ‘অবশ্য কয়েকবার অসংলগ্ন ব্যবহার করেছেন, অসংলগ্ন কথাও বলেছেন। ভেবেছিলাম আপনাকে জিজ্ঞেস করব। কিন্তু কাজের চাপে সেসব নিয়ে আপনার সঙ্গে কোন আলোচনা করার সময়ই পাইনি।’
‘হ্যাঁ। নিঃশ্বাস ফেলারও সময় পাইনি কদিন। শুনেছি কদিন হল উনি খুবই অসুস্থ। বাড়িতে একটা ছোট্ট স্ট্রোক হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। ওখানে হাসপাতালে ছিলেন। মনে হয় স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে তাঁর। কাউকেই চিনতে পারছেন না। কথা যতটুকু বলছেন তার সবই অসংলগ্ন। কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে তাকে। বাইপাসের ধারে একটা মাল্টি স্পেসালিটি হসপিটালে ভর্তি করা হবে আজ বিকেলের দিকে। কাল একবার গিয়ে দেখে আসিস সময় করে। বিকেল চারটে থেকে ছটা ভিজিটিং আওয়ার।’
ভিজিটারস পাসটা অ্যাটেনডেন্ট-এর কাছ থেকে নিয়ে হাসপাতালের ছয়তলায় উঠে এল ঋষভ। লিফটের সামনের ওয়ার্ডেই সুবালার বেড। দেখল বৃদ্ধা চোখ বুজে শুয়ে আছেন। সে যেতে তার দিকে তাকালেন তিনি। একটা বিরাট ক্লান্তি জড়িয়ে আছে সেই চাহনিতে। তাকে দেখেই চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার। আবার সেই ফিসফিসে আওয়াজ বের হল-
‘আসছ আনোয়ারদা। আমারে নিয়া চলো। সেই রাতে আমাগো নৌকা ছাইড়বার সময় তুমি আমারে কথা দিছিলা।’ ক্লান্ত চোখে ঘুম জড়িয়ে আসছে তার। চোখ বুঝে ফেললেন তিনি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে, অ্যাটেনডেন্টকে ভিজিটারস পাসটা দিয়ে বেরিয়ে এল ঋষভ। বাড়ির লোকজন এসে গেছে। দুজনের বেশি ভিজিটর এখানে থাকার নিয়ম নেই। তাকে বের হতে হবে।
পরের দিন দুপুরে একটু ফাঁকা পেয়ে সে ঢুকল সম্পাদকের চেম্বারে, ‘কী হয়েছে বলুন তো বারিনদা ওনার? বেশ অসংলগ্ন কথা বলছেন, অদ্ভুত ব্যাবহার করছেন।’
‘পুরোটা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। বোধ হয় আলঝাইমারের লক্ষণ। সৌম্য বলল, উনি কলেজে ভর্তি হয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কিছুটা জড়িয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় হিন্দুদের ওপর, বিশেষত তাদের ঘরের মেয়েদের ওপর রাজাকার ও পাক সেনাদের অত্যাচার খুব বেড়ে ওঠাতে ওনার বাবা ঠিক করলেন তাঁরা পালিয়ে ভারতে চলে আসবেন। নাহলে ওখানে মেয়েকে বাঁচাতে পারবেন না। হয়ত নিজেরাও খুন হয়ে যাবেন। অনেক আগে সেই দেশ বিভাজনের সময় ওনার এক কাকা পরিবার-সহ ভারতের এক মুসলিম পরবারের সঙ্গে সম্পত্তি অদলবদল করে পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছিলেন। তাই ভারতে তাদের কোন অসুবিধে হবে না। তাছাড়া বাংলাদেশে ওনাদের আর্থিক অবস্থা খুবই ভালো ছিল। ভারতে এসে কাকার কাছে থাকার কিছুদিনের মধ্যেই সুবালার বাবা ওই বাড়ি কিনেছিলেন।’
‘আচ্ছা, মুক্তিযুদ্ধ মানে তো সেই একাত্তরের যুদ্ধ?’
‘হ্যাঁ।’
‘কিন্তু তার সঙ্গে ওনার রোগের কী সম্পর্ক?’ প্রশ্ন চেপে রাখতে পারল না ঋষভ।
‘অসুস্থ হবার আগে কিছুদিন ধরে উনি কারো জন্য অপেক্ষা করতেন। মাঝে মাঝে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতেন। ভাবতেন কেউ এসে ওনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে। মানসিক বিকার বলতে পারিস।’
‘তাই নাকি?’
এখানকার হাসপাতালের মনস্তত্ত্ববিদরা বলেছেন যে ওনার স্মৃতিতে কোন ভাবে জেগে উঠেছে সেই সময়, যখন উনি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গোপনে যুক্ত ছিলেন। ওখান থেকে হঠাৎ চলে আসাতে দেশের মুক্তিযুদ্ধে তার সরাসরি যোগ দেবার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। হয়ত তিনি ঠিক করেছিলেন যে আবার দেশে ফিরে আসবেন লড়াইয়ে সামিল হবার জন্য। কিন্তু তা আর সম্ভব হয় নি। জীবননদী নিজের মত বয়ে গিয়েছিল। এতদিন ঘর সংসার করেছেন। হয়ত তিনি ভুলেছিলেন সব। সেই সময়ের কথা আবার মনে পড়ার পর দিনের পর দিন ভীষণ ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। স্ট্রোকের সেটাই বোধহয় মূল কারণ।
**********
আজ দ্বাদশী। দূর থেকে ভেসে আসছে বিসর্জনের বাজনা। তবে আজ তেমন মাতামাতি নেই। দশমী আর একাদশীতেই প্রায় সব প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গেছে। নৌকা করে আজ দুয়েকটা বাড়ির প্রতিমা বিসর্জন হচ্ছে শুধু। মূল বিসর্জনের ঘাট ছেড়ে আজ ঋষভ চাঁপাতলার নির্জন ঘাটে এসে বসেছে। পেছনে সুবালার বাড়ি অন্ধকার। হাসপাতাল থেকে সুবালা ছাড়া পাবার পর সৌম্যদা নিজের বাড়িতে নিয়ে গেছে ওনার মাকে। হাসপাতালে থাকতেই আর একটা ছোট হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল ওনার। এখন একটু সুস্থ হলেও ‘কথা’ একদম জড়িয়ে গেছে তাঁর। শরীরের ডান দিকটা এখনও পুরোপুরি সচল হয়নি। ডাক্তাররা বলেছেন বয়সের কারণে ওনার একটু বেশি সময় লাগবে সুস্থ হতে। তবে ওনার মনের জোরটা কেন কে জানে একদম চলে গেছে। সেটাই নাকি বেশ ভয়ের।
কেয়ারটেকার খোকন বেরিয়ে এল সুবালার বাড়ির গেট খুলে। একটা কাঁধে-ঝোলানো ব্যাগ ঋষভকে দিয়ে বলল- ‘দাদাবাবু চলুন চা খেয়ে আসি।’ ওর বউ বাপের বাড়ি গেছে। তাই ওর ঝুপড়িতেও কেউ নেই। গত দুদিন ধরে পুরো বিসর্জনের মেগা-ইভেন্ট কভার করে আজ ঋষভ খুব ক্লান্ত। ওর পত্রিকার টীমের বাকি দুজন সঙ্গী আজ বিকেলে ফিরে গেছে। সে এখানে এসেছে এই বাড়ি থেকে সুবালার নিত্য ব্যবহারের কয়েকটা জিনিস নিয়ে যাবার জন্য।
দোকানে চা খেতে খেতে ঋষভ জিজ্ঞেস করল, ‘খোকন কীভাবে ওনার এরকম হল বলত? তুমি তো ওনার সঙ্গে সবসময় থাকতে।’
‘দাদা, এমনিতে তো সবই ঠিক ছিল। একদিন হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ‘বাংলাদেশে কি এখন যুদ্ধ হচ্ছে খোকন? টি ভি তে দেখাচ্ছিল।’
‘ওখানে ছাত্ররা আন্দোলন করছে মাসিমা।’ আমিও টি ভি-তে দেখেছিলাম। সেটাই মাসিমাকে বললাম।
এর দিন দুয়েক পরে উনি আবার বললেন- ‘বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছে, বুঝলি খোকন, খুব লড়ছে ওরা।’ সেই থেকেই তাঁর কথায়, ব্যবহারে মাঝে মাঝে কীরকম গোলমাল হতে লাগল। ভোরবেলায় নদীর দিকে তাকিয়ে ঠায় বসে থাকতেন।’
একদিন হঠাৎ বললেন, ‘জানিস আমি আবার বাংলাদেশে চলে যাব।’ মাঝে তুমি যখন এলে তখনো ঠিকই ছিলেন। তারপর একদিন বিছানা থেকে নামতে গিয়ে পড়ে গেলেন। উঠতে পারছিলেন না। হাসপাতালে দিলাম। বলল মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে। তারপর তো তুমি জানোই।’
তবে কি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের খবর টিভিতে দেখে তাঁর সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়? তাঁর মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ এখনও চলছে। কিন্তু আবার দেশে ফেরার জন্য, লড়াইয়ে ফেরার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন কেন তিনি? কে আসবে তাঁকে নিয়ে যেতে? আনোয়ার? সে কে? মানুষের মন বড় আশ্চর্য জায়গা। তার হদিস পাওয়া খুব মুশকিল। নদীর ওপর ঘনিয়ে ওঠা অন্ধকারের মত নানান ভাবনা ঋষভের মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলল।
রাতে বিসর্জনঘাটের কাছের একটা হোটেলের বিছানায় শুয়ে ছোট্ট সোনালি কৌটোটি খুলে ঋষভ আবার বের করল আংটিটা। কৌটোটা তার ব্যাগেই রয়ে গেছে সেই থেকে। ভালো করে দেখতে লাগল আংটিটা। রুমাল দিয়ে ধুলো পরিষ্কার করতেই সেটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। স্বচ্ছ পাথরের নকসায় একটা ‘আ’ অক্ষর ফুটে উঠল। আংটি কৌটোতে আবার রাখার সময় হঠাৎ নজরে এল কৌটোর ভেতরের দেওয়ালে একেবারে সেঁটে রয়েছে গোল করে মোড়ানো একটি পাতলা কাগজ। বাইরে থেকে সহজে দেখা যাচ্ছিল না সেটা। অনেক পুরনো কাগজ। একটু টান লাগলেই ছিঁড়ে যেতে পারে। খুব সাবধানে আস্তে আস্তে মোড়ানো ছোট্ট কাগজটা বের করে, ভাঁজ খুলে, আলোর নীচে মেলে ধরল ঋষভ। কী যেন লেখা আছে দু তিন লাইন। বেশ কষ্ট করে পড়তে পারল: ‘সু, চিন্তা কইরো না। দ্যাশ স্বাধীন হইবো। তোমারে ফিরাইয়া আনুম। লড়াই বাকি আছে অনেক। আংটিখান থাকলো। ততদিন অপেক্ষা কইরো।– ইতি – আ।’
চোখ বুজে ফেলল ঋষভ। মনে মনে দেখতে পেল ভোরের মায়াবী আলোতে ইছামতীর দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছেন সুবালা। কেউ আসবে কি আজ? ভাগ্যিস আংটিটা নিজের সিন্দুকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি। চিনতে অসুবিধা হবে না তাকে। দেশে এখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তার সহযোদ্ধারা। তাকে ফিরতেই হবে অসম্পূর্ণ লড়াই শেষ করার জন্য। একটি নৌকা এসে ভিড়ল ইছামতীর ঘাটে। গলুইয়ের ভিতর থেকে কেউ তাকে ডাকছে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য।
আংটিটা আবার কৌটোতে রেখে দিল ঋষভ। আনোয়ার কে? আর তাকেই বা সুবালা কেন আনোয়ার ভাবছেন সে জানে না। তবে সংগ্রামের অভিজ্ঞান এই আংটি সে একদিন নিশ্চয়ই ফিরিয়ে দেবে সুবালাকে। মুক্তিযুদ্ধে না হোক, জীবনের লড়াইতে আবার সামিল করতে হবে তাকে।