হয়ে ওঠা গান--সুমন চট্টোপাধ্যায়; প্রকাশক- আজকাল পাবলিশার্স, ৯৬ রাজা রামমোহন সরণি, কলকাতা ৭০০০০৯; বইমেলা ১৯৯৮; পৃষ্ঠা: ১৭৬; দাম- ৩০টাকা; প্রচ্ছদ / অংগ সজ্জা- দেবব্রত ঘোষ; ভূমিকা- আশোক দাশগুপ্ত
আলখাল্লা--সুমন চট্টোপাধ্যায়; প্রকাশক- ফোরথ এস্টেট পাবলিকেশনস্, হোলি হোম ট্রাস্ট, ১৪,২৭,২৮ বি তুলসীচরণ গোস্বামী স্ট্রীট, শ্রীরামপুর ৭১২ ২০১; প্রথম পেপারব্যাক সংস্করণ- নভেম্বর ১৯৯৬; পৃষ্ঠা: ১৪৬; দাম: ৪০টাকা (বাংলা দেশ: ৬০টাকা), প্রচ্ছদ: অঞ্জন ব্যানার্জি, আলোকচিত্র- অরুণ চ্যাটার্জী
|| ১ ||
এই দশকের প্রথম দিকে, কন্ঠে একগুচ্ছ নতুন ফসল নিয়ে, বাংলা গানের জগতে হাজির হলেন এক নতুন শিল্পী। না, বয়েসে নবীন নন, চল্লিশ পেরিয়েছেন; কিন্তু কন্ঠ নবীন, ভরাট, সতেজ, বলিষ্ঠ। শোণপাংশু বঙ্গ-সংগীত সরস্বতী ঘাটে বসে ছিলেন আনমনা, দিন গুনছিলেন যেন- সুমন বয়ে নিয়ে এলেন সুসময় এবং তাঁর কাতর ধমনীতে ভরে দিলেন উষ্ণ তাজা শোণিত। অন্তত কিছুদিনের জন্য আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু লাভ হ’ল বাংলাগানের। কিন্তু মুগ্ধ ও আপ্লুত শ্রোতা সাধারণের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে- কে এই নতুন গায়ক-সরকার- “গানের কারিগর” সুমন চট্টোপাধ্যায় এবং কোন পটভূমিতে তাঁর এই ধুমকেতু সদৃশ আবির্ভাব বাংলা গানের জগতে?
তাঁর প্রথমদিককার একটি ধ্বনিমুদ্রায় মলাটে প্রকাশিত হয়েছিল এই সংক্ষিপ্ত জীবনীকণা: “সুমন চট্টোপাধ্যায়। জন্ম ১৯৫০। কন্ঠসংগীতে ছেলেবেলা থেকেই তালিম। ১৯৬৬ সালে বেতারে আত্মপ্রকাশ। ১৯৭২ ও ৭৩ সালে রবীন্দ্রসংগীতের দুটি রেকর্ড বেরিয়েছিল। কিন্তু তাঁর যুগের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সুমন ক্রমশ: অস্থির হয়ে পড়েন- গানের মধ্য দিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা ও ভাবনাগুলোকে প্রকাশ করতে পারছিলেন না বলে। সেই থেকে তাঁর মনে হতে থাকে যে নিজের গান নিজেকেই লিখতে হবে। ১৯৭৫ সালে বিদেশযাত্রা। প্রথমে পশ্চিম জার্মানি, তার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তারও পরে আবার পশ্চিম জার্মানি সব মিলিয়ে এক দশকের ওপর বেতার-সাংবাদিকতা করেন। সেই সংগে পাশ্চাত্য সংগীতের তালিম নেন- বিশেষ করে কী বোর্ড এবং ক্ল্যাসিকাল গিটার। ১৯৭৯ সাল থেকে সুমন চট্টোপাধ্যায় গান বাঁধতে থাকেন। ১৯৮৯ সালের শেষ দিকে তিনি বিদেশের পাট চুকিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন একটিমাত্র লক্ষ্য ও সংকল্প নিয়ে- বাংলা গান লেখা, সুর করা ও পরিবেশন করা। “গানের কারিগর” হিসেবে সুমন চট্টোপাধ্যায় প্রধানত সমকালে হাজির থাকতে চান, দৃষ্টি বাড়িয়ে দিতে চান আগামীর দিকেও।”
১৯৯২ সালে এইচ এম ভি রেকর্ড কোম্পানি “তোমাকে চাই” সংগীতগুচ্ছটি প্রকাশ করার আগে পর্যন্ত সুমন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন শ্রোতৃসমাজের কাছে প্রায় অপরিচিত। কিন্তু পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি উঠলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। অনুমান করতে পারি যে বাঙালি শ্রোতার মনে কৌতূহল জেগেছিল সুমনের জীবন, সংগীত ভাবনা এবং পরিশীলন বিষয়ে। সেই হিসেবে আজকাল প্রকাশনী আমাদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করলেন- “হয়ে ওঠা গান”- আমাদের আজকের আলোচ্য প্রথম পুস্তকটি প্রকাশ করে, ১৯৯৪ সালের বইমেলায়। খুব সম্ভবত পূর্ববর্তী বছরে আজকাল পত্রিকার পুজোসংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয় সুমন চট্টোপাধ্যায়ের এই স্মৃতিচারণ এবং তাঁর সংগীত জীবনের গড়ে ওঠার ইতিহাস।
সুমনের প্রায় সত্তর বছর আগে বাংলা কাব্য/সংগীত/সাহিত্যের জগতে ঠিক একইরকম বা আরো বেশি ঝড় তুলে আবির্ভাব ঘটেছিল একজন বিদ্রোহী কবির। ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্ব মহাযুদ্ধের সময় ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টন বা বঙ্গ বাহিনীতে নাম লেখালেন চুরুলিয়ার নির্ভীক বাঙালি কিশোর দুঃখু মিঞা। কর্মসূত্রে গেলেন উত্তর-পশ্চিমে আরব সাগরের তীরে, ফার্সি ভাষা শিখে ফেললেন ঝড়ের বেগে, আত্মস্থ করলেন হাফিজ, শুরু হলো লেখা- কবিতা, গল্প, গান। তারপরে যুদ্ধের শেষে আরবি ঘোড়ার সওয়ার হয়ে কলকাতা জয় করতে এলেন হাবিলদার নজরুল ইসলাম।
সত্যি কথা বলতে কি, সুমনের গান শুনতে শুনতে বা আলোচ্য পুস্তকদুটি পড়তে পড়তে আমার নজরুলের কথা মনে পড়ছে বার বার। যদিও জীবনযাত্রা, শৈলী ও প্রকরণে অনেক ফারাক, দুজনের মিলগুলিও চোখে পড়ার মতো- এলাম- দেখলাম- জয় করলাম- এর মতো ঘটনা; সতীর্থ ও সমসাময়িকদের সংগে বিষয়বস্তু ও রচনাভঙ্গির পার্থক্য; রাজনীতি সচেতনতা ও সাধারণ মানুষের জীবন যাপনের সংগে যোগাযোগ; প্রস্তুতিপর্বের সময়টুকু বাংলাদেশের বাইরে কাটানো; হঠাৎ জনপ্রিয়তা; প্রশংসা, স্তুতি ও দলে টানার চেষ্টা; পরবর্তীকালে তীব্র আক্রমণ ও লাঞ্ছনার মুখোমুখি হওয়া।
গত ছয় বছরে সৃষ্টিশীল সুমন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে আলোচনা নিশ্চয়ই হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এক মহাসাগরের দূরত্বে বসবাস করার জন্যে আমার পড়ার সুযোগ হয়নি সেগুলি। কিন্তু যে কথাটি আমার অনেকদিন ধরে মনে হয়েছে, তার প্রতিফলন দেখলাম “হয়ে ওঠা গান”-এর ভূমিকায়, লিখেছেন আজকাল পত্রিকার অশোক দাশগুপ্ত- “…প্রথমত, দ্বিতীয়ত এবং শেষ পর্যন্ত সুমন একজন কবি। একজন মানুষের পক্ষে এর চেয়ে বড় পরিচয় আর কী হতে পারে?”
সুমন চট্টোপাধ্যায় মূলতঃ কবি। বাংলা কবিতায় তাঁর পূর্বসূরী সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সমর সেন, শঙ্খ ঘোষ ও অন্যান্যরা। তাঁকে বাদ দিলে এই মুহূর্তের আধুনিক বাংলা কবিতার আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। “তোমাকে চাই” শুনতে শুনতে সম্পূর্ণ আনমনে আমার হাত চলে গেছে বইএর তাকে ছাড়পত্র ও পদাতিকের দিকে। আমার মতে সুমন চট্টোপাধ্যায়ের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব- এক হ্যাঁচকা টানে বাংলা কবিতা ও গানকে পাশাপাশি এনে ফেলা। এই ব্যাপারেও নজরুলের সংগে তাঁর মিল। দুজনের ক্ষেত্রেই কবিতা ও গানের ভেদরেখাটুকু ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর।
অতি প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা গান ও কবিতা হেঁটেছে একে অন্যের হাত ধরে। চর্যাপদের আরেক নাম চর্যাগান- সমবেত কন্ঠে গাওয়া হ’ত বৌদ্ধ মঠে। রামায়ণ, মহাভারত ও মংগলকাব্যগুলি সুর করে গাওয়া হ’ত গ্রামে গঞ্জে। এইভাবে বৈষ্ণব পদাবলী থেকে শুরু করে লালন শাহ। তার পরে রবীন্দ্রনাথ- নজরুল- অতুলপ্রসাদ- দ্বিজেন্দ্রলাল- এঁদের প্রতিভার তীব্র আলোয় কেটেছে তার স্বর্ণযুগ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে ক্ষীণ হতে হতে শুকিয়ে এলো বাংলা গানের ধারাটি এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের আঙ্গিক অবলম্বন করে এগিয়ে চললো কবিতা।
ইতিমধ্যে সলিল চৌধুরী ও অন্যান্যরা প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এই দুটি ধারাকে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সাফল্যের পরিমাণ সীমিত। আমাদের কৈশোরে আধুনিক বাংলা কবিতার সুর দিয়ে গাওয়ার চেষ্টা করেছেন বেশ কয়েকজন- ঋষিণ মিত্রের নাম তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- মহানগরী ও মফস্বলের বিভিন্ন কবি সম্মেলনে গান গাইতেন তিনি। একটি গানের প্রথম পঙ্ক্তি ছিল (সম্পূর্ণ স্মৃতির থেকে বলছি): “তুমি তাকে চেওনা ভাই”। আমরা বন্ধুমহলে চারমিনারের ধোঁওয়ার ফাঁকে ফাঁকে রসিকতা করতাম: বাংলা গানকে কথাটি কওয়া হচ্ছে বাংলা কবিতার সম্পর্কে। এরই কাছাকাছি সময়ে অনুপ ঘোষালের পূজোর রেকর্ড বেরিয়েছিল এক বছর: এক পিঠে “বনলতা সেন” আর অন্য পিঠে “হায় চিল”; দুটোই অখাদ্য, আমার মতে। আর সম্পূর্ণ ভুলভাল একটি বাংলা চলচ্চিত্রে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের (খুব সম্ভবত: “যত দূরেই যাই” কাব্যগ্রন্থের) একটি কবিতাতে সুর দিয়ে গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়- “কেউ দেয় নি কো উলু/কেউ বাজায়নি শাঁখ”।
এক সময় গীতবিতানকে বিশুদ্ধ কবিতা গ্রন্থের মতো পাঠ করার প্রস্তাব রেখেছিলেন বুদ্ধদেব বসু ও আরো অনেকে। সুমন চট্টোপাধ্যায়ের গানগুলিও কবিতা হিসেবে পাঠ করার পক্ষে বিশেষ রকমের উপযুক্ত। খুবই আনন্দের কথা যে স্বতন্ত্র প্রকাশনী পুস্তকাকারে খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশ করছেন “সুমন চট্টোপাধ্যায়ের গান”। যতদূর জানি এখন অবধি তিনটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে।
বয়েসের দিক থেকেও সুমন সত্তরের দশকের কবিদের সমসাময়িক। কবিতা লেখা শুরুও করেছিলেন ষাটের দশকের শেষ দিকে, যদিও নিয়মিতভাবে চালিয়ে যাননি। আশা করবো যে ভবিষ্যতে তিনি কাব্যগুণ সম্পন্ন গান ছাড়াও নিয়মিতভাবে কবিতাও লিখবেন।
|| ২ ||
“হয়ে ওঠা গান” বইটি প্রথমবার হাতে পায়েই ঝড়ের বেগে পড়ে শেষ করে নিই। তার পর ধীরে সুস্থে দ্বিতীয় পাঠ। দেবব্রত ঘোষ কৃত মলাটের পরিধি থেকে টেনে আনা পেইন্টব্রাশের আঁচড়- আর মাঝখানে পার্কের বেঞ্চিতে বসা সুমন চট্টোপাধ্যায়ের ছবি। ছাপা বাঁধাই চলনসই- তবে আলোকচিত্রগুলি দানা দানা, অস্পষ্ট। পড়া শেষ করে স্বপ্ন দেখি- যদি কোন প্রকাশক ভাবতেন বইটিকে শ্রবণপুস্তক হিসেবে- পশ্চিমের দেশগুলিতে যাকে বলে “অডিও বুক” বা “বুক অন টেপ”- সুমনের উদ্দাত্ত কন্ঠস্বরে প্রকাশ করার কথা। প্রিয় গানের কলিগুলি বা সংগীত বিষয়ক তাঁর চিন্তাসূত্রগুলি তিনি তা’হলে গেয়েই শুনিয়ে দিতে পারতেন। শুধু নান্দনিক উৎকর্ষের জন্যই যে তা নয়, ভালো মুনাফারও সম্ভাবনা রয়েছে এতে। আশা করবো কোন উদ্যোগী প্রকাশক বা উদ্যোগপতি চিন্তাভাবনা করে দেখবেন।
গানের পরিবারেই সুমন চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম। বাবা সুধীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং মা উমা চট্টোপাধ্যায় দুজনেই গানের জগতের মানুষ। সুধীন্দ্রনাথ গান শিখেছিলেন শুনে শুনে- আকাশবাণীতে সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী তাঁর গানের অডিশন নিয়ে বেতারে গান গাইবার সুযোগ দেন। পরে বিভিন্ন খ্যাতনামা গীতিকার/সুরকারের গান তিনি রেকর্ড করেছেন হিন্দুস্থান কোম্পানির গ্রামাফোন রেকর্ডে। যেমন ১৯৪৭-৪৮ সালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে ”তুমি কি দেখেছ প্রিয়/ কৃষ্ণচূড়ার ফুলে বনানী গিয়েছে ছেয়ে”। সমসাময়িক ছায়াছবিতেও তিনি গান গাইতেন নিয়মিত। উমা গান শিখেছিলেন নীহারবিন্দু সেন, সন্তোষ সেনগুপ্ত ও শৈলেশ দত্তগুপ্তের কাছে। গাইতেন বেতারে ও রেকর্ডে- রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিক। গানবাজনার সূত্রে বিভিন্ন খ্যাতনামা শিল্পীর নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল তাঁদের বাড়িতে।
সুমনের সংগীত শিক্ষার শুরু ৮-৯ বছর বয়েসে, বাড়িতে বাবার কাছে। তারপর ১২ বছর বয়েস থেকে নিয়মিত খেয়াল শেখা। পাশাপাশি চলেছে অজস্র গান শোনা- মা, বাবা, পারিবারিক বন্ধুবান্ধব- বিখ্যাত বিখ্যাত সব শিল্পীদের সামনে বসে; তা ছাড়া বেতারে ও গ্রামাফোনে রেকর্ডে। কোন শিল্পীর কোন গানটি কেমন লাগতো এবং কী কারণে- তার বিস্তৃত আলোচনা করেছেন সুমন। যেমন- “সুরসাগর হিমাংশু দত্তর সুরের একটি বৈশিষ্ট্য হল ছোট তান, চকিত মুড়কি। সেগুলি যথাযথ ভাবে গাইতে গেলে রীতিমত মুন্সিয়ানা প্রয়োজন।” সবিতা চৌধুরীর “হলুদ গাঁদার ফুল এনে দে” প্রসংগে: “কিন্তু বাঁশিটা এমন ছন্দে এমন স্বর পরম্পরায় বাজছে যে আমার অন্তত মনে হয়েছে অভিমানী মেয়ের অন্তরে যে চাপল্য, যে অনাবিল ছেলেমানুষী সলিল প্রযুক্ত বাঁশিটি যেন তারি প্রতীক।”
স্মৃতিচারণের ফাঁকে ফাঁকে এসেছেন অতীত দিনের দিকপালেরা- পংকজ কুমার মল্লিক, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, দিলীপ কুমার রায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কমল দাশগুপ্ত, হিমাংশু দত্ত, আমীর খান, রবিশংকর প্রমুখেরা। এঁদের শিক্ষায়, সাহচর্যে, শ্রবণে সুমনের সংগীতজীবনের প্রস্তুতিপর্ব কেটেছে। ১৯৬৬ সালে আকাশবাণীর কলকাতার অডিশনে উর্ত্তীর্ণ হয়ে বেতারে রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিক গাইতে শুরু করেন সুমন। ওই একই বছরে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়তে ঢোকেন তিনি। তাঁর কবিতা লেখারও শুরু এই সময়ে। সেই সংগে চলছিল সংগীতচর্চা- ১৯৭২ সালে প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড- “হেলাফেলা সারাবেলা” ও ‘ফিরবে না তা জানি”। পরের বছর দ্বিতীয় রেকর্ড- আরো দুটি রবীন্দ্রসংগীত- “নাচ শ্যামা তালে তালে” এবং “হার মানালে গো ভাঙিলে অভিমান”।
সেই সংগে আধুনিক কবিতা ও আধুনিক গান বিষয়ে চলেছে তাঁর গভীর চিন্তাভাবনা। “আমার খালি মনে হত, যে দেশে কবিতা নিয়ে এত ভাঙাগড়া, এত ভাবনা, এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সে দেশে গানের লিরিক নিয়ে ভাবনার এত অভাব কেন?” এর আগে ১৯৭১ সালে পরীক্ষা দিয়ে ব্যাংকে কেরানির চাকরি পেয়েছেন সুমন- ‘ইউ বি আই তে ব্যাংক বোঝায় / ঈশাণবাবু টাকা জমায়’। জোরালো পরিবর্তন ঘটেছে রাজনীতির ক্ষেত্রেও- “তোমাকে আমাকে দিচ্ছে নাড়া / মাও সে তুং-এর চিন্তাধারা”। গুলির আওয়াজ বাড়তে লাগলো কলকাতায়। নিজের মতন করে গান ও কবিতা লেখার যন্ত্রণায় কয়েকটি বছর কাটলো সুমনের। ১৯৭৫ সালে লিখলেন নিজের প্রথম গানের ছটি লাইন:
এ কেমন আকাশ দেখালে তুমি
এ কেমন আকাশ জন্মভূমি
এ যে শুধু কান্না, শুধু কান্না
এ কান্না চাই না আমি চাই না
এ কেমন কান্না শেখালে তুমি
এ কেমন কান্না জন্মভূমি।
এই একই বছরে তিনি জার্মানি চলে যান। তার পর থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত তিনি কয়েক দফায় বেতার সাংবাদিকতা করেছেন কার্মানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এর মধ্যে দু-কিস্তিতে মোট দু-আড়াই বছরের জন্য কাটিয়েছিলেন কলকাতায়। গানের দলও গড়েছিলেন সংগীতপ্রেমিক সতীর্থদের সঙ্গে। কিন্তু খুব একটা সন্তোষজনক ফল না হওয়ার জন্য আবার ফেরত যান প্রবাসে। দুটি দেশেই বিভিন্ন সংগীত আন্দোলনের নিবিড় অধ্যয়নে রত হন এবং সেই অভিজ্ঞতায় সিঞ্চিত হয় তাঁর শিল্পীমানস। যে দুজন সংগীতব্যক্তিত্ব তাঁকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেন তাঁরা হলেন জার্মানিতে হবলফ্ বিয়ারমান এবং আমেরিকায় পিট সিগার। “এইসব বিভিন্ন উৎস কুড়িয়ে বাড়িয়ে আমি আমার ঝোলা ভরতে লাগলাম।”
এরপর পাকাপাকিভাবে দেশে ফেরা এবং গান লিখে, গান গেয়ে ক্ষুন্নিবৃত্তির চেষ্টা। বেশ কয়েকটি হতাশা, ব্যর্থতার পর প্রথম ধ্বনিমুদ্রিকা প্রকাশের নাটকীয় কাহিনী। তাঁর নিজের ভাষায়- “গান বেঁধে গেয়ে বাজিয়ে করে খাওয়ার মতো জায়গায় পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা গেল গড়িয়ে।” লেখার গুণে এবং বিষয়বস্তুর প্রাচুর্যে বইটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো- হাতে নিলে নামিয়ে রাখা মুশকিল। একদিকে বাংলা গানের আংশিক অথচ চলমান ইতিহাস- অন্যদিকে একজন কবি গীতিকারের নিজস্ব যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতিপর্ব- দুই হিসেবেই বইটি সফল।
সুমনের নিকারাগুয়া ভ্রমণের কাহিনীটি এই গ্রন্থে কিছুটা প্রক্ষিপ্ত বলে আমার মনে হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণের মধ্যে ঘটনাটি নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেটা তাঁর গানের হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কী অবদান রেখেছে তা বুঝিয়ে বললে পাঠকের সুবিধে হত।
বাংলাগানের ইতিহাসে সুমন চট্টোপাধ্যায় নামক মাইলস্টোনটিকে বুঝতে আলোচ্য গ্রন্থটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পাঠক বুঝতে পারবেন যে বাংলা গানের চিরায়ত ঐতিহ্যেই তিনি আমূল প্রোথিত এবং সমসময়ের ঘটনাবলি তাঁকে গান বাঁধতে প্রাণিত করে। আজকাল পাবলিশার্সকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাই এই অনবদ্য গ্রন্থটি প্রকাশের জন্য।
|| ৩ ||
সুমন চট্টোপাধ্যায়ের “আলখাল্লা” বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৬-এর শেষে আমেরিকার সুখ্যাত সংগীতশিল্পী পিট সিগারের কলকাতা আগমন উপলক্ষ্যে। ছোট বড় মোট সাতটি রচনা মিলে এই পেপারব্যাক সংকলনটি বেশ তাড়াহুড়ো করে বানানো বলে মনে হয়। ভূমিকাতে লেখক স্বীকারও করেছেন সেই কথা- “এ-বছরের মাঝামাঝি ফোর্থ এস্টেট পাবলিকেশন্স এসে আমায় পাকড়াও করলেন। আমার পুরনো ও নতুন কিছু লেখার একটি সংকলন প্রকাশ করার প্রস্তাব নিয়ে এলেন তাঁরা। আমি পেশাদার সংগীতশিল্পী ও সংগীতকার। পেশার চাপে নাজেহাল। সারাক্ষণ গান বাঁধার কাজে ব্যস্ত থাকি। অন্য কিছু লেখার অবকাশ নেই বলাই ভালো। কিন্তু প্রকাশক নাছোড়বান্দা। তাদের কথা, উৎসাহ ও উস্কানির সামনে আমার প্রতিরোধ টিকলো না।” ঠিক কথা, কিন্তু রাজি হওয়ার আগে প্রকাশনাটির গুণগত যোগ্যতার মাপকাঠি বেঁধে দেওয়া উচিত ছিলো তাঁর।
বইটির প্রথম, প্রধান ও দীর্ঘতম রচনাটির নামও “আলখাল্লা”। “অভিজ্ঞতা, স্মৃতিগুলো ছেঁড়া কাপড়ের টুকরোর মতো। হরেক রকম রঙ। কাপড়ও নানা রকমের। টুকরোগুলো জুড়তে জুড়তে, জুড়তে, জুড়তে…” তৈরি হয়েছে খণ্ড স্মৃতিচারণের এই আলখাল্লা। এ ছাড়া সংকলিত হয়েছে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত পিট সিগারের সংগে সাক্ষাৎকার এবং ক্যানাডার কবি লেনার্ড কোহেনের বিষয়ে লেখা “কহেন কবি কোহেন”। তার সঙ্গে জার্মান বেতারের বাংলা বিভাগের জন্য গৃহীত দুটি সাক্ষাৎকার- হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও পণ্ডিত রবিশংকরের। আর রয়েছে দুটি নতুন রচনা- খোলা চিঠির আকারে রচিত নিবন্ধ- “রবীন্দ্রনাথকে” এবং হব্লফ্ বিয়ারমান বিষয়ক রচনা “নিজেকে যে পালটায়”। বিভিন্ন স্বাদের বিভিন্ন সময়ের, বিভিন্ন পরিসরের, বিভিন্ন মেজাজের লেখাগুলি একসঙ্গে গ্রন্থিত হয়ে এই আলখাল্লা।
গ্রন্থের নামরচনাটি খণ্ড খণ্ড স্মৃতিচারণ- অনেক ঘটনা শৈশবের, কৈশোরের, বেশিরভাগ গত পাঁচ-ছয় বছরের। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, সংবাদপত্র ও নানা ধরনের সংস্থার পক্ষ থেকে সুমনকে প্রথমে দলে টানার চেষ্টা, তারপরে নির্লজ্জ আক্রমণ। মাঝে মধ্যে কয়েকটি সোনালি মুহূর্ত- টেলিফোনে ভেসে আসা বন্ধুর অমল কন্ঠ, বিপদের সময় শুভানুধ্যায়ীর সাহায্য ও পরামর্শ, গান শুনে প্রাণিত মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তাঁর মা-বাবার কথা আছে, আছেন ছোটবেলার বন্ধু টুকাই; শুভেন্দু মাইতি ও রবি কিচলুর মত অচেনা মানুষের সাহায্যের হাত; হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ভি বালসারা- নানান শিল্পীদের কথা। আছেন বব ডিলান, পিট সিগার, হব্লফ্ বিয়ারমানের মতন বিদেশি দিকপালেরা।
আছেন আমাদের কাছের মানুষ সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়- এই পত্রিকার পাতায় পূর্বে আলোচিত তাঁর সুমন বিষয়ক তথ্যচিত্র “ফ্রি টু সিং”-এর কথা। সুদীপ্ত পরিচালিত সুমন চট্টোপাধ্যায়ের ওয়েব সাইটটির কথা রয়েছে- কিন্তু তার ঠিকানাটি দেওয়া নেই। রয়েছে সত্তর দশকের কিছু বুকভাঙা ঘটনা, কিছু কিছু গান রচনার সংক্ষিপ্ত পটভূমি- সঞ্জীব পুরোহিত, পাপড়ি দে, ও অন্যান্যদের কথা। আর পিট সিগারকে নিবেদিত একটি নতুন ইংরেজি গান। সতেরো বছর পরে কলকাতায় প্রথম গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা সল্ট লেক স্টেডিয়ামে- তিনি তিনটি গান গেয়েছিলেন- “তিন শতকের শহর”, “গড়িয়াহাটার মোড়” এবং “তোমাকে চাই”। ভাবতে পারি শ্রোতাদের সেই অপূর্ব অভিজ্ঞতা- নতুন বাংলা গানের গংগাকে বয়ে আনলেন এই মাঝবয়েসি ভগীরথ।
গ্রন্থের দ্বিতীয় রচনা “পীট সিগারের সংগে কিছুক্ষণ”- একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। ৮০র দশকে মাঝামাঝি দেশ পত্রিকার জন্য এই বর্ষীয়ান লোকসংগীতশিল্পীর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন সুমন। কথোপকথনের সিংহভাগই সংগীত বিষয়ক- তার ফাঁকে ফাঁকে এসেছে অন্যান্য বিষয়- শ্রী সিগারের ব্যক্তিগত জীবন, রাজনীতি, দর্শন, সমাজচেতনা- ভংগিটি ঘরোয়া, পরিবেশনটি চিত্তাকর্ষক। যদিও তিন বছর বয়েস থেকেই পিট সিগারের গানবাজনার চর্চায় হাতেখড়ি, সংগীতশিল্পী হওয়ার কথা তাঁর মাথায় ছিল না। তিনি হতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক; কিন্তু ১৯৩৮ সালে হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বেরোনোর পরে কোন পত্রিকার চাকরি না পেয়ে টাকার বিনিময়ে স্কুলের ছেলেমেয়েদের গান শোনাতে আরম্ভ করেন। গান লেখার শুরু আরো পরে। অবশ্য কম বয়েস থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন।
নিজের নামের পাশে “লোকসংগীতশিল্পী” বিশেষণটির প্রয়োগে মৃদু আপত্তি পিটের- “আমার মতে, যে লোকটা কানে শুনে শুনে গান শেখে এবং সেই গান স্রেফ মনের আনন্দে, গান গাওয়ার আনন্দে গায়, সেই হলো লোকসংগীতশিল্পী বা গায়ক।” এবং “র্যাডিক্যালে”র সংজ্ঞা দিয়েছেন- “র্যাডিক্যাল হলো সেই লোক যে মুহূর্তের জন্য স্বস্তি দিতে পারে এমন সহজ সরল সংস্কারের চেয়ে বেশী কিছু চায়”। এবং শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছেন নিজের সম্বন্ধে “র্যাডিক্যাল” অভিধাটিকে। ১৯৬৩ সালে ভারতবর্ষে এসেছিলেন পিট এবং কলকাতার ময়দানে দশ-বিশ হাজার লোকের সামনে গান গেয়েছিলেন তিনি। “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেখানে থাকতেন, তার কাছাকাছি একটা গ্রামেও গিয়েছিলাম আমরা।” পঞ্চাশের দশকে তিনি রেকর্ডে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের গানও শুনেছেন কিছু। এতো বছরের পরেও উদ্ধৃতি দিয়েছেন হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের গাওয়া একটি ইংরেজি গান থেকে।
সুমনের লেখার ভংগিটি ঘরোয়া এবং স্বাদু। শ্রী সিগারের বলা উত্তরগুলি মনেই হয় না যে অনুবাদ- উনি বাংলা জানলে হয়তো ঠিক এইভাবেই বলতেন- “১৯৩৯ সালের গ্রীষ্মে আরো তিনজনের সংগে বেরিয়ে পড়লাম ধর্মঘটী গয়লাদের জন্য গান গাইতে।” আর পশ্চিমের দেশগুলিতে জনপ্রিয় একটি স্লোগানের বাংলা করা হয়েছে- “গোটা পৃথিবীর কথা চিন্তা করে স্থানীয় ভিত্তিতে কাজ করো”।
অন্যান্য রচনাগুলি সম্পর্কে আলাদা করে বিশেষ কিছু বলার নেই। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের দেশের বাড়ি যে ২৪ পরগনা জেলার বহড়ু গ্রাম- এই সাক্ষাৎকার পড়ে জানা গেল। আরো জানা গেল যে প্রথম দিকে তিনি পংকজ মল্লিকের গায়নভংগির অনুকরণ করতেন। লেনার্ড কোহেন ৫০-এর দশক সম্পর্কে বলেছেন- “সেকালে শুধু সোশালিস্ট আর কমিউনিস্টরাই গীটার বাজাতেন।” রবিশংকর জানিয়েছেন তিনি রাগাশ্রয়ী বাংলা গানে সুর দিতে আগ্রহী, কিন্তু রেকর্ড কোম্পানি কোন এক্সপেরিমেন্টাল কাজে উৎসাহ দিতে চায় না। আর যেদিন রাত্রে হবল্ফ্ বিয়ারমান বিষয়ক “নিজেকে যে পাল্টায়” লেখাটি জার্মানির ছাত্র আন্দোলনের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রচারিত হ’ল। কী অদ্ভুত সমাপতন- তার মধ্যে বিয়ারমানের উদাত্ত কন্ঠের গান শোনা গেল- ছাত্র নেতা রুডি ডুচ্কের উদ্দেশে লেখা গান। রুডি ডুচ্কের বিষয়েও সুমন আলোচনা করছেন অন্যত্র।
গ্রন্থের প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জা সুচারু; তবে অসংখ্য ছাপার ভুল- “আশীর্বাদ”, “ব্যথা”, আত্মিয়”- এইসব। “লোকসঙ্গীত” শব্দটির মাঝখানে পঙ্ক্তি ভাঙায় এক লাইনে শেষ হয়েছে “লোকসঙ্গ”, আর পরের লাইনে শুরু হয়েছে (...?)। ৭২-৭৩ পৃষ্ঠায় “পীট সীগার”, ৭৫ পৃষ্ঠায় হয়ে গেলেন “পিট সিগার” এবং আরো কয়েকবার রদবদল হয়েছে তাদের। ভূমিকায় লেখা হয়েছে “হ্ল্ফ বিয়ারমান” কিন্তু প্রবন্ধে “হবল্ফ্ বিয়ারমান”। যোগ্য ও দক্ষ প্রকাশক ছাড়া গুণী লেখকদের সব প্রচেষ্টাই মাটি; আশা করবো পরবর্তী সংস্করণটি আরো যত্ন নিয়ে করা হবে।
যতদূর জানি সুমন চট্টোপাধ্যায় রচিত আরো দুটি গদ্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমটির নাম “মুক্ত নিকারাগুয়া”, মানব মিত্র- এই ছদ্মনামে লেখা। ১৯৮৭ সালে কে পি বাগচী প্রকাশন সংস্থা প্রকাশ করেছিলেন এই ভ্রমণ কাহিনীটি। দ্বিতীয়টির নাম “দূরের জানালা”। মানব মিত্র ছদ্মনামে দেশ পত্রিকায় বিভিন্ন সময় লেখা নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকার গুলির সংকলন- এখন স্বনামে প্রকাশিত। প্রকাশ করেছেন অঞ্জলি প্রকাশনী সালের বইমেলায়।
বাংলা গানের জগতে সুমন চট্টোপাধ্যায়ের অবদান কতোটা- একটা উদাহরণ নিয়েই দেখা যাক। বাংলা গানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়- অতুল প্রসাদ সেন সওয়া দ্যশোর মতো গান লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন। সুমন চট্টোপাধ্যায় রচিত গানে সংখ্যা হয়তো তার চেয়ে কম। কিন্তু অভিঘাতের দিক থেকে কি এঁরা দুজনে কাছাকাছি? ইতিহাসই তার উত্তর দিতে পারে।