


বিচ্ছেদগাথা
দাদুর হাতের লাগানো স্থলপদ্ম গাছ
সারাদিন ঠায় দাঁড়িয়ে দেখত আমার হাবভাব
জানলা থেকে ঝরে পড়ত ওর দৃষ্টি
ও জানত না দাদু মারা গেছেন, দাদুকে হালিশহর শ্মশানে পোড়ানো হয়েছিল।
ও খুঁজত আর আমাকে জিগ্যেস করত— "দাদু কোথায়?"
—"দাদু কোথায়?"
আমি উপরের দিক দেখিয়ে বলতাম— "ওখানে"।
ও কী বুঝত জানি না।
যেদিন আমরা চাপড়ায় চলে এলাম
ওর সে কী রাগ
বিস্ফারিত দৃষ্টি
কতবার আমাকে ডাকল পিছন থেকে
আমি সাড়া দিইনি
কেননা, মা বলতেন— "যাত্রার সময়, পিছন থেকে কেউ ডাকলে সাড়া দিতে নেই।"
আজন্মের লালিত প্রশ্রয়
সারাটা জীবন মা আমার এক লালিত প্রশ্রয়,
সন্ধের বেড়া ভেঙে বাবা ঘরে ঢুকতেন
আর আমার মাথা ঝুলে পড়ত বইয়ের উপর
ল্যাম্পের আগুনে চুল পুড়ে যেত,
আগুনের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসত সান্ত্বনার
মতো হাহাকার,
এক বিস্ময়বোধ
আমাকে দেখাত তার কষ্টকর ক্ষত—
কিন্তু রাত্রিযাপন, কষ্টের সীমায়িত চৌহদ্দি একান্তই আমার।
মা আমার উদাস পথিক।
আজও শ্রান্ত দ্বিপ্রহরে কান খাড়া হয়ে উঠলে
মা আমায় আমড়া গাছের উঁচু ডাল দেখান
নিতান্ত ঘুঘু কিংবা একটি কোকিল।
বড় আত্মসম্মানবোধ মায়ের।
আজও আমি ভুলিনি শূন্যস্থান কীভাবে পূর্ণ করতে হয়।
এখনও সংসারের কাঁচা অপাঠ্য কাজ দু'হাতে ঠেলেন মা-ই,
সাজোসাজো রব উঠলে বিহ্বল হন।
সকাল-দুপুর আর বিকেলের সরলরেখায়
মায়ের পড়ে থাকা অতীত আমি একটু একটু
করে আহরণ করেছি
রাত্রির কষ্টটা যদি একটু পাতলা হয়...!