কার্সিয়াং
বর্ষার ভিতর দিয়ে গাড়ি এসে পৌঁছালো
কার্শিয়াং শহর। যেন জলপ্রপাতের মধ্য দিয়ে
অরণ্যের প্রবাদ নিরাপদে পৌঁছে গেল গুহা আস্তানায়।
অমরজিৎ রেস্তোরাঁয় লোকজন কম-
এমন বর্ষার দিনে পাহাড়ে ওঠে না লোকে
তিনধরিয়ার কাছে হিল কার্ট রোডে
ধস নেমে রাস্তা বসে গেছে, আর
এ সময়ে টয় ট্রেন চিরকালই বন্ধ থাকে
আজও তাই আছে। প্রকাশ ছেত্রী এসে বলে গেল
এক ওই পাঙ্খাবাড়ি রোডই যা খোলা
- তাড়াতাড়ি চলুন, কখন যে সেটা বসে যাবে!
আমি তো ধীরে সুস্থে চা সিঙাড়া খাবো এখন
একটা লম্বা সিগারেট খাবো এইখানে বসে
কাঁচের জানালার উপর আছড়ে পড়ছে
স্কুলভাঙা শিশু কলতানের মত বৃষ্টির ধারা
মাটিতে পড়ার পর সাবালক হয়ে তারা
পাহাড়ি পথের ঢালে বেগে নেমে গিয়ে
মিশে যাচ্ছে ফাঁপানো চুলের টানে সাড়া দিয়ে
বর্ষার রজঃস্বলা মেয়ে রূপোলি ঝোরায়
প্রকাশ আবার এসে তাড়া লাগিয়ে গেল
- এখনো বসে আছেন, আমাকে দূষবেন না যেন
দার্জিলিং মেইল যদি ছেড়ে চলে যায়!
বর্ষার কার্শিয়াং শহর - তার বুকে পাতা ন্যারোগেজ
অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে ভিজে একজোড়া কাস্তের মত
অলস ফসলে শুয়ে আছে।
চল্লিশ বছর কেটে গেল ভেজা পাহাড়ের দিকে
চেয়ে বসে আছি। সরীসৃপের মত
ধোঁয়ার নিশান আর হুইসল ছুঁড়ে দিয়ে
হেলেদুলে ঢুকে পড়ছে কুইন অফ দি হিলস।
প্রকাশ সওয়ারী নিয়ে বহুকাল হয়ে গেল
নীচে নেমে গেছে।
দার্জিলিং
শব্দ শুনি না এই কাঁচ-ঘেরা মেঘবাড়ি কুয়াশার ঘরে
শব্দহীন দৃশ্যগুলো ঘরে এসে প্রগলভ হয় সেনোরিটা
আমার রোহিনী পথ কোন এক বাঁকে এসে হয়ে যায় নদী
বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে তোমার বাদামী শাড়ি আকাশের গায়
আজানু জড়িয়ে নিল পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে প্রার্থনার সুর
ধুপী আর পাইনের পাতা থেকে তুমি আসো তরাই সন্ধ্যায়
স্রোতের শব্দ আসে, স্লুইস গেটের গায়ে জল এসে ছুটি চায়,
চল তাকে নিয়ে আসি, গা মুছিয়ে তুলে রাখি রোদবারান্দা থেকে
নদীকেও মেলে দিই চা বাগিচা ঢালে। বহে যাবে বিকালের আলো
তোমার শরীর থেকে জুলাইয়ের গন্ধ নিয়ে যেমন শিশুরা যায়
দল বেঁধে আঁকাবাকা পথে। মুগ্ধ পিতার মত রডোডেনড্রন চলে
তাদের পাহাড়ি পথে মথিত গুরাস থেকে লোহিত রেণুর মদে ভেসে
সূর্যও ঢলে পড়ে মেঘবিছানায় । টোকা পড়ে জানালার কাঁচে
আচম্বিতে তুমি, আঁচলে জড়িয়ে মুখ পাশেই দাঁড়িয়ে ভীতু চাঁদ।