• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৫ | জুলাই ২০২৪ | প্রবন্ধ
    Share
  • আয় ঘুম, যায় ঘুম : ছন্দা চট্টোপাধ্যায় বিউট্রা

    আয় ঘুম, যায় ঘুম বাগদিপাড়া দিয়ে,

    বাগদিদের ছেলে ঘুমোয় জাল মুড়ি দিয়ে।

    জাল মুড়ি দিয়েই হোক বা নরম গদির বিছানাতেই হোক, ঘুম আমাদের সবার অতি প্রয়োজনীয়। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস, খাওয়া আর শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখার মতই নিয়মিত ঘুম ছাড়া আমরা সুস্থভাবে বাঁচতে পারি না। প্রতি রাতে কম-সে-কম পাঁচ ছ ঘণ্টা ঘুম তো চাই-ই চাই। অনেকের আবার দুপুরেও ঘণ্টা খানেক ঘুম না হলে চলে না। আধুনিক জীবনের তাড়াহুড়ো আর গোলমালের মধ্যে আমাদের শান্তিতে ঘুমেরও দরকার কিন্তু তার জন্য সময়ও কম। এই সমস্যার সমাধান কোথায়? আর, একটু কম ঘুমোলেই বা ক্ষতি কী?

    খুব সহজ ভাবে দেখলে ঘুম আমাদের সারাদিনের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি গুছিয়েগাছিয়ে ঠিকঠাক জায়গায় তুলে রাখে যাতে দরকারের সময় চটপট সেটা ব্যবহার করা যায়। তাই, পরীক্ষার আগের রাতে ভালো ঘুমের দরকার সবচেয়ে বেশি, রাত জেগে পড়া মুখস্থ করার নয়। ঘুম না হলে মুখস্থ পড়াও মাথা থেকে বেরয় না। আমাদের স্বপ্নও ওই দৈনিক অভিজ্ঞতার এলোমেলো ছাপ-- মগজের মধ্যে সেগুলো নাড়াচাড়া করে গুছিয়ে রাখার প্রয়াস।

    সব দেশের মিথলজি বা পৌরাণিক কাহিনীতে আমরা ঘুমের দেব-দেবীদের উল্লেখ পাই। আমাদের রামায়ণে দেখি নিদ্রাদেবী ঊর্মিলাকে চৌদ্দ বছর ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলেন। আর সবাই জানে কুম্ভকর্ণর ছ মাস ধরে ঘুমোবার কাহিনী। গ্রীক মিথলজিতে ঘুমের দেবতা পুরুষ, Hypnos (সম্মোহন), তাঁর যমজ ভাই Thanatos (মৃত্যু) ও ছেলে Morpheus (স্বপ্ন), যার নামে ঘুমের ও ব্যথার ওষুধ মরফিন। সব নামগুলো ঘুমের সঙ্গে জড়িত। সব যুগেই ঘুমের প্রাধান্য স্বীকার করা হয়েছে। আমাদের মুনিঋষিরা বলে গেছেন কীভাবে, কতক্ষণ, সব। দিনে অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমোতে --দক্ষিণ শিয়রে, রাত দশটা থেকে ভোর ছটা পর্যন্ত।

    ঘুমেরও রকমফের আছে। দুটি প্রধান নমুনা rem (rapid eye movement) আর non-rem. রেম- টাইপ ঘুমে বোজানো চোখের পাতার নীচে চোখের মণি দুটি নড়াচড়া করে। এটা ঘুমন্ত বাচ্চাদের আর পোষা প্রাণীদের চোখে সহজেই দেখা যায়। দুই রকম ঘুমই পালা করে সারা রাত চলে। তবে শেষ রাতের গভীর ঘুমটা সাধারণত রেম-ঘুম হয় যাতে অনেক সময় প্রগাঢ় স্বপ্ন দেখা যায়। ভালো ঘুমের জন্য দুটোরই দরকার।

    কখন ও কতক্ষণ ঘুমোবেন সেটা নির্ভর করে আমাদের শরীরের সার্কাডিয়ান (circadian rhythm) ছন্দের ওপর। আলো আর অন্ধকারের সঙ্গে মিলিয়ে এই ছন্দ আমাদের রাত্তিরে ঘুম পাড়ায় ও সকাল বেলা সূর্যের আলোর সঙ্গে জাগিয়ে দেয়। সব মেরুদণ্ডীয় প্রাণীরা ঘুমোয় কিন্তু অনেকেই ছোট ছোট ক্ষেপে ঘুম দেয়। আমরা মানুষরা সব ঘুম একসঙ্গে রাত্তিরে সারি। ঘুমের ব্যাঘাত এই ছন্দে গোলমাল সৃষ্টি করে। ভালো ঘুম না হলে মাথা ঝিমঝিম, শরীর ও মুড খারাপ লাগে আর সেটা সারাবার একমাত্র উপায়--ঘুম। এই সার্কাডিয়ান নিয়মে মাঝ রাত্রে ও মাঝ দুপুরে আমাদের সবথেকে বেশি ঘুম পায়। এইসময় একলা গাড়ি চালানো বিপজ্জনক। কফি বা গান-বাজনা দিয়ে ঘুম ঠেকিয়ে রাখতে হয়। তা সত্ত্বেও শরীর দু-তিন সেকেন্ড মাইক্রো-ঘুম দিয়ে ঘুমের ঘাটতি পুরিয়ে নেবার চেষ্টা করে। আমরা টেরও পাই না কিন্তু এইটুকু সময়ের অসাবধানতায় মারাত্মক দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে।

    জেট প্লেনে পূর্ব-পশ্চিমে খুব তাড়াতাড়ি যাতায়াতের সময় আমাদের শরীর সময় বদলের সঙ্গে তাল রাখতে পারে না। ফলে আমরা জেট ল্যাগে ভুগি। ৬-৭ ঘণ্টার জেট ল্যাগ পুরোপুরি সইয়ে নিতে প্রায় ৬-৭ দিন লাগে। পুরনো দিনে আমরা ধীরে সুস্থে জাহাজে যেতাম, তাই জেট ল্যাগের ঝামেলা ছিল না।

    বাচ্চা ও ছোট শরীরের প্রাণীদের অনেকগুলি ছোট ছোট ঘুমের দরকার। পাঁচ-ছ বছরের শিশুদের চাই দিনে ও রাতে মিলিয়ে ১০-১২ ঘণ্টা ঘুম। ১০-১২ বছরের ছেলেমেয়েদের একটু কম ঘুম দরকার--রাতে ৮-১০ ঘণ্টা। এই বয়েসটাই সব থেকে ভালো, চিন্তাহীন, নিশ্ছিদ্র ঘুমোবার বয়স। প্রাপ্তবয়স্কদের (২৫-৬৫ বছর) দিনে গড়পড়তা সাত ঘণ্টা হলেই চলে যায়। রাত এগারোটা থেকে ভোর ছটা পর্যন্ত। সেই সঙ্গে হয়তো একটা ছোট্ট দিবানিদ্রা। পুরুষরা মেয়েদের চেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন। তাঁদের দিবানিদ্রাও বেশি হয়। ৫০-৬০ বছর থেকে আস্তে আস্তে রাতের ঘুম কমে যায়। শরীরে এক ধরনের ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন-এর পরিমাণ বয়সের সঙ্গে কমে যায়। নানা আধিব্যাধির জন্য ঘুমের ব্যাঘাতও বেশি হয়। তাই এই বয়সে ঘুমের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে দিবানিদ্রার বেশি দরকার পড়ে।

    আরেকটা বয়সে ঘুমের গোলমাল শুরু হয়-- টিন-এজার ছেলেমেয়েদের। আমরা সবাই দেরি করে ওঠা নিয়ে টিন-এজারদের বকাঝকা করি। এটা কিন্তু ওদের আলসেমি নয়। আর আপনাকে ইচ্ছে করে রাগানোর জন্যও নয়। এই বয়সে হরমোন ও মেলাটোনিন বাড়বার ফলে ঘুমের চাহিদাটা বেড়ে যায় আর ঘুমের ছন্দও বদলে যায়। প্রাকৃতিকভাবেই ছেলেমেয়েরা এই বয়সে দেরিতে ঘুমোয় আর দেরি করে ওঠে। এটা কুঁড়েমি নয়। অথচ স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয় সকাল সকাল। তাই এদের ঘুমের ঘাটতি বাড়তেই থাকে। এইজন্যই ছুটির দিনে বা উইক-এন্ডে বেচারাদের একটু বেশি করেই ঘুমোতে দেবেন।

    নিদ্রাল্পতা বা নিদ্রাহীনতা (insomnia) আধুনিক জীবনের অন্যতম ব্যাপক রোগ। দিনের যে-কোন সময় প্লেনে চড়লে দেখবেন অর্ধেক যাত্রী চোখ বুজে ঘুমোচ্ছেন বা ঘুমোবার চেষ্টা করছেন। মানে এঁরা সবাই ঘুমের ঘাটতিতে ভুগছেন। নিদ্রাল্পতা আমাদের কর্মময় জীবনের এক বিরাট সমস্যা। স্কুলকলেজ, চাকরি, পরিবার সবকিছুর দাবি-দায়িত্বের পর ঘুমোবার জন্য বেশি সময় থাকে না। অনেকেই মনে করেন অল্প ঘুমে কিছু যায় আসে না। বরং কম ঘুম একটা কৃতিত্বের চিহ্ন। এটা কিন্তু একেবারেই ভুল ধারণা। ক্রমাগত ঘুমের অভাব জমে উঠে শরীরে নানারকম রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

    অবশ্য সাময়িক (কাজের চাপ, পরীক্ষার টেনশন ইত্যাদি কারণে) নিদ্রাহীনতা আমাদের সবারই হয়। তাকে ইনসমনিয়া রোগ আখ্যা দেওয়া যায় না। সত্যিকারের ইনসমনিয়া রোগের লক্ষণ হল প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিন দিন কম ঘুম (দেরিতে ঘুমিয়ে পড়া, খুব তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙ্গা, ছাড়া ছাড়া ঘুম) এবং এই ব্যাপারটা টানা তিন মাস বা বেশিদিন চলতে থাকা। সেই সঙ্গে চাই অন্য কোন চিন্তা, সমস্যা বা অসুখ না থাকা ও ঘুম তাড়ানোর ওষুধ না খাওয়া। এই ভাবে গোনা হলে দেখা যায় প্রায় ১০-২০% জনসাধারণ এই রোগে ভোগেন। এর মধ্যে মহিলা ও বয়স্কদের (৬৫-এর ওপরে) সংখ্যা বেশি।

    কম ঘুমের প্রকোপে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির ক্ষতি হয়। যেকোনো প্রতিক্রিয়ার জন্য বেশি সময় লাগে (যেমন গাড়িতে ব্রেক কষার সময়)। মানসিক ডিপ্রেশন আরেকটি সমস্যা। বেশি খাওয়া, মেদবৃদ্ধি ও তার সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ ইত্যাদিও নিদ্রাহীনতার রোগীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। অনেকে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন। গলায় আলজিভ নিঃশ্বাসের সময় হাওয়াটা আটকায়, তাতে এই শব্দটা হয়। অন্যের ঘুমের ব্যাঘাত ছাড়া বিশেষ কোনো ক্ষতিকারক না হলেও অনেকে সে সঙ্গে দশ সেকেন্ড বা তারও বেশি সময়ের জন্য শ্বাস বন্ধ করে ফেলেন। সারা রাত ধরে চললে ঘুমের বাধা সৃষ্টি হয় এবং ঘুমের ঘাটতি বাড়ায়। একে বলে obstructive sleep apnea. বয়স্ক, মেদবহুল পুরুষেরা এতে ভোগেন। এটা হেলাফেলা করবেন না। নানারকম ভালো চিকিৎসার সুযোগ আছে।

    এসব ছাড়াও আরও অনেক কারণ আছে নিদ্রাহীনতার। জেনেটিক রোগ সংক্রান্ত, বা খারাপ অভ্যাসের দরুন, নানা রকম ঘুমতাড়ানী ওষুধের ব্যবহার, এমনকি বেশি বেশি চা, কফি খাওয়াও ঘুম নষ্ট করে। ঠিক চিকিৎসার জন্য চাই মূল কারণ নির্ধারণ। এসব না করে শুধু ঘুমের ওষুধ খেলে উপকারের বদলে অপকারই বেশি। বেশিরভাগ ঘুমের ওষুধই কিছুদিন পরে সহ্য হয়ে যায় ও ক্রমাগত ডোজ বাড়াবার দরকার পড়ে। বেশি খেলে সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব, মাথা ঝিমঝিম, জ্ঞান হারানো এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। এসব ওষুধ ডাক্তারের উপদেশ মতো নেওয়া উচিত। মেলাটোনিন হরমোন অবশ্য একটু অন্য ধরনের ওষুধ, এটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম। অনেকে ওষুধ ছাড়া অন্যান্য জিনিশও ব্যাবহার করেন--যেমন গরম দুধ, ল্যাভেন্ডার বা ক্যামোমিল চা ইত্যাদি। এসবে ক্ষতি নেই কিন্তু কাজও বিশেষ হয় না। সিরিয়াস নিদ্রাহীনতার জন্য চাই স্পেশালিষ্ট ঘুমের ডাক্তার। স্লিপ ল্যাবে নানারকম টেস্ট করা যায়-- ই ই জি, ই এম জি, নিঃশ্বাসের সঙ্গে আলজিভ চেক করা, ঘুমের মধ্যে পা নাড়া, কথা বলা, হাঁটা-চলা করা, দুঃস্বপ্ন দেখা, দাঁত কিড়মিড় করা, নাক ডাকা—এ সবই ঘুম নষ্ট করে।

    দিবানিদ্রা আমাদের অনেকেরই প্রয়োজন-- বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দিবানিদ্রার প্রয়োজন বাড়ে, কারণ রাতের ঘুম ভালো হয় না আর সেই ঘাটতি দিনে পুষিয়ে নিতে হয়। অনেক গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এই দিবানিদ্রার বা সিয়েস্তার (siesta) চল আছে। মধ্য অপরাহ্ণে ছেলে বুড়ো সবাই ঘণ্টা দুয়েক গড়িয়ে নেয়। অফিস,কাছারি সব সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে। কিন্তু আমেরিকায় সে প্রথা নেই তাই আমাদের কাপের পর কাপ কফি খেয়ে ঘুম ঠেকিয়ে রাখতে হয়। এটা অপ্রাকৃতিক ও শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। ছোট্ট ১৫-২০ মিনিটের ঘুমও শরীরটা অনেক ঝরঝরে করে দেয়। তাই অফিসে অনেকে একে power nap বলেন।

    ডাক্তার, শিফট-কর্মী, ট্রাক-ড্রাইভার সবারই নিদ্রা ঘাটতি পোষাতে দুপুরে একটু ঘুমের দরকার। অথচ অনেকেই তার সুযোগ পান না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লে বুঝতে হবে যে আপনার বেশ ঘাটতি ছিল। অনেকে গর্ব করেন 'আমার মাত্র তিন চার ঘণ্টা ঘুমেই চলে যায়।' কিন্তু শরীরের দাবি বদলানো যায় না। ঘুমের ঘাটতি শরীর কোন-না-কোন ভাবে পুষিয়ে নেবার চেষ্টা করে মাইক্রো-ঘুম বা দিবানিদ্রা দিয়ে।

    দুপুরে কোনরকম একঘেয়ে কাজ বা বক্তৃতার সময়ে ঢুলে পড়া আমাদের সবার অভিজ্ঞতা। যে কাজ একঘেয়ে এবং সহজ --বেশি মাথা ঘামাবার দরকার নেই-- সে কাজই আমাদের চোখে ঘুম আনে। একটা ঘুমের স্টাডিতে দেখা গেছে ১০০-র মধ্যে ঘুমের নম্বর দিলে টেলিভিশন পায়--৯১, একঘেয়ে লেকচার--৯০, বই পড়া--৮৫, গাড়িতে সহযাত্রী--৭১, চার্চ--৫৭, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প--৫৪, গাড়ি চালানো--৫০, ঘরের কাজ--৪৩, ট্রাফিক লালবাতিতে অপেক্ষা--৩২, ইত্যাদি। বড়োরা বোর হলে ঘুমিয়ে পড়েন (কারণ তাঁদের ঘুমের অভাব) আর ছোটোরা বোর হলে দুষ্টুমি করে।

    ঘুমের অভাব নিয়ে গাড়ি চালানো খুবই বিপজ্জনক। একটি হাসপাতালের সমীক্ষায় দেখা গেছে সারা রাত জেগে কল নেওয়ার পর সকাল আটটা থেকে নটার সময় ১৭% বেশি অ্যাকসিডেন্ট এবং ৭২% বেশি 'অ্যাকসিডেন্ট হতে হতে বেঁচে যাওয়া'। খালি রাস্তায় একক গাড়ির দুর্ঘটনা-- যেখানে চালকও একাকী-- প্রায় সবসময় চালকের ঘুমিয়ে পড়ার জন্যই হয়ে থাকে।

    স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া ও ব্যায়ামের মতই স্বাস্থ্যকর ঘুমেরও আমাদের বিশেষ দরকার। দিনে ওষুধ খেয়ে জেগে থাকা আর রাতে ওষুধ খেয়ে ঘুমোনো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ভালো ঘুমের জন্য আমরা নিজেরাই কিছু কিছু নিয়ম পালন করতে পারি। কয়েকটি উদাহরণ দিলাম--

    -- ঘুমোতে যাবার ও সকালে উঠবার সময় (ছ-সাত ঘণ্টা) নির্ধারণ করুন। আধ ঘণ্টার বেশি এদিক-ওদিক করবেন না।

    --খুব ঘুম না পেলে দিনে ঘুমোবেন না। ঘুমোলেও কুড়ি মিনিটের বেশি নয়। বৃদ্ধদের দরকার বেশি, কারণ তাঁদের রাতে ভালো ঘুম হয় না।

    --ঘুমোবার দু' ঘণ্টা আগে থেকে চা, কফি, অ্যালকোহল খাওয়া বন্ধ করুন। ব্যায়ামও নয়।

    --দিনে অন্য সময় নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এতে Circadian rhythm-টা দৃঢ় থাকে।

    --ঘুমোবার দুই ঘণ্টা আগে থেকে টিভি, কম্পিউটার, মবিল ফোন ইত্যাদি যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখবেন। (বই পড়তে পারেন।) এসব যন্ত্রের নীলাভ আলো মেলাটনিনের (এবং ঘুমের) ব্যাঘাত করে।

    --বিছানা যত সম্ভব আরামদায়ক করুন।

    --শোবার ঘর চুপচাপ, অন্ধকার ও একটু ঠান্ডা রাখবেন।

    --একজন ঘুম বিশেষজ্ঞর মতে, 'শোবার ঘরে শুধু ঘুম আর সেক্স ছাড়া অন্য কোন কাজ করবেন না।'

    --ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়েদের ভালো ঘুমের অভ্যাস শেখান।

    --সিরিয়াস ঘুমের রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

    ব্যস, অনেক উপদেশ, নির্দেশ হল। এবার আসুন, ঘুমপাড়ানি মাসীপিসীদের আবাহন করি---

    ঘুমপাড়ানী মাসী পিসী মোদের বাড়ি এসো,
    বাটা ভরে পান দেবো, গাল ভরে ঠেসো।

    তথ্যসূত্র:
    MOOC Course—Sleep, Neurobiology, Medicine and Society. University of Michigan. 2022.



    অলংকরণ (Artwork) : অনন্যা দাশ
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments