• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৫ | জুলাই ২০২৪ | গল্প
    Share
  • অসবর্ণ : সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়



    “একটা শিয়ালের সঙ্গে ডেট-এ যেতে তোর লজ্জা করল না?” বড় মেয়ে বাবলির দিকে ঋতব্রতবাবু রোষকষায়িত নেত্রে তাকালেন। বাবলির বোন হাবলি পাশে বসে ফুট কাটল, “তাও আবার নীলবর্ণের শিয়াল...”

    “লজ্জা করবে কেন? বাবা, একটা কথা পরিষ্কার করে বলো তো, তোমরা কি সত্যিই মনে করো শিয়াল মানেই হিংস্র? ও কিন্তু মোটেই সেই ধরনের শিয়াল নয়। আলাপ হলে বুঝতে পারতে, অত্যন্ত ভদ্র, মার্জিত... আর শরীরে নীল রক্ত থাকলে গায়ের চামড়া তো একটু নীলচে দেখাবেই,” আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে বাবলি দরকারের থেকে খানিকটা বেশিই বলে ফেলল।

    হাবলি মুখ বেঁকাল, “সাবধান দিদিভাই। ব্যাটারা কিন্তু সাংঘাতিক ধূর্ত হয়। অন্যদের থেকে আলাদা দেখানোর জন্য হয়তো গায়ে নীল রঙ মেখে থাকে। আঙুল ঘষে যাচাই করে নিস। অল সেড অ্যান্ড ডান, আ শিয়াল, ইজ় আ শিয়াল!” ঋতব্রতবাবুর রাগ বাড়ছিল, বললেন, “গিদ্ধড়টার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করার আগে আমাদের বংশমর্যাদার কথাটা একবারও ভাবলি না?”

    ঋতব্রতবাবুর স্ত্রী ব্রততী এতক্ষণ কথাবার্তায় অংশ নেননি। তিনি সোফায় হেলান দিয়ে টেলিভিশনে সিরিয়াল দেখতে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু আলোচনাটা ক্রমশ সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে দেখে রিমোট টিপে টেলিভিশন মিউট করে ঘুরে বসলেন। তারপর মেলোড্রামাটিক স্টাইলে আঁচলে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে উঠলেন, “একটা বাঘ বা সিংহ হলেও না-হয় বুঝতাম, শেষ পর্যন্ত কি না একটা খ্যাঁকশিয়াল!”

    তাঁর আক্ষেপ মেয়ের বোকামির জন্য নাকি আজকের এপিসোডটা মিস হয়ে গেল বলে ঠিক বোঝা গেল না। টেলিভিশনে নিঃশব্দে চলমান ছবির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কপাল চাপড়ে বললেন, “আত্মীয়-স্বজনদের কাছে মুখ দেখানোর তো আর জো রইল না।”

    বাবলি বলল, “তোমাদের আপত্তি কীসে? সমীরার বয়ফ্রেন্ড সেই সম্বর হরিণটার মত ও তো আর ভেজিটেরিয়ান নয়। মাছ-টাছ খায়, পারলে কাঁটাও চিবিয়ে গুঁড়ো করে দেয়। বিয়ের পর জামাইষষ্ঠীতে তোমরা প্রাণভরে খাওয়াতে পারবে।”

    ঋতব্রতবাবু রে-রে করে তেড়ে উঠলেন, “প্রেম করছিস কর, বিয়ের কথা মুখে আনলে...”

    ব্রততী স্বামীকে আটকালেন, “ও গো, তুমি একটু শান্ত হও। তোমার আবার হাই ব্লাড প্রেসার।”

    হাবলি বলল, “বিয়ের পর সব পুরুষই ইঁদুর হয়ে যায়। কিন্তু শিয়াল... নৈব নৈব চ, দে নেভার চেঞ্জ, ওয়ানস আ শিয়াল অলওয়েজ় আ শিয়াল।”

    বাবলি বিদ্রূপের গলায় বলল, “হ্যাঁ রে হাবলি, বিবাহিত পুরুষদের নিয়ে রিসার্চ করছিস মনে হচ্ছে... ভাল, ভাল, ভবিষ্যতে কাজে দেবে।”

    ব্রততী বললেন, “বিয়ে করতে হলে তোকেও শিয়াল হতে হবে, তখন বুঝবি। সন্ধেবেলা দলবেঁধে হুক্কা-হুয়া না করলে ঘর থেকে বার করে দেবে।”

    বাবলি হাত ওলটাল, “জাত-পাত নিয়ে যদিও আমাদের কারোরই তেমন মাথাব্যথা নেই, তবু আমরা ঠিক করেছি, দু’জনে কেউ কারও জাত-ধর্ম ছাড়ব না। সমাজ যদি মানে ভাল, না মানলেও আমাদের কিস্যু যাবে-আসবে না।”

    ঋতব্রতবাবু বাবলিকে অন্যভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলেন, বললেন, “হ্যাঁ রে, তোকে কি আমরা সেইভাবে মানুষ করেছি?”

    বাবলি অসহিষ্ণু হয়ে মাথা নাড়ল, “তোমাদের সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি। আমরা ঠিক ম্যানেজ করে নেব।”

    হাবলি নাকে কাঁদল, “তুই যাই বলিস দিদিভাই, একটা শিয়ালকে আমি কিছুতেই জাম্বু বলে ডাকতে পারব না।”

    বাবলি হেসে বলল, “জাম্বু বলার জন্য কে তোকে মাথার দিব্যি দিয়েছে? ওর একটা চমৎকার নাম আছে – প্রতীক। প্রতীকদা বলে ডাকতে পারতিস, তবে তুই না-হয় শিয়ালদা বলেই ডাকিস। শুনলেই মনে হবে রেলওয়ে স্টেশন। দূর পাল্লার ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। চড়ে বসলেই মাঠ-ঘাট পেরিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি... দার্জিলিং পাহাড়। মানে ওখানেই আমাদের হনিমুন করতে যাওয়ার প্ল্যান, তাই বললাম আর কী!”

    ব্রততী রাগত গলায় বললেন, “বেহায়া মেয়ে! গাছে না উঠতেই এক কাঁদি, বিয়ে হতে পারল না... হনিমুন! আমাদের মুখে চুন-কালি না লাগালে কি তোর ঘুম হচ্ছে না?”

    বাবলি বলল, “বিয়ের আগে তো যাইনি। ও বলেছে দুই বাড়িতে মেনে নিলে তবেই অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে, তারপর একসঙ্গে থাকা... তার আগে নয়।”

    ব্রততী বললেন, “ওর বাবা-মা রাজি হবে ভেবেছিস? শিয়াল সম্প্রদায় যা গোঁড়া!”

    “রাজি না হলে রেজিস্ট্রি করে নেব,” বাবলির গলায় হতাশা ঝরল, “তোমরাই বা কী এমন বরণডালা সাজিয়ে বসে আছ?”

    “আচ্ছা, নিজেরা সব ফাইনাল করে তারপর আমাদের অনুমতি চাইতে এসেছিস?” ঋতব্রতবাবুর গলায় ঢেঁকুরের সঙ্গে একটা ঝাঁঝ উঠে এল। ঝাঁঝটা অর্ধেক বিরক্তি বাকি অর্ধেক অম্বলজনিত। বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে পাড়ার মোড়ের তেলেভাজার দোকান থেকে দুটো আলুর চপ কিনে খেয়েছিলেন। বাবলির সঙ্গে শিয়ালের ডেটে যাওয়ার খবরটা সেখানেই পান। পাড়ায় শুভাকাঙ্ক্ষীর অভাব নেই। তাদের মধ্যেই একজন জানিয়েছিল, “ও ঋতদা, খবর রাখো? বাবলি তো আজকাল খুব উড়ছে।”

    এই বয়সে দোয়েল পাখিদের ওড়াই স্বাভাবিক। কিন্তু যেসব বয়োবৃদ্ধ চিল-শকুনদের ডানা থেকে পালক ঝরে খোস-প্যাঁচড়া বেরিয়ে পড়েছে তাদের চোখে সেই উচ্ছল ওড়াউড়ির দৃশ্য বিসদৃশ লাগবে, এতে আর আশ্চর্যের কী আছে? বাবলির ওড়ার খবর দিতে দিতে লোলচর্ম গৃধ্রটা খিন-খিন করে হাসছিল। আলুর চপ বিস্বাদ লেগেছিল ঋতব্রতবাবুর মুখে। এখন বুঝতে পারলেন চপদুটো আদৌ হজম করতে পারেননি। পাকস্থলীর অম্লরসের সঙ্গে তেল চপচপে চপের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্যাস ওপর দিকে ঠেলা মারছে। বাবলি বলল, “আমি কোথায় অনুমতি চাইলাম? তুমিই তো কথা পাড়লে। এখন উলটো চাপ দিচ্ছ।”

    বাবলিকে একটা জুতসই জবাব দিতে যাচ্ছিলেন, আচমকা বুকের বাঁ-দিকটা চিনচিন করে উঠল। ঋতব্রতবাবু বুকে হাত ঘষলেন। ব্রততী বললেন, “কী গো, কী হল? শরীর খারাপ লাগছে নাকি?”

    ঋতব্রতবাবু সামনে তাকিয়ে দেখলেন দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারের ছবিতে নদীর জলে ভেসে থাকা নৌকাগুলো বেমক্কা দুলছে। ঝড় উঠল নাকি? ব্রততী জানলা দিয়েছ? ব্রততী জবাবে যেন কী বলল। কথাগুলো ঋতব্রতবাবুর মাথায় ঢুকল না। চোখ ফিরিয়ে দেখলেন, মিউট করে রাখা টেলিভিশনে সিরিয়ালের চরিত্রগুলো যেন একে অন্যের গায়ে ঢলে ঢলে পড়ছে। অ্যান্টেনা ঘুরে গেলে আদ্যিকালের টেলিভিশনে যেমন ছবিগুলো নাচানাচি করত... অনেকটা যেন সেই রকম।

    টেলিভিশনটা ফালতু চলছে। স্যুইচ টিপে বন্ধ করার জন্য এগোতেই ঋতব্রতবাবুর পা টলে গেল। টেবিলের কোণা ধরে টাল সামলে তিনি মেঝের ওপরই বসে পড়লেন।

    “মাঝে মাঝে আমার ভয় হয়, তুমি একদিন আমায় পালক-টালক ছাড়িয়ে টপ করে গিলে খেয়ে ফেলবে,” বসন্ত বিকেলের হলুদ আলো তেরছা হয়ে লনের ঘাসের ওপর এসে পড়েছিল, সেদিকে তাকিয়ে বাবলি বলল। ক্লাবে রেস্তোরাঁর বাইরে পোর্টিকোতে কয়েকটা টেবিল পাতা, তার একটায় ওরা এসে বসেছে। বছরের এই সময়টায় হদ্দ পুরনো ভিড়-মিছিল-আন্দোলনে জেরবার শহরটাও কাঁচাপাকা চুলে হাতখোঁপা জড়িয়ে, দু’-চারটে পলাশ-শিমুল-অমলতাস গুঁজে মনোরম হয়ে ওঠে। বিশেষ করে একবার ক্লাবের চত্বরে ঢুকে পড়তে পারলেই হল। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সুখী-সুখী মুখের মেলা। এই ক্লাবে যারা নিয়মিত আসে তাদের দেখে মনেই হয় না নাকের পাটা ঘামে কিংবা খিদে-টিদে পায়। নেহাত কিছু না-খেলে খারাপ দেখায় বলে প্লেটে একটা চিকেন স্যান্ডউইচ নিয়ে বসে। সঙ্গে এক কাপ কালো কফি। পাশ দিয়ে গেলে গা থেকে ভুরভুর করে বিদেশি পারফ্যুমের সুগন্ধ উড়ে আসে।

    “পালক না-ছাড়িয়ে তোমায় খাব কী করে? গলায় আটকে যাবে তো,” সামনে রেখে যাওয়া প্লেট থেকে গোড়ায় রাংতা জড়ানো এক পিস চিকেন টেংরি কাবাব তুলে, দাঁত দিয়ে খানিকটা মাংস খুবলে নিয়ে, চিবোতে চিবোতে প্রতীক মুচকি হাসল।

    “শোনো, সবসময় ইয়ার্কি ভাল লাগে না,” ফ্রুট-জ্যুসে চুমুক দিয়ে বাবলি ভুরু কোঁচকাল। জানে, যারা খেতে ভালবাসে, তাদের মন ভাল হয়, তবু সেদিন থেকে কী যে একটা বেফালতু সন্দেহ মাথার মধ্যে ঢুকে গেছে! অথচ বাবার শরীর খারাপ শুনে সেদিন এই প্রতীকই হুড়মুড়িয়ে এসে, পাঁজাকোলা করে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার অবশ্য কীসব টেস্ট-ফেস্ট করে বলেছিল, ভয়ের কিছু নেই। তবে বয়স হচ্ছে, খাওয়া-দাওয়া মেপেজুপে করতে হবে।

    তারপর থেকে প্রতীক ঘরের লোক হয়ে গেছে। যখন-তখন বাড়ি এসে মায়ের কাছে মালপো খাওয়ার আবদার করে। মা-ও সিরিয়াল ছেড়ে উঠে গিয়ে হাসিমুখে গ্যাসের সামনে দাঁড়ায়। রকমারি খাবার বানায়। সেই অবসরে প্রতীক বাবার সঙ্গে গল্প জোড়ে। এমনকি হাবলিও এখন প্রতীকদা বলতে অজ্ঞান। এর মধ্যে একদিন ম্যলে গিয়েছিল তিনজনে, হাবলি, বাবলি আর প্রতীক। হাবলি বায়না করে ফুচকা আর আইসক্রিম খেয়েছে। বাড়ি ফিরে বলেছে, “প্রতীকদার সেন্স অব হিউমার কিন্তু ফাটাফাটি...”

    নির্দিষ্ট কোনও কারণ নেই, হঠাৎই বাবা-মা-হাবলির আলটপকা খটকাগুলো বাবলির মটকার মধ্যে বেমালুম চালান হয়ে গেল। কী যে ভয়ানক অশান্তি! কেবলই মনে হয়, পুরোটা না-হোক, লোকে যা বলে তার কিছুটা তো সত্যি বটেই। জীবনটা বেজায় লম্বা। দু’জনে মিলে এই সবে পথ চলা শুরু। যদি কোনওদিন মানিয়ে নিতে না পারে! সেদিন যদি প্রতীক পাশ থেকে সরে যায়! নিজের সম্প্রদায়ের প্রতি তারও তো কিছু দায়বদ্ধতা আছে।

    সন্দেহের ভূত খুব পাজি ভূত। মাথায় একবার চাপলে তাবড় ওঝা-গুনিন ডেকে ঝাড়ফুঁক করালেও নামতে চায় না। বাবলি একবার ভেবেছিল, প্রতীকের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলবে। তারপর ভাবল, থাক। প্রতীক হয়তো হেসেই উড়িয়ে দেবে। আগে এসব নিয়ে কথা হয়নি এমন নয়। কিন্তু তখন চোখে প্রেমের রং লেগে ছিল, বিয়ে-শাদির কথা ভাবেনি। বাবা-মা বা হাবলির সঙ্গে পরামর্শ করে লাভ নেই। তারা নির্ঘাত প্রতীকের পক্ষ নেবে। বাবলি সিদ্ধান্ত নিল, ছেলেটাকে আর একটু বাজিয়ে দেখে নেবে। দোষ কী? হাবলিও তো যাচাই করে নেওয়ার কথা বলেছিল। বাবলি যাই পরীক্ষা নিক না কেন, প্রতীক নিশ্চয়ই ঠিকঠাক পাশ করে যাবে। ভগবান তাই যেন হয়! বাবলি দেখল প্রতীক একদৃষ্টে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, জিজ্ঞেস করল, “কী দেখছ?”

    প্রতীক বলল, “দেখছি না, ভাবছি...”

    বাবলি বলল, “কী?”

    প্রতীক গেয়ে উঠল, “How many roads must a man walk down/ Before you call him a man?”

    যা ভাবছিল প্রতীক বুঝে ফেলল নাকি? বাবলি দীর্ঘশ্বাস ফেলে গলা মেলাল, “How many seas a white dove sail/ Before she sleeps in the sand?”

    একজন ওয়েটার টেবিলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে এক হাত তুলে গাইল, “Yes, and how many times must the cannonballs fly/ Before they are forever banned?”

    অমনি অন্যান্য টেবিলে বসে থাকা ক্লাবের সদস্যরা কোরাস ধরল, “The answer, my friend is blowing in the wind/ The answer is blowing in the wind.”

    বস্তুত বাবলি ভেবেছিল, এমনটাই ঘটবে। কিন্তু না, সেসব কিছু না... ওয়েটারটা নিরাসক্ত গলায় বলল, “উড ইউ লাইক টু অর্ডার এনিথিং এলস, স্যর?”

    প্রতীক বলল, “ইয়েস প্লিজ, ক্যাপুচিনো ফর মি এন্ড ডেজার্ট ফর দ্য লেডি... কী নেবে বাবলি? এরা খুব ভাল ক্যারামেল কাস্টার্ড বানায়, দিতে বলি?”

    বাবলি বলল, “বলো... তোমার সঙ্গে আরও কিছুদিন ঘোরাঘুরি করলে কুমড়োপটাশের মত মোটা হয়ে যাব।”

    প্রতীক কফি আর ক্যারামেল কাস্টার্ডের অর্ডার দিয়ে বলল, “তার আগেই আমরা বিয়ে করে নিই, চলো।”

    বাবলি আহত গলায় বলল, “কেন? বিয়ের পরে কি সব ঘোরাঘুরি বন্ধ?”

    প্রতীক হেসে সান্ত্বনা দিল, “আহা, তা বলছি না। বলছি যে বিয়ের পর মোটা হলে সবাই বলবে, স্বামীর সোহাগ পেয়ে মোটা হয়েছে। তখন তোমার আর গিল্টি ফিলিং হবে না।”

    বাবলি ছাড়ল না, বলল, “কী বলতে চাও? মেয়েরা রোগা হতে চায় যাতে বিয়ের বাজারে দাম বাড়ে, তাই না?”

    প্রতীক মাথা নাড়ল, “আজ তোমার কী হয়েছে বলো তো? যাই বলছি উলটো মানে করছ।”

    বাবলি বলল, “আমি উলটো মানে করছি নাকি তুমি উলটোপালটা কথা বলছ?”

    প্রতীক প্রতিবাদে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় হৃষ্টপুষ্ট একটা খরগোস লাফ দিয়ে ওদের টেবিল ডিঙিয়ে, লন পার হয়ে টেনিস কোর্টের দিকে চলে গেল। তার তুড়ুক লাফ দেখে প্রতীক উসখুস করে উঠল। বাবলি লক্ষ করছিল। প্রতীকের চোখ একবার দপ করে জ্বলে উঠেই নিভে গেল। বাবলি মনে মনে বলল, ‘রক্তের দোষ, যাবে কোথায়?’

    মুখে বলল, “কী হল? থেমে গেলে কেন? বলো, কী বলছিলে।”

    ওয়েটার ক্যাপুচিনো আর কাস্টার্ড নামিয়ে রেখে গিয়েছিল। প্রতীক কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে বলল, “নাহ, কিছু নয়।”

    বাবলি প্রতীককে আর ঘাঁটাল না। যতই চেপে ধরতে যাচ্ছে প্রতীক ঠিক পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সে সত্যিই সৎ নাকি কেবল মাত্র সততার ভান করছে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। সবসময় ভালমানুষীর মুখোশ পরে সহজাত প্রবৃত্তিকে আড়াল করে রাখা কি আদৌ সম্ভব? কে জানে? আর একটু সময় দরকার, আর একটু ভাবনা-চিন্তা, প্ল্যানিং। প্রতীক সত্যিই যদি মুখোশ এঁটে বাবলিকে বোকা বানিয়ে থাকে, ওর মুখোশ বাবলি একদিন ঠিক খুলে দেবে।

    আপাতত প্রতীককে ফাঁদে ফেলার চেষ্টায় ক্ষান্তি দিয়ে বাবলি ক্যারামেল কাস্টার্ডে মন দিল। প্রতীক ওয়াজ রাইট, ক্যারামেল কাস্টার্ড এরা ভালই বানায়।

    “জলে নামতে আমি ভীষণ ভয় পাই,” প্রতীক বলল।

    দোলের দিন লং ড্রাইভে যাওয়ার পরিকল্পনাটা বাবলিরই ছিল। প্রতীককে বলেছিল, ‘চলো দিঘা যাই, অনেক দিন সমুদ্র দেখা হয় না।”

    প্রতীক যথারীতি উলটো গেয়েছিল, “নদী নয় কেন?”

    বাবলি বলেছিল, “নদীর পাশেই তো থাকি...”

    প্রতীক বলেছিল, “যে নদী রোজ পারাপার করতে হয়, তাকে আর নদী মনে হয় না। দেখলেই মায়ের কথা মনে পড়ে যায়... আটপৌরে ছাপা শাড়ি, আঁচলে হলুদের দাগ। কতদিন ঠিক নদীর মত দেখতে একটা নদী দেখিনি। উচ্ছল, উপলমুখর, পাথর এড়িয়ে বয়ে যাওয়া একটা ছোট্ট নদী... ডেকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা হবে – কোথায় চললে খুকু?”

    “আচ্ছা, খুকুমণি দেখার খুব শখ? নাহ, দিঘা যাব। সমুদ্র দেখব,” বাবলি এক কথায় প্রতীকের নদীর ধারে যাওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল।

    রাস্তায় ট্রাফিক ছিল, দিঘায় পৌঁছোতে বেলা ঘুরে গেল। লাঞ্চ-টাঞ্চ করে সমুদ্রের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিকেল। বাবলি প্রতীকের হাতে টান দিয়ে বলল, “চলো জলে নামি।”

    প্রতীক আঁতকে উঠে বলল, “না, না...”

    বাবলি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “সে কী? সমুদ্রের এত কাছে এসে জলে নামবে না?”

    প্রতীক বলল, “আমার এক বোন ছোটবেলায় জলে ডুবে মারা গিয়েছিল। আমরা মামার বাড়ি গিয়েছিলাম চুঁচড়োয়। মামার বাড়ির পিছনে একটা এঁদো পুকুর ছিল, কচুরি পানা ভর্তি। বোন পুকুরধারে খেলতে খেলতে জলে পড়ে যায়। ছোটমামা মেজমামা মিলে পুকুর তোলপাড় করে ফেলেছিল। কিন্তু বোনকে খুঁজে পাওয়া গেল না। দু’দিন পরে বোনের বডিটা ফুলে ঢোল হয়ে ভেসে উঠেছিল। তারপর থেকে জল দেখলেই...”

    বাবলি ভাবল, কে জানে বানিয়ে গল্প বলছে কি না। হয়তো জলে নামলে গায়ের নীল রং ধুয়ে যাবে, চামড়ার আসল রূপ বেরিয়ে পড়বে, সেই জন্যই জলে নামতে চাইছে না। এতদিন মিশেও প্রতীকের গায়ের রঙের রহস্যটা বাবলি উদ্ধার করে উঠতে পারেনি। ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে হাতে হাত ঘষে দেখেছে – পাকা রং। অবশ্য জল পড়লে রং গলবে কি না সেটা পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। প্রতীককে একবার যেন তেন প্রকারেণ জলে নামাতে পারলে ব্যাপারটার সমাধান হত। কিন্তু একটা হাট্টাকাট্টা জোয়ান শিয়ালকে তো আর জোর করা যায় না। অন্য উপায় বার করতে হবে। জলের ধার ঘেঁসে হাঁটতে হাঁটতে বাবলি হাই তুলে বলল, “খুব টায়ার্ড লাগছে। আজকের রাতটা দিঘায় কাটিয়ে গেলে হয়।”

    প্রতীক বলল, “বাড়িতে বলা নেই। মাসীমা মেসোমশাই চিন্তা করবেন।”

    বাবলি বলল, “সে আমি ম্যানেজ করে নেব। তুমি একটা ভাল হোটেল দেখো। কাল সকালে ধীরেসুস্থে ফিরলেই হবে।”

    বাবলির আগ্রহ দেখে প্রতীক নিমরাজি হল। তাছাড়া জানে, বাবলি একবার যখন বলেছে তার আর নড়চড় হবে না। বাবলির কথার ওপর কোনও যুক্তিতর্ক চলে না। খুঁজেপেতে যে হোটেলটায় দু’জনে ঢুকল সেটা তারকাখচিত। প্রতীক আগে যতবার এসেছে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সস্তার হোটেলে রাত কাটিয়ে, নরক গুলজার করে ফিরে গেছে। ইদানীং দিঘায় যে এই রকম প্রাইভেট বীচ, স্যুইমিং পুল, মাসাজ পার্লার, জিম সম্বলিত লাক্সারি হোটেল খুলেছে খবর রাখত না। ঘরে ঢুকে বাবলি বাচ্চা মেয়ের মত খুশি হল। ধপাস করে খাটের ওপর শুয়ে পড়ে হাতের ইশারায় প্রতীককে পাশে ডাকল। প্রতীক বলল, “এখন ঘুরে আসি চলো, পরে আরাম করা যাবে।”

    বাবলির বোধহয় একটু রোমান্স করার সাধ হয়েছিল। আগে কোনওদিন প্রতীকের সঙ্গে এই ভাবে একা হয়নি। প্রতীক সাড়া না দেওয়ায় ভিতরে ভিতরে ক্ষুণ্ণ হল। কিন্তু মুখে কিছু বলল না। বিছানা ছেড়ে উঠে, দেওয়ালে লাগানো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে চিরুনি চালিয়ে, ঠোঁটে লিপস্টিক ঘষে তৈরি হয়ে নিল। বাধ্য মেয়ের মত বলল, “কোথায় যাবে বলছিলে...”

    হাতে হাত জড়িয়ে দু’জনে বেরোল বটে ঘুরতে কিন্তু কোথায় যেন তাল কেটে গেল। দোলের দিন বলেই হয়তো, রাস্তাঘাটে বিশেষ ভিড় নেই। দোকান-বাজার বন্ধ। প্রতীক বলল, “উদয়পুর বীচে যাবে? গাড়িতে দশ মিনিট। বছর তিনেক আগে এসেছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে। সমুদ্রের ধারেই ঝাউবন, জায়গাটা বেশ সুন্দর।”

    বাবলি বলল, “সন্ধে হয়ে আসছে। এখন আর ঝাউবনে গিয়ে কাজ নেই। এমনিও হেঁটে হেঁটে পা ব্যথা হয়ে গেছে। তার চেয়ে হোটেলে ফিরি বরং।”

    ব্যাস! বাবলি বলেছে মানে সব রাস্তাই হোটেলের দিকে যাবে। প্রতীক হাল ছেড়ে বাবলির অনুগামী হল। হোটেলে ঢুকে রিসেপশনে বসা মেয়েটাকে বাবলি জিজ্ঞেস করল, “স্যুইমিং পুলটা যেন কোন দিকে?”

    মেয়েটা কাউন্টার থেকে বেরিয়ে, ওদের সঙ্গে এসে স্যুইমিং পুল পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেল। ছিমছাম লম্বাটে ধাঁচের পুল। জলের পাশে পাশে খানকতক প্লাস্টিকের চেয়ার ঘেরা গোল টেবিল। তাদের একটাতে গিয়ে বসল দু’জনে। প্রতীক খোঁজ নিল বীয়র পাওয়া যাবে কিনা। বাবলির দিকে তাকাতে বাবলি বলল, “আমার জন্য জিন উইথ লাইম।”

    মেয়েটা ওয়েটারের হাত দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চলে গেল। প্রতীক চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে আড়মোড়া ভাঙল। বাবলি সুযোগ খুঁজছিল, প্রতীককে ধাক্কা দিয়ে যদি একবার জলে ফেলে দেওয়া যায়! অগভীর পুল, ডুবে যাওয়ার ভয় নেই। শুধু গায়ের নীল রং গলে পুলের জলে মিশতে দেখলেই ক্যাচ কট কট, বিয়ে-শাদি ক্যানসেল। প্রতীক বোধহয় বুঝতে পেরেছিল, বাবলির ধান্ধা ভাল নয়। চেয়ার টেনে জলের পাশ থেকে সরে টেবিলের অন্য দিকে গিয়ে বসল। বাবলি আবার নিরাশ হল। এ তো মহা মুশকিল! পাঁকাল মাছের মত কেবলই হাত থেকে পিছলে পালিয়ে যায়!

    ওয়েটার এসে সামনের টেবিলে দুটো পানপাত্র নামিয়ে রেখে গেল। এক চুমুক দিয়ে বাবলি ভাবল, যা দেখা যাচ্ছে প্রতীককে জলের কাছাকাছি টেনে নিয়ে যাওয়া এক প্রকার অসম্ভব। স্বাভাবিক প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় প্রতীক জলের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। স্থল-শিয়ালকে জল-শিয়াল করার কোনও উপায়ই কি নেই? বাবলি পানপাত্রে চোখ নামিয়ে জিনের দিকে তাকিয়ে কাতর গলায় বলল, ‘জিন দৈত্যরা তো অনেক কাজ পারে। বেশি কিছু নয়, জাস্ট একটা মতলব দে বাবা যাতে সামনের চেয়ারে বসে থাকা মালটার আসল রংটা চিনতে পারি।’ মনে মনেই বলল অবশ্য। প্রতীক শুনতে পেলে আবার কী নতুন বখেড়া হবে কে জানে!

    ওরা যেখানে বসে ছিল তার কাছেই দুটো বাচ্চা দৌড়ে এসে ঝুপ্পুস করে পুলে ঝাঁপ দিল। খানিকটা জল চলকে ওদের পায়ের কাছে এসে পড়ল। প্রতীক বীয়র-টিয়র ছেড়ে সভয়ে উঠে দাঁড়াল। বাবলির হাতের পানপাত্র থেকে মাথা তুলে, ফিক করে হেসে জিন বলল, ‘কী বুঝলে? পর্বত যদি…’ বাবলি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘বুঝেছি, বুঝেছি... তোমাকে আর ব্যাখ্যান করতে হবে না।’

    প্রতীক দাঁড়িয়েই ছিল। বাবলিও পানপাত্রের বাকি তরলটুকু এক ঢোঁকে পেটে চালান করে উঠে দাঁড়াল। প্রতীকের হাতে টান দিয়ে বলল, “ঘরে গিয়ে রেস্ট করি, চলো।”

    “টাওয়েলটা একটু এগিয়ে দেবে গো?” প্রতীক দেখল বাথরুমের দরজায় এক নগ্ন নির্জন হাত।

    ঘরে ঢুকেই বাবলি বলেছিল, “সারাদিন রোদে রোদে ঘুরে গা চটচট করছে, চান করে আসি।”

    প্রতীক বলেছিল, “সন্ধেবেলা চান করে ঠান্ডা লাগিও না।”

    বাবলি শোনেনি। বাথরুমে ঢুকেছিল। এখন বোঝা যাচ্ছে, টাওয়েল না নিয়েই।

    বিছানার ওপর গুটিয়ে রাখা টাওয়েল তুলে প্রতীক বাথরুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়াল। নাগালের মধ্যে আসতেই আধখোলা দরজার ফাঁকে আটকে থাকা হাতটা, টাওয়েল সমেত প্রতীকের হাত চেপে ধরল। প্রতীক অনুনয় করল, “এই বাবলি, কী করছ?”

    বাথরুমের দরজা খুলে বাবলি প্রতীককে ভিতরে টানল। খিলখিল করে হেসে বলল, “লজ্জা কীসের? এসো একসঙ্গে চান করি।”

    প্রতীক দেখল শাওয়ার থেকে ঝরঝর করে জল পড়ছে, বলল, “আরে, জামাকাপড় ভিজে গেলে বাইরে বেরোব কী করে? সঙ্গে এক্সট্রা জামাকাপড় নেই তো।”

    বাবলি শুনল না। প্রতীকের শার্টের বোতামে আঙুল রাখল। প্রতীক নিষ্ক্রিয় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। শার্ট ছাড়িয়ে দেওয়ালের গায়ে লাগানো হুকে ঝুলিয়ে বাবলি যখন কোমরের বেল্ট খুলছে, প্রতীক বলল, “বাবলি, এর পর আমি কিন্তু নিজেকে সামলে রাখতে পারব না।”

    বাবলি কথার জবাব দিল না। নিজের কাজেই মগ্ন রইল।

    প্রতীকের ট্রাউজারও অবিলম্বে শার্টের পাশে দেওয়ালের হুকে ঝুলে পড়ল। বাবলি প্রতীককে টেনে ঝর্না-শাওয়ারের নিচে নিয়ে এল। দু’জনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আপাদমস্তক ভিজতে লাগল। প্রতীক বাবলির দিকে তাকিয়ে দেখল সে মেঝের দিকে চেয়ে আছে। প্রতীক জিজ্ঞেস করল, “কী দেখছ? কিছু হারিয়েছে?”

    বাবলি ভেবেছিল, শাওয়ারের নিচে দাঁড়ালেই প্রতীকের গা থেকে নীল রং ধুয়ে সাদা মার্বেলের মেঝেয় ছড়িয়ে পড়বে। পায়ের নখ বেয়ে নেমে নীল রঙের ধারাস্রোত বইবে। আসলে নিজের মনের মধ্যে মেঘলা আকাশ, ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ, ফাঁকফোকরে নীলের ছোপ... চোখ নামিয়ে বাবলি খুঁজছিল মেঝেতে সেই সবের ছায়া পড়ছে কি না। কিছুই পেল না। উৎফুল্ল গলায় বলল, “হারিয়েছিল। কানের দুল। খুঁজে পেয়ে গেছি।”

    প্রতীক ভাল করে দেখে বলল, “দু’কানেই তো দুল আছে, দেখছি।”

    বাবলি বলল, “বললাম তো, খুঁজে পেয়ে গেছি,” তারপর কথা ঘোরানোর জন্য আঙুল দিয়ে প্রতীকের বুকের ওপর আঁকিবুঁকি কাটতে কাটতে বলল, “তোমার গায়ের রং এমন নীল কেন গো?”

    “কী জানি! জেনেটিক মনে হয়,” প্রতীক কাছে সরে আসছিল। বাবলি অস্ফুট স্বরে বলল, “এই, না...”

    প্রতীককে হাত দিয়ে ঠেলে দূরে সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করল। দুর্বল হাত। পারল না। প্রতীক বাবলিকে জড়িয়ে ধরতেই বাবলি দেখল প্রতীকের গায়ের নীল রং তার সর্বাঙ্গে লেগে যাচ্ছে। যেন তার ত্বক নয়, নীল রঙে ছোপানো শাড়ি। প্রতীক বাবলির নিরুপায় ঠোঁটের ওপর ঠোঁট নামাল। তার জিভে সর্বগ্রাসী খিদে। লালায় মগজ অসাড় করা গন্ধ। বাবলির নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। চুলোয় যাক সব ভাবনা-চিন্তা... দ্বিধা, সন্দেহ। বাবলি হাল ছেড়ে দিল।

    কন্ঠার খাদ পেরিয়ে প্রতীকের ঠোঁট নামছে নিচের উপত্যকায়। আর কী আশ্চর্য নীল রঙ ছড়িয়ে পড়ছে বাবলির সমস্ত শরীরে! চিবুক থেকে বুকে, আরও নিচে নাভিমূলে... হালকা নীল থেকে গাঢ় নীল। গাঢ়তর নীল। রুখো-শুখো নদীর সোঁতা ভেসে যাচ্ছে অপার্থিব নীল স্রোতে। বাবলি অবাক হয়ে ভাবল, তারও কি জিন বদলাচ্ছে? নাকি এই বর্ণ-সঞ্চার নিতান্তই কোনও সংক্রমণ? নাম না জানা এক ছোঁয়াচে রোগ? যদি এ রোগের উপশম না থাকে!

    উঃ! ভগবান, তাই যেন হয়! এই সুখ, এই অসুখ যেন কোনওদিন না সারে।

    তীব্র আশ্লেষে বাবলি কেঁপে উঠল।



    অলংকরণ (Artwork) : রাহুল মজুমদার
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments