• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৪ | এপ্রিল ২০২৪ | গ্রন্থ-সমালোচনা
    Share
  • গ্রন্থ-সমালোচনা : ভবভূতি ভট্টাচার্য

    || পথহারা তুমি পথিক যেন গো…||


    নীলকর টমাস ম্যাচেলের দিনলিপি (১৮৪০-১৮৫২)--অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ পার্থসারথি ভৌমিক;

    সিগনেট প্রেস, কলকাতা -৯; প্রথম প্রকাশ ২০২৩;

    ISBN 978-93-5424-412-3

    চমৎকৃত হতে হয় এই বইয়ের আদত সূত্রপাতে, চমৎকৃত হতে হয় এই বইয়ের মৌলিকতায়, চমৎকৃত হতে হয় এই বইয়ের উপস্থাপনায়--এবং এর স্বচ্ছন্দ অনুবাদে/সম্পাদনায়!

    কোথাও যেন পড়েছিলাম, লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ম লাইব্রেরির ভারত-সংক্রান্ত বই-পাণ্ডুলিপি-ডায়েরি সব পর পর যে যে সকল তাকে সাজানো আছে তাদের দৈর্ঘ্য পুরো জুড়লে নাকি চল্লিশ মাইল পর্যন্ত লম্বা হয়ে যাবে! ভাবো! এই চল্লিশ মাইলের মধ্যে একখানি এন্ট্রি ছিল Mss Eur B369/1-5. কী সেটা?

    সন ১৮২৪ খ্রি.। গনগনে ব্রিটিশ সূর্য তখনই মধ্যগগনে বিরাজ করছে। এই সময়ে ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ার শহরে এক দরিদ্র স্কটিশ পরিবারে এক শিশুর জন্ম হয়, যে কিনা আজন্ম একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটত। আর তাই ঘরের আশেপাশেই কোনো হৌজে কেরানির চাকুরি করে তার জীবনটা কেটে যাবার কথা ছিল হয়ত। কিন্তু ঘর ছাড়ার নেশায় দশ বছর বয়সেই বাড়ি ছেড়ে পালায় সে বালক--জাহাজের দড়িধরা-মাল্লার কাজ নিয়ে। শুধু ভারতবর্ষ নয়, কোথায় দক্ষিণ আমেরিকা থেকে চীনদেশ ঘুরে এসেছিল সে (হ্যাঁ, ১৮৪২এ প্রথম আফিম যুদ্ধের শেষে নানকিং চুক্তি যখন হচ্ছে এক ‘বয়’ হিসেবে সেখানেও উপস্থিত ছিল তরুণ টমাস)। না, কোনো বিখ্যাত মানুষ যে সে ছিল না তাই এটা আশ্চর্য নয় যে তার নাম আমরা জানবো না। ভাগ্যিস অনুবাদক অধ্যা. পার্থসারথি ভৌমিক মশায় উদ্ধার করলেন এই ডায়েরি, এবং অসাধারণ বঙ্গানুবাদে সিগনেট বই করে বার করায় আমরা পড়ে মোহিত হচ্ছি।

    কী এ’বইয়ের বিশেষত্ব?

    না, শুধু যে লেখার পাশাপাশি নানারঙে ছবির পর ছবি এঁকে সেকালের গ্রামবাঙলাকে ধরে রেখেছেন টমাস ম্যাচেল তা-ই নয়, এত তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খে নজর সকল বিষয়ে যে পাঠকের মনে হবে সাহেব যেন তার পাশেই বসে লিখছেন রূপো-বাঁধানো খাগের কলম দোয়াতে ডুবিয়ে। উনি যেহেতু স্যাঁতসেতে দক্ষিণবঙ্গেই থাকতেন (১৮৪০-১৮৫২), তাই এখানকার আর্দ্র আবহাওয়ায় কালি শুকোত না কাগজে, ধেবড়ে গিয়ে তারা সব কেমন কেমন যেন ভূতুড়ে অবয়ব এঁকে ফেলত খাতার পাতায়! [পৃ. ২১৬]

    বা, বিনবিনে দেওয়ালি পোকা থেকে মাছি-মশা রাতে কাঁচের লম্প-টি ঘিরে আসতো এত এত সংখ্যায় যে নাকমুখ খোলা রাখাই দুষ্কর, লেখা তো দূরস্থান! প্রকৃতই জীবনের জলছবি আঁকিয়ে না হলে কি আর এত সামান্য সামান্য বিষয়ের এত সজীব বর্ণনা করা যায়? বড় রসময় টমাস ম্যাচেলের এই দিনলিপি।

    সেকালের বাংলা জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে এ’ কেতাবে! পাওয়া যায় দক্ষিণবঙ্গের কত কত স্থান নাম, তার মধ্যে বনগাঁ-যশোহর-ব্যারাকপুর-‘কিষেনগর’ না হয় চেনা গেল, কিন্তু পাটকাবাড়ি-বগাডাঙা-মুলনাথ? সে সব জনপদ আজ প্রায় দু’শ বছর পরে হয়ত অন্য কোনো নামে পরিচিত হয়ে রয়েছে। এক নীলকর সাহেবের কলমে এদেশীয় হোলি-মহরম-বিবাহানুষ্ঠানের জীয়ন্ত বর্ণনা পড়তে পাওয়া বেশ উপাদেয়; আর বীর তিতুমীরের গল্প, বা ডিরোজিয়ান ‘ইয়াং বেঙ্গল’-দের কথা!! আরে বাবা, নীলকরসাহেব মাত্রই ‘নীলদর্পণ’-এর উড-এর মতো নৃশংস হতো না। শিল্পিমনা টমাস ম্যাচেল রায়তদের উপরে নীলচাষ বাড়ানোর জন্যে কিছুটা জবরদস্তি করতে হবার আশঙ্কায় মর্মে মরে থাকেন [২৮শে ডিসেম্বর ১৮৫২ এর এন্ট্রি। পৃ. ২৭৯ ]. এ’দেশীয় নানান পরব, রীতিনীতি, আদবকায়দায় মুগ্ধ হন তিনি। অবধারিত মনে পড়ে যাবেই শ্রীমতী ফ্যানি পার্কের কথা। সে শিল্পী-রমণীও এ’দেশে যা কিছু দেখেছিলেন ভালোবেসে ফেলেছিলেন। খুব ভালোবাসতেন আমাদের এই টমাস সাহেব চুরুট টানতে, ও কফি পান করতে। ডিনারে কী কী খেলেন সাধারণত তার বিশদ বিবরণ নেই [পৃ. ৪২৪ ছাড়া], কিন্তু ডিনারশেষে মৌতাতে যে বর্মী চুরুট একটি ধরালেন, বারংবার বর্ণনা রয়েছে তার। এবং সঙ্গে গরম এক মগ কফি তো থাকবেই। আছেও। তা বলে কি ব্র্যান্ডিপানি-শ্যাম্পেন-এইল (বীয়র) থাকবে না? তা-ও আছে, বিশেষত সাহেবদের ক্রিকেট খেলার আসরে শেষ/মাঝে জিঞ্জার বীয়র! [পৃ. ২৪০]

    স্পয়লার! আরও আরও গল্প বলেটলে দিয়ে একাক্কার করবো না, ভাবী পাঠকের পাঠসুখে ঘাটতি পড়বে তাতে। বহু বহু ছবি রয়েছে বইটিতে, সেগুলি মূলের মতো রঙিনে দেওয়া গেল না বলে আক্ষেপ করেছেন প্রকাশক, কিন্তু সাদাকালোতেই সৌন্দর্য যা খুলেছে বধাঈ দিতে হয় তার জন্যে। যেমন, ৩৯১ পৃষ্ঠায় ঘটি/ঘড়া হাতে জল আনতে চলা হিন্দু রমণী ‘সীতা’-র ছবিটি। উচ্চবর্ণীয়া হিন্দু রমণীরা যে ডান নাসার উপরে নথ পরে, আর মুসলমান-রমণী পরে বামে--এটা নজর এড়ায়নি শিল্পী টমাসের।

    ১৭৪ পৃষ্ঠায় পাই প্রখ্যাত শিল্পী কোলসওয়ার্দি গ্রান্টের আঁকা খোদ টমাস ম্যাচেলের গড়গড়া-টানার চমৎকার এক স্কেচ। সাহেবের চোখদুটি বড় মায়াময় এঁকেছেন উনি। হবে না? এক শিল্পী আঁকছেন আরেক শিল্পীর চিত্র যে! আর হ্যাঁ, গ্রান্ট সাহেব যে কিছুদিন কলিকাতাস্থিত ‘হিন্দু কালেজের’ অঙ্কনশিক্ষক ছিলেন এইটা তো আগে জানতেম না!

    বইটিতে রঙিন ছবি রঙিনেই ছাপা আছে, অবিশ্যি, কয়েকটি। তার মধ্যে সবুজে-সবুজ ব্যারাকপুর পার্কের ছবিটি মন কাড়ে। (পৃ. ৪২১)

    বইটির অনুবাদ-তথা-সম্পাদনার কাজ অতি উচ্চ মানের। দীর্ঘ ‘পরিশিষ্ট’ ও ‘তথ্যসূত্র’-র জন্যে বারে বারে কৃতজ্ঞতা জানাই, যেখানে বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে তুলে এনে এ’দেশীয় বিষয়গুলির ব্যাখ্যা করে দেওয়া আছে, ‘অদীক্ষিত’ পাঠকের জন্যে। বাংলাভাষায় লিখিত ভ্রমণসাহিত্য-তথা- ব্যক্তিগত ডায়েরি -তথা- অনুবাদসাহিত্য -তথা- স্থানীয়-ইতিহাসের এক মূল্যবান দলিল হয়ে থেকে যাবে এই গ্রন্থ, যেটি পড়তে পড়তে একটা গানই কেন জানি না মনের মধ্যে অনুরণিত হতে থেকেছে বারংবার,

    দিনের বেলায় বাঁশি তোমার বাজিয়েছিলে অনেক সুরে।

    গানের পরশ প্রাণে এল, আপনি তুমি রইলে দূরে।।

    শেষপাতায় ম্যাচেলও লিখেছেন, সকলের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে যেদিন কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করছেন বিলাতের জাহাজ ধরতে, না তাঁর কর্মচারীদের না তাঁর নিজের চোখ শুকনো ছিল।

    “শুধাই যত পথের লোকে/ এই বাঁশিটি বাজালো কে?/ নানান নামে ভোলায় তারা/ নানান দ্বারে বেড়াই ঘুরে||”


    || এমন মিস্তিরি আর আসে না কেন? ||

    The Life and Times of David Hare--First Secular Educationist of India--Sarojesh Mukerjee;

    Niyogi Books, New Delhi-20; First published January 2024;

    ISBN: 978-81-964053-8-0

    সাতশ’ আটষট্টি টনের সেগুন কাঠের একটি জাহাজ, নামটি তাহার ‘মর্নিংটন’!

    সাদাম্পটন বন্দর থেকে দীর্ঘ সাত মাসের সমুদ্রযাত্রা করে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের ২২শে জুলাই যখন ডায়মন্ড হারবারে এসে নোঙর ফেলে জাহাজটি, সমুদ্রপীড়ায় অতি কাতর যাত্রীদলের মধ্যে ছাব্বিশ বছর বয়স্ক এক দীর্ঘাঙ্গ স্কটিশ যুবকও ছিলেন। বিশ বছরের মধ্যে এ’দেশে তিনি যান্ত্রিক ঘড়ির কারবারে যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করলেও ইংলন্ডে আর যে ফিরে যাননি তার পিছনে ঐ যন্ত্রণাময় দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার অভিজ্ঞতাটাও ছিল হয়ত (এক অনামী ফ্লু-তে ৫৬ জনের মৃত্যু হয় ঐ জাহাজেই)। বিশ বছরের মধ্যে বিশখানি প্লট অব্‌ ল্যান্ড এই সাহেব কিনেছিলেন পটলডাঙা-কলেজস্ট্রিট অঞ্চলে, আবার সে সব দান করে দিয়েটিয়ে অর্থকষ্ট মেটাতে শেষজীবনে আদালতে রাইটারের সামান্য চাকুরিও নিতে হয়েছিল ডেভিড হেয়ারকে (১৭৭৫-১৮৪২ খ্রি.)। ভাগ্যিস আর দেশে ফিরে যাননি উনি, নৈলে আধুনিক ভারতবর্ষের শিক্ষার ইতিহাসটা হয়ত অন্যরকমভাবে লিখতে হতো।

    কী ভাবে?

    সেটা এই গ্রন্থের শিরোনামেই উল্লেখিতঃ সেকুলার….!

    এই প্রসঙ্গে ফিরে আসছি একটু পরে।

    ***

    খোদ গোরা এক ব্রিটিশ সাহেব হলে কী হয়, এটা আশ্চর্য নয় যে সামান্য এক ঘড়ির মিস্তিরি, যে কিনা আবার জেমস ম্যাকাবির মতো কোনো নামী ঘড়ি কোম্পানিও নয়, তার আবাল্য কোনো ইতিহাস/বংশ পরিচয় লেখা থাকবে না কোথাও। উপরন্তু, হেয়ার স্বভাবতই মৃদুভাষী ও অলখচারী মানুষ ছিলেন। একমাত্র তাঁর প্রিয় ছাত্রকুলের মধ্যেই তিনি স্বচ্ছন্দ থাকতেন, নৈলে ভালোবাসতেন ঘরে বসে সুইফটের ফ্যান্টাসি পড়তে বা প্রিয় আমাটির ছড় টানতে। উনি যে ছাত্রকুলের কাছে জ্যোতিষ্কসম ছিলেন, সেটা বুঝতে বুঝতেই পঞ্চান্নটা বছর কেটে গেল (উদা. টাউন হলে ১৮৩১এর ১৭ই ফেব্রুয়ারি ওঁর ৫৬তম জন্মদিনের দিন ‘ইয়ং বেঙ্গলী’-দের দেওয়া সম্বর্ধনা; রসিককৃষ্ণ ও তারকনাথের উদ্যোগে স্যরের প্রতিকৃতি অঙ্কন। )। ওঁর প্রথম জীবনীগ্রন্থই প্রকাশিত হয় ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে, অর্থাৎ প্রয়াণের ৩৫ বৎসর পরে, তাও ছাত্র ‘আলাল’ প্যারীচাঁদ বিলেতে এঁকে-ওঁকে চিঠি লিখে কিছু কিছু তথ্য আনালে। পরে অবশ্য শিবনাথ শাস্ত্রী, যোগেশ বাগল, মন্মথ ঘোষ, রাধারমণ মিত্র প্রমুখ বিদ্বজ্জন হেয়ার সম্পর্কে লিখে গিয়েছিলেন, যদিও তাঁদের লেখায় যে আপন আপন মতই বেশি প্রকাশিত হয়েছে তা বুঝতে অসুবিধা হবার নয়। ‘আকর গ্রন্থ’ হিসাবে থেকে গিয়েছে ইংরেজিতে লেখা প্যারীচাঁদ মিত্রের ঐ বইটিই। আর একটি কাজের কাজ করেছিল ‘হেয়ার স্কুল’-এর ‘হেয়ার স্মৃতিরক্ষা কমিটি’, ১৯৭৫এ ওঁর দ্বিশত জন্মবর্ষ পূর্তিতে একটি বিপুল কলেবর স্মারকগ্রন্থ বের করে, সেটি যদিও পুনঃ পুনঃকথনদোষে দুষ্ট।

    এই সব ডিঙিয়ে এসে বর্তমান যে কেতাবটি দিল্লির প্রখ্যাত নিয়োগী বুকস অতি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে, সেই মানের বই হেয়ারকে নিয়ে আগে হয়নি-- এত নির্মেদ কাজ, যথাযথ রেফারেন্স, দরকারি ছবি, চমৎকার ছাপাই-বাঁধাই…। দশটি বইয়ের নির্যাস এতে ধরা আছে, যদিও নূতন নূতন তথ্য যে কিছু উদ্গাত হয়েছে এতে, তা নয়, তবু রেফারেন্সে রোশিঙ্কা চৌধুরী, সপ্তর্ষি মল্লিকের মতো তরুণ কিছু কিছু গবেষকের নিবন্ধাবলীর হদিশ এসেছে যেগুলি অত্যন্ত কাজের।

    যেমন, এ’বছরই প্রকাশিত (২০২৪) বাসবী ফ্রেজার সম্পাদিত চমৎকার একটি গ্রন্থে [Routledge] ভারত-স্কটল্যান্ড সাংস্কৃতিক তথা শিক্ষানৈতিক যোগাযোগের প্রসঙ্গে তরুণ অধ্যাপক সপ্তর্ষি মল্লিক স্মরণ করেছেন ডেভিড হেয়ারকে--সরোজেশের এই বইটি না পড়লে তার হদিশই পেতাম না।

    যেমন, সন ২০১৪তে ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি’-র উপরে অসাধারণ একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন অধ্যাপক অভিজিৎ গুপ্ত। বর্তমান বইটি থেকেই তার হদিশ পেয়ে পড়া গেল। আমরা জানি, ১৮১৭ খ্রি. এই সোসাইটির জন্ম শিক্ষাব্রতী ডেভিড হেয়ারের হাতেই।

    ***

    সম্প্রতি কলকাতার ব্রিটিশ কাউন্সিলে বইটির উদ্ঘাটন-অনুষ্ঠানে সেকালের ভারতের কঠিন পরিস্থিতিটা ভুলে গিয়ে, আজকের ভারতের কোটিপতি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সি.ই.ও. [‘চ্যান্সেলর’] মশাই যদি ঠান্ডাঘরে বসে হেয়ারের বিরূপ সমালোচনা করেন, সামান্য এক পাঠক হিসেবে সেটা মেনে নেওয়া কঠিন বৈ কি! ইতিহাসবিদ্‌ হেয়ারের কত কত নব-মূল্যায়নের কথা শোনালেন! যেমন, যে হিন্দু কালেজের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ওঁর নাম জড়িয়ে আছে সেই কলেজটাই তো কেবলমাত্র হিন্দুদের জন্যে ছিল। তাই হেয়ারের শিক্ষা ধর্মনিরপেক্ষ নয় ইত্যাদি ইত্যাদি। হায় রে, এঁরা ভুলে যান কোন্‌ প্রেক্ষিতে ভারতবর্ষে এসে ধর্মোর্দ্ধ শিক্ষার প্রসার হেয়ার ঘটিয়েছিলেন। নিউ টেস্টামেন্টের বাইরে গিয়ে যে ইংরেজি শিক্ষা দেওয়া যায় সেটাই যে কালে চিন্তার অতীত ছিল সেখানে হেয়ার লালবিহারী দে-কে নিজের স্কুলে নেননি তার শিক্ষার বুনিয়াদ বাইবেল দিয়েই হয়েছিল বলে। আর, ছাত্রদের ভালোবাসতে গেলে যে কোন প্রতিষ্ঠিত ধর্ম লাগে না, লাগে অন্তর থেকে আসা টান--সেটা বোঝবার জন্যে তো চ্যান্সেলর হতে লাগে না।

    একাসনে বসালে বিতর্কিত হয়ে যাবে জেনেও বলি, ডেভিড হেয়ার ও টমাস ব্যাবিংটন ম্যাকলে না এলে আধুনিক ভারতের সেকুলার শিক্ষা পঞ্চাশ বছর পেছিয়ে থাকত।

    কথাটা নিয়ে একটু ভাববেন।

    ***

    এ’বইটি পাঁচে পাঁচ পায়!

    || বর্মী বাঙালির ব্যাপক বাংলাচর্চা! ||

    চেনা দূরের কথাঃ--বর্মাবাসী বাঙালির সাহিত্য পত্রিকা ‘প্রগতি’ ; সংগ্রহ ও সম্পাদনাঃ মৃণ্ময় প্রামাণিক; যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা; প্রথম প্রকাশ ২০২৩; ISBN 978-93-83660-98-8



    ১৯৬০-৭০এর দশকে আমাদের বাল্যে-কৈশোরে নীহাররঞ্জন গুপ্তের ‘কালো ভ্রমর’ যে কী জনপ্রিয় গোয়েন্দা-উপন্যাস ছিল--ভাবা যায় না! নায়ক মিঃ কিরীটি রায় মনে বাঙালি কিন্তু দর্শনে ব্রিটিশ-সাহেব---যিনি কিনা জাহাজে চড়ে বার্মাদেশে ধাওয়া করেন সেই শয়তান কালো ভ্রমরকে ধরতে!

    পড়ে রোমাঞ্চ হতো আমাদের।

    বর্মা! ব্রহ্মদেশ! আজকের মায়নমার!

    ঘরের পাশে থেকেও যেন কত সুদূর!

    ***

    দিল্লির মসনদে যখন মুঘল বাদশাহ্‌ আকবর আসীন, ব্রহ্মদেশে তখন মহাপরাক্রমশালী টুঙ্গু-সম্রাট বেইনাঙ্গ অধিষ্ঠিত ছিলেন, যাঁর সময়েই নবদ্বীপ থেকে বাঙালি বৈষ্ণব পণ্ডিতের দল আসাম পেরিয়ে ব্রহ্মদেশে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন বলে প্রবাদ, তাঁদেরই আরেক দল (মতান্তরে, শ্রীহট্ট থেকে) মণিপুরে পৌঁছে ‘বিষ্ণুপ্রিয়া’ ভাষার পত্তন করেন, যা আজ ইউনেস্কো/উইকিপিডিয়া-স্বীকৃত এক ভাষা!

    বাঙালির সঙ্গে ব্রহ্মদেশের সম্পর্ক তাহলে এত প্রাচীন?!

    শেষ মুঘলসম্রাট বাহাদুর শাহ্‌ জাফর ভারত-ভূখণ্ডে এক টুকরো কবর-স্থান না পাওয়ার জন্যে আক্ষেপ করেন, আর শেষ নির্বাসিত বর্মীসম্রাট থীবঅ মহারাষ্ট্রের রত্নগিরিতে মাটি পান!

    হায় রে, ইতিহাসের কী নিঠুর বিচার!!

    ১৮২০র দশকের শেষ থেকে যেমন যেমন ব্রিটিশরাজ বর্মা দখল করে চলেছে, তেমনই ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে সেখানে নানান ধরনের কাজের জন্যে ভারতীয়দের নিয়ে আসা চলেছে; বিশেষত, ইস্কুল-আদালত-সরকারি দফতরের মতো হোয়াইট কলার জবের জন্যে বাঙালি বাবুদের।

    অমিতাভ ঘোষের ‘দ্য গ্লাস প্যালেস’ উপন্যাসে এ’সব গল্প চমৎকার পড়তে পাওয়া যায়।

    নাঃ, বর্তমান বইটি হাতে নিয়ে অতীব নস্টালজিক হয়ে পড়ে এত দীর্ঘ ‘শিবের গীত’ গাওয়া অনুচিত হচ্ছে।

    কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপক শ্রীমান মৃন্ময় প্রামাণিক, যিনি সম্প্রতি অনুবাদসাহিত্যে একাদেমি পুরস্কারও পেয়েছেন (২০২৩), রেঙ্গুনী-বাঙালিদের এক অধুনালুপ্ত সাহিত্যপত্রিকার [‘প্রগতি’] সন্ধান পেয়ে গভীর গবেষণায় নিরত হন, ও ইউ জি সি-র ফেলোশিপ নিয়ে বর্তমান গ্রন্থটি প্রকাশ করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা বিভাগ থেকে। এই মানের, ব্যাপ্তির ও গভীরতার গবেষণাপত্র/গ্রন্থ কমই পড়তে পাওয়া যায়। অসাধারণ একটি গ্রন্থ!

    দশে দশ কেন, সাড়ে দশ দিই এই কেতাবকে!!

    পাশ্চাত্য শিক্ষায় এগিয়ে থাকা বাঙালিদের দ্বারা বর্মার আর্থিক ও বৌদ্ধিক সম্পদ বেহাত হয়ে যাচ্ছে দেখে তাদের প্রতি সিংহভাগ বর্মীদের বিরাগের কারণে সেই ১৯৪৮ সাল থেকেই দলে দলে বাঙালি আসামের পথে ভারতে ফিরে আসার চেষ্টা করে, ও পথশ্রমে/রোগে বহু মানুষ মারা যান। তাঁর জামাইবাবু সাহিত্যিক ‘বনফুল’-কে লেখা চিঠি/রচনায় প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর কলমে এই রকম ঘটনার প্রত্যক্ষ বিবরণ পাওয়া যায়, যিনি নিজেও উল্লেখিত পথ হেঁটে এসেছিলেন কলিকাতা শহরে।

    ১৯৪৫ সনে রেঙ্গুনে বসে নেতাজী সুভাষের আই এন এ আন্দোলন চালানোকেও ভূমিপুত্র বর্মীরা শত্রুচোখে দেখেছিল, কারণ, কেন কিছু বর্মী মানুষ ওঁর আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মবোধ করতে যাবে যেখানে দক্ষিণপূর্ব এশিয়াবাসী অধিকাংশ ভারতীয়ের কাছে ভারত চিরকালই অদেখা এক দেশ ছিল?

    এতদসত্ত্বেও কিছু বাঙালি কিন্তু রেঙ্গুনে তখনও থেকে যান, এবং ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত ‘প্রগতি’ নামের এক চমৎকার সাহিত্যপত্রিকা চালান, যেটি বর্তমান কেতাবটির উপজীব্য। চট্টগ্রামী বঙ্গসন্তান শ্রী শান্তিলাল চৌধুরী বহু ক্লেশে পত্রিকাটির সম্পাদনা করতেন, ও ভালবেসে তার বহু সংখ্যার কপি বর্তমান লেখক মৃন্ময়ের হাতে তুলে দেন।

    ***

    ঊনআশি সংখ্যায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বর্মাবাসের উপরে এক ব্রহ্মদেশে শরৎচন্দ্র নামে এক বই এর কথা লিখেছিলাম যার সঙ্গে বর্তমান বইটির মূলগত তফাৎ আছে।

    বর্তমান বইটিতে অমুক বর্ষের তমুক সংখ্যা, বা তমুক বর্ষের অমুক সংখ্যা…এমন ধরে ধরে সেই সেই সংখ্যাগুলি হুবহু ছাপা হয়েছে যার পাঠ অতীব স্বাদু (প্রায় পৌনে তিনশত পৃষ্ঠার ডবল-ডিমাই সাইজের বই এটি)।

    যেমন, প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যায় শ্রীমতী রাণু দেবীর ‘বঙ্গরমণী’ কবিতায় লেখা হয় ‘তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালাও তুমি বাঙালির পুরাঙ্গনা…’, তেমনি, সে-বছরই বর্মী এক বাঙালি-লেখিকা মা এ মিন্ট লেখেন ‘ঈদ মোবারক’ নামের এক চমৎকার কবিতা। অতি সুখপাঠ্য। আছে এই বইয়ে।

    ‘মাতৃসদনের অতিথি’ নামক এক উপাদেয় গল্প পড়তে পাই দ্বিতীয় বর্ষ, পঞ্চম সংখ্যায় (লেখক পরেশ বন্দ্যো.), আবার ‘পরাগ-কেশর’ কবিতায় নিমাই মান্না লেখেন, ‘…শুধু আমার হৃদয়ের মৃদু স্পন্দনে …আমায় দাও তোমার বৃন্ত থেকে একটুকু ফুল!’

    কে বলবে, ১৯৬১-র ক্যু-র পরে এই সকল বঙ্গভাষী কবি-সাহিত্যিকের স্থান হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের হাসনাবাদ-বারাসত-বনগ্রামের রিফিউজি ক্যাম্পে? চট্টগ্রামী এই সকল হিন্দু বঙ্গসন্তান সাহস পাননি পূর্ব-পাকিস্তানে ফিরে যেতে, চলে এসেছিলেন ‘হিন্দু’ ভারতে!

    ইতিহাস, বড় নিষ্ঠুর তুমি, বড়ই নিষ্ঠুর !!

    হে বাঙালি, কলম যেদিন তুমি তুলে রাখবে, তোমার মৃত্যু হবে সেদিনই। যতদিন তা না হচ্ছে তুমি বেঁচে থাকবে বার্মায়-মরিশাসে-সুরিনামে!

    সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো এই ‘প্রগতি’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনগুলি (ছবিসহ হুবহু প্রকাশিত হয়েছে)। প্রচুর বিজ্ঞাপনপ্রাপ্তি কাগজটির তুমুল জনপ্রিয়তা প্রকাশ করে।

    সেকালের বার্মার শ্রেষ্ঠ সিগারেট ‘ব্ল্যাক ক্যাটস’ বা, রেঙ্গুনের ‘সিনে সাপ্লাই কোম্পানি’-র বিজ্ঞাপন দেখতে পেলে সেকালের বর্মী-বাঙালি কী করে দিনযাপন করতেন, আন্দাজ পাওয়া যায় একটা।

    আজকের যেসব বঙ্গসন্তান ফেসবুক/হোয়া তে বেকার বেকার কালনিপাত করছে, তাদের উচিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত এই গ্রন্থটি পড়ে বাঙালি কৃষ্টির প্রকৃত তাকত সম্বন্ধে ওয়াকিফহাল হয়ে গর্বিত হয়ে ওঠা।


    || স্মৃতি ও সত্তায় প্রোজ্জ্বল ইতিহাস ||

    স্মৃতিসত্তায় দেশভাগ—সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়; বুকপোষ্ট পাবলিকেশন, কলকাতা-৯; বুকপোষ্ট সংস্করণ ২০২২; ISBN 978-93-94999-00-8



    সারা বিশ্বের ইতিহাসে-ভূগোলে ঐ এক ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন বর্ডার ছাড়া দ্বিতীয় আর কোনো দেশভাগ এমন ধারা হয়েছিল কিনা, বা হয়ে আছে কিনা, জানি না যার তুলনা ভারত-পাকিস্তান বিভাগের সঙ্গে করা চলে। আর, এই ইজরায়েল বলো বা সাবেক জার্মানি বলো বা কোরিয়া…পরিমাণে-ব্যাপ্তিতে-প্রভাবে সেগুলি তো ভারতীয় উপমহাদেশের বিভাজনের তুলনায় তুচ্ছ।

    এই বিভাজন কেন হয়েছিল, তার দায় কার, বা হয়ে গিয়ে ভালো হয়েছে না মন্দ (কার/কাদের ?)--এ’সব অতি পুরনো বিতর্ক যার সহজ সমাধান বা উত্তর নেই---(এখানে হয়ত তার প্রয়োজনও নেই)---তাই বর্ষীয়ান এই বামপন্থী দার্শনিক লিখতে বসেছেন ‘স্মৃতিসত্তায়’ দেশভাগ, মানে তাঁর স্মৃতি থেকে, তাঁর সত্তার মধ্যেই যার বিচরণ। অতি জরুরি পাঠ এ’। এখানে-ওখানে নানা কেতাবে/পত্রিকায় সন্দীপবাবুর লেখার উদ্ধৃতি আজও খুঁজে পাই (অনেক জায়গায় তো নামোল্লেখ ব্যতিরেকেই--চিন্তার স্টাইল দেখে চেনা যায়!), ফ্রন্টিয়ার-ইপিডব্লু-তে নিয়মিত লিখতেন সন্দীপবাবু, সম্প্রতি বার্ধক্য/অসুস্থতার কারণে কিছুটা স্তিমিত--কিন্তু দেশভাগ সংক্রান্ত যেকোন আলোচনায় বর্ষীয়সী ঊর্বশী বুটালিয়ার (পশ্চিমে, পাঞ্জাবের ক্ষেত্রে ) মতো চিন্তাবিদের পাশাপাশি পূর্বে বঙ্গদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিন্তাভাবনা প্রণিধান না করে উপায় নেই।

    ভারতবিভাগ-সংক্রান্ত যে কোন আলোচনায় ‘টিল্ট’ একটা বিষম বিষয়--মানে, আপনি কোন্‌ দিকে ঝুঁকে আছেন--যে কোনো মুহূর্তে ‘সঙ্ঘী’ বা ‘জামাতি’ বলে দাগী হয়ে যাবার আশঙ্কা! কিন্তু আসল সত্য কী? কে বিচার করবে? সন্দীপ কিন্তু প্রখ্যাত জার্মান চিন্তাবিদ্‌ যুরগেন হাবেরমাসের লাইন ধরে বলতে দ্বিধা করেন না যে, “যেমন…নাৎসি জার্মানি ও হলোকস্টের স্মৃতিকে যদি আমরা আজ ভুলে যাই তো একটা গোটা প্রজন্মের প্রতি চূড়ান্ত অবিচার করব।” …. এবং ফার্স্টহ্যান্ড ক্ষেত্রসমীক্ষার নীতি মেনে নোয়াখালি-যশোর-কুমিল্লা-পাবনা থেকে পালিয়ে আসা লীলাবতী সরকার, মায়া ভট্টাচার্য বা সুনীলকান্তি সরকারের মতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে লেখেন তাঁর এই আলেখ্য! এবং ওঁর এই লেখায় বারবার উঠে আসে দেশবিভাগকে কেন্দ্র করে লেখা উপন্যাস-ছোটগল্প--শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, আবু ইসহাক, শঙ্খ ঘোষ, ঋত্বিক ঘটক, জীবনানন্দ দাশ! পড়তে পড়তে কখনো চোখের জলে কখনও হতাশায় মন ভরে ওঠে --এ’কালের এক শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদের লেখনী স্পর্শ করে মথিত করে তোলে আমাদের হৃদয়! কারণ, ‘কোদাল কে কোদাল’ বলতে কখনই দ্বিধা করেননি এই শ্রদ্ধেয় চিন্তাবিদ্‌ শ্রীসন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (যাঁকে অনেকে নকশালী বলে চিহ্নিত করেছেন)। কিন্তু, হে বালক, নীচে আজ যাকে আমি ফেলে রাখব সে যে আমাকেও কালকে নীচে টানবে--এ’সত্য তো সেই মহামুনির বাক্যেও আমরা মানিনি, বিশ্বাস করিনি--তাই আজ ভগ্ন দেশ নিয়ে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ধরে কী খুঁজে পেতে যাই আমরা--কোন্‌ দেশমাতৃকাকে?

    ***

    ‘অভিশপ্ত অতীত’ বলে বিখ্যাত নমঃশূদ্র-সাহিত্যিক শ্রীমনোরঞ্জন ব্যাপারী মহাশয়ের এক নিবন্ধকে সন্দীপ হুবহু স্থান দিয়েছেন এই সংকলেন, যেটি পড়তে পড়তে শিউরে উঠতে হয়। দেশবিভাগের ঘা টা সত্যিই যাঁকে বা যাঁদের সইতে হয়েছিল মনোরঞ্জনবাবু তাঁদের মধ্যে একজন! হায় ভগবান (বা, আল্লাহ্‌), এতো সুতীক্ষ্ণ ছিল তোমার শূল (বা, তরবারি) যা অত নির্দয়ভাবে গেঁথে গিয়েছিল উদ্বাস্তু এক অসহায় বালকের হৃদয়ে?!

    • কীভাবে লেখা পাঠাবেন তা জানতে এখানে ক্লিক করুন | "পরবাস"-এ প্রকাশিত রচনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রচনাকারের/রচনাকারদের। "পরবাস"-এ বেরোনো কোনো লেখার মধ্যে দিয়ে যে মত প্রকাশ করা হয়েছে তা লেখকের/লেখকদের নিজস্ব। তজ্জনিত কোন ক্ষয়ক্ষতির জন্য "পরবাস"-এর প্রকাশক ও সম্পাদকরা দায়ী নন। | Email: parabaas@parabaas.com | Sign up for Parabaas updates | © 1997-2024 Parabaas Inc. All rights reserved. | About Us