একটা চিঠি খুঁজে পাচ্ছি না। বাড়িতেই কোথাও আছে। কিন্তু অনেক খুঁজেও পাইনি এখনো। খুব দামী চিঠি। আমি জিনিসপত্র সাধারণত গুছিয়েই রাখি, বিশেষ ক’রে বই ও কাগজপত্র। তাই যখনই চিঠিটার কথা ভাবি, মনের মধ্যে একটা শূন্যস্থান অনুভব করি। আমার একটা ঐশ্বর্য যেন হারিয়ে গেছে। অনেকদিন আগেকার চিঠি। তখন সবার হাতে হাতে সেল্ ফোন ছিল না ছবি তোলার জন্য। আর কারুর হাতে থাকলেই বা কি? আমি তখন বাচ্চা, আমার হাতে থাকত না।
গুপীগাইন বাঘাবাইন সিনেমাটা যখন বেরোয়, আমার তখন চার বছর বয়স। প্রথম কবে সে ছবি দেখেছি মনে নেই। কিন্তু আন্দাজ দশ কি বারো বছর বয়সে একটা চিঠি লিখেছিলাম স্বয়ং সত্যজিৎ রায়কে। চিঠি লিখে, খাম জোগাড় ক’রে, ফোনবই থেকে ঠিকানা অনুকরণ ক’রে, পোস্ট আপিস থেকে স্ট্যাম্প্ কিনে ও লাগিয়ে, ডাকে ছেড়ে দিয়ে ছিলাম। নিজের জন্য কোনো কপি রাখিনি।
তারপর হয়তো বুকের মধ্যে গোপন দুরুদুরু নিয়ে অপেক্ষাও করেছিলাম। মনে নেই।
উত্তর এল কিছুদিন পর!
যতদূর মনে পড়ে, আমি লিখেছিলাম যে ভূতের রাজা বর দিল তো মাত্র তিনটে। অথচ আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি যে গুপী-বাঘা চারটে জিনিস পেল – চাইতেই জামাকাপড়, চাইতেই খাবারদাবার, চাইতেই ভ্রমণ, আর গান গাওয়ার সময়ে সকলের স্ট্যাচু হয়ে যাওয়া। এটা তো মিলছে না।
সত্যজিতের উত্তর ছিল নিজের নাম ছাপানো প্যাডে, ছোট পাতায়, হাতে লেখা। শুরু করেছিলেন, ‘শ্রীমান অংশুমান’ দিয়ে। মনে হয় ‘কল্যাণীয়াসু’ জাতীয় কিছু ছিল না। ‘স্নেহের’ থেকে থাকলেও থাকতে পারে।
তারপর উনি আমার রহস্যের মীমাংসা ক’রেছিলেন।
বর তিনটে ঠিকই, কিন্ত একটা ডবল বর – ‘যা চাই পরতে খাইতে পারি’।
তারপর প্রায় অর্ধশতাব্দী কেটে গেছে। যত্ন ক’রে রেখেছিলাম চিঠিটা। জীবনে যত প্রভূত পরিমাণে জঞ্জাল জড়ো ক’রেছি, তারই মধ্যে কোথাও অন্তর্হিত হয়েছে। ছোট্ট একটা অজানা বাচ্চাকে লেখা এক বহুমুখ প্রতিষ্ঠিত প্রতিভার সৎ স্বেচ্ছাকৃত সাধারণ চিঠি। বড় দামী।
সুখ নেইকো প্রাণে।
সবুজ চিঠি হলুদ হয়ে হারালো কোনখানে।।