সেসময় দক্ষিণ কলকাতার আদি সুতৃপ্তি রেস্তোরাঁয় প্রত্যেক রোববার সকালে কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডা ছিল বেশ জমজমাট। যে দুজন মানুষের জন্য ওই ছোট্ট রেস্তোরাঁয় দফায় দফায় চা-টোস্ট-অমলেট খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে গুলতানি করতেন মানুষজন তাঁরা হলেন কবি-সাহিত্যিক শংকর চট্টোপাধ্যায় এবং শিল্পী শ্যামল দত্তরায়। শরৎ বসু রোডে তাঁরা থাকতেনও পাশাপাশি বাড়িতে। এঁদের কথা অন্য সময় লেখা যাবে।
এক রোববার একজন ধুতি-পাঞ্জাবি পরা বেশ লম্বা মতন ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি ষাটের কবিদের নিয়ে কোনও লেখা লিখেছি কি না? সম্মতি জানাতে বললেন যে তাঁর নাম বিমল রায়চৌধুরী। ‘দৈনিক কবিতা’ পত্রিকার সম্পাদক। চিনতাম না আমি তখনও তাঁকে। আসলে বড়দের সঙ্গে বেশির ভাগ সময়ই শংকরদা আলাপ করিয়ে দিতেন। কিন্তু তখন এঁদের দুজনের প্রবল ঝগড়া চলছিল। তাই আলাপ হয়নি। সবে দুর্গাপুজো হয়ে গেছে। আমাকে বাড়ির ঠিকানা দিয়ে লেখাটি নিয়ে যেতে অনুরোধ করলেন। তাঁকে না চিনলেও তাঁর পত্রিকা জানতাম। আমি পরের দিনই লেখাটি নিয়ে তার কাছে পৌঁছে যাই। তিনি নেক্সট দিন সকালে দেখা করতে বললেন। পরের দিন যেতেই দুটো রেশন ব্যাগ ভর্তি ষাট দশকের নানা কবির বই আমাকে দিয়ে বললেন যে প্রবন্ধটি তাঁর কাগজে ছাপা হবে। তবে এইসব বইগুলো পড়ে কিছু যদি বর্জন কিংবা গ্রহণ করি তাহলে লেখাটি আরও ভালো হবে।
ব্যস, সেই থেকে শুরু ওঁদের বাড়িতে যাওয়া। এবং শুধু যাওয়াই নয়, আমার লেখায় অনেক রেফারেন্স ও কবিতা দিয়ে লেখাটির পুনর্নির্মাণও করি। মজার কথা, বিমল রায়চৌধুরী আমাকে কিছুই বলেননি, শুধু চোখটা আরও খুলে দিয়েছিলেন। জাত সম্পাদক ছিলেন তিনি।
জানি এ যেন ধান ভাঙতে শিবের গীত হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু উপায় নেই। এক রোববার সকালে দেখা হতেই বললেন প্রুফ চলে এসেছে। আজ যাওয়ার সময় আমার বাড়ি থেকে প্রুফটা নিয়ে যাবেন। তাই সই। প্রুফ দেখে ফেরত দিতে গেলে বললেন, ভাই এই ফার্স্ট লটের প্রুফগুলো প্রেসে দিয়ে আসবেন? জেনে নিলাম প্রেসের নামধাম। ও বাব্বা সে এক বিরাট প্রেস ওয়েলিংটন স্কোয়ারে। ওই মডার্ন ইন্ডিয়া প্রেসেই প্রথম দেখি কবি সমর সেনকে। ‘নাও’ পত্রিকার সম্পাদক। ‘দৈনিক কবিতা’র ১৯৭০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর সংখ্যার সঙ্গে আমিও জড়িয়ে পড়লাম। তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে আমি কখনও দাদা কিংবা দিদি বলিনি। কোনও সম্বোধনই করতাম না।
এবারে আসল গল্পে আসা যাক। প্রেসে একটি কবিতার পান্ডুলিপি মিসিং হয়ে গিয়েছিল কোনও কারণে। পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলালের বাবা ওখানে কাজ করতেন। তাঁর কাছেই প্রুফ পাওয়া যেত এবং জমাও দিতাম। কিন্তু ম্যানেজার ছিলেন গল্পকার অজয় দাশগুপ্ত। এখন সমস্যা হল পত্রিকার মেক-আপের সময়। আমি সম্পাদককে পুরো বিষয় জানালে পাশ থেকে কবিতা সিংহ বললেন, লেখাটি বাদ দিলেই তো হয়। আমি প্রতিবাদ করে বলি, কবির তো দোষ নেই। আর কবিতাটিও ভালো। এটা অন্যায় হবে। এখানেই দেখলাম বিমল রায়চৌধুরীর চটজলদি সিদ্ধান্ত। আমার কাছ থেকে প্রুফটা টেনে নির্দিষ্ট কবিতাটির তলায় লিখে দিলেন; কম্পোজ হওয়ার পর পান্ডুলিপিটা হারিয়ে গেছে প্রেস থেকে। অনুগ্রহ করে এই কবিতার লেখক তার নাম জানাবেন। হেডিং-এ লিখে দিলেন ‘কার কবিতা?’ কবিতাটির প্রথম আট লাইন ছিল এরকম:
জলের ভেতরে উলটোভাবে শরীর কেঁপে ওঠে‘দৈনিক কবিতা’ প্রকাশ পেলে কবি আকাশবাণী অফিসে কবিতা সিংহ-র কাছে গিয়ে জানান যে ওই কবিতাটির লেখক তিনি।
জলের কিনারে আমি,
সমস্ত পৃথিবী এখন গ্রামীণ সঞ্চয়ের মত অন্ধকার,
শুধু জলের ভেতরে উলটো শহুরে সভ্যতা,
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় হলদেটে আলো-
এই সময় আমি ও আমার ভেতরে মরচে পড়া স্বপ্ন
আমি ও আমার ভেতরে কূট হতাশা ও হিংসা
সবাই একসঙ্গে তাকায় অবিনশ্বর জীবনের দিকে।
ইনি আর কেউ নন সত্তরের প্রথম কবিতা সংকলন ‘সপ্তদশ অশ্বারোহী’-র অন্যতম কবি অরণি বসু। তখন কফি হাউসে আমরা যেতাম শুধু প্রত্যেক শনিবার। সেখানেই অরণির সঙ্গে চাক্ষুষ আলাপ করিয়ে দেয় হাওড়ারই আর এক কবিবন্ধু অজয় সেন। সেই থেকে আমরা বহুদিনের বন্ধু। ছেদহীন বন্ধুত্ব!
আমরা যখন লিখতে শুরু করি তখন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কৃত্তিবাস’ বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু তখন প্রচুর ভালো লিট্ল ম্যাগাজিন বেরুত। তার মধ্যে আমাদের বন্ধুবান্ধবদের প্রিয় পত্রিকা কৃষ্ণগোপাল মল্লিকের ‘গল্পকবিতা’র কাগজটা ছিল রয়্যাল সাইজের। সেখানে অরণি, দেবপ্রসাদ, অজয়, প্রসূন মুখোপাধ্যায়, রণজিৎ দাস লিখত। গল্পকবিতার অফিস ছিল ১৭/১ ডি সূর্য সেন স্ট্রিট। মনে পড়ে অরণির বেশ লম্বা-চওড়া কবিতা সেখানে ছাপা হত। পরে তো দেবপ্রসাদ ওখানে চাকরি পায়।
এখন দেখি দু-তিন বছর কবিতা লিখেই অনেকে কবিতার বই বের করে। এ ব্যাপারে আমরা তেমন উৎসাহী ছিলাম না। আমার প্রথম বই বের হয় ১৯৮৪ সালে। ‘জলটুঙ্গি’। আর অরণি বসুর প্রথম কবিতার বই ‘শুভেচ্ছা সফর’ প্রকাশ পায় ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর মাসে। প্রচ্ছদ করেছিলেন শৈবাল ঘোষ, প্রকাশক ‘উলুখড়’। অবশ্য রণজিৎ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আমাদের লাজুক কবিতা’ প্রকাশ পায় ১৯৭৭ সালে।
আমার কাছে কবিতা দু’ধরনের— ১) বিবৃতিধর্মী এবং ২) ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। অরণি বিবৃতিধর্মী কবিতার সঙ্গে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কবিতাভাষা তৈরি করেছে সেই প্রথম থেকেই। তার কবিতার মধ্যে তাই বারবার আমাদের দশকের বহু কবির নাম এবং কাজকর্ম উঠে এসেছে স্বাভাবিকভাবে। ‘শব্দবন্দি’ কবিতায় এভাবেই সে লেখে— ‘অনেক দূরের রাধানগরের থেকে দেবদাস পাঠায় “ভাইরাস”। পুরুলিয়া থেকে নির্মল পাঠায় অনেক চিঠি, পাঠায় কাগজ’। কিন্তু তারই পাশাপাশি শেষের তিনটি লাইন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কবিতার হাতছানি পাঠকদের কাছে পৌঁছে যায় এভাবে—
“অজস্র ঢাকের শব্দে ভরে উঠেছে শহর;সঙ্গে সঙ্গে কবিতার যেন টেক অফ পাঠকের কাছে ধরা পড়ে।
ঢাকের দড়ির চাপে কাঁধ ফেটে আসছে রক্ত।
উড়ে আসছে মাছির দল, কালো ও পচা, রক্তের লোভে।”
অরণি বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা বেরিয়েছে ২০২২ সালের মার্চ মাসে। ঠিক একবছর পরে অরণি আমার বাড়িতে পৌঁছে দেয় বইটি। সেইসঙ্গে প্রায় তিন ঘন্টা প্রচুর আড্ডা দিই আমরা সেই পুরনো সময়কে সাক্ষী রেখে। বইটির ভূমিকায় যেকথা লেখা আছে তাকে সত্যি বলেই মনে করি। আসলে অরণি প্রথম থেকে ক্রমাগত নিজেকে জড়িয়েছে সমাজ-সংসারের খুঁটিনাটিতে, তারপর সব কিছু থেকে দূরে বসে, দেখেছে জীবনের চলমান চিত্রমালা।
এত বছরে অরণির লেখা কবিতা গ্রন্থের সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। বইগুলি হল: শুভেচ্ছা সফর, লঘুমুহূর্ত, ভাঙা অক্ষরে রামধনু, খেলাচলে এবং চ্যূতপল্লবের হাসি। শ্রেষ্ঠ কবিতায় উপরি পাওয়া অগ্রন্থিত কবিতা ২৬টি।
আপাতদৃষ্টিতে অরণির লেখা পড়লে মনে হতে পারে কারও রোজনামচা বা ডায়েরি পড়ছি। কী ভাবে সকাল থেকে রাত্রি তার সময় কেটেছে, কী অনুভব করেছে, সেই সব খুঁটিনাটি কথা দিয়ে ও সাজিয়ে তুলেছে অক্ষরমালার সাহায্যে এক অদ্ভুত চিত্রকল্প। সেই কথা লিখতে গিয়ে পুরনো বন্ধুবান্ধবের কথা টুকরো টুকরো ভাবে কবিতায় চলে এসেছে। কয়েকটি লাইন তুলে দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে:
১.
সকলেই কবি তারা, সকলেই, শুধু সোফা নয়,২.
কাক-কবি, বুড়ো-কবি, আহা,
সেই ফড়িংও তো কবি।
আমি যে তাদেরই বন্ধু, খর্বকায় কৃকলাশ
আমিও কি কবি নই? যত কবি রণজিৎ দাশ?
(বন্ধুর বাড়ি)
যুবকটি প্রথমে আপনমনে, নীচু স্বরে, গাইছিল গান। তারপর পকেট থেকে৩.
সমস্ত খুচরো বার করে গুনল একবার, দু-বার, বেশ কয়েকবার। চায়ে
চুমুক দিতে দিতে কী ভেবে অলোকনাথকে জিজ্ঞেস করল, ‘ঝাঁপিয়ে
পড়া’র ইংরেজি প্রতিশব্দ। আমরা ধরেই নিলুম, লোকটির দু-একটা ইস্ক্রুপ
একটু ঢিলে। অলোকনাথ কিছু বলবার আগেই তড়িৎ গতিতে সে উঠে চলে
গেল। কোথায়, কে জানে? হয়তো-বা ঝাঁপিয়ে পড়তে।
(বসন্ত কেবিন)
…মন খুব রঙিন হয়ে উঠলে ‘উলুখড়’ নবম সংকলনের একটা৪.
খসড়াও তৈরি হয় কোনো কোনো দিন। আজ, ওপাশের টেবিলে গণেশদাকে
ঘিরে একটু একটু করে ভিড় বাড়ছে। শৈবাল নেই।
যারা আর তত বন্ধু নেই, যারা চলে গেছে দূরে, এইসব সন্ধ্যায় তাদের
কথা বার বার মনে পড়ে। মনে পড়ে, সুব্রতদার কথা।
(বসন্ত কেবিন)
আবীর সিংহের দু-লাইনের কবিতার শেষ লাইনটা ছিল,৫.
‘যে আলো আমার তা তোমারও’।
(পাঠ প্রতিক্রিয়া)
খুকুমণি আর মধু গোঁসাই-এর গল্প চলতেই থাকে,৬.
দেবারতি আর মণীন্দ্র গুপ্তের গল্প চলতেই থাকে,
শুধু পালটে যায় পৃথিবীর রং।
(পৃথিবীর রং)
এক-একটা আঘাত আসে আর নিজেকে একটু একটু করে চিনতে পারি।৭.
(আঘাত)
আমিও সেরকম যেকোনো প্রিয় মানুষের৮.
পাশাপাশি হেঁটে যেতে চাই। সারা জীবন।
(সম্পর্ক)
মনখারাপের দিনে নয়নতারার শরীর থেকে চুঁইয়ে পড়া লাবণ্যে৯.
আমি বার বার মরি, বার বার বেঁচে উঠি।
(নয়নতারা)
নীল অপেরা বলতে আমরা বুঝি এক পয়সার শান্তি আচার।১০.
(নীল অপেরা)
‘মৃত্যুর পরে বেশি করে মনে পড়ে মৃতকে।’১১.
(কবির মৃত্যু)
সেদিনই প্রথম বুনো ফুলের গন্ধটা পেয়েছিলাম।প্রায় ৫০ বছরের বন্ধুত্ব অরণির সঙ্গে। ছোট-বড় নানান পত্রিকায় একসঙ্গে লেখালিখি। কবি সম্মেলনে আগুপিছু কবিতা পড়েছি। তুমুল আড্ডা জমিয়েছি কফিহাউসে, এক কাপ কফিতে চারজন বন্ধু চুমুক মেরেছি। এখনও নিয়মিত যোগাযোগ সেলফোনে। এই বই পুরোপুরি পড়ে আরও একটা কথা মনের মধ্যে ঘুরপাক খেল। অরণি এত বছর ধরে যেসব কবিতা লিখেছে তার মধ্যে আমার সবচাইতে দৃষ্টি পড়েছে তার লেখা এলিজিগুলোতে। খুব বেশি নয় কয়েকটির উল্লেখ করতেই হচ্ছে বাধ্য হয়ে। কারণ এত সুন্দর সব মুহূর্ত, স্মরণলেখ আমাদের দশকে আর কেউ লিখেছি বলে তো মনে হয় না। পরম মায়া, মমতা, অভিজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা মিলেমিশে আছে এইসব কবিতায়। যেমন ‘অনিলা চৌধুরী স্মরণে’ কবিতাটি —
(বুনো ফুলের গন্ধ)
অনেকদিন দোতলায় ওঠা হয়নি,অরণির লেখা এরকমই আরেকটি কবিতা ‘নিভৃত মোমবাতি’ —
আজ তার থেকেও ওপরে, ছাতে উঠে এসেছি।
রবীন্দ্রসংগীত, স্মৃতিচারণা আর অজস্র ফুলের মধ্যে
আপনার স্থিরচিত্র।
ডিসেম্বর মাস। শীত। মাতৃশোক।
আর কোনোদিন আপনি দোতলা থেকে ঝুঁকে
জিজ্ঞেস করবেন না, ‘কেমন আছ?’
স্মরণসভা শেষ হলে সন্ধেবেলার উচ্চারিত শব্দগুলি
মাথার ভিতরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।
চাদর গুটোই। চাদর গুটোতে গুটোতে
আপনার জীবন থেকে নির্জনে
নিজের জন্যে সাহস কুড়িয়ে নিই।
ডিসেম্বর মাস। শীত। হাত বাড়াই রোদ্দুরের দিকে।
শান্ত লাবণ্য আর ছেলেমানুষিতে মাখামাখি হয়ে, মা,এলিজির অনন্য উদাহরণ ‘বিদায়’। এই কবিতাটি উৎসর্গ করা হয়েছে কবি উৎপলকুমার বসুকে —
যে-জীবন তুমি পার হয়ে গেলে
তার আলো-আঁধারির ভিতর অনেক চোরা ঢেউ।
যখন বছরের পর বছর পাশে ছিলে, পাশে পাশে ছিলে
তখন এতটা বুঝিনি,
যখন শূন্য ঘরে এসে দাঁড়িয়েছি রাত্রিবেলা একা
তখনও বুঝিনি—
তোমার ছবিতে মালা পরাতে পরাতে আজ,
মা, তোমার শান্ত লাবণ্য আর ছেলেমানুষি মাখা
চোখের দিকে তাকিয়ে
সহসা বুঝতে পারলুম আমার জীবনে তুমি
চিরায়মানা এক নিভৃত মোমবাতি।
নদী পার হয়ে তুমি চলে গেছ একা। অস্তায়মান সূর্য, হাওয়া আরব্যস এখানেই থামতে হবে। তবে অনেকদিন, অনেক বছর পরে অরণির শ্রেষ্ঠ কবিতা পড়তে পড়তে মনের মধ্যে একটা লোভের জন্ম হল। আমার মৃত্যুর পরে আমাকে নিয়ে একটা এলিজি লিখবি অরণি?
পাতা ঝরার শব্দ।
ঝুপ করে নেমে এল অন্ধকার। গান থেমে গেছে অবশেষে।
হইচই করতে করতে পাখিরা বাসায় ফিরছে। শীত।
একটা গাছের পাতা ঝরে পড়লে চরাচরে কোনো আলোড়ন হয় না
শুধু হলুদ পাতাটাই ঘুরতে ঘুরতে নেমে আসে নীচে।
এতক্ষণ আমরা একসঙ্গে ছিলাম। গল্প। মৃদু গান। স্পর্শ।
এখন আমি এপারে দাঁড়িয়ে আছি একা বেঁচে থাকার শব্দের পাশে-
তুমি নদী পার হয়ে চলে গেছ একাকী। অন্ধকারে।
কুয়াশার জাল ছিন্ন করে বিষণ্ণ, পাগল প্যান লাফিয়ে নামে জলে।