• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৩ | জানুয়ারি ২০২৪ | রম্যরচনা
    Share
  • বানান কোন সমস্যা নয় : উদয় চট্টোপাধ্যায়

    কলকাতার বইমেলায় ঘুরছি খোশমেজাজে। শীতের কলকাতার তো তুলনা হয় না – না অতি-শীত, না ভ্যাপসা। ঘাম নেই, ঘুরে বেড়াতে কষ্ট নেই, রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে আকর্ষণীয় খাদ্যবস্তু দেখে লোভ সংবরণ করতে না-পারলেও বদহজমের তেমন সম্ভাবনা নেই। এই সব নেতি নেতির দাক্ষিণ্যে কলকাতার শীতের সিজন হলো মেলার সিজন।বইমেলা তারই মধ্যমণি। বাড়িয়ে বললুম কি? যাই হোক, স্টলে স্টলে ঢুকে বই দেখছি, ওলটাচ্ছি, এবং ‘তুমি জানো মোর মনের বাসনা/ যত সাধ ছিল সাধ্য ছিল না’ আক্ষরিকভাবে প্রমাণ করে কেনা থেকে বিরত থাকছি।

    একটা স্টল থেকে বেরিয়ে স্টলান্তরে যাবার সময় পথের মোড়ে টাঙানো পশ্চিমবঙ্গ অগ্নি নির্বাপণ বোর্ডের এক হোর্ডিং-এ চোখ আটকে গেল –‘আগুন লাগলে ১০১ ডায়াল করুণ’ ।

    বকরূপী ধর্মের প্রশ্নের উত্তরে যুধিষ্ঠির জানিয়েছিলেন, মন পবনের চেয়ে গতিশীল। সেটাই সপ্রমাণ করে আমার মন সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে গেল পঞ্চাশ বছর আগে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সুনন্দের জার্নালে’ দেখা ‘পুজোর বাজার এখানেই করুণ’ এই লাইনটিতে। না, পঞ্চাশ বছরে অবস্থা একই রকম – সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে – কিছু করতে বলার জন্যে বিনীত নিবেদন এই বানানেই প্রদর্শিত হচ্ছে। তাতে কি কাজ আটকেছে? মোটেই না, যাঁদের প্রয়োজন তাঁরা পুজোর বাজার করেছেন অথবা অগ্নি নির্বাপণ বোর্ডে ফোন করেছেন।

    তৎসম শব্দে ণ-ত্ব রীতি মেনে র-এর পরে মূর্ধন্য–ণ মেনে ‘করুণ’ বানান, আবার অ-তৎসম শব্দে ণ-ত্ব রীতি পরিহার্য বলেই ‘করুন’ বানান। সেইজন্যেই অরুণ বরুণ তরুণের সঙ্গে করুন সরুন নরুনের বানানের তারতম্য। কিন্তু অত ণ-ত্ব ষ-ত্ব কে মনে রাখে! আর, ণ-ত্ব বিধানই কি ফুলপ্রুফ? তাহলে কঙ্কণ, মণি, ফণী, বাণ, কল্যাণ এতাদৃশ পঞ্চাশটি শব্দে মূর্ধন্য–ণ প্রয়োগকে ‘নিত্য মূর্ধন্য–ণ’ বলে চিহ্নিত করার প্রয়োজন হতো না । সুতরাং, বাংলায় তৎসম শব্দগুলোর ক্ষেত্রে ণ-ত্ব বিধির ব্যাপারে স্পর্শকাতরতা কেন? ভাষার উদ্দেশ্য যদি হয় কমিউনিকেশন বা ভাব বিনিময়, তবে তা বানানের শুদ্ধতার তোয়াক্কা না-করেই চলছে। এটা শুধু ণ-ত্ব বিধি লঙ্ঘনেই সীমাবদ্ধ নয়। সেগুলো উদাহরণেই ক্রমশ পরিস্ফুট হবে। এখন ন-এর নয়ছয় নিয়েই কিছুটা পরিক্রমা করা যাক।

    পূর্বে উল্লিখিত ওই বইমেলারই এক চায়ের স্টলে দেখা গেল ‘দারুন’ চা এবং কফির জন্য বিজ্ঞাপন ।

    দারুণ শব্দটি তৎসম, তার ব্যুৎপত্তি দৃ+ণিচ্‌+উন, আর এর অর্থ অতিশয় (দারুণ খিদে), প্রবল (দারুণ ঝড়), তীব্র (‘দারুণ অগ্নিবাণে’), কঠিন (দারুণ সংকল্প) – এগুলোতে প্রতি ক্ষেত্রেই ‘দারুণের’ প্রয়োগ বিশেষণ হিসাবে। কিন্তু যখন বলা হয় ‘দারুণ খেলছে’ কিংবা ‘দারুণ খেয়েছি’ তখন ‘দারুণ’ ক্রিয়া বিশেষণ— প্রথমটি বোঝাচ্ছে ‘প্রবল পরাক্রমে’ আর দ্বিতীয়টি ‘চমৎকার’। কিন্তু ব্যুৎপত্তি আর ব্যাকরণের তোয়াক্কা কেই বা করে! তাই স্টলটি নির্দ্বিধায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে চমৎকার চা বা কফির, বিশেষণ হিসাবে প্রয়োগ করেই। তবে দন্ত্য-ন কেন? সেটা হয়েছে প্রায়-সদৃশ শব্দ ‘দরুনের’ প্রভাবে। শব্দটির মূল ফারসি। ফারসি রপ্ত করতে মোগল পাঠান হদ্দ হলেও আমাদের বাংলা ভাষায় সহস্রাধিক ফারসি শব্দ নিত্য ব্যবহৃত হচ্ছে। আরবিও—যার দাক্ষিণ্যে তৎসম বিনতি আর আরবি মিন্নৎ-এর সংমিশ্রণে আমরা পেয়ে গেছি ও ব্যবহার করছি খাঁটি বাংলা শব্দ মিনতি। সুতরাং, এই ‘দারুন’ চা কফির আমন্ত্রণ মেলার দর্শকেরা গ্রহণ না-করে পারবেন কি?

    ণ-এর এই নতিজা যে কেবল বইমেলাতেই সীমাবদ্ধ নয় সেটা মালুম হবে চোখ খোলা রাখলেই। সল্ট লেক বইমেলা প্রাঙ্গণের অনতিদূরেই নানা সরকারি ভবন। তারই একটার সামনে জ্বলজ্বল করছে ‘নগরায়ন’। রাস্তার পাশের এক ব্যানারে দেখা গেল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের উদ্যোগে ‘বিজয়া সম্মেলনী আর গুনীজন সম্বর্ধনার’ বিজ্ঞাপন। আর এক পথিপার্শ্বস্থ ব্যানারে দেখা গেল স্থানীয় বিধায়ক আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন ‘প্রবীন ও প্রবীনীদের’ চড়ুইভাতিতে—সেই সুবাদে নতুন এক শব্দ ‘প্রবীনী’র সঙ্গে পরিচিত হওয়া গেল, আর করুণাময়ীকে অকরুণভাবে লেখা ‘করুনাময়ী’।

    ফুটপাথের এক মন্দিরের গায়ে পাথরের ফলকে লেখা সেই স্থানীয় বিধায়কের ‘অনুপ্রেরনা আর সহযোগিতায় মন্দির নব রুপে সজ্জিত হইল’। অবশ্যই অনুমান করা যায় বানানের বিচ্যুতি উপেক্ষা করে ‘গুনীজনরা’ সম্বর্ধনা নিয়েছেন, চড়ুইভাতিতেও ‘প্রবীন আর প্রবীনীদের’ অংশগ্রহণে অনীহা ঘটে নি, ফুটপাথের মন্দিরের দর্শনার্থী ভক্তেরাও বিধায়কের ‘অনুপ্রেরনা’র আর মন্দিরের ‘নব রুপের’ তারিফ করেছেন।

    সল্ট লেকের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে একটু অন্যত্র দৃষ্টিপাত করা যাক। হাওড়া স্টেশনে সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজারের ঘরের সাইন বোর্ডে শোভা পাচ্ছে ‘প্রবীন স্টেশন প্রবন্ধক’।

    বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চারুকলা কেন্দ্রের একটি ফলকে উদ্বোধকের নাম লেখা হয়েছে ‘শ্রী চিন্তামনি কর’। আসানসোলের এক রাস্তার নাম পুরনিয়োগের সাইন বোর্ডে বড়ো বড়ো করে লেখা ‘সমীরন রায় রোড’। দক্ষিণ কলকাতার এক মিষ্টির দোকানের সাইন বোর্ডে রাস্তার নাম লেখা হয়েছে ‘পুর্ন দাস রোড’। এক সরকারি অফিসে সতর্কবার্তা ‘আপনি বৈদ্যুতিন নিরীক্ষনের অন্তর্গত’। এক ডাইগোনাস্টিক ক্লিনিকের দেওয়ালে নোটিশ ‘গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারন আইনত দন্ডনীয় অপরাধ’। ট-বর্গের বর্ণদের সঙ্গে যে ‘ন’ যুক্ত হয় না, ঋ র ষ –এর পর এবং সেই সুবাদে রেফের তলায় সর্বদাই ‘ণ’ এই সহজ নিয়মের কথা মনে রাখলে এই ভুলগুলো এড়ানো যেত, কিংবা স্কুলের বাংলা মাস্টার মশায়ের শেখানো সেই ছড়া--

       ঋকার রকার ষকারের পর
         নকার যদি থাকে,
       খ্যাঁচ করে তার কাটব মাথা
        কোন বাপ তায় রাখে!

    বাংলায় তিন স – শ, ষ, স। এদের নিয়ে হাজারো তৎসম শব্দ সংস্কৃত থেকে বাংলায় আমদানি। তবে আমদানি হয়েছে শব্দগুলোই, ধ্বনি নয়। তাই লিখতে গেলে হয় বানান বিভ্রাট। ধরা যাক, পরিষ্কার এবং পুরস্কার। প্রথমটি পরিঃ+কার থেকে উদ্ভূত, পরেরটি পুরস্‌+কার থেকে। বাজারে পার্কে এলাকা ‘পরিস্কার’ রাখার আবেদন আমাদের চোখ-সওয়া হয়ে গেছে, তবে কোন নামী বিদ্যায়তনের চত্বরে এরকম নোটিশ দেখে চোখে একটু লাগল। মফস্বল শহরের এক মন্দির সংলগ্ন পুকুর ঘাটে দেখা গেল ‘পরিস্কার এবং পরিচ্ছন্যতা’ বজায় রাখার আবেদন করা হয়েছে। ‘পরিষেবা’ হবে না ‘পরিসেবা’ এই নিয়ে বিদ্বজ্জনের এবং অভিধানকারদের দ্বিমত আছে, কিন্তু ‘পরিশেবা’? সেটিও দেখা গেল নিউ টাউন পুরসভার গাড়িতে।

    গাড়ি বা রিকশর গায়ে বা পিছনে হামেশা দেখা মেলে এইসব বিচিত্র বানানের মেলা। এক সাইকেল রিকশর পিছনে দেখা গেল মালিকের বা চালকের নাম লেখা হয়েছে ‘স্বরুপ বিশ্বাষ’ আর তার নীচে ‘সুকদেব সাইকেল’, যেটা হয়তো নির্মাণকারী দোকানের নাম। লেখার ব্যাপারে কৃতিত্ব কার বোঝা গেল না। এক খাবারের দোকানে বিজ্ঞপ্তি ‘এখানে নিরামিস খাবার পাওয়া যায়’ । রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছিলেন তিনটে স শিক্ষা দিচ্ছে বেশি করে সহনশীল হতে। স-এর এরকম নির্বিচার প্রয়োগ দেখলে সহনশীল হওয়া ছাড়া আর কী করার থাকে!

    সংস্কৃত উচ্চারণ ঠিকমতো গ্রহণ করা হয় নি বলেই লক্ষ্মী লক্ষ্মণ যত্রতত্র ‘লক্ষী’ ‘লক্ষন’ বানানে চলছে। সূক্ষ্ম যক্ষ্মার ক্ষেত্রেও তাই। উচ্চারণের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলায় লক্‌খি লখ্‌খন যখ্‌খা লিখলে কিছু ক্ষতি ছিল কি? সেটা যখন হয় নি, তখন ‘লক্ষী ভান্ডার’ সাইন বোর্ড টাঙিয়ে দোকানদার কিংবা বাসের গায়ে ‘এসো মা লক্ষী’ লিখে মালিক যদি লক্ষ্মীলাভ করে চলেন তাহলে আপত্তি কেন?

    বাংলায় একটা বাগধারা প্রচলিত আছে ‘হস্যি দিঘ্‌ঘি জ্ঞান নেই’। অস্যার্থ, শব্দে হ্রস্ব-ই আর দীর্ঘ -ঈর যথাযথ প্রয়োগের বিষয়ে অজ্ঞতা। কিন্তু এই জ্ঞানের অভাবের উদাহরণ যত্রতত্র। বর্ধমান শহরের এক বিখ্যাত মন্দিরে নির্দেশফলক ‘মন্দির-এর ভিতর ডানদিক দিয়ে প্রদক্ষীন করিবেন, মন্দিরের নিরবতা পালন করুন’(তবু রক্ষা, ‘করুণ’ লেখা হয় নি)।‘সহযোগীতা’ করার অনুরোধও বিরল নয়। আমি সল্ট লেকের বাসিন্দা । যেতে আসতে চোখে পড়ে বাস স্টপে স্থানীয় বিধায়কের এবং অবশ্যই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সহযোগে বিজ্ঞপ্তি ‘সর্বসাধারণের জন্য এই প্রতিক্ষালয়টি নির্মিত’, আর পুরসভার ভ্রাম্যমান জলের ট্যাংকের গায়ে লেখা ‘পানিয় জল’, পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ‘পিতামাতার আশির্বাদ’-প্রাপ্ত রিকশ বা লরি। আবার কোন কোন রিকশর গায়ে লেখা ‘নিলিমা’ কিংবা ‘সাগরীকা’ ।

    হ্রস্ব-ই আর দীর্ঘ-ঈর মতোই হ্রস্ব-উ আর দীর্ঘ-ঊ। দুর্গার দুর্গতি আমাদের অতিপরিচিত – ‘দূর্গার’ ব্যবহার অবাধ। অন্যদিকে আগের দুটি উদাহরণে উল্লিখিত হয়েছে রূপের ‘রুপ’ হয়ে যাওয়া, তেমনি দূর হয়ে যায় ‘দুর’ । হাওড়া স্টেশনে একটি প্লাটফরমে ট্যাক্সি বুকিং-এর বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে ‘বুকিং এলাকা কেবল ১ মিনিট দুরে’ । এক রাজনৈতিক দলের পোস্টারে আহ্বান জানানো হয়েছে ‘দেশ জুড়ে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা সৃষ্টকারী বিজেপি ভারত থেকে দুর হাটাও’। লক্ষণীয় ‘সৃষ্টকারী’ শব্দটিও।

    চন্দ্রবিন্দুকে অমাবস্যার চাঁদের মতোই উধাও হয়ে যেতে দেখা যায় মাঝে মাঝে। সুন্দরবন অঞ্চলে এক জেটির কাছে বন বিভাগের সাইনবোর্ডে লেখা আছে সতর্কবার্তা ‘বাদর হইতে সাবধান’ (এবং তার নীচে ইংরেজিতে ‘Be-Awar of monkeys’), এক বাসের গায়ে বড়ো বড়ো করে লেখা ‘নির্দিষ্ট স্টপেজে বাস দাড়াবে’, ফুটপাথের দেওয়ালে ‘আয়া আর রাধুনির’ জন্যে বিজ্ঞাপন।

    আবার, চন্দ্রবিন্দুর অকারণ আগমনও ঘটে। দাড়ি কাটার ব্লেড হয়ে যায় ‘দাঁড়ি কাটার ব্লেড’। ইউ টিউবের এক আবেদনে দেখা গেল ‘দাঁড়ি কাটার ব্লেডগুলো’ যেন ‘ব্যাবহার’ করার পর যত্রতত্র না-ফেলা হয়, ‘কারন’ নোংরার মধ্যে খাবার খোঁজার সময় রাস্তার কুকুর বেড়ালের ব্লেডগুলো আটকে ‘প্রচন্ড যন্তনা’ হতে পারে ।

    এখানে নোংরাকে যথেচ্ছ বানানের হাত থেকে রেহাই দেওয়া হলেও মুর্শিদাবাদের সরকারি টুরিস্ট স্পট লালবাগে দেওয়া হয় নি, সেখানে দেখা গেল ‘নোংড়া’ ডাস্টবিনে ফেলার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ‘ঘড় ভাড়ার’ বিজ্ঞাপনও চোখে পড়েছে – হয়তো ভাড়ার সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে। এক বিধায়কের পুজোর পোস্টারে দেখা গেল মা ‘ঘড়ে ঘড়ে’ আসছে বলে ‘জরে জরে’ শঙ্খ বাজানোর আহ্বান । এক পুরসভার রাস্তায় ‘ভাড়ী যানবাহন চলা নিষিদ্ধ’ নোটিশ দেওয়া হয়েছে হয়তো ভারীকে একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়ার অভিপ্রায়ে।

    তেমনই প্রচেষ্টা দেখা গেল সল্ট লেকের সরকারি ময়ুখ ভবনের সামনের এক পোস্টারের লেখায় ‘সংবিধানের ধারক ও বাহক আর. আম্বেদকর মহান স্রষ্ঠা’। মনে পড়ে গেল নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প – Post-এ ‘t’ একটা হবে না দুটো ক্যাবলার এই প্রশ্নের উত্তরে টেনিদা বলেছিল, দুটো দিয়ে দে, শক্ত হবে। স্রষ্টার জায়গায় স্রষ্ঠা লিখলে গুরুত্ব অবশ্যই বাড়বে।

    রাস্তায় নামলে এবং চোখ খোলা রাখলে এরকম অনেক নিদর্শনই মিলবে। ‘সার্বজনীন দূর্গাপূজা’ ‘এখানে প্রস্বাব করিবেন না’ ‘ধুমপান নিষেধ’ ‘আইনত দন্ডনীয়’ ‘দুর্নীতিগ্রস্থ সরকার’ অবশ্য প্রায় চোখ-সওয়া হয়ে গেছে।

    পাবলিক প্লেসে বিজ্ঞপ্তি বিজ্ঞাপনে শুধু বাংলাই যে বন্ধনমুক্তি পেয়েছে তেমনটা নয়, ইংরেজিতেও তার নিদর্শন মিলবে ভূরি ভূরি। দুচারটে দিয়েই শেষ করা যাক। ফুটপাথের এক বিজ্ঞাপনে দেখা গেল ‘Want to loose weight, loose inches?’, ট্যাক্সির পিছনে লেখা ‘Same fair taxi’, আর এক বিজ্ঞাপনে এক ‘Real State Agent’ জানাচ্ছেন ‘P.G. and any type reantal and sale available’, এক দোকানের পাশে বোর্ডে লেখা ‘Office stationary, School stationary’, কোভিড পর্বে এক দোকানদার জানাচ্ছেন সেখানে ‘Musk’ পাওয়া যায়।

    বাঁকুড়ার এক ইকো পার্কের প্রবেশদ্বারে জানানো হয়েছে যে সেখানে ‘Resturent’ আছে। তবে সবাইকে টেক্কা দিয়েছে সম্ভ্রান্ত স্টেট ব্যাংকের দুটি নোটিশ – একটিতে নির্দেশনা ‘Do not enter into ATM counter wearing your helmate’, আর একটিতে জানানো হয়েছে ‘No withdrawn available’।

    কিছু কিছু বিজ্ঞাপনের ভুল বানান পথ চলতি তাৎক্ষণিক মজার খোরাকও হয়ে ওঠে যেমনটি দেখা যাচ্ছে নিচের দুটি উদাহরণে ।

    এই নিবন্ধ ছাপার আগে প্রুফ রিডার নিশ্চয় যত্ন নিয়ে দেখবেন বানানে ভুলভ্রান্তি আছে কিনা, যদিও ছাপা হলে তার পাঠক জুটবে কতজন সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু ভুল বানান আর কখনও কখনও ভুল বাক্য দিয়ে লেখা এইসব ব্যবসায়িক আর রাজনৈতিক বিজ্ঞপ্তি হাজার হাজার মানুষের কাছে তাদের উদ্দিষ্ট বার্তা পাঠিয়ে দিচ্ছে। বানান নিয়ে সমস্যা কোথায়?



    অলংকরণ (Artwork) : লেখক
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments