• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | Rabindranath Tagore | রম্যরচনা
    Share
  • শ্রেষ্ঠাঞ্জলি : সমরেন্দ্র নারায়ণ রায়




    জানাশোনা কয়েকজনের আঁকা কিছু ছবির প্রদর্শনী। ছবিগুলি প্রায় সব কটিই অত্যন্ত উঁচু মানের।

    শিল্পীরা, দর্শকরা, ক্রেতারা এবং সর্বশেষে ফালতু আমরা সবাই খুব মন দিয়ে গল্প করছি। যিনি পছন্দমতো সব কিছু সাজিয়েছেন তিনি আবার রবীন্দ্রভক্ত। স্বাভাবিক ভাবেই উপস্থিত প্রত্যেকেই প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন যে তিনিই সমাগতদের মধ্যে "সর্বাধিক" রবীন্দ্রভক্ত। ঐ আধিক্যতার মাপকাঠি দেখলাম শান্তিনিকেতনে প্রত্যেকের সম্পত্তির উপস্থিত সংখ্যা।

    হঠাৎ চোখে পড়লো যে একদিকের দেওয়ালে মস্ত বড়ো একটি ছবি - নদীবক্ষে একটি ডিঙি, তাতে নূর-লুঙ্গি সম্বলিত মাঝি। দেওয়ালজোড়া ক্যাপশান কবির অন্যতম শ্রেষ্ঠ ত্রিপদীর দুটি পংক্তি

    নমোনমো নম, সুন্দরী মম জননী জন্মভূমি !
    গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।


    পাঠিকা, ধৈর্য্য ধরুন, হাসবেন না।

    উদ্যোক্তাদের একজনকে ডেকে আমি অনুরোধ করলাম উদ্ধৃতিটিকে ঠিক করিয়ে দিতে।

    পাশেই ছিলেন সেই মুহূর্তের, মানে তখনো পর্য্যন্ত শ্রেষ্ঠ কবিভক্ত। ব্যঙ্গাত্মক মুচকি হেসে গলা নামিয়ে উদ্যোক্তাটিকে তিনি বললেন - কান দেবেন না, সবরকম লোক ঢুকে পড়েছে দেখছি!

    আরো জনাদুয়েক কবিভক্ত আলোচনায় ঢুকে পড়লেন। অবজ্ঞাও প্রকাশ করলেন আমার অজ্ঞতায়।

    চুপ করে গেলাম।

    নীচের ক্যান্টীনের সিঙাড়া হয়েছিলো দারুণ ভালো। কাছেই হচ্ছিলো প্রদর্শনীটা, তাই সিঙাড়ার লোভে আবার গেলাম পরের দিন। ওয়াশরুম ওপরে ছিলো, একবার গেলাম। দোতলায় উঠে দেখি কোনো এক শিল্পবিদ্যালয়ের একদল ছাত্র ছাত্রী এক শিক্ষক ভদ্রলোকের নেতৃত্বে প্রদর্শনী দেখতে এসেছে।

    ভালো লাগলো।

    আরো ভালো লাগলো দলটির উদগ্ৰীব চেহারা দেখে। কি মনে হলো, বোকার মতো মুখ করে জিগ্যেস করে বসলাম - আচ্ছা, এই লেখাটিতে কি তোমরা কোনো ভুল দেখতে পাচ্ছো?

    সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে, আস্তে আস্তে উঠে এলো একটি হাত। রোগা মতো একটি মেয়ে।

    - কি, বলো কোথায় ভুল
    - স্যার ওই জন্মভূমি-টা হবে বঙ্গভূমি
    - বাড়ি কোথায়
    - বোধ হয় উড়িষ্যা
    - মানে? বোধ হয় মানে?
    - স্যার আমি শুনেছি কুড়িয়ে পাওয়া
    - সে কি
    - হ্যাঁ স্যার আমি বালেশ্বরের অনাথ আশ্রমের

    একটা পাঁচশো টাকার নোট মেয়েটির হাতে জোর করে গুঁজে দিলাম।

    - দেখো, তোমার নাম, তোমার ইস্কুলের নাম কিছুই জানতে চাই না, কেন না আমি অতি সামান্য মানুষ। তোমার নাম সবাই একদিন আপনিই জানবে। যাও, নীচের ক্যান্টীনে তোমাদের দলকে আইসক্রীম খাইয়ে দাও।

    পঁচিশে বৈশাখে, অন্য কোনো দিনে নয়, বাঙালী ইত্যাদি নানা দ্বিপদ জীব রবীন্দ্রনাথকে সাধারণতঃ শ্রদ্ধা জানায়।

    হয়তো আমিও জানাই।

    উড়িষ্যার "কুড়িয়ে পাওয়া" অনাথা মেয়েটি সবাইকে সেদিন ছাপিয়ে গেলো।

    পরিশিষ্ট

    কিছুদিন পর উক্ত রবীন্দ্রভক্তদের মধ্যে একজনের বাড়ি গেছি। ইয়ে, চায়ে। তা তিনি তর্কে জয়ের আনন্দে আপ্লুত হয়ে আমাকে একটি "সঞ্চয়িতা" খুলে দেখালেন - "জন্মভূমি"। লক্ষ্য করলাম যে "সঞ্চয়িতা"-টি আদৌ সঞ্চয়িতা নয়, ইতস্ততঃ ফুটপাথে প্রকাশিত এক জঞ্জাল-মণ্ডলী, যা সস্তায় কিনে উপহার দেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্র-ভক্তি!


    অলংকরণ (Artwork) : অমিতাভ সেন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments