ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি পরবাসের সম্পাদনা একদিকে যেমন নৈর্ব্যক্তিক, পক্ষপাতশূন্য অন্যদিকে নতুন লেখকদের প্রতি সহানুভূতিশীল। যোগ্য লেখাকে সুযোগ দিতে পরবাস সবসময় সাহস দেখিয়েছে। লেখা নির্বাচনের পদ্ধতি স্বচ্ছ এবং যথার্থ মূল্যায়ন (পীয়র রিভিউ) নির্ভর। সেই মূল্যায়ন কেবলমাত্র প্রকাশ-যোগ্যতা বা অযোগ্যতা বিচার করে না, লেখার মধ্যে কোথাও কোনও ভুল-ভ্রান্তি থাকলে সেটিও ধরিয়ে দেয়। নতুন লেখক উপকৃত হন। আর কোনও সাহিত্য পত্রিকা বোধহয় এই ভাবে মেন্টরিং করে না।
দুঃখ লাগে যখন দেখি পরবাসে প্রকাশিত লেখা পরে বিনা অনুমতিতে কোনও বাণিজ্যিক পত্রিকার রবিবাসরীয় ক্রোড়পত্রে ছাপা হয়েছে। যতদূর জানি সেই পত্রিকাও পূর্ব-প্রকাশিত লেখা অনুমোদন করে না। জানতে পারলে তারাও লেখককে ব্ল্যাকলিস্ট করবে। অর্থাৎ সাময়িক যশপ্রাপ্তির লোভই এই অনৈতিক কাজের অনুপ্রেরণা। লেখক এটাও ভুলে যান পরবাসে প্রকাশিত লেখাটিও সম্পাদকীয় পরিমার্জনা ছাড়া ছাপার যোগ্যতা অর্জন করত না। এই অসততাকে ধিক্কার জানাই। নিষ্কৃতি পাওয়ার উপায় সম্ভবত যথাযথ সফট-আর্কাইভিং এবং বাংলা ভাষায় কুম্ভীলকবৃত্তি বিচারের সফটওয়ার তৈরি করা।
একটা সময় ছিল যখন দেশের বাইরে বসে বাংলা সাহিত্যের (যদিও অনুবাদ সাহিত্যেও পরবাস সমান সমৃদ্ধ) পত্রিকা প্রকাশ করা নিয়ে দম্ভ করা যেত। সেই দম্ভের অধিকার পরবাসের আছে। অবশ্য আজকের ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় দেশ ও ভাষার ভৌগোলিক সীমারেখার অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। পরবাসের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা ছড়িয়ে আছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। ফলত একদিকে যেমন বিদেশের মাটিতে বসে পত্রিকার প্রকাশ সহজ হয়েছে অন্যদিকে ভূমিপত্রিকাগুলি দ্রুত তাদের আঞ্চলিক সুবিধে হারাচ্ছে। হারাচ্ছে পাঠক-ভিত্তি ও সমর্থন, কারণ পাঠক মানসিকতা প্রসারিত হচ্ছে, পরিণত হচ্ছে। বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যকে পৌঁছে দিতে হলে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সহযোগিতার প্রয়োজন। সেটা যত তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল।
পরবাস – ৮৯ সংখ্যা প্রকাশিত হতে চলেছে। প্রত্যেক বারের মত এই সংখ্যাও প্রবন্ধ-নিবন্ধ-গল্প-কবিতা ইত্যাদিতে সুসজ্জিত। একটি সংখ্যায় সব লেখার মান সমান হয় না। পাঠকরাই লেখার শেষ বিচারক। তাঁদের সুচিন্তিত মতামত পরবাসের চলার পাথেয় হোক। লেখা নিয়ে আলোচনা হোক, বিচার-বিবেচনা হোক, সৎ সমালোচনা হোক। পরবাস -১০০’র পথ চেয়ে বসে থাকি। সেই সংখ্যা নিশ্চয়ই এক অসাধারণ মাইলফলক হবে। পরবাস পরিবার ও তার বৃহত্তর পাঠকগোষ্ঠিকে অসংখ্য শুভেচ্ছা জানিয়ে এই সম্পাদকীয় এখানেই শেষ করলাম। নতুন বছরে সবাই আনন্দে থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সৃষ্টিতে থাকবেন।
অতিথি সম্পাদক : সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়