• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৯ | জানুয়ারি ২০২৩ | প্রবন্ধ
    Share
  • হুলিও কোর্তাসার : গ্রেগোরি রাবাসা (১৯২২--২০১৬ )
    translated by অংকুর সাহা





    “এক্কা-দোক্কা” (“হুপস্কচ”, ১৯৬৬) গ্রন্থটির মাধ্যমে আমার অনুবাদ কর্মের সূচনা- বইটি জাতীয় গ্রন্থ পুরষ্কার পায়, এবং “একশো বছরের নিঃসঙ্গতা” গ্রন্থটির অনুবাদের দিকে আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। গার্সিয়া মার্কেস চেয়েছিলেন আমি তাঁর বইটি অনুবাদের কাজে হাতে নিই, কিন্তু আমি তখন মিগেল আংগেল আস্তুরিয়াস (১৮৯৯-১৯৭৪) এর “কদলী ট্রিলজি” অনুবাদের কাজে ব্যস্ত। কোর্তাসার গাবোকে বললেন কিছুদিন অপেক্ষা করতে এবং তিনি তাতে কোনো আপত্তি করলেন না- পুরো ব্যাপারটার নিষ্পত্তি হ’ল ভালোয় ভালোয়- আমার সাহিত্য জীবনে “এক্কা-দোক্কা” এক (আমি সেই জলজ ক্লিশেটাই বাধ্য হয়ে ব্যবহার করছি) জল বিভাজিকা মুহূর্ত- আমার বাকী জীবনের দিগদর্শনের সূচনা সেখান থেকেই। আমি কাজ শুরু করার আগে পুরো বইটা একবারও পড়িনি, কেবল পাতা উলটে দেখেছি; কাজের নমুনা হিসেবে আমি দুটো পরিচ্ছেদ অনুবাদ করি- প্রথম পরিচ্ছেদ এবং অনেক ভেতরে আরও একটা, এখন ঠিকমতো মনেও নেই ছাই! সম্পাদিকা সারা ব্ল্যাকবার্ন এবং হুলিও, দুজনেরই পছন্দ হয়ে গেল অনুবাদ এবং আমি ঝড়ের বেগে কাজ শুরু করে দিলাম।

    উপন্যাসটির প্রতি এবং সেই সঙ্গে হুলিওর প্রতি আমার গভীর আকর্ষণের কারণ আমাদের দুজনের একই বিষয়গুলিতে বহুবর্ণরঞ্জিত আগ্রহ- জ্যাজ সঙ্গীত, কৌতুকপ্রিয়তা, উদারপন্থী রাজনীতি, উদ্ভাবনী শিল্পকলা এবং সাহিত্যচর্চা। আগেই বলেছি যে আমি পুরো উপন্যাসটিকে পড়েছি অনুবাদ করার সঙ্গে সঙ্গেই। এমন বিদঘুটে কর্মপদ্ধতি সচরাচর ঘটে না, কিন্তু উপুন্যাসটির প্রকৃতির সঙ্গে তা বেশ মানিয়ে গেছে এবং আমার মনে হয় না যে তার ফলে অনুবাদের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়েছে। বরং এইভাবে কাজ করার ফলেই হয়ত: তার সফলতা নিশ্চিত হয়েছে। কোর্তাসার তার গ্রন্থটিকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন; “অন্য দিক থেকে”, “এই দিক থেকে” এবং “বিভিন্ন দিক থেকে”, শেষ ভাগটির উপশিরোনাম “নগণ্য পরিচ্ছেদগুলি”। তিনি নির্দেশ ও দিয়েছেন কীভাবে বইটি পড়া যেতে পারে, লিখেছেন যে একটি গ্রন্থের শরীরে অনেকগুলি গ্রন্থ বর্তমান, কিন্তু নিদেনপক্ষে দুটি। আমরা প্রথম থেকে পাঠ শুরু করে সোজাসুজি এগোতে পারি, কিন্তু দ্বিতীয় পর্ব শেষ করে থেমে যাওয়াটাই বিধেয়, তৃতীয় পর্বে ঢোকার কোনো প্রয়োজনই নেই। তারপরে তিনি বানিয়েছেন এক তালিকা- দ্বিতীয়বার পাঠের জন্যে, সেই সারণিতে তিনটি পর্ব থেকেই বিভিন্ন পরিচ্ছেদের শেষে আর একটি পরিচ্ছেদের ক্রমিক সংখ্যা নির্দেশ করা রয়েছে যেটি তার ঠিক পরে পড়তে হবে। শেষ পরিচ্ছদ, অর্থাৎ ১৩১ নম্বর পরিচ্ছেদ এর শেষে নির্দেশ- এর পরে পড়তে হবে ৫৮ নম্বর পরিচ্ছেদ, যেটা পাঠক এর ঠিক আগেই পড়েছেন এবং তার শেষ নির্দেশ ১৩১ নম্বর পরিচ্ছেদে যেতে। অর্থাৎ লেখকের নির্দেশ অনুসরণ করলে আটকে যাওয়া গ্রামাফোন রেকর্ডের মতন পরিণতি হবে, যেখানে সূচাগ্র পিনটা একবার এগোয় আর একবার পেছোয় এবং গানটার কখনই সমাপ্তি ঘটে না। এইভাবে পড়লে উপন্যাসের কোনো শেষ নেই, আবার প্রথম থেকে শুরু করে আপাতদৃষ্টিতে প্রতীয়মান সঠিকভাবে পড়লে তার শেষ হবে এই বলে, “…. তিনি মুক্তি দিলেন নিজেকে, ব্যস, সব শেষ”। মানে ইঙ্গিত করা হচ্ছে যে অলিভিয়েরা, কাহিনির প্রধান চরিত্র জানালা খুলে শূন্যে ঝাঁপ দিয়েছেন।

    একজন একগুঁয়ে সমালোচক স্তম্ভিত হয়ে আপত্তি করেছিলেন, তাঁকে একই উপন্যাস দুবার পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে কেন। হুলিও সংবাদটি দেওয়া হ’লে তিনি আমাকে লেখেন (মানসচক্ষে দেখতে পাই তিনি হাসিমুখে মাথা নাড়ছেন) যে বেচারা হাঁদারাম বুঝতেই পারেন নি যে তাঁর সঙ্গে মশকরা করা হচ্ছে। ওই একই চিঠিতে তিনি লেখেন যে উপন্যাসটি পাঠকেরা একবার পড়লেই যথেষ্ট, দ্বিতীয়বার ফিরে পড়ার কোনো অর্থই হয় না। তিনি নিজে অন্তত কখনই তা করবেন না। অনুবাদটি শেষ করবার পরে আমার খেয়াল হয় উপন্যাসের শুরুতে কী নির্দেশ রয়েছে এবং বুঝতে পারি যে আমি পাঠককে গ্রন্থটির তৃতীয় পাঠের প্রস্তাব দিয়েছি সাদামাটা প্রথম থেকে শুরু করে প্রথাসিদ্ধভাবে শেষ পর্যন্ত পড়তে। যে সহজ কথাটা সেই নির্বোধ সমালোচক অনুধাবন করতে পারেন নি সেটা হল যে এক্কা-দোক্কা একটি শিশু ক্রীড়া, তাই বইটিকেও খেলার মতন করে পড়তে হবে। মূল গ্রন্থের প্রচ্ছদে হুলিও নিজের হাতে এক্কা-দোক্কার ছক এঁকে দিয়েছিলেন, যেভাবে সেটি খেলতে হ’ত আর্হেন্তিনায়, যে ঘরটি থেকে খেলার শুরু তার নাম ‘পৃথিবী’ এবং যেখানে গিয়ে শেষ তার নাম ‘স্বর্গ’। এটা খুবই স্বাভাবিক যে তাঁর এই বুদ্ধিজীবীর লম্ফঝম্পকে সহজেই ধরতে পেরেছিলেন লেখকের দেশোয়ালি সতীর্থ হর্হে লুইস বহেস, যিনি প্রথম প্রকাশ করেছিলেন হুলিওর ছোটোগল্প। তাঁদের দরিদ্র, সমস্যা-জর্জরিত এবং বেশির ভাগ সময়ে ভাবগম্ভীর মাতৃভূমি ইতিহাসটি যে বিশেষ করে তাঁদের কল্পনার মতনই হবে তাতে অবাক হবার কিছু নেই। হুলিও বিশ্বাস করতেন যে ভুল নামকরণ করা হয়ে গেছে মানব প্রজাতির- “হোমো স্যাপিয়েন” এর বদলে “হোমো লুডেন্স” রাখা উচিত ছিল (সমকামী বন্ধুদের জানাই- খুকখুক কাশির কোনো প্রয়োজন নেই)।

    “এক্কা-দোক্কা”র অনুবাদ করতে গিয়ে আমি নির্ভর করেছিলাম নিজের সহজাত প্রবৃত্তির ওপরে এবং বইএর পাতায় শব্দগুলো আমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছিল। এইভাবে কথাটা বলছি কারণ বিভিন্ন ও বিচিত্র পরিচ্ছেদগুলো ঠিক কী বলতে চায় সেটা আমি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলাম। হুলিও সব সময় তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলোকে মানিয়ে দিতে পারতেন তাদের সংলাপ ও স্বগতোক্তির সঙ্গে। একটা ব্যাপারে তাঁর অনুভূতি ছিল প্রখর; একই মানুষ যখন অন্যের সঙ্গে কথাবার্তা বলে অথবা নিজের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যায়, তাদের বাচনভঙ্গী হয়ে দাঁড়ায় সম্পূর্ণ আলাদা। কোনো কোনো আদিম সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এরকম বৈষম্যের সমাধান করতে গিয়ে অনেক সময়েই সৃষ্টি করেছে সম্পূর্ণ নতুন শব্দভান্ডারের। কোর্তাসারকে নিয়ে কাজ করতে গেলে আপনাকে খুব দ্রুতই সতর্ক হতে হবে এইসব বাচনভঙ্গীর ছলচাতুরির থেকে যা তিনি সুযোগ পেলেই চালু করে দেন। অলিভিয়েরা এই উপন্যাসের আখ্যায়ক এবং অনেকে বলেন, তিনি লেখকের দ্বিতীয় সত্তা অথবা “অল্টার ইগো”- তাঁকে লেখক দেখিয়েছেন লা মাগার কক্ষে খুঁজে পাওয়া একটা বইএর পাতা ওলটাতে। প্রথম লাইনটা পড়লেই বোঝা যায় তা না মিলছে উপন্যাসের সময় কালের সঙ্গে, না মিলছে তার রচনাশৈলীর সঙ্গে। কিন্তু দ্বিতীয় লাইনেই রয়েছে, “মেয়েটা যে আজেবাজে কী সব পড়ে, আনাড়ি নভেল….” এবং আমরা তখনই বুঝতে পারি যে কোর্তাসার এক লাইন থেকে পরের লাইনে অদল বদল করছেন অলিভিয়েরার মনের কথা এবং বেনিতো পেরেস গালদোস (১৮৪৩-১৯২০)-এর লেখা লা মাগার নভেল, তিনি যা পড়ছেন, তাদের মধ্যে। আমাকে খুব সাবধানে অগ্রসর হতে হয়েছিল উপন্যাসের এই অংশটার মধ্যে দিয়ে যাতে কোর্তাসারের লেখা বাক্যের সঙ্গে গালদোসের লেখা বাক্যের জগাখিচুড়ি না হয়ে যায়।

    এই মিশ্রণ প্রক্রিয়াটিকে লেখক আরো জটিল করে তোলেন উপন্যাসের মধ্যে ইউনেসকোর সরকারী দলিলপত্র ঢুকিয়ে দিয়ে- লেখক নিজেই সেখানে অনুবাদকের কাজ করেছেন। এই তথ্যটা জেনে আমি কিন্তু ভয়ে কেঁপে উঠিনি যে এই একই বৃত্তিতে দক্ষ এক মানুষের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সামনে কাজ করতে গিয়ে নিরাপত্তার অভাব বোধ করবো; বরং স্বস্তি বোধ করছি যে হুলিও তার নিজের অভিজ্ঞতার থেকে অনুবাদক হিসেবে আমার বেহাল অবস্থাটাকে বুঝবেন। সত্যি কথা বলতে কী, বেশ কয়েকবার তিনি আমাকে এমন পরামর্শ দিয়েছেন, যা কেবলমাত্র একজন অনুবাদকের পক্ষেই দেওয়া সম্ভব। তিনি তার উপন্যাসে বৈচিত্র্য আনতে গিয়ে তাকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন সরকারী দলিলপত্র এবং উপন্যাসের সেই অংশে পৌঁছে আমাকে তাই করতে হ’ল যা লেখক স্বয়ং জীবিকা নির্বাহের জন্যে করেছেন- অর্থাৎ নিষ্ঠা সহকারে সরকারী রিপোর্টের অনুবাদ এবং তার ভাষাকে বাকী উপন্যাসের সঙ্গে মিলিয়ে দেবার লোভ সামলানো। একবার এমন হ’ল যে আমি দেখলাম আমার দুশ্চিন্তার কোনো কারণই নেই- তিনি একটা হাইকু ফেঁদেছেন, যাতে ব্রহ্মদেশের মানুষের নামের তালিকা- তিনি নিশ্চয়ই কোনো না কোনো রিপোর্ট থেকে নামগুলো পেয়েছেন।

    “এক্কা-দোক্কা’র প্রথম পর্বের এবং “নগণ্য পরিচ্ছেদগুলি”র বেশ কিছু অংশের ঘটনাগুলো ঘটে পারী শহরে এবং তাদের বর্ণনার মধ্যে নিবিড়ভাবে বুনে দেওয়া হয়েছে ফরাসি শব্দ ও বাগধারা। সেগুলোকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে দেওয়া যেত, কিন্তু আমি তাদের রেখে দিয়েছি মূল গ্রন্থের মতনই। যদি হুলিও উপন্যাসের এই অংশগুলিকে চাইতেন ইংরেজি ভাষায় উপস্থাপিত করতে, তাহ’লে তাঁর মূল উপন্যাসেও তাদের অনুবাদ করতেন স্পেনীয় ভাষায়। এ ছাড়া ইংরেজি ভাষার পাঠকদের বেকুব ভেবে নিয়ে তাদের অপমান করতে চাইনি। (তাঁরা আগ্রহী হ’লে ফরাসি শব্দগুলো অভিধানে দেখে নিতেই পারেন)। আমি, অন্য কারণে কোনো কোনো স্থানে মূল স্পেনীয় ভাষা অবিকৃত রেখে দিয়েছি। যে কোন সঙ্গীতের মতোই ট্যাংগো গানের বাণীগুলোকে মূল ভাষাতেই রেখে দেওয়া ভালো, তাহ’লেই শুনতে ভালো লাগে এবং না হ’লে অনেক হাস্যকর বিপর্যয় ঘটতে পারে।

    আমার বাবা ছিলেন ঘোর অপেরাপ্রেমী, তিনি ইংরেজি ভাষায় অপেরা অভিনীত হচ্ছে শুনলেই হেসে আকুল হতেন; বেশ মনে আছে একবার এমন একটি আবৃত্তি ও গানের অনুষ্ঠানে ইতালিয় ভাষার বদলে ইংরেজিতে গাওয়া হয়েছিল; “এই আসে, ওই আসে দুগ্ধবতী নারী” বলে তিনি বলেছিলেন আমায়। ফলাফলটা হয়ে দাঁড়ালো ঠিক যেমন আগেও কোথায় যেন লিখেছিলাম, মেরিল লিন্চ কোম্পানিতে মিস্টার বিন এর বদলে যোগ দিলেন মিস্টার স্মিথ- যে কারণেই হয়ত জেমস মেরিল কখন ও তাঁর পারিবারিক ব্যবসাতে যোগ দেবার কথা ভাবেন নি।

    এমনিতেই লেখক অথবা অনুবাদকের নিজস্ব ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা নিয়ে কী করা উচিত তা গভীর চিন্তার বিষয়; কিন্তু কল্পিত ভাষাকে আয়ত্ত করা আরো কঠিন ব্যাপার। কোর্তাসার তাঁর “এক্কা-দোক্কা”র উপন্যাসে এমন একটি ভাষারই অবতারণা করেছেন; সেটি প্রণয়ের ভাষা এবং কর্মসংক্রান্ত কর্ম-পদ্ধতির বর্ণনা চলে এই ভাষায়। সেই ভাষার প্রতিটি শব্দের অর্থ বুঝে নেবার প্রয়োজন নেই; শব্দগুলিকে যেভাবে একসঙ্গে গাঁথা হয়, তার থেকে প্রকাশ ঘটে তাদের অর্থের। শ্রবণেন্দ্রিয়ের সাহায্যেও সেই শব্দগুলোর অনেক ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অনেকটা গংগোরার আপাতদৃষ্টিতে গূঢ়-রহস্যময় কবিতার মতন। তাঁর জীবনযাত্রা প্রণালীর বিষয়ে বিশদভাবে জানলে তাঁর কবিতার ভাষ্য এবং বিনষ্টির কারণ বোঝা যাবে। প্রথমবারের সহজ, সোচ্চার পাঠেই পাঠক ধরে ফেলতে পারেন তাঁর কবিতার মূলসূত্র, ঠিক যেমন এক সঙ্গীতের অংশবিশেষ শুনলেই অনেক সময় তার মানে বোঝা যায়, তার স্বরলিপির স্বরচিহ্নগুলি না দেখেই। আমরা মালার্মের কবিতা মন দিয়ে পড়তে পারি অথবা শুনতে পারি দেবুসির প্রেলুড- তাদেরও প্রভাব হবে প্রায় একই। এইভাবেই আমি অগ্রসর হয়েছিলাম হুলিওর “গ্লিগলিকো”র দিকে। অবশ্য তার অনুবাদ আমি ইংরেজি ভাষায় না করে করেছিলাম “গ্লিংরেজি” ভাষায় এবং মূল ভাষার যথেষ্ট বিষয়বস্তু আমি তাতে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলাম যাতে কবি রবার্ট ফ্রস্টকেও সন্তুষ্ট করা যায়, কিন্তু আমার উদ্দেশ্য ছিলো না তাঁকে সুখী করা, কেবলমাত্র আমার পাঠক-পাঠিকা এবং জেমস জয়েস খুশি থাকলেই চলবে।

    আমার মেয়ে ক্লারা বাচ্চা বয়সেই তার স্নুপি পুতুল এর সঙ্গে গল্প করার জন্যে “ভারমাসিয়ান” নামে একটা নতুন একটা ভাষা তৈরি করেছিল- সেই ভাষার শব্দাবলী নিয়মিত শোনার ফলে আমার ভীষণ সুবিধে হয়েছিল কোর্তাসার সাহেবের এই নতুন ভাষা আয়ত্ত করার কাজে। পুরো ব্যাপারটাই আমার একটু বোকা-বোকা লেগেছিল, ঠিক যেমন ক্লারার বোকা-বোকা লাগতো স্নুপিকে। গ্লিংরেজি ভাষার মতন সেটাকেও বলা যেতে পারে ইংরেজির এক উপভাষা। স্নুপি কেবল নিজের সম্পর্কে জানাবে যে তার বাচন-বিকৃতির অসুখ রয়েছে, তাই তার সঙ্গে ইংরেজির বদলে “ভারমাসিয়ান” ভাষায় কথা বলতে হবে। কোনো রহস্যময় কারণে এই ভাষার শব্দগুলোকে ছিল অন্তিমে স্নাভিক টান, সম্বন্ধপদের মতন শুনতে লাগতো কানে- স্নুপেভ, মামণিয়েভ, বাপিয়েভ। ভাষাবিজ্ঞানের কারণ দেখিয়ে এর সঠিক ব্যাখ্যা করা অসম্ভব, কেবলমাত্র মনো-ভাষাবিজ্ঞানীরাই এর বিচার করতে সক্ষম। ক্লারার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল হুলিওর এবং দীর্ঘকায় লেখকের উচ্চতা দেখে সে অভিভূত- তাঁর তুলনা করতো রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকনের সঙ্গে এবং তাঁকে ডাকতো “ছ ফুট চার ইঞ্চি জেঠু” নামে। আমাকে যখনই তিনি চিঠি লিখতেন, তার সঙ্গে থাকতো ক্লারার জন্যে আঁকা একটা স্কেচ। তাঁর বেশ কিছু গল্পের কাহিনি থেকেও বোঝা যায় যে কোর্তাসার এবং বাচ্চা ছেলেমেয়েদের মধ্যে এক বিশেষ বন্ধন বর্তমান- তারা একে অন্যকে ভালো করেই চেনে এবং বোঝে, যেটাকে ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল। একদিক থেকে দেখতে গেলে তিনি এক বড়ো মাপের শিশু- বিশাল ও বিশুব্ধ। শিশুরা সহজেই বুঝতে পারে কারা তাদের তাদের সমকক্ষ, যদিও তারা কখনও শীতলভাবে একে অন্যকে পর্যবেক্ষণ করে, যেমন এক কুকুর অন্য কুকুরকে।

    আমি নিজের চোখে যা দেখেছি, কোর্তাসার তার সাহিত্যকর্মের মধ্যে বিভিন্ন শিল্পকর্মের গঠনের মূল উপাদানগুলির বিচিত্র এক ট্র্যাপেস্ট্রি বানিয়েছেন। সব কিছু বলা আর করা হয়ে গেলে অন্তিমে ওই ভাবনাটুকুই পড়ে থাকে, যদি আদতে তার পড়ে থাকা সম্ভব। লেখকের দ্বিতীয় যে উপন্যাসটির আমি এই একই উপাদান লক্ষ করেছি। ইংরেজি অনুবাদে আমার নামকরণ তাঁর দেওয়া স্পেনীয় ভাষার নামের “৬২, মোডেলো পারা আর্মার” খুব কাছাকাছি- সাজ সরঞ্জাম রয়েছে, তাদের দিয়ে মডেল বানাতে হবে। শেষ অংশটা বেশ অস্বস্তিকর- সেটা কেবল সাজ-সরঞ্জামগুলোকে বর্ণনা করে (আমার ছোটোবেলায় যাকে বলা হ’ত “ইরেকটর সেট” অথবা আরও কম বাস্তব “টিংকার টয়”)। শিরোনামের “৬২ হল “এক্কা-দোক্কা” উপন্যাসের ৬২ নম্বর পরিচ্ছেদ, যেখানে পর্তুগালের কবি পেসোয়ার মতন হুলিওর আর একটি লেখক-নাম মোরেলি, বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন কীভাবে লিখতে হয় উপন্যাস। এক হিসেবে এই উপন্যাসটিকে “এক্কা-দোক্কা”র স্বপ্ন-সংস্করণ বলে অভিহিত করা যেতে পারে, হয়ত: এক পরাবাস্তববাদী স্বপ্ন- কিন্তু আবার সব স্বপ্নই পরাবাস্তববাদী এবং সেখান থেকেই যাদুবাস্তববাদের সূচনা। এই গ্রন্থটিকে বলা যেতে পারে আগের গ্রন্থের ক্ষণজীবী রূপ, অর্থাৎ আমি অনুবাদ করতে চলেছি তাকে, যাকে আমি আগেই অনুবাদ করে বসে রয়েছি, অথচ তার অবস্থান পদার্থবিজ্ঞানীরা যেমন বলে থাকেন, সেই চতুর্থ মাত্রায়। “এক্কা-দোক্কা”র দলছুট চরিত্রেরা এই উপন্যাসে এসে সবাই হয়ে গেছেন অপার্থিব।

    কাহিনি কখন শুরু হয় উত্তম পুরুষে এবং তারপরে পালটে যায় প্রথ্ম পুরুষে মুখ্য চরিত্র ও কথকের নাম দেওয়া হয় হুয়ান। অন্যান্য সময়ে এই প্রবক্তা অথবা সাক্ষীর কথা উপন্যাসে উল্লেখ করা হয়েছে “মি পারেডো” নামে। এই নামটির উৎস সন্ধান করতে গিয়ে অনেক খোঁজখবর নিয়ে বহু পরিশ্রমের পর আমি গ্রিক “পারেদ্রোস” শব্দে এসে পৌঁছাই এবং বোঝাই যাচ্ছে যে সেটা কোনো প্রাচীন মিশরীয় “ডপেলগ্যাঙার” এর হেলেনীয় সংস্করণ। এই আন্ত: সাংস্কৃতিক খিচুড়ির মুখোমুখি হয়ে আমি এই গ্রিক সমাধানটিকেই মেনে নিই, কারণ টথ ঠাকুরের প্রাচীন পুঁথিপুরাণ খুঁজে দেখার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না। বিশেষ করে এমন একটা নামের জন্যে যার উচ্চারণ একমাত্র বরিস কারলফের মুখেই মানায়। একটা সমস্যা অবশ্য থেকেই যায়, কারণ স্পেনীয় ভাষার পাঠকেরা অবশ্য, তাঁদের স্পেনীয় সতীর্থদের মতনই এই পুরো বিষয়টা নিয়েই অন্ধকারে থেকে যান এবং সেটা কাহিনি রহস্যময়তার সঙ্গে খাপ খায় ভালো।

    কোর্তাসার দুটি ধ্রুপদী আজগুবি চরিত্রের সৃষ্টি করেছেন, যাদের নাম ‘পোলেনকো’ এবং ‘কালাক’,যারা হঠাৎ হঠাৎই সংলাপে মেতে ওঠে তাদের নিজস্ব অদ্ভুত ভাষায় এবং অনেক সময় অন্যেরাও যোগ দেয় তাদের সঙ্গে। এই মানিকজোড়ের ভাষা অনেকটাই “এক্কা-দোক্কা”র গ্লিংরেজির মতনই এবং আমিও একইভাবে অনুবাদ করেছি মূল ভাষার শব্দগুলোকে যতোটা সম্ভব অবিকৃত রেখে কেবল তাদের শেষ অংশটুকুতে ইংরেজিয়ানা বজায় রেখেছি। উদাহরণস্বরূপ, পোলেনকো এবং কালাক ক্রমাগত একে অন্যকে গালাগাল করে যায়- একজন অন্যজনকে বলে “পেতিফোরো”, অন্যজন তার জবাবে বলে “ক্রন্কো”। ইংরেজিতে আমি তাদের যথাক্রমে “পেটিফর” আর “ক্রন্ক” বানিয়েছি। এইভাবে আমি তাদের কথোপকথনের অর্থহীন কালিমালেপনকে বজায় রাখতে পেরেছি, ইংরেজি গদ্যস্রোতের কোনোরকম ক্ষতি না করেই। অদীক্ষিতের কাছে পুরো ব্যাপারটাই অর্থহীন মনে হ’তে পারে, কিন্তু যাঁরা স্পেনীয় অথবা ইংরেজি ভাষায় কোর্তাসারের গদ্য নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁদের কোনো অসুবিধেই হবে না সংলাপের মূল অর্থ উদ্ধার করতে।

    ঠিক একইভাবে আমি হাতড়ে হাতড়ে আরও এক রকমের চরিত্রের সংজ্ঞা নিরুপণের চেষ্টা চালিয়েছিলাম যাঁদের হুলিও বলেন “ক্রোনোপিও”। এই শব্দের কোনো অর্থ নেই ফলে তার অনুবাদের চেষ্টাও বৃথা, সেই প্রয়াসে একমাত্র বলা সম্ভব যে এই চরিত্র এমন এক অস্তিত্ব যাঁদের মধ্যে ব্রাসিলের মানুষজনের “জেইতো” নামে একটি গুণ বর্তমান, তবে তারও কোনো অনুবাদ সম্ভব নয়। তিনি এমন এক চরিত্র যিনি একদিন নিজের হাতে সারিয়ে ফেলবেন জটিল যন্ত্রপাতি, আবার আরেকদিন আপনমনে তছনছ করবেন সবকিছু। আমি ভেবেছিলাম শব্দটি (গ্রিক) ক্রোনোস এবং (ইংরেজি) ক্রোনোলজি এবং কালপর্বের সঙ্গে সম্পর্কিত, কিন্তু হুলিও জানালেন যে একেবারেই তা নয়। তিনি বললেন যে, যে কোনো ব্যক্তিই জানেন তিনি এক “ক্রোনোপিও”, কেবল হ’তে চাইলেই হ’ল, ব্যস, আর কোনো ব্যাখ্যারই প্রয়োজনই নেই, বাকী সব কর্ম নিষ্পন্ন করবেন “জেইত” অথবা “জেইতিনহো”। আমার ভীষণ গর্বের কথা যে হুলিও কোর্তাসার আমাকে ক্রোনোপিওর খেতাব দিয়েছেন এবং আমি সেই অভিধাকে অহংকারের সঙ্গে বহন করি, যেন আমি এক অভিজাত নাইট, অন্য নাইটদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলি, আমরা সবাই “শোচনীয় মুখাবয়বের নাইট”। এই ক্রোনোপিওর বিষয়ে ধারণা থেকেই নিরুপিত হয় কিভাবে হুলিওর ইংরেজি অনুবাদের কাজ এগুবে। আমি মাঝে মাঝেই ভাবি যে যখন তাঁর সাহিত্যকর্মে আমি নিমজ্জিত ছিলাম, তখন আমি নিজেই তার পারদ্রোর রূপ নিয়েছিলাম এবং কাজকর্মগুলোই করেছি অন্য সময়ে এবং অন্য স্থানে। ভাবতে ভালো লাগে যে আমি এখনও তাই রয়েছি।

    এর পরেও আমি তাঁর আরও কয়েকটা বই এর কাজ করেছি- ছোটো গল্প, আলেখ্য এবং অন্য একটা উপন্যাস। সব শেষের প্রজেক্টটা অন্য সব কাজের থেকে একেবারেই আলাদা। কোর্তাসার গ্রন্থটি রচনা করেন আর্হেন্তিনায় জঙ্গী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের সূচনায়, যখন টিনপাতের জেনারেলরা দেশের তরুণ ও হতাশ্বাস নাগরিকদের বিরুদ্ধে বিকারগ্রস্ত অস্তিত্বরক্ষার তীব্র যুদ্ধে রত- তাদের কোনো ভয়ই ছিলো না ট্যাংক অথবা পদাতিক সেনাবাহিনীর কাছ থেকে (পরে অবশ্য ব্রিটিশরা তাদের উচিত শিক্ষা দেবে কীভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করা বিধেয়)। তাঁর ফাঁপা- মানসিকতার অভিযোগকারীদের চোখে তাকে যতোটাই অন- আর্হেন্তিনিয় মনে হোক না কেন (বেলজিয়ামে জন্ম, পারী শহরে বসবাস), তিনি ওই দলদাস মানুষদের থেকে নিজেকে বেশি আর্হেন্তিনিয় ভাবতেন এবং বর্হেসের মতনই (যাঁর নামেও একই অভিযোগ উঠেছিল) উপযুক্ত জবাব দেন লেখার মাধ্যমে। অভিবাসী বিরোধী পক্ষের একটা সঠিক ছবি তুলে ধরার জন্যে কোর্তাসার “লিব্রো দে মানুয়েল” (“মানুয়েলের বই”) উপন্যাসটি লেখেন। ইংরেজিতে গ্রন্থটির নামকরণ করতে গিয়ে সমস্যা- হয় খুব হালকা মনে হবে, দ্বিধাগ্রস্ত পরামর্শকে স্বীকার করে নিয়েই নাম রাখা হ’ল “মানুয়েলের ম্যানুয়াল”। আমি এখনও নিজের মনে ভাবি যে এর থেকে ভালো কোনো নাম রাখা যেতে পারতো কিনা গ্রন্থটির, হয়ত: মূল নামে থেকে বেশ খানিকটা দূরে সরে গেলেও মন্দ হ’ত না। হুলিও, সর্বদাই এক ক্রোনোপিও, অবশ্য এই শব্দের খেলা দেখে বিমুগ্ধ হয়েছিলেন, যদিও তিনি তাঁর গ্রন্থের মূল স্পেনীয় নামেও একই খেলা খেলতে পারতেন, কিন্তু খেলেন নি। কোনো কারণে, হয়ত: এই নাম করণের সঙ্গেই সেটা জড়িত, এই গ্রন্থটিতে তাঁর অন্য উপন্যাসগুলোর মতন বেপরোয়া আনন্দ উল্লাস নেই, যদিও এক চমৎকার দৃশ্যে পারী শহরের রাজপথে ফিরোজা রঙের এক পেঙ্গুইন দুলকি চালে হেঁটে চলে দক্ষিণ মেরুতে যাওয়ার পথে। হয়ত: কাহিনির খেই ধরিয়ে দেবার জন্যে কালাক অথবা পোলানকার মতন চরিত্র নেই বলেই হোক অথবা গ্রন্থের নিকটে ঘুরঘুর করা জঙ্গী নেতাদের নিয়ে হুলিওর রঙ্গ করার রুচি নেই বলেই হোক তার সম্ভাব্য কারণ। উপন্যাসের বিষাদমমতা তাঁর হৃদয়ের কাছাকাছি আর্হেন্তিনার নিষ্ঠুর বাস্তবতার পরিচায়ক। গার্সিয়া মার্কেস অথবা দেমেত্রিও আগুইলেরা- মাল্টা অমানুষিক একনায়কদের দিয়ে রঙ্গ করতে দ্বিধা করেন না, কিন্তু কোর্তাসারের মানসিকতা সম্পূর্ণ আলাদা হয়ত; তাঁর অন্তরজগতের চিরশিশুর প্রভাব।

    আমি হুলিওর বেশ কয়েকটা গল্প নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি যে ইংরেজি ভাষায় তাদের মানিয়ে যায় ভালো। “যাদু বাস্তবতা” নিয়ে যে পুরানো ও ক্লান্তিকর তর্কবিতর্ক চলে আসছে, কোর্তাসারের গল্পের আলোচনায় তারা নতুন জীবন পায়। অনেক ক্ষেত্রেই এমন হয় যে আমরা চোখের সামনেই দেখি যাকে আমরা বাস্তব বলে থাকি, তার স্বচ্ছন্দে রূপান্তর এমন এক পরিস্থিতিতে যা ঘটছে কিন্তু ঘটতে পারে না আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে। অনেক সময়েই, বুদ্ধিতে যারা ব্যাখ্যা চলে না এমন বস্তু বা কর্মকে বর্ণনা করার জন্যে ব্যাখ্যার অতীত শব্দের প্রয়োজন। রহস্যটা নিহিত থাকে সেই ঘটনার মধ্যে যে কোনো বস্তু ব্যাখ্যার অতীত হওয়া সত্ত্বেও থেকে যেতে পারে আমাদের চোখের ঠিক সামনে। হয় আমরা সর হুয়ানা ইনেস দে লা ক্রুসের মতন প্রবেশ করতে পারি স্বপ্নের ঘোরে, যেমন তিনি তাঁর নিজস্ব “সব তত্ত্বের সমাহার” এর সন্ধানে ছিলেন অথবা আমরা তাদের এনে হাজির করতে পারি চোখের সামনে একটা জুতসই নাম দিয়ে- তেমন একটা উপযুক্ত শব্দ। যদি কোনো একটা বস্তুর আমি বর্ণনা করি গ্লিংরেজি ভাষায়, সেটা কি ইংরেজি অথবা স্পেনীয় ভাষায় তার বর্ণনার থেকে কিছু কম বাস্তব হবে? এমন সব মুহূর্তে অনুবাদককে ডুব দিতে হবে লেখকের প্রতিভার গহীনে, যেমন হ্যারল্ড ব্লুম করেন, এবং চেষ্টা করতে হবে সেই প্রতিভাকে তার আপন করে নিতে, অর্থাৎ সত্যিকারের এক পারদ্রোসের রূপ নিতে হবে। আমি খতিয়ে দেখেছি যে এই একই সমস্যার সমাধান করতে মিগেল আংগেল আসতুরিয়াস বা অন্য লেখকদের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে বুদ্ধির কসরত করতে হয়েছে, সেই তুলনায় হুলিওর সঙ্গে আমি নিজেকে মিশিয়ে ফেলেছি অনেকটাই স্বচ্ছন্দে।

    আমার হাতে হুলিওর অন্তিম গ্রন্থের অনুবাদ হ’ল “কোনো এক লুকাস”। এখন ফিরে তাকিয়ে অতীতের কথা ভেবে আমার দুঃখ হয়, এমনকী খানিকটা আনন্দও পাই যে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ সালে, যে বছরে হুলিওর মৃত্যু। এই ঘটনার মধ্যে খুব সম্ভবত: আরও গভীর এবং আরো রহস্যময় কিছু রয়েছে, তাঁর সমস্ত বইপত্রের মধ্যে এটিও তাঁর নিজের চরিত্রের সবচেয়ে কাছাকাছি। লুকাসকে হ;তেই হবে তাঁর পারেদ্রোস অথবা তখন তাকে তিনি যে নামেই ডাকুন না কেন। এই দ্বৈততার ভাবনা তিনি প্রকাশ করেছেন তাঁর প্রবন্ধজাতীয় একটি রচনায় যেটা দুইগুচ্ছ লুকাসের মাঝামাঝি উপস্থাপিত হয়েছিল, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে ড: জেকিল জানতেন মি: হাইডের অস্তিত্ব, কিন্তু হাইডের কোনো ধারণাই ছিল না জেকিল সম্পর্কে। একটু অদ্ভুত ভাবে হ’লেও এই একই দ্বৈততাকে প্রয়োগ করা যাবে লেখক আর অনুবাদকের সম্পর্কের মধ্যে, যদিও সম্পূর্ণ উল্টোভাবে। যখন লেখক (অর্থাৎ জেকিল) তাঁর বক্তব্যগুলো লেখেন, তখন তিনি জানেন না যে অনুবাদক (অর্থাৎ হাইড) পরে কোনো সময় লেখাটার দখল নেবেন এবং তাকে রূপান্তরিত করবেন অন্য ভাষায়। আশা করা যাক যে এক্ষেত্রে কাহিনির সমাপ্তিটা স্টিভেনসনের নায়ক এবং তার পারেদ্রোসের থেকে তুলনায় সুখকর হবে।

    এই নিবন্ধের সূচনাতেই জানিয়েছি কীভাবে “এক্কা-দোক্কা” থেকেই আমার পেশাদার অনুবাদক জীবনের সূচনা এবং কীভাবে আমি আবিষ্কার করি কতো বিষয়ে আমাদের চিন্তা ভাবনার হবহু মিল। তার ফলেই হয়ত: সুবিধে হয়েছে অনুবাদের কাজে, কারণ পরবর্তীকালে আমি তাঁকে নিয়ে যাযা কাজ করেছি, সবেতেই প্রকাশের এক স্বাভাবিক স্রোতে কাজটা এগিয়েছে সেটা কেবলমাত্র ব্যক্তিগত, মৌলিক রচনাতেই হয় যেখানে পন্ডিতি উদ্দেশ্যের কোনো বাধানিষেধ থাকা সম্ভব নয়। সেই স্রোত বয়েই চলবে কখনও গতানুগতিক এবং কখনও পরিহাসময় প্রকাশ ভঙ্গিতে। আমার স্ত্রী ক্লেমেনটাইনও হুলিওর লেখার ইংরেজি অনুবাদের প্রয়াস করেছেন। তিনি “আলোর পরিবর্তন ও অন্যান্য গল্প” সংকলন থেকে “গ্রীষ্ম” গল্পটির ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন। অনুবাদ বিষয়ে তাঁর কর্মপদ্ধতি ও মতামত আমার চেয়ে আলাদা, যেমনটি হওয়া উচিত। আমরা কখনও সমালোচক হিসেবে একে অন্যের সাহিত্যকর্মের ওপরে মন্তব্য করি না, তবে স্বত:প্রণোদিত হয়ে পরামর্শ দিই, যা বেশির ভাগ সময়েই আনন্দের সঙ্গে গৃহীত হয় এবং সব মিলিয়ে হাতে-নেওয়া কাজটির উৎকর্ষ বৃদ্ধি করে। এই অপরূপ অভিজ্ঞতার পরে ক্লেম তাঁর নিজের মৌলিক নভেলা লিখলেন “গ্রীষ্ম ২” নামে, যদিও তার অভিপ্রায় সম্পূর্ণ পৃথক, দুটি লেখার মধ্যে রয়েছে এক রসহ্যময় নৈকট্য যেটা শিরোনাম থেকেই বোঝা যায় খানিকটা। ক্লেম স্বীকার করেন, তাঁর নভেলার মধ্যে এডিথ হোয়ার্টনের (১৮৬২-১৯৩৭) প্রভাব রয়েছে অনেকটাই, তবে মেজাজের দিক থেকে তা হুলিওর সুহৃদ।

    আমার যে ভাবনাটা আমি নিবেদন করেছি এখানে অর্থাৎ অনুবাদকের কোনো প্রয়োজন নেই আত্মবলিদানের, নিজেকে প্রতারিত করে তাঁকে ধারণ করতে হবে না অন্য কারুর রূপ- সেটা কিন্তু পূর্বে যা লিখেছেন তার পরিপন্থী নয় একেবারেই। এখানে উল্লেখ করতেই হয় মিগেল দে উনামুনোর (১৮৬৪-১৯৩৬) বক্তব্য- কিহোতে এবং তাঁর নাইট ঘটনাস্থলে রয়েছেন সর্বদাই- কিন্তু সেরভান্তেস সেখানে পোঁছে যান তাঁদেরও আগে। উনামুনো কোনোদিনই ক্ষমা করতে পারেন নি তাঁর সমনামী লেখককে, তিনি বলতেন যে উপন্যাসটি লেখা উচিত ছিল তাঁর নিজের। এই মনোভাবের আরও প্রমাণ যেভাবে তিনি তাঁর তিনি তাঁর নিজের নভেল, অথবা যাকে বলতেন “নিভোলা”, লেখার কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন- যার নাম “নিয়েব্লা” (“কুয়াশা”) এবং এইভাবেই হয়ত: ব্যাখ্যা করা যেতে পারে কেন সেরভান্তেসের সৃষ্টির অর্থাৎ “দন কিহোতে” এর এতোগুলো ভালো মানের অনুবাদ হয়েছে গত কয়েক শতাব্দী জুড়ে- সেগুলো সবই কিন্তু সেরভান্তেস অবলম্বনে অনুবাদকের ব্যক্তিগত সৃষ্টি এবং সেই কারণে উৎকৃষ্ট গুণমানের সাহিত্য কর্ম, যদিও পুরো ব্যাপারটা পাঁঠার মাংসের ঝোল থেকে জ্যান্ত পাঁঠা সৃষ্টি করার মতন।

    আমার নিজস্ব বিশ্বাস এই যে হুলিও কোর্তাসারকে আমার প্রথম লেখক হিসেবে পেয়ে আমি যথাযথ মানসিক অবস্থা এবং কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করতে পেরেছিলাম বাকী জীবনের অনুবাদকর্মের জন্যে। নিজের লেখা শব্দসমূহকে তাঁর রচিত শব্দসমূহের সঙ্গে অবলীলায় মিশিয়ে আমি তাঁর পারেদ্রোসের রূপ ধারণ করেছি- তিনি যা করে চলেছেন স্পেনীয় ভাষায়, আমি তাই করেছি ইংরেজিতে- অনেকটাই অজ্ঞাতে, তবে সহজাত প্রবৃত্তির মাধ্যমে কোনোভাবে জেনে। হাইড ক্রমে ক্রমে পরিচিত হচ্ছেন জেকিলের সঙ্গে। ধীরে ধীরে তাঁরা একে অন্যের সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে নিচ্ছেন, তবে কোনো-দিনই তাঁরা সক্ষম হবেন না এক হ’তে, কারণ তাঁরা ভাষার বিভিন্ন বিস্তারে কর্মরত এবং একে অন্যের প্রতিফলন হলেও হতে পারেন। আমি জানি না হুলিওর আগে নিজে শুরু করতে পারলে আমি ইংরেজিতে “এক্কা-দোক্কা” লিখতে সক্ষম হতাম কিনা, তবে আমি তার সদৃশ ইংরেজি রূপ দিয়েছি এবং হুলিও তা অনুমোদনও পছন্দ করেছেন- অন্যেরও ভালো লেগেছে এই উপন্যাস। এখন আমার নিজের জীবনের নবম দশকে পৌঁছে, যখন শব্দেরা ফিকে হয়ে যায়, আবার নতুন অর্থের মাধ্যমে ফিরে আসে ঝকমকে রূপে, আমি অবাক হয়ে ভাবি- আমাকে অনুসরণ করে অন্য কেউ কি হুলিওর রচনার নতুন প্রতিরূপ সৃষ্টির কাজে হাত দেবেন ভবিষ্যতে। এইভাবেই চলতে পারে পরের পর, ক্রমাগত- কারণ অনুবাদের এই এক ক্রমবর্ধনশীল সাহিত্যিক সদগুণ যে তার কোনো শেষ নেই। যদি আমরা মনোযোগ দিয়ে “এক্কা-দোক্কা” পড়ি, তাহ’লে দেখতে পাবো যে সাহিত্যকর্মটি অসমাপ্ত এবং কোর্তাসার পাঠককে সাদরে আহ্বান জানাচ্ছেন, যা তিনি করতে পারেন নি তা নিজের কল্পনার মাধ্যমে সমাপ্ত করার জন্যে। যদি সত্যি সত্যি তাই হয়, আমাদের মনে রাখা উচিত হবে আভেইয়ানেদার কথা, তিনি যেই হোন না কেন- তিনি চেষ্টা করে গেছেন সেরভান্তেসের সৃষ্টিকে সম্পূর্ণ করতে এবং রেখে গেছেন এক চিত্তবিনোদনকে কাহিনি, যা আমাদের কোনোভাবেই পথ দেখায় না। সত্যি কথা বলতে কী, এই কাহিনির সমাপ্তি এক মানসিক হাসপাতালে যেখানে দন কিহোতে কোনোদিন পথ ভুলেও যাবেন না (এবং যানও নি)। এক সাহিত্যকর্মের সুষম সমাপ্তি তার অনুবাদে, যেখানে মূল লেখক তাঁর নিজের ভাষায় আরব্ধ কর্মের কোনো একটা দিক যদি উপস্থাপিত করতে সমর্থ না হ’ন, অনুবাদক সেটা সম্পন্ন করতে পারেন নতুন এক ভাষায়- এমনকী যেভাবে সন্ত জেরোম মহর্ষি মুসার যৌন প্রতারণার ইঙ্গিত করেছিলেন, ভুলক্রমে মিকেলাঞ্জেলো তাকে পাথরের মূর্তিতে চিরস্থায়ী করেন- তাতেও। এই ভাবনাসূত্রকে ক্রমান্বয়ে বহন করে নিয়ে গেলে শেষ অব্দি এক উপযুক্ত অমীমাংসিত মীমাংসায় পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হবে- যেখানে আমি সচেতন অথবা অসচেনভাবে পেশ করতে পারি আমার প্রস্তাব- “এক্কা-দোক্কা”র পরে বাকী জীবনে আমি যে অজস্র অনুবাদের কাজ করেছি, তা কোনো না কোনো ভাবে সেই প্রথম গ্রন্থেরই ধারাবাহিক অবিরাম পূর্বানুবৃত্তি।

    লেখক পরিচিতি: ইয়োরোপ ও লাতিন আমেরিকার কথাসাহিত্যের প্রথিত যশা অনুবাদক গ্রেগোরি রাবাসার জন্ম আমেরিকার ন্যু ইয়র্ক রাজ্যে ১৯২২ সালে। তিনি হুলিও কোর্তাসারের ৬টি গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন-

    ১। “Hopscotch (মূলগ্রন্থ “Rayuela, প্রকাশ ১৯৬৩), প্রকাশ ১৯৬৬;

    ২। “62: A Model kit (মূলগ্রন্থ “62: Modelo para armar”),

    ৩। “A Manual for Manuel” (মূলগ্রন্থ “Libro de Manuel”),

    ৪। “A Change of light and other Stories” (মূলগ্রন্থ “Octaedro”,প্রকাশ ১৯৭৪ এবং “Alguien que anda por ahi”, প্রকাশ ১৯৭৮), প্রকাশ ১৯৮০;

    ৫। “We Love Glenda so Much and other Tales” (মূলগ্রন্থ “Queremos tanto a Glenda y otros relatos”, প্রকাশ ১৯৮১), প্রকাশ ১৯৮৩;

    ৬। “A certain Lucas” (মূলগ্রন্থ “Untal Lucas”, প্রকাশ ১৯৭৯), প্রকাশ ১৯৮৪।

    অনূদিত নিবন্ধটি লেখকের ২০০৫ সালে প্রকাশিত “একে যদি বিশ্বাসঘাতকতা বলে” (If This be Treason”) গ্রন্থে সংকলিত।

    টীকা-

    ১) কদলী ট্রিলজি- গুয়াতেমালার নোবেলজয়ী লেখক মিগেল আংগেল আসতুরিয়াসের তিনটি উপন্যাস- “বিয়েন্তা ফুয়ের্তে” (“প্রবল ঝড়”, প্রকাশ ১৯৫০), “এল পাপা বার্দে” (“সবুজ পোপ”, ১৯৫৪) এবং “লস ওহোস দে লস এনতেরাদোস” (“কবরে যাওয়া মানুষের চোখ”, ১৯৬০), গ্রন্থ তিনটির বিষয়বস্তু কদলীখামারে ভূমিজ শ্রমিকদের ওপরে শ্বেতকায় প্রভুদের অত্যাচার।

    ২) সারা ব্ল্যাকবার্ন- প্যান্থিঅন প্রকাশনা সংস্থার পুস্তক- সম্পাদিকা, স্বামী পল ব্ল্যাকবার্ন (১৯২৬-১৯৭১) ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোর্তাসারের এজেন্ট এবং তাঁর বেশ কিছু বিখ্যাত গল্পের ইংরেজি অনুবাদক।

    ৩) হোমো লুডেন্স- লাতিন শব্দবন্ধটির অর্থ “ক্রীড়ারত মনুষ্য”, কিন্তু যেহেতু “হোমো” শব্দটির প্রচলিত অর্থ “সমকামী”, ওই শব্দবন্ধটির মধ্যে যৌন ইঙ্গিত দেখা দেতে পারে “সমকামী মেলা” অর্থে।

    ৪) বেনিতো পেরেস গালদোস (১৮৪৩-১৯২০)- স্পেনের বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক, অনেকের মতে সেরভান্তেস এর যোগ্য উত্তরাধিকারী।

    ৫) জেমস মেরিল (১৯২৬-১৯৯৫) আমেরিকায় বিংশ শতাব্দীর এক প্রধান কবি; তাঁর বাবা চার্লস অ্যান্ড কোং নামে বিখ্যাত বিনিয়োগ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা; মি: বিন হলেন ফ্র্যাংক ই.বিন আর মি: স্মিথ হলেন উইনথ্রপ এইচ. স্মিথ (১৮৯৩-১৯৬১)’ জেমস মেরিল পারিবারিক বিনিয়োগ সংস্থায় যোগ তো দেনই নি, বরং উত্তরাধিকারের কোটি কোটি ডলার নিজে নিতে অস্বীকার করে বিলিয়ে দিয়েছেন লোকহিতকর কাজে।

    ৬) লুইস দে গংগোরা (১৫৬১-১৬২৭) স্পেনীয় ভাষার বারোক কবি।

    ৭) স্তেফান মালার্মে (১৮৪২-১৮৯৮)- ফরাসি কবি।

    ৮) ক্লড দেবুসি (১৮৬২-১৯১৪)- ফরাসি সঙ্গীতশিল্পী।

    ৯) El Gliglico- “এক্কা-দোক্কা” উপন্যাসের জন্যে কোর্তাসার এই নতুন ভাষায় কিছু কিছু সংলাপ লিখেছিলেন।

    ১০) Gliglish- সেই ভাষার অনুবাদের জন্যে গ্রেগোরি রাবাসা এই নতুন ভাষার সৃষ্টি করেছিলেন। “English” থেকে “Gliglish”; আমি করেছি “ইংরেজি” থেকে “গ্লিংরেজি”

    ১১) Snoopy- চার্লস শুল্ৎসের আঁকা Peanuts কমিকের পোষা কুকুর চরিত্র। বাচ্চাদের খেলার পুতুল কুকুর।

    ১২) পর্তুগালের কবি ফার্নান্দো আন্তোনিও পেসোয়া (১৮৮৮-১৯৩৫) যিনি আরো তিনটি নামে (আলবের্তো কিয়েরো, রিকার্ডো রেইস এবং আলভারো দে কাম্পোস) কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন। তাঁদের ব্যক্তিত্ব এবং লিখনশৈলীর মধ্যে অনেক ফারাক ছিল।

    ১৩) Mi Paredro- এই শব্দবন্ধের কোনো সঠিক অর্থ নেই। রাবাসা যে গ্রিক উৎসের সন্ধান করেছেন, তার থেকে অর্থ হতে পারে “আমার পাশের চেয়ারে যে বসে রয়েছে”।

    ১৪) Doppelganger- মূল জার্মান শব্দ, যার অর্থ হল “জীবিত মানুষের আধি- ভৌতিক দ্বিতীয় অথবা যমজ সত্তা”।

    ১৫) Thoth- প্রাচীন মিশরের এক প্রধান, জাগ্রত দেবতা

    ১৬) বরিস কারলফ (১৮৮৭-১৯৬৯)- ১৯৩১ সালে জেমস হোয়েল পরিচালিত “ফ্রাংকেনস্টাইন” ছবিতে তিনি দানবের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

    ১৭) ১৯৮২ সালের ফকল্যান্ডে দ্বীপপুঞ্জের যুদ্ধে আর্হেন্তিনার শোচনীয় পরাজয় ঘটেছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীর হাতে।

    ১৮) ইকুয়েদর এর বিখ্যাত লেখক দেমেত্রিও আগুইলেরা মাল্টা (১৯০৯-১৯৮১), যাঁর ১৯৭০ সালে প্রকাশিত “সিয়েতেলুনাস ই সিয়েতে সেরপিয়েনতেস” (“সাতটি চাঁদ ও সাতটি সরীসৃপ”) উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন গ্রেগোরি রাবাসা (প্রকাশ ১৯৭৯)।

    ১৯) সপ্তদশ শতাব্দীতে মেহিকোর কবি এবং সন্ন্যাসিনী; জন্ম ১৬৫১ এবং মৃত্যু ১৬৯৫।

    ২০) হ্যারল্ড ব্লুম মার্কিন সাহিত্য সমালোচক এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক; জন্ম ১৯৩০ এবং মৃত্যু ২০১৯।

    ২১) স্পেনীয় ভাষায় নভেলকে বলে “নভেলা” (“novela”), কিন্তু উনামুনো তাঁর এই গ্রন্থটিকে প্রচলিত নভেলের থেকে আলাদা করতে “নিভোলা” নাম দিয়েছিলেন।

    ২২) আলানসো ফার্নান্দেস দে আভেইয়ানেদা- অজ্ঞাত এক লেখকের ছদ্মনাম, যিনি সেরভান্তেসের সমসসাময়িক এবং “দন কিহোতে” উপন্যাসের বেশ বাজে একটি অনুবৃত্তি বা সিকোয়েল রচনা করেন।

    ২৩) সন্ত জেরোম (৩৪৭-৪২০) ৩৮২ সালে লাতিন ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ শুরু করেন; সেই অনুবাদে তিনি ভুলক্রমে মহর্ষি মুসার বর্ণনা করেন মাথায় শিং সমেত। তারপর হাজার বছরেরও বেশি পার হয়ে শিল্পী মিকেলাঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪) ১৫১৫ সালে মুসার মর্মরমূর্তি নির্মাণ করেন মাথায় দুটি শিং সমেত। অনুবাদের ভুলটি এইভাবে চিরস্থায়ী হয়ে যায়।

  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments