শঙ্খ চৌধুরী যখন শান্তিনিকেতনে তখন কলাভবনের দায়িত্বে আছেন নন্দলাল বসু, আছেন রামকিঙ্কর, বিনোদবিহারী। তখন শান্তিনিকেতন জুড়ে আছেন ক্ষিতিমোহন সেন, কৃষ্ণ কৃপালনী, ক্ষিতীশ রায়, ধীরেন্দ্রমোহন সেন প্রমুখ উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। সর্বোপরি আছেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথকে শঙ্খ চৌধুরী পেয়েছেন প্রায় ছয় বছর। এমন সব মানুষজনের সান্নিধ্যে, শান্তিনিকেতনের খোলামেলা আলো-হাওয়ায়, দিগন্ত বিস্তৃত খোয়াইয়ে, লালমাটির রাস্তায় শঙ্খ চৌধুরী যে প্রাণসম্পদ সেদিন আহরণ করেছিলেন, তা তাঁর ব্যক্তিত্ব গঠনে অভাবনীয় সহায়তা করেছে।
শঙ্খ চৌধুরীর ‘স্মৃতি বিস্মৃতি’ গ্রন্থটি দশটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত। তিনি একসময় লিখেছিলেন নিজের কথা, দেশ-গাঁ, শান্তিনিকেতনের কথা। আবার যখনই বিদেশে গিয়েছেন, দিনলিপি রাখার চেষ্টা করেছেন মূলত মা, পরে দিদিদের সেইসব অভিজ্ঞতার কথা শোনানোর জন্য। বর্তমান গ্রন্থে তাঁর স্মৃতিকথাধর্মী লেখাগুলোর মধ্যে আছে — ‘দেশ-গাঁয়ে, ঢাকায়’, ‘শান্তিনিকেতনে’, ‘শিল্পচর্চা’, রামকিঙ্করের সঙ্গে নেপালে, ‘দিনলিপি : পোল্যান্ড ও কাবুলে ১৯৬৫’। এছাড়া আছে, ‘রামকিঙ্কর’, ‘রামকিঙ্করের ভাস্কর্য’, ‘ইন্দিরার শিল্পপ্রীতি’, ‘মাস্টারমশাই নন্দলাল’ ও ‘বাদশা খাঁর সঙ্গে পাঁচ দিন’ সম্পর্কিত লেখা। বস্তুত ‘দিনলিপি: পোল্যান্ড ও কাবুলে ১৯৬৫’ এবং ‘বাদশা খাঁর সঙ্গে পাঁচ দিন’— লেখাদুটি অন্য লেখাগুলির তুলনায় নিষ্প্রভ মনে হয়েছে।
শঙ্খ চৌধুরীর ছেলেবেলার বেশির ভাগটাই কেটেছিল সাঁওতাল পরগনার দেওঘরে দিদিমার সংসারে। দাদাবাবুকে মনে নেই, তবে তাঁর সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছেন মা আর মাসির কাছ থেকে। দাদাবাবুর নানান শখের মধ্যে ছিল একটা পাখির এ্যালবাম — নাম ছিল —‘বার্ডস অব ইন্ডিয়া’। মাঝে মাঝে সিল্কের ধুতি পরতেন, আর নিজে ফিটন চালিয়ে বেড়াতে যেতেন। দাদাবাবু স্কেচ করতেও পারতেন। শঙ্খ চৌধুরীর দেশ ছিল পাবনা জেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। ঠাকুরদা ছিলেন সেখানকার একজন ছোটখাটো জমিদার। অবশ্য জমিদার হলেও, আড়ম্বর বা বিলাসিতার লক্ষণ তেমন ছিল না। সদয় নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। পড়াশোনা নিয়ে থাকতেন। বাড়িতে ছিল দুখণ্ড সংস্কৃত রামায়ণ আর দশ খণ্ড মহাভারত।
শঙ্খ চৌধুরীর স্কুলজীবন শুরু হয় ঢাকার আরমানিটোলা স্কুলে। শঙ্খর বাবা আইন পাশ করে মুনসেফ হয়েছিলেন। অসহযোগ আন্দোলনের সময় চাকরি ছেড়ে ওকালতি শুরু করেন। বাড়িতে ছিল স্বদেশি হাওয়া। খদ্দরের পোশাকের চল ছিল বেশি। শঙ্খর মা খুবই শৌখিন বাড়ির মেয়ে হলেও খদ্দর পরতে গৌরব বোধ করতেন। মাসে প্রায় একবার আপত্তিকর বই বা চিঠির সন্ধানে পুলিশ বাড়ি তল্লাশি করতে আসত। বাড়িতে মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য ছোরাখেলা, লাঠি খেলার ক্লাস হত। স্বদেশি প্রভাবে সুতো কাটা, রাজনৈতিক সভায় যাওয়া আবশ্যিক কর্তব্য ছিল। শঙ্খর মা খুব পড়াশোনার চর্চা রেখেছিলেন। ইতিহাসের প্রতি অসম্ভব আগ্রহ। বাড়িতে ছিল প্রত্যেক জেলার ইতিহাসের সংগ্রহ। শঙ্খর বাবা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ঢাকা শাখার সম্পাদক ছিলেন। বাড়িতে ছিল একটা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। আসতেন বুদ্ধদেব বসু, অজিত দত্ত, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ সাহিত্যিকরা। মণীশ ঘটকের উৎসাহে বেরিয়েছিল হাতে-লেখা পত্রিকা ‘ফসল’। এছাড়া ঢাকার বাড়িতে ছিল সংগীতপ্রিয়তার আবহাওয়া। দিদিরা সেতার ও গান শিখতেন।
শঙ্খ চৌধুরী শারীরিক অসুস্থতার জন্যে বহুদিন স্কুলে যেতে পারেন নি, তাই নিত্যদিনের কাজ ছিল বাবার অফিস ঘরের দেওয়ালে টাঙ্গানো একটা ছবি দেখে প্যাস্টেল রং দিয়ে ছবিটার কপি করা। আঁকার প্রতি তাঁর এই আগ্রহ দেখে বড়দাদা শচীন চৌধুরী কিনে দিয়েছিলেন অনেক ছবির বই। সেই ছবির পাতা উলটিয়ে উলটিয়ে বাস্তব জগৎ থেকে সরে গিয়ে বেশি দিন কাটিয়েছেন রং-তুলির জগতে। শঙ্খর বয়স যখন আট-নয় বছর তখন রবীন্দ্রনাথ একবার ঢাকায় এসেছিলেন। শঙ্খর বেশ মনে পড়ে নিজের আঁকা ছবির একটা এ্যালবাম নিয়ে ‘তোরাপ’ লঞ্চে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, মনে পড়ে সেদিনের রবীন্দ্রনাথের কথাগুলোও— ‘তুমি নিজে আঁকতে ভালোবাসো, না সবাই তোমায় ভালো ভালো আঁক বলেন বলে আঁক? মাস্টাররা বড় নির্মম হন। ওদের কথা শুনিস না। যা ভালো লাগবে তা-ই করবি।’ সেদিন কবিগুরুর এই কথাগুলো শঙ্খর মনে হয়তো মৃদু আলোড়ন তুলেছিল। শঙ্খ চৌধুরীর দেশের বাড়িতে দুর্গাপূজা হত। ‘পালেরা’ আসত মূর্তি গড়তে। মাঝে মাঝে লুকিয়ে ওদের তৈরি মাটি চুরি করে শঙ্খ নেহাতই পুতুলের মতো বানাতেন খরগোস, হরিণ ইত্যাদি। এসব কাজে শঙ্খর আগ্রহ দেখে বাড়ির গুরুজনেরা ঠিকই করে ফেললেন শঙ্খ শিল্পী হবে। তাই ম্যাট্রিক পাশ করার পর শঙ্খ চলে এলেন শান্তিনিকেতনে, সেই ১৯৩৫ সাল থেকেই ঢাকার সঙ্গে সম্বন্ধ ক্ষীণ হয়ে এল।
‘শান্তিনিকেতন’ অধ্যায়ে ছড়িয়ে আছে শঙ্খ চৌধুরীর নানা স্মৃতির টুকরো— সেই প্রথম শান্তিনিকেতনে আসা, গরুর গাড়ি করে লাল কাঁকরের রাস্তা দিয়ে শহর ছাড়িয়ে ভুবনডাঙ্গার মাঠ পার হয়ে আশ্রমে আসা। তারপর তো কলেজ জীবন, হস্টেলে থাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে চড়ুইভাতি, নাটক, গান, আবৃত্তি, ভুবনডাঙ্গার পুকুরে ওয়াটারপোলো খেলা, বিশ্বভারতীতে প্রথম ছাত্র বিক্ষোভ, কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতানৈক্য ও মীমাংসা, গুরুদেবের ‘স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফান্ড’ তোলার জন্য মেলার আয়োজন— সবকিছু মিলেমিশে এক প্রাণবন্ত সময়প্রবাহের নিটোল ছবির ক্যানভাস আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন। শঙ্খ চৌধুরীর সঙ্গে গুরুদেবের পরিচয় নাটক করা নিয়ে। তিনি লিখেছেন ‘আমি কলেজে পড়ি কি না, কলাভবনের ছাত্র কি না, সেটা বোধহয় খুব এসে যেত না। আমি গানের দলে থাকি, নাটক করতে পারি, আবৃত্তি করতে পারি, এইগুলোই বোধ হয় ওঁর (রবীন্দ্রনাথের) কাছে বেশি প্রিয় খবর।’ শান্তিনিকেতনে গুরুদেবের পরেই শঙ্খর আদর্শ মানুষ ছিলেন মাষ্টারমশাই নন্দলাল বসু।
শঙ্খ চৌধুরী যখন শান্তিনিকেতনের ছাত্র, তিনি লক্ষ্য করছেন সেসময় বাঙালি তেমন ছিল না, বাঙালিরাও বেশির ভাগই প্রবাসী বাঙালি। কলেজ ও কলাভবনে বেশ কয়েকজন ইন্দোনেশিয়ান, সিংহলি, গুজরাটি ও সিন্ধ্রি ছাত্র ছিল। কলেজের ফি ছিল পঁচিশ টাকা, আর সেটা খাওয়াদাওয়া, মেডিকেল ফি, খেলার খরচ এমনকি ধোপা-নাপিতের খরচ সমেত। জিনিসের দামও অনেক কম। মনে পড়ে হস্টেলের কাছে রাস্তার ধারে গৌরের রসগোল্লার দোকান। দু-পয়সায় একটা।
শান্তিনিকেতনে কলেজ ও কলাভবন মিলিয়ে প্রায় বারো বছরের যাপন শঙ্খ চৌধুরীর। তিনি বলেছেন— ‘এখানেই আমার শিল্পাদর্শের প্রথম অধ্যায়ের শুরু। … ওখানকার লাল কাঁকরের রাস্তা, সাঁওতালদের নাচ, ওদের বাড়িঘর, ভেজা ঘাসের গন্ধ, কেয়া ফুল, খোয়াই— সবকিছুর মধ্যে কী মাদকতা যে ছিল, আর সেটা এত নিঃশব্দে আমাদের চাওয়া-পাওয়ার মূল্যবোধকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, মনে হয় সেটাই শিক্ষার বা বড়ো হয়ে ওঠার এক মাপকাঠি।’ অন্যান্য আর্ট স্কুলের তুলনায়, বিশেষ করে কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলের তুলনায় শান্তিনিকেতন ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। এই নতুন ভাবনা, চিন্তাধারা ও চেতনার জন্যই শান্তিনিকেতনে এক নতুন আঁকার স্টাইল গড়ে উঠেছিল। এই সময় মাস্টারমশাই নন্দলাল বসু পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন রামকিঙ্করের সঙ্গে আর শঙ্খ চৌধুরী দেখেছিলেন রামকিঙ্করের সেই প্রাণঢালা কাজ— প্যাস্টেল দিয়ে আলাউদ্দিন সাহেবের পোর্ট্রেট, সার্কাস দলের জন্তু জানোয়ার, হাতি, ঘোড়া দেখে সারাদিন পাগলের মতো দুপুর রৌদ্র, ধুলোর তোয়াক্কা না করে স্কেচ করে যাওয়া আর সেগুলো একে ওকে বিলিয়ে দেওয়া। রামকিঙ্করই প্রথম শান্তিনিকেতনে ভাস্কর্যে সিমেন্টের ব্যবহার শুরু করেন। রামকিঙ্করের প্রথম বাইরে রাখার জন্যে কাজ সাঁওতাল দ্বারপাল রিলিফ। শ্যামলীতে ঢোকার দু-ধারে এখনও আছে। অবশ্য এখন আলকাতরার প্রলেপে আসল সৌন্দর্য প্রায় লোপ পেয়েছে। রামকিঙ্করের বিশেষত্ব ওঁর পোর্ট্রেটগুলো। সেখানে ত্বকের মসৃণতা থেকেও তার structure-এর দৃঢ়তা আর texture-ই বেশি প্রাধান্য পায়। মনে রাখা দরকার, রামকিঙ্কর পয়সার জন্যে কোনো পোর্ট্রেট করেন নি, আর মডেল হিসেবেও এমন লোক বাছাই করতেন যাদের পোর্ট্রেট করা খুব সহজ নয়। রবীন্দ্রনাথের জীবিতকালে ওঁর মুখের ভাঙাচোরা আর বিমূর্ত গড়ন করার সাহস একমাত্র রামকিঙ্করেরই ছিল। এছাড়া, ‘সাঁওতাল পরিবার’, ‘কলের বাঁশি’, ‘ধান ঝাড়া’-র মতো ভাস্কর্য রামকিঙ্করের নিষ্ঠা ও অমানুষিক পরিশ্রমের ফসল। তখনকার শান্তিনিকেতনের মাস্টাররা নিজেদের mural বা sculpture করার জন্য কখনো টাকার প্রত্যাশা করতেন না। রামকিঙ্করও টাকার অভাবে বা যথাযথ সামগ্রীর অভাবে কখনও কাজ বন্ধ রাখেন নি। অয়েলপেন্টিং বা তেলরঙের কাজের ক্ষেত্রেও তাই। সাঁওতালদের দসুতি চাদর ফ্রেমে এঁটে একটা ছোট টেবিলকে প্যালেট করে বাজারে কেনা রং তিসির তেলে গুলে উনি অভাব মিটিয়েছেন। এসব কাজ করতেন নিতান্ত নিজের প্রয়োজনে, নিজের ঘরে, এবং লোকচক্ষুর আড়ালে। এগুলো কলাভবনের আদর্শে আঁকা নয়, তাই এসব নিয়ে কোনো আলোড়ন ওঠেনি। শঙ্খ চৌধুরী লিখেছেন তাঁদের ছাত্রাবস্থায় রামকিঙ্করের কোনো ছবি কলাভবনে দেখানো হয়নি, কোনো প্রদর্শনী হয়নি, আর বিক্রির তো প্রশ্নই ওঠে না। অথচ ১৯৫০ সালে প্যারিসের Realite Nouvelle নামে এক শিল্পগোষ্ঠীর আমন্ত্রণে রামকিঙ্করের কয়েকটা ছবি ওদের প্রদর্শনীতে দেখানো হয়। গোষ্ঠীর প্রধান উদ্যোক্তা মঁশিয়ে বেওতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রামকিঙ্করকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। স্বভাব চরিত্রে আপনভোলা রামকিঙ্করের বিষয়আশয় যেমন থাকত, হয়তো বা কোনো আবর্জনার সঙ্গে সে চিঠিও চলে গেছে।
শঙ্খ চৌধুরী রামকিঙ্করের জীবনের যে ছবি তুলে এনেছেন, বোঝা যায় কি অপরিসীম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জড়িয়ে ছিল রামকিঙ্করকে নিয়ে। দেখেছেন কাজের সব থেকে ফলপ্রসূ সময়ে রামকিঙ্কর দিন কাটিয়েছেন আশ্রমের পুবদিকে শৈল বৌঠানের একটা ঘরে, দীর্ঘদিন ছিলেন সংগীত ভবনের সামনে জমাদারের পরিত্যক্ত একটি ঘরে। এই ঘরেই সিল্কের ওপর জুতোর ব্রাশ দিয়ে এঁকেছিলেন সাঁওতাল দম্পতি। কিঙ্করদার জীবনপ্রণালী, আঁকার পদ্ধতি বা বিষয়বস্তু কোনোটাই তখনকার শান্তিনিকেতনের মাপকাঠি অনুযায়ী ছিল না। এটা মানতেই হবে শান্তিনিকেতনে আর্টের জগতে এক নতুন স্পন্দন এনেছিলেন রামকিঙ্কর। ইতিহাস ও পুরাণের ছবি বাদ দিয়ে চারদিকের আবহাওয়া থেকেই খোরাক জুটিয়ে নন্দলালের ছাত্ররা বিশেষ করে রামকিঙ্কর ও বিনোদবিহারী এক স্বতন্ত্র প্রকাশভঙ্গি বা স্টাইল গড়ে তুলেছিলেন। তেলরং নিয়ে রামকিঙ্করের experiment শান্তিনিকেতনের শিল্পগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি। এসব ছবি ওঁর ঘরেই স্তূপ হয়ে পড়ে থাকতো— যার যা ভালো লাগত অনায়াসে তাকে দিয়ে দিতেন আর বাকি সব উই-এর বাসায় পরিণত হত। আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর্যের পথপ্রদর্শক রামকিঙ্করের জীবন শান্তিনিকেতনে খুব একটা সহজ ছিল না। ছিল কুলীনত্বের অভাব। নিজেকে অন্যদের সমকক্ষ করে নেবার জন্যে মনের মতো পড়াশোনা করেছেন। বার্নার্ড শ’র উক্তি আওড়াতেন। মনে ধরেছিল নিৎসের চিন্তাধারা। শঙ্খ চৌধুরী সঠিক ভাবেই উপলব্ধি করেছেন এ দুর্ভাগা দেশে শিল্পের উৎকর্ষ হলেই বিদগ্ধ সমাজের প্রশংসা বা সহানুভূতি পাওয়া যায় না। কুলীনত্বের অভাবে এক অদৃশ্য অবরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছে রামকিঙ্করকে একাধিক বার। একটা মানসিক পীড়ন তো ছিলই। ফলে শান্তিনিকেতনের সুধী সমাজ থেকে তিনি ক্রমশই দূরে চলে গিয়েছিলেন। ভারতের প্রবাদপ্রতিম ভাস্কর রামকিঙ্করকে অপাঙক্তেয় লেকচারার হয়ে থেকে যেতে হয়েছিল জীবনের ষাট বছর বয়স পর্যন্ত। এ লাঞ্ছনা থেকে রেহাই দেয় গ্রান্টস কমিশন, উপযাজক হয়ে।
১৯৪২-এর আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন শঙ্খ চৌধুরী। শঙ্খ চৌধুরীর এ ধরনের ভূমিকায় রামকিঙ্কর খুব একটা সন্তুষ্ট হন নি। তাঁকে বলেছিলেন, ‘এসব আমাদের কাজ নয়। আমরা আর্টিস্ট। আমাদের জবাব অন্যরকম হবে।’ শঙ্খর মনে পড়ে, প্রায় দুবছর পর, যখন তিনি কলকাতা থেকে আবার ফিরে এসেছিলেন শান্তিনিকেতনে, দেখেছিলেন ‘কিঙ্করদার বিরাটকায় ক্যানভাস, একটা লোক খিদের জ্বালায় গাছের ডালে ফাঁস দিয়ে ঝুলচে— পায়ের নীচে মা ও এক ছেলে, হাতে ভিক্ষাপাত্র, আর গাছের গায়ে এক পোস্টার “Support War Efforts”.' রামকিঙ্করের এই ধরনের ছবি দেখে শঙ্খ চৌধুরীর মনে হয়েছিল সম্ভবত এটাই আমাদের দেশে প্রথম সোশ্যাল রিয়ালিজমের শুরু।
শঙ্খ চৌধুরীকে কিছুদিন আলিপুর ও দমদম জেলে থাকতে হয়েছিল। দমদম জেলে থাকার সময়ে, তিনি যে একজন আর্টিস্ট, জেল কর্তৃপক্ষ একথা জানার পর বাড়ি থেকে ছবি আঁকার জন্যে রং, কাগজ এসব আনার অনুমতি দিয়েছিলেন। দুর্গাপুজোর সময় জেলে বসেই ক্যারাম বোর্ডের পিছন দিকটাকে কাঠামো বানিয়ে মাটি লাগিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘মহিষমর্দিনী’। শঙ্খর মনে পড়ে, জেলেই পরিচয় হয়েছিল স্বনামধন্য সন্ত্রাসবাদী কিরণ মুখার্জির সঙ্গে। এই মানুষটিই শঙ্খ চৌধুরীকে বলেছিলেন ‘আপনার কি মনে হয় না যে, দেশের জন্যে কারাবাস করা একটা গৌরবের জিনিস? এটা তো আমাদের তীর্থস্থান।’ পরিচয় হয়েছিল প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ অধ্যাপক নির্মলকুমার বসুর সঙ্গে। উনি বোলপুরে সমাজের অনুন্নত শ্রেণির ছেলেমেয়েদের জন্যে একটা স্কুল করেছিলেন। আর কয়েকজনকে ‘অ্যানথ্রোপলজি’র বই পড়ে শোনাতেন। শঙ্খ চৌধুরী শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন ১৯৩৫ সালে, ওখান থেকেই মিরাট কংগ্রেসে অলংকরণের ডাক পেয়ে শান্তিনিকেতন ছেড়েছিলেন ১৯৪৬ সালে।
শঙ্খ চৌধুরীর শিল্পশিক্ষার দ্বিতীয় অধ্যায় বিদেশে। মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল হেনরি মুর, জেডকিন (Ossip Zadkine), ব্রাকুসি (Constantin Brancusi) প্রমুখ বিদেশি প্রতিভাবান শিল্পীদের কাজ নিজের চোখে দেখা। বইয়ে ছাপানো দু-একটা কাজ দেখলে ঠিক বোঝা যায় না বিদেশে ভাস্কররা কিভাবে নিজেদের পথ বেছে নিয়েছেন। এসব ভাস্কর ও শিল্পীদের কাজ দেখার পর শঙ্খর বার বারই মনে হয়েছে, রামকিঙ্করের মতো প্রতিভা যদি বিদেশে জন্মাত, তাঁর কত খ্যাতি আর প্রচার হত। বিদেশে শঙ্খ চৌধুরী এক অভিনব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। এখানে শিল্পীদের প্রেরণার জন্য আকাঙ্ক্ষা নেই। ছবি আঁকা বা স্কাল্পচার করা অফিস করারই মতো। সবাই অন্তত দশটা-পাঁচটা কাজ করে, কোনটা ভালো হল বা মন্দ হল সেসব গ্যালারির লোক বুঝবে। যদি ভালো হয় বিক্রি হবে। নাহলে পড়ে থাকবে। ওদের ধর্ম ছবি আঁকা বা মূর্তি গড়া।
শঙ্খ চৌধুরী লিখেছেন ১৯৫০ সালে প্যারিসে প্রায় পঞ্চাশ হাজার আর্টিস্ট আর ১২০টা আর্ট গ্যালারি, বা ছবি দেখানোর ও বিক্রি করার জায়গা। ওই দেশে আট-দশ জন আর্টিস্ট নিজেদের ছবি বিক্রি করে জীবনযাপনে সক্ষম, আর বাকি সবাই কিছু না কিছু হাতের কাজ করে কোনোমতে খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করে নেয়। আসলে বিদেশে আর্টিস্টরা সম্পূর্ণ ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। খুব কম খরচে সাধারণ জীবনযাত্রা, সব সঞ্চয় ছবির কাগজপত্তর কেনার জন্য ব্যয় করা। বিদেশে থাকার সময় শঙ্খর মনে হয়েছে আমাদের দেশে শিল্পকে জীবনের কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা খুব সহজ নয়। কিন্তু বিদেশের আর্টিস্টদের ব্যক্তিগত প্রকাশভঙ্গি, লড়াই, গ্যালারির ক্রেতাদের পছন্দসই না হলেও হাজার অনশন সহ্য করে বা ত্যাগ স্বীকার করার মত মানসিক শক্তি ছিল।
১৯৪৫ সালে নেপাল সরকারের আমন্ত্রণে রামকিঙ্কর নেপালে গিয়েছিলেন, সঙ্গে ছিলেন শঙ্খ চৌধুরী। কাজটা ছিল ওখানকার প্যারেড গ্রাউন্ডের চারদিকে চারটে পরম বিক্রমবাহু সৈন্যের চারটে মূর্তি নির্মাণ। দুটি করবেন কলকাতার ভাস্কর, আর দুটি করবেন বিশ্বভারতীর শিল্পী অর্থাৎ রামকিঙ্কর। নেপালের অভিজ্ঞতা ভালো ছিল না, দুটি মূর্তির সিমেন্ট ঢালাই হওয়ার পরেই নানা কারণে রামকিঙ্কর ধৈর্য হারালেন। মোল্ড ঢালাই শেষ হবার পর বাকি কাজ শঙ্খর ওপর ভার দিয়ে রামকিঙ্কর ফিরে এসেছিলেন। শঙ্খ তারপর কলকাতার ভাস্কর সুনীল সেনদের কাছে চলে গিয়েছিলেন। নেপালেই শঙ্খ এক বৃদ্ধ কারিগরের কাছে শিখেছিলেন মোম দিয়ে মূর্তি গড়ার কৃৎকৌশল। শান্তিনিকেতনের সংগ্রহশালা সমৃদ্ধ করার অভিপ্রায়ে শঙ্খ চৌধুরী নেপাল থেকে ফেরার সময় নেপালের কিছু মূর্তি, বিশেষ করে নেপালের নিজস্ব রীতির কিছু ঢালাইয়ের কাজ নিয়ে ফিরেছিলেন।
শুধু নেপাল নয়, শঙ্খ চৌধুরী পোল্যান্ড, কাবুল ও রাশিয়ায় ঘুরে এসেছিলেন। সঞ্চয় করেছিলেন অজস্র অভিজ্ঞতা। দেখেছিলেন ওয়ারশ-র মিউজিয়াম কর্মী বা গাইড, সব ফাইন আর্টস গ্রাজুয়েট। রাশিয়ায় ভারতবাসী সম্বন্ধে উৎসাহ ও কৌতূহল দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন শঙ্খ চৌধুরী। রাশিয়া থেকে এসেছিলেন কাবুলে। পরিচয় হয়েছিল আব্দুল গফফর খাঁর সঙ্গে। গফফর খাঁকে সবাই বাদশা খাঁ বলত। আব্দুল গফফর খাঁর পুত্র গনি খাঁ একসময় কলাভবনে কিছুদিন ছিলেন। রামকিঙ্করের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব ছিল। সে সূত্রে শঙ্খ চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয়। তখন শঙ্খ গনি খাঁকে কথা দিয়েছিলেন তাঁর বাবার মূর্তি--শুধু মাথাটি তৈরি করবেন। কাবুলে এসে সেই সুযোগ প্রায় হাতের মুঠোয়। কিন্তু কাবুলে মাটি জোগাড় করা দুরূহ ব্যাপার। যাইহোক অবশেষে মাটি জোগাড় হল। শুরু হল কাজ। গফফর খাঁ এতই লম্বা যে উনি চেয়ারে বসে থাকলেই দাঁড়িয়ে প্রায় eye level পাওয়া সম্ভব। ওঁর খুব একটা sitting নেওয়া সম্ভব হয়নি। তিন দিনের চেষ্টায় মাটির কাজ শেষ হল। ঢালাই করার মত প্লাস্টারের অভাব। ঢালাই না করে মোল্ডটাকে ইলেকট্রিকের উত্তাপে দুদিন শুকিয়ে ভালো করে প্যাকিং করে আফগান এয়ারওয়েজে সরাসরি দিল্লি। তারপর বরোদায় পৌঁছে ওটা ব্রোঞ্জে ঢালাই করেছিলেন। দিল্লিতে আব্দুল গফফর খাঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘নেহেরু মিউজিয়াম ও লাইব্রেরি’র তরফ থেকে এক সেমিনার ও ফটোগ্রাফের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। শঙ্খ চৌধুরীর তৈরি আব্দুল গফফর খানের ওই ব্রোঞ্জ মুখমণ্ডলটি সেমিনারের প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছিল।
শঙ্খ চৌধুরী আন্তরিকতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন ইন্দিরা গান্ধীর শিল্পপ্রীতি। ইন্দিরার সঙ্গে শঙ্খ চৌধুরীর প্রথম যোগাযোগের সূত্র হায়দরাবাদ ভবনে হাণ্ডিক্র্যাফটস বোর্ডের প্রথম প্রদর্শনী উপলক্ষে। এগজিবিশন ম্যাট, পটারি ও পুতুল নিয়ে। প্রদর্শনী সাজানোর দায়িত্ব আসে শঙ্খর ওপর। শঙ্খর ইচ্ছে ছিল জয়পুর ও রাজস্থানের মিউজিয়াম থেকে পুরোনো পটারির কিছু জিনিস প্রদর্শনীতে দেখানো। এ বিষয়ে ইন্দিরা গান্ধী কি বলেছিলেন শঙ্খর মনে নেই, কিন্তু কয়েকদিন পর দেখা গেল বেশ কয়েক জায়গা থেকে অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস এসে জমা হয়েছে। সেই প্রদর্শনীতে ইন্দিরা প্রথম দিন আসেন নি। ইন্দিরার একটা বৈশিষ্ট্য ছিল যে কোনো প্রদর্শনীতে ওনাকে ডাকলে তিনি প্রায়ই আসতেন, কিন্তু কখনো প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে চাইতেন না। ট্রাইবাল আর্টের প্রতি ইন্দিরার প্রবল অনুসন্ধিৎসার বহিঃপ্রকাশ দিল্লিতে প্রথম ট্রাইবাল আর্টের প্রদর্শনী। প্রদর্শনীটি তাঁরই উদ্যোগে হয়েছিল। দিল্লির গরহি গ্রামে দিল্লির আর্টিস্টদের জন্য ১২টি স্টুডিও নির্মাণ সম্ভব হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীর প্রচ্ছন্ন আনুকূল্যে। ইন্দিরার সবথেকে বড় গুণ, যাকিছু কাজ করতেন কাউকে বুঝতে দিতেন না। সবকিছুই পর্দার আড়াল থেকে। ১৯৮০ সালে শঙ্খ চৌধুরী যখন দার-এস-সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর অফ ফাইন আর্টস হিশাবে যোগ দিতে যাচ্ছেন, তার আগের দিন তিনি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বিদায় নিতে গিয়েছিলেন, সেদিন ইন্দিরা শঙ্খ চৌধুরীকে বলেছিলেন ‘তোমার মতে আমার যা করা উচিত, যখন খুশি আমায় লিখো। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করব।’ শঙ্খ উত্তরে বলেছিলেন তাঁর স্বপ্ন ‘মিউজিয়াম অফ ম্যান’ গড়ে তোলার কথা। সেই ‘মিউজিয়াম অফ ম্যান’ স্বশাসিত সংস্থা হিশাবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল এবং শঙ্খকে তার মধ্যে রাখা হয়েছিল। শঙ্খর বুঝতে অসুবিধা হয়নি এই ঘটনার নেপথ্যে কার ভূমিকা! কোনো দায়বদ্ধতায় নয়, শুধু ভালোবাসায় আর শ্রদ্ধায় শঙ্খ চৌধুরী যখন কয়েকদিন তিনমূর্তি ভবনে ছিলেন, তখন মাটি জোগাড় করে ইন্দিরার একটা মূর্তি গড়েছিলেন, বহু বছর পর ওই মূর্তিটা পাথরে খোদাই করেছিলেন। ওটা পাবার পর ইন্দিরা এক ছোট্ট চিঠিতে শঙ্খকে লিখেছিলেন, ‘The occasion deserves a bottle of champagne which, also, is not available in the country.’
‘মাষ্টারমশাই’ অধ্যায়ে শঙ্খ চৌধুরী লিখেছেন, নন্দলালের সময়ে শান্তিনিকেতনের পরিবেশ ও ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল সহজ ও হার্দিক। শান্তিনিকেতনে সবাই আসত মাস্টারমশাই অর্থাৎ নন্দলাল বসুর সান্নিধ্য লাভের আশায়। শুধু কাজ শেখা নয়, যারা আসত তারা সবাই মাস্টারমশাইয়ের সংসারের অংশ হয়ে উঠত। শঙ্খ চৌধুরী লিখেছেন— ক্লাসের কাজ ছাড়াও, ছাত্রদের নানারকম সুখ-দুঃখের দায়দায়িত্ব স্বেচ্ছায় বহন করতেন নন্দলাল। কলাভবন, তার বইপত্তর, জিনিস কেনাকাটা, বাগান পরিচর্যা সবই নিজে দেখাশোনা করতেন। তখন শান্তিনিকেতনের শিক্ষাপদ্ধতি শুধু ক্লাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, গানে, নাচে, নাটকে, মঞ্চসজ্জায়, ছবি আঁকায়, মূর্তি-গড়ায় আর শিক্ষকদের নিবিড় সান্নিধ্যে ছাত্ররা নতুন অভিনব আদর্শে মানুষ হত। শঙ্খ চৌধুরীর মনে হয়েছিল, কলাভবনে নন্দলালের শিক্ষাপদ্ধতি ছিল আধুনিক এবং আদর্শস্থানীয়। ছেলেদের ক্ষমতা এবং প্রয়োজন বুঝে কাজ করতে দিতেন তিনি। ছাত্রদের নিজস্ব ঢঙে কাজ করার জন্যে উৎসাহ দিতেন। নন্দলাল বলতেন ‘আমি ট্যালেন্টে বিশ্বাস করি না। নিষ্ঠা আর শ্রদ্ধা আমার কাছে বেশি বাঞ্ছনীয় বলে মনে হয়।’ নন্দলালের অভিমত ছিল ছবি আঁকা শেখানোর বিষয় নয়, যারা কাজ শিখতে চায়, তাদের বিপথে যাবার থেকে বাঁচানোই শিল্প শিক্ষকের কাজ। নন্দলাল যে শিল্পাদর্শ, যে শিক্ষাপদ্ধতি, যে নিজস্ব শৈলী গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন, অমন আর একটা দৃষ্টান্ত দেখা যায়নি বলেই শঙ্খ চৌধুরীর অভিমত। জীবনের পড়ন্ত বেলায়, শঙ্খর মনে হয়েছিল, হয়তো কোনো সুকৃতি ছিল যার জন্যে তিনি নন্দলালের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছিলেন, পরিচয় হয়েছিল বিনোদবিহারী, রামকিঙ্করের মতো শিল্পীদের সঙ্গে, তা না-হলে জীবনটা হয়তো অন্যরকম হত। আরেক রকম।
রবীন্দ্রনাথের কলাভবনের সূচনা ১৯১৯ সালে। রবীন্দ্রনাথ শুরু থেকেই তাঁর সাধনার এই শিল্পসংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রটিকে অন্যান্য আর্ট কলেজের থেকে একটু অন্যরকমভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। শিল্পশিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ছুঁতমার্গ নয়, কোনো বিশেষ আদর্শের প্রতি অন্ধ আনুগত্য নয়, প্রাণের আবেগের অবিরল উন্মোচন, পূর্ব-পশ্চিমের খোলা বাতাস যেন এই প্রাঙ্গণকে সজীব ও প্রাণবন্ত রাখে এই ছিল কবির বাসনা। শান্তিনিকেতন ও কলাভবন ঘিরেই মুলত শঙ্খ চৌধুরীর নানা স্মৃতির উন্মোচন ও তার আশ্চর্য বুনন নিয়েই তাঁর ‘স্মৃতি বিস্মৃতি’ গ্রন্থটি।