• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৭ | জুলাই ২০২২ | গল্প
    Share
  • জুডি হাডসন হত্যা রহস্য : পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

    ১)

    শনিবার হাফ ছুটির পর অফিস থেকে বেরোব বেরোব করছি, সেইসময় অধীরদার ফোনটা এল, “অতনুদা, ‘বেলা শুরু’ ছবিটা বেশ ভালো হয়েছে শুনছি, দেখবেন নাকি আজকে? হাতিবাগানের, ‘মিনার’ সিনেমা হলে পাঁচটায় শো। এখন দেড়টা বাজে, আপনার তো ছুটি হয়ে গেছে, আর ট্যাংরা থেকে হাতিবাগান, ‘আর্সানাল’ রেস্তোরাঁয় পৌঁছতে আপনার আধ ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়, আমিও ধর্মতলা থেকে মোটামুটি ওই সময়ে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি। আশা করি, দুপুরে আর্সানালের বিরিয়ানি, চাপ খেতে আপনার আপত্তি হবে না। আপনি বাড়ির ব্যাপারটা ম্যনেজ করুন, আমি ওদিকে সিনেমার টিকিটের ব্যবস্থা করে ফেলছি। তারপর জমিয়ে পেট পুজো করে, হলে ঢুকব। আর রবিবারের সকালে আপনার জন্য আরও সুখবর অপেক্ষা করছে, সেটাও বেলা শেষে, মানে বেলা শুরু দেখে বেরিয়েই নয় খোলসা করব।” শনিবার আমার আর অধীরদার, দু’জনেরই হাফ ছুটি। আমরা মাঝে মাঝেই শনিবারের হাফ ছুটির পর এ ধরনের অভিযানে বেরিয়ে পড়ি। তার আগে অবশ্যই আমাদের নিজ নিজ গিন্নিদের ম্যানেজ করতে হয়, মানে ওঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে শনিবারেও দেরি করে বাড়ি ফেরার অনুমতি আদায় করতে হয়। বিবাহিত পুরুষ মানেই তো ব্যাপারটা বোঝেন, আর যেখানেই চলুক, সংসারে সিংহবিক্রম দেখানো চলে না, চল নেই আর কী। ওখানে সিংহীর ইচ্ছে মতন নিজেকে চলনসই করে রাখাটাই দস্তুর। ও বিষয়ে আমি এবং অধীরদা, দু’জনেই রীতিমতন অভিজ্ঞ। আমি বললাম, “অধীরদা, আমার আজকে ম্যানেজ করার কিছু নেই। গিন্নির এক বন্ধু এসেছেন দিল্লি থেকে, আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে মিট করবে কোনও এক শপিং মলে, ফিরতে রাত হবে। আমি আজকে ঝাড়া হাত পা।” বলেই হঠাৎ মনে পড়ে গেল, আমার কোনও কিছু পছন্দ না হলেই, গিন্নি আমাকে বলেন, “পাজির পা ঝাড়া।” অধীরদাকে সেটা বলে ফেলা মানে, লুজ বল দেওয়া। পরে উনি সুযোগ বুঝে সে বল বাপি বাড়ি যা করে দেবেন। তাই বেমালুম চেপে গিয়ে শুধোলাম, “তা আপনি আজকে বৌদিকে কী বলে বাড়িতে দেরি করে ফেরার টিকিট আদায় করবেন শুনি? না হলে তো, ‘বেলা’ শুরুর আগেই ‘বেলা’ শেষ হয়ে যাবে।” আমি বেলাবেলিই আমার সন্দেহ প্রকাশ করি। এ বেলা সেটা করে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ অতীতে বেশ কয়েকবার বৌদি মানে অধীরদার স্ত্রী, অধীরদার এই শনিবারের হাফ বেলাকে বাড়িয়ে নিয়ে পূর্ণ বেলা করার প্রচেষ্টায় পরিপূর্ণ জল ঢেলে দিয়েছেন; সেও একপ্রকার বেলে দেওয়াই যাকে বলে। অধীরদা বললেন, তিনিও আজকে মুক্তকচ্ছ, ওঁর গিন্নি, তার ভাইয়ের বাড়িতে গেছেন, রাতে ফিরছেন না।

    এক টুকরো মাটন আর্সানাল কাবাব, কাঁটায় গাঁথতে গাঁথতে বললাম, “রবিবারের সকালের সুখবরটা যে ডাবলিনের রহস্য পত্রিকা, দ্য ইনভেস্টিগেটরের আপনার ঠিকানায় ল্যান্ড করার সঙ্গে জড়িত, সেটা হলপ করেই বলতে পারি। তা, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দা চূড়ামণি, ‘মাইক ব্রিয়ারলি’ এ বার কোন রহস্য উদঘাটন করলেন? উল্টে পাল্টে দেখেছেন না কি সূচীপত্র?” রবিবারের সকালটা রহস্যের কোন গোলোকধাঁধায় ঘুরপাক খেতে হবে

    তার একটু হদিশ পেতে চাই বলে, প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিই আর কী।

    অধীরদা নির্মিলিত চক্ষে কাবাব চিবোতে চিবোতে বললেন, “জুডি হাডসন হত্যা রহস্য।” আমি বললাম, “নামটা কেমন শোনা শোনা মনে হচ্ছে?” অধীরদা, চোখ বোজা অবস্থাতেই বললেন, “ঠিকই ধরেছেন। গত সংখ্যায় প্রকাশিত, ‘এ বার নাটক এডিনবরায়’ কাহিনির শুরুতে ব্রিক্সটনের স্কুল শিক্ষিকা, জুডি হাডসনের হত্যা রহস্যর সমাধান করে এসেই মাইক ব্রিয়ারলি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে এসে সহকর্মীদের কাছে নিজের ঢাক পেটাচ্ছিলেন। মাঝখান থেকে ওঁর ধর্মপত্নী, লিলিয়ান ব্রিয়ারলির ফোনে রসভঙ্গ হওয়ায়, ব্রিয়ারলি সাহেবকে সহকারী রবার্টসনকে নিয়ে ছুটতে হয়েছিল এডিনবরায়, জেরেমি ক্রসের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের জন্য।

    তারপরের ঘটনা তো আমাদের জানা। সেই জুডি হাডসনের হত্যা রহস্য উদঘাটনের গল্পটাই এ বার ছেপে বেরিয়েছে।

    বাকিটা কালকে সকালের জন্য তোলা থাক। আপাতত বিরিয়ানি আর চাপের ধোঁয়া ওঠা প্লেট হাতে বেয়ারা সাহেব আমাদের টেবিলের দিকেই এগিয়ে আসছেন। ওইসব সুখাদ্যের সদ্ব্যবহার করি চলুন। তারপর, ‘বেলা শুরু’ দেখতে মিনার সিনেমা হলে ঢুকে পড়ব। ব্রিয়ারলি সাহেব, রবিবার সকাল অবধি অপেক্ষা করুন।” অগত্যা মধুসূদন, মোগলাই খানায় হাত লাগালাম।

    ২)

    দক্ষিণ লন্ডনের ব্রিক্সটন ডিস্ট্রিক্টে মেরে কেটে লাখ খানেক লোকের বাস। জনসংখ্যার বেশিরভাগই আফ্রো ক্যারিবিয়ান, তার মধ্যেও জামাইকানদের আধিপত্য চোখে পড়ার মতন। ব্রিক্সটন মূলত তার বাজার এবং খাবারের জন্য বিখ্যাত। এখানকার বিখ্যাত ইলেকট্রিক অ্যাভিনিউর

    বাজারে বোধহয় পৃথিবীর সমস্ত জায়গার জিনিস পাওয়া যায়, তবে সেখানেও আফ্রিকা আর ক্যারিবিয়ান জিনিস এবং খাবারের খ্যাতিই প্রধান। ব্রিক্সটনের আর একটা খ্যাতি তার লাইভ মিউজিক শো আর ক্লাব কালচারের জন্য। এত আলোর উলটো দিকটাও কিন্তু আমাদের গল্পের প্রধান উপজীব্য হতে চলেছে, সেটা হল ব্রিক্সটনের অপরাধমূলক কাজের গ্রাফটা অত্যন্ত উঁচু তারে বাঁধা। একাধিক কুখ্যাত ড্রাগ মাফিয়াদের গ্যাং ব্রিক্সটনে সক্রিয়। আর গ্যাং ওয়ার, খুন-জখম এখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। যৌন নিপীড়নমূলক কাজের হারও এখানে অত্যন্ত বেশি। এই ব্রিক্সটন হাই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষয়িত্রী হলেন, মিসেস জুডি হাডসন। হলেন না বলে ছিলেন বলাই সঙ্গত হবে, কারণ তিনি নিজ বাসভবনে খুন হয়ে গেছেন, তাঁর মৃতদেহ দেখে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান তিনি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।

    এক দমে পড়ে গিয়ে অধীরদা সিগারেট ধরানোর জন্য থামলেন। আমার দিকে একটা সিগারেট এগিয়ে দিয়ে বললেন, এ বার অফিসের কাজে যদি লন্ডনে যান, তবে ব্রিক্সটনটা একবার ঘুরে আসবেন। ভারতীয় ট্যুরিস্টরা খুব একটা ওদিকটা মাড়ায় না, কিন্তু ওখানকার মার্কেট প্লেস আর লাইভ মিউজিকাল শো দেখার মতন জিনিস। খাবারদাবারও মিস করবেন না, অত ভালো ক্যারিবিয়ান ফুড পুরো ইউরোপ খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। ব্রিক্সটনের কুখ্যাত গ্যাংস্টারদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই, ট্যুরিস্টদের নিয়ে মাথা ঘামিয়ে নষ্ট করার মতন সময় ওদের হাতে নেই, আর আপনি ড্রাগস সেবন করতে চাইলে তো, আপনার পোয়াবারো।

    আমি হেসে বললাম, “আমার ড্রাগস হচ্ছেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দা চূড়ামণি মাইক ব্রিয়ারলি, তাঁর সহকারী অ্যান্ড্রিউ রবার্টসন, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড প্রধান টনি অ্যাডামস এবং ব্রিয়ারলি পত্নী, লিলিয়ান ব্রিয়ারলিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গোয়েন্দা কাহিনি। ডাবলিন থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা, দ্য ইনভেস্টিগেটর সেই ড্রাগসের যোগান নিয়ে আপনার বাড়িতে ল্যান্ড করলেই আমি পাক্কা নেশারুর মতন আপনার বৈঠকখানায় এসে হাজির হই। নেশা জিনিসটা ঠিক একলা জমে না, তার জন্য আপনার মতন সুযোগ্য সঙ্গীর সাহচর্য প্রয়োজন। তা কী করে খুন হলেন জুডি হাডসন আর কী করেই বা সে তদন্তের ভার এসে পড়ল মাইক ব্রিয়ারলির কাঁধে?”

    ৩)

    অধীরদা শুরু করলেন, গত ৮ই এপ্রিল, শুক্রবার রাতে ব্রিক্সটন স্কোয়ারের বাসিন্দা মি. গ্যারি হাডসন তার কর্মক্ষেত্র থেকে রাত দশটা নাগাদ বাড়ি ফিরে আসেন। তিনি দরজার বেল বাজালেও কেউ দরজা খোলে না। বাড়ির বাসিন্দা মাত্র দু’জন, তিনি এবং তার স্ত্রী, জুডি হাডসন। তাদের একমাত্র পুত্র, দশ বছর বয়সী ফিল হাডসন, ম্যাঞ্চেস্টারের একটি বোর্ডিং স্কুলে থেকে পড়াশোনা করে। মিসেস হাডসন দরজা খুলছেন না দেখে গ্যারি ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখেন, জুডি তাদের শোবার ঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন, জুডির দেহে প্রাণ নেই। গ্যারি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে ফোন করেন। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান আততায়ী বাড়ির পেছনের বারান্দার কাচ ভেঙে বাড়িতে প্রবেশ করেছিল এবং জুডি যে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। জুডির অন্তর্বাস ছিল ছেঁড়া, দেহে একাধিক আঁচড়ের দাগ। বিছানার অবিন্যস্ত অবস্থা দেখে মনে হয়, জুডি লড়াই দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বারান্দা থেকে পুলিশ তিনটি খালি কার্তুজ উদ্ধার করে। জুডির মাথাতেও একটি গুলি করা হয়, সে গুলি মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে ঘরের দেওয়ালে আটকে যায়। এ ছাড়া শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্তর পরেই বোঝা যাবে। রাত সাড়ে আটটা থেকে দশটার মধ্যেই এত কাণ্ড ঘটে গেছে। কেননা বছর আটত্রিশের সুন্দরী শিক্ষয়িত্রী জুডির বাড়িতে সেদিনের সান্ধ্য পার্টিতে তার দুই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বারবারা ডেভিস, কেট স্কিভার এবং জুডির কাজিন, অ্যামি জোন্স রাত সাড়ে আটটা অবধি উপস্থিত ছিলেন; আর গ্যারি হাডসন বাড়ি ফিরে আসেন রাত দশটা নাগাদ। বারবারা ডেভিস আর কেট স্কিভারও জুডির মতন ব্রিক্সটন হাই স্কুলের শিক্ষিকা। অ্যামি জোন্স, জুডির মাসির মেয়ে এবং সবথেকে ঘনিষ্ঠ বান্ধবীও বটে। জুডিরা চার বান্ধবী যদিও একসময় প্রায় প্রতি শুক্রবার রাতেই পালা করে এক একজনের বাড়িতে বসে খানাপিনা করতেন, তাদের আসল আকর্ষণ ছিল পয়সা দিয়ে রামি খেলা। কয়েক মাস আগে জুডির বাবা মারা যাওয়ায় তাদের এই শুক্রবারের সান্ধ্য পার্টি বন্ধ হয়ে যায়, আবার সেই পার্টি শুরু হওয়ার প্রথম দিনেই এই অঘটন। গ্যারি হাডসন সেদিন তার কর্মক্ষেত্র থেকে ব্রিক্সটনের ব্ল্যাক সোয়ান বিয়ার পাব হয়ে বাড়ি ফেরেন। সাধারণত গ্যারি ওই সময়েই বাড়ি ফিরতেন।

    ব্রিক্সটনে গ্যাং ওয়ার এবং নারীদের যৌন হেনস্থার ঘটনা নতুন না হলেও, গত শতাব্দীর আটের, নয়ের দশকের তুলনায় সেরকম ঘটনা অনেক কমে গেছে এবং আজ যে ব্রিক্সটন একটা আকর্ষক বসবাসের জায়গা হিসেবে ইংল্যান্ডের মানচিত্রে স্থান করে নিতে পেরেছে, তার সিংহভাগ কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন জুডি হাডসনের প্রয়াত পিতা, ব্রিক্সটনের প্রাক্তন পুলিশ চিফ জর্জ মার্টিন। যিনি ব্রিটিশ পুলিশ বিভাগে আয়রন জর্জ নামেই সুপরিচিত ছিলেন। জর্জ মার্টিন অত্যন্ত বিতর্কিত চরিত্র। অনেকে তার বহু সিদ্ধান্তের কট্টর সমালোচনা করেছেন আবার তার সমর্থকরা তার বহু সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তবে সকলেই মানেন, তার আমলেই ব্রিক্সটন আইনের শাসনে এসেছিল। আয়রন জর্জ গত বছরের শেষ দিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ রকম হাই প্রোফাইল পুলিশ অফিসারের মেয়েকে তার বাড়িতে ঢুকে খুন করে যাওয়ায় স্বভাবতই পুলিশ মহলে সাড়া পড়ে গেছে।

    ব্রিক্সটন পুলিশ তিন দিন ধরে ব্রিক্সটনের অন্ধকার জগতের বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও তদন্তে তেমন অগ্রগতি আনতে পারেনি। সোমবার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর রিপোর্ট খতিয়ে দেখে, ব্রিক্সটন পুলিশ চিফ ড্যামিয়েন ব্লেক আর দেরি না করে তদন্তে সহায়তার জন্য তার বন্ধু স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড প্রধান টনি অ্যাডামসের শরণাপন্ন হয়েছেন। চলুন অতনুদা, মঙ্গলবার সকালে আমরা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের বড়কর্তা টনি অ্যাডামসের ঘরে ঢুকে পড়ি। সেখানে আর উপস্থিত আছেন ব্রিক্সটন পুলিশ চিফ ড্যামিয়েন ব্লেক, আমাদের সুপরিচিত গোয়েন্দা চূড়ামণি মাইক ব্রিয়ারলি, তার সহকারী অ্যান্ড্রিউ রবার্টসন। প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট, পুলিশের ফটোগ্রাফারের তোলা অকুস্থলের ছবি এবং পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে চোখ বুলিয়ে টনি অ্যাডামস সেটা ব্রিয়ারলি সাহেবের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে ড্যামিয়েন ব্লেককে বললেন, “আপনাদের তদন্তে কী উঠে এল? এই কেস নিয়ে আপনার কী ধারণা?”

    ড্যামিয়েন বললেন, “দেখুন মৃত্যুর মোটিভ এখানে প্রতিহিংসা বলেই মনে হচ্ছে। যৌন লালসাও একটা মোটিভ হতে পারে, বা দু’টোই এক সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। জুডির বাড়ি থেকে কোনও দামি জিনিস খোয়া যায়নি। জুডির হাতে তিনটি দামি আঙটি ছিল, সেগুলোতে খুনী হাত লাগায়নি। ঘর থেকে টাকাপয়সাও খোয়া যায়নি। এই বছরের গোড়াতেই ব্রিক্সটনে, হেলেনা ক্যাম্পবেল ও রিচা পাওয়েল নামের দু’জন মহিলা তাদের বাড়িতে খুন হয়েছিলেন, দু’জনকেই মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, দু’টো আলাদা ঘটনা হলেও পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে দেখে দু’টো ঘটনার সংযোগই রয়েছে ব্রিক্সটনের গ্যাং ওয়ারের সঙ্গে। জুডি হাডসনকেও মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

    যে পিস্তল থেকে জুডিকে গুলি করা হয়েছে তা ২০১১-এর পুলিশ বনাম ব্রিক্সটন ব্ল্যাক কমিউনিটি সংঘর্ষের সময়ে ব্রিক্সটন পুলিশের খোয়া যাওয়া কয়েকটি পিস্তলের একটি। এখন আর এই সিরিজের পিস্তল ব্রিক্সটন পুলিশ ব্যবহার করে না। এর থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কথা হলপ করেই বলা যায়। ২০১১-এর পরবর্তী সময়ে এই খোওয়া যাওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগলো অনেকসময় গ্যাং ওয়ার্সে ব্যবহার হতে দেখা গেছে। কিছু অস্ত্র পুনরুদ্ধার হলেও, কিছু ধরা ছোঁওয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

    মনে রাখতে হবে, ব্রিক্সটনের আন্ডারওয়ার্ল্ডে জর্জ মার্টিন খুব একটা জনপ্রিয় নাম ছিলেন না। আফ্রো-ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির একটা অংশের জর্জের পরিবারের প্রতি বিরূপ মনোভাব থাকা কিছু বিচিত্র নয়। বোঝেনই তো পুলিশের কাজ জনপ্রিয়তা অর্জন করা নয়, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং তাতে করে কিছু শত্রু জন্মাবেই। সেটা যদি ব্রিক্সটনের মতন অপরাধপ্রবণ স্থান হয় তো কথাই নেই। আজকের ব্রিক্সটন আর আয়রন জর্জের সময়ের ব্রিক্সটনের বিস্তর ফারাক আছে। তবে আপাত শান্ত ব্রিক্সটন একেবারে ধোয়া তুলসীপাতা হয়ে যায়নি। ব্রিক্সটনের কুখ্যাত ড্রাগস গ্যাংগুলো এখনও যথেষ্ট সক্রিয়। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে বাইশ বছর বয়সী জর্জ মার্টিন ব্রিক্সটন পুলিশ ফোর্সে যোগ দেন আর আটত্রিশ বছর বাদে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিক্সটন পুলিশ চিফ হিসেবে অবসর নেন। এর মধ্যবর্তী সময়ে জর্জ এই ড্রাগস মাফিয়াদের বিরুদ্ধে এবং ব্রিক্সটনের স্ট্রিট হুলিগানসদের বিরুদ্ধে একের পর এক দুঃসাহসিক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়ে আয়রন জর্জের শিরোপা পেয়েছেন আবার সংবাদপত্রের একাংশ তাকে বর্ণবিদ্বেষী আখ্যা দিয়ে তুলোধোনা করেছে। মি. অ্যাডামস, আমরা তাঁর সহকর্মী হিসেবে জানি, এই অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। ঘটনাসূত্রে ব্রিক্সটনের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ হচ্ছে আফ্রো-ক্যারিবিয়ান জাতিগোষ্ঠীভূক্ত আর এখানকার গ্যাংগুলোর অধিকাংশ সদস্য এই জাতিগোষ্ঠীর। আয়রন জর্জের সংঘাত ছিল এই অপরাধীদের সঙ্গে, তাদের গাত্রবর্ণ অথবা তাদের অরিজিনের সঙ্গে নয়। এমন নয় যে ব্রিক্সটনের অপরাধ জগতে সাদা চামড়ার অপরাধী নেই বা ছিল না, আয়রন জর্জ তাদের প্রতি নরম মনোভাব দেখিয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত নেই।

    আপাতদৃষ্টিতে তাই প্রতিহিংসার তত্ত্বই মাথায় আসছে। তবে জুডি হাডসনের সঙ্গেও কারও ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকতে পারে, শুধু যৌন লালসা থেকে খুন হতে পারে। সব মিলিয়ে বেশ দিশাহারা অবস্থা, এখন যদি মি. ব্রিয়ারলি কিছু করতে পারেন।

    টনি অ্যাডামস বললেন, “ব্রিয়ারলি, তোমার কোনও প্রশ্ন করার আছে? আমি কিন্তু খুব দ্রুত এই রহস্যর সমাধান চাই। পুলিশের পরিবারের লোককে কেউ হত্যা করে পার পেয়ে গেলে, জনমানসে পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা নিয়েই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। সেটা একদম কাম্য নয়।”

    ব্রিয়ারলি বললেন, “তা প্রশ্ন তো অনেক করার আছে। উত্তরও জানি কিছু কিছু। দু’-তিন দিন মনে হয় লেগে যাবে অপরাধীকে ধরতে। অকুস্থলে একবার যেতে হবে, জুডি হাডসনের স্কুলে একবার যাওয়া দরকার। জনা চারেক সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। সময় একটু লেগে যাবে।” রবার্টসন বিড়বিড় করে গালাগালি দিয়ে উঠল, “নাও, শুরু হয়ে গেল বুড়ো ছুঁচোর বোলচাল। তদন্ত শুরু করার আগে শুধু রিপোর্ট দেখেই অনেক কিছু জেনে ফেলেছে! আবার বলছে, দু’-তিন দিন লেগে যাবে অপরাধী ধরতে। এ কি ছেলের হাতের মোয়া? অ্যাডামস স্যারের সামনে নিজেকে স্পেশাল প্রমাণ করবার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে।” মুখে বলল, “বস, বোধহয় খুনী কে বুঝে ফেলেছেন?” ব্রিয়ারলি বললেন, “না, একটা লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলির কথা বুঝবার চেষ্টা করছি। বাকিটা চলো ব্রিক্সটনে গিয়ে বুঝে আসি। ব্লেক সাহেব, জুডি হাডসনের সিল করা ঘর খুলে আগামী কাল দেখানোর ব্যবস্থা করুন। সকাল দশটার মধ্যে আমি আর রবার্টসন ব্রিক্সটনে পৌঁছে যাব। জুডির তিন বন্ধু এবং গ্যারি হাডসনের সঙ্গে কালকেই কথা বলতে চাই। ব্যবস্থা করে রাখবেন, বাকি কিছু কাজ আমরা এদিকে এগিয়ে রাখি।”

    ৪)

    নন্দিতা বৌদি ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য আজ আমাদের কফির ব্যবস্থা নিজেদেরই করে নিতে হচ্ছে। অধীরদা কফি আর কাজুর ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকতে, আমি সিগারেটে অগ্নি সংযোগের পরে জিজ্ঞাসা করলাম, “অধীরদা, এই ২০১১-এর পুলিশের সঙ্গে ব্ল্যাক কমিউনিটির সংঘর্ষ ঠিক কী নিয়ে হয়েছিল?” অধীরদা বললেন, “সে ঘটনায় আসছি, ধৈর্য ধরুন।”

    স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড প্রধানের ঘর থেকে বেরিয়ে ব্রিয়ারলি রবার্টসনকে বললেন, “এ দিকে আমি দেখি, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড লাইব্রেরিতে ব্রিক্সটন আর তার বহু আলোচিত প্রাক্তন পুলিশ চিফ, আয়রন জর্জ সম্বন্ধে কতটা তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। আর তুমি জুডি হাডসনের তিন বন্ধু এবং স্বামী সম্বন্ধে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে ফেলো। এখন বেলা বারোটা বাজে, কালকে সকাল দশটা অবধি হাতে অনেকটা সময় আছে, ব্রিক্সটন পুলিশ তোমাকে এ বিষয়ে কিছুটা সাহায্য করতে পারবে; আর তোমার ইনফর্মারদের ব্রিক্সটনে ওদের সোর্সদের সঙ্গে কথা বলতে বলো।” রবার্টসন মনের মতো কাজ পেয়ে খুশি হল। এই ধরনের কাজে রবার্টসনের দক্ষতা অতীতে সন্দেহাতীতভাবে বহুবার প্রমাণিত। সে বলল, “বস, হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি টনি অ্যাডামস স্যারকে বললেন, উত্তর জানেন কিছু কিছু। কী জানেন আর কী করে জানলেন? মানে তদন্ত তো শুরুই করেননি!”

    “তদন্ত শুরু করিনি, এ কথা তো বলা যায় না রবার্টসন। যে মুহূর্তে তুমি কেসটা শুনলে, সেই মুহূর্ত থেকেই তো তদন্ত শুরু হয়ে গেল। আর এখানে তুমি ব্রিক্সটন পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট দেখেছ। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট দেখেছ, পুলিশ ফটোগ্রাফারের তোলা অকুস্থলের ছবি দেখেছ, জুডির তিন বন্ধু এবং স্বামীর পুলিশকে দেওয়া জবানবন্দী পড়েছ, ড্যামিয়েন ব্লেকের মতো একজন পোড়খাওয়া পুলিশ অফিসার কেসটা নিয়ে কী ভাবছেন, সেটাও শুনেছ। তবে তদন্ত তো শুরু হয়ে গেছে। হ্যাঁ, প্রশ্ন তো অনেক, উত্তর জানি কিছু কিছু। সেসব নিয়ে পরে কথা বলা যাবে।

    তুমি জুডির স্কুলটাও আজ একবার ঘুরে এসো। স্কুল কর্তৃপক্ষর থেকে জানার চেষ্টা করো, সেখানে এমন কোনও ঘটনা আছে কি না, যাতে করে জুডির প্রাণ সংশয় হতে পারে।”

    রবার্টসন বলল, “বস, ঠিক আছে, কাল সকাল ন’টায় আপনার চেম্বারে আমি রিপোর্ট করছি। তারপর শুরু হবে আমাদের ব্রিক্সটন অভিযান।”

    আমি বললাম, “কাচ ভাঙার কোনও শব্দ প্রতিবেশীরা পাননি?” অধীরদা বললেন, “লিখেছে, বাড়ির পেছন দিকে যে বারান্দার কাচ ভেঙে আততায়ী প্রবেশ করেছে, সেখান থেকে বাড়ির বাউন্ডারি ওয়ালের দূরত্ব অন্তত কুড়ি মিটার। একটা কাচ ভাঙার শব্দ ওই দূরত্ব পেরিয়ে পাশের বাড়িতে যাবে না, তা ছাড়া ব্রিক্সটন স্কোয়ারের মতো অভিজাত পাড়ায়, কেউ প্রতিবেশীর বাড়ির কাচ ভাঙার শব্দ নিয়ে মাথা ঘামায় বলে মনে হয় না।

    আর পিস্তলের মতো ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের আওয়াজও খুব কম হয়, সাইলেন্সার লাগানো থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। চলুন, আমরা জাম্প কাট করে পরের দিন সকাল পৌনে দশটায় রবার্টসনের গাড়িতে মাইক ব্রিয়ারলি আর রবার্টসনের কথোপকথনের মধ্যে ঢুকে পড়ি, ওরা দু’জন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড থেকে ব্রিক্সটন পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন।

    রবার্টসন ব্রিয়ারলিকে বলল, “স্যার, কুশীলবদের সম্বন্ধে যা তথ্য জোগাড় করেছি, তাতে অঙ্ক ভয়াবহভাবে জটিল হয়ে গেছে। কোনটা রাখবেন আর কোনটা ছাড়বেন? আর বর্তমানে ব্রিক্সটন হাই স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা লিয়া উইলিয়ামসন জানিয়েছেন, জুডির মৃত্যুর দিন বিকালে জুডি, ব্রিক্সটন হাই স্কুলেরই অঙ্কের শিক্ষক অ্যালেক্স স্মিথকে তার সঙ্গে ফ্লার্ট করার জন্য নিজের ঘরে ডেকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন, লিয়া তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জুডি অ্যালেক্সকে পূর্বেও একবার নিজেকে সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। লিয়ার বক্তব্য, অ্যালেক্স এই ধরনের ফ্লার্ট সব শিক্ষিকাদের সঙ্গেই করে থাকে, লোকটা কিছুটা ভাঁড় গোছের। ওকে কেউ সিরিয়াসলি নেয় না।

    জুডি হাডসন, হেড মিসট্রেস বলেই অ্যালেক্সের ফ্লার্ট করার তালিকা থেকে বাদ ছিলেন। কিন্তু জুডির পিতৃবিয়োগ হওয়ার কিছুদিন পর থেকে অ্যালেক্স জুডিকেও ফ্লার্ট করা আরম্ভ করে। জুডি প্রথমবার অ্যালেক্সকে সতর্ক করার পর, লিয়া উইলিয়ামসনও অ্যালেক্সকে বলেছিল, জুডি যখন পছন্দ করছেন না, তখন অ্যালেক্স যেন জুডির সঙ্গে ইয়ার্কি না করে। অ্যালেক্স তখন বলে, বাবা মারা যাওয়ার পরে জুডি খুব মনমরা হয়ে থাকে, তাই জুডিকে চাঙ্গা করার জন্যই ও এ সব করছে।

    অ্যালেক্সের স্বভাব বিবেচনা করে লিয়া শুক্রবার সকালের ঘটনা পুলিশকে জানায়নি। ওর এখনও ধারণা অ্যালেক্স একটু পাগলাটে স্বভাবের, ক্লাস না থাকলে সহকর্মীদের সঙ্গে ভাঁড়ামি করা অভ্যাস। ব্রিক্সটন পুলিশ জেরার নামে অ্যালেক্সের ওপর জবরদস্তি করুক এটা লিয়া চায়নি। আমি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রতিনিধি বলেই শেষ অবধি আমাকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জুডি অ্যালেক্সকে যেদিন সতর্ক করলেন সেদিনই জুডি খুন হয়ে গেলেন, তার আগে যৌন নির্যাতন কিন্তু অ্যালেক্সকে সন্দেহভাজনদের তালিকার উপর দিকে রাখবে।”

    মাইক ব্রিয়ারলি বললেন, “তুমি অ্যালেক্স স্মিথকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছ নিশ্চয়ই?” রবার্টসন জানাল, জুডির স্বামী, দুই বান্ধবী এবং কাজিন সকলেই এতক্ষণে ব্রিক্সটন পুলিশ স্টেশনে হাজির হয়ে গেছে। আমি লিয়াকে কথা দিয়েছি যে অ্যালেক্সের ব্যাপারটা ব্রিক্সটন পুলিশকে জানাব না, জুডি যদি কাউকে না বলে থাকেন, তবে তৃতীয় ব্যক্তির ও খবর জানার সম্ভাবনা নেই। আমরা অ্যালেক্সের বাড়ি গিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলব। লিয়া উইলিয়ামসন, অ্যালেক্সকে বলে রাখবে।

    ব্রিয়ারলি সাহেব বললেন, “তা হলে হত্যকাণ্ডর জায়গাটা আগে দেখে নিই রবার্টসন।” রবার্টসন বলল, “হ্যাঁ, বস। আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি। ওখানেই ব্রিক্সটন পুলিশ চিফ এবং জুডি হত্যার তদন্তকারী অফিসার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। ওখানকার কাজ সেরে আমরা ব্রিক্সটন পুলিশ স্টেশনে গিয়ে সবাইকে জেরা করব।”

    ৫)

    অধীরদা ধুমপানের বিরতির পর আবার শুরু করলেন, “আমরাও রবার্টসনদের সঙ্গে সঙ্গে দেখে নিই যে, জুডি হাডসনের বাড়িতে কী নাটক অভিনীত হচ্ছে। মাইক ব্রিয়ারলি আর রবার্টসনের গাড়ি জুডির বাড়িতে ঢুকে পড়েছে, সঙ্গে ব্রিক্সটন পুলিশ চিফ ড্যামিয়েন ব্লেক এবং জুডি হত্যার প্রাথমিক তদন্তকারী অফিসার রবার্ট মরিসন। মাইক ব্রিয়ারলি প্রথমেই চলে গেছেন বাড়ির পেছন দিকে, বারান্দার ভাঙা কাচ পরীক্ষা করলেন, তারপরে ভাঙা কাচ গলে ঢুকে গেলেন বারান্দার ভিতরে, রবার্টসনকে নির্দিষ্ট একটা জায়গা দেখিয়ে ইশারা করলেন ছবি নিতে। তারপর জুডির শোওয়ার ঘর খুঁটিয়ে দেখলেন। সিজার লিস্টে একবার চোখ বুলিয়ে বললেন, যথেষ্ট হয়েছে। এ বার পুলিশ স্টেশনে যাওয়া যেতে পারে। রবার্ট মরিসন বললেন, “ব্রিক্সটন পুলিশ শুধু জুডির ঘরই সিল করেছিল। গ্যারি হাডসন বাড়ির অন্য অংশে বসবাস করছেন; ছেলেকে মায়ের মৃত্যুর পর এনেছিলেন, কিন্তু এই পরিবেশে রাখবেন না বলে বোর্ডিং স্কুলে ফেরত পাঠিয়েছেন।” ব্রিয়ারলি সাহেব বাড়ির বাকি অংশ দেখার আগ্রহ দেখালেন না।

    গাড়ির দিকে পা বাড়ালেন।

    ব্রিক্সটন পুলিশ স্টেশনে পৌঁছে, মাইক ব্রিয়ারলি জুডির স্বামীকে দিয়েই জেরা শুরু করলেন। “মি. হাডসন, আপনার স্ত্রী সদ্য নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন, আপনার মানসিক অবস্থা আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু আপনাকে বিরক্ত করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। জুডি হাডসন মারা গেলে আপনার উপকৃত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। আপনি যে বাড়িতে বর্তমানে বসবাস করেন, তা জুডির বাবা জর্জ মার্টিনের বাড়ি। আপনি আর্থিক দিক থেকে জুডির উপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিলেন। বারো বছর আগে আপনাদের প্রেম করে বিয়ে হয়, কিন্তু চাকরিবাকরি ব্যবসা কিছুতেই আপনি সুবিধা করতে পারেননি। বর্তমানে আপনি যে সেক্স টয়েজের দোকানের মালিক সেটাও জুডির টাকায় তৈরি। প্রথমদিকে সেই দোকান ভালো চললেও, ব্রিক্সটন মার্কেটে বছর খানেক আগে আরও আধুনিক, সুসজ্জিত একটি সেক্স টয়েজের দোকান হওয়ার পর, আপনার দোকানে মন্দা দেখা দেয়, তবে মূল কারণ আপনি ব্যবসায় অমনোযোগী, জুডির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক শেষ চার মাস তলানিতে এসে ঠেকেছিল এবং জুডির মৃত্যুর পর, জুডির বন্ধুরা পুলিশকে দেওয়া জবানবন্দীতে জানিয়েছেন যে জুডি বিবাহ বিচ্ছেদের কথা চিন্তা করছিলেন। আপনি সেই সুযোগ দিলেন না, জুডিকে মেরে দিয়ে তার সম্পত্তির উপর নিজের অধিকার নিশ্চিত করতে চাইলেন। আপনি জুডির মৃত্যুর দিন রাত সাড়ে আটটা থেকে দশটার মধ্যে নিজের যে অ্যালিবাই ব্রিক্সটন পুলিশকে দিয়েছিলেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আপনি সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দোকান বন্ধ করেছিলেন সে কথা সত্যি, তারপর আপনি ব্ল্যাক সোয়ান বিয়ার পাবে বিয়ার পান করছিলেন, সে কথাও সত্যি, তবে ওখানে আপনি আধ ঘণ্টার বেশি ছিলেন না, এক বোতল বিয়ার পান করেই বেরিয়ে যান। আপনি ওই পাবে মাঝে মাঝেই যান আর একটা বিয়ার পানই আপনার রুটিন। তা হলে আটটা থেকে দশটা অবধি কোথায় ছিলেন?”

    গ্যারি হাডসন বললেন, “হ্যাঁ, মিথ্যা বলেছি। তবে সেটা নিজের অ্যালিবাই প্রতিষ্ঠার জন্য নয়। আমার গাঁজার নেশা আছে, এই নিয়ে জুডির সঙ্গে অনেক অশান্তি হয়েছে, তবু গাঁজা ছাড়তে পারিনি। গাঁজা খেতে যাওয়ার কথা পুলিশকে বলে কেস খেতে চাইনি। অন্যান্য গাঁজাপ্রেমী বন্ধুদেরও ফাঁসাতে চাইনি। এখন বাধ্য হয়ে বলে দিলাম। একসময় ব্রিক্সটন পুলিশ গাঁজাসেবীদের ছাড় দিত, তেমন কোনও কেস হত না। ২০০১-২০০৫ অবধি তো এখানে গাঁজা ফেস্টিভ্যাল অবধি হয়েছে। জুডির বাবা, জর্জ মার্টিন সেসব বন্ধ করে দেন। সেই আয়রন জর্জের জামাই হয়ে গাঁজা সেবন করব, সেটা জুডি মানতে পারত না। আর শেষ চার মাস আমাদের সম্পর্কের অবনতির কারণ আমাদের একমাত্র ছেলে ফিল হাডসনকে, জুডির ম্যাঞ্চেস্টারের বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমি মানতে পারিনি। তার তিন মাস আগে আমার শ্বশুরমশাই জর্জ মার্টিন মারা যান, সেই জন্যই এই সিদ্ধান্ত।” ব্রিয়ারলি জিজ্ঞাসা করলেন, “জর্জের মৃত্যুর সঙ্গে ছেলেকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠানোর কী সম্পর্ক?”

    গ্যারি হাডসন বললেন, “আমার অনুমান জুডির মাসতুতো বোন অ্যামির উস্কানিতে জুডি এই কাজ করেছিল। ওই বুঝিয়েছিল যে আমার সঙ্গ নাকি ফিলের পক্ষে ভালো নয়। জর্জ চলে যাওয়ার পরে আর মাথার উপর গার্জেন রইল না। জুডি নিজের স্কুল নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সুতরাং আমার বদ সঙ্গের থেকে বাঁচাতে ছেলেকে বোর্ডিং পাঠাও।” আসলে অ্যামি জোন্সের নিজের সংসার টেকেনি, তাই আমার আর জুডির ভালোবাসার সম্পর্কে ওর জ্বলুনি হত। গাঁজা আমি অনেক বছর খাই, জুডি রাগ করেছে, কিন্তু সেটা আমাদের সম্পর্ক এমন খারাপ করেনি যে ডিভোর্সের কথা চিন্তা করতে হবে। আর, আমার এখনও দৃঢ় বিশ্বাস, আমাকে ডিভোর্স করার ইচ্ছে জুডির ছিল না। ওটা ছেলেকে বোর্ডিং পাঠানো নিয়ে যাতে অশান্তি না করি, তাই আমাকে বাগে আনতে ফাঁকা হুমকি। ওতে আমি ঘাবড়াবার পাত্র ছিলাম না, ফাঁকা ডিভোর্সের আওয়াজে আমি ওকে খুন করে দেব?”

    “আপনি কি প্রতিদিন রাত দশটা নাগাদ বাড়ি ফেরেন?”

    “মোটামুটি পৌনে দশটা থেকে দশটার মধ্যে বাড়ি ফিরি। আমার দোকান এমনিতে রাত সাড়ে সাতটা-আটটা অবধি খোলা থাকে। একদম ঘড়ি বেঁধে কাজ করা আমার স্বভাবে নেই, রোজ দোকান খুলি, এমনও নয়। হ্যাঁ, ব্যবসাপত্র আমার ঠিক আসে না।

    দোকানের পর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরি। এটা ইদানীং সময়ের রুটিন, আগে সোজা বাড়ি ফিরতাম। এখন কার জন্য ফিরব? ছেলে বাড়ি থাকে না। বউয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। তাতেই বাইরে সময় কাটানো, গাঁজা খাওয়া আরও বেড়ে যায়। তা বলে আমি জুডিকে খুন করার কথা কল্পনাও করতে পারি না, আমি জুডিকেই ভালোবাসি, জুডিও আমাকে ভালোবাসত। বাইরের লোকের উসকানিতেই আমাদের সম্পর্ক খারাপ হয়েছিল। সেদিন বাড়ি ফিরে কী দেখেছিলাম তা পুলিশকে আগেই জানিয়েছি।”

    এ বার মাইক ডাকলেন বারবারা ডেভিসকে, বারবারার পূর্বপুরুষ জামাইকার অধিবাসী, যদিও বারবারার জন্ম হয়েছে ইংল্যান্ডেই। গত পাঁচ বছর ধরে সে জুডি হাডসনের সহকর্মী এবং ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। মাইক ব্রিয়ারলি বললেন,

    “মিসেস ডেভিস, ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিক্সটন ব্ল্যাক কমিউনিটির সঙ্গে ব্রিক্সটন পুলিশ বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কথা তো আমরা সকলেই জানি। ওই বছর দু’জন পুলিশ অফিসার জামাইকান যুবক জেমি গ্রিনকে গুলি করে হত্যা করে। জেমি পিস্তলের মতো দেখতে লাইটার বার করে সিগারেট ধরানোর অছিলায় পুলিশকে চমকে দিতে গেলে, দুই পুলিশ অফিসার সেটাকে পিস্তল ভেবে জেমিকে গুলি করে। এই ঘটনায় ব্রিক্সটনের ব্ল্যাক কমিউনিটির সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। কয়েকটি পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে। ওই দুই পুলিশ অফিসারের কোনও শাস্তি হয়নি। আদালত রায় দেয়, এটা আইনসঙ্গত হত্যা। জেমি গ্রিনের পিস্তল আসল না হলেও, পুলিশ অফিসারদের সেটা বুঝতে পারা সম্ভব ছিল না। তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছিল। ঘটনাস্থলে দু’জন পুলিশ অফিসার থাকলেও, গুলিটা চালিয়েছিলেন রুটিন রাউন্ডে বেরনো তৎকালীন ব্রিক্সটন পুলিশের উচ্চপদস্থ অফিসার জর্জ মার্টিন, তখনও তিনি ব্রিক্সটন পুলিশ চিফ হননি।

    জেমি গ্রিনের পূর্বে কোনও অপরাধের রেকর্ড ছিল না। ব্রিক্সটনের ব্ল্যাক কমিউনিটির নানা কারণে পুলিশের উপর ক্ষোভ আছে, সেরকম কোনও ক্ষোভ থেকেই জেমি গ্রিন সম্ভবত পুলিশকে চমকে দিতে চেয়েছিল, তার ফল হয় মারাত্মক। জেমি গ্রিনের সেইসময় একজন প্রেমিকা ছিল, তার নাম, ‘স্টেফানি টেলর।’ জেমির মৃত্যুর প্রতিবাদে, সে সামনে থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল। পরে মেয়েটি নাম পরিবর্তন করে হয়ে যায়, ‘বারবারা ব্রুক’ বিয়ের পর তার নাম হয়, ‘বারবারা ডেভিস’। সংবাদপত্র এবং স্যোশাল মিডিয়ার খবর থেকে সহজেই আপনার পরিচয় প্রমাণ করা তেমন সমস্যার নয়।

    বারবারা, আপনি কোনওদিন আপনার প্রেমিকের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি। যখন পাঁচ বছর আগে ব্রিক্সটন হাই স্কুলের শিক্ষিকার চাকরি জুটে গেল, তখন থেকে আপনার প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠল, জুডির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। জুডি আপনাকে চিনতে পারেননি, প্রথম থেকেই আপনার লক্ষ্য ছিল জুডি হাডসন। কেননা আয়রন জর্জের মতো একজন পুলিশ অফিসারকে কব্জা করা আপনার সাধ্যের বাইরে ছিল। আপনি নিশ্চয়ই জর্জের সামনাসামনি হতেন না, সাধারণ লোক আপনার কুড়ি বছর বয়সের চেহারা মনে না রাখলেও, জর্জের মতো পুলিশ অফিসারের পক্ষে তা অসম্ভব নয়। জর্জও মারা গেলেন, আপনি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। সেদিন পার্টি শেষে সবাই বেরিয়ে গেলে, কোনও ছুতোয় ফিরে এসে কাজ হাসিল করে বেরিয়ে গেলেন।”

    আমি এইসময় বললাম, “কিন্তু অধীরদা, জুডিকে যে মৃত্যুর আগে যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল, সেটা বারবারা ডেভিস করবেন কীভাবে?” অধীরদা বললেন, “বারবারা কাজটা হয়তো একা করেননি। তার কোনও পুরুষ সঙ্গী থাকা কি অসম্ভব? চলুন না দেখা যাক, বারবারার কী বক্তব্য।”

    বারবারা বললেন, “হ্যাঁ, জেমি গ্রিন আমার প্রেমিক ছিল। তরতাজা উজ্জ্বল এক যুবক, যার সঙ্গে অপরাধ জগতের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক ছিল না। আমরা ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম। জেমি সিগারেট ছাড়া আর কোনও নেশা করত না, সেই সিগারেট ধরানোর লাইটার ওর কাল হল। জর্জ মার্টিনের মতো পুলিশ অফিসার একটা পিস্তল আর লাইটারের পার্থক্য বুঝতে পারেননি, সে কথা বিশ্বাস করতে বলেন? জর্জের বর্ণবিদ্বেষী মনোভাবের কথা সকলেই জানেন। পুলিশ কর্তৃপক্ষ যতই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করুক, এটা বহুবার প্রমাণিত। জর্জ খুনী, কিন্তু আমি খুনী নই। আমারও পরবর্তী সময়ে নিজের সংসার হয়েছে, সন্তানের মা হয়েছি। এখন নিজে খুন করে কেন আমার স্বামী সন্তানকে বিপদে ফেলতে যাব? সময় সব ক্ষতকেই একদিন প্রশমিত করে। জেমি গ্রিনের মৃত্যু এবং তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলনে অংশগ্রহণের অধ্যায়কে পেরিয়ে জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করবার জন্যই একসময় আমি নিজের নাম পরিবর্তন করেছিলাম, নয়তো ক্রমাগত আমাকে ওই বিষয় নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হত।

    জুডি হাডসনের পরিচয় আমি প্রথম থেকেই জানতাম, কিন্তু জর্জের মেয়ে বলে তাকে খুন করে দেওয়ার মতো হীন মানসিকতা আমার নেই।

    জুডি খুব ভালো মানুষ ছিল, সে আমার পরিচয় জানত কি না তা বলতে পারব না। আমরা এ নিয়ে কখনও আলোচনা করিনি। আর যে কয়েকবার অতীতে জুডির বাড়িতে গেছি, জর্জের সঙ্গে দেখা হয়নি। জুডি বলত, তার বাবা ২০১৮-তে রিটায়ারমেন্টের পর নিজেকে একদম গুটিয়ে নিয়েছিলেন। জামাইয়ের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল না। মেয়ে, নাতি আর বইপত্র নিয়ে সময় কাটাতেন। আমি দূর থেকে ওকে দেখেছি, ওই পর্যন্ত। সামনাসামনি হলেও কিছু খুন করতে যেতাম না, লোকটাকে একদা আইনের দ্বারা শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম, সেটা হয়নি। আইন হাতে তুলে নেওয়া আমার স্বভাব নয়।” ব্রিয়ারলি জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি সেদিন জুডির বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন?”

    “আমি, কেটি আর অ্যামি জোন্স তিনজনেই সেদিন একসঙ্গে জুডির বাড়ি থেকে সাড়ে আটটা নাগাদ বেরোই। তখনও আমাদের খেলা সম্পূর্ণ হয়নি, কিন্তু অ্যামি বলে ওর শরীরটা তেমন ভালো লাগছে না, মন মেজাজও ভালো নেই। আমরা তাই তাড়াতাড়ি খেলা শেষ করে অ্যামিকে পাম স্ট্রিটে ওর বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলাম।

    পাম স্ট্রিট, ব্রিক্সটন স্কোয়ারের লাগোয়া রাস্তায়। জুডির বাড়ি ব্রিক্সটন স্কোয়ারের শেষ প্রান্তে, তারপর থেকেই পাম স্ট্রিটের শুরু। জুডির বাড়ি থেকে পাঁচ সাত মিনিট হাঁটলেই অ্যামির বাড়ি, গাড়িতে তো এক মিনিটও লাগে না। সেদিন আমিই গাড়ি চালাচ্ছিলাম, কেটি গাড়ি নেয়নি। আমি আর কেটি বরাবর খুব প্রয়োজন না থাকলে একই গাড়িতে কর্মক্ষেত্রে যাওয়া আসা করি। একদিন ও গাড়ি বার করে, পরের দিন আমি। অ্যামিকে ড্রপ করে দিয়ে আমরা, নর্থ লন্ডনের দিকে ঘুরতে চলে যাই। শুক্রবার সন্ধ্যায় কে আর চট করে বাড়ি ফিরতে চায়? নর্থ লন্ডনে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করি, তারপর কিংস অ্যাভেনিউতে আমাদের বাড়িতে ফিরে যাই; আমি আর কেটি দু’জনেই ওই রাস্তায় থাকি। ক’টায় বাড়ি ফিরেছি, সেটা ঘড়ি ধরে বলতে পারব না। আন্দাজ দশটার পরেই হবে। তখন তো জানতাম না যে জুডি খুন হয়ে যাবে এবং নিজেদের অ্যালিবাই প্রমাণ করতে হবে। কেটি হয়তো বলতে পারবে।” মাইক ব্রিয়ারলি বললেন, “অ্যামি জোন্স কি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন?” “না, অ্যামি বছর চারেক হল কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত। চিকিৎসায় কিছুটা সাড়া পাওয়া গেছে, কিন্তু বোঝেনই তো এ মারণ রোগে শরীর খারাপ লাগতেই পারে। পাঁচ বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদের পর অ্যামি ওর মায়ের সঙ্গে থাকত, ওর কোনও সন্তান নেই।

    তিনমাস আগে অ্যামির মা বাথরুমে পড়ে গিয়ে মারা যাওয়ার পর, অ্যামি একেবারেই একা হয়ে পড়ে। সেদিন কিন্তু অ্যামি জোন্সের আগ্রহেই বেশ কয়েকমাস বাদে আমরা মিলিত হয়েছিলাম। জর্জ মার্টিন মারা যাওয়ার পরে এই প্রথম, আর সেদিনই এমন দুর্ঘটনা ঘটে গেল।

    জুডিই অ্যামির দেখাশোনা করত, এখন কী যে হবে?” মাইক বললেন, “ব্রিক্সটন পুলিশের সিজার লিস্ট বলছে, সেদিন অকুস্থল থেকে আপনার একটি পার্স তারা উদ্ধার করে, পার্সে টাকা পয়সা, ক্রেডিট কার্ড ছিল। আপনি পুলিশকে বলেছেন, ভুল করে পার্স ফেলে গেছিলেন। যখন ভুলটা বুঝতে পারলেন, তখন সেটা নিতে ফিরলেন না কেন?” “কারণ, তখন জুডির বাড়ি থেকে অনেকটা চলে এসেছি, সঙ্গে কেটি ছিল, অসুবিধা তো কিছু ছিল না, ভেবেছিলাম পরের দিন স্কুলে জুডির থেকে পার্সটা নিয়ে নিলেই হবে।”

    “ধন্যবাদ। আপনি আপাতত আসতে পারেন।”

    এ বার জেরার জন্য ব্রিয়ারলি ডাকলেন কেটি স্কিভারকে। কেটির বয়সও বারবারার মতো তিরিশের আশপাশে। সে ব্রিক্সটন হাই স্কুলে বারবারার এক বছর বাদে শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দেয়। ব্রিয়ারলি শুরু করলেন,

    “আয়রন জর্জের কর্মজীবনের অন্যতম সাফল্য ছিল, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর তদন্তের ভিত্তিতে ব্রিক্সটনের কুখ্যাত MAD (Murder & Drugs) গ্যাংয়ের তিন জন সদস্যর সাকুল্যে পঞ্চাশ বছরের কারাবাস হয়ে যায়। তিন জনের মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য নাম হল রিকার্ডো মুর। রিকার্ডো, ম্যাড গ্যাংয়ের প্রধান কিল মুরের বড় ছেলে। কিল মুরের আসল নাম হচ্ছে অ্যালেক্সিস মুর, খুন করায় সিদ্ধহস্ত অ্যালেক্সিস, অপরাধ জগতে কিল মুর নামেই পরিচিত। ম্যাড গ্যাংয়ের সদস্যরা যখন বিপক্ষ GAS (Gangsters always shoot) গ্যাংয়ের বাইশ বছর বয়সী সদস্য রিচার্ড হাউটনকে তার বাড়ির সামনেই গুলি করে হত্যা করে, তখন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে কেউ একজন পুলিশে ফোন করেন এবং পরে তিন জন অপরাধীকেই কোর্টে চিহ্নিত করেন। ব্রিক্সটনের এইসব গ্যাংগুলোর প্রধান ব্যবসা হচ্ছে ড্রাগস এবং এই নিয়ে এদের পারস্পরিক খুনোখুনি অতি সাধারণ ঘটনা। এই গ্যাংগুলো এতটাই শক্তিশালী ও ভয়ঙ্কর যে পুলিশকে এদের বিরুদ্ধে সাক্ষী জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়। হাউটনের বাড়ি বড়রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে, রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া, রাস্তাঘাট ফাঁকাই থাকে। হাউটন আগে থেকে টের পায়নি যে তার কার্যকলাপ বিপক্ষ গ্যাং নজর করছে, সে অসতর্ক ছিল।

    এ রকম জায়গায় বিকেল বেলায় একটা খুন করে দেওয়া MAD গ্যাং-এর সদস্যদের কাছে জলভাত। সেখানে কেউ সাহস করে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে জেলে পাঠাবে, সেটা তাদের কাছে কল্পনাতীত বিষয়। মুরদের আইনজীবী কোর্টে বলেন, জর্জ মার্টিন সাজানো সাক্ষী দিয়ে মুর পরিবারকে ফাঁসিয়েছেন। জর্জ মার্টিনকেও ব্রিক্সটনের মানুষ প্রচণ্ড ভয় পেত। কোন ছলে বলে তিনি কাকে ফাঁসিয়ে দেবেন তা বলা মুশকিল ছিল, কাউকে আয়রন জর্জ কোর্টে সাক্ষী দিতে বললে, তা অস্বীকার করা সকলের সাধ্যে কুলোত না। অর্থাৎ, ড্রাগ মাফিয়ারা যেমন বুনো ওল, জর্জ তেমনি বাঘা তেঁতুল। মুর পরিবারের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, রিকার্ডো অকুস্থলে ছিল না। সে ছিল দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ। কোনওরকম অপরাধমূলক কাজে সে যুক্ত থাকত না। তাকে জর্জ মার্টিন ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। তাই

    মুর পরিবার এবং ম্যাড গ্যাংয়ের হিটলিস্টের প্রথমেই জর্জ মার্টিন এবং তার পরিবার থাকবে, সেটা বলবার জন্য কোনও পুরস্কার আশা করা যায় না।

    রিকার্ডো মুরের ব্রিক্সটনের দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে একটা বেশ গরীবের ভগবানের ইমেজ ছিল। রিকার্ডো এইসব পরিবারদের অর্থ সাহায্য করত। মুর পরিবার ক্যারিবিয়ান অরিজিনের হলেও, রিকার্ডো গরীবদের সাহায্য করার সময় তার জাতি বা বর্ণ নিয়ে মাথা ঘামাত না।

    স্কিভার পরিবারও রিকার্ডোর সাহায্যপ্রাপ্ত এই রকম একটা পরিবার। সরকারি সাহায্যর থেকে রিকার্ডোর সাহায্য অনেক বড় মাপের ছিল। কেটি, আজকে আপনি এবং আপনার পরিবার যে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন, তার পিছনে আপনার পরিশ্রম যেমন আছে, তেমন আছে রিকার্ডো মুরের সাহায্য। আপনারা ভাই বোনেরা সংখ্যায় ছিলেন অনেক, আপনার বাবা ছিল মদ্যপ, নেশার পিছনেই সব ব্যয় করে ফেলতেন। রিকার্ডো মুর আপনাদের ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছিল। আপনার, মুর পরিবারের প্রতি সহানুভূতি থাকা স্বাভাবিক। আয়রন জর্জ যতদিন বেঁচে ছিলেন, তার বাড়িতে কড়া পুলিশি প্রহরা থাকত, তার প্রাণের ঝুঁকি আছে সেটা ব্রিটিশ সরকার ভালোভাবে অবহিত ছিল। জর্জ মারা যাওয়ার পর আর সে ঝামেলা ছিল না।

    তাই জর্জের মৃত্যুর পর, মুর পরিবার যখন জুডিকে হত্যা করতে আপনার সাহায্য চাইল, আপনি রাজি হয়ে গেলেন।”

    কেটি বললেন, “স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের বিখ্যাত গোয়েন্দা, মাইক ব্রিয়ারলির নাম আগে অনেক শুনেছি। আজকে তার কারণটা বুঝেছি। আপনি সন্দেহভাজন সকলের নাড়ি নক্ষত্রর খবর নিয়ে আসরে নামেন। হ্যাঁ, রিকার্ডো মুরের থেকে আমাদের পরিবার অনেক উপকার পেয়েছে, তার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। জর্জ মার্টিন রিকার্ডোকে ফাঁসিয়েছিলেন বলেও আমি বিশ্বাস করি, কিন্তু সেই জন্য আমি জুডিকে খুন করতে মুর পরিবারকে সাহায্য করেছি ভাবাটা কষ্টকল্পনা। জুডি আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিল, সে ব্রিক্সটন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিল, কিন্তু স্কুলের বাইরে তার কোনও বসসুলভ আচরণ ছিল না, সেই কারণে আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। আমি, বারবারা, জুডি তিনজনেই রামি খেলতে ভালোবাসতাম, জুডির মাসতুতো বোন অ্যামি জোন্সও তাই। এভাবে আমাদের চারজনের মধ্যে একটা সখ্যতা তৈরি হয়েছিল।

    আমি কেন জুডিকে মারতে যাব? মুর পরিবারের যদি জুডিকে মারার পরিকল্পনা থেকেও থাকে, সেখানে আমার মতো একজন আনাড়ির সাহায্য তারা নেবে কি? বারবারা নিশ্চয়ই আপনাদের জানিয়েছে যে সেদিন অ্যামির শরীর ভালো না লাগায়, আমরা তাকে নিয়ে বেরিয়ে যাই। তারপর কোথায় গেছি, কখন ফিরেছি সেটাও নিশ্চয়ই বলেছে?” ব্রিয়ারলি বললেন, “ফেরার সময়টা আন্দাজে বলেছে। আপনার মনে থাকলে বলতে পারেন। আর, কে আনাড়ি আর কে কার সাহায্য নিয়েছে সেটা ওপর থেকে দেখে নির্ণয় করা যায় না। আপনার বক্তব্য আমরা মন দিয়ে শুনেছি, আপাতত আপনি আসতে পারেন।”

    কেটিও সেদিন সঠিক বাড়ি ফেরার সময় বলতে পারলেন না।

    ৬)

    অধীরদা, এই অবধি পড়ে বললেন, কফি ব্রেক। গলা একদম শুকিয়ে গেছে। আমিই কফি বানিয়ে আনলাম, অধীরদার বাড়ির সব কিছুই আমার নখদর্পণে। কফির কাপে তৃপ্তির চুমুক দিয়ে বললাম, “একটা জিনিস লক্ষ করেছেন? মাইক ব্রিয়ারলি, তিন জনকে জেরা সম্পূর্ণ করলেন, কিন্তু পোস্টমর্টেম রিপোর্টে যে জুডির উপর যৌন নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে, তার উল্লেখ করলেন না!”

    অধীরদা বললেন, “মাইক ব্রিয়ারলি সবসময়ই একটা ধোঁয়াশা বজায় রাখতে ভালোবাসেন। তিনি যে সকলের থেকে একদম আলাদা, সেটা বোঝানোর একটা সচেতন প্রয়াস ব্রিয়ারলি সাহেব করেই থাকেন। তবে লোকটা শেষে ওস্তাদের মার দিয়ে বেরিয়ে যায় বলে সবাইকে ওঁর নাটুকেপনা সহ্য করতে হয়। যদিও এ বারের কেস কিন্তু বেশ গোলমেলে, সকলেরই জুডিকে মারার জোরালো মোটিভ রয়েছে এবং সুযোগও। বারবারা আর কেটি দু’জনে পরস্পরের অ্যালিবাই,

    এরা হাত মিলিয়ে জুডিকে মারেনি তার কী প্রমাণ আছে। গ্যারির অ্যালিবাই দু’-একজন গাঁজাখোর বন্ধু। তাদের কথা কতটা বিশ্বাসযাগ্য? ব্রিয়ারলি আর রবার্টসন এ সবই খতিয়ে দেখবেন বলেই আমার বিশ্বাস। চলুন, অ্যামি জোন্স, ব্রিয়ারলি সাহেবের জেরার সম্মুখীন হয়েছে। অ্যামিকে দেখেই মনে হয় সে শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ।

    ব্রিয়ারলি বললেন, “বুঝতে পারছি, আপনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভালো জায়গায় নেই, তবু আপনি নিশ্চয়ই চান জুডির হত্যাকারী শাস্তি পাক। তাই আপনার সহযোগিতা আমাদের দরকার আছে। আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?” অ্যামি কথা শুরু করতে সময় নিলেন, “গভীর একটা শ্বাস টেনে বললেন, আমি হয়তো বেশিদিন আর নেই, তার আগে দেখে যেতে চাই, যে জুডিকে যৌন নির্যাতন করে খুন করল, তার কঠিন সাজা হোক। সন্দেহর কথা কী বলব, এটা খুনের কেস, কারও নাম করে তদন্তকে প্রভাবিত করা উচিত হবে না। আপনারাই ভেবে দেখুন কে জুডির মৃত্যুতে বেশি উপকৃত হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসা করুন।”

    “আপনি যার কথা ইঙ্গিতে বলছেন, সে কিন্তু সরাসরি তার সঙ্গে জুডির সম্পর্কের অবনতির জন্য আপনাকে দায়ী করছে।”

    “সে তো করবেই, একটা গাঁজারু, অপদার্থ লোক। ওর সঙ্গে থাকলে ফিলের বারোটা বেজে যেত, তাই জুডিকে বলে ফিলকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়েছিলাম। জুডি আমার উদ্দেশ্য বুঝেছিল বলেই ফিলকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠাতে রাজি হয়েছিল, সে তো আর বাচ্চা মেয়ে নয়। জুডির দাম্পত্য ভেঙে আমার কী লাভ? আমি বরং জুডিকে বলতাম, ফিল যদি ওর বাবার থেকে দূরে থাকে, তবে গ্যারিকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। গ্যারিই রোজ অশান্তি করে পরিবেশ বিষিয়ে দিয়েছিল, যেন কারও সন্তান বোর্ডিং স্কুলে থাকে না! ওদের বেডরুমও শেষ কয়েকমাসে আলাদা হয়ে গিয়েছিল।”

    ব্রিয়ারলি জিজ্ঞাসা করলেন, “সেদিন একটা দীর্ঘ বিরতির পর অনেকটা আপনার ইচ্ছেতেই, আপনাদের শুক্রবার রাতের তাসের আসর বসেছিল, আবার আপনার শরীর খারাপ লাগায় রামি খেলা শেষ হওয়ার আগেই পার্টি শেষ করে দিতে হয়। তারপর বারবারা আর কেটি আপনাকে বাড়ির দোরগোড়ায় নামিয়ে দিয়ে তাদের বাড়ি চলে যায়। তাই তো?”

    “ঠিক, প্রথমে জর্জ মারা গেলেন। তারপর আমার মা মারা গেলেন। আমাদের আড্ডা বন্ধ ছিল। সেদিন ভেবেছিলাম, এই দমবন্ধ পরিবেশ থেকে বাঁচতে আবার আড্ডা বসিয়ে দেখি। দেখলাম তেমন ভালো লাগছে না, তাই তাড়াতাড়ি শেষ করেছিলাম। জুডি আমাকে ওর সঙ্গে থেকে যেতে বলেছিল, আমি রাজি হইনি, আসলে একা থাকতে চেয়েছিলাম। এখন আফসোস হয়, যদি আমি জুডির সঙ্গে থাকতাম, তবে আততায়ী হয়তো দু’জনকে দেখে এগোনোর সাহস করত না।”

    ব্রিয়ারলি অ্যামিকে বললেন, “আপনি এখন আসতে পারেন। মি. ব্লেক, আরও দু’-একটা কাজ সেরে আজ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে ফিরে যাব। খুব শিগগিরি আপনার সঙ্গে আবার দেখা হবে। আশা করি জুডি হাডসন হত্যা রহস্যের একটা সন্তোষজনক মীমাংসা আপনাদের শোনাতে পারব। চলো হে, রবার্টসন। এখনও অনেক কাজ বাকি আছে।”

    গাড়িতে উঠে ব্রিয়ারলি বললেন, “রবার্টসন, ব্রিক্সটনে যে নতুন সেক্স টয়েজের দোকানের দৌলতে গ্যারি হাডসনের ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে, সে দোকান থেকে একটু ঘুরে আসি।” রবার্টসন মনে মনে গালাগালি দিল, “শালা বুড়ো ছুঁচোর শখ কত! মিসেস লিলিয়ান ব্রিয়ারলির কানে যদি কথাটা ওঠে, তো বুড়োর বাড়ির চাকরি তো নট হবেই, আমাকেও বুড়োর সারথি হওয়ার জন্য না জানি কত হেনস্থা হতে হবে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মহা গোয়েন্দা মাইক ব্রিয়ারলি! হুঁ, চরিত্রহীন একটা লোক।” মুখে বলল, “বস, মানে ওখানে আপনার আবার কী দরকার পড়ল? স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের দু’জন অফিসারের অন ডিউটিতে এই সেক্স টয়েজের দোকানে যাওয়া কি শোভা পাবে?”

    ব্রিয়ারলি বললেন, “রবার্টসন, কেসের কিনারা করতে নরকে যেতে হলেও আমার আপত্তি নেই। এ তো সেক্স টয়েজের দোকান। আর ওখানে আমরা কিছু কেনাকাটা করতে যাচ্ছি না, যাচ্ছি ওই দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে সিসিটিভি ফুটেজে আমাদের পরিচিত একজন মানুষকে দেখতে পাব। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে বোধহয় দোকান মালিকের আপত্তি হবে না। আপত্তি করলে, আমরা ড্যামিয়েন ব্লেকের সাহায্য নেব। ৮ই এপ্রিল শুক্রবার সকাল থেকে ফুটেজ চেক করলেই হবে, প্রয়োজন না মিটলে ৭ বা ৬ তারিখের ফুটেজ দেখতে হবে।”

    ৭)

    ব্রিক্সটন মার্কেট প্লেসের একটা হোটেলে লাঞ্চ সেরে দুই গোয়েন্দা যখন ওভাল কোয়ার্টারে অ্যালেক্স স্মিথের বাড়ি পৌঁছলেন তখন ঘড়িতে পাঁচটা বেজে গেছে, অ্যালেক্স স্কুল থেকে ফিরে এসেছেন। লিয়া উইলিয়ামসন সেইভাবেই মাইকদের বলে রেখেছিলেন।

    একটা অ্যাপার্টমেন্টের সেকেন্ড ফ্লোরে অ্যালেক্স একাই থাকে। সে জানাল, তার বিয়াল্লিশ বছরের জীবনে বেশ কয়েকজন বান্ধবী এলেও তারা কেউই টেঁকেনি, শেষ বান্ধবী অ্যালেক্সকে ছেডে গেছে বছর খানেক আগে, তারপর থেকে সে আপাতত একাই আছে। অ্যালেক্সের আত্মীয়স্বজন বলতেও কেউ নেই। মা-বাবা উভয়েই গত হয়েছেন। অ্যালেক্স বেশ রোগা, গায়ের জামা মনে হচ্ছে হ্যাঙ্গার থেকে ঝুলছে। এ ছাড়া তার মধ্যে ক্ষ্যাপামির কোনও লক্ষণ নেই।

    ব্রিয়ারলি কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই, অ্যালেক্স বলল,

    “আমি আগে আমার কথা বলছি। তারপর যদি কোনও প্রশ্ন থাকে করবেন। দেখুন, আমি চুপচাপ থাকতে পারি না। বাড়িতে একলা থাকতে হয়, তাই স্কুলে ক্লাস নেওয়ার বাইরের সময়টা সহকর্মীদের পেছনে লাগতে ভালোবাসি। বিশেষ করে মহিলা কলিগদের সঙ্গে নির্দোষ ফ্লার্ট করি। আমার যা খ্যাংরাকাটি আলুরদম চেহারা তাতে কোনও মহিলারই আমাকে পছন্দ হওয়ার কথা নয়। জীবনে যে কয়েকজন গার্ল ফ্রেন্ড জুটেছিল, তারা কেউই পুরো এক বছর আমার সঙ্গে থাকেনি, আমার সহকর্মী মহিলারাও আমাকে নিয়ে মজাই করেন, কেউ আমার কথায় গুরুত্ব দেন না। সোজা কথায় ভাঁড় ছাড়া কিছু ভাবেন না, আমার তাতে আপত্তি নেই। জুডি হাডসন আমাদের স্কুলের হেড মিসট্রেস ছিলেন বলে আমি আগে তাঁর সঙ্গে ফ্লার্ট করতাম না, কিন্তু ওঁর বাবা প্রয়াত হওয়ার পর জুডি অস্বাভাবিক রকম চুপচাপ হয়ে যান। আমি কিছুদিন সেটা লক্ষ করে, ওঁকে ফ্লার্ট করা শুরু করি। উদ্দেশ্য ছিল ওঁকে একটু আনন্দ দেওয়া। আমার ধারণা ছিল যে আমাকে যখন কেউ সিরিয়াসলি নেয় না, তখন আমি ওকে একটু এনটারটেন করার চেষ্টা করতেই পারি। জুডি প্রথম দিকে আমাকে ডেকে একবার বারণ করেন, তখন উনি বিশেষ রেগে গেছেন বলে আমার মনে হয়নি।

    আমিও আর সবাইয়ের মতো জুডিকেও ফ্লার্ট করা চালিয়ে যাই। গত শুক্রবার বিকেলে স্কুলের করিডরে আমি জুডিকে চোখ মারি, মানছি ব্যাপারটা খুব বাড়াবাড়ি হয়ে গেছিল। জুডি, আমাকে তার ঘরে ডেকে পাঠান এবং মৌখিকভাব এক সপ্তাহ সাসপেন্ড করেন, বলে দেন সোমবার অফিসিয়ালি চিঠি দিয়ে দেবেন। ঘরে অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড মিসট্রেস লিয়া উইলিয়ামসনও উপস্থিত ছিলেন। লিয়া জুডিকে বুঝিয়ে বিরত করার চেষ্টা করেন, জুডি কোনও কথা শুনতে রাজি হননি। আমিও ততক্ষণে ঘটনার গুরুত্ব বুঝে জুডির কাছে ক্ষমা চাই। জুডি আমাকে ঘর থেকে চলে যেতে বলেন। আমার তখন টনক নড়ে গেছে। সাসপেনশনের চিঠি পাওয়া মানে, চাকরি জীবনে একটা কালো দাগ লেগে যাওয়া। সাসপেনশনের কারণ যা লেখা থাকবে, তা তো একজন শিক্ষকের পক্ষে সম্মানজনক নয়। সেদিন বাড়ি ফেরার পর উদ্বেগ আর কমছিল না, শেষে ঠিক করি পরের দিন সকালে জুডির বাড়ি চলে যাব, ওঁকে যেভাবে হোক বুঝিয়ে সাসপেনশন প্রত্যাহার করাব। সেই সুযোগ আমি আর পাইনি। লিয়া আমাকে বলল, মাইক ব্রিয়ারলি সাহেবকে সব খুলে বলতে, নয়তো যদি জুডি কোথাউ আমার সাসপেনশনের ব্যাপারে লিখিত নির্দেশ দিয়ে থাকে, তবে সন্দেহভাজনদের তালিকায় আমার নাম চলে আসতে পারে। কাগজে পড়েছি, জুডিকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, বিশ্বাস করুন অফিসার্স, আমি কখনও পিস্তল হাতে নিয়ে দেখিনি, চালানো দূরের কথা। জীবনকে আমি একটা মস্ত ঠাট্টা হিসেবেই চিরকাল দেখে এসেছি, সেই আমাকে নিয়েই জীবন যেন এক মস্ত ঠাট্টা আরম্ভ করে দিল।”

    ব্রিয়ারলি বললেন, “আপনি সেদিন যে বাড়ি ফিরে আসার পরে কোথাউ বেরোননি, তার কোনও প্রমাণ দিতে পারবেন?” অ্যালেক্স জানালেন, “না, বেরিয়েছিলাম। রোজই বেরোই। স্কুল ছুটির পর আমার ডেরায় ফিরতে ফিরতে মোটামুটি বিকেল পাঁচটা বেজে যায়, বাজিয়ে দিই বললেই ঠিক হবে। বাড়িতে তো পিছুটান নেই, ধীরে সুস্থে ঘুরতে ঘুরতে ফিরি। তারপর সন্ধ্যা বেলায় আবার বেরিয়ে পড়ি, কোনওদিন মিউজিক শো দেখি, কোনওদিন উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়াই। রাতের খাওয়া সেরেই আস্তানায় ফিরি। আমার ঘরে চা-কফি বানানো ছাড়া রান্নার কোনও ব্যবস্থা নেই। ব্রিক্সটনের স্ট্রিট ফুডই আমার ভরসা। সেদিন কোনও মিউজিক শো দেখিনি, একটা টেনশন ছিল, তাই ইচ্ছে করেনি। বাড়ি ফিরে আসি রাত সাড়ে আটটা নাগাদ। আমার কোনও অ্যালিবাই নেই। আমি খুন করিনি, সে কথা সত্যি, তবে তা প্রমাণ কী করে করব সেই অঙ্ক আমার জানা নেই। আরে, এই দেখুন কথায় কথায়, আপনাদের চা-কফি কিছুই অফার করা হয়নি। কী নেবেন?” ব্রিয়ারলি, কিছু নেবেন না বলে, অ্যালেক্সের সঙ্গে করমর্দন করে উঠে পড়লেন।

    ফেরার পথে ব্রিয়ারলি রবার্টসনকে বললেন, “তুমি কুশীলবদের সম্বন্ধে যেসব তথ্য জোগাড় করেছ, আর তাদের জেরা করে যা পেলাম, তাতে একটা প্যাটার্ন ফুটে উঠছে, তুমি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট অফিসার্সদের নিয়ে যে বিশেষ ব্যক্তিটির ছবি সিসিটিভি ফুটেজে দেখলে, তার আন্দাজ গত সাত মাসের ইমেল, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ খতিয়ে দেখে কাল সারাদিন ধরে রিপোর্ট তৈরি করো। মেল, হোয়াটসঅ্যাপ চেক করতে আরম্ভ করলেই সঠিক সময়কালটা তোমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। সন্দেহভাজনদের কারও অ্যালিবাই খুব পোক্ত নয়, তোমার ইনফর্মারদের খোঁজখবর করতে বলে দাও। বারবারার গাড়ি নর্থ লন্ডনে কখন, কোথায় গেছে বা আদৌ গেছে কি না, তা বার করতে অসুবিধা হবার কথা নয়। গ্যারির গাঁজার ঠেক খুঁজে বার করা তোমার ইনফর্মারদের কাছে বাঁ-হাতের কাজ, তবে সেখানকার সদস্যদের বিশ্বাসযোগ্যতা খুব বেশি নয়, তবুও তাদের সঙ্গে কথা বলে সত্য উদঘাটন করাই তোমার মতো গোয়েন্দার কাজ।

    আজ বুধবার, তা হলে পরশু শুক্রবার জুডি হাডসনের হত্যা রহস্যের সমাধান হয়ে যাওয়া উচিত। অ্যাডামস স্যারকে সে রকমই বলেছিলাম, দু’-তিন দিন সময় লেগে যাবে।”

    ৮)

    অধীরদা বললেন, “লেখার কায়দা দেখেছেন অতনুদা? মাইক ব্রিয়ারলি রবার্টসনকে কার মেল চেক করতে বলেছেন, তার নাম না বলে, বিশেষ ব্যক্তির মেল বলে চালিয়ে দিয়েছে।” আমি বললাম, “হ্যাঁ, শেষ অবধি সাসপেন্স ধরে রাখার জন্য দ্য ইনভেস্টিগেটরের রিপোর্টার এই কায়দা নিয়েছেন; কিন্তু আমরা কী কিছু বুঝে উঠতে পেরেছি?” অধীরদার মুখ দেখে মনে হল না, উনিও কিছু বুঝেছেন বলে। আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে, কিন্তু পরে যদি বোকা বনতে হয়, সেই ভেবে চেপে গেলাম।

    অধীরদা আবার শুরু করলেন, “অতনুদা, আমরা অন্তিম দৃশ্যে পৌঁছে গেছি। পনেরোই এপ্রিল শুক্রবার, ব্রিক্সটন পুলিশ চিফ ড্যামিয়েন ব্লেকের ঘরে, মি. ব্লেক ও জুডি হাডসন খুনের প্রাথমিক তদন্তকারী অফিসার, মি. মরিসন ছাড়াও জড়ো হয়েছেন, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের বড়কর্তা মি. টনি অ্যাডামস, গোয়েন্দা চূড়ামণি মাইক ব্রিয়ারলি, তাঁর সহকারী অ্যান্ড্রিউ রবার্টসন, জুডির স্বামী গ্যারি হাডসন, দুই বান্ধবী বারবারা ডেভিস, কেটি স্কিভার, জুডির মাসতুতো বোন অ্যামি জোন্স, ব্রিক্সটন হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষয়িত্রী লিয়া উইলিয়ামসন, অঙ্কের শিক্ষক অ্যালেক্স স্মিথ এবং পুলিশ বিভাগের দু’জন ভিডিয়োগ্রাফার। টনি অ্যাডামস মাইক ব্রিয়ারলিকে নির্দেশ দিলেন, “শুরু করো ব্রিয়ারলি। ব্যাপারটা সংক্ষেপে ব্যক্ত করো, যাকে বলে টু দা পয়েন্ট।” অ্যাডামস সাহেব ব্রিয়ারলির অতি নাটুকেপনা সম্বন্ধে অতিমাত্রায় ওয়াকিবহাল, তাই প্রথমেই লাগাম পরাতে সচেষ্ট হলেন।

    মাইক ব্রিয়ারলি যথারীতি তাঁর চিরাচরিত নাটুকে ভঙ্গিতে মি. অ্যাডামস এবং মি. ব্লেককে ঝুঁকে পড়ে অভিবাদন জানিয়ে, একবার উপস্থিত সবাইকে ভালো করে নিরীক্ষণ করে নিলেন। তারপর রবার্টসনের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি সেদিন প্রশ্ন করেছিলে, যে আমার কী কী প্রশ্ন আছে আর কী উত্তর আমি জানি। আচ্ছা, বলো তো রবার্টসন, খুনী কেন গুলি করে কাচ ভেঙে, জুডিকে জানান দিয়ে বাড়িতে ঢুকবে? জুডি তো তা হলে পুলিশে ফোন করত, সেটা তো সে করেনি। তবে তর্কের খাতিরে ধরে নিতে হয় জুডি তখন ওয়াশরুমে ছিল। সেটা আততায়ী জানবে কী করে? জুডির বাড়ির লন বেশ বড় হলেও, বাড়িটা তো তিন বেড রুম, ডাইনিং-এর একতলা বাড়ি। সেই বাড়ির কাচ ভাঙলে, বাড়ির বাসিন্দা সঙ্গে সঙ্গে আওয়াজ পাবে, তাও তিন তিনটে পিস্তলের গুলি চলেছে। এটা প্রশ্নও বটে, উত্তরও কী নয় রবার্টসন? পিস্তলের গুলি কি কাচ ভাঙার জন্য খুব ভালো কোনও অস্ত্র? বরং লাঠি বা ওই ধরনের কিছু দিয়ে কাচ ভাঙা তো অনেক সোজা। আমি সেদিন একটা লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলির কথা বলেছিলাম। পুলিশের ফটোগ্রাফার যে ফটো তুলেছিলেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে বারান্দার কাচের কাঠের প্যানেলে একটা গুলির দাগ রয়েছে, পরে অকুস্থলে তদন্তে গিয়ে তোমাকে ওই দাগের দু’দিক থেকেই ছবি তুলিয়েছিলাম। স্যারদের ছবিটা ভালো করে দেখাও। কাঠের প্যানেলে গুলির দাগ বলে দিচ্ছে যে গুলি চলেছিল বারান্দার ভিতর দিক থেকে, বাইরে থেকে নয়, কারণ গুলি যেদিক দিয়ে ঢোকে সেদিকের ছিদ্র তুলনামূলকভাবে যেদিক দিয়ে বেরোয় তার থেকে ছোট হয়। এ ক্ষেত্রে বাইরের ছিদ্র আকারে বড়। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, খুনী জুডি হাডসনের অত্যন্ত পরিচিত, তাকে দরজা খুলে দিয়েছিল জুডি নিজে, বারান্দার কাচে গুলি করা হয়েছে জুডিকে খুন করার পর। পুলিশকে বিভ্রান্ত করবার জন্য এই প্রচেষ্টা। ধূর্ত আততায়ী চেয়েছিল, অন্যান্য অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে পুলিশ জুডি হত্যায় গ্যাংস্টারদের জড়িয়ে থাকার সম্ভাবনাটাও বিবেচনায় রাখুক। সে মনে করেছিল, লাঠি জাতীয় কিছু দিয়ে মেরে কাচ ভাঙার চেয়ে গোলা গুলির সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সংযোগটা বেশি গভীর মনে হবে।

    আর একটা জিনিস এর থেকে প্রমাণিত হয়, খুনী পিস্তল চালাতে জানলেও, তাতে খুব একটা দক্ষ নয়। কাচে তিনটে গুলি চালাতে গিয়ে একটা ফস্কেছে।

    একজন পেশাদার খুনী এই ভুল করবে না। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে খুনের সময় বলা হয়েছে ২০.৪০-২১.৪০-এর মধ্যে। মৃত্যুর কারণ মাথার পেছনে গুলি। একজন মহিলাকে যৌন নিপীড়ন করার সময় বাধা পেয়ে তার মাথায় গুলি করলে সেটা মাথার পেছনে লাগা প্রায় অসম্ভব। তোমার মনে আছে রবার্টসন, মি. ব্লেক যেদিন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে এসে জুডির খুনের ঘটনার বর্ণনা করছিলেন, সেদিন বলেছিলেন, এই বছরের গোড়ায় ব্রিক্সটনে গ্যাংস্টাররা দু’জন মহিলাকে বাড়িতে ঢুকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছিল। এটা অনেকেই কাগজে পড়েছে, খুনীও পড়ে থাকতে পারে এবং মাথায় গুলি করে হত্যাটা ওই দুই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করে দেখিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার একটা অপকৌশল হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। তবে প্রথম দু’ক্ষেত্রে গুলি করা হয়েছিল মাথার সামনের দিকে, আর জুডিকে গুলি করা হয়েছিল মাথার পিছন দিকে।

    আর একটা উল্লেখযোগ্য কথা পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘দা ভিক্টিম ওয়াজ সেক্সুয়ালি পেনিট্রেটেড বাট নো সিমেন ওয়াজ ফাউন্ড অন হার প্রাইভেট পার্টস অর সামহোয়্যার এল্স অফ হার বডি অর অন হার ক্লোদস। এ টা কী করে সম্ভব? একজন পুরুষ চূড়ান্ত যৌন নিপীড়নের মতো ঘৃণ্য কাজে প্রবৃত্ত হল আর এক বিন্দু বীর্যপাত হল না?

    আসলে যৌন নিপীড়নের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। জুডিকে খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করা হয়, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সে কথাই বলছে। এ ক্ষেত্রে গুলি মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়ে দেওয়ালে লেগেছে, ভিক্টিমকে শোওয়া অবস্থায় গুলি করলে সেটা হত না। জুডির জামা কাপড় ছিঁড়ে দিয়ে, গায়ে আঘাত করে যৌন নির্যাতনের ঘটনা পরে সাজানো হয়েছে। জুডিকে পেনিট্রেট করতে ব্যবহার করা হয়েছে একটি কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ, যা সব সেক্স টয়েজের দোকানে পাওয়া যায়।”

    ব্রিক্সটন পুলিশ প্রধান ড্যামিয়েন ব্লেক রোষ কষায়িত লোচনে মি. হাডসনের দিকে তাকিয়ে এই সময় বলে উঠলেন, “আর গ্যারি হাডসনের একটি সেক্স টয়েজের দোকান আছে।” ঘরে উপস্থিত সকলেরই দৃষ্টি তখন গ্যারির দিকে ঘুরে গেছে। গ্যারিকে দেখে মনে হচ্ছে সে প্রকৃতই ভয় পেয়ে গেছে। মি. ব্লেকের শারীরিক ভাষা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, তিনি জর্জ মার্টিনের জামাই গ্যারি হাডসনকে এতটুকু জামাই আদর দেখাবেন না। গ্যারি কিছু বলতে যাচ্ছিল, তাকে থামিয়ে দিয়ে ব্রিয়ারলি বললেন, “সেক্স টয়েজের দোকান প্রসঙ্গে পরে আসছি।

    জুডির গায়ে আঁচড়ের দাগগুলো সবই খুব সুকৌশলে খাওয়ার কাঁটা ছুরি দিয়ে করা হয়েছে, সেদিন জুডির বাড়িতে একটা খাওয়াদাওয়ার আসর বসেছিল। জুডি ছাড়া তিন জন উপস্থিত ছিলেন এবং এই চার জনেরই ফিঙ্গারপ্রিন্ট খুব স্বাভাবিকভাবে অকুস্থলে সর্বত্র পাওয়া গেছে; যেমন পাওয়া গেছে গ্যারি হাডসনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট। তার বয়ান অনুসারে সে জুডিকে মৃত জেনেও ধরেছিল, নিজের বাড়িতে নিজের স্ত্রীকে ওই অবস্থায় দেখলে যে কেউ তাই করতে পারে। অর্থাৎ অকুস্থলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট আমাদের খুব বেশি সাহায্য করতে পারছে না। তবে ব্রিক্সটনের গ্যাংস্টারদের হিটম্যানরা জুডিকে মেরেছে, এ তত্ত্ব বাতিল করা যেতে পারে। তারা এই ধরনের পরিকল্পনা করবে না। আততায়ী, খুনের বিভিন্ন সম্ভাব্য রাস্তা খুলতে গিয়ে, নিজের অজান্তে এই রাস্তাটা বন্ধ করে ফেলেছে।”

    টনি অ্যাডামস বললেন, “কিন্তু ব্রিয়ারলি, তারা বাইরে থেকে এই হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেনি, সে সিদ্ধান্তে এখনই উপনীত হওয়া যায় না। তুমি সন্দেহভাজনদের জেরা করে যে রিপোর্ট আমাকে দিয়েছ, তাতে ওই ধরনের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।”

    ব্রিয়ারলি বললেন, “হ্যাঁ, স্যার সেই কথাতেই আসছি। আপনি ঠিকই বলেছেন, বারবারা ডেভিস এবং কেটি স্কিভার এই দু’জনেরই জুডিকে মারার মোটিভ আছে এবং তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যায়, ব্রিক্সটনের অন্ধকার জগৎ তাদের পরিচালনা করতে পারে। বারবারা এবং কেটি তাদের বয়ানে জানিয়েছে তারা সাড়ে আটটায় জুডির বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে অ্যামিকে ড্রপ করে তারপর নর্থ লন্ডনের দিকে চলে যায়। জুডির মৃত্যুর সময়কাল রাত ৮.৪০-৯.৪০-এর মধ্যবর্তী সময়। যদি ধরে নেওয়া যায় অ্যামি জোন্সকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে এসে তারা জুডিকে খুন করেছে, তবে জুডিকে মারতে এবং পরবর্তী নাটক মানে যৌন নির্যাতন, কাচ ভাঙা সাজাতে কম করে হলেও মিনিট পনেরো-কুড়ি সময় লাগবেই। ব্রিক্সটন স্কোয়ারে জুডির বাড়ি থেকে গাড়িতে নর্থ লন্ডনের দুরত্ব পঁচিশ মিনিট। সেদিন রাত ৯.০২ মিনিটে বারবারার গাড়ি নর্থ লন্ডনের এক পাম্পে ডিজেল ভরে, বারবারা তার পার্টস জুডির বাড়িতে ফেলে গিয়েছিল। কেটি নিজের কার্ড থেকে ডিজেলের পেমেন্ট করে। বারবারা এবং কেটি এই ডিজেল ভরার ব্যাপার জেরার সময় উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি, এটা আমরা পূর্বেও বহু কেসে লক্ষ করেছি, পুলিশি জেরার সময় মানুষ ঘাবড়ে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ দিয়ে যায়। ওদের ভাগ্য ভালো যে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে অ্যান্ড্রিউ রবার্টসন নামের একজন অফিসার আছেন, যার নেটওয়ার্ক খড়ের গাদা থেকে মুহূর্তে সুচ খুঁজে আনতে পারে। বারবারা আর কেটির জন্য এই ডিজেল ভরা বিরাট অ্যালিবাই হয়ে গেছে। জুডিকে ব্রিক্সটন স্কোয়ারে ৮.৪০ মিনিটে খুন করে, ৯.০২-এ নর্থ লন্ডনের ওই নির্দিষ্ট পাম্পে ডিজেল ভরা অসম্ভব। অঙ্কের হিসেবে ওখান থেকে ৯.৩০-৩২ মিনিট নাগাদ জুডির বাড়িতে ফিরে এসে খুন করা সম্ভব, সাইকলোজিকালি নয়। মারবার হলে প্রথমেই মারার কথা। ফিরে এসে মারলেও বারবারা তার পার্টস ওখানে ফেলে রাখত না, আর ৯.৩০-৩২ নাগাদ ফিরে আসার পর, জুডি দরজা খুলে দেওয়ার পর তাকে বেডরুমে এনে মারতে আরও দু’-তিন মিনিট তো ব্যয় হবেই। যত দেরি হচ্ছে তত গ্যারির ফিরে আসার সম্ভাবনাও বাড়ছে। সেই ঝুঁকি এরা দু’জন কেন নেবে? গ্যারি জেরায় বলেছিল সে পৌনে দশটা-দশটায় বাড়ি ফেরে। আমার ধারণা আততায়ী খুব ভালোভাবে সে খবর জানত এবং ৮.৪০-৯.১০-এর মধ্যে কাজ সারলে তার পক্ষে ঝুঁকি অনেক কম।”

    টনি অ্যাডামস প্রশ্ন করলেন, “ব্রিয়ারলি, তোমার ধারণা অনুযায়ী আততায়ী গ্যারির ফেরার সময় জানত, তার মানে গ্যারি হাডসন খুনী নয়?”

    ব্রিয়ারলি বললেন, “না, গ্যারি তার স্ত্রীকে খুন করেনি। আগে অ্যালেক্স স্মিথের অ্যালিবাই খতিয়ে দেখা যাক। জুডির শরীরের ছুরিকাঘাতগুলো কিন্তু কোনওটাই প্রাণঘাতী নয়, এ ক্ষেত্রেও কিচেন নাইফ ব্যবহার করা হয়েছে। কোনও পূর্ণবয়স্ক স্বাভাবিক স্বাস্থ্যর মানুষ ছুরি দিয়ে আঘাত করলে তা অনেক গভীর হত, হত্যাকারী হয় অপ্রাপ্তবয়স্ক অথবা শারীরিকভাবে দুর্বল। অ্যালেক্স প্রচণ্ড রোগা হলেও শারীরিকভাবে দুর্বল নয়, ওর চেহারার ধাতটাই রোগা। অ্যালেক্সের বাড়ি থেকে জেরা করে বেরনোর সময় আমি ইচ্ছা করেই অ্যালেক্সের সঙ্গে করমর্দন করি, সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গে করমর্দন রীতিবিরুদ্ধ। আমার উদ্দেশ্য ছিল ওর শারীরিক শক্তি পরখ করা, অ্যালেক্সের পাঞ্জা রীতিমতন শক্তিশালী। এইসব ছুরিকাঘাত অ্যালেক্সের করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অ্যালেক্সকে জুডি সাসপেন্ড করে শুক্রবার বিকেলে, অত অল্প সময়ে পরিকল্পনা করে সেদিন রাতেই জুডিকে খুন করে সাসপেনশন এড়ানো এবং শিক্ষক হিসেবে নিজের সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করা থিওরিটিকালি অসম্ভব না হলেও অতীব কঠিন কাজ। অ্যালেক্স জেরায় বলেছিল অ্যালিবাই প্রমাণ করার অঙ্ক সে জানে না। রবার্টসনের রিপোর্ট বলছে সেদিন রাত ৮.২৫ মিনিটে অ্যালেক্স তার সহকর্মী লিয়া উইলিয়ামসনকে ফোন করে, সেই ফোনালাপ রাত দশটার পরেও জারি ছিল। গত শুক্রবার থেকে এই শুক্রবার অবধি প্রতিদিন রাতে লিয়া ও অ্যালেক্সের ফোনালাপ ঘণ্টাখানেকের কমে থামছে না। স্কুলের পরেও দু’জনকে একসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে, রাতের খাওয়া একা একা খাওয়ার দিন অ্যালেক্সের ফুরিয়ে গেছে। ব্রিক্সটনে কিছুদিনের মধ্যে বিয়ের সানাইয়ের সুর শোনা গেলে আমি আশ্চর্য হব না, আমাদের সেখানে নিমন্ত্রণও জুটে যেতে পারে।” লিয়াকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল সে বস্তুতই লজ্জা পেয়েছে।

    টনি অ্যাডামস বললেন, “তুমি যেদিকে ইঙ্গিত করতে চলেছ, সে তো অভাবনীয়। আচ্ছা গ্যারি হাডসন যে এই কাজ করেনি, সেটা কী করে বলছ?”

    ব্রিয়ারলি বললেন, “প্রথমত আগেই উল্লেখ করেছি, জুডির শরীরের ছুরিকাঘাতগুলো অগভীর, গ্যারির মতো পুরুষ আঘাত করলে তা আরও গভীর হত। দ্বিতীয়ত গ্যারির পক্ষে কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ ব্যবহার করে স্ত্রীকে যৌন নিপীড়নের নাটক সাজানো অস্বাভাবিক রকমের বোকামির কাজ হত, যার সেক্স টয়েজের দোকান আছে, সে কি এইভাবে নিজেকে খুনী হিসেবে বিজ্ঞাপিত করবে? তৃতীয়ত সেদিনের পার্টিতে ব্যবহার করা কাঁটা চামচে জুডি এবং তার বান্ধবীদের হাতের ছাপ থাকলেও, গ্যারির নেই। আগেই বলেছি, জুডির শরীরে আঁচড়ের দাগ আসলে ডাইনিং টেবিলে ব্যবহৃত ছুরি কাঁটা দিয়ে খোঁচানোর দাগ। নখ-দাঁতের দাগ হলে ফরেন্সিক টেস্টে ধরা পড়বেই সেটা খুনীর অজানা নয়। অবশ্য একটা যুক্তি, সে রাতের পার্টিতে ব্যবহৃত নয় এমন ছুরি কাঁটা গ্যারি ব্যবহার করে থাকতে পারে। তবে সেটা প্রথম দু’টি যুক্তি খণ্ডন করার মতো জোরালো নয়। গ্যারির অ্যালিবাই হচ্ছে সে জুডি খুন হওয়ার সময় গাঁজার ঠেকে ছিল, গ্যারির গাঁজার ঠেকের বন্ধুরা সেটা সমর্থন করলেও, তাদের সাক্ষ্য খুব একটা বিশ্বাসযাগ্য নয়। তার থেকে দেখা যাক আসলে নিশ্চিতভাবে খুনটা কে করেছে সেটা প্রমাণ হয় কি না। তা হলে গ্যারি যে নির্দোষ তা পুরোপুরি প্রমাণিত হবে।

    স্যার, সম্ভাব্য আততায়ীদের মধ্যে একমাত্র অ্যামি জোন্সের পিস্তলের লাইসেন্স আছে, সে নিশ্চিন্তভাবেই পিস্তল চালাতে জানে, যদিও খুনের জন্য সে লাইসেন্সড পিস্তল ব্যবহার করেনি।”

    অ্যামি জোন্স চিৎকার করে উঠল, “চমৎকার, অনেকক্ষণ ধরে ধীরে ধীরে আপনি আমার দিকে এগোচ্ছিলেন। এখন তো মনে হচ্ছে যে গ্যারি নয়, আপনিই গাঁজা খান। আমি একজন ক্যান্সার পেশেন্ট, জুডি আমার বোন, আমার প্রিয় বান্ধবী, জুডি ছাড়া আমার কেউ নেই, তাকে আমি নিজের শেষ সময়ে খুন করব? আপনি কি গ্যারির থেকে টাকা খেয়ে আমাকে ফাঁসাচ্ছেন? আপনাকে আমি কোর্টে টেনে নিয়ে যাব। বুঝবেন কত ধানে কত চাল।”

    টনি অ্যাডামস অ্যামিকে ধমকে উঠলেন, “আপনি চুপ করুন। পরে যত ইচ্ছে কোর্টে যাবেন, এখন ব্রিয়ারলিকে বলতে দিন। একজন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড অফিসার, প্রমাণ ছাড়া আজেবাজে কথা বলে না।”

    ব্রিয়ারলি অ্যাডামস সাহেবকে নাটকীয় ভঙ্গিতে অভিবাদন করে আবার শুরু করলেন। এই অবধি পড়ে অধীরদা বললেন, দাঁড়ান দরজার ঘণ্টি বেজেছে, মানে আমাদের বিরিয়ানি হাজির, তিনটে বেজে গেছে, না খেয়ে আর এক লাইন পড়তে পারছি না। গল্পের নেশায় সময় হু-হু করে পেরিয়ে গেলেও খিদে চাগাড় দিচ্ছিল বলে কিছুক্ষণ আগে খাবারের অ্যাপে বিরিয়ানির অর্ডার দিয়ে দিয়েছিলাম। খেতে খেতে বললাম, “অধীরদা, আমি একটা পয়েন্ট অনেকক্ষণ থেকে ভাবছি, যদি ঠিক না হয় তাই আর সাহস করে বলিনি, তবে খেয়ে উঠে আপনি পড়া শুরু করার আগেই সেটা লিখে রাখব, যদি মিলে যায় তবে আপনাকে দেখাব, নয়তো ছিঁড়ে ফেলব।” অধীরদা বললেন, “বেশ তাই হোক।” খাওয়াদাওয়ার পর সিগারেটে দম দিয়ে অধীরদা আবার মাইক ব্রিয়ারলির বক্তব্য শুরু করলেন।

    “স্যার, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট দেখে স্পষ্ট বুঝেছিলাম জুডিকে যৌন নিপীড়ন করা হয়নি। যৌন নিপীড়নের এই চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছিল তদন্তকারী অফিসারকে বিপথে চালিত করতে। প্রথম থেকেই আততায়ীর উদ্দেশ্য ছিল সন্দেহের একাধিক অভিমুখ সৃষ্টি করে তদন্তকারীকে দিশাহারা করে দেওয়া।

    অপর দিকে ব্রিক্সটন পুলিশ চিফ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তদন্তের স্বার্থে, মিডিয়ার থেকে এই যৌন নিপীড়নের খবর গোপন রেথেছিলেন। শুধু গুলি করে খুন করা হয়েছে--এর বাইরে শব্দ খরচ করেননি। সুতরাং পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আমরা যারা তদন্তকারী অফিসার্স, তাদের বাইরে কারও গোচর হওয়ার কথা নয়। আমি সন্দেহভাজনদের জেরা করার সময় একবারও যৌন নিপীড়নের কথা উল্লেখই করিনি। অ্যামি জোন্স জেরার প্রথমেই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বলল, জুডিকে যে যৌন নির্যাতন করে খুন করেছে, তার শাস্তি চাই।

    এই কথা উল্লেখ করার পর অ্যামি জোন্সকে সন্দেহ না করার রাস্তা খোলা থাকে না। আমি অনুমান করি, যৌন নির্যাতনের নাটক নিখুঁত করবার জন্য সে পেনিট্রেশনের কাজে কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ ব্যবহার করবে। গ্যারির দোকানে জোন্স যাবে না, ব্রিক্সটনে আর একটি সেক্স টয়েজের দোকান আছে, আমি আর রবার্টসন সেখানে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতেই দেখলাম শুক্রবার সকালে অ্যামি সেই দোকানে গিয়ে ওই বস্তুটি কিনেছিল। নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতেই অ্যামি জোন্স শুক্রবারের রাতকে বেছে নিয়েছিল। ওর আগ্রহেই বন্ধ হয়ে যাওয়া শুক্রবারের সান্ধ্য পার্টির আয়োজন, আবার ওর শরীর ভালো লাগছে না অজুহাতে সাড়ে আটটা নাগাদ পার্টি ভঙ্গ। মিস জোন্স জানত, গ্যারি রাত পৌনে দশটা থেকে দশটার মধ্যে বাড়ি ফেরে, তার আগেই কাজ হাসিল করার জন্য বারবারা আর কোটিকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দিতেই কৌশলে পার্টি ভঙ্গ। যার অনুরোধে বন্ধ হওয়া পার্টি আবার শুরু হল, সে অসুস্থ বোধ করলে অন্যরা কিছুতেই পার্টি চালিয়ে যেতে পারে না, বিশেষত সে যখন মারণ রোগে আক্রান্ত। বারবারা আর কেটি অ্যামিকে বাড়িতে নামিয়ে চলে যাওয়ার অল্পক্ষণের মধ্যেই সে পুরো প্রস্তুতি নিয়ে জুডির বাড়িতে ফিরে আসে। জুডি তার সুহৃদকে দরজা খুলে দিতে দ্বিধা করেনি। তখন কি সে জানত হায়, অ্যামিরূপী মৃত্যু তার দুয়ারে কড়া নেড়েছে? তারপরের ঘটনা বর্ণনা করে আর সময় নষ্ট করব না, কীভাবে গুলি করা হল, তারপর অন্তর্বাস ছিঁড়ে এবং অন্যান্য ঘৃণ্য উপায়ে যৌন নিপীড়নের চিত্রনাট্য সাজানো হল, কাচ ভেতর থেকে ভেঙে বোঝানোর চেষ্টা করা হল যে বাইরে থেকে কাচ ভেঙে ওই পথে প্রবেশ করা হয়েছে, পূর্বেই সেসব বিশদে আলোচনা করেছি। যৌন নিপীড়নের সময় জুডি বাধা দিয়েছে বোঝানোর জন্যই ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। অ্যামি জোন্স প্রচণ্ড মানসিক শক্তির অধিকারিণী, কিন্তু মারণ রোগে ভুগে শারীরিকভাবে দুর্বল, তাই জুডির শরীরের ছুরিকাঘাতগলো সবই মামুলি ধরনের। পুলিশকে বিভ্রান্ত করার সব রকম ফাঁদ অ্যামি জোন্স সুচতুরভাবে পেতে দিয়েছিল। বারবারা আর কেটির কোনও মোটিভ থাকতে পারে, সেটা হয়তো অ্যামির অজানা ছিল। অ্যালেক্স স্মিথের সাসপেনশনের ঘটনাও অ্যামির অজানা থাকতে পারে, কিন্তু সে নিশ্চিত ছিল, গ্যারি হাডসনকে এই কেসে জড়ানো যাবে এবং জর্জ মার্টিনের নাম ব্রিক্সটনের পুলিশ ইতিহাসে যেভাবে লেখা আছে, তাতে করে এ কেসে পুলিশকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সংযোগও খুঁজে দেখতে হবে।

    এ বার আসা যাক খুনের মোটিভে। এই খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল সাত মাস ধরে, ধীরে ধীরে প্রখর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। ঠিক এই রকম সময়ে আমেরিকার পৃথিবীবিখ্যাত, ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ একটি যুগান্তরকারী চিকিৎসার সাফল্যের পূর্বাভাস ছাপা হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেন তারা কয়েক মাসের মধ্যেই ওষুধের প্রয়োগে এক মারণ রোগের সম্পূর্ণ বিনাশের কথা সাফল্যর সঙ্গে ঘোষণা করতে সক্ষম হবেন, তবে প্রাথমিকভাবে এর দাম হবে আকাশছোঁয়া, সাধারণের সাধ্যের বাইরে। সেইজন্য তারা দুঃখ প্রকাশও করেন।

    টনি অ্যাডামস, এ বার বিরক্তি প্রকাশ করলেন, “ব্রিয়ারলি, হেঁয়ালি নয়। কোন ওষুধের কথা বলছ? তার সঙ্গে জুডি হাডসন হত্যা রহস্যর কী সম্পর্ক?”

    ব্রিয়ারলি বললেন, “স্যার, জুডি হাডসন হত্যার পুরো কুনাট্যই সেই ওষুধ এবং তার মহার্ঘতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমি Dostarlimab ওষুধের প্রয়োগে কোলন বা রেক্টাল ক্যানসারের নিরাময়ের কথা বলছি। নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে প্রথম পেপার ছাপার পরে থেকে তারা ধারাবাহিকভাবে এই বিষয়ে পেপার ছাপতে থাকে এবং অবশেষে প্রথম পেপার ছাপার ছ’মাস পরে মানে গত মাসে

    তারা ঘোষণা করে যে, ‘Cancer vanishes in all 12 patients for the first time in history during drug trial in USA. The rectal cancer patients were given, ‘dostarlimab’ every three weeks for six months.’ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা উচ্ছ্বসিত এবং আরও এই ধরনের ক্যানসার পেশেন্টের ওপর এই ওষুধের প্রয়োগ তারা করতে চান। অ্যামি জোন্স খুব স্বাভাবিকভাবে একজন কোলন ক্যানসার পেশেন্ট হিসেবে প্রথম থেকে নিউ ইংল্যান্ড জার্নালের পেপার্স ফলো করেছে এবং ওখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। রবার্টসন, অ্যামি জোন্সের মেল অ্যাকাউন্ট থেকে সেসব তথ্য জড়ো করে ফেলেছে।

    কিন্তু এই ওষুধের একটি ডোজের দাম এগারো হাজার ডলার, তা হলে পুরো চিকিৎসার খরচ চিন্তা করে দেখুন।

    এরপর আমেরিকায় যাতায়াত, থাকার খরচ। এত টাকা কোথা থেকে আসবে? অ্যামি জোন্সের অর্থনৈতিক অবস্থা এই বিপুল ব্যয় বহন করার মত নয়, বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে কোনও খোরপোশ সে আদায় করতে পারেনি। একটি অফিসের রিসেপশনিস্ট হিসেবে যে অর্থ সে রোজগার করত, সেটা এই চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট ছিল না।

    অ্যামি জোন্স আর জুডি হাডসন বয়সে পিঠোপিঠি, সম্পর্কে মাসতুতো বোন, ঘনিষ্ঠতম বান্ধবী। দু’জনের বাসভবনের নৈকট্য, জুডির পিতৃবিয়োগের পর মানসিক নৈরাশ্য, গ্যারির গাঁজার নেশা, সব কিছুকে সুচতুরভাবে কাজে লাগিয়ে অ্যামি একটার পর একটা দাবার চাল দিয়ে গেছে। জুডি কিন্তু তার স্বামীকে অত্যন্ত ভালোবাসত। সেইজন্যই অ্যালেক্স স্মিথের ফ্লার্টকে কড়া হাতে দমন করতে চেয়েছিল, তার জীবনে অন্য পুরুষের কোনও স্থান ছিল না। আমরা জুডির অ্যাটর্নির থেকে খোঁজ নিয়েছি, জুডি কখনও গ্যারিকে ডিভোর্স করা বা তার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার প্রসঙ্গই উত্থাপন করেনি।

    ওগুলো সে গ্যারিকে বলত ভয় দেখানোর জন্য। গ্যারিরও তেমনই অনুমান ছিল।

    অ্যামি জোন্স গ্যারির প্রভাবে ফিলের নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বুঝিয়ে ফিলকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠাতে পারলেও, গ্যারিকে যে জুডির জীবন থেকে সরানো যাবে না তা বুঝতে পারে। তখন তার নজর পড়ে জুডির আড়াই লক্ষ পাউন্ডের ইনশিওরেন্স পলিসির উপর। একবার যদি গ্যারির বদলে নমিনি হিসেবে নিজের নাম ঢোকানো যায়, তবে জুডিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে কতক্ষণ? অ্যামি, জুডির বাকি কোনও সম্পত্তির দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টাই করেনি। অর্থের জন্য জুডি খুন হয়নি প্রমাণ করার জন্য জুডির দামি আঙটিতে হাত দেয়নি।

    চার মাস আগে একমাত্র সন্তানকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠানোর পর থেকে গ্যারি বাড়িতে প্রবল অশান্তি করছিল, গাঁজা খাওয়ার সমস্যা, ব্যবসায় মন না দেওয়া এইসব উপসর্গ তো আগে থেকেই ছিল। অ্যামি, জুডিকে বোঝায় এক মাসের জন্য গ্যারির জায়গায় তাকে নমিনি করতে এবং এক মাস বাদে গ্যারিকে জানাতে যে জুডি কী পদক্ষেপ নিয়েছে। গ্যারি, যদি জুডির নমিনি হিসেবে আবার নিজেকে দেখতে চায়, তবে তাকে সংযত হতে হবে। নয়তো অ্যামির মৃত্যু হলেও জুডি অন্য কাউকে তার নমিনি করবে। এই প্রস্তাব জুডির মনে ধরে, সেও মনে করে, বেয়াড়া গ্যারিকে ধাক্কা দেওয়ার এটা দারুণ পরিকল্পনা। এমনিতে ডিভোর্সের ভয় দেখিয়ে গ্যারিকে বাগে আনা যাচ্ছে না। ইনসিওরেন্স পলিসির নমিনি হিসেবে নাম কাটা গেছে দেখলে গ্যারির টনক নড়তে বাধ্য।

    এর ফলে কোলন ক্যানসারের পেশেন্ট অ্যামির কোনও স্বার্থসিদ্ধি হতে পারে, সেটা জুডির কল্পনায় আসেনি। অ্যামি যেভাবে নিজেকে এই পৃথিবীতে আর কয়েক মাসের অতিথি হিসেবে সকলের কাছে তুলে ধরত, তার অবস্থা অতটা সঙ্গিন নয়। ওর মেডিক্যাল রিপোর্ট বলছে শারীরিক দুর্বলতা সত্ত্বেও অ্যামির কয়েক বছর বেঁচে থাকার কথা। আজকাল অনেক কোলন ক্যানসার পেশেন্ট ১০-১৫ বছর বেঁচে থাকে। এর মধ্যে Dostarliamb এর সাফল্যর কথা ধরছি না। জুডির মৃত্যুর আগের মঙ্গলবার, নমিনি পরিবর্তনের ঘোর অমঙ্গল কাজ জুডি সম্পন্ন করে। প্ল্যান অনুযায়ী গ্যারিকে কিছু জানানো হয়নি, তাকে তো এক মাস বাদে জুডি প্রয়োজনে কতটা কঠিন হতে পারে জানিয়ে ধাক্কা দেওয়া হবে। জুডি এবং অ্যামির এই সংক্রান্ত হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের বিস্তারিত প্রিন্ট আউট রবার্টসন ফাইল বন্দী করেছে।

    কার্যসিদ্ধি হয়ে যাওয়ার পর অ্যামি তাদের শুক্রবার রাতের বন্ধ হয়ে যাওয়া রামি খেলার আসরকে কৌশলে চালু করে সেদিন রাতেই আঘাত হানে। পুলিশের পক্ষে ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে অপরাধীকে শনাক্ত করার রাস্তা অ্যামির মাস্টার স্ট্রোকে বন্ধ হয়ে যায়। এটা আগেই বলেছিলাম, পুনরায় উল্লেখ না করে পারলাম না।

    জুডিকে আঘাত করার কিচেন নাইফ উদ্ধার করা যায়নি। আমার ধারণা সার্চ ওয়ারেন্টসহ ব্রিক্সটন পুলিশ অ্যামির বাড়িতে পৌঁছলে ওই কিচেন নাইফ, কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ এবং ঘাতক পিস্তল তিনটেরই খোঁজ পেয়ে যাবে। না পেলে, অ্যামি জোন্স নিশ্চয়ই ওগুলো লুকোনোর জায়গা পুলিশকে দেখিয়ে দেবে। বাকি থাকে অ্যামি জোন্সের ব্যবহার করা পিস্তলের উপর আলোকপাত করা। অ্যামি স্বভাবতই নিজের লাইসেন্সড পিস্তল ব্যবহার করেনি। মি. ব্লেক জানিয়েছিলেন, এই পিস্তল ২০১১-এর খোওয়া যাওয়া ব্রিক্সটন পুলিশের পিস্তলগুলোর মধ্যে একটি। অ্যামি জোন্সের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া স্বামী একজন ক্যারিবিয়ান, মি. আদ্রিয়ান জনসন। এটি তার খোয়া যাওয়া একটি অবৈধ পিস্তল। ২০১১-এর পুলিশ বনাম আফ্রো-ক্যারিবিয়ান সঙ্ঘর্ষের সময় জনসন এই পিস্তলটি পুলিশের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল। এই জন্য জনসনের শাস্তি হবেই, তবে তিনি জুডি হত্যার গুরুত্ব বুঝে কোর্টে সাক্ষী দিতে রাজি হয়েছেন। বেচারার কপালে এখনও পাঁচটা স্টিচের দাগ জ্বলজ্বল করছে, গার্হস্থ্য হিংসার শিকার জনসন তার তৎকালীন স্ত্রী অ্যামি জোন্সের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেই গ্রাউন্ডে কোর্টে তিনি বিবাহবিচ্ছেদ পেয়ে গেলেও ওই দুঃসহ দিনগুলো ভুলতে পারেননি।

    অ্যামি জোন্সের বাঁচার অধিকার ও তীব্র ইচ্ছেকে আমি অস্বীকার করতে পারি না, তবে তা নিজের পরম সুহৃদের নৃশংস হত্যার বিনিময়ে হতে পারে না। মি. ব্লেক, মি. মরিসন, আপনাদের আসামী কিন্তু অতি বিপজ্জনক, নজরে রাখবেন, আর ওর মায়ের মৃত্যুর কারণটা একটু ভালোভাবে অনুসন্ধান করুন। তিন মাস আগে বাথরুমে পড়ে গিয়ে মৃত্যুটা অস্বাভাবিক লাগছে। এতে অ্যামির কী অর্থনৈতিক লাভ হয়েছে তা তদন্ত করে দেখুন। বডি তুলে পোস্টমর্টেম করান, প্রয়াত ভদ্রমহিলার মেডিক্যাল রিপোর্ট চেক করে দেখুন তেমন কোনও অসুস্থতা ছিল কি না, হঠাৎ বাথরুমে তিনি পড়ে গেলেন কেন? রবার্টসন, তবে চলো; অ্যাডামস স্যার এবং মি. ব্লেক অনুমতি করলে আমরা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের দিকে পা বাড়াতে পারি। স্যারের তো এখনও মি. ব্লেকের সঙ্গে কিছু ফর্মালিটিজ বাকি আছে।” রবার্টসন মনে মনে বলল, “বুড়ো ছুঁচোর আর তর সইছে না, কতক্ষণে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে ফিরে নিজের ঢাক পেটাতে বসবে সেই ধান্দায় আছে।” মুখে বলল, “হ্যাঁ বস, চলুন তবে।”

    অধীরদা বই বন্ধ করে বললেন, “কী বুঝলেন অতনুদা?” আমি বললাম, “প্রত্যেক অপরাধীর অবশ্যকর্তব্য হচ্ছে মাইক ব্রিয়ারলির ত্রিসীমানায় না ঘেঁষা। রবার্টসন বহুবার বলেছে, ব্রিয়ারলি সাহেব মানুষ নয়, সাক্ষাৎ শয়তান। একদম সঠিক মূল্যায়ন।”

    আর, হ্যাঁ, আমার সেই আন্দাজে লেখা চিরকুট ওয়েস্ট পেপার বক্সে ফেলে দিয়েছি। মাইক ব্রিয়ারলির মতো ধুরন্ধর গোয়েন্দার চাল বোঝার সাধ্য আমার সাধারণ বুদ্ধিতে কোনওদিনই হবে না সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে গেছি।

    *কোলন ক্যানসার চিকিৎসার অভূতপূর্ব সাফল্যের খবর আমরা জেনেছি এই বছরের জুন মাসে, গল্পের প্রয়োজনে সময়কাল একটু এগিয়ে এনেছি। এ ছাড়া কোনও তথ্যবিকৃতি নেই। এই লেখা যেহেতু ফিকশন, সেহেতু এটুকু স্বাধীনতা নেওয়াই যায়।



    অলংকরণ (Artwork) : রাহুল মজুমদার
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments