• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৭ | জুলাই ২০২২ | গ্রন্থ-সমালোচনা
    Share
  • ‘সন্দেশ’-এর সোনাঝরা দিনগুলি : অমিত মণ্ডল

    সন্দেশ-এর দিনগুলি — প্রণব মুখোপাধ্যায় ; পরম্পরা প্রকাশন, কলকাতা, প্রচ্ছদ – সৌমেন পাল; প্রথম প্রকাশ-- জানুয়ারি ২০২০; ISBN: 978-93-88341-19-6

    রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ‘সন্দেশ’ পত্রিকার একটা আশ্চর্যরকম মিল আছে, অনেকটা কাকতালীয়— রবীন্দ্রনাথ যে বছর নোবেল পুরস্কার পান সেই বছরেই উপেন্দ্রকিশোরের হাতে ‘সন্দেশ’-এর সূচনা অর্থাৎ ১৯১৩ সাল। আবার সত্যজিৎ রায় যখন ‘সন্দেশ’-এর সম্পাদনা শুরু করেন, সে বছরে দেশে-বিদেশে মহাসমারোহে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষ পালিত হচ্ছে। এছাড়া, রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও ‘সন্দেশ’-এর সূত্রপাত একই মাসে, মে। ‘সন্দেশ’-এর যাত্রা নিরবচ্ছিন্ন হয়নি, ‘সন্দেশ’ প্রথম বার বন্ধ হয়েছিল ১৯২৩ সালে সুকুমার রায়ের অকাল মৃত্যুর পর। তারপর সুকুমারের ভাই সুবিনয় রায় ‘সন্দেশ’-এর সম্পাদনা দেখাশোনা শুরু করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৯২৫ সালে পত্রিকাটি সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে পত্রিকা পুনরায় প্রকাশিত হয়। তারপর ১৯৩৩/৩৪ সালে প্রায় তিন দশকের জন্য ‘সন্দেশ’ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায় ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় নব কলেবরে ‘সন্দেশ’ প্রকাশ হতে শুরু করে।

    ‘সন্দেশ-এর দিনগুলি’ গ্রন্থের প্রণেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৪৯ সালে হাওড়ার শিবপুরে, এবং এখানেই বেড়ে ওঠা। পড়েছেন শিবপুরের বি.কে.পাল ইন্সটিটিউশন-এ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ. পড়ার সময় প্রণব পেয়েছিলেন অনেক গুণী অধ্যাপক। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জ্যোতি ভট্টাচার্য ও তরুণ অধ্যাপক দীপেন্দু চক্রবর্তী। প্রণব কিছুদিন বি.কে.পাল. ইন্সটিটিউশনে শিক্ষকতা করেন, তারপর মেদিনীপুরের শিলদা কলেজে অধ্যপনা— বিষয় ইংরাজি। প্রণব অসম্ভব ভালো লিমেরিক লিখতেন। আর সেসব নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করতেন। এডওয়ার্ড লিয়র ও লুই ক্যারল-এর নন্‌সেন্স ছড়া নিয়ে লিখেছেনও অনেক।

    আমৃত্যু ‘সন্দেশ’-এর সঙ্গে প্রণবের আন্তরিক সম্পর্ক। প্রাণ ঢেলে কাজ করেছেন। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মনে পড়ে কত পুরোনো স্মৃতি— ‘সন্দেশ’-এ কবিতা পাঠিয়েছেন ডাকে, উত্তর এসেছিলো ‘ছাপা হবে।’ চিঠিটা লিখেছিলেন লীলা মজুমদার। তখন উনি ‘সন্দেশ’-এর সহ-সম্পাদক। সেই শুরু। ‘সন্দেশ’-এর কোনো এক শারদীয়ায় লেখার জন্য মানি অর্ডারে পাঁচ টাকা সম্মান দক্ষিণা পেয়েছিলেন প্রণব। প্রণব মুখোপাধ্যায় পেয়েছিলেন লীলা মজুমদার ও সত্যজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য। এই দুজন মানুষ প্রণবের লেখাও খুব পছন্দ করতেন। সত্যজিৎ রায় প্রণবের লেখা মাঝে মধ্যে সংশোধন করে দিতেন ‘সন্দেশ’-এর খুদে পাঠকের স্বার্থে। লীলা মজুমদারই প্রণবকে মাসের শেষ রবিবারের সন্ধেবেলায় লেখা পাঠের আসরে আসতে বলেছিলেন— ‘তবে শুধু হাতে আসা চলবে না, নতুন টাটকা লেখা নিয়ে আসতে হবে।’ এভাবেই পরিচয় গাঢ় হয়েছিলো। ‘সন্দেশ’ পরিবারের আর একজন মানুষ ছিলেন নলিনী দাশ। ‘সন্দেশ’-এর তৃতীয় সম্পাদক। প্রণব লিখেছেন নলিনীদিই ‘সন্দেশ’ অফিসের দরজা খুলে তাঁকে একদিন ভিতরে ডেকে নিয়েছিলেন, সেই দিনটা ছিল প্রণবের স্মরণীয় দিন। নলিনী দাশের বড় পছন্দ ছিল প্রণবের লেখা। তিনি বলেছেন, ‘প্রণব যখন যা লেখে তা ছড়া-কবিতাই হোক বা গল্প-প্রবন্ধই হোক— তা পড়া শুরু করলে থামা যায় না।’

    ‘সন্দেশ’ মাঝে মধ্যেই আর্থিক অনটনে পড়ত। সত্যজিৎ রায়ের পকেট থেকেই টাকা খরচ হচ্ছিল। কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে? তখন নলিনী দাশ বেথুন কলেজ থেকে সবেমাত্র অবসর নিয়েছেন। তাঁর স্বামী অশোকানন্দ দাস অনেক আগেই আবহাওয়া দপ্তর থেকে অবসর প্রাপ্ত। তখন গঠিত হল লেখক সমবায়। এই সমিতি হল ‘সন্দেশ’-এর পরিচালক। চেয়ারম্যান সত্যজিৎ রায়। অন্যান্য শেয়ারহোল্ডার হলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, সুভাষ ঘোষাল এবং আরও সব নামীদামী মানুষজন। এঁরা সকলে ১০০ টাকা দিয়ে সভ্য হয়েছেন ‘সন্দেশ’-কে বাঁচাতে। নলিনী দাশ-এর আগ্রহে প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রথমে সমিতির সভ্য, পরে ডিরেক্টর হয়েছিলেন। সমিতির অফিস হল নলিনী দাশের বাড়ি রাসবিহারী অ্যাভিনিউ-এ। বিনাপয়সার ঘরে নতুন ঠাই হয়ে বেঁচে গেল ‘সন্দেশ’। নলিনী দাশ ডুবে গেলেন ‘সন্দেশ’-এর কাজে। প্রেস আর প্রুফ দেখা, কোন লেখার ছবি কে আঁকবে, কার কাছে আঁকা দেওয়া হয়েছে, কোন লেখা কোন সংখ্যায় যাবে, বিজ্ঞাপন জোগাড়ের ‘টিম’ চালানো— এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ‘সন্দেশ’-এর লেখা মনোনয়নের শেষ কথা বলতেন সত্যজিৎ রায়। লেখক, পাঠক ও সম্পাদকত্রয়ের অনেক বন্ধুবান্ধব সমিতির সভ্য হয়েছিলেন। সমিতি তাঁদের টাকায় পুষ্ট হয়েছে। বিক্রি ও গ্রাহকদের আনুকূল্যে না-লাভ না-লোকসান অবস্থায় চলল ‘সন্দেশ’। ‘সন্দেশ’-এর আর্থিক সংকটের সময় প্রণব মুখোপাধ্যায় শিবপুর অঞ্চল থেকে প্রায় পঁচিশ জন নতুন গ্রাহক সংগ্রহ করেছিলেন। পত্রিকা প্রকাশের পর গ্রাহকদের কাছে পত্রিকা পৌঁছোনোর দায়িত্বও ছিল তাঁর। শুধু শিবপুর নয়, তিনি যখন মেদিনীপুরের শিলদা কলেজে অধ্যাপনা করতেন তখনও সেই অঞ্চলেও জনা কুড়ি গ্রাহক করেছিলেন।

    নলিনী দাশের স্বামী অশোকানন্দ দাশ পাঁচের দশকে চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে ‘নিউ স্ক্রিপ্ট’ নামে একটা প্রকাশন প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন। নিঃশব্দে কাজ করতেন ‘সন্দেশ’-এর জন্যও। সেখানে প্রতি শনিবার বিকেলে বসত নবীন লেখকদের আড্ডা। দু একজন প্রবীণ সাহিত্যিকও থাকতেন। অবশ্য সবাই যে ‘সন্দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত, তা নয়। দীর্ঘজীবন পার করে অশোকানন্দ দাশ চলে গেলেন। কত স্মৃতি। স্মৃতির অবিরল ঢেউ। সমবায় সমিতি আজও আছে। চেয়ারম্যান সন্দীপ রায়।

    এ ১৪, কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের দোকানটি ছিল শিশু সাহিত্যিকদের আড্ডার পীঠস্থান। কত নামজাদা সাহিত্যকরা আসতেন। দিব্যেন্দু সিংহ নামে এক সুরসিক ভদ্রলোক ‘শুভম পাবলিকেশন’ নামে এক প্রকাশনা সংস্থা খুলেছিলেন। বিত্তবান মানুষ। বড়দের পত্রিকা ‘মহানগর’ আর ছোটদের মাসিক পত্রিকা ‘সবজান্তা ও মজারু’ বেরুত ওই প্রকাশনা সংস্থা থেকে। ‘সবজান্তা ও মজারু’র সম্পাদক ছিলেন অনীশ দেব, কিন্তু সবকিছু পরিকল্পনার ভার ছিল দিব্যেন্দু সিংহ-এর ওপর। বহু বিখ্যাত লেখক লিখেছেন এই ছোটদের পত্রিকায়। লীলা মজুমদার ওই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হলেন পরামর্শদাতা হিশাবে। শিশিরকুমার মজুমদারের চাকরি হল সেখানে। ‘সন্দেশ’ ছেড়ে যেতে শিশিরদা ইতস্তত করেছিলেন, কিন্তু সর্বপ্রথম অশোকানন্দ দাশই বললেন ‘যারা বেশি টাকা দেবে সেখানেই আপনার যাওয়া উচিত। আমরা আর ক পয়সা দিই।’ কোন এক অজানা কারণে ছ মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেল দুটি পত্রিকাই।

    ‘সন্দেশ’-এর দোকানে আসত আর এক অদ্ভুত মানুষ। নোংরা ধুতি, খালি পা, ছেঁড়া গেঞ্জি, শীতকালে গায়ে জড়ানো থাকত তেলচিটে একটা পাতলা চাদর। বেশির ভাগ সময়েই মাথা থাকত ন্যাড়া। শিশিরবাবুকে দোকানে না দেখলে একটা মুহূর্তও দাঁড়াতেন না। টেবিলে রাখা কোনো বই কোনোদিন ছুঁতেন না। কেউ তাঁর নাম জানতেন না। আড্ডার মাঝে চুপ করে এসে এক কোণে দাঁড়িয়ে পড়তেন আর খোশগল্প শুনতেন। হয়তো কোনো ঘটনার সাল কেউ মনে করতে পারছেন না, কিংবা কোনো শব্দের ব্যুৎপত্তি, সঠিক উত্তর জানা থাকলে তিনি কথা কয়ে উঠতেন। তখন সবাই তাঁর মুখের দিকে তাকালে যেন লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতেন। শিশিরদার সঙ্গে একলা চা খেতেন, অন্য কেউ থাকলে চা মুখে তুলতেন না। শোনা গেছিল, কোনো এক বড়োলোকের সিংদরজার দেউড়িতে শুয়ে রাত কাটান। বাকি সারাদিন কোথায় ঘুরছেন, কি করছেন কেউ জানত না। শিশিরদার কাছ থেকে মাঝে মাঝে টাকা নিতেন। আর এক আশ্চর্য মানুষ ময়ূখ চৌধুরী, বড় ইলাস্ট্রেটর– জীবজন্তুর গল্পের কমিকস তৈরির জন্য বিখ্যাত। ছেঁড়া জামা জুতো, উশকোখুসকো চুল। সত্যজিৎ রায়ের কথা খুব ভালো বলতেন। শোনা যায় সাইনবোর্ড আঁকতেন, সত্যজিৎ রায় ওঁর প্রতিভা চিনেছিলেন। আর ছিলেন রসজ্ঞ অথচ রাশভারী সাহিত্যিক ধীরেন্দ্রলাল ধর। শিশু সাহিত্যের এক পথিকৃৎ। কলেজ স্ট্রিটে বইয়ের দোকান ছিল। নেশার ব্যাপার, লাভ-লোকসান নিয়ে মাথাব্যথা নেই।

    মৌসুমি প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছিল এডগার রাইস ব্যারোজের ‘টারজান সমগ্র’। মূল অনুবাদক ছিলেন লীলা মজুমদার। লীলাদি একা নয়, কাজটা ভাগ করে দিয়েছিলেন তিন জনকে। বই প্রকাশ হবার অনেক আগেই লীলাদি নিজের থেকে প্রণবের প্রাপ্য সাড়ে তিন হাজার টাকা মিটিয়ে দিয়েছিলেন, তবে প্রণব সৌজন্য সংখ্যা আদায় করতে পারেননি।

    একদিন ‘সন্দেশ’-এর আড্ডায় প্রস্তাব উঠলো পুজোর সময় একটা গল্প সংকলন বের করলে কেমন হয়? ঠিক হল সবাই একশো টাকা দিয়ে তহবিল তৈরি হবে এবং সবাই তাদের সবচেয়ে ভালো একটা নতুন লেখা গল্প জমা দেবে। সবাই রাজি, কিন্তু সম্পাদনার দায়িত্ব নিতে কেউ রাজি নয়। অবশেষে প্রণব মুখোপাধ্যায় ও শিশির কুমার মজুমদারকে সম্পাদক করে দেওয়া হল। সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকে যদি একটা নতুন গল্প পাওয়া যায়! নলিনীদি মারফত খবর এল সত্যজিৎ রায় সম্মত হয়েছেন গল্প লিখতে। শুধু গল্প নয়, খুশি হয়ে গল্প সংকলনের নাম ঠিক করে দিয়েছিলেন ‘চকমকি’। নামকরণ ছাড়াও নামের লোগো এঁকে দিয়েছিলেন এবং একটি নতুন গল্প ‘অপদার্থ’, সঙ্গে পুরো একপাতা জোড়া ছবি। ‘চকমকি’ নামাঙ্কনটি ব্যবহার করে পুরো মলাটটা করে দিয়েছিলেন দেবাশীষ দেব সত্যজিৎ রায়ের নির্দেশমতো রঙের ব্যবহারে ও বৈচিত্রে। লীলাদির কথা অনুযায়ী বইটি পুজোর সময় নয়, জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়েছিল। ‘চকমকি’ প্রসঙ্গটি কলেজ স্ট্রিটের ইতিহাসে ঝকঝকে হয়ে আছে।

    ‘সন্দেশ’-এর জন্য অশোকানন্দ দাশের সঙ্গে প্রণব শিবরাম চক্রবর্তীর সাক্ষাৎকার নিতে গেছেন তাঁর মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটের বাড়িতে। ভাঙা রেলিঙের সিঁড়ি বেয়ে খুব সাবধানে উঠতে হয় দোতলায়। শিবরাম চক্রবর্তীর দ্বার সকলের জন্য সর্বদা অবারিত, এতে খিল পড়ে না। বইয়ে ভরা একটা কাঁচভাঙা আলমারি, কিছু কাগজপত্র আর একটা কলম। দু-বেলা খাবার আসে ভাগ্নের কাছ থেকে। অবারিত মুক্ত জীবন। নানা কথার মাঝে ‘সন্দেশ’-এর কথা, কলেজ স্ট্রীটের আড্ডা, বিমল করের কথা, বইপত্তর নিয়ে আলোচনা চলতে থাকল।

    প্রণব উল্লেখ করেছেন সত্যজিৎ রায়ের অতিথি আপ্যায়নের কথা। শিশির মঞ্চে 'হীরক রাজার দেশে'-র প্রিমিয়ার শো। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হাজির হচ্ছেন, প্রত্যেককে স্বাগত জানাচ্ছেন। চার নাতি নাতনি নিয়ে লীলাদি ঢুকলেন। সামান্য রসিকতা হল। ফিল্মের শেষে বৃষ্টি শুরু। সবাই মুস্কিলে পড়লেন। সত্যজিৎ রায় ব্যস্ত হয়ে বাইরে হাত বাড়িয়ে বললেন, ‘তেমন কিছু না, slight drizzle’. অতিথির মাথায় ছাতা ধরে নিজে ভিজতে ভিজতে গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন। ওঁর মাথায় ছাতা ধরতে ছুটছেন ইউনিটের কিছু লোক।

    প্রণবের মনে পড়ে পৌষমেলায় ‘সন্দেশ’-এর স্টল। সেসব দিন ছিল মহা আনন্দের। বোধ হয় বার চারেক স্টল বসেছিল শান্তিনিকেতনে। কলকাতা বইমেলায় ও শান্তিনিকেতনের পৌষমেলায় ‘সন্দেশ’-এর স্টল থাকত। সেইসব স্টলে প্রণবের উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। প্রণব মুখোপাধ্যায় লিখেছেন— পৌষমেলায় শান্তিনিকেতনে ভুবনডাঙ্গার মাঠে ‘সন্দেশ’-এর স্টল থাকত। পৌষমেলার পর শুরু হত বাড়ি বাড়ি ঘুরে গ্রাহক সংগ্রহের কাজ। একাজে থাকতেন পাঠভবনের অধ্যাপক অনাথনাথ দাস। এভাবেই ‘সন্দেশ’-এর গ্রাহক হয়েছিলেন সোমনাথ ও রেবা হোরের কন্যা চন্দনা হোর ও খ্যাতিমান ঐতিহাসিক দম্পতি অশীন দাশগুপ্ত ও উমা দাশগুপ্তর পুত্র। ‘নিউস্ক্রিপ্ট’-এর বই আর ‘সন্দেশ’ ছাড়াও আরও হরেক ছোটোদের বই নিয়ে আসা হত কলকাতা থেকে। সকাল থেকে রাত অবধি সরগরম থাকত মেলার মাঠ। বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠান চলত, সবাই সময় করে যেতে পারত না, তাতে অবশ্য কারো মন খারাপ হত না। ‘সন্দেশ’ বিক্রির নেশাটাই সকলকে পেয়ে বসেছিল। অধ্যাপক থেকে শুরু করে দূর-দূরান্তের গ্রামের মানুষ আসত মেলায়। জামাকাপড়, চুড়ি-গয়না, থালা-বাটি, হাত গরম খাবার-দাবারের বিশাল মেলার মাঝে বই-এর দোকান হাঁ করে দেখত গ্রামের মানুষ আর ছেলেপুলেরা।

    তেমনি ভাবেই উঠে আসে কলকাতা বইমেলার স্মৃতি– ‘সন্দেশ’-এর স্টল, পরম ভালোবাসায় বিনিপয়সায় শ্রম দেয় ‘সন্দেশী’রা। ‘সন্দেশ’-এর সঙ্গে যুক্ত মানুষজনদের বলা হত ‘সন্দেশী’। স্টলে এসে বই বিক্রি করতেন নলিনী দাশ। বেশ ভিড় জমে যেত। ওঁর গুণমুগ্ধ ছাত্রীরাই বেশি। স্বাক্ষর দিতে হত প্রচুর। শিশির মজুমদারের ‘তুফান দরিয়ার পরাণ মাঝি’-র বিক্রি তখন তুঙ্গে। শিশিরদা নাক, কপাল রুমাল দিয়ে ঢেকে সই-শিকারির হাত থেকে বেঁচেছিলেন। সে বছর বেরিয়েছে সত্যজিৎ রায়ের ‘ফেলুদা ওয়ান ফেলুদা টু’। মেলা জুড়ে হইচই। ‘আনন্দ পাবলিশার্স’-এ বিরাট লাইন দেখে হতাশ খুদে পাঠকেরা ভিড় জমিয়েছে সন্দেশের স্টলে। উপচে পড়া ভিড়। দমবন্ধ করা অবস্থা। সবার আঙ্গুলে টাকার নোট- ‘দিন না, দিন না, কতক্ষণ ধরে চাইছি, ফুরিয়ে যাবে যে।’ অবশেষে সে বছর ‘ফেলুদা ওয়ান ফেলুদা টু’ বিক্রি বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।

    লীলা মজুমদারের নাটক ‘রূপ প্রতিযোগিতা’ শরৎ সদনে মঞ্চায়ন করিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল ‘সন্দেশী’রা। নাটকের মহড়া চলত ‘সন্দেশ’ অফিসে। প্রণবের মনে পড়ে অতি উৎসাহী ‘সন্দেশী’ সোনারপুরের কমলেশ কামিলাকে। ক্যামেরা নিয়ে ঘোরাঘুরি তাঁর নেশা। সত্যজিৎ রায়ের কত ছবি যে তুলেছে তার ইয়ত্তা নেই। কোথায় কোন গাছের কোটরে একটা কাঠঠোকরা নিশ্চিন্তে তার ছানাকে পোকা খাওয়াচ্ছে, তাকে চমকে দিয়ে কমলেশের ক্যামেরার ঝিলিক। কমলেশ দিল্লি থেকে ফটোগ্রাফির জন্যও একটা বড় পুরস্কার নিয়ে এসেছে। নানা দেশি বিদেশি ভ্রমণ পত্রিকায় ওর ছবি বিক্রি হয়। কমলেশের সঙ্গে আদিম অরণ্য, আর ছায়ায় ভরা রাজাভাতখাওয়ায় প্রণবের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বড় মনোরম। ‘সন্দেশী’দের নিয়ে ভ্রমণ সূর্যনগর— আসানসোল হয়ে বার্নপুর, সেখান থেকে কয়েক মাইল ভেতরে, বিস্তীর্ণ দামোদরের কূলে এক পরিত্যক্ত অঞ্চল। এক আশ্চর্যের জায়গা। ঝোপ জঙ্গল, টিলা, গাছপালা, বুনো রঙিন ফুল, আগাছার মাঝে একটি মাঠে আগুন জ্বলছে লকলকে শিখা মেলে। সে আগুন নেভে না, দুষ্টু ছেলের দল কত ভাবে মাটি, পাথর চাপা দিয়ে সে আগুন নিভিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সে আগুন নেভেনি। সেবার একদিন রাতে বৃষ্টি নামলো জোরে, দেখা গেল বৃষ্টির দাপটেও সেটা সমান প্রজ্বলিত। সূর্যনগরে যে বাড়িটিতে ‘সন্দেশী’দের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল, সে বাড়িটি ছিল দোতলা— একতলায় বৃদ্ধাশ্রম আর দোতলাটা ভ্রমণ পিপাসুদের ভাড়া দেওয়া হয়। বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধাদের দেখে প্রণবের মনটা বড় ভারী হয়ে যায়। প্রণব লিখেছেন ‘আমরা এসেছি এমন জায়গায় কদিনের মুক্তি খুঁজতে, যেখানে অপার মুক্তির মাঝে নির্বাসিত হয়ে উন্মাদের মতো দিন কাটাচ্ছে ন’টি বৃদ্ধ।’

    ১৪১৭ বঙ্গাব্দে ‘সন্দেশ’-এর পঞ্চাশ বছর। সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে ‘সন্দেশ’ পেল এক দারুণ উপহার। শিশু কিশোর আকাদেমি, তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক আয়োজিত তৃতীয় রাজ্য শিশু কিশোর উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হল ‘সন্দেশ’ পত্রিকাকে। অনিবার্য কারণে সেদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি ‘সন্দেশ’ সম্পাদক সন্দীপ রায়। সেদিন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন ‘সন্দেশ’-এর সহ-সম্পাদক শ্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাতে।

    ১৯৮১ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রথম কবিতার বই— ‘হাওয়া-মাটি-হল্লা’ প্রকাশিত হয়। বইটির ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন লীলা মজুমদার, প্রচ্ছদ দেবাশীষ দেবের। বইটি শিশু সাহিত্য সংসদ কর্তৃক পুরস্কৃত হয়, পুরস্কার মূল্য এক হাজার টাকা। শিশির মঞ্চে আশাপূর্ণা দেবীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করলেন অর্থাৎ এক হাজার টাকার ‘চেক’। সব থেকে মজার ঘটনাটা, প্রণব যখন চেকটি পকেটে পুরছেন তখনই পিছনের সারি থেকে শিশু সাহিত্য পরিষদের ডা.ননীগোপাল মজুমদার ব্যস্ত ভাবে হাত নেড়ে প্রণবকে ডেকে বললেন ‘চেকটি এখনই ভাঙিও না ভাই, টাকা নেই।’ প্রণব পুরস্কার পাওয়ার পর সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, ‘আজকাল তো পুরস্কার যোগ্য হাতে যায় না। সে ক্ষেত্রে এটা সত্যিই সুখবর...।’ ‘হাওয়া-মাটি-হল্লা’ নিয়ে হরিশ মুখার্জি রোডে প্রেমেন্দ্র মিত্রের বাড়ি গিয়েছিলেন শিশির মজুমদারের সঙ্গে। বইটা হাতে নিয়ে মলাট দেখলেন, ছবি দেখলেন, একটা লাইনও পড়ে দেখলেন না। প্রণব খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। শিশিরদা বাইরে এসে বললেন ‘বোধ হয় চোখের সমস্যায় ভুগছেন।’ সেদিন প্রেমেন্দ্র মিত্র শিশিরকুমার মজুমদারকে বলেছিলেন ‘শিশির, আশোকানন্দবাবুকে বোল না, আমার এমন একটা ছোটোদের কবিতার বই প্রকাশ করতে।’

    ছুটি পেলেই কাজে অকাজে শান্তিনিকেতনে যাওয়া একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল প্রণবের। প্রধান আকর্ষণ ছিল লীলা মজুমদারের বাড়ি। আতা আর বেল গাছে ভরা বাগান। প্রণবের মনে পড়ে লীলাদি জোর করে রোজ চারটে করে আতা খাওয়াতেন। রতনপল্লীর বাড়ির সামনের ফাঁকা মাঠে তারা ভরা আকাশের নিচে, কখনও বাড়ির দালানে আড্ডা। সেই সান্ধ্য আড্ডায় কত বিখ্যাত মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শ্যামল কৃষ্ণ ঘোষ, শান্তিদেব ঘোষের স্ত্রী হাসিদি, সুপ্রিয় ঠাকুর, অনাথনাথ দাশ, Statesman-এর অশেষ চট্টোপাধ্যায়। শ্যামলকৃষ্ণ ঘোষের বাল্যকাল কেটেছিল শান্তিনিকেতনে, তারপর বড় জিওলজিস্ট হয়ে নাইরোবিতে ছিলেন অনেকদিন। ওঁর লেখা বিখ্যত বই ‘নাইরোবি থেকে রবি’। লীলা মজুমদার জোর করে ওঁর কাছ থেকে ‘সন্দেশ’-এর জন্য লেখা আদায় করতেন। পরিচয় হয়েছিল অজেয় রায়ের সঙ্গে। ‘অজেয়’ নামটি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথমে ‘সন্দেশ’-এ অন্তু রায় নামে অজেয়দা দুয়েকটি গল্প লেখেন লীলাদির প্রেরণায়। তারপরেই রীতিমতো লেখক হয়ে উঠলেন অজেয় রায়। পেয়েছিলেন ‘বিদ্যাসাগর’ পুরস্কার। এরকম এক সান্ধ্য আড্ডাতেই প্রণব শুনেছিলেন লীলাদির দেশিকোত্তম পুরস্কার পাওয়ার দিনটির কথা। সেদিন রাজীব গান্ধী ওঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন মানপত্র। প্রধানমন্ত্রী লীলাদির কাঁধে শাল জড়িয়ে পদক তুলে দেবার সময় ওঁর হাতে একটা বাড়তি চাপ দিয়েছিলেন— উষ্ণতার চাপ, সকলের অজান্তে। লীলাদির শান্তিনিকেতনের বাড়িতেই একদিন ভোরে এসেছিলেন শান্তিদেব ঘোষ। কিছুদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন লীলাদির স্বামী, এসেছিলেন সহানুভূতি জানাতে। কথা চলছে নানা প্রসঙ্গে -আর প্রণব মুগ্ধ হয়ে শুনছেন দীনুবাবু, পুলিন সেনদের কথা। রবীন্দ্রনাথকে প্রতিমাদেবীর যত্নের কথা, মালা গেঁথে গলায় পরানোর কথা।

    প্রণবের অত্যন্ত প্রিয় মানুষ নলিনী দাশ চলে গেলেন প্রণবের চোখের সামনে। দিনটা ছিল ২৬ মার্চ, ১৯৯৩। বাইরে তখন অঝোর বৃষ্টি। তবু এসেছেন কত মানুষ, চলছে অন্তিম যাত্রার প্রস্তুতি। পুরোভাগে শিশিরদা। এসেছেন সস্ত্রীক সন্দীপ রায়। রমিতা সেনগুপ্ত, মঞ্জিল সেন, সলিল লাহিড়ী, সরকারি বড় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, সাহিত্য সেবী মানুষ প্রমুখ। নলিনীদির প্রয়াণে ‘সন্দেশ’-এর এক বড় অধ্যায় স্তব্ধ হয়ে গেল আচম্বিতে। সত্যজিৎ রায় চলে যেতে নলিনীদি বলেছিলেন, ‘দুঃখ পেয়ো না, বুক বাঁধো। সামনে অনেক কাজ।’ প্রণব ভাবে, এবার কে বুক বাঁধতে বলবে এমনভাবে? নলিনী দাশ মারা যাবার পর সমিতি অনেকটা হোঁচট খেয়ে পড়েছিল। লীলা মজুমদারের বাড়ি থেকে শেষ রবিবারের সন্ধেবেলার সাহিত্যসভা বহুদিন উঠে এসেছিল নলিনীদির বাড়িতে। সে সভাও আর চালানো যায় নি। নলিনীদির স্মরণসভা ১৭২/৩, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ-এ ‘সন্দেশ’-এর অফিস ঘরে। সবার মন ভারাক্রান্ত। শুধু শিশিরদা ভিজে ভিজে চোখে নলিনীদির সঙ্গে তাঁর মজার মুহূর্তগুলির কথা শুরু করলেন। সভায় মৃদু হাসির রোল উঠল। সভার আড়ষ্টভাব কেটে যেতে লাগলো। এরপর কয়েক মাসের মধ্যেই, সেরিব্রাল অ্যাটাকে শিশিরদা নার্সিংহোমে ভর্তি হলেন। সবাই বুক বেঁধে আছেন সাহসে, অসুস্থ হয়েছেন, চিকিৎসা চলছে, সেরেও উঠবে। কিন্তু না, ‘সন্দেশ’-এর হৃৎপিণ্ড শিশিরদাও চলে গেলেন। কি ভাবে চলবে ‘সন্দেশ’? শিশিরদা যাবার সময় নার্সিংহোমের সিস্টারকে জড়ানো গলায় বলেছিলেন, ‘আপনাদের খুব কষ্ট দিলাম।’ শিশিরদার স্মরণসভায় সুভাষ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘এখন উঠেছে এক হাওয়া/ পরে এসে আগে চলে যাওয়া’। মহাশ্বেতা দেবী শিশিরদার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করলেন। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের চোখের সামনে খুলে যেতে লাগলো একের পর এক স্মৃতির ছবির রিল— ১৯৯১-এ চলে গেলেন সত্যজিৎ রায়, ১৯৯২-এ অশোকানন্দ দাশ, ১৯৯৩-এ নলিনী দাশ, তারপর শিশির কুমার মজুমদার। প্রণবের মনে হয়েছে এ এক প্রবহমান স্রোত। এই স্রোতে ডুব দিয়ে মানুষের পুণ্যস্নান। আমরাও থাকব না। পরবর্তী প্রজন্ম এই বহমানতায় ডুব দেবে। তারা কি আমাদের কারো জন্য চোখের জল ফেলবে?

    প্রণব মুখোপাধ্যায় চোখের সামনে দেখেছিলেন আর একটি মৃত্যু— আনন্দবাজার পত্রিকার অশোক কুমার সরকারের। বইমেলায় বক্তৃতা করতে উঠেছেন। মাইক্রোফোনের সামনে কথা বলতে শুরু করে ঢলে পড়লেন। প্রথমেই ছুটে এসেছিলেন ‘সন্দেশ’-এর আনন্দদা — আনন্দ ঘোষ। আনন্দদার লম্বা দুটি হাতের মাঝে লুটিয়ে পড়লেন অশোক কুমার সরকার। প্রণবের মনে পড়ে বইমেলার মাঠ আর ‘সন্দেশ’-এর মাসিক সাহিত্য আসর মাতানো পরেশ দত্তর কথা। কিশোর গল্প লেখেন, বেশির ভাগ শিকার কাহিনি। সেই মানুষটাও হঠাৎই চলে গেলেন। প্রণবের বুক ভেঙে যায় ‘কেন একটু অবকাশ মুহূর্ত তৈরি করে পরেশদার সঙ্গে দুটো ফালতু কথা বকলাম না। কেন লিখলাম না একটা সামান্য ব্যক্তিগত চিঠি।’

    ‘সন্দেশ’-এর বহু স্মৃতি বুকে নিয়ে ১লা মে ২০২০, ভোরবেলা অকস্মাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন বিনয়ী, মৃদুভাষী, সৎ, সুশিক্ষিত, ‘সন্দেশ’ অন্তপ্রাণ, মুক্তমনের মানুষ প্রণব মুখোপাধ্যায়। তখন তাঁর বয়স একাত্তর। ‘সন্দেশ’-এর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততা, নানা মধুর ও মনখারাপের স্মৃতি উজাড় করা গ্রন্থ ‘সন্দেশ-এর দিনগুলি’। প্রণব মুখোপাধ্যায় বড় আন্তরিক ও মায়াভরা অক্ষরে সাজিয়েছেন সেসব কথা। এগারোটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত এই গ্রন্থ। কিন্তু স্মৃতিগুলো ছড়িয়ে গেছে বিভিন্ন অধ্যায়ে, ধারাবাহিকতা নেই। একটু যত্ন নিয়ে সম্পাদনা হলে আরও সুখপাঠ্য হত গ্রন্থটি।

    ‘পরম্পরা’ প্রকাশিত ‘সন্দেশ’ পত্রিকা ও ‘সন্দেশী’দের নিয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের এই আদ্যন্ত ও আন্তরিক রম্য স্মৃতিকথা ফিরে ফিরে পড়া যায়। পুরোনো হয় না। এ গ্রন্থের মানানসই প্রচ্ছদ রচনা করেছেন শ্রী সৌম্যেন পাল।



    অলংকরণ (Artwork) : রাহুল মজুমদার
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments