এই সংখ্যাতে আর্যা ভট্টাচার্যের একটা প্রবন্ধে ছাপা পত্রিকা ও আন্তর্জাল পত্রিকার মধ্যে কয়েকটা বিষয়ে তুলনা করা হয়েছে। সেই সূত্রে যদি প্রশ্ন করা হয় একটি ছাপা পত্রিকার প্রতি-তুলনায় একটি আন্তর্জাল পত্রিকার কোন বিভাগটির মানগত প্রভেদ সবচেয়ে বেশি, তাহলে আমাদের মনে হয়, তার উত্তর হবে 'চিঠিপত্র' বিভাগ। সাধারণত আন্তর্জাল পত্রিকার কোনো লেখার উপর মন্তব্যগুলি সেই লেখার নিচে দেয়া হয়। পরবাস এতদিন সেটা করেনি। ৮৫-তম সংখ্যা থেকে নতুন ডিজাইনের কল্যাণে সেরকম সহজেই করা যেত। কিন্তু আমরা ঠিক করেছি যে ছাপা পত্রিকার মত এখনও আমরা চাই পাঠকরা এমন একটা কমন গ্রাউন্ডে আসুন যেখানে তাঁরা লেখার বিভাগ (যথা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি ইত্যাদি) বা লেখক নির্বিশেষে এক নজরে দেখে নিতে পারেন একটা পত্রিকায় প্রকাশিত সব ধরনের লেখার উপর অন্য পাঠকরা কী ভাবছেন। কোনো পত্রিকা তাতে প্রকাশিত লেখকদের 'ব্লগ'-এর সমষ্টিমাত্র নয়। কমবয়েসি পাঠকেরা না-ও জানতে পারেন, কিন্তু অনেকেরই মনে থাকতে পারে কোনো কোনো পত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগটি কীরকম আকর্ষণীয় হত। স্বীকার করতেই হবে যে পরবাস-এর চিঠিপত্র বিভাগটির গুণগত মান, বিশেষ করে সাম্প্রতিক কালে, বিশেষ ভালো নয়। সেরকম হয়ে উঠবে কি জানি না, কিন্তু পাঠক/মন্তব্যকারীদের সহযোগিতা পেলে এর উন্নতি সম্ভব।
এর আগে আমরা জানিয়েছিলাম যে পরবাসকে আমরা ফেসবুকীয় পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে চাই এবং আমাদের চিঠিপত্র বিভাগের জন্য মননশীল এবং চিন্তার খোরাক জোগায় এমন চিঠি পেলেই আমরা সবচেয়ে আনন্দিত হই। প্রশ্ন হলঃ ফেসবুকীয় পরিবেশ বা তার থেকে দূরে থাকার অর্থ কী?
ফেসবুক বা টুইটার জাতীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় জাল খবর এবং তথ্যবিকৃতির সমস্যার কথা আমরা জানি। তথ্য ও অভিমতের বিকৃত ব্যবহারের পিছনে উদেশ্য, অর্থনিয়োগ, টীম-ওয়ার্ক, সবই থাকতে পারে। মিডিয়ার তথ্য ও মতামত ফিল্টার করার কাজটা সম্পাদনার।
সম্পাদকদের নিরপেক্ষতা এবং যুক্তিসঙ্গতা সব ক্ষেত্রেই কাম্য। পরবাসের সম্পাদনার কাজ আমরা পিয়ার রিভিউয়ের মাধ্যমে করি, যেখানে সম্পাদকদের পরিচয় প্রকাশ করা হয় না। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে পরবাসের সম্পাদনার কাজে আমরা অনেকের সাহায্য পেয়েছি যাঁরা বিনা পারিশ্রমিকে, নিরপেক্ষভাবে আমাদের সাহায্য করে এসেছেন। এঁদের কাছে পরবাস ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ।
চিঠিপত্র বিভাগটির জন্যও আমরা পিয়ার রিভিউ পদ্ধতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফেসবুকীয় পরিবেশ মানে কী, এবং চিঠিপত্রকে ফেসবুকীয় পরিবেশ থেকে দূরে রাখার জন্য কী প্রয়োজন সেটা ঠিক করা এই সম্পাদকদের কাজ। তাঁরা কীভাবে কাজটা করতে চান সে বিষয়ে আমাকে যা বলেছেন সেটা আমি নিচে জানাচ্ছি।
১) চিঠিতে চিন্তার খোরাক যত বেশি সেটি প্রকাশ করার প্রয়োজন ততটাই বেশি। কিন্তু ছোট, নিরপেক্ষ, ও যুক্তিযুক্ত মত প্রকাশের অযোগ্য নয়।
২) বন্ধুবান্ধব, শিষ্য, ও শুভানুধ্যায়ীদের উৎসাহবাক্য লেখকদের পক্ষে খুবই মূল্যবান। কিন্তু ঠিক এই ধরনের অনুসরণকারী মতামতের জন্যই তো রয়েছে ফেসবুক এবং ব্যক্তিগত ই-মেল। সুতরাং পক্ষপাতপুষ্ট চিঠি যতই ভালো লেখা হোক, সম্পাদকমণ্ডলীকে এগুলো 'নিরপেক্ষ' ভাবে বিচার করতে বলে লজ্জিত না করা হোক। এই চিঠিগুলো পরবাসে না পাঠাতে অনুরোধ করা হচ্ছে। অনুরোধটি চিঠির লেখকদের জন্য। তাঁদের কর্তব্যবোধের উপর আমরা ভরসা করে আছি এবং সহযোগিতা না পেলে সেটা আমাদের নিরাশ করবে। চিঠিগুলো প্রকাশ হবার সম্ভাবনা নেই। এই প্রচেষ্টার পুনরাবৃত্তি যাঁরা করেন, দয়া করে মনে রাখুন সম্পাদকদের পক্ষে তা একটি উপদ্রবের সমান।
৩) এটা মনে করা ভুল হবে যে যেরকম নীতিই নেয়া হোক না কেন, তা সম্পূর্ণ সফল হবে। কাজেই প্রয়োজনবোধে পলিসি পালটাতে হতে পারে। আপনাদের মতামত জানতে আমরা খুবই আগ্রহী। কাজেই বিশদ সুচিন্তিত মতামত পাব এই আশা করছি।
পরবাস-এর সকলের পক্ষ থেকে সবাইকে আবার নতুন বছরের জন্যে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।