• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৬ | এপ্রিল ২০২২ | নাটক
    Share
  • বাসররাত : কৌশিক সেন



    পাত্রপাত্রী

    শর্বরী সান্ন্যাল (সুগতবাবুর স্ত্রী)

    সুগত সান্ন্যাল (শর্বরীদেবীর স্বামী)

    মন্দিরা চৌধুরী (সুগত ও শর্বরীর মেয়ে)

    সৃজন চৌধুরী (মন্দিরার স্বামী)

    রঙ্গন সান্ন্যাল (সুগত ও শর্বরীর ছেলে)

    সঞ্চারী সান্ন্যাল রয় (রঙ্গনের স্ত্রী)

    দিগন্ত তরফদার (রঙ্গন ও সঞ্চারীর বন্ধু)

    সুষমা তরফদার (দিগন্তের স্ত্রী)

    রথীন গাঙ্গুলি (শর্বরী ও সুগতর বন্ধু)

    পরমা গাঙ্গুলি (রথীনের স্ত্রী)


    (এয়ারপোর্ট। স্যুটকেস টেনে রঙ্গন আর সঞ্চারী ঢুকছে। অন্যদিক থেকে হন্তদন্ত হয়ে মন্দিরা এসে দাঁড়ায়)

    মন্দিরা— এই যে দাদা বৌদি তোরা এসে গেছিস। উঃ যা গরম। দাঁড়া, দাঁড়া, এখানেই দাঁড়া, আমি ড্রাইভারকে ডাকি, তোদের মালপত্রগুলো নিয়ে নিক।

    রঙ্গন— আরে, কাউকে ডাকতে হবে না, এই তো দুটো ছোটো স্যুটকেস। কেমন আছিস মন্দিরা?

    মন্দিরা— ভালো আছি। তোদের খবর বল? বৌদি কেমন আছো?

    সঞ্চারী— ভালো আছি। চল যেতে যেতে কথা হবে, মা ওদিকে লুচি তরকারি নিয়ে বসে আছে। বেশ একটা মজার ব্যাপার হতে চলেছে, ভাগ্যিস তোরা আসলি।

    (ট্রেন স্টেশন। রথীন আর পরমা ট্রেন থেকে নামলেন)

    পরমা— আরে এত তাড়াহুড়ো কোরো না, পড়ে যাবে, তখন এক চিত্তির (পাশের লোককে) আচ্ছা দাদা, এতো ঠেলাঠেলি করছেন কেন, দেখছেন না বুড়ো মানুষ।

    রথীন— অ্যাই, খবরদার বুড়ো মানুষ বলবে না। তুমি নিজে কি? বুড়ি?

    পরমা— ওমা, তুমি বুড়ো হলে, আমি তো বুড়িই হলাম, না কি? তাতে লজ্জা কিসের শুনি। কিন্তু আমি বাপু নিজের বয়েস সমঝে চলি। ওমা ওই দেখো সুগত নিজেই এসে হাজির হয়েছে। চলো চলো--

    (গাড়ি। বাইরে রাস্তার শব্দ)

    সুগত— তারপর বল পাহাড়ের খবর কি? আর তোর সাধের স্কুল?

    রথীন— ওই খুটখাট করে চলছে। রিটায়ারমেন্টের পরে এ আমার একটা খেয়াল বলতে পারিস। তা সময় বেশ ভালোই কেটে যায়।

    পরমা— হ্যাঁ, উনি বাড়িতে বিনেপয়সার টোল খুলে বসেছেন, সময় কাটানোর জন্য। এদিকে সব ঝক্কি আমার ঘাড়ে।

    রথীন— আরে, রান্না করে খাওয়াবে তুমি আর দোষ আমার।

    সুগত— আহা, এরকম বলছিস কেন? সেই কলেজ থেকেই ওর শখ, প্রফেসর হবে আর শহরের বাইরে নিরিবিলিতে গরীব বাচ্চাদের নিয়ে একটা স্কুল খুলবে। এর মধ্যে চল্লিশটা বছর কোথা দিয়ে কেটে গেল, প্রফেসর সাহেব দেশবিদেশে ছাত্র পড়ানো শেষ করে এতদিনে সেই স্কুলটা খুললেন। কজন লোক পারে?

    পরমা— তুই আর ওকে তোল্লাই দিস না তো (বাইরের দিকে তাকায়) সত্যি কতগুলো বছর কেটে গেছে তাই না রে সুগত। আমাদের ব্যাচের ছেলেমেয়েদের মধ্যে আমরাই প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম। আমি আর রথীন, তুই আর শর্বরী।

    রথীন— ও মজা করে বলতো না— আমরা হলাম ব্যাচের পহেলা পেয়ার। উঃ, কি দারুণ একটা প্ল্যান করেছিস তোরা। আমার তো এসব মাথাতেও আসতো না রে।

    সুগত— আরে আমার মাথাতেও আসেনি। এইসব ঘটা করে ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি করা, এসব হল আজকালকার ফ্যাশান। শর্বরী বলে বসলো আর ছেলেমেয়েরাও লুফে নিল।

    (রান্নাঘর, শর্বরী রান্না করতে করতে ফোনে কথা বলছেন। নেপথ্যে খুব আস্তে রবীন্দ্রসংগীত)

    শর্বরী— হ্যাঁ ওরা এক্ষুনি এসে পড়বে। আর বোলো না, মজা করে বলেছিলাম, এবছর আমাদের বিয়ের তিরিশ বছর হবে। ব্যাস মন্দিরা এক এলাহি প্ল্যান করে ফেললো, এখন আমেরিকা থেকে ছেলে বউ, কালিম্পং থেকে পুরনো কলেজের বন্ধুরা সবাই এসে হাজির। বাকি বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনরা তো আছেই, তবে আমি বলেছি খুব বেশি ভিড় না বাড়াতে। যা করবার বাড়িতেই করবো। দেখা হবে তাহলে। আসি।

    (ফোন কেটে আরেকটা নম্বর ডায়াল করে)

    হ্যাঁ আমি শর্বরী বাসু বলছি। হ্যাঁ ভালো আছি, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। হ্যাঁ, আপনার পাঠানো কাগজপত্র সব পেয়েছি। ধন্যবাদ।

    (কলিংবেল)

    শর্বরী— ওই তো ওরা। পরমা এসেছে! কেমন আছিস রে তোরা?

    (বৈঠকখানা। রথীন, সুগত, রঙ্গন, সঞ্চারী, পরমা গল্পে মত্ত)

    রঙ্গন— কাকু, কাকিমা, তোমাদের কতদিন বাদে দেখলাম। সেই পাঁচ বছর আগে কালিম্পং গেছিলাম, তখন তোমরা সবে রিটায়ার করে ওখানে সেটল করছ। কি অপূর্ব কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেছিল একদিন।

    পরমা— যখন খুশি চলে এসো। বউমা সেই বিয়ের পরে তোমার সঙ্গেও তো প্রথম দেখা। তোমরা যে আমার কি আদরের, অথচ— (থেমে যায়)

    সুগত— সময় আমাদের দূরে নিয়ে গেছে। ভাগ্যিস এই গেট টুগেদারটা ...

    (মন্দিরা ঢোকে। হাতে খাবারের থালা)

    রথীন— আরে এসো এসো, আমাদের গ্র্যান্ড ইভেন্ট প্ল্যানার। কত্ত বড়ো হয়ে গেছো সকলে। আর আমরাও চুপচাপ বুড়ো হয়ে গেছি।

    মন্দিরা— সত্যি কাকু, তোমাদের বাড়ি কতো মজা করেছি ছোটবেলায়। ঊর্মি আর রিমা কেমন আছে?

    পরমা— একজন মুম্বাই, আরেকজন দুবাই। খুব ব্যস্ত, সময় করতে পারলো না না। আসতে চেয়েছিল।

    মন্দিরা— কোন চিন্তা নেই ওরা ভার্চুয়ালি অ্যাটেন্ড করবে, সব ঠিক হয়ে গেছে। আজকাল যে যেখানে থাকুক না কেন, সবাই কানেক্টেড।

    সুগত — (খুব আস্তে) হ্যাঁ, যতটা কানেক্টেড, ততটাই লোনলি। যেমন ইন্ডিপেন্ডেন্ট, তেমনি আইসোলেটেড।

    (শর্বরী ঢোকে। সবাই হইচই করে উঠে দাঁড়ায়)

    (বেডরুম ১— সুগত ও শর্বরী)

    শর্বরী— বাপরে বাপ, গল্পে গল্পে রাত হয়ে গেল। কাল সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে, এতগুলো লোকের খাওয়াদাওয়া, ঘর সাজানো, তারপর সালোনে যাওয়া। মন্দিরা যা টাইট প্রোগ্রাম বানিয়েছে।

    সুগত— ব্যাপারটা কি হচ্ছে বলো তো?

    শর্বরী— কি আবার ব্যাপার? ছেলেমেয়েরা মিলে একটা হইচই করতে চাইছে, করুক না।

    সুগত— মন্দিরার নিজের সংসার ভাঙতে বসেছে, ও আর সৃজন সেপারেটেড, আর এই সময়ে হঠাৎ আমাদের অ্যানিভার্সারি নিয়ে—

    শর্বরী— সংসার এমনিতে থাকে না গো, সংসারকে ধরেবেঁধে রাখতে হয়। তাছাড়া সৃজন তো আসবে বলেছে।

    সুগত— কি জানি এদের ব্যাপার কিছুই বুঝি না। আর তুমিও যেন—

    শর্বরী (কাছে এসে)— আমি যেন কি? কি নিয়ে চিন্তা মশাই?

    সুগত— কিছু না। তোমাকে অন্যরকম লাগছে।

    বেডরুম ২— রঙ্গন ও সঞ্চারী

    সঞ্চারী— বাব্বা, কি কাণ্ড। আমাদের বিয়ের তারিখটা তো তোমার মনেই থাকে না। আচ্ছা, একটা কথা বলো তো, এই যে তোমার বোনের সেপারেশনটা—

    রঙ্গন— প্লীজ, এখন ওই নিয়ে কথা বোলো না। সবাই এখানে একদিনের জন্য আনন্দ করতে এসেছে।

    সঞ্চারী— না, মানে কারণটা জানলে একটু কথাবার্তা বলা যায়। আমি তো ওর বৌদি না কি?

    বেডরুম ৩— রথীন ও পরমা)

    রথীন— কি ভাবছো?

    পরমা— কিছু না। ভাবছি ছোটবেলার শহরটা কেমন বদলে গেছে। মানুষগুলোও। দূরে দূরে থাকলে বোধহয় এরকম হয়। কাছের মানুষকে আর চেনা যায় না।

    (বৈঠকখানা—১ পার্টির কোলাহল)

    রথীন— দারুণ, দারুণ সাজানো হয়েছে মন্দিরা। তুলনা নেই--

    মন্দিরা— মা আর বাবাকে একসাথে কেমন মানাচ্ছে বলো?

    রঙ্গন— দারুণ। পুরো ব্যাপারটাই ম্যাজিক্যাল। মনে হচ্ছে ছোটবেলায় ফিরে গেছি। থ্যাঙ্ক ইউ মনি।

    মন্দিরা— ইউ আর ওয়েলকাম দাদা (গলা আটকে যায়। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে) প্লীজ আমার জন্য চিন্তা করিস না। আই অ্যাম ওকে।

    সঞ্চারী— (গ্লাসে চামচ দিয়ে আওয়াজ করে) অ্যাটেনশন প্লীজ। মা, আমি শুনেছি যে তুমি খুব ভালো গান করো কিন্তু বিয়ের পরে কখনো তোমার গান শুনিনি। আজ গাইতেই হবে।

    পরমা— সত্যি রে, ভুলেই গেছিলাম। আজ তোর গান শুনবো

    (সকলে সম্মতি জানায়)

    শর্বরী— আচ্ছা আচ্ছা, গাইবো, এখন পার্টি হোক, খাওয়াদাওয়া করুক সবাই।

    সুগত— আমি কিছু বলতে চাই (সবাই চুপ করে)। যখন এই বিবাহবার্ষিকী পালন করার কথা হয়েছিল, আমি একটু ঘাবড়েই গেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি পৃথিবীর সবথেকে সুখী লোক। আমার স্ত্রী, আমার ছেলেমেয়েরা, আমার বন্ধুরা, তোমরা সবাই আমাকে এত, এত ভালবেসেছ। আমার মন ভরে গেছে।

    রথীন— পরমা, ওকে যেন আর হুইস্কি খেতে দিও না। এরপর ভেউ ভেউ করে কাঁদবে। মনে আছে কলেজে কি কাণ্ড করেছিল।

    পরমা— অনেকের মধ্যে কষ্ট জমে থাকে রথী, কিন্তু মানুষ বোধহয় কাঁদতেও ভুলে গেছে। হুইস্কি খেয়েই নাহয় একটু কাঁদুক আজ।

    সঞ্চারী— আরে আরে কে এসেছে দেখো!

    (সৃজন আস্তে আস্তে ঢোকে, শর্বরীর হাতে একটা ফুলের বোকে দেয়)

    রথীন— কেমন আছো সৃজন। রোগা হয়ে গেছো দেখছি।

    পরমা— এসো সৃজন। দাঁড়াও তোমার খাবার এনে দিচ্ছি।

    সৃজন— প্লীজ, মা, ব্যস্ত হয়ো না। আমি নিয়ে নিচ্ছি।

    (রান্নাঘর— মন্দিরা ও সৃজন)

    মন্দিরা— কেমন আছো?

    সৃজন— ঠিক আছি। তুমি?

    মন্দিরা— একদম ঠিক। ড্রিঙ্কস নাও।

    সৃজন— এখন থাক। তুমি কিন্তু এটা দারুণ অর্গানাইজ করেছো মন্দিরা। তোমার বাবা-মা’কে খুব সুন্দর লাগছে।

    মন্দিরা— ওরা একসঙ্গে সুখেদুঃখে তিরিশ বছর কাটিয়েছে সৃজন। আমরা তো তিন বছরও পারলাম না। তাই সেলিব্রেট করছি। সরো, খাবারগুলো ওখানে নিয়ে যাই। এই নাও, এইটা তোমার ফেভারিট ড্রিংক। সিঙ্গল মল্ট উইথ ওয়ান আইস কিউব। তোমার ক্লিনিক কেমন চলছে?

    সৃজন— বন্ধ করে দিয়েছি। ভাবছি লন্ডনে মুভ ব্যাক করবো।

    মন্দিরা— ভালো। (বেরিয়ে যায়)

    (বৈঠকখানা ২ – পার্টি শেষ। বাইরের লোকেরা একে একে চলে যাচ্ছে)

    মন্দিরা— খুব ভালো লাগলো আপনারা এলেন। দেখা হবে (দরজা বন্ধ করে) বাব্বা মিটল। আই অ্যাম রেডি টু কোল্যাপ্‌স।

    সৃজন— আমিও আসি তাহলে। গুডনাইট।

    সঞ্চারী— একটু বসে যান না। মা’র গান তো শোনা হলো না এখনও।

    শর্বরী— গান? হ্যাঁ এখন গান গাওয়া যায়। ঠিক আছে, বসো তোমরা তাহলে

    (শর্বরী খালি গলায় গাইছে)

    ওই মরণের সাগরপারে চুপে চুপে এলে তুমি ভুবনমোহন স্বপনরূপে॥ কান্না আমার সারা প্রহর তোমায় ডেকে ঘুরেছিল চারি দিকের বাধায় ঠেকে, বন্ধ ছিলেম এই জীবনের অন্ধকূপে– আজ এসেছ ভুবনমোহন স্বপনরূপে॥ আজ কী দেখি কালো চুলের আঁধার ঢালা,

    তারি স্তরে স্তরে সন্ধ্যাতারার মানিক জ্বালা। আকাশ আজি গানের ব্যথায় ভরে আছে, ঝিল্লিরবে কাঁপে তোমার পায়ের কাছে, বন্দনা তোর পুষ্পবনের গন্ধধূপে– আজ এসেছ ভুবনমোহন স্বপনরূপে॥

    (কয়েক লাইন গাওয়ার পরে গলা ভেঙে যায়, কাশি আসে)

    সুগত— কি হল শর্বরী। শরীর খারাপ নাকি? হবে না, সকাল থেকে যা ধকল যাচ্ছে!

    মন্দিরা— মা, আজকে এই গান কেন? মা—

    শর্বরী— সবাই একটু মন দিয়ে শোনো আমি কিছু বলতে চাই।

    (সবাই চুপ। শর্বরী আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করে। ঘরের পরিবেশ বদলে যায়)

    শর্বরী— (একটা ফাইল বাড়িয়ে দেয়) এর মধ্যে কিছু কাগজপত্র আছে, তোমরা দেখে নিতে পারো। সৃজন তোমাদের বুঝিয়ে দেবে। আমার প্যাংক্রিয়াটিক ক্যানসার হয়েছে, স্টেজ ফোর। কেমোথেরাপি করলে কিছুদিনের জন্য জীবনটা টেনে নিয়ে যাওয়া যাবে কিন্তু আমার ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে আমি অন্যরকম ঠিক করেছি।

    (ঘরের মধ্যে একটা কোলাহল ওঠে)

    সুগত— কি ঠিক করেছো? শর্বরী, তুমি আমাকে জানাওনি কেন?

    মন্দিরা— মা, তুমি কি বলছ?

    শর্বরী— আমি সিম্পটোম্যাটিক চিকিৎসা নেবো কিন্তু কেমোথেরাপি নেবো না। আর্লি স্টেজ হলে নিতাম কিন্তু আমার লিভার আর লাংস, দুটোই ইনভলভড, ক্যানসারটাও খারাপ টাইপের। আমি জীবনের ঘণ্টা মিনিটগুলো বাড়াতে চাই না। যতদিন আছি, আমার প্রিয়জনদের সঙ্গে ভালো থাকতে চাই।

    সুগত— কি করে একথা বলতে পারলে তুমি। এতো স্বার্থপর হলে কি করে!

    শর্বরী— স্বার্থপর নয় সু, প্র্যাকটিক্যাল। তোমাকে তো ইচ্ছে করে ছেড়ে যাচ্ছি না, যেতে হবে তাই যাচ্ছি। এর মধ্যে রাগ, দুঃখ, অভিমানের কিচ্ছু নেই। আমি চেয়েছিলাম তোমাকে যাতে একলা এই আঘাতটা না নিতে হয়, যেন সবাই তোমার সঙ্গে থাকে, তোমাকে প্রস্তুত করে। বিশ্বাস করো, শুধু এইটুকুই।

    মন্দিরা— এ হতে পারে না মা। সৃজন তুমি বসে বসে কি করছো, মাকে বোঝাও। এখন তো কতরকম নতুন ওষুধ বেরিয়েছে।

    সৃজন— কোন লাভ নেই মনি। শী ইজ রাইট।

    শর্বরী— বিশ্বাস করো, আমি ড্রামাটিক কিছু করতে চাইনি, শুধু খবরটা তোমাদের একসাথে সামনাসামনি দিতে চেয়েছিলাম। একলা একলা তোমাকে বললে কষ্ট বেশি ছাড়া কম হতো না সু। যদি দোষ করে থাকি আমাকে মাপ করো তোমরা।

    পরমা— তোর ভয় করছে না?

    শর্বরী— বিশ্বাস কর একটুও করছে না। যেটুকু দুঃখ সে শুধু এই মানুষগুলোকে ফেলে যাবার দুঃখ, কিন্তু অনেক সময় দুঃখ মানুষকে কাছাকাছি আনে। রঙ্গন, মন্দিরা তোমাদের জীবন তোমরা নিজেদের মতো বাঁচবে, ওসব চিন্তা থেকে এখন আমার ছুটি। রথীন, পরমা তোদের বাড়ির বারান্দায় বসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার খুব ইচ্ছে। নিয়ে যাবি তো?

    রথীন— যেদিন বলবি। চল না কালকেই আমাদের সঙ্গে। জানিস কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপরে যখন ভোরের আলো পড়ে তখন মনে হয় জীবন মৃত্যু সব অবান্তর, এই মুহূর্তটুকু ছাড়া মানুষের আর কিছু নেই। চল না, তোকে দেখাবো।

    (মন্দিরা সৃজনের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদছে। শর্বরী সুগতর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আলো নিভে যাবে)



    অলংকরণ (Artwork) : রাহুল মজুমদার
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments