বিজন বলল, “শালা, সময়টাই এমন চলছে, কে কখন ফুটুস হয়ে যাবে, ভগাই জানে।”
তাপস বলল, “তাই বলে নন্দিতা...”
আমি গ্লাসে ঠোঁট ঠেকালাম। আমার কথা বলতে ভাল লাগছিল না। বছর তিনেক আগে আমরা চারজন একসঙ্গে নন্দিতার প্রেমে পড়েছিলাম। নন্দিতার মাধবীলতার মত পল্লবিনী শরীরে তখন সবে কুঁড়ি ধরেছে। আমাদের মফস্সল শহরের আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোয় এই ধরণের যূথবদ্ধ প্রেম তখন একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল না। এমনকি নন্দিতা নিজেও ব্যাপারটা কিছু গর্হিত মনে করেনি। উঠতি বয়সের ছেলেরা একটি সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের প্রতি আকৃষ্ট হবে সেটাই তো স্বাভাবিক। বিজন বলল, “খবরটা শোনার পর থেকে মাইরি, ভয়ানক অস্থির লাগছে। বিশ্বাস কর সারা রাত্তির দু’-চোখের পাতা এক করতে পারিনি।”
মনোজ সায় দিল, “আমিও... আর রাত জাগলেই আমার লুজ-মোশান হয়। সকাল থেকে চোদ্দবার গেছি-এস্ছি... গা-হাত-পা লেগে-লেগে আসছে।”
আমি মনোজের দিকে তাকিয়ে বললাম, “পেট ছেড়েছে, তাও হোড়ের মত মাল খাচ্ছিস, বেগ এলে কোথায় গিয়ে বসবি?” মনোজ চারিদিকে তাকাল। বিষয়টা ভাবার মত, শরিকি বিবাদে সামন্তদের এই বাড়িটা আপাতত ভগ্নস্তূপ। এর মধ্যে টয়লেট খুঁজে পাওয়া বা পেলেও সেখানে গিয়ে কাজ সারা সহজ হবে না।
গতকাল সন্ধেবেলা তাপস খবরটা নিয়ে এসেছিল। কানুর ওষুধের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল। সাতদিন আগে সামান্য জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল নন্দিতা। কী এমন হল, তরতাজা একটা মেয়ে দুম করে নেই হয়ে গেল। তাপসের চোখ ফেটে জল পড়ছিল টপটপ করে। তখনই আমরা স্থির করি, নন্দিতার জন্য অন্তত ছোটোখাটো একটা শোকসভার আয়োজন করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের কারো বাড়িতেই এই ধরণের সভা-টভা করার মত বন্দোবস্ত নেই। মনোজই প্রস্তাব দিয়েছিল সামন্তদের বাড়ির ছাদে করলে কেমন হয়। বাড়িটার দরজা-জানলা বহুকাল আগেই লোপাট হয়ে গেছে, তাই ঢুকতে-বেরোতে কোনও সমস্যা নেই। তাছাড়া ছাদে আলোরও অভাব হবে না, দু’-দিন পরেই কোজাগরী পূর্ণিমা। তাপস একটু কিন্তু-কিন্তু করেছিল, সাপখোপ পোকামাকড়ের আস্তানা হয়ে আছে বাড়িটা। আমরা ওকে বুঝিয়েছিলাম, ধ্যুর বোকা, দোতলার ছাদে কি আর সাপ উঠবে? একটু পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে নিলে নিশ্চিন্তে নিজেদের ইচ্ছামত নন্দিতাকে স্মরণ করা যাবে।
কথা মত আজ সন্ধের মুখে অল্প-স্বল্প আলো থাকতে-থাকতেই আমরা গুটিগুটি সামন্তদের ছাদে উঠে এসেছিলাম। বিজন বগলে করে ঝাঁটা আর মাদুর এনেছিল। মনোজ জল, বোতল আর প্লাস্টিকের গ্লাস। আমি ঝাল চানাচুর। তাপস কিছু আনেনি। গতকাল নন্দিতার মৃত্যু-সংবাদ বয়ে এনেই ওর সমস্ত শক্তি ফুরিয়ে গিয়েছিল। ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছিল, মাদুর বিছিয়ে গোল হয়ে বসতে না বসতেই পুব আকাশে চাঁদ উঠল। মনোজ বোতল খুলল, আমি দাঁত দিয়ে চানাচুরের প্যাকেটের কোণা ছিঁড়ে পাশে গুছিয়ে রাখলাম। তাপস বলল, “একটু পেঁয়াজ-লংকা কুচি থাকলে ব্যাপারটা আরও জমত।”
বিজন ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিল। নন্দিতা জানতে পারলে নিশ্চয়ই আমাদের এই শোক-পালনের রীতি অনুমোদন করত না। কিন্তু মুশকিল হল ওর স্মৃতিচারণ করার বিকল্প কোনও পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। আমরা নন্দিতার রূপমুগ্ধ চারটি বেকার যুবক এর থেকে বেশি কী-ই বা আয়োজন করতে পারতাম? আমি সস্তার মদে জ্যোৎস্না গুলে চুমুক দিতে দিতে ভাবছিলাম, নন্দিতা কি আমাদের বিষণ্ণতা ছুঁতে পারবে? শুনেছি মৃত্যুর পর মানুষ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায়। এই অপার্থিব জ্যোৎস্নায় কি নন্দিতার শরীরের স্বর্ণরেণু মিশে আছে? কপাল-জুড়নো হাওয়া কি আসলে নন্দিতার শীতল অঙ্গুলি? কথাটা মনে হতেই আমি একবার কেঁপে উঠলাম। ঠিক এইরকম একটা পরিস্থিতি কোনও একটা গল্পে যেন পড়ছিলাম। একটি মেয়ের চিতা ঘিরে তার স্বামী আর তিন প্রেমিক*… কার লেখা? মনে করতে পারলাম না। নন্দিতার দাহ কাজের সময় অবশ্য আমরা কেউ ছিলাম না। তাছাড়া আমাদের মধ্যে কেউ নন্দিতার স্বামী নই। তবু...
নন্দিতার স্বামী হওয়ার যোগ্যতা আমাদের কারোরই কি ছিল? নন্দিতা জানত আমরা চারজনই ওকে নিবিড় করে চাই। কিন্তু ও কাকে চায় আমরা কোনওদিন জানতে পারিনি। কারণ নন্দিতা আমাদের সংগে কখনও কোনও পক্ষপাতিত্ব করেনি। তার উদ্বৃত্ত সময় সে সমান ভাগে আমাদের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছিল। আমি যখন বিকেল সাড়ে-পাঁচটা নাগাদ সাইকেল নিয়ে ওদের বাড়ির সামনে দিয়ে টিউশন পড়িয়ে ফিরতাম, ও ঠিক সেই সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে চুল বাঁধত, লম্বা কোমর ছাপানো চুল ছিল নন্দিতার। আমি হাত নাড়লে এক টুকরো হাসি ছুঁড়ে দিত দৈবাত। সে-সময় মনোজ ঘেমে-নেয়ে গম ভাঙিয়ে আনলেও নন্দিতা দরজায় আসত না। কাজের মেয়েটাকে পাঠিয়ে দিত। মনোজ সকালের দিকটা ফাঁকা থাকে বলে ওদের বাজার-দোকান করে দিত। মেসোমশাই, মানে নন্দিতার বাবার বয়স হয়েছে, হাঁটুর জোর কমে গেছে, তাছাড়া নন্দিতার মত মেয়ের বাবারা কিছু সুযোগ-সুবিধে না-চাইতেই পাবেন, এতে আর আশ্চর্য কী! তাপস ও বিজনের জন্যও নন্দিতা সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল।
তাপস ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে, লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারে ওদের রেডিমেড গার্মেন্টসের শো-রুম আছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত, তাপস আর্থিক সচ্ছলতার কারণে নন্দিতার কাছ থেকে কোনও বাড়তি সুযোগ পায়নি। নন্দিতা ওর জন্য দুপুরের দিকে একটা সময় বরাদ্দ করেছিল। তাপসের দায়িত্বে ছিল, গ্যাস বুক করা, পোস্ট-অফিসের পাসবই আপডেট করে দেওয়া, এইসব সাধারণ টুকিটাকি... সংসারে কি আর একটা কাজ! মুখে কিছু বলত না, দুপুর রোদে পুড়তে-পুড়তে নন্দিতাদের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হত বলে তাপসের মনে বোধহয় একটা চাপা অসন্তোষ ছিল। তা সত্ত্বেও তাপস বলল, “টেল মি, হোয়াই নন্দিতা? অসুখটা আমার হলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত?”
বিজন ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “কী লাভ হত? তুই নিজে মরে গেলেও তো নন্দিতাকে পেতিস না।”
তাপস আহত গলায় বলল, “বিজু, মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড, তুই আমাকে এতটাই মীন-মাইন্ডেড ভাবলি? আমি মরে গেলে যেতাম, সো হোয়াট? নন্দিতা তো বেঁচে থাকত। তোকে না-হলে মনোজকে বিয়ে করে সুখি হত।”
আমি জানি তাপস আমাকে ধর্তব্যের মধ্যেই ধরে না। বিজনের ছোটমামা রেলের ঠিকেদার, অনেক চেনাশোনা, বিজনকে ঠিক কোথাও গুঁজে দেবে। মনোজেরও চিন্তা নেই। ওদের গ্রামের দিকে প্রচুর জমিজমা, সম্পত্তি। ওর বাবা যা রেখে যাবে, মনোজ, মনোজের বৌ-ছেলে-নাতি-নাতনি সারা জীবন খেয়ে ফুরোতে পারবে না। কেবল আমারই না আছে অতীত, না ভবিষ্যৎ, খালি কতকগুলো টিউশন। বিজন অবশ্য ভদ্রতা করে একবার বলল, “শুভকে বাদ দিলি কেন?”
মনোজ জড়িয়ে-জড়িয়ে বলল, “তাপস, তুই কেন? আমিও তো মরে যেতে পারতাম।”
এ কথাটা ঠিক যে নন্দিতা যদি একবার মুখ হাঁ করত, আমাদের চারজনের মধ্যে যে কেউ নন্দিতার সঙ্গে মৃত্যু বদলে নিতে রাজি হয়ে যেতাম। বিজন একটু বিমর্ষ হয়ে বলল, “আমার তো কো-মর্বিডিটিও ছিল, জানিসই তো ছোট থেকে আমি একটু রুগ্ন টাইপের, এপিলেপ্টিক...।”
তাপস বিজনের কথার প্রতিবাদ করে কিছু বলতে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই আমরা শব্দটা পেলাম। চারজনেই গ্লাস নামিয়ে রাখলাম। সতর্ক হয়ে কান পাতলাম, মনে হল সিঁড়ি ভেঙে কেউ ছাদে উঠে আসছে। এসময় কে আসতে পারে? আমরা কাউকে ডাকিনি, কাউকে বলিওনি এখানে এসেছি। চারজনে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। হয়তো উটকো কেউ। বিজন বলল, “আরে, ছোড় ইয়ার! হবে কোনও লাথখোর জন্তা। বেওয়ারিশ জায়গা দেখে ঢুকে পড়েছে, রাত কাটাবার জন্যে।”
শব্দটা কি থেমে গেল?
না, সিঁড়িতে পায়ের শব্দ ক্রমশ ভারি হচ্ছে। যেই হোক মনে হচ্ছে ছাদে আসাটাই তার উদ্দেশ্য। তাপস হতাশ গলায় বলল, “এরা কি মানুষকে দু’-দণ্ড শান্তি দেবে না?”
মনোজ হাতের ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করল, পারল না। আমি ওর কাঁধে আলতো করে হাত রাখলাম। যদিও আমি আটকাইনি, মনোজ বলল, “শুভ, ছাড় আমাকে, নন্দিতার শোকসভায় যদি কেউ ব্যাগড়া দেয়, আমি তাকে খুন করে ফেলব।”
আমরা চারজনে একদৃষ্টে ছাদের দরজাটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। দেখলাম কপাটহীন দরজায় একটা মেয়ে এসে দাঁড়াল। তার পরনে দুধ-সাদা সালোয়ার-কামিজ, হাতের মোবাইল থেকে আলো বেরোচ্ছে, মুখের কাছটায় ঘন অন্ধকার।
কে ওই নারী?
মেয়েটা এক মুহূর্ত থেমে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। হেঁটে আসছে না, যেন জ্যোৎস্নার মধ্যে সাঁতার কেটে আসছে। ওর মেঘের মতো খোলা চুল উড়ে পশ্চিমের আকাশ ঢেকে দিচ্ছে। মনোজ আমার হাত চেপে ধরল। পাশে একটা গোঙানির আওয়াজ পেয়ে দেখলাম বিজনের খিঁচুনি লেগেছে। তাপস ওকে গায়ে নাড়া দিয়ে ডাকতে লাগল, “বিজু, এই বিজু, কী হয়েছে? জল খাবি?”
মেয়েটা ততক্ষণে আমাদের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। জ্যোৎস্নার স্তিমিত আলোতেও তাকে স্পষ্ট চেনা যাচ্ছে। মনোজ অস্ফুট স্বরে বলল, “নন্দিতা...”
বলাই বাহুল্য আমরা কেউই নন্দিতার এই গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্সের জন্য তৈরি ছিলাম না। নন্দিতা আমাদের দিকে দু’-হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এসো... এখানে কী করছ তোমরা? আমার সঙ্গে এসো...” ওর কথাগুলো যেন ভেঙে গুঁড়ো-গুঁড়ো হয়ে বহতা হাওয়ায় মিশে গেল।
তাপস আচমকা মুখ ফিরিয়ে চিৎকার করে উঠল, “নন্দিতা, কেন এসেছ এখানে? চলে যাও... চলে যাও বলছি...”
নন্দিতা খিলখিল করে হাসল। বলল, “তোমাদের নিয়ে যেতে এসেছি গো। যাবে না?”
শীতকালে আইসক্রিম খাবার বায়না করলে মা যেমন করে বাচ্চাদের নিরস্ত করার চেষ্টা করে ঠিক সেই রকম গলায় মনোজ বলল, “শোনো নন্দিতা, ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করো, আমরা কেমন করে যাব? আমরা তো তোমার মত মরে যাইনি।”
অথচ কয়েক মিনিট আগে এই মনোজই নন্দিতার জন্য মরে যেতে চাইছিল। মনোজের কথা শুনে নন্দিতা যেন দুঃখ পেল, বলল, “তোমরা কেউ আমার সংগে আসবে না। এই তোমরা আমায় ভালবাসো?”
আমার আর সহ্য হল না। আমি উঠে দাঁড়ালাম। তাপস পেছন থেকে ডাকল, “এই শুভ, কোথায় যাচ্ছিস?”
মনোজ চাপা গলায় বলল, “শুভ, পাগলামি করিস না।”
আমি ওদের পাত্তা দিলাম না। ভেবে দেখলে, নন্দিতাকে না পেলে বেঁচে থাকার সত্যিই কি কোনও অর্থ হয়? এই বেহুদা জীবনের থেকে নন্দিতার সংগে হাওয়ায় ভেসে-ভেসে এক্কা-দোক্কা খেলা অনেক ভাল। আমি এগিয়ে গিয়ে নন্দিতার হাত ধরলাম, বললাম, “চলো। কোথায় নিয়ে যাবে।”
নন্দিতা স্পষ্টতই খুশি হল। আমার হাত ধরে সিঁড়ির দরজার দিকে এল। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ও হাত ছাড়ল না। মোবাইলে টর্চ জ্বালাল, বলল, “সাবধানে নামো, পড়ে যেও না যেন।”
আলোর সুড়ঙ্গ বেয়ে আমি আর নন্দিতা নেমে যাচ্ছি, সিঁড়ি কি আর শেষ হবে না?
আমরা সামন্ত-বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলাম। সোডিয়াম ভেপারের আলোয় নন্দিতাকে এখন আর ততটা বায়বীয় মনে হচ্ছে না। আমার হাত ছেড়ে দিয়েছে যদিও, ওর করতলের ভাপ লেগে আছে আমার মুঠোয়। কচি লাউডগার মত হাত তুলে একটা টোটো দাঁড় করাল নন্দিতা। নিজে চড়ে আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকল, “কী হল? এসো। হাঁদা-গঙ্গারামের মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন?”
আমি ওর পাশে উঠে বসলাম। নন্দিতা বলল, “কানুর কাছে শুনলাম, তোমরা নাকি আমার শোকসভা পালন করছিলে?”
কানু, ইউ মীরজাফর! আমি লজ্জা পেয়ে বললাম, “না, মানে... তাপস এসে বলল...”
নন্দিতা বলল, “তাপস বলল আর তোমরা মেনে নিলে? আচ্ছা যা হোক!”
পাশে বসে নন্দিতার শরীরের ওম পাচ্ছিলাম, বুকের থেকে উঠে আসা পারফ্যুমের সুগন্ধ পাচ্ছিলাম। বিশ্বাস করতে ভয় করছিল, আলো-হাওয়া নয়, রক্ত-মাংস দিয়ে গড়া নন্দিতার সঙ্গে যাচ্ছি। তাপসটা একটা রিয়েল মাকড়া... আর একটু হলেই আস্ত মেয়েটাকে গায়েব করে দিচ্ছিল। ভাগ্যিস উঠে এসে নন্দিতার হাত ধরেছিলাম। নন্দিতা বলল, “আসলে তাপসের দোষ নেই। আমার পাশের বেডের মেয়েটা মারা গেল। আমার রিলিজ হবার কথা,আমার নামে ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিল। সেসব বদলাতে প্রাণ বেরিয়ে গেছে।”
আমি বললাম, “দেখো কাণ্ড!”
নন্দিতা বলল, “কানু এসেছিল বাড়িতে ওষুধ দিতে, বলল তোমরা নাকি সামন্ত-বাড়িতে... মাগো! শোক প্রকাশের কী ছিরি!”
আমি মিনমিন করে বললাম, “একটা ফোন করতে পারতে তো।”
নন্দিতা বলল, “ভাবলাম এই সুযোগ, পরীক্ষা করে দেখি, তোমাদের মধ্যে কে আমায় সত্যি-সত্যি চাও,” বলতে বলতে নন্দিতা ঘন হয়ে এল। ওর স্বর্ণচাঁপার পাপড়ির মত আঙুল দিয়ে আমার আঙুল জড়িয়ে নিয়ে বলল, “আজ থেকে না-হয় শুধু তাকেই ভালবাসব।”
আমি লম্বা করে একটা শ্বাস নিলাম। আমার মতো হাড়-হাভাতে কি সত্যিই নন্দিতার ভালবাসার যোগ্য? কে জানে? কালকেই হয়তো নন্দিতার মন ঘুরে যাবে। তবু আজকের দিনটার জন্য তো নন্দিতা আমায় বেছে নিয়েছে। তাই বা কম কীসে? আমি ওর হাতে চাপ দিলাম। নন্দিতা ঘাড় ফিরিয়ে হাসল।