বার্নস্ এন্ড নোব্ল্-এর মিশুকে বইওয়ালা আমাকে ফিসফিস করে জানিয়ে দেয়- আর কিছুদিনের মধ্যেই ইন্ডিয়ান রাইটারদের গল্পের সংকলন বেরোবে। দাম হবে মাত্র এগারো ডলার, খোঁজ নেবেন একবার।
সে আর বলতে! আমার বইগুলো প্যাক করতে করতে বইওয়ালা মুচকি হেসে বলে- দারুণ সব লেখা হচ্ছে। দ্য গড অব স্মল থিংস্- চমৎকার বই, তাই না?
- অপূর্ব! বলি আমি। বইটার নাম শুনেছি। অরুন্ধতী রায়ের লেখা। ভারতীয় লেখিকা, ইংরিজিতে লেখেন। দ্য গড স্মল থিংস্ এঁর প্রথম উপন্যাস। সত্যি বলতে কি আমার এখনো পড়া হয় নি। কিন্তু উৎসুক বইওয়াওলার কাছে তা ফাঁস করার প্রয়োজন বোধ করি নি। চেপে দিয়েছি। আসলে এই ছ বছরের প্রতিটি দিন-ই আমার নিজেকে মনে হয়েছে ভারতের বেসরকারী রাজদূত। মনে আছে কয়েক বছর আগে বস্টনের ফোর সীজন্স হোটেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরে আসা লোকজন শুধু শ্বেতাঙ্গ পরিচারক চাই এই দাবী করে যে কেলেংকারি কাণ্ড করেছিলেন সেটা কাগজে বেরিয়ে যাবার পর আমি গায়ে পড়ে লোকেদের ডেকে ডেকে বোঝাতাম- এসব সামান্য ভুল বোঝাবুঝির ব্যাপার- মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং মাত্র। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র সেটা জানো তো?
বেসরকারী রাজদূত হতে গেলে দেশের সব খবর রাখতে হয়। অরুন্ধতী রায়ের লেখাটা, বুঝি আর নাই বুঝি, পড়েই ফেলব শিগ্গীর।
তবু রুশদীর জন্য- নতুন লেখক লেখিকাদের সৌজন্যে- পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে, সায়েব-সুবোদের মধ্যে ভারত উপমহাদেশ সম্পর্কে দুটো ভালো কথা শুনতে পাই। নইলে তো আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে কেউ ভাবেই না। সেই রবীন্দ্রনাথের সময় কবে একবার স্টকহম পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিয়েছিলাম, আর মাঝখানে “পথের পাঁচালি” দেখিয়ে নিউ ইয়র্ককে চোখের জলে ভাসিয়েছি। কিন্তু এ ছাড়া? পৃথিবীর মানচিত্রে আমরা কোথায়?
দ্য নিউ ইয়র্কারে রুশদীর লেখাটা পড়তে পড়তে বাড়ি ফিরছি। প্রথম পাতাতেই একটা ছোট্ট চোট খেতে হল। রুশদী লিখেছেন- গত পঞ্চাশ বছরের ভারতীয় সাহিত্যের “সার্ভে” করে উনি এই চমকপ্রদ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে গদ্যে ভারতের আঠেরোটি সংবিধান স্বীকৃত ভাষায় যা লেখা হয়েছে তার তুলনায় ভারতের ইংরেজি লেখকদের লেখাই বেশি শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার পর ভারতের সত্যিকারের সাহিত্যও নাকি শুধু ইংরিজিতেই লেখা হয়েছে।
ভারতের “নেটিভ” ভাষা-গুলির বিষয়ে আর যে যাই ভাবুক খোদ সলমান রুশদী এরকম একটা কিছু বলে ফেলবেন আমি ভাবতে পারিনি। এই তো কিছুদিন আগে ওনার একটি প্রবন্ধ পড়ছিলাম যাতে উনি ডেভিড লীন-কে চমৎকার একহাত নিয়েছিলেন। ডেভিড লীন “প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া” ছবিটি তুলবার পর নাকি বাগাড়ম্বর করে একবার বলে ফেলেছিলেন যে ভারতবর্ষকে ওনার আগে সিনেমার পর্দায় কেউ ধরতে পেরেছে বলে উনি জানেন না। এর সমুচিত জবাবে রুশদী লিখেছিলেন যে- ডেভিড লীন-এর এই উক্তিতে সত্যজিৎ রায় প্রমুখ ভারতীয় চলচ্চিত্রকাররা যে ঘাড় হেঁট করে বসে থাকবেন তাতে সন্দেহ নেই। ইংরিজিই ভারতবর্ষ ও তার সংস্কৃতিকে ধরার একমাত্র মাধ্যম- এই ধারণা যে কতটা হাস্যকর সেটা রুশদী পেরেছিলেন তাঁর বলিষ্ঠ কলমের এক আঁচড়ে বুঝিয়ে দিত। রুশদী স্ময়ং যদি বিমুখ হন তাহলে ডেভিড লীন-দের হাত থেকে আমাদের বাঁচাবে কে?
প্রথম ধাক্কাটা কেটে যাবার পরে অবশ্য সন্দেহের বীজ উঁকি দেয়। ঠিকই বললেন না তো রুশদী? আমার মত বাংলা স্কুলের ছাত্ররা, যারা প্রথম জীবনে ইংরিজির মাহাত্ম্য না বুঝে অবহেলা করেছে এবং পরে টু লেট হয়ে গিয়েছে বলে আর পেরে ওঠে নি- তাদের একটু ইয়ে করে কথা বলা উচিত নয়? রুশদী কথাটা একেবারে ফেলনা করে দিও না হে- মনকে বলি। ইংরিজির-ই তো যুগ।
তাহলে কি সমরেশ বসুর সেই কোয়ালিটি ছিলো না? সুনীল – শীর্ষেন্দু – সঞ্জীব- যাঁদের কথা বুক ফুলিয়ে কলম্বিয়ান বন্ধুকে বলে গলা নামিয়ে যোগ করেছি- মারকোয়েজ্-ও মন্দ নন- তাঁরা কি এত খেটেও “সত্যিকারের ভারতীয় সাহিত্য” কিছু বানাতে পারেন নি? এই তো ঢাকার লিট্ল ম্যাগাজিন পড়তে পড়তে গত হপ্তায় মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম। এসব কি বাড়াবাড়ি করে ফেলছি তাহলে? ভালো গাইডেনসের অভাবে পুরো বাঙালী জাতটাই ভুলপথে চলে যাচ্ছি না তো?
বাড়িতে ফিরেই বই-এর র্যাকে নজর দিলাম। সামনেই পরশুরাম রচনাবলী। বহু লেখা-ই তো স্বাধীনোত্তর যুগের। সত্যিকারের সাহিত্য নয় এসব? রুশদী আশা করি পড়েছেন। তিনি অবশ্য লিখেছেন যে ইংরিজি অনুবাদ-ই তাঁর ভরসা। কিন্তু এও জানিয়েছেন যে আজকাল নাকি সাহিত্য একাডেমি যথেষ্ট অনুবাদের কাজ করছে (অন্যথা তাঁর “সার্ভে”-র আর কি মূল্য থাকে?)।
পরশুরামের বাংলার যা মেজাজ- চার পাঁচ পাতাতেই গল্প শেষ হয়ে যায়। দুটোর বেশী ছাপার ভুল থাকলে মনে হয় অমার্জনীয় জুলুম। তাহলে সব কি আজকাল ঠিকঠাক ইংরিজি করা যাচ্ছে? বাংলার লেখকদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিলে বঙ্কিমচন্দ্র এবং বিভূতিভূষণের নাম লিখেছেন রুশদী। আমার মনে সন্দেহ খচ্ খচ্ করতে থাকে- সত্যজিৎ রায় যদি “পথের পাঁচালি” না বানাতেন তাহলে কি বিভূতিভূষণের নাম আজ দ্য নিউ ইয়র্কারে স্থান পেতো? নাকি আজকাল বিভূতিভূষণের নিবিড় গদ্যেরও ততোধিক নিবিড় ইংরিজি তর্জমা হয়ে যাচ্ছে? তাই যদি সম্ভব হয় তাহলে আমাদের আশৈশব ইংরিজিকে এতো কঠিন মনে হত কেন? যাই হোক ইংরিজির পাঠকদের কাছ থেকে ভূরি ভূরি ধন্যবাদ পাওয়া হয়ে গেল রুশদীর। তিনি জোর গলায় সবাইকে “সার্ভে” করে ভিতরের খবর জানিয়ে না দিলে কষ্ট করে ভারতের “নেটিভ” ভাষার সাহিত্য ঘাঁটারও একটা (ছি ছি) দাম থেকে যেতে পারতো বাজারে।
দুই বাংলার মানুষের কাছে এবার একান্তে কিছু প্রশ্ন রাখা যাক। (দেখুন আমরা সবাই জানি রুশদী টুশদী-রা এই লেখা কোনদিন পড়বেন না। বাংলায় লেখার চেয়ে বড় গোপনীয়তার গ্যারান্টী তো আর কিছু নেই। মন খুলে ঘরের কথা বলাই যেতে পারে।)
প্রথম প্রশ্ন: কেউ কি জানেন “মিড্নাইট্স চিলড্রেনের” শেষের দিকটায় কি হল?
দ্বিতীয়: ছেলেপুলেদের কি বিভূতিভূষণের ইংরিজি অনুবাদটাই পড়তে বলে বাংলাটা সবার অলক্ষ্যে “কাটিয়ে” দিতে বলবো?
দ্বিতীয় প্রশ্নের কারণটা বুঝিয়ে বলি। পৃথিবীর সব লোকই যদি একদিন ইংরিজি এবং শুধু ইংরিজি-ই বলে তাহলে নিশ্চয়ই কেউ অবাক হবেন না। বাংলার মত ছোটোখাটো ভাষাগুলিকে সিক্রেট সোসাইটি বা কাল্টগ্রুপরা জীইয়ে রাখতে পারে। ইংরিজি ভাষার বিপুল ও সর্বজনব্যাপী আবেদনই এর কারণ। তাছাড়া বিজ্ঞান ও টেকনোলজির ভাষা। যে যতই-ই বলুক টেকনোলজি-ই আমাদের সভ্যতাকে ঘাড়ে ধরে চালাচ্ছে। আমাদের দেশেও হবে না হবে না করে একদিন ভালো টেলিফোন লাইন পাতা যেতে পারে। গ্রামে গ্রামে কম্প্যুটার। তখন সুলভ ইংরিজির ব্যবসায় লাখ লাখ লোক নেমে পড়লে আশ্চর্য্য হবার কিছু নেই। এও বলে দেওয়া যায় যে সেই আসন্ন কম্প্যুটার যুগে বাংলা ভাষার প্রধান বিপদ হবে যুক্তাক্ষর, মুর্ধণ্য ণ এবং (একেবারেই অদরকারী ও বর্জনীয়) এই তালব্য শ আর মুর্ধণ্য ষ নিয়ে। দশ আঙ্গুলে এতো টাইপিং মেমারি থাকে না। সুতরাং কম্প্যুটার যুগে বাড়তি বর্ণমালার কোন স্থান নেই। এখন-ই ইন্টারনেটের নিউজগ্রুপে রোমান হরফে বাংলা লেখার সময় অনেকে এইসব বাড়তি অক্ষর উড়িয়ে দিয়ে আধুনিক যুগের সাথে তাল রেখে চলতে পারে এমন একটি বাংলিশ চালাবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন ও করছেন। কিন্তু এত করেও (বা এসব করার ফলেই) বাংলাকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হতে পারে। বাংলিশের লেজ ধরে ইংলিশই যে ঘরে ঢুকে পড়তে চাইছে তা বুঝতে খুব একটা ভাবতে লাগে না। আর ইংরিজিই যদি গতি হয় তাহলে বিভূতিভূষণের মুল গদ্যকে বাঁচিয়ে রেখে কি হবে?
এও এক ধরনের সাম্রাজ্যবাদ। কয়েক কোটি ভারতবাসীকে দুশো বছর ধরে শোষণ করার জন্য কয়েক হাজার ইংরেজ-ই যথেষ্ট ছিল। পাওয়ারের খেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠতাটা কোন ব্যাপার-ই না। এদিকে আমাদের জোর বলতে গেলে শুধু ওখানেই। অর্থনীতি বলতে আছে রপ্তানী করার জন্য মহিলা আর শিশু। আরব দেশেটেশে যায় শুনেছি।
সুতরাং রুশদী যা বললেন সেটা-ই একদিন ইতিহাসের পাতায় উঠে যাবে নির্ঘাৎ। ইংরিজি লেখকরাই বাংলাকে, ভারত উপমহাদেশকে বাঁচালেন। টেগোরের কিছু বই আর বিভূতিভূষণের “সং অব দা রোড”-এর গৌরবজনক উল্লেখ থাকতে পারে। অবশ্য সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালি যে ঢেউ নিয়ে এসেছিল তা এখন পশ্চিমে বেশ মন্দা হয়ে গেছে- তাই বিভূতিভূষণের পাতে পরে কি পড়বে বলা মুশকিল। ভারতীয় সাহিত্যের “সার্ভে”-তে টেগোর-কে উপেক্ষা করা কিছুতেই সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা অরে যাচ্ছি, যদিও এর সঠিক কারণ বলা কঠিন। খুশবন্ত সিং তো কিছুদিন আগেই টেগোরের অনূদিত লেখা পড়ে বলেছিলেন তা অপাঠ্য। কথাটা শুনে তখন খুব-ই আশ্বস্ত হয়েছিলাম- কেননা তার আগে ওইসব ইংরিজি তর্জমা পড়ে মুখবিকৃত হয়ে যাওয়ার ফলে গভীর অপরাধবোধে ভুগেছি কিছুদিন। রুশদী টেগোরকে তাহলে কেন ভালো বললেন? এর পিছনেও মজার কিছু থাকতে পারে।
মোদ্দা কথা, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার দিক দিয়ে বাঙালীর চেহারা রোগা লিকলিকে, ঘেয়ো, অপুষ্টির রুগীর মত। নিজের মত করে খেলবো এ শক্তি আমাদের নেই। ওরা যদি কৃপা করে খেলতে দেয় তবে খেলা হয়। এর জন্য দোষ দেবো এমন কেউও নেই। আমরাও বৃটিশ শাসনের অধীনে ছিলাম, গুজরাটও ছিলো। বাণিজ্যটা ওদের মত পারলাম না কেন? সাহিত্য নিয়ে একটু সুপ্ত গর্ববোধও আছে আমাদের। বাণিজ্য ডুবলে সেটাও একদিন ডুবে যাবার আশঙ্কা আছে সেটা সময় থাকতে বুঝিনি, এখন যথারীতি টু লেট হয়ে গিয়েছে বোধহয়। কলকাতা দূরদর্শনে বাংলার চেয়ে হিন্দীর আধিপত্য বেশী। কিভাবে কখন, কি কি ভুলের ফলে ভাষার ক্ষেত্রে আমাদের একটু এগিয়ে থাকার ঐতিহাসিক সুবিধেগুলো গত পঞ্চাশ বছরে আমরা আস্তে আস্তে হারালাম ও হারাচ্ছি? এর “সার্ভে”-র জন্যও কি পরবর্তী রুশদির অপেক্ষা করে বসে থাকবো?
এসব লেখার এই অর্থ নয় যে বাংলার জন্য বুক ফেটে যাচ্ছে আমার। দুর্দিনের বাজারে অত পোষায় না। আধুনিক বাংলা তো একটি বেশ নতুন ভাষা। গত একশো বছরেই অনেক ভাঙা গড়ার মধ্যে দিয়ে এসেছে। পরে যদি আরো ভাঙ্গে, বা কী-বোর্ড-এর উপযোগী কোন ইংরিজিপ্রতিম ভাষায় মিশে হারিয়ে যায় তাহলেও তো সভ্যতার অগ্রগতির জন্য অনিবার্য বলেই মেনে নেবো।
আমাদের জীবদ্দশায় বোধহয় এতটা হয়েও উঠবে না। শুধু ক্রমশ: পিছিয়ে পড়বো। লোকজন ডেকে বলেও দেবে। নানারকম সংক্রামক ব্যাধির সাথে সাথে পরবর্ত্তী প্রজন্মের ঘাড়ে কিছু সংস্কার, কিছু ভালো লাগা জিনিস চাপিয়ে দেবার ইচ্ছে কার না থাকে? আমাদের ক্ষেত্রে সে ইচ্ছে সফল নাও হতে পারে। আজকে, প্রবাসে বসে রবীন্দ্রনাথ ও বিভূতিভূষণের প্রিয় বাংলা অক্ষর ইন্টারনেটে পাঠিয়ে দিচ্ছে পরবাস। এরও কোন ঐতিহাসিক গুরুত্ব হয়তো থাকবে না। এ আমাদের- বাংলা যারা পড়তে ও লিখতে চাই তাদের- ব্যক্তিগত খেলা আর কি। এই ভাষার মধ্যে দিয়ে যদি আমাদের জীবন ও সাহিত্যের কিছু প্রতিফলিত করা যায়, এমন কিছু যদি বলা যায় যা অনুবাদসাধ্য নয়- যা ওরা বোঝে নি- যাকে ওরা ভারতীয় সাহিত্য বলে স্বীকৃতি না দিলেও যা আমাদের কাছে এখনকার মত প্রিয়- তাহলেও ভালোই তো হয়।
আমরা কোথায়? পৃথিবীর মানচিত্রে নেই বললেই চলে। ভারত উপমহাদেশের মধ্যে এখনো বাংলাকে লোকে চেনে। অন্তত সেখানে- নিজস্ব গন্ডীর মধ্যে এগিয়ে থাকি? ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে থেমে থাকা-ই পিছিয়ে থাকার সমান। ভাষা যে মাধ্যমগুলিকে আশ্রয় করে বাঁচে এবং আগামীবছরগুলিতে বাঁচবে সেগুলি আমাদের ভালো আয়ত্তে আছে তো? ছাপাখানা, রেডিও, টেলিভিশন বা এখনকার মাল্টিমিডিয়া- এর প্রত্যেকটাতে কি আধুনিক হতে পেরেছি? টেকনোলজি, অর্থনীতি, ভাষা- এগুলি পরস্পরনির্ভর। একটা দুর্বল হলে অন্যগুলি সবল করা দু:সাধ্য। দেশে ও বিদেশে বসে আমরা সবাই যদি নিজেদের সাধ্যমত খেটে খাই তাহলে হয়তো বাঙালীর সাহিত্যের ইতিহাস লেখার সময় আরো দু-একজন বাংলা লেখকের নামও পৃথিবীর লোকে করবে। সেই কৃতিত্বের কিছুটা ভাগ আমরা সবাই অনায়াসে দাবী করতে পারি।
ছেলেপুলেরা যদি জিজ্ঞেস করে- আমরা কোথায়? বলতে হবে- লুকিয়ে আছি। একান্তে আছি। সবাই দেখছে না, কিন্তু তাতে কি? যতদিন খাটছি, নতুন পথ খুঁজছি, ঠিকঠাক কাজ করে যাচ্ছি, ততদিন থাকবো। ততদিন এই লুকোনো জগতেই থাকবে সত্যিকারের দুই বাংলা, ভারতবর্ষ, তার জলস্থলহাওয়া আর মানুষ।
বলতে হবে- তোরাও খুঁজে দেখতে পারিস। পাবি!