২০২১ সালকে রাষ্ট্রপুঞ্জ সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তির বছর হিসেবে পালন করছে। আর এই অতিমারিতে সৃজনশীল কাজকর্মগুলো যে বিশ্বব্যাপী ঝড়ের মুখে পড়া অর্থনীতিকে খানিকটা হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই। সত্যিই তো করোনার আক্রমণে বাড়িতে বসে আমরা অনেকেই নিজেদের সৃজনশীল প্রতিভাকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি, আর শিল্পচর্চার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন সৃষ্টি করবার চেষ্টাও করছি—এ বিষয়ে নতুন করে কিছু বলবার নেই। এখন এই যে মানুষের এই সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা, মনের ইচ্ছেকে, কল্পনাকে নতুন রূপ দেবার আকাঙ্ক্ষা--এর গোড়ার কথা খুঁজতে গেলে আমাদের অবশ্যই যেতে হয় ইতিহাসের আগের যুগে, অর্থাৎ প্রাগৈতিহাসিক, মানে যে যুগে মানুষ লিখতে শেখেনি এবং প্রায়-ঐতিহাসিক, মানে যখন লিপির ব্যবহার শুরু হলেও আমরা এখনও তার পাঠোদ্ধার করতে পারিনি (যার মধ্যে পড়ে হরপ্পা-মহেঞ্জোদাড়ো), সেই যুগে। এই সময়ের শিল্পী গুহার দেওয়ালে, মাটির পাত্রে, সিলমোহরে বা খেলনায়, মূর্তিতে যেসব ছবি এঁকেছিলেন বা ভাস্কর্য গড়েছিলেন, তার প্রকাশশৈলী, শিল্পগুণ ও বাঙ্ময়তা আধুনিক দর্শককে অবশ্যই আশ্চর্য করে, এবং আধুনিক শিল্পীকে অনুপ্রাণিতও করে। ইতিহাস বইতে আমরা পড়ি, প্রাগৈতিহাসিক যুগের এসমস্ত নিদর্শন থেকে আমরা সেসময়ের অর্থনৈতিক জীবনযাপন, ধর্মীয় চেতনা ইত্যাদির আভাস পাই। সে তো অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি শিল্পের চোখ দিয়েও এসব নিদর্শনের অশেষ মূল্য, যার আলোচনা জরুরি।
ভারতে প্রথম গুহাচিত্রের আবিষ্কার হয়েছিল স্পেনের আলতামিরা গুহাচিত্র আবিষ্কারেরও কিছু আগে, ১৮৬৭ সাল নাগাদ। আবিষ্কার করেছিলেন ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক আর্চিবল্ড কার্লাইল, যিনি আলেকজান্ডার কানিংহামের সহকারী হিসেবে আগ্রা অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁজের দায়িত্বে ছিলেন। উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের কাছে সোহাগিঘাট অঞ্চলে বিন্ধ্যপর্বতমালার মধ্যে তিনি কিছু গুহাচিত্র খুঁজে পেয়েছিলেন। এখন একে মোটামুটি মধ্যপ্রস্তর থেকে তাম্রপ্রস্তর যুগের মধ্যেকার সময়ের বলে ধরা হয়। তিনি কিছু নোট রেখে যান, যা পরে বিখ্যাত ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ প্রচারের আলোয় নিয়ে আসেন। তাঁর নোটেও তিনি লাল গেরিমাটি দিয়ে আঁকা ছবির উল্লেখ করেছিলেন। এই গুহাগুলোর কাছে লাল লোহাপাথর বা হেমাটাইটের চাঙড় দেখা যায়। এই পাথর থেকেই ঘষে ঘষে লালচে বা খয়েরি রঙের গুঁড়ো বের করা হত, সেই গুঁড়ো থেকে রঙ তৈরির জন্য শিলনোড়াও পাওয়া গেছে সেখানে। বেশিরভাগই শিকারের ছবি, জন্তুজানোয়ার ছুটে যাচ্ছে--গন্ডার, সাম্ভার, বড়ো সিংওয়ালা হরিণ, এসবের ছবি দেখা যায়। প্রাচীন শিল্পী যে স্বতঃস্ফূর্ত গতিময়তার প্রকাশ এসব ছবিতে করেছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো!
ভীমবেটকার গুহাচিত্র
পাঁচমারীর গুহাচিত্র (শিল্পীঃ লেখক)
ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই গুহাচিত্র পাওয়া যায়। তবে মধ্য ভারতে, বিশেষ করে সাতপুরা, বিন্ধ্য ও কাইমুরে পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি। আসলে, ঘন বন, জলের ও খাদ্যের সুবিধা আর অসংখ্য গুহাশ্রয় মানুষকে এখানে থাকতে উৎসাহিত করেছিল সন্দেহ নেই। আরো কিছু গুহাচিত্রের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন--উড়িষ্যার সুন্দরগড় জেলার মানিকমুন্ডা গুহাশ্রয়ে লোহাপাথরে বা এজাতীয় আকর গুঁড়িয়ে তাদের রঙে চর্বি বা প্রাণীদের তেল দিয়ে গুহার গায়ে আঁকা ছবি। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিকারের দৃশ্য। মধ্যপ্রদেশের রায়গড় জেলার সিংহনপুরে গুহার দেওয়ালে বেলে পাথরের গায়ে লাল রঙে আঁকা প্রাচীন কিছু ছবি রয়েছে; প্রাগৈতিহাসিক যুগের অতিকায় জন্তু, কর্মব্যস্ততায় মুখর মানুষ ছবির বিষয়বস্তু। এখানে বাইসন শিকারের একটি ছবি রয়েছে, উলটো দিকের দেয়ালে বুনো মোষ শিকারেরও একটি ছবি আছে। প্রাণীগুলির মৃত্যুযন্ত্রণা আর শিকারীদের উল্লাস স্বল্প রেখার মধ্যেও স্পষ্টভাবে প্রকাশিত। এছাড়া কর্ণাটকের গুলবর্গা, মধ্যপ্রদেশের আদমগড়, হোসেঙ্গাবাদ, উড়িষ্যার সম্বলপুর, রাজস্থানের বিরাটনগরের কাছে আরাবল্লী পাহাড়েও কিছু গুহাচিত্র পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে দেখা যায়, প্রাগৈতিহাসিক শিল্পী বাস্তবতাকে অনুসরণ করলেও সম্পূর্ণভাবে করেননি, বিভিন্ন সময়ে বিমূর্তের দিকে ঝুঁকেছেন। আঁকার মধ্যে আদিম বলিষ্ঠতা ও ঋজুতা ছিল প্রবল। প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক, মনের আবেগ অনুভূতিকে ছবিতে রূপ দেবার তীব্র ইচ্ছা প্রাগৈতিহাসিক এসব পাহাড়-চিত্রের মধ্যে খুবই স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
শিল্পবোধের, শিল্পচর্চার এই ধারা এভাবেই এসে পৌঁছোয় পশ্চিমে জোব ও পূর্বে সিন্ধু নদীর মধ্যবর্তী আধুনিক বালুচিস্তান ও সিন্ধু অঞ্চলে, যেখানে রাণাঘুন্ডাই, কোয়েটা, আমরি, নান্দারা, নাল বা কুল্লী-তে খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ পর্যন্ত সময়কালে বেশ ঘন বসতি গড়ে উঠেছিল। ১৯২২ সালে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৯২৫ সালে হারগ্রীভস, ১৯২৬-২৮ সালের মধ্যে স্যর অরেলস্টাইন ও ননীগোপাল মজুমদারের প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য ও গবেষণা এ অঞ্চলে গড়ে ওঠা সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রথম ধারণা দেয়। এখান থেকে পাওয়া চিত্রিত মাটির পাত্রগুলির বিষয় ও শৈলীর বৈচিত্র্য অবাক করার মতো, এবং তা শিল্পের সেই প্রবহমানতারই ইঙ্গিত দেয়।
অলংকৃত পাত্র (নাল)
কোয়েটা সংস্কৃতির মাটির পাত্রগুলির জমি বাফ বা হলদেটে রঙের, বেগুনি আভাওলা লালচে খয়েরি বা কালো রঙের কালি দিয়ে এর উপরে নিপুণ, নিশ্চিত হাতে জ্যামিতিক নকশা আঁকা, জীবজন্তুর ছবি নেই। আমরি, নান্দারা বা নাল সংস্কৃতির পাত্রগুলিতে প্রথমে বড়ো তুলি দিয়ে কালো বা ব্রাউন রঙে আঁকা হতো। আমরি আর নান্দারায় লাল দ্বিতীয় রং হিসেবে ব্যবহার হতো, নালে যদিও হলুদ, নীল, সবুজ রঙেরও ব্যবহার হতো। এই পাত্রগুলোয় সরু, মোটা, ঋজু, লীলায়িত বা কুঞ্চিত রেখা ব্যবহার করে এত সুন্দর নকশা ও অলঙ্করণ করা হয়েছে, খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায়, যার ধারা এখনও আলপনায়, লৌকিক চিত্রে, পোশাকে, গৃহসজ্জায় বহমান। নান্দারা ও নালের পাত্রে স্টাইলাইজড রীতিতে আঁকা জীবজন্তুর সুন্দর ছবি পাওয়া যায়। কুল্লীর পাত্রে উপরে নীচে জ্যামিতিক নকশা বা দুটি মোটা পটির মধ্যে জীবজন্তু গাছপালার নকশা পাত্রের চারদিকে গোল করে ঘুরিয়ে আঁকা। এখানকার সব পাত্রই নরম তুলি দিয়ে কালো রঙে আঁকা। পাত্রের বিস্তৃত বাঁকের জমি ভরাবার জন্য অনেক সময় ডিসটরশন রীতির প্রয়োগ হয়েছে। অর্থাৎ শরীরটা অদ্ভুত লম্বা ও চ্যাপটা করে দেওয়া হয়েছে, যদিও পা, খুর এসব খুবই নিখুঁত করে আঁকা। এসব ছবি ও নকশাগুলিকে ভালো করে দেখলে বোঝা যায়, এখনকার আধুনিক সব জিনিসপত্র--নকশিকাঁথায়, ছাপা কাপড়ে, চীনেমাটির বাসনে এসব প্যাটার্ন আমরা কতোই না দেখতে পাই! আর্টের যে চিরন্তনতা--তা এই সুদূর অতীতের শিল্পকাজ দেখলেই বোঝা যায়।
সিলমোহর
হরপ্পা থেকে পাওয়া মাটির পাত্রের গায়ে লাল জমির উপর কালো রঙে আঁকা ছবিগুলি রাণাঘুন্ডাইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। জ্যামিতিক জাফরি প্যাটার্নের নকশাও যেমন দেখা যায়, প্রকৃতি থেকে নেওয়া গাছপালা, পশুপাখির সংখ্যাও বেশ। এখানকার পশুপাখির ছবি কুল্লীর কথা মনে করায়, জন্তুদের শরীরগুলো তেমনি চ্যাপটা, লম্বা করে স্টাইলাইজ পদ্ধতিতে আঁকা। তবে বালুচিস্তানের থেকে হরপ্পার ছবিতে ঘন গাছপালা, লতাপাতার পরিমাণ অনেক বেশি। হরপ্পায় পটারির গায়ে মানুষের একটি খুব সুন্দর ছবি আছে, মানুষটি কাঁধে বাঁক ঝুলিয়ে যাচ্ছে। রেখার স্বল্পতা আর শিল্পীর সাহসী হাতের কাজ উল্লেখ করবার মতো।
হরপ্পা থেকে যে-ক’টি ধাতু ও পাথরের মূর্তি পাওয়া গেছে, তাতে শিল্পীর দক্ষতা দেখলে বিস্ময়ে স্তব্ধ হতে হয়। সবার প্রথমে তো মহেঞ্জোদাড়োর বিখ্যাত নর্তকী (যদিও নর্তকী কি না সে নিয়ে বিতর্ক কম নেই)। প্রায় চার ইঞ্চি লম্বা ব্রোঞ্জের তৈরি এই মূর্তিটি দ্বিভঙ্গ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে, তার বাম হাতে প্রায় ২৪-২৫ টি বালা, আর খালি ডান হাতখানি কোমরে রাখা, হাত-পা অস্বাভাবিক রকম দীর্ঘ। গলায় একটি নেকলেস, চুলগুলি ভারি গুছিয়ে বাঁধা। চোখদুটি অর্ধনিমীলিত, মুখটি অল্প একটু উপরে তোলা। মূর্তিটি কীসের প্রতীক, কী কী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিষয়ের প্রতিনিধিত্ব করে--এ’ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে ভিন্নমতের অভাব নেই। তবে এ কথা কি অস্বীকার করার উপায় আছে যে একজন মানুষ তার সমাজ, সংস্কৃতি বা ধর্মের প্রতিনিধিত্ব তো অবশ্যই করে, কিন্তু সবার আগে সে প্রতিনিধিত্ব করে তার অন্তরের গভীর সত্তাটির? আর এই মানবীমূর্তিটির মধ্যে যে সহজ, স্বাভাবিক আত্মবিশ্বাস, আন্তরিক প্রশান্তি ও সুখে পূর্ণ এক সত্তার ছবি ফুটে উঠেছে--তার জন্য শিল্পীর কাছে মাথা নত না করে উপায় নেই!
এছাড়া লাল রঙের পাথরে তৈরি একটি পুরুষ মূর্তি, ধূসর রঙের পাথরে তৈরি এক নর্তকের মূর্তি ও মহেঞ্জোদাড়োর চুনা পাথরের পুরুষ মূর্তির কথা উল্লেখ করবার মতো। দেহগঠনের নির্মাণে বা পোশাক ও গহনাপত্র তৈরিতে শিল্পী এক সূক্ষ্ম সৌন্দর্যচেতনার পরিচয় দিয়েছেন। আর স্টেটাইট পাথরে তৈরি দাড়িওলা ‘পুরোহিত-রাজা’র মূর্তিটিও বেশ কৌতূহল জাগানোর মতো (এবং দেশে-বিদেশে তা জাগিয়েছেও)। মূর্তির চোখদুটি অর্ধনিমীলিত, গায়ে চাদর জড়ানো। মূর্তিটির চুল, দাড়ি, পোশাক বা গহনাপত্র তৈরিতে যেভাবে গভীর টানা টানা রেখার প্রয়োগ হয়েছে, তা বেশ আকর্ষণীয়। সিন্ধু উপত্যকায় পোড়ামাটির কাজ অজস্র পাওয়া গেছে । পোড়ামাটি দিয়ে বাঁদর, কাঠবিড়ালী, গরু, ছোট গাড়ি, পশু ও পাখিতে টানা রথ--এরকম নানান খেলনা, জীবজন্তু আর মানুষের মূর্তি তৈরি হতো। মানুষের মূর্তিগুলির গায়ে বিচিত্র অলঙ্কার। বেশ কিছু মাতৃকামূর্তিও পাওয়া গেছে।
পশুপতি (মহেঞ্জোদাড়ো)
সভ্যতার সেই প্রথম যুগে মানুষ কেন ছবি আঁকতে শুরু করেছিল--এই প্রশ্ন নিয়ে বিভিন্ন মতামত, তর্কবিতর্ক রয়েছে। কেউ বলেন ধর্মীয় কারণে, বিশেষ কোনো শক্তিকে তুষ্ট করার জন্য। আবার শিকারে গিয়ে যাতে শিকার সফল হয় সেই উদ্দেশ্যেও এই ছবিগুলি আঁকা বলে কারো কারো ধারণা। এ সম্পর্কে ‘ভারতের চিত্রকলা’ বইতে অশোক মিত্র ভারি সুন্দর একটি কথা বলেছেন, “মানুষের স্বভাবই হচ্ছে আঁকা। সে যেমন আঁকাই হোক, এ স্বভাব যেমন খুব অল্পবয়সে দেখা দেয়, তেমনি অনেক যুগ আগে মানুষের ইতিহাসের শৈশবেও নিশ্চয় এই স্বভাব ছিল”। অর্থাৎ কিনা আঁকার জন্যই আঁকা, সৃষ্টির আনন্দেই সৃষ্টি। আর এই সুপ্রাচীন সৃষ্টিশীলতার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ফুটে উঠেছে যে অনন্য শিল্পগুণ, তা আধুনিক শিল্পীকে, শিল্পের প্রশংসককে মুগ্ধ করে, অনুপ্রাণিতও করে কম নয়। Picasso, Pierre Soulages-এর মতো শিল্পীরা প্রাগৈতিহাসিক ছবির শিল্পগুণ, এমনকি নিজেদের সৃষ্টিতে তার প্রভাবের কথা মুক্তকন্ঠে স্বীকার করেছেন।
ভারতের এসব ছবি, নকশাগুলির সঙ্গে অন্যান্য দেশের ইতিহাসের আগের যুগের ছবি, নকশার বেশ খানিক মিল পাওয়া যায়। বোঝা যায়, বিশ্বজনীনতা শুধু আজকের নতুন আদর্শ নয়, বিশ্বজনীনতার ধারা অনেক পুরনো। তবে একটা সুন্দর পার্থক্যও দেখা যায়। আসিরিয়া বা মিশরে যেমন সম্রাট বা রাজারাজড়াই ছবির প্রধান বিষয়, ভারতের ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়। ঘরোয়া কাজে রত নিতান্ত সাধারণ মানুষ; গরু বাঁধছে, মাছ ধরছে, মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে--এসবই ছবির বিষয়, আর সেজন্যই এত সহজে একাত্ম হওয়া যায় এর সঙ্গে।
ভারতীয় শিল্পে সবসময়েই প্রকাশ পেয়েছে জীবনের সবকিছুর প্রতি শিল্পীর অসীম ভালোবাসা, আবেগ ও আগ্রহ। বিশ্বপ্রকৃতির ছোট বড়ো সমস্তকিছু; গাছপালা, পশুপাখি, ফুলপাতা, মানুষ--সবকিছুর সঙ্গেই শিল্পী একাত্ম হয়েছেন, ভালোবেসেছেন আর তারপর হৃদয়ের অন্তঃস্থলে যে রূপটি দেখেছেন, তাকে গভীর যত্নে ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের শিল্পে। ইতিহাসের আগের যুগেও শিল্পী ঠিক এই কাজটিই করেছেন। শুধু যে নকশায়, আলপনায় বা ভাস্কর্যে, চিত্রকলায় এই রীতি প্রবাহিত হয়ে এসেছে বা আসছে তা নয়, শিল্পকে দেখবার, অনুভব করবার ক্ষেত্রেও দেখি প্রথম যুগের শিল্পীর থেকে পাওয়া সেই একই চিরন্তন প্রবহমানতা।
তথ্যসূত্র :
•ভারতের চিত্রকলা - অশোক মিত্র
•The Prehistoric Paintings of the Pachmarhi Hills by Dr. Meenakshi Dubey Pathak (Article from Bradshaw Foundation)
•Lines and Colours- Discovering Indian Art by Ella Datta
•Prehistoric Art in Modern and Contemporary Creations (Article from Google Art and Culture)
•ভারত ইতিহাসের সন্ধানে - দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায়
• Wikipedia, Wikimedia, এবং আরো বেশ কিছু লেখার সাহায্য নিয়েছি। তবে মূলত এই লেখাটি লিখতে উপরের সূত্রগুলিই সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে ।
অলংকরণঃ লেখক ও উইকিমেডিয়া