“আচ্ছা – সমীরবাবুদের বলবে তো?”
“ওঁদের ছেলে সবে সেরে উঠেছে। এখন বাদ দেওয়া যাক।”
“আর স্বাতীদের?”
“পাগল হয়েছো? যাদবপুর!! দু-সপ্তাহ ধরে কন্টেনমেন্ট এরিয়া। আসতেই পারবে না।”
“স্নিগ্ধাকে ডাকতেই হবে কিন্তু। আমার এতদিনের বন্ধুকে আমার মেয়ের বিয়েতে ডাকবো না?”
“বন্ধু হলেও রিস্ক আছে কিন্তু। ও থাকে পার্ক সার্কাসে। কোন দিক দিয়ে আসবে? যদি গড়িয়াহাট হয়ে আসে তো ঠিক আছে। কিন্তু যদি সার্কুলার রোড ধরে আসে, তাহলে কিন্তু দু-দুটো রেড জোন পেরিয়ে আসতে হবে। রিস্কি ব্যাপার।”
বিয়েতে নিমন্ত্রিতদের লিস্ট হচ্ছে। সেই নিয়ে কর্তা গিন্নি বসেছেন রবিবারের সকালে।
এখন বিয়েতে বেশি লোক ডাকার রেওয়াজ নেই। সরকারের থেকে কিছু বারণ আছে, তাছাড়া বিয়েবাড়িতেও আজকাল অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। খুব বড় বিয়েবাড়ি হলেও বড়জোর দুশো লোক হয়। তার ওপর যখন তখন কোন না কোন এলাকা কন্টেনমেন্টে চলে যাচ্ছে। কাজেই কে আসতে পারবে আর কে আসতে পারবে না, সেটাও অনিশ্চিত। তাই নিমন্ত্রণ করা হয় মাত্র হপ্তা-দশদিন আগে।
হাড়-কেপ্পন বিধানবাবুর এটাতে খুব সুবিধে হয়েছে। এই অছিলায় উনি নিমন্ত্রিতের সংখ্যা যথাসম্ভব কম করবার চেষ্টা করছেন। দোষও দেওয়া যায় না – একবছর পরেও করোনার ছায়া তো রয়েই গেছে। তাছাড়া জিনিসপত্রের দামও তো আকাশছোঁয়া।
“কেয়া ওর বন্ধুদের ডাকবে বলছিল…”
“একদম না। ওরা এই জেনারেশনের বাচ্চা – ওদের আবার বিয়েবাড়িতে যাবার কী আছে? ওরা তো নেটে যথেষ্ঠ স্বচ্ছন্দ। বিয়ের অনুষ্ঠানের লাইভ-শো টা দেখে নেবে। মাঝে মাঝে ওদেরকেও সেই শো’তে দেখিয়ে দেবো – ব্যাস – সখীদের সাজু-গুজুর ছবিও দেখা যাবে। প্লাস পিৎজার কুপন-কোড পাঠিয়ে দেবো – বাড়িতে বসে খেতে খেতে দেখবে। আর কী চাই ওদের?”
“কী কিপটে বাপু তুমি! মেয়ের বিয়েতে পিৎজা? ছি ছি ছি ছি!”
“আচ্ছা বেশ – বিরিয়ানি আর চাঁপের কুপন দিয়ে দেবো, উইথ কোল্ড ড্রিঙ্কস। তাহলে হবে তো?”
“যা ইচ্ছে কর গে যাও!”
***
অনেক চুলচেরা বিচার করে শেষ অব্দি বিধানবাবু লিস্টটা পঞ্চাশের মধ্যেই রাখতে পেরেছিলেন। তবুও বিয়েটা চুকে যাবার পর খুব আপসোস করেছিলেন উনি। ওটুকুও না করলে চলতো।
বিয়ের দিন সকালেই নিউ আলিপুর কন্টেনমেন্ট জোন হয়ে যাওয়ায় বরপক্ষ বেরোতেই পারলো না। তাই পুরো বিয়েটাই হলো অনলাইনে - জুম অ্যাপে।
আর বিধানবাবুদের বাড়িটা কন্টেনমেন্ট জোনে ছিল না বলে ওই পঞ্চাশজন নিমন্ত্রিত বাড়িতে এসে খামখা বিরিয়ানি-চাঁপ-কাবাব-ফিরনি উড়িয়ে গেল।
যত্তসব !!
(এই সংখ্যায় অতনু দে-র আরো দুটি গল্পঃ 'লড়াই' ও 'মাইনর ক্রাইসিস')