স্কুল বাসে উঠে জানলার ধারে মনের মতো সিটে বসেই টুপুরের হঠাৎ মনে পড়ল, আরে আজকে তো ফুলঝুরির নতুন সংখ্যা আপলোড হবে। মনে পড়তেই কম্পিউটারের সামনে বসার জন্যে মন ছটফট করে উঠল। কখন যে বাসটা বাড়ি পৌঁছবে, কোনো রকম ব্যাগটা রেখে, জামাকাপড় পালটে কম্পিউটারটা অন করতে হবে। যদিও ‘আগে খাওয়া শেষ কর’ বলে মা চ্যাঁচাবে টুপুর জানে, কিন্তু আজকে এসব শুনলে চলবে না, ফুলঝুরি পড়তে পড়তেই খেতে হবে। পুরোনো কেল্লার রহস্যর শেষটা না পড়া পর্যন্ত শান্তি হচ্ছে না। এইসব ভাবতে ভাবতেই বাড়ি এসে গেল। বাড়ি পৌঁছেই যেমন ভাবা তেমন কাজ। কোনো রকম ব্যাগটা দুম করে সোফার ওপর রেখে, জুতো খুলে, স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করে টুপুর ডুবে গেল ফুলঝুরিতে। মার কোনো কথাই কানে ঢুকল না।
ঘন্টা দুয়েক বাদে ফুলঝুরি পড়া শেষ করে উঠলে টুপুরের মা ইন্দ্রাণী বললেন, ‘স্কুল থেকে ফিরে সেই যে কম্পিউটারের সামনে বসেছিস ওঠার আর নাম নেই। কি খেলি তাও বোধহয় বলতে পারবি না। আমি এতক্ষণ ধরে কি বলে যাচ্ছি শুনেছিস? পিপিরা গঙ্গার ধারের বাড়িতে শিফট করে গেছে, কাল শনিবার দুপুরে আমরা যাব। টিনা, টুবাইও আসবে কাকীমার সঙ্গে। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। যাওয়ার আগে সব হোম টাস্ক শেষ করে রাখবে। সব রবিবারের জন্যে ফেলে রেখো না। কথা কানে যাচ্ছে না মন এখনও ফুলঝুরিতে?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ শুনেছি, পিপিরা এই বাড়িতে চলে এসেছে। এটা তো অনেক বড় বাড়ি তাই না মা? বাগানও আছে, পিপি বলেছিল।’
‘হ্যাঁ বাড়িটা অনেক বড়। অনেক দিন বন্ধ পড়েছিল। বাগানে জঙ্গল হয়ে গেছিল, পিপিরা সব পরিষ্কার করে টরে একদম নতুনের মতো করে নিয়েছে।’
টুপুরের পিসী, পিসেমশাই নিজেদের ফ্ল্যাট বিক্রি করে শহরতলির গঙ্গার ধারের এই বড় বাড়িটা সম্প্রতি কিনেছেন। বাড়িটা টুপুরের পিসেমশায়ের এক বন্ধুর। তাঁরা কেউই এখানে থাকেনও না, আসেনও না। বাড়িটা বন্ধই পড়ে ছিল বহুদিন। তিনিই বাড়িটা বন্ধুকে বিক্রি করে দিয়েছেন। পিসেমশাই রিটায়ার্ড স্কুল টিচার, অবসরের পরও তিনি বহু ছেলে মেয়েকে বাড়িতে পড়ান। ছোট ফ্ল্যাটে তাঁর খুবই অসুবিধে হচ্ছিল। তাছাড়া এই বাড়িটা তাঁর খুব পছন্দ, আগে বার কয়েক এসেছেন বন্ধুর সঙ্গে। তাই বন্ধুর প্রস্তাবে এক কথায় রাজী হয়ে গেছেন। গৃহপ্রবেশ আগেই হয়ে গেছে, টুকটাক যা সারানোর, রঙ করার ছিল সেসব শেষ করে তাঁরা দিন পাঁচেক হল পাকাপাকি ভাবে বসবাস করতে শুরু করেছেন।
পরের দিন টুপুর তার খুড়তুতো ভাই বোন টিনা, টুবাই-এর সঙ্গে গঙ্গার ধারের বাড়িতে হুল্লোড়ে ব্যস্ত। টিনা, টুবাই কলকাতায় ফ্ল্যাটে থাকে, তারা কলকাতার এতো কাছে এরকম বাগানওলা বাড়ি দেখে অবাক, টুপুর যদিও এই শহরেই থাকে তাই ওদের মতো অতটা আশ্চর্য নয়, কিন্তু বাগানটা ওরও খুব ভালো লেগেছে। বাগানে ঘুরতে ঘুরতেই তিনজনে দেখতে পেল বাগানের শেষে পাঁচিলের গা ঘেঁষে একটা ছোট আউটহাউস, তার দরজায় তালা লাগানো। আউটহাউসের পাশেই গেট, গেট খুললেই একটা গলি আর গলি দিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে বড় রাস্তায় পড়লেই গঙ্গা। গলিটা একটু অন্ধকার অন্ধকার মতো, লোক চলাচলও কম। এটা বাড়ির পেছনের দিক। বন্ধ আউটহাউস দেখা মাত্রই টুবাই ছুটল বাড়ির দিকে।
‘পিসন পিসন ওই আউটহাউসটা বন্ধ কেন? ওর ভেতর কি আছে?’
‘তোরা আউটহাউসের দিকে গেছিস কেন? বললাম না এদিকের বাগানে খেল। ওদিকটা এখনও পুরো পরিষ্কার করানো হয় নি, ঝোপঝাড় আছে। পোকা মাকড়, সাপখোপ থাকতে পারে। আউটহাউসটাতেও বোধহয় হাবিজাবি জিনিস আছে, খুলিয়ে পরিষ্কার করাতে হবে,’ বললেন টুপুরের পিসেমশাই অজিত চৌধুরী।
‘সারা দুপুর বাগানে টই টই করতে হবে না, ভেতরে এসে যা করার করো,’ ইন্দ্রাণী বললেন।
বিকালবেলা গঙ্গার ধারে বেরিয়ে সন্ধেবেলা সবাই বাড়ি ফিরে গেল।
দিন তিন চার কাটল। অজিত, সুনন্দার ভালোই লাগছে নতুন বাড়ি। বাড়িটাতে তাঁরা আগেও এসেছেন অজিতের বন্ধুর সঙ্গে। শুধু একটাই মুশকিল বাড়িটা শহরের অপেক্ষাকত ফাঁকা জায়গায়। আশেপাশে কয়েকটা বাড়ি আছে বটে, সেগুলোতে লোকজনও বসবাস করে কিন্তু সবই একটু দূরে দূরে। এদিকে অজিতের পড়ানোও শুরু হয়ে গেছে। সকাল সন্ধ্যে দুটো ব্যাচ প্রায় রোজই। প্রথম ঘটনাটা ঘটল একদিন সন্ধ্যেবেলা। অজিত পড়াচ্ছেন, হঠাৎ একটি ছেলে চেঁচিয়ে উঠল, ‘বাগানে কে?’
সবাই মিলে টর্চ নিয়ে বেরোন হল, কিন্ত কাউকে দেখা গেল না। অজিত তেমন পাত্তা দিলেন না, ভাবলেন এই সন্ধ্যেবেলা কি আর হবে। কিন্তু রাত্তিরে শোওয়ার পরও যেন মাঝে মাঝে মনে হতে লাগল ঘরের পাশে বাগানে কে যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরেরদিন ভোরবেলা অজিত সদর দরজা খুলছেন, দেখলেন দরজার সামনেই সিঁড়ির ওপর দুটো মরা কাক পড়ে রয়েছে। শুধু তাই নয় দেখা গেল পেছনের বারান্দায় একগাদা চুল, ছেঁড়া ন্যাকড়া এসব নোংরা পড়ে রয়েছে। অজিত, সুনন্দা এবার একটু চিন্তিত হলেন। কিন্তু তখনও কাউকে কিছু জানালেন না। সেদিনও সন্ধেবেলা যথারীতি পড়ানো চলছে। অজিত একটু ভেতরে গেছেন, হঠাৎ একটি মেয়ের ভয়ার্ত চিৎকার ভেসে এল। তিনি দৌড়ে ঘরে এসে দেখলেন ভয়ে মেয়েটির মুখ সাদা হয়ে গেছে, সে একটা জানলার দিকে আঙুল দেখিয়ে কিছু বলতে চাইছে। কিছুটা ধাতস্থ হলে জানা গেল যে সে নাকি খোলা জানলায় এক বীভৎস মুখ দেখেছে, চেঁচিয়ে উঠতেই সেই মুখটা মিলিয়ে যায়। এবারও বাগান তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিচ্ছু বোঝা গেল না। ছেলে মেয়েরা পড়ে বাড়ি ফিরে গেল, তারা যথেষ্ট ভয় পেয়েছে। অজিত দরজা বন্ধ করছেন হঠাৎ বাগান থেকে বেড়ালের কান্নার আওয়াজ আসতে লাগল। কিন্তু বাগানে কোনো বেড়াল দেখা গেল না। একটু পরে আওয়াজ থেমে গেল, কিন্তু আবার শুরু হল। প্রায় সারা রাত এভাবে চলল।
পরের দিন সকালে বাজারে গিয়ে অজিত দু একজনকে এসব কথা বললে তারা বলল যে বাড়িটার ভুতুড়ে বলে বদনাম আছে। অনেকেই নাকি রাতে ওখান থেকে নানা রকম আওয়াজ, বেড়ালের কান্না শুনেছে। এসব শুনে অজিত এবার একটু ঘাবড়িয়ে গেলেন। তারপর সেদিন রাতে যা ঘটল তাতে তাঁরা দুজন খুবই ভয় পেলেন। রাত দশটা নাগাদ দুজনে টিভি দেখতে দেখতে খাচ্ছিলেন। হঠাৎ ডাইনিং স্পেস থেকে ঝন্ ঝন্ করে আওয়াজ হল। দৌড়ে গিয়ে দেখলেন ডাইনিং টেবিলের ওপর রাখা বড় কাঁচের ফুলদানিটা ভেঙে চুরমার। অথচ ঘরে বেড়াল টেড়াল তো দূরের কথা টিকটিকি পর্যন্ত নেই। রাতে শুয়ে পড়ার পর শুনলেন ছাদে যেন কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে, অদ্ভুত সব শব্দ হচ্ছে।
রাতটুকু কোন রকমে কাটিয়েই ভোরবেলা দুজনে ছুটলেন টুপুরদের ফ্ল্যাটে। সেদিন রবিবার সবাই বাড়ি ছিল। সব শুনে টুনে টুপুরের বাবা সুমন জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা আগে জানাওনি কেন? কাল রাতেই বা ফোন করো নি কেন আমাদের? বাড়িটাও হঠাৎ করে কিনে ফেললে, আগে আমাদের বলো নি, তাহলে খোঁজ খবর করা যেত। অজিতদা, আপনার বন্ধুকে জানান নি এসব কথা?’
‘মনোতোষকে কাল ফোন করেছিলাম। ও বলল বাড়িটা অনেকদিন বন্ধ ছিল, জঙ্গল হয়ে গেছিল, লোকজন উল্টোপাল্টা কথা রটাচ্ছিল, তাই ও তাড়াতাড়ি বিক্রির চেষ্টা শুরু করে। তারপর আমার পছন্দ জেনে আমাকেই বিক্রি করে,’ বললেন অজিত, ‘আর তোমাদের যে জানাবো আমরা নিজেরাই তো প্রথমে গুরুত্ব দিই নি। কিন্তু এখন ব্যাপারটা বেশ ভয়ের হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
টুপুর এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল, এবার বলল, ‘তাহলে পিপিদের বাড়ি সত্যিই ভুত আছে। আচ্ছা পিপি তোমরা ভুতটাকে দেখেছো না শুধুই আওয়াজ শুনেছো?’
‘আঃ টুপুর কি হচ্ছে?’ ইন্দ্রাণী ধমকে উঠলেন।
সুমন তাঁর ভাই সুদীপকে ফোন করে এসে বললেন, ‘আজকে আমরা সবাই ওখানেই থাকব, সুদীপরাও আসছে। অজিতদা আমার মনে হয় একবার থানায় জানানো দরকার।’
থানায় যে জানাবো ঠিক কি বলবো? এসব বিশ্বাস করবে তো?’ অজিত বললেন।
‘চলুন যাই, দেখি কি করা যায়।’
থানার দারোগাবাবু গম্ভীর হয়ে সব শুনে টুনে বললেন, ‘শুনুন মশাই ভুতের নামে রিপোর্ট নেওয়ার কোনো আইন আছে কি না আমি জানি না। এই তল্লাটের সবাই জানে যে ওটা ভুতুড়ে বাড়ি। আপনি কেনার আগে কোনো খোঁজখবর করেন নি? আপনার বন্ধু তো দিব্যি ঘাড় থেকে ঝামেলা নামিয়ে ফেলল। যান, ওঝা টঝার খোঁজ করুন, পারলে ওরাই কিছু করতে পারবে।’
‘ওঝা? আপনি পুলিশ হয়ে এই যুগে দাঁড়িয়ে ওঝার কথা বলছেন?’ সুমন হতবম্ব।
‘শুনুন মশাই এই এরিয়া একদম পিসফুল। আগে যাও বা দু চারটে চুরি ডাকাতি হত, আমি বদলি হয়ে আসার পর সব বন্ধ। সব ব্যাটাকে ধরে ভেতরে পুরেছি, বুঝলেন? ওই বাড়িটার ধারে পাশে সন্ধ্যের পর থেকে কেউ ঘেঁষে না। ভুতুড়ে বাড়ি যেমন কিনেছেন এখন বুঝুন। যান, যান আমার সময় নষ্ট করবেন না,’ খেঁকিয়ে উঠলেন দারোগা।
এদিকে ততক্ষণে সুনন্দা বাড়ি ফিরে এসেছেন, সঙ্গে ইন্দ্রাণী আর টুপুর। কিছুক্ষণের মধ্যে কলকাতা থেকে টুপুরের কাকা, কাকীমা, টিনা আর টুবাইও পৌঁছে গেল। টিনা আর টুবাইকে পেয়ে টুপুর বাগানে যেতে চাইল।
‘বাগানে গিয়ে কি করবে তোমরা? পুলিশ আসতে চাইছেনা আর তোমরা কি গোয়েন্দাগিরি করতে যাচ্ছ?’ ইন্দ্রাণী বললেন।
‘দিনের বেলা কি হবে বাগানে গেলে?’ সুমন একটু বিরক্তই হলেন, ‘এতো ভয় কিসের? যা তোরা।’
টুপুররা বেরিয়ে গেল আর বড়রা এবার কি করা যায় তাই নিয়ে আলোচনায় বসলেন। কিছুক্ষণ বাড়ির সামনের দিকের বাগানে ঘোরাঘুরির পর টুপুর বলল, ‘চল পেছনের দিকটায় যাই।’
‘কিন্তু ওদিকে যেতে যে বারণ করেছিল পিসন, জঙ্গল আছে বলে,’ বলল টিনা।
‘কিছু হবে না, সাবধানে যাব, চল,’ টুপুর এগিয়ে গেল, পেছনে টিনা আর টুবাই।
টুবাই কোত্থেকে তিনটে ছোট লাঠি যোগাড় করে এনেছিল, তাই দিয়ে তিনজনে মহা উৎসাহে ঝোপঝাড় নেড়ে নেড়ে দেখতে লাগল। আউটহাউস তালা বন্ধ। টুপুর দরজায় লাগান তালাটা ধরে অল্প টানল। তালা তো খুলল না কিন্তু টুপুর নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল, ‘আরে এতে তো একদম ধুলো নেই। পিসনরা কি এর মধ্যে আউটহাউস খুলেছিল?’
ততক্ষণে ওদের সাহস বেড়ে গিয়েছিল। তিনজনে আলাদা হয়ে আউটহাউসের চারপাশে ঘুরছিল। হঠাৎ টিনা আর টুপুর মাটিতে কিছু দেখতে পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
টুপুর টিনাকে জিজ্ঞেস করল, ‘ভুত কখনো চুয়িং গাম খায় বলে শুনেছিস? এটা চুয়িং গামের র্যাপার।’
ওদিক থেকে টুবাই-এর গলা ভেসে এল, ‘এখানে তো অনেক বিড়ির টুকরোও পড়ে রয়েছে।’
টুপুর আর টিনা দৌড়ে গেল দেখতে।
‘যা টুবাই শিগগির সবাইকে গিয়ে বল,’ টিনা বলল।
টুবাই দৌড়তে দৌড়তে বাড়ির ভেতর গিয়ে বলল, ‘পিপি, পিপি তোমাদের বাড়ির ভুত বিড়ি খায়, চুয়িং গামও খায়।’
‘কি? কি বলছিস?’ সবাই একসঙ্গে বলে উঠলেন।
‘তোমরা থাকো, আমি এখনই থানায় যাচ্ছি। এবার ওঝাকে সঙ্গে নিয়েই আসব,’
সুমন বেরিয়ে গেলেন।
সুমনকে আবার আসতে দেখে দারোগা চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘আবার আপনি? আপনাদের যে বললাম…………..’
‘মনে আছে আপনি কি বলেছিলেন,’ কথার মাঝখানেই বললেন সুমন, ‘কিন্তু বিড়ি, চুয়িং গাম খাওয়া ভুতকে ধরার দায়িত্ব তো আপনাদেরই, তাই না? যে কাজ আপনাদের করার কথা ছিল সেটা তো আমাদের ছেলেমেয়েরাই করেছে, বাকীটা আপনারা করুন।’
দারোগা আর কথা না বাড়িয়ে দলবল নিয়ে সুমনের সঙ্গে চললেন। আউটহাউসের আশপাশ দেখে আউটহাউস খুলতে বললেন। অজিত চাবি নিয়ে এলেন কিন্তু সেই চাবিতে তালা খুলল না।
‘এই চাবি তো এই তালার মনে হচ্ছে না। অজিতদা আপনি আগে কখনো আউটহাউস খুলেছিলেন?’ সুমন জানতে চাইলেন।
‘না, আমি খুলি নি। মনোতোষ বলেছিল আউটহাউসে কিছু নেই,’ অজিত বললেন।
‘তালা ভেঙে ফেলো,’ দারোগা কনস্টেবলদের বললেন।
তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখা গেল আউটহাউসের একদিক জিনিসপত্রে বোঝাই। পেতলের বসনপত্র, দেওয়াল ঘড়ি, শাড়ি, বেডকভারের পাশাপাশি ডি ভি ডি প্লেয়ার অবধি।
‘এতো সব চোরাই মাল মনে হচ্ছে,’ দারোগা সব দেখে শুনে মন্তব্য করলেন, ‘মাস কয়েক আগে কাছেই একটা বাড়ি থেকে অনেক পেতলের বাসনপত্র চুরি হয়েছিল। এগুলো তাই মনে হচ্ছে।’
‘আপনি যে বললেন সবাইকে ধরে ভেতরে পুরেছেন, তাহলে এখনো এখানে আসে কারা? তালাটাও ওরাই পাল্টেছে বোঝাই যাচ্ছে,’ বললন অজিত।
‘হয়তো সব কটা ধরা পড়ে নি, যারা বাইরে আছে তারাই এখানে লুকিয়ে চুরিয়ে আসে মাল সামলাতে,’ আমতা আমতা করে বললেন দারোগা, ‘এখনো সব মাল সরাতে পারেনি তাই আপনাদের ভয় দেখাচ্ছিল যাতে আপনারা বাড়ি ছেড়ে দেন আর ওরা সব সরয়ে নিয়ে যেতে পারে।’
‘আর আপনি ওঝা ডাকতে বলছিলেন। টুপুররা এইসব না দেখুলে যে কি হত জানি না,’ বললেন সুনন্দা।
‘তোমাদের ভয় করল না এই ঝোপঝাড়ের মধ্যে আসতে? এত সব কাণ্ডের পরও?’ দারোগা টুপুরদের জিজ্ঞেস করলেন।
‘রাত দিন গোয়েন্দা গল্প পড়লে কি আর ভয়ডর অবশিষ্ট থাকে?’ ইন্দ্রাণী বললেন।